সীমান্ত আকরাম’র কবিতা

ত্রিকাল বিদীর্ণ হাহাকার
 
আজও বাতাসে রক্তের গন্ধ নিশিদিন
ছাপছাপ রক্ত ভিজে ভিজে
মাঠ-ঘাট আর নদী প্রান্তর।
ক্ষুধার্ত খামার জুড়ে
মায়ের চোখের মতো
শান্তিময় পুকুরে জলের ঢেউয়ে
রক্তাক্ত বিস্তার
ডুবে আছে বাংলাদেশের প্রসারিত রক্তপুঞ্ছে
 
নিঃশ্বাসে বিঃশ্বাসে রক্তের গন্ধ
ছিন্ন ভিন্ন নিশিদিন,
ত্রিকাল বির্দীণ এক হাহাকার যেন
ধু ধু মরুভূমির মতো,
পড়ে আছে বিস্তীর্ণ বিশাল
একান্ত অচেনা আজ
বাংলাদেশের মানচিত্র!
--------------------------------------------------
 
বৃষ্টিকে কথা দিয়েছি
 
গতরাতই চোখ ভরে ঘুমোলাম
যখন জাগলাম, চোখ বন্ধ করে
এক নিঃশ্বাসে আয়নায় তাকিয়ে
দেখলাম মুখ,
নিদ্রা কাটেনি, তবুও ঘুমোতে চায় না চোখ
ঘুমের সন্ধানে লালচে বর্ণ দারণ করছে চোখ দুটো।
 
ঝড় বৃষ্টির রাতে টিনশেড ঘরে আমিও
খুলে রাখি ঘুমহীন চোখ,
আমার দুচোখের অনীহা ঝেড়ে ফেলি
দূর জানালার ফাঁকে
এই ঝড়বৃষ্টির রাতে না ঘুমালে কী বা হতো
অথচ বিছানা, বালিশ বুকের দীর্ঘশ্বাস
আমি বৃষ্টিকে কথা দিয়েছি
মেঘকে আড়াল করে আসতে পারলেই
গত রাতের মতো ঘুমোতে যাবো
দুচোখ ভরে।
--------------------------------------------------
 
প্রত্যুষের প্রত্যাশা
 
অসীম চাওয়া-পাওয়া আর স্বপ্নের উপক্রম
উপত্যকার মেঘের মতো মিলিয়ে গেছে,
বিপণ্নরাতের প্রত্যাশিত আর্তিগুলো নিয়ে
ভোরের আলোয় পেখম মেলে দেখি
সম্ভাবনার বীজ অঙ্কুরিত হয়নি;
সংখ্যাতীত স্বপ্নের কলিগুলো অপ্রস্ফুটিত।
 
তখনো বিবর্ণ রাতের বাসরে
আমাদের স্বপ্নের আকাক্সক্ষাগুলো জেগেছিলো;
কিন্তু, নিস্প্রভ প্রাণে মৃত্যুর ভাষা
গুঞ্জরিত হয়েছিলো জীবনাশ^াসে
অন্ধকারে স্বপ্নের প্রলয়ে সম্ভাবনা হয়েছিলো উচ্চকিত।
 
এখনো মাঝরাত, ভোর তো অনেক দূরে
নতুন করে দীপ্তলয়ে যাত্রা শুরু করতে হবে
আমাদের মুখে উচ্চারিত হলো
সাহসের কণ্ঠস্বর
জীবনের নানা রঙ-বেরঙের
রূপালি পর্দা উঠলো দুলে।
 
আবারও ভোরের মৃদুমন্দ বাতাস
দোলা দিলো আলোর আশ^াসে
আলোকিত প্রত্যুষের প্রত্যাশায়
আবার জাগতে হবে।
--------------------------------------------------
 
পার করি প্রহরের খেয়া
 
চরাচরে চাঁদ জাগে শুধু
অশ্রুহীন বিষাদ-গোলক
যেন রাত রোদনের বেনামী জগত
অনন্ত সময় ধরে ঝুলেআছে সীমানা বিহীন
আমিও তো কতরাত এভাবেই জেগে থাকি
পার করি প্রহরের খেয়া
 
নিদ্রামগ্ন সহপাঠী, লেখার টেবিল
চেয়ার, চিলমারি মগ, বইপত্রের স্তুপ
দরোজা-দেয়াল-বেলকনি
ল্যাম্পপোষ্টের মিটমিট আলো
সবকিছুই যেন ভেঙ্গে ভেঙ্গে আমি জেগে আছি,
যমুনার জলে ভাঙ্গা শত শত চাঁদের মতোন
বিসর্গ বঞ্চিত সময়,
জলে ভাসে শূন্যতার শত ভঙ্গ রূপ
একাই এসেছি মনে হয়,
একাই এসেছি, যেনো একা, একাই
খেয়াপারের অপেক্ষা শুধু
যাত্রীরা যে যার পথ বাধ্য হয়ে একত্রে মিলায়
আর আমি একাকিত্ব, অস্তিত্বের মতো নিরুপায়
জল পড়ে পাতা নড়ে
যমুনার স্রোতে নিয়মিত নদীর মতোন ভাঙ্গন
চরাচরে চাঁদ জাগে শুধু
নিসর্গের একক নয়ন
যেনো, যাত্রী খেয়াহীন অবিকল আমার মতোন
পার করি প্রহরের খেয়া।
--------------------------------------------------
 
আল মাহমুদ স্মরণে
 
আমরা একটি সুশীতল বটবৃক্ষের ছায়ায়
খানিকটা সময় বসতে পেরেছিলাম;
আমাদের পরম গৌরব।
এমন বটবৃক্ষ আমাদের এই অবিনাশী পৃথিবীতে
সচরাচর দেখা যায় না,
সকলের শ্রদ্ধার খোরাক
যাঁর কর্মময় জীবনের বিপুল অরণ্যের
শাখায় শাখায় বিচিত্র সমাবেশ,
 
তিনি এক বিস্ময়কর
ঐতিহ্যের ঐশ্বর্যময় ভান্ডার খুলে
দশ দিগন্তের লোকজ বাংলার হীরক পান্না খচিত
কাব্যসুধা ইথারের তরঙ্গে ছুঁয়ে দেন
লোক লোকান্তরে...
তাঁর কাব্য দর্শনের বিশ্বাস
নিজস্ব রাজপথ কেটে চলে,
কদর রাতের প্রার্থনায়
কালের কলস থেকে
দুলে ওঠে মায়াবী পর্দা,
বাঁক ঘুরা ঘোলা জীবনের পঙ্কিলতায়
বিচূর্ণ আয়নায় আঁকেন
নিজের সেলাই করা মুখ।
 
মিথ্যাবাদী রাখালের পথ ধরে
বখতিয়ারের ঘোড়ায় চড়ে
প্রেম প্রকৃতির স্পন্দনে
তুলেন মাটির কাঁপন।
অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্নার আয়োজন দেখে
সুখ দুখের ঘরোয়া রোজনামচায়
সৌরভের কাছে পরাজিত হয়ে
পথের নিশানা খোঁজেন!
পাখির কাছে ফুলের কাছে মনের কথা কয়,
পাখির কথায় পেখম মেলে
যেভাবে বেড়ে ওঠি, গল্প লেখেন।
জীবনের বর্ণিল কথামালায়
তাঁরই কথার মন্দিরা বাজে।
পিপাসার বালুচরে হেঁটে, বিরামপুরের যাত্রী হয়ে
নিসর্গের কাছাকাছি আসেন,
সতেজ পবিত্র হাওয়ায় স্নাত হউন।
রাত্রির নক্ষত্র হয়ে জ্বলে ওঠেন,
সূর্যের সোনালী সম্ভাষনে
এক একটি বর্ণাঢ্য দিনকে অতিক্রম করে যান।
 
তাঁর কাব্য শ্যামলিমায় পুষ্পিত উদ্যানে
শব্দের ঝংকারে ময়ূরীরা গর্বিত পেখম তোলে
বিশ্বাসী চেতনায় ধ্রুপদ সঙ্গীতের নির্ঝর ধারায়
প্রাপ্তির নহর অবগাহন করে।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.