আমার কবিতারা ।। তৈমুর খান
আমার নিজের কবিতাগুলি খুব বোকা। দরিদ্র হয়েও তারা যশস্বী হতে চায়। আমি ওদের বারবার শিক্ষা দি “দরিদ্ররা দরিদ্রই থাকে। অভিজাতদরিদ্র বলে কোনও কথা হয় না। সুতরাং যশস্বী হবার দাবি বৃথা।" তবু শোনে কই! আমার হাত ধরে লিখিয়ে নেয়। আমাকে ঘুম থেকে ওঠায়। রাস্তা হাঁটার সময়ও পেছন ছাড়ে না। সুন্দরী কোনও মেয়ে দেখছি হয়তো, তখনই কবিতারা এসে বলে “আমাদের লেখো!" গিন্নির সঙ্গে মাঝে মাঝে ঝগড়া হয়। মাঝে মাঝে আত্মহত্যার কথাও ভাবি। আর ওই ফাঁকে কবিতারা দল বেঁধে মিছিল করে —
“আমাদের লিখতে হবে, লিখতে হবে!"
“আমাদের লেখার মর্যাদা দিতে হবে!"
“আমরা প্রকাশ চাই, প্রকাশ করো!"
“আমরা বাঁচতে চাই, আমাদের তুলে ধরো!"
অবশেষে না লিখে পারি না। বোকা কবিতাদের মিছিলের চোটে অস্থির হয়ে উঠি। আমার আর আত্মহত্যা করা হয় না।
নিজের ব্যক্তিগত কিছু প্রাইভেসি ব্যাপার থাকে। যেগুলি কাউকেই বলা যায় না। অথচ সেসব নিয়ে কবিতারা মাতামাতি করে। হন্যে হয়ে বসে থাকে তা জানার জন্য। আর জেনে নিয়ে নিজেরাই তখন আমাকে শুনিয়ে যায় “আমরাই তো তোমার স্বপ্নের সন্তান!" বহুদিন পর এক-আধবার আমার পুরোনো প্রেমিকাকে স্বপ্নে দেখি। কবিতারা কী করে যে তার সন্ধান পায়, অমনি ফ্রয়েড ডেকে আনে। আমার যা অবচেতনের বিষয় তাতেও এমন দাদাগিরি! দাঁড়া, দেখাচ্ছি এসব বলে গম্ভীর হয়ে যাই। এলোমেলো কিছু কথা বলি, যা একেবারে অপ্রাসঙ্গিক। কিছু চিত্রকল্প এনে উপস্থিত করি। তবু আমি ধরা পড়ে যাই। আমার ব্যর্থ প্রেমের ইতিহাস ফাঁক হয়ে যায়। শিশির বিন্দুগুলিও যে তখন আমার কান্নার ফোঁটা ফোঁটা মাণিক তা আর কারুর বুঝতে বাকি থাকে না। সুতরাং কী আর গোপন করা যায়! প্রেম আর বিষাদ দুই-ই লেখা হয়ে যায় সেখানে। এভাবেই কবিতারা —আমার মৃত্যু, বাঁচা, প্রেম ও বিষাদের সাক্ষী হয়ে থাকে। আমি ওদের কখনো সম্মান দিই না। মাঝে মাঝে ওদের ছন্দপতন ঘটাই। মাঝে মাঝে শক্ত ঢিল ছুঁড়ে মারি। মাঝে মাঝে পাথুরে রাস্তায় হাঁটাই। আবার ভালোবেসে ললিত মাধুরি শিল্প নৈপুণ্যে নাচাই। এমনি করে ওদের সঙ্গে মান-অভিমানের খেলা চলতে থাকে। ওরা আমার ছায়াসঙ্গী। তবুও ওদের অবহেলা করি।
লোকের মুখে মাঝে-মাঝেই শোনা যায় “কবিতা কিস্যু হয় না।"
মনে-মনেই বলি “তা না হোক বাপু, তবু তো তারা সৎ! কখনো আমার সঙ্গে ছলনা করে না। ওরা চালাকি জানে না। আমি যেমনভাবে কাঁদি, ওরাও হুবহু নকল করে। আমি যেমনভাবে দুঃখ পাই, ওরাও তেমনি দুঃখী। মনের কথা ওদের ছাড়া আর কাকে বলব? সুতরাং কিস্যু না হলেও ওরাই আমার সোনামাণিক। ওরাই আমার ছেলেমেয়ে।"
বোকা কবিতাদের নিয়ে এমনি করেই আমার ঘরকন্না। বিকেল দেখা, রাত দেখা, নদীর ধারে বেড়াতে যাওয়া, শুকনো মুখে ঘুরে আসা, কারও তিরস্কার পাওয়া, অপমান হওয়া সবই চলতে থাকে। আর সেসব লিখতে লিখতে আমি বৃদ্ধ হয়ে যাই। এই সময় ফেলে আরও কত সময় আসবে। আমি অতীত হয়ে যাব। তখন হয়তো আমার কবিতারা কারও কাছেই গ্রহণীয় হবে না। তবু আমার অস্তিত্বের ফসিল হয়ে তারা টিকে থাকবে। আমার সত্তার উষ্ণতা ঠাণ্ডা হয়ে গেলেও মাঝে মাঝে পৃথিবীর বাতাস কেঁপে উঠবে । চাপা স্বরে বলবে “আমরা একদিন ছিলাম। দুঃখী মানুষটির সান্ত্বনার মতো। আমরা তাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। আমরা তাকে ভালোবেসেছিলাম।" সেদিন কেউ না শুনুক, নিজেরাই তারা বলাবলি করবে।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Facebook: facebook.com/samoiki
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments