শহীদ কাদরী’র কবিতা
সঙ্গতি
বন্য শূকর খুঁজে পাবে প্রিয় কাদা
মাছরাঙা পাবে অন্বেষণের মাছ,
ঘন জঙ্গলে ময়ূর দেখাবে নাচ
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
শূন্য হাঁড়ির গহ্বরে অবিরত
সাদা ভাত ঠিক উঠবেই ফুটে তারাপুঞ্জের মতো,
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না…
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা
ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী
গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে
মার্চপাস্ট করে চলে যাবে
এবং স্যালুট করবে
কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে
কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে
আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে
ভায়োলিন বোঝাই করে
কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো-
মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো
প্যারাট্রুপারদের মতো ঝরে পড়বে
কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা।
ভয় নেই...আমি এমন ব্যবস্থা করবো
একজন কবি কমান্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী
এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়
সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা!
অনায়াসে বিরোধীদলের অধিনায়ক হয়ে যাবেন
সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর
লাল নীল সোনালি মাছি-
ভয় নেই আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্রাস্ফীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে
শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন
আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে
গণচুম্বনের ভয়ে
হন্তারকের হাত থেকে পড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা।
ভয় নেই,
শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো
অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,
স্টেটব্যাংকে গিয়ে
গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে
একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।
ভয় নেই, ভয় নেই
ভয় নেই,
নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী
কেবল তোমাকেই চতুর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে
নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।
..................................................
হন্তারকদের প্রতি
বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়,
না, কোনো উপমায় তদের গ্রেপ্তার করা যাবে না
তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম
বুট, সৈনিকের টুপি,
এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো
বাংলা ভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলা মানুষ
এর চেয়ে ভয়াবহ কোনো কথা আমি আর শুনবো না কোনোদিন।
..................................................
অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুন
রাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপর
যেন তার নৌকা- দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনি
ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলাম
ঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতর
যেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথা
জন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরে
অপেমান ঘোড়ার ভৌতিক পিঠের মতো রাস্তাগুলো,
শব্দহীন ঠাকুর মার ঝুলির ভেতর।
দেয়ালে ছায়ার নাচ
সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই
গাঢ়, লাল মেঝেয়, ভয়-পাওয়া রাত্রিগুলোয়
যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো
কাঁচের
সচ্ছল আধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে
শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক
নিঃশব্দে ফিকে হল; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই
মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠাণ্ডা করুণ মরা মেঝেয়
..................................................
প্রেম
না, প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়-
তলোয়ার- মাছের দঙ্গল,সুগভীর জলের জঙ্গলে
সমুদ্রচারীর বাঁকা দাঁতের জন্যে যে উঠেছে বেড়ে,
না,প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকা নয়,
ঝোড়ো রাতে পুরোনো আটাচালার কিংবা প্রবল বৃষ্টিতে
কোনো এক গাড়ি বারান্দার ছাঁট-লাগা আশ্রয়টুকুও নয়,
না,প্রেম তখন আর শুশ্রূষাও নয়; সর্বদা,সর্বত্র
পরাস্ত সে; মৃত প্রেমিকের ঠান্ডা হাত ধ'রে
সে বড়ো বিহ্বল,হাঁটু ভেঙে- পড়া কাতর মানুষ।
মাথার খুলির মধ্যে যখন গভীর গূঢ় বেদনার
চোরাস্রোত হীরকের ধারালো- ছটার মতো
ব'য়ে যায়,বড়ো তাৎপর্যহীন হ'য়ে ওঠে আমাদের
ঊরুর উত্থান,উদ্যত শিশ্নের লাফ,স্তনের গঠন।
মাঝে মাঝে মনে হয় শীতরাতে শুধু কম্বলের জন্যে,
কিংবা একটু শান্তির আকাঙ্খায়,কেবল স্বস্তির জন্যে
বেদনার অবসান চেয়ে তোমাকে হয়তো কিছু বর্বরের কাছে
অনায়াসে বিক্রি ক'রে দিতে পারি-অবশ্যই পারি।
কিন্তু এখন,এই মুহূর্ত, এই স্বীকারোক্তির পর মনে হলো:
..................................................
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন?
চেয়ার, টেবিল, সোফাসেট, আলমারিগুলো আমার নয়
গাছ, পুকুর, জল, বৃষ্টিধারা শুধু আমার
চুল, চিবুক, স্তন, ঊরু আমার নয়,
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো
কবিতার লাবণ্য দিয়ে নিজস্ব প্রাধান্য বিস্তার
অন্তিমে উদ্দেশ্য যার?
বাগানগুলো শুধু আমার
মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক সাহায্য তহবিল নয়
মিল-অমিলের স্বরবর্ণগুলো শুধু আমার
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো
পররাষ্ট্রনীতির বদলে প্রেম, মন্ত্রীর বদলে কবি
মাইক্রোফোনের বদলে বিহ্বল বকুলের ঘ্রাণ?
গানের রেকর্ডগুলো আমার
ডিক্টেশন নয়, সেক্রেটারি নয়, শর্টহ্যাণ্ড নয়
রবীন্দ্রনাথের পোর্টেটগুলো আমার
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো
জেনারেলদের হুকুম দেবেন রবীন্দ্রচর্চার? মন্ত্রীদের
কিনে দেবেন সোনালি গীটার? ব্যাঙ্কারদের
বানিয়ে দেবেন কবিতার নিপুণ সমঝদার?
হ্যারিবেলাফোন্তের রেকর্ড ছাড়া অন্য কোনো আমদানি--
অবশ্য পাঠ্য হবে,
মেনে নেবেন?
মৃত্যুর পরে
রয়ে যাই ঐ গুল্মলতায়,
অন্তত নিদেনপক্ষে একলাফে পেরিয়ে দেয়াল
পৌঁছে যেতে পারি যেন আমার কবরে আমি জলন্ত শেয়াল
সন্তর্পণে নাকে শুঁকে রাত্রির নিঃশব্দ মখমলে
আমার টাটকা শব ফেরে যেন আমারই দখলে
বিঘ্নহীন, রক্তমাংস হাড়গোড় চেটেপুটে সবই খাওয়া হয়
নিজেই বাঁচাতে যেন পারি ওহে, নিজেরই নেহাৎ
ব্যক্তিগত অপচয়।
..................................................
মানুষ, নতুন শতকে
আজ আবার উদ্যত ছুরি মানুষের হাতে,
পিষ্ট হচ্ছে নারী,
কবি, তোমার বর্মগুলো বের করে নাও।
তোমার কবিতাই শ্রেষ্ঠ বর্ম আজ!
মধ্যযুগের অন্ধকার ছিঁড়ে
আবার উদ্যত ছুরি
মানুষের হাতে।
আমাদের চেনা নগরগুলো থেকে
উঠছে ক্রন্দনধ্বনি
কবি, ওকে প্রতিহত করো।
কবি তুমি জানো আমাদের প্রিয় কবিতার
অমর পঙক্তিগুলো
হত্যার বিরুদ্ধে চিরকাল-চিরকাল…
..................................................
যদি মুখ খুলি
আমি মুখ খুললে কী বলবো বলুন,
রুপালি অলংকার পরা নিগ্রো রমণীর মতো
রাত্রির শরীর জ্বলছে
কিংবা যদি বলি : কিন্নরকণ্ঠ নদীগুলো
আজো গান গাইছে-কেউ শুনবে না
এইসব কাব্যিক কথা ।
যদি মুখ খুলতেই হয়
আমি ব’লবো : আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা
ক্রমশ কমে যাচ্ছে, উত্তর বাংলায়
শীতের পোশাক যাওয়া দরকার;
প্রসারিত হবে কার দিকে? ে ব্যাপারে
সুশীল সমাজ আজ কী মনে করেন?
কবিতার এই মণিহার?
ছড়িয়ে রয়েছে আমার শহরে ।
তাদের নিধন চেয়ে
কবিতাকে অস্ত্রের মতো
ব্যবহার করতে চেয়েছি আমি বহুবার ।
কিন্তু কবিতা কেবল
ঘুরে বেড়ায় যেখানে রাঙা বল নিয়ে
বিকেলে খেলার মাঠে ছেলেরা জটলা পাকায়
অথবা মুখ গুঁজে পড়ে থাকে
মহিলাদের চুলের অন্ধকারে ।
..................................................
গোধূলির গান
জানি না
ক্লান্তির আর্তি ছাড়া
অন্য কোনো ধ্বনি ছিল কি না
সন্ধ্যার নদীর স্বরে
কে যেন মন্ত্রের মতো
উচ্চারণ করে
কবেকার ভুলে যাওয়া নাম।
দেবতার মতো তবু
মন্ত্র ছড়ায় প্রাচীন দেবদারু গাছ!
আমার বিপন্ন সংগীত
মাড়িয়ে মাড়িয়ে
হন্তারকেরা নিরাপদে হেঁটে যায়। এবং হঠাৎ
একটি অচেনা পাখি
দ্যুলোক-ভূলোকজুড়ে
বারবার রটিয়ে দেয়
আমার নতজানু পরিণতি,
আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও
হে নবীনা, এই মধ্য-ম্যানহাটানে বাতাসের ঝাপটায়
তোমার হঠাৎ খুলে যাওয়া উদ্দাম চুল
আমার বুকের 'পর আছড়ে পড়লো
চিরকালের বাংলার বৈশাখের ঝঞ্ঝার মতন।
তোমার জবার মতো চোখে রাঙা শ্রাবণের জল
পালতোলা নৌকার মতন বাঁকাচোরা ঢেউয়ে ঢেউয়ে কম্পমান
তোমার বিপদগ্রস্ত স্তন।
আমি ভাবতে পারি নি কোনোদিন এতো অসাধারণ আগুন
প্রলয় এবং ধ্বংস রয়েছে তোমার চুম্বনগুলিতে।
হে নবীনা,
যেসব চুম্বন জমে উঠবে সংগোপনে,
আমাকে শীতের হাওয়ার হাতে ছেড়ে দাও,
নেকড়ের দঙ্গলের মতো আমাকে ছিঁড়ে খাক বরফে জ্বলতে থাকা ঋতু
শুধু তুমি,
পৌঁছে দাও শ্রাবণে আষাঢ়ে রোরুদ্যমান
বিব্রত বাংলায়,
..................................................
নিরুদ্দেশ যাত্রা
অন্য একবার, উদ্দাম সমুদ্রে, ঝোড়ো আবহাওয়ায়
একটি নিমজ্জমান জাহাজের ডকে দাঁড়িয়ে দেখেছি
অপসৃয়মাণ উপকূলে,
আমার বোনের নাকফুলের মতন
জ্বলজ্বল করছে একটি গ্রাম।
‘ক্যাপ্টেন, ক্যাপ্টেন জাহাজ থামাও’।
না, আমি পারি নি চিৎকার করতে
অথচ আমার
হৃৎপিণ্ডে এখনো বেজে চলেছে জলের পর ঘর-ফেরা
ছিপ নৌকোর বৈঠার মতন! ‘ক্যাপ্টেন, ক্যাপ্টেন’
অন্তত ছ’বার উড়োজাহাজের টিকেট কিনেও
তোমাদের উঠোন পেরিয়ে
নিজস্ব আটচালার দিকে যাত্রা সাঙ্গ হয় নি এখনো।
তোমরা বিশ্বাস করো
ছয় বেহারার পালকিতে আমিও
চেপেছি একদা এবং ‘হুমনা হুমনা’
কিনার অবধি
পৌঁছে
‘পৃথিবীকে মায়াবী নদীর তীরে এক দেশ বলে
আমারও হয়েছে মনে’
সেখানে আমার গাঁ কিংবা শহর
কিংবা বাড়ি কিছুই এখনো খুঁজে পেলাম না।
..................................................
বৃষ্টি, বৃষ্টি
সহসা সন্ত্রাস ছুঁলো। ঘর–ফেরা রঙিন সন্ধ্যার ভীড়ে
যারা তন্দ্রালস দিগ্বিদিক ছুটলো, চৌদিকে
ঝাঁকে ঝাঁকে লাল আরশোলার মত যেন বা মড়কে
শহর উজাড় হবে,– বলে গেল কেউ– শহরের
পরিচিত ঘণ্টা নেড়ে খুব ঠাণ্ডা এক ভয়াল গলায়
এবং হঠাৎ
সুগোল তিমির মতো আকাশের পেটে
বিদ্ধ হলো বিদ্যুতের উড়ন্ত বল্লম!
গর্জে ওঠে যেন অবিরল করাত–কলের চাকা,
মেঘ, জল, হাওয়া,–
নড়ে ওঠে টিরোনসিরসের মতন যেন প্রাচীন এ–বাড়ি!
আর চকচকে ঝলমলে বেসামাল এভিনিউ
এই সাঁঝে, প্রলয় হাওয়ার এই সাঁঝে
(হাওয়া যেন ইস্রাফিলের ওঁ)
ত্রাস আর উৎকণ্ঠায় হঠাৎ চমকে
দ্যাখে,– জল
অবিরল
জল, জল, জল
তীব্র, হিংস্র
খল,
ক্রন্দন, ক্রন্দন
নিজস্ব হৃৎপিণ্ডে আর অদ্ভুত উড়োনচণ্ডী এই
বর্ষার ঊষর বন্দনায়
রাজত্ব, রাজত্ব শুধু আজ রাতে, রাজপথে–পথে
বাউণ্ডুলে আর লক্ষ্মীছাড়াদের, উন্মূল, উদ্বাস্তু
বালকের, আজীবন ভিক্ষুকের, চোর আর অর্ধ–উন্মাদের
বৃষ্টিতে রাজত্ব আজ। রাজস্ব আদায় করে যারা,
পালিয়েছে ভয়ে।
বন্দনা ধরেছে,– গান গাইছে সহর্ষে
উৎফুল্ল আঁধার প্রেক্ষাগৃহ আর দেয়ালের মাতাল প্ল্যাকার্ড,
শিখরে আসীন, উড়ে–আসা বুড়োসুড়ো পুরোন সাইনবোর্ড
তাল দিচ্ছে শহরের বেশুমার খড়খড়ি
কেননা সিপাই, সান্ত্রী আর রাজস্ব আদায়কারী ছিল যারা,
পালিয়েছে, মহাজ্ঞানী, মহাজন, মোসাহেবসহ
অন্তর্হিত,
ধুয়ে গেছে, মুছে গেছে
কেবল করুণ ক’টা
বিমর্ষ স্মৃতির ভার নিয়ে সহর্ষে সদলবলে
বয়ে চলে জল পৌরসমিতির মিছিলের মতো
নর্দমার ফোয়ারার দিকে,–
ভাঙা কাচ, সন্ধ্যার পত্রিকা আর রঙিন বেলুন
মসৃণ সিল্কের স্কার্ফ, ছেঁড়া তার, খাম, নীল চিঠি
লন্ড্রির হলুদ বিল, প্রেসক্রিপশন, শাদা বাক্সে ওষুধের
সৌখীন শার্টের ছিন্ন বোতাম ইত্যাদি সভ্যতার
ভবিতব্যহীন নানাস্মৃতি আর রঙবেরঙের দিনগুলি
এইক্ষণে আঁধার শহরে প্রভু, বর্ষায়, বিদ্যুতে
নগ্নপায়ে ছেৎড়া পাৎলুনে একাকী
হাওয়ায় পালের মতো শার্টের ভেতরে
ঝকঝকে, সদ্য, নতুন নৌকার মতো একমাত্র আমি,
নূহের উদ্দাম রাগী গরগরে গলা আত্মা জ্বলে
কিন্তু সাড়া নেই জনপ্রাণীর অথচ
জলোচ্ছ্বাসে নিঃশ্বাসের স্বর, বাতাসে চিৎকার,
জলের আহ্লাদে আমি একা ভেসে যাবো?
