শাহনাজ পারভীন’র কবিতা

আমার ঈদের চাঁদ উঠবে না এ বছর
 
শাওয়ালের চাঁদ জুড়ে আকাশ হাসবে কিন্তু
আমার ঈদের চাঁদ উঠবে না এ বছর
শুধুই কি আমার ঘরে এমন দৃশ্য হবে?
তা তো নয়, ঘরে ঘরে, দেশে দেশে, আকাশে বাতাসে,
চারিদিকে, মা,বাবার বিলাপে সে বিরহের ঢেউ আছড়ায়!
হু হু কান্নার ধ্বনি, শব্দ রোল হাওয়ার বেদনা মিশে
প্রকৃতির প্রতিশোধ নিতে এক পায়ে খাড়া!
কেনাকাটা করি নি, হাসি নেই, আনন্দ উচ্ছ্বাস কোনো;
রঙিন ঝলমলে, জাফরান, নাশপাতি, এলাচির ঘ্রাণ
মহেদির লাল রং কিবা নখ জুড়ে রংয়ের পালিশ।
ঠোঁটের কোনায় নেই ঝলমলে হাসি, মনের শান্তিও
 বিদুরিত আজ, উদাত্ত হাত নেই জড়িয়ে ধরার
তবুও ভুবন জুড়ে আনন্দ রাশি, গোপন হাসি!
উপচে পড়ছে যেন আজ চাঁদ রাত-
অপেক্ষায় উন্মুখ কখন হবে সে কাঙ্ক্ষা সকাল!
..................................................
 
হাত
 
নির্জলা খালি হাত এমন মারণাস্ত্র হবে, সে আর কে বুঝেছে কোন কালে?
এ হাতে না আছে কোন অস্ত্র, না আছে হিংসা, ধ্বংস, প্রতিবাদ কোনো ছলে!
 
তবু ফুসফুস, শ্বাসতন্র চিবিয়ে মিশে যায় রক্ত কণিকা,
অন্ত্র অচল হয়ে জীবনের শেষ হয় সব লেনদেন।
করোনা আছে কি না জানি না,
তবু সেই ছোঁয়া থেকে বাঁচি যেন হায়েনার ছোবল নিদেন।
 
করমর্দন, কোলাকুলি, অহেতুক গলাগলি,
 নিজস্ব মানুষ থেকে দুরত্ব বজায় রাখা সহজাত আজ ।
সত্যিকারের বিশ্বাসঘাতক কর্মোদ্যম হাত
বাইশ সেকেন্ডে সুরক্ষা নিশ্চিত করে তার কারূকাজ।
 
মানুষের হাত থেকে সৃষ্ট এমন ভাইরাস ছিল কম;
মশা, মাছি, বাদুড়, ইঁদুরের পর্যায়ে এখন মানুষ!
কলেরা, বসন্ত, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা, নিপা,
 ডেঙ্গু বিশ্বময় সব ছাপিয়ে এলো করোনা ফানুস।
 
প্রেমিক প্রেমিকার হাত ছাড়া বাঁচা যেতো অনন্ত সময়?
পিতা- পুত্র, স্বামী- স্ত্রী, মাতা- সন্তান সব!
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রসায়ন গুলো নিমেষে মুছে যাবে!
ইতিহাস থেকে মুছে যাবে সব কলোরব?
 
প্রবাসী স্বামীর আগমনে স্ত্রী পালালেন সভয়ে-
এমন কাহিনী কেউ জেনেছেন কোন দিন?
এ হাতেই তৈরি হয়েছিল কাবা ঘর, মসজিদে নববী,
দারূস সালাম, মসজিদুল হারাম সেদিন।
 
এ হাতেই তৈরি মাঠ, ঘাট, নদী, সমুদ্র বন্দর, শহর, বাজার, হাট, গ্রাম নিরবধি।
পশু পালন, কৃষি কাজ, শিল্পকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসস্থান সমূহ অবধি।
এ হাত গড়েছে তাজমহল, আইফেল টাওয়ার, গীর্জা, মন্দির. মঠ
এ হাত গড়েছে সোনার সংসার খুলেছে পাকানো জট
 
অথচ সেই হাত অচল এখন, গোটানো, চার দেয়ালে বন্দি স্বেচ্ছায়, অসহায়।
এখনও সময় আছে ছেড়ে ফাঁকি; অন্যায়, অত্যাচার, অনাচার রাখি তুচ্ছতায়।
হে আøাহ্! মহামহীম! ইয়া রাহীম ফিরিয়ে দাও সেই হাত-
সহমর্মিতার পৃথিবী গড়ি আবার অনাবিল, অনায়াস।
আমাদের ক্ষমা করো, মহান আল্লাহ্! প্রভু! রহম করো
ফিরিয়ে দাও ফের হাতময় শান্তির আবাস।
..................................................
 
