সবুজ আহমেদ’র কবিতা


নিশিযাপন
 
তপস্বিনী মুখ লুকিয়ে দুঃখ ঘুচে
খুঁজে বেদনার ভাঁজে নিঃসঙ্গ মনবাড়ি
যে জটলায় অস্তিত্ব হারিয়ে দিশেহারা
কপির কাপ চুমে প্রেমের পাণ্ডুলিপি।
সর্বগ্রাসী পাকস্থলি বাড়ে ফিনফিনে ব্যথা
কালোজিরের মত বোতলবন্দি জীবন আঙিনা
খুঁটিসমেত তার আকাশ- চারপাশ মৌ মৌ ঘ্রাণ
সেদ্ধ ভাপ দিয়ে দমিয়ে রেখেছি মরণঘেষা শ্বাস।
 
টবে ফোটেনা ফুল মাথায় ঘোরে উনুনের আগুন
বাহানায় ঠোঁট যেদিন হল লুট-সাক্ষী শুধু আকাশ
অন্তরীক্ষ আগলে রাখবে বলে এত কাছাকাছি নিয়ে...
থামিয়ে দম,কি করে ভুলে গেলে দুজনের নিশিযাপন।
..................................................
 
উস্কানি পৃথিবীর অসহ্য নিয়ম
 
হ্নদ নদ বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে পাখির মতো
মনজানালার কার্নিশে লটকে ধরেছে লতা
বেদনার গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে এমনভাবে চলে
ভাঙ্গে বুক,সুতোকাটা ঘুড়িকে যেমন ঘিরে ধরে মেঘ
সুখ দেখে স্মিত হাসে বনলতার ভেজা যৌনিফুল
নিদারুন পৃথিবীর নিয়ম।সবুজ অঙ্কুর রেখে...
বেচে নিয়েছেন সে ঝুলে যাওয়া স্তন
সাথে উস্কানি পৃথিবীর পুব জানালার রোদ।
..................................................
 
বুকের ভেতরকার বিষ
 
বুকে বিষ চোখে ঘৃণা পুড়িয়ে চলছি কিছুদিন
যে বিষে মৃত্যু হয়না জ্বলে,বিশ্বাস ভঙ্গের কারনে
অবহেলার ক্ষত সয়ে অতিক্রান্ত করছি সীমা রেখা
ছেড়ে দিলাম তারে যার নামে নাও নামিয়েছিলাম নদে
অবেলায় আঘাত অল্পতে ছিঁড়ে যাবে পাল ভাবিনি আগে
এখন হৃদয়ের ধারণ ক্ষমতা নির্জন লোকালয়ের মতো নিস্তব্ধ
দেখে যায় নিরীহ জীবন ভাষাহীন কাঁদে বোধশক্তি একদম চুপ ?
কারোর হতে পারিনি,না জলকালের ছাতা,হয়েছি আগুনের আহার
এও এক ব্যর্থতা কেউ আমার হবে তা শুধু রক্তের উত্তাপে উষ্ণতা বাড়ে
রেখেছি তাকে মনেরমগডালে আর সে নীল আগুনে নিক্ষেপ করে
বলছি চোখ ছুঁয়ে অমীমাংসিত তাপের তীব্রতায় ফারাক খুঁজে
ফিরে তাকাবে না তৃষ্ণা জাগিয়ে যাবে কয়লা করে ভাবিনি কোনকালে।
..................................................
 
ক্ষণ
 
অনেক দিন পর আজ শুধু তোমাকে নিয়ে ভাবছি
কতদিন হয়নি বলা কেমন কাটছে তোমার দিন
কতদিন তোমার শরীর ছুঁয়ে চাওয়া হয়নি তোমার মন
কেমন আছো ক্ষণ?গোধূলির আবছায়া আলোয়...
মনে পড়ে জনমানবে ভরা রাজা-ঝি দিঘির একলা ঘাটে...
শুনিয়েছিলে পাশে বসে তোমার হৃদয় তটের চিবুক ছোঁয়া শপথ
কুসুম কোমল উষ্ণ আবেগ পেয়ে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ছিলেম সেদিন।
 
কোন এক কারণে রাত নামলো জীবনে,ঘর গোছানোর আগেই তুমি নাই?
এ কেমন প্রেম-ক্ষণ।তোমার সাবান পানি চোখে পড়েছে এখন শুধু জ্বলে
কতদিন কষ্টে ধৌত করেনি দিল,ব্যাসার্ধের বাইরে এসে পা রাখিনি,
আজ কিছু কথা না বললেই নয়?
সোহাগের নামে শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষার অবাধ্যতায় মাপ করে দিও
এই তুমি তোমার খায়েস মেটাতে অভিসারের আল পথে হাঁটতে বাধ্য করেছিলে
দূরত্ব না মেপে কত প্রেমময়ী কবিতার ফাঁকা পঙক্তিমালা শুনিয়েছিলে অমতে
যে প্রিয় নাম মুখে নিলে বলতে তোমার দেহের লোম দাঁড়িয়ে যেত
দু'চোখের পলক ফেরানো কঠিন ছিল-আর কত কি?
আজ কোথায় সে সব বুলি।
সেই তুমি আজ কতদূরে?
কোথায় সেই আবেগের নদী কোন তীরে হারালে খুঁজেছো কি ?
 
আমার জীবন নিয়ে আমি কোন কালেই ভাবিনি
যে জীবনে স্বপ্ননীলে ভরা মনদরিয়ার আকাশে ওড়েনি শঙ্খচিল,
আর উড়বেও না কোনদিন।
 
বল,কেন কোন সে কারণে দূরে সরে মনঘরের দুয়ারে খিল এঁটে আছো
শুনেছি তুমি এখন অন্য কারো কাছে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে দাঁড়িয়েছ
জানি এ তুমি পারবে?
ঢালা মেলে কাব্য সাজিয়ে গভীর আবেগ অনুভূতি নিয়ে খেলতে?
কি ভাবো নিজেকে ?
সন্ধ্যা নামার অন্ধকারের আগেই আমার বারান্দায় ফিরে এসো
না হয় হলুদে শাড়ির আঁচলে উড়িয়ে নিয়ন বাতির আলোয় নিলামে উঠাবো ইজ্জত
তখন আগত আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভেসে যাবে ঝরা কদমফুল
অগোচরে হঠাৎ বজ্রপাতে উন্মোচন হবে তোমার কদম-মুখ ও মুখোশ।
 
আমার মনটা বড় নরম-কৌশলে তুমি খেলেছ তা নিয়ে...
এখনো আগরবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনায় হাত তুলি
ছুটে যায় বারণে ঘরের দেউড়িতে গন্ধ ছড়ানো গন্ধরাজ বনে
যেখানে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধে বেখালে এই মনটা সঁপে ছিলেম অগোচরে।
..................................................
 
দুনিয়া ধ্বংস হোক
 
মহামারিতে মৃত্যু এসে যদি কেড়ে নেয় জীবন
তবে কি হবে অসৎ পথে উপার্জিত অঢেল সম্পদ
তারচেয়ে ভাল পোড়া মরিচ নুন পানি ভাত স্বস্তিদায়ক
যারা অর্থ দিয়ে অবাধ্য উত্তপ্ত যৌবন ব্যয় করে বাহিরে
নিশিতে ঘরে ফিরে বিছানায় বৌর পাশকেটে পড়ে থাকে
চরিত্রক্ষয়ে বিরতিহীন স্বপ্নের শহর জুড়ে অপাত্রে পানি ঢালে
নেশাধরা নারী, লালজলের রঙ্গশালা,ভোগ আর ভাগ তাদের প্রিয়
পৃথিবীত ধ্বংস হয়ে যাক ভ্রূক্ষেপ নেই তার ?
ভালোবাসার সবুজ অরণ্য পুড়ে হোক ছাই
ভালোবাসার সমুদ্র শুকিয়ে হোক শ্মশান
লতার মতো জড়ানো কবিতার লাইনগুলো হোক শামুক
তার দৃষ্টি নিচে,তাতে সে ভেজায় খুশি,ছন্দে শরম না থাকুক
লাজুক গোপনাঙ্গ উন্মুখ হোক শুকতারার সাথে শুয়ে সুবিধা নেবে অনেক
নক্ষত্রখচিত ছায়াপথে সম্ভ্রম হারানো ভয়ে শরীর দেখা যায় দেশের
তাতে কি এসে যায়,তার চাই রহস্যময় হাসির মোনালিসার রোমাঞ্চ।
..................................................
 
ডুব
 
কে জানে কেন আজ ভীষণ মন খারাপ
আমার দেখাদেখি বনের বিহঙ্গ করেছে রাগ
তাইতো কন্ঠে নেই সেই শীষ টান সুরেলা সুমধুর গান
নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষরাজ আমার কষ্টে কাতর
অকালে পেকে সবুজ পাতাগুলো হলদে হয়ে ঝরে...
খেলাঘরে নেচে অভিমানে প্রাণহীন পড়ে রয় মাটির পুতুল।
 
আমার লেখা কবিতার কালি শুকিয়ে হয়েছে খালি
বুকের বইতে যে ছিলো হরহামেশা স্মৃতির মণিমালা
সেই ললাটের রাজটিকা অন্য হাত ধরে হয়েছে উদাও
বিশ্বাসের বনাঞ্চল রেখে সুখের খোঁজে নেমে লাগিয়ে আগুন
তারপর আজন্মের ছায়া পাশকেটে বৃহত্তর পৃথিবীতে দিয়েছে ডুব।
..................................................
 
চলছে করনাকাল
 
দুই হাজার বিশ এসেছে মহামারি ভাইরাস বিশ্ব হতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাল
সংক্রামনের ভয়ে দেশ হতে দেশ বন্ধ করে দিয়েছে নিজেদের দেয়াল
যে দেশ বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াতো তার অবস্থা আরো জবুথবু বেশি করুন
ধরাধামে তার আলস্য উঠানে লাশ আর লাশ তাইতো দম্ভপাড়ায় শুধু শোক
পৃথিবীতে যা কিছু ঘটছে আজ তা মানুষের নিজ হাতে কামাই করা পাপ
অনেক কবি মনীষী না জানলেও জানতেন একজন সামনে বিনাস আসবে ?
 
তিনি প্রভু পরাক্রমশালী দুনিয়া জুড়ে নামিয়ে দিয়েছে কালোজাম সন্ধ্যা
মানুষ ঘাই খাওয়া শরীর বিছায়ে বোঝ এবার বনাঞ্চলে গড়ে উঠেছে হসপিটাল
অবক্ষয়ের সীমানা প্রাচীর এত উঁচুতে উঠেছে যে এখন তা নাগালের বাহিরে
এখনও সময় আছে খুনোখুনি ছেড়ে চরিত্রসীমার নিচে যাওয়া থামাও
সোনালি রোদের আভায় তুলে আনো মাটি ও ঘাসের জাজিম
মানুষ হও মানবিক ও নাগরিক-পাখি, নগর হবে তবে তার অরণ্য প্রভা
মনে রেখো বন্ধ না করলে কারসাজি-কিছুতেই থামবে না এ মৃত্যুর মিছিল?
বিপ্লব ঘটে যাবে অচেনা এক অভুক্ত ভিক্ষুক ব্যথা নিয়ে এসে দুয়ারে দাঁড়াবে
এলোমেলো করে দেবে, কেড়ে নেবে শ্বাস,থেমে যাবে ফুসফুস রক্তের রং লাল।
..................................................
 
সুখ
 
আমি শেষ কবে হেসেছি কে জানে
কেঁদেছি কখন সে আমি জানি
এখন আমায় মনে পড়ে না তার
অথচ সে সৃষ্টি করছে যত মায়াজাল
অতঃপর নিজেই নিজের ধরাধাম ছেড়ে হয়েছে যার?
আমার বাদামদানা জীবন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে খোসা
তাকে পরানপুরে ফিরতে করিনা অনুরোধ
মনের ভেতর ঢুকেছে কটু কথার গোপন অসুখ
তাকে বলে রাখি অনেক চেপে চলছি অভিমানী ক্রোধ;
রাস্তায় দেখে পাশ কেটে যেও,জাগে না যেন বোধ
কবে কোথায় দেখেছি জিজ্ঞেস করো না এ আমার সুখ।
..................................................
 
সরল সমীকরণ
 
আমার চোখ যেনো দুঃখ দিঘির জল
অতি ধৈর্য্যর শরীর
হৃদয় স্বচ্ছ পানির মতো টলমল
প্রিয় কেউ যদি মারে কথার ঢিল
সহজেই মুছে ফেলি মনে রাখিনা
মনের পিঞ্জরে পুষে রাখিনা প্রতিশোধ
না জ্বলে না বুকের চুলায় হিংসা বা ঘৃণার আগুন
সরল সমীকরণ না কোনো অজুহাতে চাই কৈফিয়ত
এ বুক খোলামাঠ ভালবাসার মস্তবড় কাঙাল
জানি জঞ্জাল পুষে রাখলে ভালোবাসার হবে বদনাম?
 
হে শীতল হৃদয় তোমার ঢালে বাসা বাঁধতে দিও হয়োনা প্রতিবাদী
দেখোনা ঝর্ণা যেমন পাহাড়ের বুক চিড়ে সাহস সঞ্চয় করে ঝরে প্লাবন।
..................................................
 
দাগ
 
সমুদ্র ঢেউ খেলতে শুরু করলে
পুরাতন অরণ্যের ঝরে যায় পাতা...
দেখা যায় পেরেক গাঁথা পৃথিবীর মুখমণ্ডল
ভয়ে জড়সড় বেড়াল বসা বালুর মতো
আঁটোসাটো ইচ্ছেরা যখন ওড়বার গল্প শেখে
হাওয়া এসে কাঁপায়-ন্যাড়া হতে থাকে স্বপ্নবন
যে রাজহাঁস সন্ধ্যা গহিন রাত মাঠ চিরে খেতো ঘাস
কাদায় গড়াগড়ি কেবল কালো মহিষের পায়ের ছাপ
সব সাধু ? ক্ষুর ধার দাগ কাটে আমাদের সমুদ্রপাড়;-
জড়ো হওয়া বনের বাঁকে উঁকি দেয় ঝিঙেফুল রঙের রোদ
ছায়াহীন কঙ্কাল সমাজ-আকাশে তাকিয়ে উঠছে অসুস্থ দালান।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.