রেদওয়ানুল হক’র কবিতা

 
ভিতরবাহির
 
ভিতরে না ঢুকলে কিছুই বোঝা যায় না
চেনা যায় না কে কতোটা নির্মম
কার হৃদয় উপচে পড়ে দয়ার সমুদ্র
কারটা চুরি হয়ে গেছে নির্বেবেক পতিতালয়
 
কোন মনের গহিন কোণে শুধুই অন্ধকার
খাঁ খাঁ করে শূন্যতা
কোনখানে মেঘ নেই- বৃষ্টি নেই
ছায়ামায়াহীন এক গন্ডপুরুষ দাঁড়িয়ে আছে
বৃক্ষ সেজে- কে অদ্ভুত প্রতারক!
 
একটি বনে কতো ঝোঁপঝাড় থাকে- জঙ্গল থাকে
সাপ-বিচ্ছু আরো কতো কী থাকে!
ভিতরে না ঢুকলে কিছুই বোঝা যায় না
জানা যায় না নদীর ভিতরে  কতো নদী প্রবহমান।
--------------------------------------------------
 
বৃষ্টি বৃষ্টিসমূহ
 
বড় ইচ্ছে করে কবির হাতখানা দেখে নিতে
দেখে নিতে কবির আঙুল- আঙুলের রেখায়
                   আধঘুমে জেগেথাকা বিনম্্র চাঁদ।
 
কবির চোখের উপর যে প্রজাপতি এসে বসে
যে ফড়িং- ঝিঁঝিঁপোকারা চারপাশ ঘোরে
                   নাচানাচি করে আলুথালু বাতাস
তা দেখে নিতে ইচ্ছে করে খুব।
 
যে অনাবাদি ঘাস শিহরিত করে
                     সুতোয় বেঁধে রাখে প্রেম
যে নদী- নদীর পলিমাটি বারোমাস কাঁদায় কবিকে
সেই বৃষ্টি বৃষ্টিসমূহ দেখে নিতে ইচ্ছে করে।
--------------------------------------------------
 
সবুজ অংক
 
ওরা পুননির্মাণ জানে না
যা ভেঙে যায় তা দেখে দেখে বিলাপ করে শুধু
অথচ একজন যোদ্ধাকে পুননির্মাণ জানতে হয়
ভেঙে যাওয়া জাহাজের মাস্তুল ধরে ভাসতে ভাসতে
তৈরি হতে হয় পুনরায় যুদ্ধের জন্য
জানতে হয় বারুদের ছাই থেকে পুনরায় গ্রেনেড
হয়ে ওঠার সবুজ অংক
উত্তপ্ত গলিত লাভা ছুটে আসাকে মথিত করে
এগিয়ে যেতে হয় সামনে
জানতে হয় মৃত্যুগুহায় রাত্রীযাপন...
 
আর যারা জানে, তারাই এগিয়ে থাকে সবসময়
তাদের ছুঁতে পারে না
ভয়
     দ্বিধা
         দুর্ভোগ
তারা নি:সংকোচে পাড়ি দেয় ঘূর্ণির সমুদ্র।
--------------------------------------------------
 
কাক কোকিল
 
কাক নিজের নাম ধরে এতো ডাকে কেনো?
কাক, সে কি মনে করে নিজের নামটি বাতাসে বারবার
বেজে উঠলেই পক্ষিকুলের সম্রাট হয়ে যাবে,
সমস্ত খ্যাতি এসে পড়বে হাতের মুঠোয়!
 
অথচ কোকিল কতো বিমুগ্ধ স্বরে গান গায়
একবারও উচ্চারণ করে না নিজের নাম
মানুষেরাই হন্য হয়ে খুঁজে ফেরে কোকিলের মুখ
কোকিল কোকিল বলে খুলে দেয় হৃদয়ের ডালপালা।
 
কাক! নিজের ঢোল নিজে পিটিও না আর,
তুমিও প্রণাম পাবে- প্রশস্তি হবে
          কোকিল হয়ে দেখো একবার।
--------------------------------------------------
 
আমি বলেই
 
শুধু আমি বলেই তোমার কাছে আজো আসি
সকল দু: ভুলে গিয়ে দেই সজোরে হাসি
তোমার চোখের স্বপ্ন হয়ে পানার মতো ভাসি।
 
আমি বলেই তোমার গায়ে পড়তে দেই না দাগ
শোকের মাটি কামড়ে ধরে চেপে আছি রাগ
আমার যতো বন্ধু আছে হয়েছে কালনাগ।
 
আমি বলেই আকাশটাকে লাগছে এমন ফর্শা
অঝোরধারায় ঝরছে আবার চাইছো যখন বর্ষা
তোমার মনে বইছে দারুণ শীতল করা হর্ষা।
 
আমি বলেই সকল কিছু লাগছে ভীষণ ভালো
উঠোনজুড়ে ঠান্ডা বাতাস মিষ্টি চাঁদের আলো
তারার মিছিল বলছে হেসে একটু সোহাগ ঢালো।
 
আমি বলেই আমার আমি রাখিনি আর ধরে
অকাতরে আমার সকল দিছি তোমার ঘরে
এই নিশীথে একলা-একা পাতার মতো ঝরে।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.