মুক্তি
বিষয়টা ব্যাপক এবং সহজ সাধ্য
নয়।জাতি রাষ্ট্রের মুক্তি আর ব্যক্তির মুক্তি
অভিন্ন কর্ম নয়।সংগ্রামের মাধ্যমে
অর্জিত বিজয়কে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান মুক্তি হিসেবে গণ্য করে।ভূ-
খণ্ড
শত্রুমুক্ত হওয়া,
শাসক শ্রেণির পরিবর্তন
এসবই মুক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়।
এখানে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সাংস্কৃতিক মুক্তি
বিষয় থাকে গৌণ।একারণে জনগণের
মুক্তির বিষয়টি অর্জিত হয় না। সম্পদের
সুষম বণ্টন আর রাষ্ট্রের মালিকানা
জনগণের মধ্যে না থাকা মুক্তি
অর্জনের পথকে প্রলম্বিত করে।আমাদের
এ অঞ্চলের সংগ্রামের পথকে অনেকে গণ্ডগোল
বলে চালিয়ে দেন।জনমুক্তির যে সংগ্রাম সেটা
জনযুদ্ধ ছিলো। এটাকে কোনো ক্রমেই গণ্ডগোল
বলার অবকাশ নেই।দেশ স্বাধীনের বিষয়টি সামনে আসার কতগুলো স্পষ্ট
কারণ আছে।১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ফলে
যে রাষ্ট্রের জন্ম হয় সেটা
আপাতদৃষ্টিতে গোলটেবিলের মাধ্যমে অর্জিত মনে হলেও তার
জন্য বাঙালিকে কম শ্রম,
ঘাম,
রক্ত দিতে হয়নি।পাকিস্তান
অর্জনের জন্য বাঙালি জীবন
দিয়েছে। পাকিস্তানের জন্য গীত রচনা
করেছে। পাকিস্তানের পতাকা,
জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেছে। এতোসব করেছে মুক্তির জন্য।দেশ ভাগের পর সে মুক্তি
আসেনি।অর্থনৈতিক ব্যাপক বৈষম্য নিয়ে শুধু ধর্ম
মিলের বিবেচনায় পাকিস্তান রাষ্ট্রের যাত্রা।লাহোর প্রস্তাবে যে অধিক সংখ্যক
রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল
তার অন্যথা হওয়ার মাশুল গুণতে হয় উপমহাদেশের মানুষকে।
দেশ ভাগ মানে মুক্তি
নয় এ সত্য দ্রুতই
বাঙালি অনুভব করে।বিজাতীয় শাসনের নমুনা বাঙালির সামনে নতুন নয়।
যা
বলছিলাম,
৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের
পেছনে কিছু কারণ ছিলো।
যেটা ৬ দফা দাবির
মধ্যে লিখিত। শুধু ভূখণ্ড আলাদা
কিংবা শাসক বদলই স্বাধীনতার
পূর্বশর্ত নয়।যুদ্ধের অন্যতম কারণ ছিলো শোষণ,
বঞ্চনা আর অসম বণ্টনের
বিষয়। সবচেয়ে বেশি বৈষম্য বিরাজমান
ছিলো সামরিক খাতে।এছাড়া ভাষা এবং সাংস্কৃতিক
আগ্রাসন সমান তালে চলছিলো।
আর এ কারণে জনযুদ্ধের
প্রয়োজনীয়তা সামনে চলে আসে।জনযুদ্ধটা গেরিলা
পদ্ধতির হওয়াতে বর্হিবিশ্বে এর গ্রহনযোগ্যতা দ্রুত
অর্জিত হয়।সাথে নির্যাতিত শ্রেণির সহানুভূতি দৃশ্যমান হয়। দেশে দেশে
নির্যাতিত শ্রেণির একটা প্রভাব আছে
যেটা ইতিবাচক সমাজের জন্য জরুরী। এই
নির্যাতিত মানুষকে নিয়েই কিন্তু ইতিহাস। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৭১ সে
প্রান্তিক শ্রেণির অবদান নির্ণীত হয়নি।সামনে চলে এসেছে এলিট
শ্রেণি।এলিটদের জনযুদ্ধে অংশ নেয়া নিয়মতান্ত্রিক
ছিলো না।এরা যুদ্ধের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলো।
৭১
এ যে প্রস্তাবনা জনগণের
মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে জনযুদ্ধের ডাক
