শাহিন আলম'র কবিতা


উপমা তোমাকে বিদায়
 
আমার কবিতারা তোমার দরজা জানালা খুলে লুট করেছে সর্বস্ব
সে অভিযোগে তুমি মামলা করেছো দায়ের।
 
আমার কবিতারা ফেরারি আসামী হয়ে
অন্ধকার গলিতে বেড়ায় ঘুরে।
 
তোমার রুপের সুধা পান করে যে কবিতারা বড় হয়েছে
যার ডালপালায় ফুটে আছে তোমার স্পর্শের ফুল
তারা আজ জমটুপি পরে পায়চারী করে হৃদয়ে আমার।
 
মরা নদীর মতো আমার কবিতারা পড়ে থাক
আমার কবিতার শরীর থেকে উপমা তোমাকে বিদায়।।
..................................................
 
সাজিয়ে দেবো ফুলদানি
 
বৃষ্টির জল যদি হাঁটু ছুঁয়ে যায়
আমি গলা পানিতে নেমে যাবো,ডুবে যাবো
ঢেউয়ের তালে ভেসে ভেসে পৌঁছে যাবো অন্য পাড়ে।
 
রোদ প্রখর হলে চলতি অর্থ বছরে কেনা অকটেন শরীরে ঢেলে
ভরসা ম্যাচে বারুদ ঠুকে ধরিয়ে দেবো আগুন
নীল নদে ভাসিয়ে দেবো মুঠো মুঠো ছাই।
 
গোলাপের সুবাস পেলে পৃথিবীকে পদদলিত করে
বাগানে ফিরে যাবো
কাঁটায় কাঁটায় রক্তাক্ত  করে দুই হাত
সাজিয়ে দেবো ফুলদানি তোমার।।
..................................................
 
আমি পাগল হতাম
 
আমার হাত ছুঁয়ে যদি বলতে-
চলো পৃথিবীতে ফিরে যায়
তবে আমিও মানুষ হতাম।
 
শুকনো মাটিতে ফসল ফলিয়ে ভরে তুলতাম গোলা
রসুনের শুভ্রতায় ভরে যেতো ঘর
বেলী ফুলের গন্ধ গায়ে মেখে
আমিও হয়ে উঠতাম বন মালি।
 
যদি একটিবার বলতে-
চলো পথিক হই
তবে সমস্ত রাস্তা দু'হাতে মুড়িয়ে
মেলে ধরতাম তোমার পাড়ায়
নো এনট্রি বোর্ড ঝুলিয়ে দিতাম শহরের মোড়ে।
 
মন ছুঁয়ে যদি বলতে-
এখানে তোমার বসত ভিটা
তবে আমি পাগল হতাম
মনের আনন্দে চিবিয়ে খেতাম সমস্ত কবিতা আমার।।
..................................................
 
তোমাকে ভুলতে পারলে
 
তোমাকে ভুলতে পারলে ফিরে পেতাম সব
সাজানো বাগান সবুজ ঘাস
কুয়াশার সকাল পেরিয়ে চকচকে রোদ।
 
দু' চারটে দুধেল গরু সমেত গোয়াল আমারও থাকতো
নতুন ধানের গন্ধে ভরে যেতো উঠান।
 
তোমাকে ভুলতে পারলে
গভীর কালো মেঘ দেখে উত্তরের মাঠ ছেড়ে ফিরে যেতাম বাড়ি
সদর দরজায় হুক তুলে মনে মনে জপ করতাম ঈশ্বরের নাম।
 
তোমাকে ভুলতে পারলে
পরিচিত রাস্তাগুলোর নাম থাকতো
অন্ধকার গলির মোড় পেরিয়ে তোমার পাড়ায়
গড়ে উঠতো ঠিকানা আমার।
 
তোমাকে ভুলতে পারলে
দেহের ভিতরে মন থাকতো
আপন মনে ডুব সাঁতারে পেরিয়ে যেতাম জীবন নদী।।
..................................................
 
রুপের শিশির
 
তোমার ছবি বুকে বেঁধে যদি পূজা করি
ঈশ্বর রেগে যাবেন
পাখাওয়ালা প্রহরী দিয়ে তিনি
টেনে নিয়ে যাবেন হাবিয়া দোযখের দিকে।
 
ভবিষ্যৎ বাণী জেনেও চোখ ফেরাতে পারিনা
তোমার কালো বসনের দেয়ালে
পরগাছার মতো বেড়ে ওঠে আমার কামনার শেকড়।
 
আমি নষ্ট হতে হতে বড় হই
আমার চোখের পাতায় ঝরে পড়ে তোমার রুপের শিশির।।
..................................................
 
দুঃখের তাজমহল
 
তোমার ভালোবাসা পেলে আমি নষ্ট হতে পারি
লাজ শরমের মাথা খেয়ে বলতে পারি তুমি আমার।
মুছে ফেলতে পারি সব অতীত, বর্তমান
তোমার বুকে জমা রেখে আমার ভবিষ্যৎ।
 
তোমার ছোঁয়া পেলে আমি তোমার হতে পারি
বয়সের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে শক্ত মেরুদন্ডে দাঁড়াতে পারি ফের।
 
তুমি যদি কুড়িয়ে নাও তবে
ধুলোয় পড়ে থাকা শিউলি হতে পারি
সুবাস ছড়াতে পারি তোমার স্বপ্নের মাঠে।
 
তোমার ভালোবাসা পেলে আমি কষ্ট পেতে পারি
দুঃখের তাজমহল বানাতে পারি আমার হৃদয়।।
..................................................
 
শিউলি ফুলের সুবাস
 
চিরুনির দাঁতগুলো যেভাবে ডুবে যায় আমার দাড়ির ভিতরে
সেভাবে একদিন আমিও যাবো ডুবে
প্রিয় অন্ধকার কবরের উপর
একটা শিউলী ফুলের গাছ পুতে দিও।
 
ফজরের আযানের সাথে সাথে
মাটিতে ঝরে পড়া ফুল পান্জাবির পকেটে নেবো তুলে
জান্নাতি হুরের খোঁপায় পরিয়ে দেবো সে ফুলের মালা।
 
কবরের পাশে যে নদী
সেখানে স্নান সেরে ফেরার পথে জিয়ারত করে যেও
একা অথবা দু'জন
আমি সে আশায় জান্নাতের দরজা রাখবো খুলে।
 
সে দরজার চৌকাঠ মাড়িয়ে যদি হেঁটে আসো
দেখা হবে,কথা হবে
সোজা ডান দিকের কামরায় বসবাস আমার।
 
তুমি এলে দখিনের জানালাটা খুলে দেবো
মৃদু বাতাসের সাথে
শিউলি ফুলের সুবাস আসবে ভেসে।
..................................................
 
নদী
 
নদীকে ভালোবেসে  দিয়েছিলাম সব
ধীরে বয়ে চলার গান শুনে ভেবেছিলাম সুখি হবো।
 
সে আমার ডালিম গাছে জল দেবে,ফুল দেবে
আমার সবুরে মেওয়া ফলবে একদিন।
 
নদীতে আজ ঢেউ বেড়েছে
সে নাকি পূর্ন যৌবনা
আমি এতো হিসাব বু্ঝিনা কিছু
নদী আমার উঠোন ভেঙে ঘরের চাল ভাসিয়ে নিল জলে।
..................................................
 
বহুতল ভবনের ছায়ায়
 
আমার আঙিনার বেলী ফুলের চারাটা আজ শহরের টবে হচ্ছে বড়
দু বেলা শিকড়ে জল পেয়ে পাতা ছাড়ছে, ডাল ছাড়ছে
থোকায় থোকায় ফুটে থাকছে সুগন্ধি ফুল।
 
আমার আঙিনার চারাটা বৃক্ষ হয়েছে আজ
যার ছায়ায় গড়ে উঠেছে ছিপছিপে সংসার
ডালে বসে শিক্ষিত মোরগ গান করছে
সুখে থাকার ভান করছে
ফুলের সুবাসে সকাল দুপুর মনের খুশিতে স্নান করছে।
 
শহরের টবে বেড়ে ওটা বৃক্ষ ছাগল চেনেনা
পুষে রাখা বিদেশি কুকুর আর বিড়ালের সাথে সখ্যতা তার
বহুতল ভবনের ছায়ায় লকলক করে বেড়ে ওঠে তার শরীর।।
..................................................
 
তোমার ছোঁয়া
 
.
বৃষ্টির জল পেয়ে অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছের ডালে
ফুটে আছে দু'টো ফুল
পথ ধরে হেঁটে চলা মুসাফির তার সুবাস নিয়ে
তসবিহ দানায় জপ করছে তোমার নাম।
 
.
অবাধ্য বৃষ্টি এসে যদি ভিজিয়ে দেয়
বাঁশের আড়া' শুকাতে দেয়া তোমার শাড়ি
তবে আমি রোদ হবো
শুকিয়ে দেবো মন খারাপের সমস্ত বিকেল।
 
.
পায়ের নূপুর ভিজিয়ে দেয়া জল বাড়ির উঠোন গড়িয়ে গেলে
আমি পুকুর হবো
তৃষিত বুকে শুষে নেবো তোমার ছোঁয়া।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.