মহামারি করোনার বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের নেপথ্যে ।। রায়হান আজাদ

 
অতি সম্প্রতি আমার লেখাইটালিতে আজ কেন এত দুর্দশাপ্রকাশের পর ফেসবুকে আমাকে কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, বুঝলাম! চায়না, ইটালি, স্পেন আর ইরান আল কুরআন মহানবীর অবমাননা করে অন্যায় করেছে সেজন্য তারা শাস্তি পাচ্ছে কিন্তু পৃথিবীর আরো ১৯৫টি রাষ্ট্রের কি দোষ? তাদের দেশে কেন খোদায়ী আযাবের সংক্রমণ?
 
আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য হচ্ছে,আল্লাহ পাক গোটা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। এই যে নানান দেশ-জাতি এসব আমাদেরই বিভাজন। তাঁর কাছে আমাদের বর্ডার বিবেচ্য নয়। তিনি প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়েছেন। নিয়মের ব্যাপক ব্যত্যয় ঘটালে শাস্তি দেন সতর্ক হওয়ার জন্য। আজ যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এর ব্যাপকতার নেপথ্য কারণ হচ্ছে-
.  আমরা মনুষ্যজাতি ব্যাপক প্রাকৃতিক নিয়ম ভাঙ্গছি। কথা কাজে চরম সীমালংঘন করছি। জুলমে জুলমে বেপরোয়া হয়ে গেছি। ব্যক্তি রাষ্ট্র পর্যায়ে আমরা কত যে জুলম করছি তা অল্প পরিসরে বর্ণনা অসম্ভব। এই যে মহামারির প্রাদুর্ভাব তা যে আমাদের দুহাতের উপার্জন নিয়ে সন্দেহ নেই। আল্লাহ পাক বলেন, ‘জলে-স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল (সূরা আর- রুম: ৪১) এতে বুঝা যায়, আমাদের অপকর্মের বোঝা ভারী হয়ে যাওয়ায় দুনিয়াতে তার কিঞ্চিত পরিণাম ভোগ করতে হচ্ছে। আল্লাহ পাকই ভালো জানেন পৃথিবীর কোন কোন জাতি কত বেশী অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। 
 
.  ১৯৩৯ সালে অক্ষশক্তি আর মিত্রশক্তি নামে মাত্র ৩০টি রাষ্ট্রের মাঝে ২য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এর বাইরেও কিন্তু আরো বহু রাষ্ট্র নানানভাবে আক্রান্ত হয়। তারা কোন পক্ষই ছিল না, যুদ্ধের বিপক্ষে হয়ত শান্তিপ্রিয় জাতি ছিল। কিন্তু তারা তো শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে পারলো না। ছড়িয়ে পড়ে যায় বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ। মানবগোষ্ঠী জেনে বুঝে বিশ্ব বিপর্যয় ডেকে আনে। মানুষের এহেন বাড়াবাড়ির পরিণতি আল্লাহ পাক সময় মতো বুঝিয়ে দেন। আল্লাহর বক্তব্য, ‘কাফিরদের সাময়িক ছাড় দেয়া হবে কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেয়া হবে না যারা নিজেরাই বিশ্বব্যাপী মহাধ্বংসযজ্ঞ ছড়িয়ে দেয় তারা আবার কেমন বলবে, খোদায়ী মহামারি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লো ক্যান? অপরাধের আলোকে শাস্তি পেতেই হবে- এটাই নিয়ম।
 
. ইসলামের কথা হল, অন্যায় নিজে করাও যাবে না, কাউকে করার সুযোগও দেয়া যাবে না। কেউ অন্যায় করলে যেরকম শাস্তি পেতে হবে তদ্রƒ অন্যায় চোখ বুঁজে সয়ে গেলে  জালিমকে প্রশ্রয় প্রদানের জন্য অপরাধে তাকেও শাস্তি পেতে হবে। এজন্য ইসলামেআমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার  তথাসৎকাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধনামায -রোযার মতোই ফরজ করা হয়েছে। ধরুন, কেবলমাত্র একটি উপমা,গত বছর সৌদি আরবের মতো মুসলিম রাষ্ট্র হক্ব কথা বলার কারণে কাবা শরীফের ইমামকে অপদস্থ করে কারাগারে পাঠালে কোন মুসলিম রাষ্ট্রই কি তার প্রতিবাদ করেছে? অথচ কাবা শরীফ কোন দেশ-জাতির একক সম্পদ নয়, এটা গোটা মুসলিম মিল্লাত তথা দুনিয়াবাসীর রক্ষাকবচ। আমাদের বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে/তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে
 