এমন সকাল আসে নি কখনো
 
এমন সকাল আসেনি কখনো, এমন দিবস, রাত্রিকাল-
এমন সময় আগে তো আসেনি, কেউ দেখেনি কোন কাল!
সূর্য উঠেও ওঠেনা সূর্য, সকাল হয়েও শুরূ হয় না দিন-
রাত্রি নামে না রাত্রির বেশে, চোখ মুখ তার ধু ধু মলিন।
 
পথঘাট সব হু হু করে কাঁদে পথিক কোথায়? পথে নেই কেউ-
নারী ও পুরূষ, কিশোর, কিশোরী, নেই আজ পথে শিশুদের ঢেউ।
নগর, বন্দর, জলাশয়, নদী, আত্মীয়-স্বজন, বৃক্ষ ও বন-
 যেখানে যে ছিল ঠিক সেখানেই, দাঁড়িয়েই আছে আজ এখন।
কারো কোন কিছু নেই করবার, সকলেই আজ বন্দি গৃহে-
 যে যত করূক ছল চাতুরি অথবা আটুক ফন্দি হে!
 
মানুষ আজকে শত্রু মানুষের, শত্রুও আজ নিজের হাত-
করোনা সময়ে অসহায় আজ, হতাশাগ্রস্ত অকস্মাৎ
তাই ঘরে থাকো সন্তান আমার, গৃহে থাকো ওগো বন্ধু স্বজন-
ঘরে আছি আমি, ঘরে থাকো তুমি, বেঁধে রাখো ঘরে দেহ ও মন।
 
খেটে খাওয়া জন, বিপদে ভীষণ বাইরে না গেলে মেলে না ভোজ-
অথচ ক্ষিদে দাউ দাউ জ্বলে, দেহের কোটরে কেবা রাখে খোঁজ।
দিনরাত ক্ষিদে খুঁটে খুঁটে খায়, খুচে খুচে মারে পেটের ভেতর-
অথচ কষ্ট গুমোট নীরব ভাতহীন কত সইবে গতর!
 
এক, দুই, তিন, একমাস হলো যাবতীয় দিন এখনো বাকি-
বল হে বিশ্বের মালিক বলো, এ ক্ষিদে আমরা কোথায় রাখি?
অথচ তুমি তো কত মহাজন কত বড় ত্রাতা! জানি সেই সব!
আজকে কী হলো বিশ্বে তোমার ঝাঁঝ বেড়েছে, মহোৎসব!
ফাঁকা চাল, ডাল, নুন, মরিচের কৌটা গুলো সব উপুড় আজ-
চাল চোর তবু খেলছে খেলা-- চিরকাল তারা ধান্দাবাজ!
 
জনগোষ্ঠীর নেপথ্য কাহিনি কেড়েছে তাদের অধিকার আর-
ভাত দাও; সব হাভাতের দল নইলে খাবে যে নদীর পাড়।
আকাশ, জমিন, পাহাড়, প্রাচীন চৈত্রের ফাঁটা মাঠ খাবে আর-
খাবে বৃক্ষ, পথ, ঘাট, পশু, মানুষ, খাবে সে ধারে না তো ধার!
 
কোন কিছু খেতে বাদ রাখবে না, যখন পেটে তার খিদের ঝাল-
অতীত জেনেছে, ভুখা আজ তারা খেয়ে ফেলবেই কাল মহাকাল।
সমুদ্র ছেড়েছে হাজার তিমি উপকূলে আজ গড়েছে বাস-
বন্যপ্রাণী বন ছেড়ে তারা প্রকাশ্য রাস্তায় গড়ে আবাস।
উঠেছে তুফান ফুটেছে আগুন দেশে দেশে আজ মড়ক কাল-
গণ কববরের অভ্যুত্থানে মানুষের লাশ বড় জঞ্জাল!
 
জেনেছি তিনিই পারেন যখন, ইচ্ছে যেমন তেমন সাজ-
মহাপ্রভু! তুমি ক্ষমা করে দিয়ে ফিরিয়ে দাও ফের হাতের কাজ।
..................................................
 
কোভিড ১৯
 
নোটিসবিহীন সব কিছুই স্থবির রাত্রির মতো আবাল অন্ধকারে!
গুমড়ে মরে, নিপতিত গভীর ঘুমের মতো অঝোর নিস্তব্ধতার স্বরে!
ইচ্ছা হলো দখল করে নিলো, ক্রীয়নক হেলনে পুরো পৃথিবী, মানুষ বুঝি পাখি!
মারণাস্ত্র মানুষের কাঁধে কাঁধে!
অথচ এখন খিল এঁটে বসে আছে রুদ্ধ প্রাসাদ আজ এ কি!
               
ইচ্ছা হলো প্রার্থনালয় ভেঙ্গে দিতে উন্মত্ততায়, নগ্ন দামামা বাজে!
উল্লাসে। হুংকারে।
সমগ্র বিশ্ব ব্যাপী বিকট ঝাঁকুনি। কে পারে?
অদৃশ্য জীবানু নাশে? স্যানিটাইজারের ফাঁদে সে হাসে।
ভাসে রক্ত স্রোতে, ফুসফুস, ধমনীর কোষে কোষে,
আসে মরণ দল বেঁধে।
 
 চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো,
বুঝেছেন তো মহাজন! বারে বারে।
 সেই মুসা নবী, নবী ঈসা, ইউনুস নবীর মাছের পেটে!
 আদ, লুত, সামুদ জাতির অতীত ইতিহাস দেখি,
এখনও ফ্রাউন মমিতে, কঙ্কালে।
ভুলে যাই, সেই পারে তুলে নিতে প্রকৃতিতে
বড় প্রতিশোধ বারে বারে!
 
আমরা সবাই অসহায়,
এক ফুঁ তে উড়ে যাবো ফুটন্ত তুলোর মতো আকাশে, বাতাশে।
অসহায় ঘুরে ঘুরে! প্রকৃতির মাঝে অস্থির দূরে দূরে।
তারপরও কত অহংকার,
কত দাপট, কত শক্তির অহমিকা, অথচ ভুলে যাই,
কত নশ্বর এই পৃথিবীর ধুলি, অকাতরে ঝরে যাবো।
 চোখের নিমেষেই লাশ নামে পরিচিত হবো আরবারে।
অথচ পরাক্রমশালী শুধু তিনি !
  
কাবার চার পাশে তাওয়াফহীন পিনপতন নীরবতা,
ঝকঝকে প্রান্তর নীরব, নিস্তব্ধ, কোলাহল নেই কোনখানে,
তাওয়াফ বিহীন ক্বাবার এমন ছবি কে দেখেছে কোন কালে!
 
রাত্রিদিন অসহ্য গরম আর লু হাওয়া মিলিয়ে
মিস্ফলা ব্রীজের নীচে মাথা নীচু হাঁটছে না ওমরা'র কাফেলা দলে দলে,
তাহাজ্জ্বতের নির্ঘুম রাত্রি নিরুদ্বিগ্ন ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে নির্দ্বিধায় স্বকরুণ হাহাকারে।
দেশে দেশে মসজিদ আছে, জুম্মা নেই,
মানুষ আবদ্ধ ঘরে ঘরে।
ছোঁয়া ছুঁয়ি বন্ধ, মোলাকাত জাদুঘরে!
তাহাজ্জ্বতের মধ্য রাত্রি বড় নিস্তব্ধ মদিনার পথে পথে।
ঝাঁক বেঁধে উড়ে চলা কবুতর ভুলে গেছে পাখা মেলে উড়িবার পথ!
 
টাইম স্কয়ার এখন শূন্য,
কারফিউ, লকডাউন, আইসোলেশনের
নিদারুণ নিস্তব্ধ হাহাকার করে দিনরাত
লন্ডন ব্রীজে হাঁটছে না মানুষ,
কোলাহলহীন প্রান্তরে খাঁ খাঁ করছে, দখিনা হাওয়ার ক্রন্দন অগোচরে।
ভেটিক্যানে মনুষ্যবিহীন, কবুতর ওড়ে দলে দলে
ভেনিসের জলে ভাসছে না নব দম্পতি আর পর্যটক,
সেখান মায়াহীন কায়া খেলা করে ধীরে ধীরে।
 
 সমগ্র ইতালী অবরুদ্ধ আজ,
 লাশের বহর কাঁধে কাঁদছে শহর অবিরাম।
 শূন্য গগনে উড়ছে না প্লেন আর সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকছে না ট্রাক আর ট্রেন।
 
 চীনের উহান শহর মুখে মুখে বিশ্বময় ঘোরে
 আর তার অধিবাসী অবরুদ্ধ, ক্যাম্পাস, গৃহের অভ্যন্তরে
 কোভিড ১৯ মাত্র দুটি শব্দে সারা পৃথিবী কম্পমান থরে থরে।
 
 আর বাংলাদেশ? প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নোবেল করোনার নাম মৃত্যুর দুয়ারে দুয়ারে
 কোয়ারেন্টাইনে হাজার হাজার মানুষ গুমরে কাঁদে।
 দাপটটা দেখছেন তো!
 মহান আল্লাহ্ সব পারেন
 পারে। নিরন্তরে। গড়ে। ভাঙ্গে। গড়ে।
 
 প্রতিশ্রুতিশীল হও নবীন যুবক,  সন্তান আমার!
 আশায় বাঁধো বুক আরও একবার!
 মানব সভ্যতা এখন গভীর সংকটে, হাত বাড়িয়ে দাও নিরন্তর প্রয়াসে।
 আমরা যদি নাও বাঁচি, আর যদি দেখা নাও হয়;
 জীবন- যাপন মহাকালে, জানাজা ও দাফনের ছলে।
 মনে রেখো, পৃথিবী নিশ্চয়ই টিকে যাবে;
আগামী প্রজন্ম ঠিক থেকে যাবে, তোমাদের পুনঃপুন আসিবে সময়।
 
এখনও সময় আছে পরিশুদ্ধ হও, পৃথিবী!
আমরাই প্রকৃতিকে ক্ষত বিক্ষত করি উল্লাসে!
উন্মত্ত বিলাপে সে কাঁদে। আমরা ধারি না ধার,
রোধে, প্রতিরোধে। সুরক্ষার বাঁধে।
পবিত্রতা ঘোষণা কর। ক্ষমা চাও বারে বারে।
কারণ, ইতিহাস আরবারে, ঘুরে ফিরে আসে লোকালয়ে।
শিক্ষা দিতে, আসে নিতে।
..................................................
 
