সপ্তবর্ণা সোমা’র কবিতা


ভাসায় অশ্রুতে
 
বিরহেরই অনল জ্বলে দিবানিশি মনে
কল্পনায় সুখে স্বপ্ন দেখি যে নিরজনে!
অদম্য ঝোঁক আদরে ঘিরে আতিশয্যে অতি
কাজ-কর্মে লাগে না মন এক জায়গায় মতি!
কিনার পেতে চায় যে দিশা বায় যে নৌকা স্রোতে
আগায় না সে একটু খানি ভাসায় অশ্রুতে!
----------------------------------------
 
বিরহ মরণ মালা
 
কেমন প্রেমে জড়ালে ওগো বাড়ালে মায়ার টান!
আঘাতে ক্ষত তবুও পোড়ে জানে শুধুই জান!
 
বিচ্ছেদ জ্বালা এই জানলে পাষাণে হৃদয় বাঁধি?
ঝুম বরষা অঝর ধারা এমনি করে কি কাঁদি!
 
চাষী যেমন প্রেম জড়িয়ে চাষাবাদ করে ফলন,
তোমাকে আমি যতনে মনে তেমনি করেছি লালন!
 
ঝিনুক তার মুক্তোখানি খোলসে জড়িয়ে থাকে
আলাদা হয়ে বিরহানলে ডাকে সে মরণটাকে!
 
বিচ্ছেদের যন্ত্রণা যে এমনি কঠিন জ্বালা,
তোমায় ছেড়ে পরেছি গলে বিরহ মরণ মালা!
----------------------------------------
 
সোনার সন্তান একবার ফিরে আসো
 
অকাল অরণ্য অঘুম নিশীথে যেমন কাটে গো ক্ষণ
অরূপের মাঝে বিকট স্বরূপে বিস্ময়ে চায় মন!
 
মনোলোভা যত সৃষ্টির কিরণ ক্ষীণ অতিশয় দেখে,
ভয়াতুর মনে বিপিন সে ক্ষণে অঙ্কুর কাঁপে থেকে!
 
অয়ন অনিহা ধরে না এমনি আদরের সুরে ডাকে,
হৃদয়ের মাঝে আলোর গানটা এমনি এমনি হাঁকে!
 
তুমিহীন সবে লাগে গো নীরব প্রিয় জনতার নেতা,
বঙ্গভূমে হায় নিরাশায় ছায় অতৃপ্ত সব ব্যথা!
 
আকুলি-বিকুলি কত কৌতুহলী কত রকমারি আশা
বঙ্গদেশেতে পারবে কী দিতে কেউ এমন ভালোবাসা!
 
অসহায় লাগে বড্ড একাকী ভাবতে দেশের কথা
কঠোর ত্যাগের দেখিনি এমন করুণ বাস্তবতা!
 
ত্যাগের মহিমা বাঙালিরা দেখে নির্বাক কিছুকাল
আগস্ট মাসে পনেরো তারিখ হয়ে যায় বেসামাল!!
 
তুলবে কী এসে বজ্রকণ্ঠি আওয়াজে আঙ্গুল
সোনার বাংলা চায় যে সোনাই শুনতে সোনার বোল!
 
বাংলা মায়ের সোনার সন্তান একবার ফিরে আসো!
বাংলার মাটি, ঘাস, ফুল, জল এসে ভালোবাসো!
----------------------------------------
 
কষ্টে পাওয়া ফুল'টি
 
সেই তো সেদিন ফুল ফুটলো প্রথম বাগানে!
কত তপস্যা, কত আশায়, কতবার জল
ঢেলে ঢেলে,
তাকে করেছি আহ্বান!
সেদিনই আমার সকল আশার হলো অবসান!
কেমন জানি ফুল গো সেটি!
দেখতে লাগবে তারে?
ভিশন চিন্তায় মন যে আমার
ভাবতো বারেবারে!
 
সেদিনই হলো উন্মোচন
ফুলের রহস্য উৎঘাটন!
 
চিরচেনা সকল ফুলেই
মঞ্জুরীতে আলো!
দেখতে সবার সবসময়ই
লাগে বড়ো ভালো।
 
না! ফুলটি এমন নয়!
সেদিনের সে ফুলটি দেখে,
আমি হলাম বিস্ময়!
 
কালো রং যে তার!
ফুলের মতো দেখতে,
নয় সে আর!
 
প্রথম দেখেই থমকে গেল পা!
এতো যত্নের ফুল'টি আমায়
দিলো'রে ধোঁকা।।
----------------------------------------
 
তোমার আশায়
 
তোমার ছায়া পড়ে যখনই
হিজল বনের পথে
আমি ঘর হতে,
বাহির পানে ছুটি দেখারআশে!
দেখবো বলে মুখখানি
কত অপেক্ষার প্রহর গুনি
আমার দিবস কাটেমাসে!
 
যদি তাও নয়ন দুটি বদন পানে ভাসে!
আমি চেয়ে থাকি দিবস-যামী প্রনয় উল্লাসে!
স্নিগ্ধতার পবন তো আর আসে না সবসময়!
মন পবনের দোলায় বিভোর
উষ্ণবায়ুর ক্ষণ!
দেখে আমায় কত কিছুই না ভাবে পাড়ারলোকে
আমি ওড়না প্যাচাই রোমাল ভেবেমুখে!
ধুকপুকানি শুনি কানে
নিজেই নিজের বুকে!
তোমার আসার পথে চেয়ে দেখি
হিজল শাঁখা কয়,—
ভয়!
এতো কীসের লো ভয়?
আমি আরো ভয়ে রই
শাঁখাসনে শব্দ করে,
কেমনে কথা কই?
----------------------------------------
 
আশার বাণী
 
অনেকের পদচারণ অসীমে ঢেলে,নীরবতা গিলে খায় সম্মুখে!
তবুও তো সীমাহীন একাকীত্ব , শুধু যবনিকায় সঙ্গী প্রবণতা!
'নিঠুর হে দাও মোরে শান্তনা'
রোদনে ভারী পল্লবভেজা টুপাটুপ বৃষ্টির ধারা-নিয়তই ঝরে পড়ে আঙিনায়!
রোদন যায় না দেখা, যায় না বলা,যায় শুধু সঙ্গে নিয়ে চলা!
ভারী মুশকিল প্রভু, ভারী জ্বালা বুকে,ভারী হয়ে বরিষণ নামে দু'টি চোখে!
কায়া অতি ক্ষীণ নয়- তাই,নেই লোক-লজ্জার ভয়,করবো ভবিতব্য জয় শুনি এমন আশার বাণী!
আশাবরি গেয়ে চলি রাগে নয় রাগিণী!
 
 
স্বাধীন হোক অরুন্ধতী
 
মন চায় তোমাকে ছুঁয়ে দেখি একবার;নিশুতি রাত নির্ঘুম কাটে অবহেলায় পাশ-বালিশটা!
এক রত্তি প্রেম একবার শুধু ভিজুক হৃদয়; শীতল হোক পরাণ পাখি!
অবরোধে কেটেছে বিবর্ণ সময় ;মুখরোচক কথায় ভরে না মন!
ভালোবাসা চাই!
ভালোবেসে মিটাতে চাই অন্তর তৃষ্ণা;কাহারবা তালের নৃত্যে চলুক প্রেমের পালকি!
চাতকের আর্তনাদ শুনে মেঘ প্লাবিত হোক বর্ষণে!
একটি বার সপ্তর্ষিমণ্ডল ভেদ করে স্বাধীন হোক অরুন্ধতী!
----------------------------------------
 
মানুষ হও গরল অমৃত হবে নিকোটিন খাসা
 
রহস্যের ইমারতে গাঁথা জীবন,
দুধে ধোয়া তুলসীপাতা নয়;
তবুও পবিত্রতা পরিপক্ক বিবেকের ইঙ্গিত মানব মনে লুকিয়ে রয়!
তোমাদের চলন-বলন আদব লেহাজপূর্ণ হলে দোষ কী তাতে?স্ববিরোধীতা অসম্পূর্ণ কেনো উশৃঙ্খল জাতে?
তোমরা যে বলো, "ভালোবাসাই শ্রেষ্ঠ, ভালোবাসাই বড়ো ভালোবেসেই সকলেতে মন জয় করো!"
ভালোবাসায় বিষ ঢেলে তবে পাও কী সুখ!
কেনো অতন্দ্র প্রহরী হয়ে ভালোবাসায় হও বিমুখ?
সহজ মনে ভজন কী আর সহজভাবে জানো নিতে?
সরলে গরল মিশাও আবার স্বাদ খোঁজো পিরিতে!
পিরিতে তো বিশ্বাস লাগে শ্রদ্ধা আর সম্মানও
দেহ লাগে লৌকিকতায় মায়া লাগার কামান !
প্রেম যে আজব জিনিস সে প্রেম তোমরা বোঝো না!
প্রেমের সাথে স্বার্থ মিশলে পাগলা কুকুর দেওয়ানা!
এমন প্রেমের অজুহাতে আসল প্রেম বিকাও হাটে
তোমাদের রূপ তোমরাই কী আয়নাতে কভু দেখো না?
ভবের এমন নাজেহাল দশা
কার কাছে পাই ভরসা;ভাগে প্রেম তল্লাট ছেড়ে মন থেকে সহসা!
 
মানুষ হও মন, বিনে পয়সায়
রতি আনো মতির বাসায়;গরল অমৃত হবে নিকোটিন খাসায়!
----------------------------------------
 
গিরগিটি মানব
 
বিশ্বের যত সৃষ্টি খাঁটি
বিশ্বাসে আর কর্মে
জবান বেঠিক হীন মানবের
ঠাঁই নাই কোন ধর্মে।
 
পরার্থে যে মুল্লুক কিনে
সৎ লোকে দেয় দুঃখ
স্বার্থের বেলায় করে আপন
ফুরালেই হয় রুক্ষ!
 
সাধারণ এক সৌজন্যাচার
দুষ্কর তখন পাওয়া
শত চেষ্টায় তাদের কাছে
যায় না তো আর যাওয়া!
 
গিরগিটিদের জায়গা হবে
কোন ধর্মের কাতারে
পড়বে একদিন ঠিকই এরা
মরণ সিন্ধু সাঁতারে।।।
----------------------------------------
 
বিপিন সন্ধ্যায় নদ
 
সন্ধ্যাটা তখনো আসেনি আমার একেবারে নদ-দ্বারে,
নিরালা-নিঝুম নয় সে তখনো ঢাকেনি অন্ধ-আঁধারে!
সাঁঝের প্রহর অমানিশার ঘোর রাখেনি তো তার পায়
দূরের পথে কিংবা ওপাড়েতে যায় না তো দেখা নায়!
খেয়ালি মনের হেয়ালিপনায় ঢেউ ক্ষণে মনে ওঠে
তীরের পথিক নীরের আশায় আদিত্যই যায় টুটে!
আবছায়ারই সরল খেলাটা চলে কিছুক্ষণ ধরে
নদের পাশেই বিপিনে তখন শীতল হয়ে মন হরে!
----------------------------------------
 
মিছে আয়োজন
 
সাঁঝে মিছে সূর্য হাসে
আমায় ভাসায় অশ্রুতে
কোহিনূরের ঝলক স্রোতে
মলিন করে বুক ভাসে!
 
স্নিগ্ধ বিকেল সমীরণে
প্রণয় আমেজ জাগায়
রিক্ত করা মনগগনে
একাকীত্ব লাগায়।
 
সন্ধ্যাকালে চাঁদের হাসি
মন কেড়ে নেয় বাইরে
বড্ড বেশি বেড়ায় ছোটে
ঘুরে তাইরে-নাইরে!
 
চন্দ্রিমাতে ভয়ে থাকি
রাহুর বিভিষিকায়
নৈবদ্য দেই মনে মনে
স্তুতি বাক্যে বিকায়!
 
মিছে কেনো আয়োজন
চক্রাকারে রাত-দিন,
রাজার কুমার আসে না'তো
বাজায় না তো তার বীণ!

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.