তাই আজ বলা যায়,ওআইসি,কমওয়েলথ আর জাতিসংঘ কাবা শরীফ,আল কুরআনুল কারীম মহানবীর অবমাননা প্রতিরোধে কোন ভূমিকা রাখার সদিচ্ছা পোষন করেনি। তাতে বুঝা যায়, ব্যাপারে দুনিয়াবাসী নির্বিকার। আর এভাবে অন্যায়কারী আর অন্যায়ে নীরবতা পালনকারী কিংবা সমর্থনকারীতে ভরে গেছে দুনিয়া। একইভাবে এর ব্যাপকতা অনুসারে মহামারির ব্যাপকতাও ছাড়িয়ে পড়ে।
 
.  আল্লাহ পাক আল কুরআনে বলেছেন, “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই: মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও। [আল-বাক্বারাহ ১৫৫] দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তার ঘোষণার দ্বারা বুঝা যায়, বর্তমানে সয়লাব হয়ে যাওয়া করোনা সংক্রমণ কেবল আযাব নয়, কারো কারো জন্য পরীক্ষাও বটে। পরীক্ষায় মুসলিম মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে ধৈর্য-নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। তাহলে শীঘ্রই আল্লাহর সাহায্য নেমে আসবে, ইনশাল্লাহ। 
 
আসুন, আমরা আল্লাহর উপর আস্থা রাখি। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করি। বিধাতার বিধান বুঝতে চেষ্টা করি। প্রকৃতির বিরুদ্ধে চললে প্রকৃতি একদিন না একদিন প্রতিশোধ নেবেই আর এটা তো স্বত:সিদ্ধ যে ইসলাম প্রকৃতিসম্মত ধর্ম। সুতরাং প্রকৃতি তথা ইসলামের আইন ভাঙ্গার পরিণতি শুভ হবে না। আমাদের ভাবতে হবে, ইটালি ৬০০ বছর ধরে মহানবীর অবমাননা করে চলেছে, নেদারল্যন্ডে খোলা ময়দানে কুরআন পোড়ানো হয়েছে, চায়না কুরআন বদলানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ আমরা কি পদক্ষেপ নিয়েছি? কি করেছে আমাদের ওআইসি-আরবলীগ? নিশ্চুপ- নীরবতা কি মৌন সম্মতি লক্ষণম? আমরা নামেই মুসলিম, কাজের বেলায় নয়। তাইতো ইসলামী অনুশাসন মানার দিক দিয়ে অমুসলিম রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ডই সবার শীর্ষে রয়েছে।
 
মহামহিম আল্লাহ যেহেতু আসমান-জমিন সবকিছুর মালিক। তাঁর রয়েছে কিছু রিজার্ভ এরিয়া। আল্লাহর নিজস্ব  সীমা-পরিসীমায় কেউ জোর করে অনুপ্রবেশ করতে চাইলে আল্লাহ পাক তাকে ছেড়ে দেবেন না;নাস্তানাবুদ করে ফেলবেন-সেটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। আর আল্লাহর নিজস্ব হারাম বা মর্যাদাপ্রাপ্ত পরিসীমা হচ্ছে বায়তুল্লাহ শরীফ আল কুরআনুল কারীম খাতিমুন্নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ পাক আমাদের সবার উপলদ্ধির দরজা উন্মুক্ত করে দিন,ইসলামের মৌলিক বিষয়ে গভীর ঈমান মুহাব্বত পয়দা করে দিন আর তাওবা-ইসতিগফারের মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরে আসার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.