আহা বৃষ্টি! তুই আয় আজ
 
এই বরষায়
ঘন তমসায় এলি বৃষ্টি কেন অবেলায়
এলি বল তুই, এই শহরে
এলি বহরে সাথে আনলি ডেঙ্গু বাংলায়
স্বচ্ছ পানির যত ফোয়ারায়।
 
 সাথে মেঘ আর সাথে মল্লাা
 এলো জ্বরাসহ যত মৃত্যূ,এলো হল্লা
 সাথে ভিড় লাগে, লাগে ভাট্টা
 কেন, বল তুই আজ একাট্টা
  এলি কেবিনে
  ঈদ রাতে আজ হসপিটাল।
 
  কাঁদে বাচ্চা, কাঁদে শিশু আজ
  নির্ঘুম মার চক্ষু
  ঘুম নেই বাবা ব্যস্ত।
  নেই ছুটি আজ সেবিকার
  ঘুমহীন সব ডাক্তার
  বল বৃষ্টি
  অনাসৃষ্টি
  এলি সাথে কেন ঢাকাবাসীদের!
 
  আহা বৃষ্টি তুই বেজে যা
  বিরামহীন তুই নেচে যা
  ভেসে যাক যত লার্ভা
  ভেসে যাক পানি, রক্ত
  হোক অক্ত--
  যাক ভেসে যাক তোর স্রোতে আজ
  যত জুলুম আর যত পাপাচার
  ভেসে যাক যত অনাচার
  আর
  ভেসে যাক যত মিথ্যা।
 
  আয় বৃষ্টি আজ শহরে
  আয় বৃষ্টি সব জেলাতে
  আয় বৃষ্টি জনসভা আর
   ঈদ মার্কেট, ঋষি মেলাতে
    ভেসে যাক যত ময়লা
   পুড়ে খাক হোক আজ কয়লা
   সুখে থাক যত পরিবার
   তুই আয় সব ফের গড়িবার
   তুই আয় আজ হেসে উঠতে
   তুই আয় আজ ফুল ফুটতে
   তুই আয় তুই আয় আজ
   আহা বৃষ্টি!
   কি যে মিষ্টি লাগে সুবাস আজ
   তুই আয় আজ, তুই আয় আজ।
..................................................
 
আমার ইতিহাস
 
সেই যে সিরাজ উদ্দৌলার পঞ্চাশ হাজার সৈন্য কিন্তু ব্রিটিশ ছিলো তিন হাজার তিন
অথচ সিপাহ সালার উবু হয়ে পড়ে থাকে সবুজ গালিচার নেশায় বিলীন
মসনদের ঝালর আটা নরম গদি তাকে বুদ করে ফেলে রাখে চুর
আর তারই নপংশুক পুত্র অনৈতিক চুক্তিতে উঁমিচাদের বশীভূত দিন
হা মীরণ! নাগাল কি পেয়েছিলে কোনদিন রাজান্য লুৎফার!
 
লোভী লর্ড বেন্টিকের গল্প আর শোনাবো না আজ
উঁমিচাদ না পাবার বেদনায় কোথায় হারালো তা খুঁজুক ইতিহাস
আমরা বরং ক্ষুদিরামের ফাঁসির মঞ্চ থেকে ঘুরে আসি
অথবা চলুন দুদু মিয়ার দেশে একবার। 
 
মছলন্দপুরের নিস্বব্ধ গ্রাম কেমন সরব করেছিল কাকেদের সরব চিৎকার
একাত্তরের সূর্যহীন তমিস্রার আলোর সকাল!
মধুমতি ব্রীজ যখন রাতের অন্ধকারে উড়ে গেলো নিমিষেই
সতীশ বাবুর গুদাম দাউদাউ জ্বলে উঠে সোনালি সব আঁশ
রক্তের নিশানায় আগুনের লেলিহান শিখা দাপায় তরপরায় 
গিরে পোড়া বাঁশের আওয়াজ ছুটেছে টিনের চাল থেকে চাল
প্রসব বেদনায় ছটফট প্রসুতি মাতাদের বেদনা বিকাল
ছুটছিল হলদে ডাঙার ঘাটে; জ›মবেদনা কি যুদ্ধ চেনে?
তাই তার হা মুখে নৌকার গলুইয়ে জরায়ু খুলে দেয় বত্রিশ বাঁধন।
 
অতঃপর প্রদোষের গগন বিদারী মুষ্ঠিবদ্ধ চিৎকারে
লোলুপ পুরুষেরা মুহূর্তেই ফেলেছিল চোখের পলক
আর আমাদের স্বাধীনতা ভুমিষ্ট শিশুর চিৎকারে দশদিক, ধান ক্ষেত সবুজে
প্রস্ফুটিত গোলাপের লালে হাতে নিলো পতাকা নতুন।
 
উনসত্তর হাজার গ্রাম, লোকালয়, নগর, অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ আজ
কৃষক জমিনে ফেরে হর্ণ বাজে সবুজ লাঙল
তারই ঘাম, নুন মেখে কচি আম বেড়ে ওঠে মুকুলে আবার
পেয়ারার সবুজ, মিশে যায় কাচা মরিচের উদগ্র কামনায়
আমলকীর কস্টা অম্ল স্বাদ
পানি মাখা মিষ্টির নুনের মতো অগণন ইতিহাস তোমার আমার
 
আমার দেশের মাটি, মধুমতি জল, বিবক্ষা আকাশ, নিমফুলে ঝড়, সূর্যের রোদ, 
সবকিছুই চোখের সামনে, ভেসে ওঠে মানচিত্র; মাটি ও মানুষের মানবিক বোধ।
অনৈতিক আগুন, ‘এফ আর টাওয়ার’, নিমতলী, নোতুন, পুরনো ঢাকার;
বাতাসে মাংসের গন্ধ, পুড়ে যাওয়া ঘর, নতুন সংসার
ধ্বসে যাওয়া প্লাজা, ধর্ষণ, মৃত্যূ, চিরকুটি আত্নহত্যা বারবার
বোবা গণতন্ত্র, মানুষের বেদনা কণ্ঠ হারাবার।
 
সেই থেকে আজ অবধি যুদ্ধ চিনে নিলো এ প্রান্তর
যেমন ঝড় আসে আকাশ কাঁপিয়ে -দাঁপিয়ে
বাতাস ফুলে ওঠে মধুমতির বুক তরঙ্গায়িত সমুদ্রের জল
এবং জন্ম নেয় আজও যুগে যুগে অসংখ্য নাঈম
আমাদের সন্তান পলিথিন বেঁধে দেয় পাইপের মাথায়
 ছোট হাতে ঠাঁই বসে থাকে ভিজে ভিজে পায়ে তার সমুদ্র স্রোত
 আর অগুনতি চোখ দেখে আগুন দুপুর।
 
 তোমরা আগুন দেখো না, তোমরা ছবি তুলোনা শুধু
 তোমরা এগিয়ে আসো জীবন বাঁচাবার, নাগরিক অধিকার;
 যেভাবে বাঁচালে দেশ বেঁচে যায়, বেঁচে যায় ইতিহাস আমার, তোমার
..................................................
 
বুলেটের দেশে আজ
 
বুলেটের দেশে আমি বাদ্য খুঁজি না আর-
কবিতায় খুঁজি না আর প্রেমিক হৃদয়!
দ্রিম দ্রিম আওয়াজে শুনি শুধু হাহাকার-
গুলিবিদ্ধ কান্নায় আকাশ ধুমায়িত হয়।
 
 চোখ আর চুম্বনের মাদকতা দেখে না, ভুল করে-
তাহিয়ার অশ্রুমুখ মুহুর্মুহুূ ভাসে বারবার।
'তুমি কানতেসো যে আব্বু' অনির্বাণ হৃদয় কন্দরে-
 বেদনার শ্রেষ্ঠ বাণী হয়ে শতবার কানে বাজে আরবার ।
 
'তুমি ঘুমাও, জরুরি কাজ আছে আম্মা আমার'-
তুমি ঘুমাওনি আব্বু, আমি ঘুমাই কি করে?
বুক তার ঝাঁঝরা হয় গুলির আঘাতে বারবার-
ঘুমায়নি সন্তান, পিতা তার ঘুমায় অঘোরে।
 
 ফোন তার বুক পকেটে সাক্ষী হয়ে যায় বিশ্ব ব্যাঘাতে-
'আমার স্বামী কিছু করে নাই যে, মেরো না তাহারে'।
গুলির শব্দ কানে ভেসে আসে কঠিন আঘাতে-
কি করুণ মিনতি একই কথা ঝরে বারে বারে।
 
আমার জামাই কিছু করে নাই যে, উনি নির্দোষ-
সন্তান ও স্ত্রীর কান্না বৃষ্টির মতো কর্ণকুহরে বাজে গান।
মধ্যরাতের পর বেজে বেজে অবিরাম কেটে যায় রোষ-
কবির কোষে কোষে তাড়া করে ফেরে তার তান।
 
সবুজ ধানক্ষেত রোজ রাতে বন্দুক ক্ষেত্র হয়ে যায়--
গুলির কার্তুজে ফুটে ওঠে রাতের আকাশ।
লিকলিক ধানের শিষের পরিবর্তে হিসহিস শব্দরা হায়--
ক্রন্দসী কেঁদে যায় অক্সিজেনহীন আকুল বাতাস।
 
স্বামী হারা রমণীর কান্নায় আকাশ বাতাস বিদির্ন, ফালি ফালি-
সতত অপরাধী পার পায় রোজাদার বছরের উমরা খোলসে!
 কোন দেশে বাস আমার? এতিম সন্তানের মুখে দেখি মমতার কালি-
 লেবাসের মধ্যে ধর্ম গুমরিয়ে মরে হা-হুতাসে!
..................................................
 
এবং সুখ আছে দুঃখের ওপাড়
 
কি আছে তোমার, কে আছে তোমার, বলো তো?
তবে কেন আকাশ ছুঁতে চাও উড়ন্ত ঘুড়ির মতন
দিন নেই, রাত নেই, যখন তখন!
ঘুড়ি যেমন সাঁ সাঁ ছুঁতে পারে মেঘের দিগন্ত,
 বৃষ্টির রেখা
 ছুঁতে পারে আকাশের একাকিত্ব! আলোর ঝিলিক!
 তুমিও কি তাই হতে  চাও?
বলো মেয়ে!
তোমার তো সুতো নেই ঘুড়ির সমান,
তোমার তো পাখা নেই পাখির মতোন
তোমার  তো জল নেই মেঘের শরীর!
বৃষ্টির মায়া নেই
বৃক্ষের ছায়া নেই
রোদের ঝিলিক নেই
নূহের নৌকা নেই
মূসার পাহাড় নেই
ঈসার মুযিযা নেই সমূহ যেমন
অলৌকিক শক্তি নেই মহান পুরুষ কিবা নারীদের মতো
 অথবা মহান মানবী এক ইতিহাস খ্যাত
 কিংবা নায়ক কোন স্বদেশ একার? 
 তবে কেন আকাশ ছুঁতে চাও, বৃষ্টি হতে চাও,
 বৃক্ষ হয়ে যাও নিরুদ্বেগ পাহাড়ের গায়?
 সবাই তো তোমার শত্রু
 তোমার সামনে, তোমার পেছনে,
 তোমার ডানে, তোমার বামে
 তোমার চোখে এবং সমস্ত সত্ত্বায়।
 এমনকি তুমি নিজেও তোমার নিজের চরম শত্রু আজ
হরিণের শত্রু যেমন মৃগনাভি তার
 তোমার শত্রু তেমন তোমার বাহার!
 তুমি কেন  ভুলে যাও তোমার আভিজাত্য
 কেন ভুলে যাও তোমার ব্যক্তিত্ব
 তুমি ভুলে যাও তোমার সাহস, শক্তি, শিক্ষার মনোবল
 যা একান্ত তোমার, নিজস্ব?
 অর্জন করেছো আজীবন,
 অথবা পেয়েছো তুমি জন্মাবধি, আজন্ম।
 তবে তুমি কেন হতোদ্যম হও?
 আশা রাখো, ভরসা রাখো, তাহার ওপর
 তিনিই রাতকে ঢোকান দিনের ভেতর
 এবং দিনকে প্রোথিত করেন রাতের গহ্বরে
 মৃতকে বাহির করেন জীবিত থেকে
 এবং জীবন কে মৃত করেন চোখের সমূখে
 তিনিই বাদশা করেন সকালে ফকির ছিলেন যিনি
  এবং বাদশা ফকির হন সন্ধ্যা নাগাদ।
 তিনিই যাকে ইচ্ছে বেহিসেবি রিজিক দেবেন
 এবং সম্মানিত করেন যাকে পছন্দ তাহার।
 তবে তুমি কেন আশাহত হও
 ভুলে যাও ক্যারিশমা তাহার!
  এবং ভুলে যাও সমূহ তোমার!
  আশা রাখো, রাতের পরেই তো দিন আসে
  এবং সুখ আছে দুঃখের ওপাড়।
..................................................
 
কুরবানী
 
তার কাছে কি কুরবানী যায়? যায় না...
তার কাছে কি রক্ত, মাংস, চামড়া, হাড্ডি-
 যায় কভু যায়?
 যায় না...
 
তার কাছে যায় তাকওয়া এবং আল্লাহভীতি
তার কাছে যায় ভালোবাসা প্রাণের প্রীতি
তার কাছে যায় লেগে থাকা তওবা এবং
ওয়াস্তাগফের এবং যে যায় দোযখ ভীতি।
 
তার কাছে যায় জীবন মরণ হিসাবখানি
তার কাছে যায় অহং বিভেদ হানা হানি
তার কাছে যায় তোর যে মনের যত কথা
তার কাছে যায় দুঃখ, সুখ আর কষ্ট গ্লানি
 
 তার কাছে যায় নিত্য দিনের রোজ নামচা
 যাই বা গোপন কিংবা প্রকাশ...সব করচা
 যা তুমি চাও গোপন থাকুক সারাজীবন...
 কিংবা যা চাও প্রকাশিত সব বারতা!
 
তার কাছে যায় সবকিছু আর সবকিছু যে
সেই যে রাখেন হিসাব তোমার স্বয়ং নিজে
পাপের হিসাব পূণ্য তোমার রাশি রাশি
সব সেখানে মজুদ থাকে কি অদ্ভুত ম্যাজিক কিযে!
 
তাই তো কর কুরবানী  আজ সময় হলো
থাকতে সময় এই পৃথিবীর দরদ ভোলো
তাই তো কর সদ্বব্যবহার জীবন তোমার
 ঘুমিওনা... এবার তোমার চক্ষু খোলো।
 
দিনের শেষে সবকিছু যে থাকবে পড়ে
সন্ধ্যা বেলায় সঙ্গে নেবে নিজের ঘরে
সওদা গোছাওÑ থাকতে সময় নেই হাতে আর
নফ্সকে এবার কুরবানী দাও খোদার তরে!
 
কুরবানী দাও নফ্সকে এবং রাখো স্মরণ
কুরবানী দাও জীবন এবং তোমার মরণ...
..................................................
 
কবর
 
এখানে ঘুমিয়ে আছেন আমার মা, এখানে বাবা-
দাদা, দাদী, নানা, নানী, আত্বীয় শত পরিজন সব আছেন এখানেই।
এবং পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবধি সৃষ্ট মানব
বিশ্রামের সুখ নিদ্রায় আলমে বরযখ যাপন সময়।
বিচারের দিনের প্রতিক্ষায় অবিশ্রান্ত ঘুমের দেশে শায়িত আছেন নির্ভাবনায়!
 
এই মেহগনি, শাল, সেগুন ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে রেখেছেন আদরের বিছানায়
এবং পাকা বাঁশের সারিবদ্ধ বেঁড়া তাদেরকে দিয়েছে নিরাপত্তার ঠাঁই।
তাদেরও তো আমাদেরই মত সিথানে রবীন্দ্রনাথ, দেওয়ালে টিভি,
এবং সেল্ফে থাকতো গেলাফে ঢাকা পবিত্র কুরান।
তাদেরও বিছানায় নরম জাজিম, পাতার চুলায় ফুটতো শীতের গরম।
কিংবা গিজারের সুইচ অন হতো ভোর সকালেই-
পশমির কম্বল শীত রোদে ছড়িয়েছে শান্তির ওম
এবং সান্ধ্যকালীন চায়ের আড্ডায় ছিল প্রিয়তমার ফোন।
 
বকুল, বেলি, কামিনীর সুবাসে তারাও হতেন মাতোয়ারা
গ্রীষ্মের তাণ্ডবে সেটে থাকতেন ঘরের ভেতর।
শরতের কাঁশফুল, হেমন্তের ছাতিম তাদেরও জাগিয়ে রেখেছে দিনভর!
অথচ আজ! খুব ভোর অথবা সন্ধ্যা বেলায়
পথচারীর পদশব্দে তারা নড়াচড়া করে, এবং
‘আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়া আহলাল কুবুর’
সালামের জবাব দিয়ে তারা পাশ ফিরে শোয়।
মিহিদানার মত সময় গোনে তাসবীহর মুক্তাদানায়!
 
আমরা সেইসব ভাবি না। উন্মাতাল সময়ের গন্ধে-
মোবাইলের ব্যালান্স শেষ হয় প্রতিনিয়ত।
ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটারে সারা বিশ্বের সাথে
তাল রেখে অলস সময়গুলো করে দেই পার।
ভুলি বারবার। আহা! হে কবর!
 
আমাদেরও এমন নিশ্চিন্তের দিন, শেষ হবে একদিন!
সাড়ে তিন হাত বিছানায় কেটে যাবে শতেক প্রহর!
 হে কবর! তোমার জন্য কোন নেই ব্যালান্স আমার
 তোমার যাতনার কথা ভুলে আছে অবুঝ হৃদয়।
 তুমি তাকে স্মরণ করাও, আমিও পাঠাতে পারি কিছু রেমিটেন্স-
যার মুনাফাতে মুক্তদানার মত সোনালী রোদ লাগে কবরের ফাঁকে!
..................................................
 
এক অনাদিকালের গল্প
 
সূর্যমুখীর চাষ আর একটি বাংলো বাড়ির নকশায়
ছোট্ট বৃত্তের একটি জীবনকে নিয়ে আমি তৃপ্ত
কিন্তু জীবনতো অনেক বড় বিশাল সুখ দুঃখের সমুদ্র
কোনদিন ব্যাবলনের রানী হবার স্বপ্ন দেখিনা
 স্বপ্ন আমার ছুঁয়ে যায় দূর দিগন্ত নক্ষত্রের পথে
 সেখানে খেলা করে হেরোডিটাস, সক্রেটিস, কোপারনিকাস
 তোমাদের জ্ঞান বিজ্ঞান আর ইতিহাসের সভ্যতা
 কখন তা পলকে নিষ্পেসিত হয় দ্রুতগামী বাইসনের উন্মত্ত খূরের আঘাতে
 
 তারো আগে সভ্যতার প্রাথমিক কথা
 সেই আদিম যুগ সেই প্রস্তর, আগুনের ব্যবহার,
 তাম্র, লৌহ এবং উপ-মানবের প্রত্যয়ী যুগ।
 সব শেষে একে একে বর্বর, দাস যুগ, সামন্ত ও পুঁজির যুগ
 পিছে ফেলে সভ্যতার চরম শিখরে আজ
আধুনিক! তাকেও পায়ে ঠেলে এলেবেলে উত্তরাধুনিক সময়ের কথা!
 
