বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_মহরম পর্ব : ১৯তম প্রবাহ

 
মারওয়ান্ ছদ্ম­বেশ পরি­ত্যাগ করিয়াছেন। নগ­­প্রা­ন্ত­ভা­গে যে স্থা­নে পূর্বে শি­বির নি­র্মাণ করিয়াছি­লেন, সেই স্থা­নে পু­­রায় সৈন্যা­বাস রচ­না করিয়া যু­দ্ধের আয়োজন করি­তে লা­গি­লেন! কি­ন্তু যে পরি­মাণ সৈন্য দা­মে­স্ক হই­তে ক্র­মে ক্র­মে আসিয়াছে, তা­হার সহায়ে হো­সে­নের তর­বা­রি-সম্মু­খে যা­­তে কি­ছু­তেই সা­­সী হই­লেন না। দা­মে­স্ক হই­তে আর কোনও সং­বাদ আসি­তে­ছে না। জায়েদা এবং মায়মু­না­কে সেই নি­শীথ সময়ে কয়েক­জন প্র­­রী সম­ভি­ব্যা­হা­রে দা­মে­স্কে পা­ঠাইয়াছেন, পর্য­ন্ত তা­হার আর কোন সং­বাদ পা­­তে­ছেন না। তাঁহা­রা নি­র্বি­ঘ্নে পৌঁছি­লেন কি-না, তাঁহার অঙ্গী­কৃত স্ব­র্ণ­মু­দ্রা জায়েদা মায়মু­না প্রা­প্ত হইয়াছেন কি-না, জায়েদা­কে অতি­রি­ক্তরূপে বহুমূল্য কা­রু­কা­র্য­­চিত রত্নময় বসন-ভূষণ প্র­দা­নে প্র­তি­শ্রুত হইয়াছি­লেন, তা­হা জায়েদা প্রা­প্ত হইয়াছেন কি-না-মনে মনে এই ভা­­না। আর এক­টি কথা,-জায়েদা পা­­রা­ণী হইয়া এজি­দের ক্রোড় শো­ভা করি­তে­ছেন কি-না তা­হাও জা­নি­তে পা­রি­তে­ছেন না! বি­ষম ভা­­না। এম­রা­­কে কহি­লেন, "ভাই এম­রান! তু­মি সৈন্য­সা­­ন্তের তত্ত্বা­­ধা­রণ কা­র্যে সর্ব­দা সত­র্ক থাক, আমি ছদ্ম­বে­শে যে সকল সন্ধান, যে সকল গু­প্ত­বি­­রণ নগ­রের প্র­তি ঘরে ঘরে যাইয়া প্রায় প্র­তি­দিন জা­নিয়া আসি­তে­ছি, ওত্বে অলীদ আমার সেই কা­র্য করি­বেন। আমি কয়েক দি­নের জন্য দা­মে­স্কে যা­­তে­ছি। যদিও আমার যা­­বার উপ­যু­ক্ত সময় নয়, কি­ন্তু কী করি, বা­ধ্য হইয়া যা­­তে হই­তে­ছে। তো­­রা সা­­ধান হইয়া সত­র্ক থাক। কোন বিষয়ে চি­ন্তা করিয়ো না। আমি দা­মে­স্ক হই­তে ফি­রিয়া আসিয়াই হো­সেন-বধে প্র­বৃ­ত্ত হইব।" এই বলিয়া মারওয়ান দা­মে­স্কে যা­ত্রা করি­লেন।
নিয়মিত সময়ে মারওয়ান্ দা­মে­স্কে যাইয়াই-জায়েদা মায়মু­নার বি­চার শু­নিয়া আশ্চ­র্যা­ন্বিত হই­লেন। কী করি­বেন, আর কোন উপায় নাই। সময় মত এজি­দের সহিত সা­ক্ষাৎ করি­লেন, মদি­নার উপ­স্থিত বি­­রণ সমুদয় এজি­দের গো­চর করিয়া পু­­রায় মদি­না­­­নের কথা পাড়িলেন। প্র­ধা­­­ন্ত্রী হা­মা­ন্ যু­দ্ধে অমত প্র­কাশ করিয়া কয়েক দিন মারওয়ান্কে মদি­না-গম­নে ক্ষা­ন্ত রা­খি­লেন।
সভা­­ণ্ড­পে সক­লেই উপ­স্থিত আছেন। মারওয়ান­কে সম্বো­ধন করিয়া এজি­দ্ বলি­তে লা­গি­লেন, "মারওয়ান্! আমার আশা-লতার কে­­­মা­ত্র বীজ বপন হইয়াছে; কত­কা­লে যে প্র­স্ফু­টিত পু­ষ্প দে­খিয়া মনের আন­ন্দে নয়নের প্রী­তি জন্মি­বে, তা­হা কে বলি­তে পা­রে? এখন বি­শ্রা­মের সময় নয়, আমোদ-আহ্লা­দের সময় নয়, নি­শ্চি­ন্ত­ভা­বে বসিয়া থা­কারও কা­র্য নয়। অনেক রহিয়াছে, এখ­নো অনেক অব­শি­ষ্ট আছে। এক­টি নর­সি­­­কে বধ করা হইয়াছে মা­ত্র কি­ন্তু তত্তু­ল্য আরো এক­টি সি­ংহ বর্ত­মান। সি­­­শা­­­গু­লি বড় ভয়ানক! সমুদয়কে শেষ করি­তে না পা­রি­লে আমার মনের আশা কখ­নোই পূর্ণ হই­বে না। এখন আরো ভয়ানক হইয়া উঠিল জ্ঞান করি­তে হই­বে। হো­সে­নের রো­ষা­গ্নি কা­সে­মের ক্রো­­­হ্নি হই­তে রক্ষা পাওয়া সহজ কথা নহে। আলী আক্বর, আলী আস্গর, আব­দু­ল্লা­হ্ আক্বর, জয়নাল আবে­দীন ইহা­রা যদিও শি­শু, কি­ন্তু পি­তৃ­ব্য-বিয়োগ­­নিত দু­­খে কা­তর না হইয়াছে এমন মনে করিয়ো না। ইহার প্র­তি­ফল অব­শ্যই ভু­গি­তে হই­বে। তা­হা­রা নি­শ্চয়ই বু­ঝিয়াছে যে, যু­দ্ধে পরা­স্ত হইয়া জায়েদার দ্বা­রা এই সা­­ঘা­তিক কা­র্য করাইয়াছে।জায়েদা বাঁচিয়া থা­কি­লেও হা­সা­­বং­শের ক্রো­ধা­­লের কি­ঞ্চিৎ অংশ হই­তে বাঁচি­তে পা­রি­তে, কি­ন্তু এখন তা­হা মনে করিয়ো না। সে ক্রো­ধা­নল সম্য­ক্ প্র­কা­রেই এক্ষ­ণে আমা­দের শি­রে পড়িয়া আমা­দি­­কে দগ্ধীভূত করি­বে।পূর্ব হই­তেই সে আগুন নি­বা­­ণের চে­ষ্টা করা কর্ত­ব্য। তা­হা­রা শো­­­ন্ত­প্ত-হৃদয়ে কয় দিন আর নি­­স্ত থা­কি­বে?মহা­বীর কা­সেম চি­রবৈরী বি­নাশ করি­তে, পি­তার দাদ উদ্ধার করি­তে একে­বা­রে জ্ব­­ন্ত অগ্নিমূর্তি হইয়া দাঁড়াই­বে। তখন কী আর রা থা­কি­বে? আর সময় দেওয়া উচিত নহে। যত শী­ঘ্র হয়, হা­সান-হো­সে­নের বংশ বি­না­শে যা­ত্রা কর। উহা­দের এক­টিও যদি জগ­তে বাঁচিয়া থা­কে, তবে নি­শ্চয়ই জা­নিয়ো এজি­দের মস্তক দ্বি­­ণ্ডিত হইয়াছে,-তো­মা­দের সক­লের শো­ণি­তেও হা­সা­­পু­ত্রের তর­বা­রি রঞ্জিত করিয়া পর­মায়ু শেষ করিয়াছে। সকল সি­­­শা­­­কে যু­দ্ধে, কৌ­­লে, ছলে-যে কোন উপায়ে হউক, জগৎ হই­তে অন্তর না করি­লে কা­হা­রো অন্ত­রে আর কোন আশা নাই,-নি­শ্চয়ই জা­নি­বে কা­হা­রো নি­স্তার নাই!"
