তোরাব আল হাবীব’র কিশোর কবিতা
ছোট্টোবেলা
হাতড়ে খুঁজি
খাল-পুকুরে কলাগাছের ভেলা
ছিল
রাস্তা ছিল কাদা-জলে ভরা
কী মনোহর লাগতো বসুন্ধরা
সবুজ সবুজ গ্রামটা যেন
একটা বিরান ভূমি
প্রতিদিনই ইট-পাথরের রাক্ষুসে দেয় চুমি।
হরেক ডিঙি নদীর ঘাটে থাকতো
বাঁধা
এখন থাকে উঠোনভরা গাড়ি
নেই কুমোরের যত্নেগড়া হাঁড়ি
কৃষ্টি যেন হচ্ছে উধাও
গিলছে মধুর বিষ
মাঠে মাঠে হ্রাস পেয়েছে হলুদধানের শীষ।
শাল পিয়ালের বন হারালো
কোন সে দেশে
কই হারালো হিজল-তমাল সারি
ছাতা মাথায় নেই যে পথচারী
সাঁকোর জাগা দখল নিলো
রড-পাথরের সেতু
সোনালি দিন কে কেড়েছে কেউ খুঁজে না হেতু।
বিকেলগুলো হাতড়ে খুঁজি
মাঠের কোণে
উড়তো যেথায় রঙ বেরঙের ঘুড়ি
যার ছিল না সত্যি কোনো জুড়ি
তিলে তিলে সব হারালো
জারি-সারি-পুঁথি
বদলে গেছে মানুষজনের দৃষ্টি-অনুভূতি।
……………………………………………
আমার
গ্রাম
ছবির মতো গ্রামটা আমার
গ্রামের মতো ছবি
বাঁশঝাড়ের ঐ ফাঁকফোকরে ওঠে ঊষার রবি
দোয়েল ডাকে সদলবলে টুনটুনি গায় গান
মুর্তাবেতের শীতলপাটি
মায়ের অবদান।
কদম ডালে ঘুঘুর বাসা
জারুল গাছে ফিঙে
উঠোনজুড়ে শিমের মাচা নয়ন জুড়ায় ঝিঙে
বাড়ির পাশে সর্ষে ক্ষেতে হলুদ ফুলের হাসি
তাল-গুবাকের আকাশ ছোঁয়া
দৃশ্য অবিনাশী ।
বিল-বাঁওড়ে বেষ্টিত গাঁ
লতায় পাতায় ঘেরা
আলোর পিদিম দেয় জ্বালিয়ে রাতের জোনাকেরা
দূর্বাঘাসের সবুজ চাদর চতুর্দিকেই পোঁতা
পাখপাখালি গাছগাছালির
নিবিড় এ সমঝোতা ।
রাখাল ছেলে গরু নিয়ে
যায় সে দূরের মাঠে
সাঁজের বেলা বাড়ি ফিরে সূর্য গেলে পাটে
নদীর বুকে পালতোলা নাও দাঁড় বেয়ে যায় মাঝি
কৃষক তোলে বৈশাখী ধান
রেখে জীবনবাজি।
ঢোলকলম আর কলমিলতা
কেয়া চাপার গন্ধে
বিরস এ মন চনমনে হয় মাতে ছড়ার ছন্দে
ভোরের বাতাস স্নিগ্ধ সতেজ মন করে দেয় সরস
যে পেয়েছে এমনতর
সবুজ গাঁয়ের পরশ।
……………………………………………
সেই
স্মৃতি সেই ক্ষণ
আমগাছ জামগাছ বেতসের ঝোপ
ডালে ডালে পাখিদের নিরাপদ খোপ
ঘুঘু আর শালিকের সাথে ছিল প্রেম
সবুজাভ শৈশব চির মোলায়েম
জীবনটা ছিল এক
ফড়িঙের ডানা
হেসেখেলে বেড়িয়েছি
ছিল নাতো মানা।
সূর্যের হাসি আর মেঘেদের
দল
খেলা করে আলোছায়া মৃদু চঞ্চল
পাখিডাকা ফুলফোটা অভিরাম ভোর
ইশারায় কাছে ডাকে রাঙা কৈশোর
তালপাতা বেলপাতা
কচুরিরপানা
সব ছিল আমাদের
নিজ মালিকানা।
কাদামাটি জুবুথুবু দখিনের
মাঠ
ফেলে আসা রবিবাবু নজরুল পাঠ
দুজনের প্রেমগীতি বিদ্রোহী মিল
খুলে দেয় সুগভীর ভাবনার খিল
শিশুতোষ বুড়োতোষ
সবদিকে সেরা
তাঁদেরকে গুরু মানে
আজো লেখকেরা।
রাখালের মোহনীয় বাঁশিটার
সুর
দুপুরের ঝলমলে আলো রোদ্দুর
মাঝনদী বরাবর পালতোলা নাও
পেছনে সে ফেলে যায় ছোটপাড়া গাঁও
চাষিদের ছাতা মাথা
কৃষাণের হাসি
সেই স্মৃতি সেই ক্ষণ
আজো ভালোবাসি।
……………………………………………
রবের
জিকির
ফুল ফুটেছে ভুল টুটেছে
চাঁদ হেসেছে অই
পাখির গানে কলতানে মুগ্ধ হয়ে রই
মৌমাছিরা মধু খুঁজে
উড়ে দু'টো চক্ষু বুজে
আল্লাহ নামের জিকির ছাড়া উড়তে পারে কই?
নদীর জলে পলে পলে আছড়ে
পড়ে ঢেউ
মাছের পিছে মিছে মিছে লাগে কতেক ফেউ
সেই মাছেরাও দরুদ পড়ে
গভীর ধ্যানে জিকির করে
আল্লাহ ছাড়া নেই যে মালিক আর দ্বিতীয় কেউ।।
হরেক পাখি মেলে আঁখি ওড়ে
ঝাঁকে ঝাঁক
পাতার ফাঁকে ময়ূর ডাকে হই যে হতবাক
নিখুঁত এমন কারুকাজে
কার দয়াতে ভুবন সাজে
তিনি সবার মালিক-খালিক মহান আল্লাহপাক।।
রোদ ঝলোমল জল টলোমল বৃষ্টি
ঝরে টুপ
বৃক্ষতলে জোনাক দলে জ্বালায় আলোর ধূপ
বনবাদাড়ের বাঁকে বাঁকে
মধুর সুরে পাখি ডাকে
সবাই রবের জিকির করে কেউ থাকে না চুপ।।
……………………………………………
কবি
কবি আঁকেন মনের কোণে সবুজ-শ্যামল
মাঠ
পুকুর ভরা মাছের পোনা শানবাঁধানো ঘাট
গাছে গাছে থোকা থোকা নানান স্বাদের ফল
ভোরের আকাশ পাখির কূজন ব্যস্ত কোলাহল।
কবি আঁকেন চাষের জমি হলুদধানের
শীষ
রাখাল ছেলের মোহনবাঁশি আঁকেন অহর্নিশ
তারাভরা রাতের আকাশ জোছনামাখা চাঁদ
কবি আঁকেন সাদাবক আর ঘুঘুধরা ফাঁদ।
কুলুকুলু নদীর পানি পানকৌড়িদের
ডুব
রাঙাবধূর আঁচলটাতে রঙ লেপে দেয় খুব
নিজের মত ধ্যান ধারণায় আঁকেন কবি সব
কাগজজুড়ে গান-কবিতার নিত্য কলরব।
প্রজাপতি ফুলেরবাগান আলোরভুবন
ঠিক
এই পৃথিবীর দর্শনীয় দারুণ চতুর্দিক
লিখতে থাকেন আঁকতে থাকেন কবি মহাশয়
মনের খাতায় হাজার বিষয় জমাই কেবল হয়।
আঁকার শেষে মুগ্ধ হয়ে দেন
ছবিতে চুম
ছবির নেশায় লেখার নেশায় যায় হারিয়ে ঘুম।
……………………………………………
আলোর
অন্বেষণ
আলোর খুঁজে বের হয়েছি কোথায়
থাকে আলো
বনবাদাড়ে গাছের পাতায় আলোর করি খোঁজ
হন্যে হয়ে দিকবিদিকে ছুটছি একা রোজ
সূর্যটাকে ঢেকে রাখে টুকরো মেঘের কালো।
আলো থাকে সবুজ মাঠে হলুদধানের
শীষে
ঝিকিমিকি শিশিরকণায় আলোর বাতি জ্বলে
ধরতে তাকে শীতসকালে জোর অভিযান চলে
আলোহীনা জীবন যেন গুমরে কাঁদে বিষে।
আলোর খুঁজে পাতালপুরী দিচ্ছি
রোজই ডুব
আলো ভেবে প্রবালকে যেই হাত বাড়িয়ে ধরি
অনেক কঠিন যুদ্ধে যেন ন্যস্ত হয়ে পড়ি
আলোর দেখা পাই না তবে অভিজ্ঞ হই খুব।
চাঁদের মাঝে আলো থাকে তাই
চাঁদে দিই পাড়ি
তারায় তারায় আলোর মেলা দূর আকাশে বসে
বিন্দু আলোর খুঁজে মরি এক পৃথিবী চষে
পাই না আলো তাই ছেয়ে রয় অন্ধকার এই বাড়ি।
বাইরে কোথাও পাই না আলো
পাই না আলো ঘরে
উদাস উদাস মনের কোণে অন্ধকারের থাবা
নিন্দুকেরা নিন্দা করে কেউ বলে মারহাবা
আলো খুঁজি অরণ্যে আর সাগর-নদীর চরে।
কোথাও যখন খানিক আলো পাইনি
জলে-স্থলে
আলোর বাতি কারা যেন গ্রাস করেছে চুপে
হারায়নি তো আলোর রেখা গভীর কোনো কূপে
খবর পেলাম আলো আছে জোনাকিদের দলে।
……………………………………………
প্রজন্মের
প্রার্থক্য
আমরা যখন কিশোর ছিলাম
ঘুড়ির পিছু ছুটতাম
বিকেলবেলা হইহল্লায় জুটতাম
পাখির বাসা খুঁজে খুঁজে
উঁচু ডালেই উঠতাম।
আমরা যখন কিশোর ছিলাম
ফড়িং ধরে আনতাম
সুতো দিয়ে সরু দু'পায় বানতাম
বক-শালিকের সদ্য ছানা
কোথায় থাকে জানতাম।
আমরা যখন কিশোর ছিলাম
জলে সাঁতার কাটতাম
স্কুলে যেতে অনেক দূরে হাঁটতাম
আউট বইয়ের জন্য গ্রামের
সব পাঠাগার ঘাটতাম।
আমরা যখন কিশোর ছিলাম
কানামাছি খেলতাম
খেলার ছলে শূন্যে ডানা মেলতাম
মৎস্য ধরার জন্য কত
জাল পুকুরে ফেলতাম।
আমরা যখন কিশোর ছিলাম
বাঁদুর ঝোলা ঝুলতাম
গাছে গাছে দড়ি বেঁধে দুলতাম
খেলায়-মেলায় দিন কাটিয়ে
নাওয়া-খাওয়া ভুলতাম
এখন যাদের কিশোর বয়স
তাদের হাতে যন্ত্র
কেউ মানে না টোটকা কিবা মন্ত্র
হাতের মুঠোয় নেট জগতেই
খুঁজে নতুন তন্ত্র।
……………………………………………
নানান
ভড়ং
রঙচঙে পৃথিবীটা লাগে লাগে
রঙহীন
করোনার কালে এলো একেমন দিন
কারো চোখে পৃথিবীটা লাগে আন্ধার
কেউ বুঝে সময়টা মহা ধান্ধার
চাল চুরি ডাল চুরি
মহামারীকাল চুরি করে কিছু লোক
মিডিয়াতে এসে করে
আহা উঁহু শোক।
পাকা ধান কাঁচা ধান চেনে
নাতো খুব
কাস্তেটা নিয়ে তবু মাঠে দেয় ডুব
উপরের দৃষ্টিটা যদি কাড়া যায়
রাতারাতি প্রমোশন বলো কে ঠেকায়?
ধান কাটা পান কাটা
কৃষকের জান কাটা একই কথা আজ
পাকা ধানে মই দেয়
নেতা মহারাজ ।
যার কাজ যেটা নয় সেটা করে
রোজ
ক্যামেরার চোখটাও তাই করে খোঁজ
একটাকা দান করে শতচোখে ক্লিক
ক্লিক ছাড়া দান নেই, রোগ মানসিক
বাঁয়ে চোরা ডানে চোরা
সদকা ও দানে চোরা দেখে যায় চোখ
সবকিছু গিলে খাবে
চোরাদের ঝোঁক।
করোনার এই কালে কত দেখি
ঢং
সামাজিক দূরত্বে নানান ভড়ং
কারো কারো ঈমানের বেড়ে গেছে তেজ
ঘাড়ত্যাড়া পশ্চাতে গজিয়েছে লেজ
ভোট চোরা জোট চোরা
কড়কড়ে নোট চোরা মেয়রের চোখে একী মেঘ?
মসজিদ নিয়ে ফাও
দেখায় আবেগ।
……………………………………………
হুজুগে
বাঙালি
হুজুগের সীমা নেই
তবে থাকা চাই
স্যুট পরে ধান কাটে ফুল বাবুরাই
চোখে থাকে চশমাও হাতে দামি ঘড়ি
কৃষকের সাথে করে
মেকি জড়াজড়ি।
কাস্তেটা হাতে নিয়ে
করে অভিনয়
ক্যামেরাতে ছবি তোলে দেয় পরিচয়
কেউ করে লীগ আর কেউ করে দল
পাকনামি করে কাটে
মৌসুমী ফল।
কাঁচা ধান পাকা ধান
চেনা খুব দায়
মাঠে গিয়ে মাস্তিটা করে করোনায়
আকামের কামলারা করে হইচই
এটাকেই বলে ঠিক
পাকা ধানে মই।
লেডিরাও বসে নেই
কাছা মেরে শাড়ি
নেমে গেছে ধান কাটা ভুলে চুলো-হাঁড়ি
কেউ মারে সেল্ফিও কেউ মারে পিক
হুজুগের বাঙালিকে
চাষি দেয় ধিক।
……………………………………………
মন
কোন বিষয়ে লিখবো ছড়া করবো
কী যে শুরু
মন বসে না বদ্ধ ঘরে মনটা উড়ু উড়ু
মন ছুঁতে চায় নীলাভ আকাশ
মন ছুঁতে চায় রবি
বদ্ধ ঘরে চায় না তো মন
আঁকতে ধূসর ছবি
মনপাখিটা উড়তে জানে
এই পৃথিবী ঘুরতে জানে
সবুজ শ্যামল
বনবনানী সবগুলো তার আপন
বন্দি ঘরে করতে না চায় নীরব জীবনযাপন।
চঞ্চলা মন ঘুড়ির মতো দেয়
আকাশে পাড়ি
যার মাঝে নেই যতির বালাই নেই কমা নেই দাঁড়ি
মনটা যে হয় ফড়িং আবার
মনটা যে হয় চিল
হরহামেশা উড়তে থাকে
অস্থির অনাবিল
মনপাখিকে ধরতে মানা
বন্দি খাঁচায় ভরতে মানা
মুক্ত পাখির
আকাশ থাকে শত্রু বিহীন ফাঁকা
আনন্দে মন উড়তে থাকে সত্যি ঝাকানাকা ।
বদ্ধ ঘরে মন বসে না মন
হতে চায় পাখি
মন ছুটে যায় দূর বিদেশে যতই কাছে রাখি
মন মানে না বারণ-শাসন
মন মানে না মানা
মনের আছে পিঠের মাঝে
আজব দুটো ডানা
মনপাখিটা গাইতে জানে
নাও উজানে বাইতে জানে
মনের সুখে
বিল-বাঁওড়ে মন কেটে যায় সাঁতার
ভুলক্রমেও এক জাগাতে স্থির থাকে না পা তার।
মন শুনে না বকাঝকা মন শুনে
না ঝাড়ি
মনের ভেতর থাকে আরেক ফুলেল বাগান বাড়ি
মন দেখে না কাঁটার আঘাত
মনটা দেখে ফুল
ভালোবাসার প্রত্যাশী মন
শোধরাতে চায় ভুল
মনটা শুধু ভুলতে জানে
বদ্ধ দুয়ার খুলতে জানে
মন জানে না
মনের বাড়ি কোন জগতে স্থায়ী
ভালোবাসার কাছে এ মন স্বেচ্ছা ধরাশায়ী।
রাস্তা ছিল কাদা-জলে ভরা
কী মনোহর লাগতো বসুন্ধরা
সবুজ সবুজ গ্রামটা যেন
একটা বিরান ভূমি
প্রতিদিনই ইট-পাথরের রাক্ষুসে দেয় চুমি।
এখন থাকে উঠোনভরা গাড়ি
নেই কুমোরের যত্নেগড়া হাঁড়ি
কৃষ্টি যেন হচ্ছে উধাও
গিলছে মধুর বিষ
মাঠে মাঠে হ্রাস পেয়েছে হলুদধানের শীষ।
কই হারালো হিজল-তমাল সারি
ছাতা মাথায় নেই যে পথচারী
সাঁকোর জাগা দখল নিলো
রড-পাথরের সেতু
সোনালি দিন কে কেড়েছে কেউ খুঁজে না হেতু।
উড়তো যেথায় রঙ বেরঙের ঘুড়ি
যার ছিল না সত্যি কোনো জুড়ি
তিলে তিলে সব হারালো
জারি-সারি-পুঁথি
বদলে গেছে মানুষজনের দৃষ্টি-অনুভূতি।
……………………………………………
গ্রামের মতো ছবি
বাঁশঝাড়ের ঐ ফাঁকফোকরে ওঠে ঊষার রবি
দোয়েল ডাকে সদলবলে টুনটুনি গায় গান
মুর্তাবেতের শীতলপাটি
মায়ের অবদান।
জারুল গাছে ফিঙে
উঠোনজুড়ে শিমের মাচা নয়ন জুড়ায় ঝিঙে
বাড়ির পাশে সর্ষে ক্ষেতে হলুদ ফুলের হাসি
তাল-গুবাকের আকাশ ছোঁয়া
দৃশ্য অবিনাশী ।
লতায় পাতায় ঘেরা
আলোর পিদিম দেয় জ্বালিয়ে রাতের জোনাকেরা
দূর্বাঘাসের সবুজ চাদর চতুর্দিকেই পোঁতা
পাখপাখালি গাছগাছালির
নিবিড় এ সমঝোতা ।
যায় সে দূরের মাঠে
সাঁজের বেলা বাড়ি ফিরে সূর্য গেলে পাটে
নদীর বুকে পালতোলা নাও দাঁড় বেয়ে যায় মাঝি
কৃষক তোলে বৈশাখী ধান
রেখে জীবনবাজি।
কেয়া চাপার গন্ধে
বিরস এ মন চনমনে হয় মাতে ছড়ার ছন্দে
ভোরের বাতাস স্নিগ্ধ সতেজ মন করে দেয় সরস
যে পেয়েছে এমনতর
সবুজ গাঁয়ের পরশ।
……………………………………………
ডালে ডালে পাখিদের নিরাপদ খোপ
ঘুঘু আর শালিকের সাথে ছিল প্রেম
সবুজাভ শৈশব চির মোলায়েম
ফড়িঙের ডানা
হেসেখেলে বেড়িয়েছি
ছিল নাতো মানা।
খেলা করে আলোছায়া মৃদু চঞ্চল
পাখিডাকা ফুলফোটা অভিরাম ভোর
ইশারায় কাছে ডাকে রাঙা কৈশোর
কচুরিরপানা
সব ছিল আমাদের
নিজ মালিকানা।
ফেলে আসা রবিবাবু নজরুল পাঠ
দুজনের প্রেমগীতি বিদ্রোহী মিল
খুলে দেয় সুগভীর ভাবনার খিল
সবদিকে সেরা
তাঁদেরকে গুরু মানে
আজো লেখকেরা।
দুপুরের ঝলমলে আলো রোদ্দুর
মাঝনদী বরাবর পালতোলা নাও
পেছনে সে ফেলে যায় ছোটপাড়া গাঁও
কৃষাণের হাসি
সেই স্মৃতি সেই ক্ষণ
আজো ভালোবাসি।
……………………………………………
পাখির গানে কলতানে মুগ্ধ হয়ে রই
মৌমাছিরা মধু খুঁজে
উড়ে দু'টো চক্ষু বুজে
আল্লাহ নামের জিকির ছাড়া উড়তে পারে কই?
মাছের পিছে মিছে মিছে লাগে কতেক ফেউ
সেই মাছেরাও দরুদ পড়ে
গভীর ধ্যানে জিকির করে
আল্লাহ ছাড়া নেই যে মালিক আর দ্বিতীয় কেউ।।
পাতার ফাঁকে ময়ূর ডাকে হই যে হতবাক
নিখুঁত এমন কারুকাজে
কার দয়াতে ভুবন সাজে
তিনি সবার মালিক-খালিক মহান আল্লাহপাক।।
বৃক্ষতলে জোনাক দলে জ্বালায় আলোর ধূপ
বনবাদাড়ের বাঁকে বাঁকে
মধুর সুরে পাখি ডাকে
সবাই রবের জিকির করে কেউ থাকে না চুপ।।
……………………………………………
পুকুর ভরা মাছের পোনা শানবাঁধানো ঘাট
গাছে গাছে থোকা থোকা নানান স্বাদের ফল
ভোরের আকাশ পাখির কূজন ব্যস্ত কোলাহল।
রাখাল ছেলের মোহনবাঁশি আঁকেন অহর্নিশ
তারাভরা রাতের আকাশ জোছনামাখা চাঁদ
কবি আঁকেন সাদাবক আর ঘুঘুধরা ফাঁদ।
রাঙাবধূর আঁচলটাতে রঙ লেপে দেয় খুব
নিজের মত ধ্যান ধারণায় আঁকেন কবি সব
কাগজজুড়ে গান-কবিতার নিত্য কলরব।
এই পৃথিবীর দর্শনীয় দারুণ চতুর্দিক
লিখতে থাকেন আঁকতে থাকেন কবি মহাশয়
মনের খাতায় হাজার বিষয় জমাই কেবল হয়।
ছবির নেশায় লেখার নেশায় যায় হারিয়ে ঘুম।
……………………………………………
বনবাদাড়ে গাছের পাতায় আলোর করি খোঁজ
হন্যে হয়ে দিকবিদিকে ছুটছি একা রোজ
সূর্যটাকে ঢেকে রাখে টুকরো মেঘের কালো।
ঝিকিমিকি শিশিরকণায় আলোর বাতি জ্বলে
ধরতে তাকে শীতসকালে জোর অভিযান চলে
আলোহীনা জীবন যেন গুমরে কাঁদে বিষে।
আলো ভেবে প্রবালকে যেই হাত বাড়িয়ে ধরি
অনেক কঠিন যুদ্ধে যেন ন্যস্ত হয়ে পড়ি
আলোর দেখা পাই না তবে অভিজ্ঞ হই খুব।
তারায় তারায় আলোর মেলা দূর আকাশে বসে
বিন্দু আলোর খুঁজে মরি এক পৃথিবী চষে
পাই না আলো তাই ছেয়ে রয় অন্ধকার এই বাড়ি।
উদাস উদাস মনের কোণে অন্ধকারের থাবা
নিন্দুকেরা নিন্দা করে কেউ বলে মারহাবা
আলো খুঁজি অরণ্যে আর সাগর-নদীর চরে।
আলোর বাতি কারা যেন গ্রাস করেছে চুপে
হারায়নি তো আলোর রেখা গভীর কোনো কূপে
খবর পেলাম আলো আছে জোনাকিদের দলে।
……………………………………………
ঘুড়ির পিছু ছুটতাম
বিকেলবেলা হইহল্লায় জুটতাম
পাখির বাসা খুঁজে খুঁজে
উঁচু ডালেই উঠতাম।
ফড়িং ধরে আনতাম
সুতো দিয়ে সরু দু'পায় বানতাম
বক-শালিকের সদ্য ছানা
কোথায় থাকে জানতাম।
জলে সাঁতার কাটতাম
স্কুলে যেতে অনেক দূরে হাঁটতাম
আউট বইয়ের জন্য গ্রামের
সব পাঠাগার ঘাটতাম।
কানামাছি খেলতাম
খেলার ছলে শূন্যে ডানা মেলতাম
মৎস্য ধরার জন্য কত
জাল পুকুরে ফেলতাম।
বাঁদুর ঝোলা ঝুলতাম
গাছে গাছে দড়ি বেঁধে দুলতাম
খেলায়-মেলায় দিন কাটিয়ে
নাওয়া-খাওয়া ভুলতাম
তাদের হাতে যন্ত্র
কেউ মানে না টোটকা কিবা মন্ত্র
হাতের মুঠোয় নেট জগতেই
খুঁজে নতুন তন্ত্র।
……………………………………………
করোনার কালে এলো একেমন দিন
কারো চোখে পৃথিবীটা লাগে আন্ধার
কেউ বুঝে সময়টা মহা ধান্ধার
চাল চুরি ডাল চুরি
মহামারীকাল চুরি করে কিছু লোক
মিডিয়াতে এসে করে
আহা উঁহু শোক।
কাস্তেটা নিয়ে তবু মাঠে দেয় ডুব
উপরের দৃষ্টিটা যদি কাড়া যায়
রাতারাতি প্রমোশন বলো কে ঠেকায়?
ধান কাটা পান কাটা
কৃষকের জান কাটা একই কথা আজ
পাকা ধানে মই দেয়
নেতা মহারাজ ।
ক্যামেরার চোখটাও তাই করে খোঁজ
একটাকা দান করে শতচোখে ক্লিক
ক্লিক ছাড়া দান নেই, রোগ মানসিক
বাঁয়ে চোরা ডানে চোরা
সদকা ও দানে চোরা দেখে যায় চোখ
সবকিছু গিলে খাবে
চোরাদের ঝোঁক।
সামাজিক দূরত্বে নানান ভড়ং
কারো কারো ঈমানের বেড়ে গেছে তেজ
ঘাড়ত্যাড়া পশ্চাতে গজিয়েছে লেজ
ভোট চোরা জোট চোরা
কড়কড়ে নোট চোরা মেয়রের চোখে একী মেঘ?
মসজিদ নিয়ে ফাও
দেখায় আবেগ।
……………………………………………
তবে থাকা চাই
স্যুট পরে ধান কাটে ফুল বাবুরাই
চোখে থাকে চশমাও হাতে দামি ঘড়ি
কৃষকের সাথে করে
মেকি জড়াজড়ি।
করে অভিনয়
ক্যামেরাতে ছবি তোলে দেয় পরিচয়
কেউ করে লীগ আর কেউ করে দল
পাকনামি করে কাটে
মৌসুমী ফল।
চেনা খুব দায়
মাঠে গিয়ে মাস্তিটা করে করোনায়
আকামের কামলারা করে হইচই
এটাকেই বলে ঠিক
পাকা ধানে মই।
কাছা মেরে শাড়ি
নেমে গেছে ধান কাটা ভুলে চুলো-হাঁড়ি
কেউ মারে সেল্ফিও কেউ মারে পিক
হুজুগের বাঙালিকে
চাষি দেয় ধিক।
……………………………………………
মন বসে না বদ্ধ ঘরে মনটা উড়ু উড়ু
মন ছুঁতে চায় নীলাভ আকাশ
মন ছুঁতে চায় রবি
বদ্ধ ঘরে চায় না তো মন
আঁকতে ধূসর ছবি
এই পৃথিবী ঘুরতে জানে
বনবনানী সবগুলো তার আপন
বন্দি ঘরে করতে না চায় নীরব জীবনযাপন।
যার মাঝে নেই যতির বালাই নেই কমা নেই দাঁড়ি
মনটা যে হয় ফড়িং আবার
মনটা যে হয় চিল
হরহামেশা উড়তে থাকে
অস্থির অনাবিল
বন্দি খাঁচায় ভরতে মানা
আকাশ থাকে শত্রু বিহীন ফাঁকা
আনন্দে মন উড়তে থাকে সত্যি ঝাকানাকা ।
মন ছুটে যায় দূর বিদেশে যতই কাছে রাখি
মন মানে না বারণ-শাসন
মন মানে না মানা
মনের আছে পিঠের মাঝে
আজব দুটো ডানা
নাও উজানে বাইতে জানে
বিল-বাঁওড়ে মন কেটে যায় সাঁতার
ভুলক্রমেও এক জাগাতে স্থির থাকে না পা তার।
মনের ভেতর থাকে আরেক ফুলেল বাগান বাড়ি
মন দেখে না কাঁটার আঘাত
মনটা দেখে ফুল
ভালোবাসার প্রত্যাশী মন
শোধরাতে চায় ভুল
বদ্ধ দুয়ার খুলতে জানে
মনের বাড়ি কোন জগতে স্থায়ী
ভালোবাসার কাছে এ মন স্বেচ্ছা ধরাশায়ী।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Facebook: facebook.com/samoiki
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments