আল জাবিরী’র কিশোর কবিতা

 
 
ইচ্ছে আমার আকাশ দেখার
 
মন বসেনা পাঠ্য বইয়ে মন বসেনা ঘরে
মন ছুটে যায় সকাল দুপুর অচিন তেপ্রান্তরে।
 
মন বলে আয় যাই হারিয়ে মেঘনা নদীর চরে
ঘাসফড়িংয়ের মতোই করে ঘুরব পরস্পরে
 
মন থাকে কি বদ্ধ ঘরে? মন হতে চায় পাখি
কিচির মিচির ছন্দ সুরে করতে ডাকা-ডাকি।
 
দুখান ডানা পাখির মতো কোথায় খুঁজে পাই?
আকাশে নীলের মাঝে হারিয়ে যেতে চাই।
 
মেঘের ভাজে চাঁদের মাঝে থুথথুরে এক বুড়ি
কল্পকথার গল্পবলায় নেই কোন যার জুড়ি।
 
সেই বুড়ি টি মেঘের বুড়ি মেঘের ভেতর থাকে
সকাল বিকাল আকাশ থেকে আমায় শুধু ডাকে।
 
তখন কি আর যায় থাকা যায় ঘরের ভেতর একা
ইচ্ছে গুলো পাখনা মেলে করতে হবে দেখা।
 
কিন্তু মাগো শুধুই কেন আমায় বারণ করো
দেখ মা মেঘপরি উড়ছে থরো থরো।
 
নাইবা যদি ছুটি দিলে বন্দি রাখো ঘরে
ইচ্ছে আমার আকাশ দেখার, দেখবো কেমন করে।
……………………………………………
 
আজকে আমার ছুটি
 
আজকে আমার দিন
হাসি-খুশী ছুটোছুটি স্বপ্নটা রঙিন।
হিজল বনের ফাঁকে
দেখছি যেন কাকে
আয়রে তোরা ঘর পালিয়ে আয়
আমার সোনার গাঁয়।
 
পুকুর পাড়ে বাঁশের ঝাঁড়ে
বক সারসের ঝাঁক
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিগুলো
দিচ্ছে কেবল ডাক।
 
শিকারি তোমার গুলি
আর করো না তাক।
 
আজকে আমার ছুটি
ছুটি মানে ডানায় ডানায় মেঘের লুটোপুটি।
তপ্ত দুপুর ঘুমায় অলস
ঘুমিয়ে তারা থাক
চাঁদের বুড়ি মেঘ থেকে রোজ
দিচ্ছে আমায় ডাক।
 
মেঘে মেঘে আকাশ ঢাকা
মেঘ যে আমার প্রিয়।
নীলাভ খামে মেঘের কথা
পাঠিয়ে আমায় দিও।
……………………………………………
 
বাংলার রঙ রূপ
 
দুধ সাদা মেঘ ওড়ে আকাশের গায়
মেঘপরি ডেকে বলে খুকু আয় আয়।
শাপলা শালুক ফোটে হাসে খিলখিল
আকাশের নীল ছুঁতে ডানা মেলে চিল।
 
নদী জল টলমল রূপ অপরূপ
কদম শিউলি কতো ঝরে টুপটুপ।
ভোর হতে শোনা যায় শালিকের ডাক
পাকা ধানে জড়ো হয় বাবুই এর ঝাক
 
কৃষাণ কৃষাণি করে ফসলের চাষ
কাশবনে ডেউ তোলে দখিনা বাতাস।
খুকু নাচে ফুল বাগে খুলে তার কেশ
সকালের সোনা রোদ মধুর আবেশ।
 
সাদা শাড়ি পরে নাছে শরতের পরি
গান গেয়ে যায় মাঝি বেয়ে ছোট তরী।
ঝলমলে রোদ হাসে গ্রামীন আকাশ
ঝিরঝির সুর তোলে দখিণা বাতাস।
 
বিলে ঝিলে কৈ, পুঁটি দল বেঁধে ছুটে
ওঁত পেঁতে আছে বক যদি কিছু জুটে।
মাঝে মাঝে মাছরাঙা দেয় শুধু হানা
ছোট মাছ তুলে খায় করবে কে মানা?
 
রাতের আকাশ দেখ তারা ঝলমল
জোছনায় স্নান করে হাসে কলকল।
হিমহিম বাতাসের ছোঁয়া লাগে মনে
শিউলির ঘ্রান ভেসে আসে ক্ষণে ক্ষণে।
 
বাঁশবাগে জ্বলে নিবে জোনাকির আলো
একা একা বসে থাকি লাগে খুব ভালো।
বাংলার রঙ রূপ বর্ণিল শোভা
নয়ন জুড়ানো আহা সবি মনোলোভা।
……………………………………………
 
উদাস দুপুর সুরের নূপুর
 
আয় ছুটে যাই কল্পলোকে
দলবেঁধে সব খোকা
আনন্দেতে কাটাই বেলা
হবো আলোর পোকা
 
জাম, জামরুল হিজলবনে
ডাকছে পাখি ক্ষণে ক্ষণে
খুশির বানে যাই হারিয়ে
আয় ছুটে একরোখা।
 
আয় ছুটে সব দুষ্টুখোকা
আয় তোরা আয় আয়
উদাস দুপুর সুরের নূপুর
বুলবুলি গান গায়।
 
গানের তালে তাল মিলাব
বাঁশির সুরে সুর
ইচ্ছে হলেই উড়াল দিব
অচিন সমুদ্দুর।
 
আচ্ছা যদি যায় গজিয়ে
পাখির মতো ডানা
অথৈ সাগর পাড়ি দিব
শুনবোনা আর মানা। 
 
অলস দুপুর আম্মু যখন
থাকবে গভীর ঘুমে
আমি কি আর পিচ্চি খোকা
থাকবো বসে রুমে।
 
ভরদুপরে বাইরে যাওয়া
বারণ যতো মা'
তখন আমায় রুখবেকে আর
মামনিটার হার।
……………………………………………
 
ভাই হারানো একাত্তরের কথা
 
বুকের ভেতর অগ্নিবীণা ঢেউ টলমল করে
মুক্তি পাগল দামাল ছেলে থাকবে না আর ঘরে।
 
শাসন নামে শোষন করা শিকল দেয়ার ফাঁদ
বীর জনগন দুঃশাসনের করল প্রতিবাদ।
 
সাহস নিয়ে উজ্জীবনের মশাল দিলো জ্বেলে
কিশোর যুবা যায় এগিয়ে বুলেট বোমা ঠেলে।
 
মুক্ত স্বাধীন করতে হবে দেশ পতাকা মাটি
বাংলা আমার মাতৃভূমি সোনার ছেয়ে খাটি।
 
ত্রিশলক্ষ প্রাণের দামে পেলাম স্বাধীনতা
কেমনে ভুলি ভাই হারানো একাত্তরের কথা।
……………………………………………
 
মাকে ছাড়া যায়না থাকা
 
মুক্ত আকাশ পাড়ি দেওয়া
মেঘ চিনেনা পাখি
পাখির মতো দুখান ডানা
মনের ভেতর রাখি।
 
মন কি তবে খাঁচা
বুনন তো নয় কাঁচা
পাখির সাথে মনের সাথে
দারুন মাখা মাখি।
 
পাখিরে তুই উড়াল দিলে
মেঘের সাথে হাওয়ায় মিলে
মাকে আমার খুজিস
মাকে ছাড়া একলা ঘরে
কেমনে থাকি; বুঝিস?
 
মাকে ছাড়া একলা একা
থাকবোনা আর আমি
এই পৃথিবী তুচ্ছ সবি
মা- আমার দামী।
 
পাখি তুই মাকে আমার
সারা আকাশ খুজিস
মাকে ছাড়া যায়না থাকা
একটুও কি বুঝিস?
……………………………………………
 
হলদে পাখির বিয়ে
 
দোল দিয়ে যায় রোদ মাখা দিন দোল দিয়ে যায় সুর
সুরের মোহে মন ছুটে যায় সুদূর অচিনপুর।
 
পাখির সুরে মন উদাসী মন থাকে কি পাঠে
মন তো শুধু ঘুরতে থাকে বন পাহাড়ের মাঠে।
 
মাঠের সাথে ঘাট প্রিয় নাইতে নামি জলে
পুকুর জলে জল কেলিতে লাফাই দলে দলে।
 
আমরা সবাই দস্যি ছেলে নেই আমাদের জুড়ি
ইচ্ছেমতো যখন তখন বন বাদাড়ে ঘুরি।
 
পাখপাখালির পিছু ছুটি কোন পাখিটা টিয়ে
হঠাৎ করে জানতে পারি হলদে পাখির বিয়ে।
 
বর এসেছে মুকুট পরে মুকুটটা খুব দামি
বর কনেকে দেখতে সবাই একটু করে থামি।
 
ওমা কী দেখছি সবাই কনের গলায় হার
ঝলক মারা খাঁটি সোনার হারটা হলো মা'র।
 
যে হারটা হারিয়ে গেল সপ্তাহ দুয়েক আগে
সেই না হারে আজ কনেকে খুব যে দারুণ লাগে।
……………………………………………
 
দৃপ্তস্বরে স্লোগান তুলি
 
ইচ্ছে হলেই ছুটতে পারি
লুটতে পারি
ঘুরতে পারি খুব
আমরা কজন দস্যি ছেলে
নস্যি করে
দেই পুকুরে ডুব।
 
আমরা আবার হাসতে পারি
নাচতে পারি
গাইতে পারি গান
পাখির মতো উড়তে পারি
রুখতে পারি
আসুক যতো বান।
 
দৃপ্তস্বরে স্লোগান তুলি
কপাট খুলি
মুখর কলরব
মুক্ত করি মাতৃভাষা
মাতৃভূমি
মুক্ত করি সব।
……………………………………………
 
খুকু নীলাকাশ
 
ওই যে আকাশ দেখছ নীলে নীল হয়েছে
সেই আকাশের সাথে খুকুর মিল রয়েছে।
 
এইতো পাখি একলা ডালে সুর তুলেছে
চাঁদ মামাও দূর আকাশে মুখ খুলেছে।
 
আজকে কেন মলিন মুখে থাকবে খুকু
মা'যে তার হারিয়ে গেছে তাইতো দুখু।
 
মা হারানো এই মেয়েটি পথের বাঁকে
সকাল দুপুর উদাস বিকাল মা কে ডাকে।
 
মাগো তুমি হারিয়ে গেলে কোন অজানা
এই জগতে আমার তো আর নেই ঠিকানা।
……………………………………………
 
পাখির সাথে ফুলের সাথে
 
ইচ্ছে করে শহর ছেড়ে
গাঁও গেরামে যাই
যেথায় গেলে আমি আমার
মায়ের দেখা পাই।
 
যেথায় আছে প্রিয় আমার
নকশি কাঁথার মাঠ
কলসি কাঁখে ফিরছে বধূ
শান বাঁধানো ঘাট।
 
ইচ্ছে করে যাই হারিয়ে
আম কাঁঠালের বন
পাখির সাথে ফুলের সাথে
খেলতে সারাক্ষণ।
 
ইচ্ছে করে যাই যে ছুটে
ফুল ফসলের মাঠ
নিত্য যেথায় রাখাল ছেলে
নেয় যে সুরের পাঠ।
 
ইচ্ছে করে আরো কতো
থাকত ডানা পাখির যতো
এডাল ওডাল ইচ্ছে মতো
স্বপ্ন আছে হাজার শতো।


⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com 

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.