আমাদের আদম আঃ আমাদের ইব্রাহীম,
 আমাদের মূসা, আমাদের ঈসা
এবং আমাদের হযরত মোহাম্মদ সা.
ইকরা! ইকরা  বিসমি রাব্বিকাল লাদি খালাক
খালাক্কাল ইনসানা মিন আলাক...ইকরা ও রাব্বুকাল আকরাম...
দ্বার খোলে আমাদেও নতুন ভ’বন!
আমাদের মাতা আয়েশা, মা ফাতেমা, মা আছিয়া,
আমাদের মরিয়ম এবং আমাদের রাবেয়া বসরী
জীবনের নতুন দ্বার জ্ঞানের প্রজ্জ্বোলিত মশাল জ্বেলে দেন পরতে পরতে
 যেখানে নিবেদিত বিশ্বাসে আশ্চর্য পবিত্র কণ্ঠে ধ্বনিত হয় জীবন!
সূর্যস্নাত উজ্জ্বল জীবন, ফিরে আসো পবিত্র মানুষের কাছে।
 
পৃথিবীর পুরাতত্তের ভাঁজে ভাঁজে লিখেছ কি বর্বর ইতিহাস
জানিনা, নিরবে নিভৃতে ঝরে কিনা তোমার রক্তের অশ্রু সভ্যতা
স্তব্ধ হও হালাকু খান, আলেকজান্ডার, নেপোলিয়ন, তৈমুর, চেঙ্গিস খাঁন,
আমি তো সাম্রাজ্যবাদীদের কারাগারে বন্দি কবি
শেলী, বায়রন, কীটস, রবীন্দ্রনাথ, শিকল ভাঙার কবি নজরুল
কিংবা ছাড়পত্রের সুস্পষ্ট উচ্চারণকারী সুকান্ত, বিদ্রোহী কবি নাজিম হিকমত!
আমি হয়ত সেই নিৎসঙ্গ শিল্পী বরিস,
পাস্তারনাক হ্রদয়ের ছবি আঁকে যে মুক্তির তুলিতে?
ক্রমাগত মাতৃভ’মির বেদনার্ত চিত্র আঁকি নিরবে নিভৃতে একাকী
সেই যে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় জিয়োদার্নেও ব্রুনো কে
আজীবন সাজা পান গ্যালিলিও
সক্রেটিস বিষ পেয়ালা হাতে বসে আছেন এখনও
বেগম রোকেয়া নিশিদিন গড়েন, আর তার সমাজ? অসহিষ্ণু খুব...
তারপর একদিন মানুষ বিষয় ও বিস্ময়ে নতুন ভাবনার দ্বার খোলে
সেটা কোন ক্রেজ বা ফ্যাশান নয় পৃথিীর বিকাশ নিয়ম...
তারপর...
 আবহমান কাল থেকে বাংলার হাজারো গ্রাম,
বয়ে চলা নদী, পেজা তুলা মেঘ
 ঘুরে বেড়ানো সাগর, উদ্যত সমুদ্র, নিরব পাহাড়,
অটল বৃক্ষ, সবুজ সুন্দর ফসলের মাঠ
 বয়ে চলা ঝরনা আর গেয়ে যাওয়া পাখি
 সব আমার হ্রদয় কন্দরে রাখি
 এগিয়ে যাই আনমনে নিজেদেরই পথ।
..................................................
 
বসন্তের টুইট
 
এ বসন্তে বিষ হারিয়ে তুমি হয়ে গেছো ধোড়া, বাক হারিয়ে নিস্তব্ধ
অথচ পাল তোলো গভীর সমুদ্রে,
ছেড়া পালে দিকহীন প্রকৃতি স্তব্ধ।
 
সাহসের বলিহারি বটে, ফুলেল বসন্তের টুঁটি চেপে
 
লাগামহীন ঘোড়া ছোটাও দিগ্বিদিক
স্বপ্নের মুখে এঁটে ঠুসি,
খোলা চোখে তাকিয়ে দেখো চারদিক।
 
 তোমার বসন্ত দিন এখনও কি আছে
 তোমার বসন্ত ফুল ফুটলো এবার?
 তোমার কোকিল বলো গেয়েছে কি গান
দখিনা বাতাস এলো সুরভী দেবার?
 
 জেনে গেছি চারিদিকে ফুলহীন, পাখিহীন, পত্রপল্লবহীন রংহীন দিন
অথচ মেজাজ কত,
অকারণ ভেক ধরো কেন নিশিদিন?
 
যতই মরিয়া হয়ে কণ্ঠে তুলতে চাও চিরকাল বসন্তের গান
বাজিবে না তাল লয় ঠিক ঠিক,
উঠিবে না কখনোই ন্যায্যতার তান।
 
তাই বলি বসন্তের বাহানায় নিশিদিন জালিয়ো না আর
ফুলেল বসন্তের টুঁটি চেপে, অনৈতিক
করো না বিদির্ণ ছারখার।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.