বোধ
শালিক নাচে টেলিগ্রাফের তারে,
পুকুর পাড়ে ঝোপের ওপর আলোর হেলাফেলা
এই এলো আশ্বিন,
কেন শূন্য হলো দিন?
আকাশ আপন ইন্দ্রনীলের ঝলক পাঠায় কাকে?
এই এলো আশ্বিন,
কেন শূন্য হলো দিন?
নওল–কিশোর ছেলেবেলার গন্ধ মনে আছে?
ব্যতিব্যস্ত মস্তো শহর জুড়ে
এই এলো আশ্বিন,
কেন শূন্য হলো দিন?
কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না
একটি মাছের অবসান ঘটে চিকন বটিতে,
হেলায়–ফেলায় পড়ে থাকে
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,
একটা সবুজ টিয়ে,
হীরার কৌটোর মতো টলটল করছে শিশির
এবং পাখির প্রস্রাব;
পত্নীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে, চুল্লির লাল তাপে
একটি নরম শিশু খরগোশের মাংস দেখে আহ্লাদে লাফায়
সব রাঙা ঘাস স্মৃতির বাইরে পড়ে থাকে
বৃষ্টি ফিরিয়ে আনে তার
প্রথম সহজ রঙ হেলায়–ফেলায়
কোথাও কোনো ক্রন্দন তৈরি হয় না,
..................................................
স্মৃতি : কৈশোরিক
অদৃশ্য ফিতে থেকে ঝুলছে রঙিন বেলুন
রাত্রির নীলাভ আসঙ্গে আর স্বপ্নের ওপর
যেন তার নৌকা– দোলা; সোনার ঘণ্টার ধ্বনি
ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত শহরের! আমি ফিরলাম
ঝর্ণার মতো সেই গ্রীষ্ম দিনগুলোর ভেতর
যেখানে শীৎকার, মত্ততা আর বেলফুলে গাঁথা
জন্মরাত্রির উৎসবের আলো; দীর্ঘ দুপুর ভরে
অপেমান ঘোড়ার ভৌতিক পিঠের মতো রাস্তাগুলো,
শব্দহীন ঠাকুরমার ঝুলির ভেতর।
দেয়ালে ছায়ার নাচ
সোনালি মাছের। ফিরে দাঁড়ালাম সেই
গাঢ়, লাল মেঝেয়, ভয়–পাওয়া রাত্রিগুলোয়
যেখানে অসতর্ক স্পর্শে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের
সচ্ছল আধার, আর সহোদরার কান্নাকে চিরে
শূন্যে, কয়েকটা বর্ণের ঝলক
নিঃশব্দে ফিকে হল; আমি ফিরে দাঁড়ালাম সেই
মুহূর্তটির ওপর, সেই ঠাণ্ডা করুণ মরা মেঝেয়
..................................................
মাংস, মাংস, মাংস…
আমাকে রাঙাতে পারে তেমন গোলাপ
কখনও দেখি না। তবে কাকে, কখন, কোথায়
ধরা দেবো? একমাত্র গোধূলি বেলায়
সবকিছু বীরাঙ্গনার মতন রাঙা হয়ে যায়।
শৈশবও ছিলো না লাল। তবে জানি,
বিন্দু বিন্দু লাল ফোঁটা
তবে হাত রাখবো ছুরির বাঁটে? সবুজ সতেজ–
দৃঢ়মুখ সার্জনের রূঢ়তম হাতের মতন
খুঁজে নিতে হবে সব জীবনের রাঙা দিনগুলি…
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Facebook: facebook.com/samoiki
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments