শাহীন খান'র কবিতা

কোথায় গেলে
 
কোথায় গেলে তুমি বাবা, গেলে কোথায় তুমি
তুমি হীনা হৃদয়  আমার দগ্ধ মরুভূমি
যদু মধুর বাবা আছে আমার শুধু নেই
চোখের নীলে জল টলমল সেটা ভাবতেই।
যখন বনে ফুলকলিরা সুবাস ছড়া নিতি
পাখপাখালি মধুর সুরে শোনায় লালন গীতি
মধু লোভে ভ্রমর অলি গুনগুনিয়ে গায়
হাজার তারার প্রদীপ  জ্বলে আকাশ সীমানায়
চাঁদের হাসি বাঁধ মানেনা ঝরে নিরালায়
দখিন হাওয়া যায় জুড়িয়ে সবার মনপ্রাণ
মসজিদ হতে ভেসে আসে সুরেলা আজান
কিংবা যখন রাত্রি বেলা একলা জেগে রই
দেয়াল ঘেঁষা ছবির সাথে মনের কথা কই
খেলার মাঠে সহজ পাঠে বিভোর হয়ে থাকি
ঠিক তখনই তোমার মুখ হৃদয় পটে  আঁকি।
কোথায় আছো কেমন আছো জানি না তো আমি
দোয়া করি ভালো রাখুক তোমায় জগৎস্বামী।
..................................................
 
ফাগুন
 
বনে বনে দুলছে দখিন হাওয়া
কোকিল ঠোঁটে কুহুকুহু সুর
সুরটি আহা কি যে সুমধুর
ক্ষণটি যেন আবির রংয়ে ছাওয়া।
প্রজাপতি ফড়িংপোকা নাচে
ভ্রমর ধরে গুনগুন গান
শুনে শীতল হয় যে গোটা প্রাণ
ফুল ধরেছে প্রতিটি ফুল গাছে।
..................................................
 
কাঁদে যে ফাগুন
 
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ ডাকে না কোকিল
যায় শুকিয়ে নদীর পানি এবং শুকায় বিল
ফুল ফোটে না পাতা ঝরে আকাশটা কাঁদে
গলা দিয়ে ভাত নামে না মা নাহি রাঁধে।
 
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ বিয়োগ ব্যথার ঢেউ
কিসের ব্যথায় কলজে ছেঁড়ে জানো কী তা কেউ?
চারদিকেতে নেমে আসে অমানিশা আঁধার
বাঁধ মানে না কান্না কারোর, নেই কো কিছু বাঁধার!
 
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ বায়ান্নরই কথা
শোকে কাতর দেশের মানুষ, বুকে দারুণ ব্যথা
মায়ের ভাষা রুখতে গিয়ে রফিক শফিক খুন
সেই অবধি চিরটা কাল কাঁদে যে ফাগুন।
..................................................
 
ছুটে যাই
 
যখন আমার রাত্রি কাটে স্বপ্ন ঘুমের ঘোরে
ঘুম ভাঙানি পাখি সকল জাগায় আমায় ভোরে
ফুলপরীরা গন্ধ বিলায় আমার উদাস মনে
দখিন হাওয়া দেয় যে দোলা নিরব নির্জনে।
নতুন রবি ঝিলমিলিয়ে রাঙ্গায় আমার হৃদয়
তখন আমার দ্বিধা কাটে পালিয়ে যায় ভয়।
তড়িঘড়ি বিছনা ছাড়ি পুকুর পাড়ে চলি
ফিসফিসিয়ে মাছ আমি মনের কথা বলি।
পায়ে পায়ে চলতে বলে নরম  গাছ ঘাস
হাতছানি দেয় আমায় কেবল রাজহংসী রাজ হাঁস।
আমায় ওরা ডেকে বলে আয়রে খোকা আয়
ফ্রেশ হয়ে নে সুরভি মাখ তোর কচি গায়।
খিলখিলিয়ে দোয়েল বলে  চলরে খোকন চল
কলমি লতার দেশে যাবি? বল না আমায় বল।
কলধ্বনি বেজে ওঠে আমার বুকের মাঝে
ভাল্লাগে না পড়া পড়া ঘরের কোন কাজে
ঠিক তখনি দুহাত বাড়ায় যুগল কোনো পক্ষি
মায়াবি এক দৈত্য আমার  হয় যে দেহরক্ষী
শিস দিয়ে যায় রূপকথারা পারি না আর থাকতে
ইচ্ছে করে হাওয়ায় উড়ে নানান ছবি আঁকতে।
কি আর করি চুপিসারে আনমনে দিই হাঁটা
সুস্বাগতম জানায় আমায় হিজল তলির গাঁটা
কলকলিয়ে ওঠে জোয়ার আছড়ে পড়ে ঢেউ যে
তখন আমার দারুণ লাগে জানো কি তা কেউ যে?
বিস্তৃত মাঠটা বলে আমার বুকে ঘুম যা
না হয় একটু নাচরে পাগল রুমঝুমঝুম ঝুমা যা।
প্রকৃতির মাঝে ডুব দিয়ে রই,প্রকৃতি আমার সই যে
আমার আশা ভালোবাসা তাহার সনে কই যে।
সে যে আমার দুই নয়নের একটি দুটি তারা হয়
তাহার লাগি মনের কোঠা রাতবিরাতে ভাড়া হয়।
তাহার ডাকে নিত্ত আমি কান পেতে ঠিক থাকিরে
আকাশ আমার খসড়া খাতা লিখি কাটি আঁকিরে।
শিক্ষা যে নিই চাঁদের কাছে জোনাক আমার ভাইরে ভাই
দিনপ্রতিদিন তাদের ডাকে যাই ছুটে যাই, ছুটে যাই।
..................................................
 
বসে এখন ফস করেন না
 
বসে এখন ফস করেন না
ব্যবসাপাতি মন্দ তার
চোখে মুখে অহর্নিশি
দেখেন শুধু অন্ধকার।
গাড়িবাড়ি বিক্রি করে
একলা থাকেন গাঁয়ে পড়ে
ছেলে-মেয়ে বউয়ের কাছে
ভীষণ রকম দ্বন্দ্ব তার।
যখন তাহার পয়সা ছিলো
"ঝুমু"কুমু" 'আয়েসা' ছিলো
কাজেকর্মে সব খানেতে
ছিলো কি যে ছন্দ তার।
বংশ তাহার সার্চে দিলে
নিচু বংশ সার্চে মিলে
টাকার জোরে রাতবিরাতে
হয়ে গেলেন "খন্দকার"
গরীব দুখীর রক্ত চুষে
পেট ভরিলেন চরম ঘুষে
হঠাৎ এলো পুলিশ হানা
হইলো অফিস বন্ধ তার।
বউটা তাহার ভালো ছিলো
চক্ষে প্রেমের আলো ছিলো
হাটে হাঁড়ি ফাটার ফলে
হয়ে গেলো বন্ধ দ্বার।
..................................................
 
প্রেম আমার
 
ভালোবাসি ফুলটুসি গীতা রিতা ঝুমঝুম
কণা বীণা রিনা টিনা কুমকুম রুমঝুম।
স্বর্ণা বর্ণা সখিনা সুপর্ণা
ঝুমু রুমু নিঝ্ঝুম কখনো সে পর না।
লাইলি দুলদুল ডেইজি বিলকিস
বাদ নেই পামেলা সুমু প্রিয়া নারগিস।
চাঁদনীও সুলতানা টেরা বোবা কানা
মর্জিনা, ফারজানা দেয় মনে হানা
চুমকি রুমকি থাকে পাশাপাশি
সব্বাই প্রেম আমার, বড়ো ভালোবাসি।
..................................................
 
লাইনে আছে
 
জামাল,কালাম, কামাল, ছোমেদ ম্যাসেনজারে এসো
নবীন হৃদয় পাভেল রণি মিষ্টি করে হেসো!
সোহেল শাহীন গণি ছাদি ব্যাক করো তো ফোন
আজকে হবে বনির সাথে দুষ্ট আলাপন।
ফেসবুকেতে কথা হবে হিমুর সাথে আজই
ছানির সাথে ইয়ে করার রাখছি আমি বাজী।
আইফোনটা কিনে দিলো পাশের বাড়ির জাফর
আমার সাথে খুব গোপনে লাইনে আছে বাপ ওর।
কুদ্দুস রফিক শাহজাদা ডেটিং করে রাতে
অঢেল টাকা জনির ভাইয়া গুঁজে দ্যায় এই হাতে।
বিকাশেতে অর্থ পাঠায় টনি নামের ছাগল
টুকটুকির ড্যাট আমার প্রেমে এক্কেবারই পাগল।
মনি জনি সুমন রাহুল ম্যাসেস আমায় দেয়
খায়রুল নূরুল সাদেক খোকন খোঁজ যে আমার নেয়
 
কথায় ঝরে মধু আমার রূপটা শুধু চালান
ওদের টাকা দিয়ে আমি বানাই বাড়ি দালান।
..................................................
 
ভালোবাসা দিবসে
 
ভালোবাসি লাইলিকে, সেতারা সখিনা
কুমকুম, ময়ুরীটা বসন্ত দখিনা।
রুমু, কুমু, টুমু, গীতা, রিতাটাও কমনা
নূপুরের বাড়ি ভোলা, উর্বশির রমনা।
সিলসিলা,কবরি, ববিতাও শাবানা
অহরহ ফোনে বলে," ছেড়ে তো যাবা না '?
ফেসবুকে ঢুঁ মারে রুমু, ঝুমু, পামেলা
উমুটাকে যদি ছাড়ি হয়ে যাবে ঝামেলা!
ভিডিওতে দেখা দ্যায় ভীণ দেশি কারিনা
মুনমুন, সাহারাকে ভুলে যেতে পারি না।
নাসরিন রাত-দিন এসএমএসে চিঠি দ্যায়
শোপিচ, ফুল তোড়া হেসে হেসে দিঠি দ্যায়!
ঝুমু দ্যায় উড়ু চুমু দেখা হলে পার্কে
ঝরণটা কাছে আসে ছেড়ে তার স্যারকে।
টিনা রিনা ঝুনা মুনা সকলই লাইন দ্যায়
এক্সামে ফেল মেরে ছবি শেষে ফাইন দ্যায়।
টুকটুকি ফুলটুসি ওরা সরে নি বসে
সব্বাইকে প্রীতি দিই ভালোবাসা দিবসে!!
..................................................
 
দিবস
 
চকলেট এবং ককটেল দিবস
দালাল মক্কেল দিবস
লুঙি জাইঙা গামছা দিবস
চামচিকা এবং চামচা দিবস
কুত্তা বিলই খাসি দিবস
মামা পিসি মাসি দিবস
 বিশ্রী শ্রী  দিবস
তামাক জর্দ্দা বিড়ি দিবস
কিছু একটা ইস্যুর দিবস
খোকন সোনার হিস্যুর দিবস
ছেঁড়া কাঁথা টিস্যুর দিবস
নায়ক -নায়িকা 'বিসু" দিবস
জোরে ফিসফিসানি দিবস
কাঁপাকাঁপি হিসহিসানি দিবস
তিতা মিঠা পিঠা দিবস
ডানো মিল্কভিটা দিবস
পেডিকোট শাড়ি দিবস
ক্ষেত খামার আর বাড়ি দিবস
জুতো হাইহিল  ঝাঁটা দিবস
কলুর বলদ খাটা দিবস
ভালো- মন্দ পাগল দিবস
রামপাঁঠা আর ছাগল দিবস
চোখ মারা আর ট্যারা দিবস
বুদ্ধির ঢেঁকি ভেঁড়া দিবস
খামচা আর খামচি দিবস
গরম রোদে ঘামচি দিবস
ডাক্তার রোগী দিবস
ঢোল আর ডুগডুগি দিবস
বিয়া পরকিয়া দিবস
ময়না শালিক টিয়া দিবস
আটা দিবস চাটা দিবস
সব দিবসই ভালো
পয়সা যদি ঢালো।
কিন্তু শোনরে পটকা
"ভালোবাসা" দিবস আছে?
শুনে লাগে খটকা!
 
সব দিবসই দিবস আছে
'ভালোবাসা' নেই
'ভালোবাসা" দিবস দেখে
হয়না কিছুতেই।
..................................................
 
কবি হবার স্বপ্ন
 
শোনো সখা, সই,
এখন আর আমি বের করি না
কাব্য ছড়ার বই।
গল্প কিংবা উপন্যাসেও
নেই কো আমার তাড়া
আমার ডাকে পাঠক কভু
দ্যায়নি আদৌ সাড়া!
এই তো সেদিন, সেদিন কোথা
আট 'বছর হলো
বেশ কয়েকটি বের করেছি
"স্বপ্ন, "ঝলোমল'
প্রকাশককে টাকা দিলাম
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে
বিশ্ব বুঝি জয় করেছি
বইটই ছাপিয়ে!
ফোনে বলি বইয়ের কথা
বন্ধু বান্ধব যতো
স্টল নাম্বার এসএমএসে
 উড়িয়ে দিই শত।
যারা ছিলো উৎসহ দাতা
বই প্রকাশের আগে
মিনমিনিয়ে  চাইলো কপি
সবার অগ্রভাগে।
ফেসবুকে লাইক কমেন্ট যারা
করছিলো হায় প্রচুর
বইমেলাতে গিয়ে আমার
স্বপ্নটা ভাংচুর !
কেউ আসেনি কেউ কেনেনি
আমার "কাঁতুকুঁত"
বইয়ের ঘ্রাণে কেউ হয়নি
এতটুকুন বুঁদ।
অবশেষে কি আর করি
কিনি নিজের  বই
সব্বাইকে কই বই নিয়ে হায়
চলতাছে হইচই!
আসলে সব মিথ্যে কথা
সবই ছিলো গুল
দিশেহারা হয়ে পড়ি
এই আমি আবুল!
একটু আধটু  প্রশংসা করেন
লোক দেখানো যারা
তাদের হাতে মুচকি হেসে
দিই  ধরিয়ে   " ধারা '
আগ বাড়িয়ে যারা বাড়ান
আমার দিকে  হাত
দোকানপাটে গিয়ে খাওয়াই
চা বিস্কুট আর ভাত।
যা দু'চারটি বিক্রি হলো
মেলেনি হায় মিশন
প্রকাশকের  ধমক খেলাম
খুব যে আমি ভীষণ
বলেন তিনি, 'আবুল আপনি
কি লিখেছেন ধিক
একটা কিছু লিখলেই বুঝি
 যায় হওয়া  সাহিত্যিক?
কবি হবার যোগ্যতা চাই
চর্চা করেন প্রচুর
প্রকাশ করেন কাগজে তা
ভোলেন  বাজে সুর'
 
নিয়ে যান রে এক্ষুণি সব
গাঁয়ে গিয়ে করেন উৎসব
দূর হয়ে যান দূর।
 
শুনে আমার ঘোরে মাথা
গায়ে জড়াই শীতের কাঁথা।
 
বউয়ের সাথে করে সন্ধি
বই যে হলো বস্তা বন্দি
ঘরেই রেখে  দিলাম
কবি হবার স্বপ্ন আমার
হয়েই গেলো নিলাম।
 
হঠাৎ সেদিন দেখি
উঁইপোকাতের বাস
বস্তাখানি দেখেই আসে
কষ্ট দীর্ঘশ্বাস!
 
দিন না যেতেই একি!
গিন্নি টিপেন বাদাম ভাজা
বস্তা খালি সে কি?
 
জ্বলজ্বলজ্বল জ্বলছে
আগুন চুলোয়
পান্ডুলিপির গায়ে সে যে
রাগেরই হাত বুলোয়!

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.