এই সকল কথা শু­নিয়া প্র­ধা­­­ন্ত্রী হা­মান গা­ত্রো­ত্থা­নপূর্বক কর­জোড়ে বলি­তে লা­গি­লেন, "রা­জা­জ্ঞা আমার শি­রো­ধা­র্য! কি­ন্তু আমার কয়েক­টি কথা আছে। অভয়দান করি­লে মু­ক্ত­­ণ্ঠে বলি­তে পা­রি।"
এজি­দ্ বলি­লেন, "তো­মার কথা­তেই তো কয়েক দিন অপে­ক্ষা করিয়াছি। যদি তু­মি আমার এই সকল চি­­­ত্রু বি­না­শের আমা অপে­ক্ষা আর কোন ভাল উপায় উদ্ভা­বন করি­তে পার, কি­­বা আমার বি­বে­­নার ত্রু­টি, চি­ন্তার ভুল, যু­ক্তি­তে দোষ-বি­বে­­না কর, অব­শ্যই বলি­তে পার।"
কর­পু­টে হা­মান বলি­লেন, "বা­­শা না­­দার! অপ­রাধ মা­র্জ­না হউক। হা­সান আপ­নার মনো­বে­­নার কা­রণ-যে হা­সান আপ­নার মনঃ­­ষ্টের মূল, যে হা­সান আপ­নার প্র­থম বয়সের প্রণয়সুখ-ভো­গের সরল পথের বি­ষম কণ্টক, যে হা­সান আপ­নার নব­প্রণয়ের বা­হ্যিক বি­রো­ধের পা­ত্র, যে হা­সান আপ­নার অন্ত­রের ভা­­বা­সা প্র­স্ফু­টিত জয়নাব-কু­সু­মের বি­ধি­­ঙ্গত অপ­হা­রী, যে হা­সান আপ­নার শত্রু,-সে তো এই অসীম ব্র­হ্মা­ণ্ডে আর নাই! আপ­নার ব্য­থিত হৃদয়ে ব্য­থা দিয়া জয়নাব-রত্ন­লা­­কা­রী সেই হা­সান তো আর ইহ­­­তে নাই!জয়না­বের হৃদয়ের ধন অমূল্য­নি­ধি, সু­­পু­ষ্পের আশা­­তা, সেই হা­সান তো আর বা­হ্য জগ­তে জী­বিত নাই!তবে আর কেন? প্র­তি­শো­ধের বা­কি আছে কি? জয়নাব যে­মন আপ­নার মনে ব্য­থা দিয়া হা­সা­­কে পতি­ত্বে বরণ করিয়া সু­খী হইয়াছিল, তা­হা অপে­ক্ষা শত­গুণ বে­­না,-তা­হা অপে­ক্ষা সহ­স্র­গুণ মনো­বে­­না এক্ষ­ণে ভোগ করি­তে­ছে। তা­হার সু­খের তরী বি­ষাদ-সি­ন্ধু­তে বি­না তু­ফা­নে আজ কয়েক দিন হইল ডু­বিয়া গিয়াছে। তা­হার মনো­বা­ঞ্ছিত-স্বে­চ্ছা­­রিত পতি­ধন হই­তে সে তো একে­বা­রে বঞ্চি­তা হইয়াছে! তবে আর কেন? পূর্ব­স্বা­মী হই­তে পরি­ত্য­ক্তা হইয়া সে যে­মন অনা­থি­নী হইয়াছিল, আপ­না­কে স্বা­মী­ত্বে বরণ না করিয়া আজিও সেই জয়নাব সে­ইরূপ পথের কা­ঙা­লি­নী পথের ভি­খা­রি­ণী। বা­­শাহ না­­দার! জগৎ কয় দি­নের? সুখ কয় মুহূর্তের? এক­বার ভা­বিয়া দে­খুন দে­খি-নি­­পে­ভা­বে এক­বার ভা­বিয়া দে­খুন দে­খি, হা­সান কি আপ­নার শত্রু? হা­সান আপ­নার রা­জ্য আক্র­মণ করে নাই, আপ­নার প্রা­­­ধে অগ্র­সর হয় নাই, জয়না­­কে কৌ­­লে হস্ত­গত করে নাই, সক­লই আপ­নি জ্ঞাত আছেন। হই­তে পা­রে-এক­টি ভা­­বা­সা জি­নি­সের দু­­টি গ্রা­হক হই­লে পর­স্পর জা­­ক্রোধ আসিয়া উপ­স্থিত হয়, তা­হা আমি স্বী­কার করি। কি­ন্তু সে ঘট­নায় হা­সা­নের অপ­রাধ কি, সে মী­মা­­সা স্বয়ং জয়না­বই করিয়াছে। তা­হার শা­স্তিও হইল। অধিক হইয়াছে। এক্ষ­ণে হো­সে­নের প্রাণ বধ করা, কি হা­সান-পু­ত্রের প্রাণ হরণ করা মা­নু­ষের কা­র্য নহে। বলুন তো কী অপ­রা­ধে তা­হা­দি­­কে বি­নাশ করি­বেন? এখন পর্য­ন্তও হো­সে­নের ভ্রা­তৃ­বিয়োগ শোক অণু­মা­ত্রও হ্রাস হয় নাই। পি­তৃ­হীন হই­লেও যে কী মহা­­ষ্ট, তা­হা জগ­তে কা­হা­রো অবি­দিত নাই। কা­সেম এত অল্প সময়ে কী তা­হা ভু­লিয়াছে? আজ পর্য­ন্ত উদ­রে অন্ন যায় নাই, চক্ষের জল নি­বা­রণ হয় নাই, হা­­নে­বা­নুর অঙ্গ ধু­লায় ধূসরিত হই­তে­ছে, জয়না­বের কথা আর বলিব না। মদি­নার আবা­­বৃ­দ্ধ এমন কি পশু-পক্ষী­রাও "হায় হা­সান! হায় হা­সান!" করিয়া কাঁদি­তে­ছে। বোধ হয়, করা­ঘা­তে কা­হা­রো কা­হা­রো বক্ষ ফা­টিয়া শো­ণি­তের ধা­রা বহি­তে­ছে। তথাচ "হায় হা­সান! হায় হা­সান!" রবে জগৎ কাঁদা­­তে­ছে। যে শু­নি­তে­ছে সেই মু­খে বলি­তে­ছে, "হায় হা­সান!! হায় হা­সান!!!" অব­স্থায় কী আর যু­দ্ধ­­জ্জায় অগ্র­সর হই­তে আছে? এই ঘট­নায় কি আর ভ্রা­তৃ­বিয়োগীর প্র­তি তর­বা­রি ধরি­তে আছে? এই দু­­খের সময় কি অনা­থা-পতি­হী­না স্ত্রী­­ণের প্র­তি কোন প্র­কার অত্যা­চার করি­তে আছে? হায়! হায়! সেই পি­তৃ­হীন-পি­তৃ­ব্য­হীন বা­­­দি­গের মু­খের প্র­তি চা­হিয়া কি কেহ কাঁদি­বে না? এখন তা­হা­রা শো­কে-দু­­খে আচ্ছ­ন্ন, অসীম কা­তর; সময় আর যু­দ্ধের প্রয়োজন নাই। শত্রু বি­না­শের পর শত্রু­­রি­বার আপন পরি­বার মধ্যে পরি­­ণিত,-ইহাই রা­­নী­তি এবং ইহাই রা­­­দ্ধ­তি। এই অকি­ঞ্চিৎকর অস্থায়ী জগ­তের প্র­তি অকি­ঞ্চিৎরূপে দৃ­ষ্টি­পাত করাই কর্ত­ব্য। ঈশ্ব­রের মহি­মা অপার।তি­নি বি­জন বনে নগর বসা­­তে­ছেন, মনো­হর নগ­­কে বনে পরি­ণত করি­তে­ছেন, কা­হা­কেও হা­সা­­তে­ছেন, কা­হা­কেও কাঁদা­­তে­ছেন, কা­হা­কেও মনের আন­ন্দে-মনের সু­খে রা­খি­তে­ছেন, মুহূর্ত সময় অতী­তে আবার তদ্বি­­রীত করি­তে­ছেন; মা­­ঙ্গ-মস্ত­কেও পত­ঙ্গের দ্বা­রা পদা­ঘাত করা­­তে­ছেন। আজ যে অতুল ধনের অধি­কা­রী, কাল সে পথের ভি­খা­রি। সেই-"
এজি­দ্ নি­স্ত­ব্ধ­ভা­বে মনো­নি­বে­শপূর্বক শু­নি­তে­ছি­লেন। দু­ষ্ট মারওয়ান, প্র­ধা­­­ন্ত্রী হা­মা­নের কথা শেষ হই­তে-না-হই­তেই রো­­­রে বলি­তে লা­গি­লেন, "বৃ­দ্ধ হই­লে মা­নু­ষের যে বু­দ্ধি­­ক্তির বৈলক্ষ­ণ্য ঘটে, তা­হা সত্য। ইহা­তে যে এক­টু সন্দেহ ছিল, তা­হা আজ আমা­দের প্র­ধান উজি­রের কথায় একে­বা­রে দূর হইল।মহাশয়! ধন্য আপ­নার বক্তৃ­তা! ধন্য আপ­নার বু­দ্ধি! ধন্য আপ­নার ভবি­ষ্যৎ চি­ন্তা! ধন্য আপ­নার রা­­নী­তি­জ্ঞ­তা! ধন্য আপ­নার বহু­­র্শি­তা! ধন্য আপ­নার প্র­ধা­­­ন্ত্রী­ত্ব! এক ভ্রা­তা শত্রু, দ্বি­তীয় ভ্রা­তা মি­ত্র-ইহা কি কখ­নো সম্ভ­বে? কো­ন্ পা­­লে এক­থা না বু­ঝি­বে? সময় পা­­লেই তা­হা­রা প্র­তি­শোধ লই­বে। এক্ষ­ণে তা­হা­রা কে­বল সময় আর অব­সর খুঁজি­তে­ছে। যে জয়না­বের সু­খের তরী ডু­বিয়া গিয়াছে বলি­তে­ছেন, সে জয়না­­কেও কম মনে করি­বেন না। তা­হা­দের কা­হা­কেও জা­নি­তে বা­কি নাই। জায়েদা আমা­দের পরা­­র্শ মত হা­সা­­কে বি­­পান করাইয়াছে। এই উপ­যু­ক্ত সময়ে যদি উহা­দি­­কে একে­বা­রে সমূলে বি­নাশ না করা যায়, তবে কোন-না-কোন সময়ে আমা­দি­­কে ইহার ফল ভু­গি­তেই হই­বে। আমি দর্প করিয়া বলি­তে পা­রি, না হয় আপ­নি স্ম­­ণা­র্থে লি­খিয়া রা­খুন, হা­সা­নের বি­­পা­­­নিত তা­হা­দের রো­ষা­নল শত শি­খায় প্র­জ্ব­লিত হইয়া একে একে দা­মে­স্কের সকল লো­­কে ভস্মীভূত করি­বে। কার সা­ধ্য হো­সে­নের হস্ত হই­তে পরি­ত্রাণ পায়? কার সা­ধ্য হো­সে­নের তর­বা­রি হই­তে প্রাণ রক্ষা করে? সি­­হা­সন কা­সে­মের উপ­বে­­নের জন্য পরি­ষ্কৃত থা­কি­বে। আমি বি­শেষ বি­বে­­না করিয়া দে­খি­লাম, আপ­নার বু­দ্ধির অনেক ভ্রম হইয়াছে। পর­কাল ভা­বিয়া, জগ­তের অস্থায়িত্ব বু­ঝিয়া, নশ্বর মা­­­­রীর চি­­স্থায়ী নহে স্ম­রণ করিয়া, রা­জ্য­বি­স্তা­রে বি­মুখ, শত্রু দম­নে শৈথি­ল্য, পা­পভয়ে রা­­কা­র্যে ক্ষা­ন্ত হওয়া নি­তা­ন্তই মূঢ়তার কা­র্য। আপ­নি যু­দ্ধে ক্ষা­ন্ত দিয়া হা­সা­নের বং­শের সহিত সখ্য­ভাব সৃ­জন করি­তে অনু­রোধ করি­তে­ছেন; আমি বলি­তে­ছি, তি­লা­র্ধ­কাল বি­­ম্ব না করিয়া পু­­রায় যু­দ্ধ­যা­ত্রা করাই উচিত এবং কর্ত­ব্য।এমন শুভ অব­সর আর পাওয়া যা­­বে না। শত্রু­কে সময় দি­লেই দশ­গুণ বল­দান করা হয়, কথা কি আপ­নি ভু­লিয়াছেন? যু­দ্ধে ক্ষা­ন্ত দিয়া মদি­না হই­তে সৈন্য­গণ উঠাইয়া আনি­লে কত পরি­মাণ বলের লা­ঘব হই­বে?নায়কবি­হীন হই­লে তা­হার পশ্চা­দ্ব­র্তী নে­তৃ­­­কে যু­দ্ধে পরা­স্ত করি­তে কত­ক্ষণ লা­গে?"
হা­মা­­কে সম্বো­ধন করিয়া এজি­দ্ বলি­লেন, "মারওয়ান্ যা­হা বলি­তে­ছেন, তা­হাই যু­ক্তি­­ঙ্গত।আমি আপ­নার মতের পো­­­তা করি­তে পা­রি­লাম না। যত বি­­ম্ব, ততই অম­ঙ্গল। এই যু­দ্ধের প্র­ধান নায়কই মারওয়ান্। মারওয়ানের মতই আমার মনো­নীত। শত্রু­কে অব­সর দি­তে নাই, দিবও না। মারওয়ান্! আর কোন কথাই নাই। যে পরি­মাণ সৈন্য মদি­নায় প্রে­রিত হইয়াছে, আমি তা­হার আর চতু­র্গুণ সৈন্য সং­গ্রহ করিয়া এখা­নে রা­খিয়াছি। যা­হা তো­মার ইচ্ছা হয়, লইয়া মদি­নায় যা­ত্রা কর; আমি এক্ষ­ণে হো­সে­নের মস্তক দে­খি­তেই উৎসুক রহি­লাম। প্র­­মে হো­সে­নের মস্তক দা­মে­স্কে পা­ঠা­­বে, তা­হার পর জয়নাবও হা­­নে­বা­নু প্র­ভৃ­তি সমুদয়কে কা­রা­­দ্ধ করিয়া আনি­বে।" এই আজ্ঞা করিয়াই পা­ষা­ণে গঠিত নি­র্দয়হৃদয় এজি­দ্ সভা ভঙ্গ করি­লেন। মারওয়ান্ রা­জা­জ্ঞা প্র­তি­পা­­নে তৎপর হইয়া এজি­দের নি­কট হই­তে বি­দায় লই­লেন।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.