দেয়া হয় তার অনেকখানি
এখনো জনগণ জানে নি
কিংবা জনগণকে সে পথ থেকে
সরিয়ে রাখা হয়েছে কৌশলে।
মুক্তি বিষয়ে মানুষের স্পষ্ট ধারণা স্বচ্ছ নয়।আগের মতোই তৈরি হয়ে
গেছে শোষিত শ্রেণি।ব্যাপকভাবে তৈরি করা হয়ে
বুর্জোয়া এলিটদের। এই এলিটরা জনযুদ্ধকে
বোকাদের জীবনদান মনে করে।এরা সমাজে
নিজদের অবস্থান তৈরির জন্য বীরত্বের ইতিহাস
অনুচ্চ রাখে।যাতে করে মানুষ অর্থনৈতিক
মুক্তির বিষয়টি জাতীয়ভাবে বিবেচনা করতে না পারে।রাজনৈতিকভাবে
এমন সব কর্ম সম্পাদন
করা হচ্ছে যাতে মানুষ ভাবতে
শিখবে ৭১ এ জীবনদান
কোন বীরত্বের কাজ ছিলো না।
প্রতিবছর
১৬ ডিসেম্বর আসে আড়ম্বরের সাথে।কতগুলো
নিত্যকর্মের মাধ্যমে সম্পাদিত হয় বিজয় দিবস।
কিন্তু এতে করে ৭১
সালের যে অঙ্গীকার ছিলো
তার সিকি ভাগও অর্জিত
হচ্ছে না।এ জন্য আমাদের
কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরী। সবগুলা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান আজ একে অন্যের
প্রতিদ্বন্দ্বী। কেউ কারো পরিপূরক
হয়ে কাজ করছে না।
সম্পদের সুষম বণ্টনের বিষয়টি
সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হচ্ছে।সামাজিক
নিরাপত্তা বেষ্টনী বলয়চ্যুত।অর্থনৈতিক অধিকার নিয়মিত উপেক্ষিত। প্রান্তিক শ্রেণি দেউলিয়া প্রায়।মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম কাগুজে বিষয়ে পরিণত হয়্রছে।যে নতুন শ্রেণি আবির্ভাব
হচ্ছে তাদের মধ্যে হতাশা আর নতুন ইজমের
ঘেরাটোপে তাদের নাভিশ্বাস ওঠার যোগাড়। শ্রেণি
বিভাজন এতো বেশি প্রকট
আর বিস্তৃত হয়েছে যে মানুষকে মোটাদাগে
বিভক্ত করা যায়।আর এ
বিভাজন মুক্তির বিষয়টি ম্লান করে দিচ্ছে।
সমস্যা
হচ্ছে আরও একটা শ্রেণিকে
নিয়ে,
যারা জাগতিক মুক্তির
চাইতে পারলৌকিক মুক্তির বিষয়টি এতো বেশি উচ্চকিত
করেছে যে প্রান্তিক শ্রেণি
সহজেই বিষয়টি গলধঃকরণ করতে পারছে না।এতে
করে মুক্তির বিষয়টি সর্বাংশে গলদঘর্ম হয়ে উঠেছে।শারীরিক মুক্তির
বিষয়টি দৃশ্যমান না হওয়াতে উচ্চ
শ্রেণি আস্থা রাখতে পারছে না।আর এ কারণে নানামুখী
মুক্তি অর্জনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়া অস্বাভাবিক
কিছু নয়।গণমুক্তির পথ নির্মাণ কে
করবে এ নিয়ে দোদুল্যমান
অবস্থা সব সময়ই ছিলো।
পথ দেখিয়ে অবস্থা পরিস্কারের ব্যবস্থাতেও গরল ছিলো। সমাজ
বাস্তবতায় বিভিন্ন জন পথ নির্মাণের
চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সে পথে মুক্তি
আসেনি।যে অঙ্গীকার একীভূত ছিলো ৭১ এ
সে শপথ থেকে জাতি
বিচ্যুত। বিভিন্ন সময়ে মুক্তির যে
সনদ তার কাটাছেঁড়া হওয়ার
কারণে প্রান্তিক মুক্তির বিষয়টি আরও দূরে সরে
গেছে।জাতীয় ইতিহাসে অনেক পথিক পথ
নির্মাণ করেছেন।এখন সে পথের যে
দাবি সে দাবি উপেক্ষিত
হওয়ার কারণে প্রান্তিক মুক্তি সুদূর পরাহত। এখন অপেক্ষায় থাকতে
হবে জাতীয় মুক্তির জন্য।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments