'ভালোবাসা' এই শব্দটির অর্থ অনেক গভীর। ভালোবাসা ছাড়া পৃথিবী অচল। দরদ দিয়ে দেখলেই কেবল সে জায়গায় উর্বরতা আসে। না হয় অযত্মে হারিয়ে যায়, শুকিয়ে যায় ভালোবাসাহীন বৃক্ষ। ভালোবাসা গুণেই প্রভুকে পাওয়া যায়। মানুষ আধ্যাত্মিক শক্তির অধিকারী হয়।জ্ঞান মেধার চর্চা ভালোবাসা ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়।
যে ভালোবাসা জীবন সুন্দর করে সেই ভালোবাসা মানুষ কেমনে কুলষিত করে কুরুচির পরিচয় দেয়? আত্মবিশ্বাস না লোভ কোনটা? মানুষ মাত্রই একজন বিশ্বস্ত সহচর দরকার। ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে, ভালো মন্দ দেখাশোনা করবে। ভালো থাকার লোভ কার নেই? আমারও প্রচন্ড রকম লোভ। আপনারও একই। কেউ ভালোবাসাহীন থাকতে চায় না। ভালোবাসা ছাড়া মরাকাঠের মতো জীবন।
জীবনে একাধিক ভালোবাসার সম্পর্ক আসতেই পারে। মনের উপর জোর চলে না। তবে মনকে নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরী বটে। এ জন্যই ঘটে যায় আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা। একজন ভালোবাসার মানুষের উপর আস্থা, ভরসার জায়গাটি যখন হারিয়ে যায় তখন চোখে অন্ধকার দেখা মাত্রই মনে হয় এই জীবন আর রেখে লাভ কী? মরে গিয়ে সবকিছুর ইতি ঘটুক। নিজেও শান্তি পাওয়া যাবে। জ্বলে পুড়ে বাঁচার চেয়ে মরেই স্বস্তি। অদ্ভুত মনের এই কুপ্ররোচনা, শয়তানের কুকীর্তি। অথচ যে মন ভালোবাসতে শেখায়, সেই একি মন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ না করে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে!
প্রেম ভালোবাসা স্বর্গীয় সুগন্ধি ফুলেল সুভাস। কেউ যদি তা এড়িয়ে যেতে পারে বলবো মিথ্যা বলছে। সত্যিকার কারো ভালোবাসা যদি হৃদয় ছুঁয়ে যায় তবে তা ক্ষণিকের জন্য হলেও সত্য ছিল। আত্মার সাথে আত্মার মিল ঐশ্বরিক বিষয়। তবে সাথে সাথে পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোও যদি অতিশয় নির্ভরতার, যুতসই কম্ফোর্ট জোন হয় তাহলে তো নিজেকে বিলিয়ে দিতে বাঁধা নেই! ভুলটি ঠিক এখানেই। একটি বীজ রোপন করার পর ফল দেয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করার থর মানুষের যেন আজ সেই ধৈর্য নেই। বয়সের তাড়নায়, রঙিন স্বপ্ন, ভালো থাকার গ্যারান্টি ফেলে যে কেউ সেই ফাঁদে পা দেবেই। খুব কম মানুষই অলৌকিক কিছু না ঘটলে ভিতরের খবর জানতে পারে না। বুঝতে পারে না অদূর ভবিষ্যতে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে। অযথাই আমরা মানুষকে দোষারূপ করি।
কেউ যখন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তখন আশপাশ ভাবে আসে না তখন। আবেগ এতোটাই কাজ করে বাস্তবতা হয়ে যায় কল্পনা আর কল্পনা হয় বাস্তব হাতের নাগালে। প্রেমের সুখের এ অন্যরকম অনুভূতি। মুহুর্তেই বদলে দেয় পরিবেশ, উতাল পাতাল ভাবনার সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে য়ায়। এজন্যই এখনো প্রেম করছে মানুষ মানুষের সাথে। মারামারি, ধরাধরি, মেনে নেয়া না নেয়ার দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে মানবজীবনে এই প্রেম প্রতিষ্ঠার কলহ। অথচ আমরা সবাই আদম সন্তান। এক জায়গা থেকেই সবার উৎপত্তি। ধনী গরীব দেখে প্রেম হয় না। মনের সাথে মনের মিল, কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা মনে মস্তিষ্কে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা জিনিসের প্রতি প্রেম জাগায়। আমরা জিকির করি কেন? ইবাদত করি কেন? কেউ কি আমাদের পাহারা দেয়? আসলে ভালোবাসা যার যত বেশি তার প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকা স্বাভাবিক বৈকি। অকুন্ঠ ভালোবাসায় সব খারাপ বন্ধ সম্ভব। অথচ আমরা চলছি ভিন্ন রথে, মূর্খের পথে। ভালো লাগা, ভালোবাসাতো অপরাধ নয়। নোংরা হচ্ছে চাহিদা নির্ধারণের কারণে। জগতের এমন কিছু আছে যা অসম্পূর্ণ সৃষ্টি? যৌক্তিক উন্নয়ন ঘটছে না কেন তবে মানুষের মনের জগতে? কেন দাপটের তুড়ে আরেকটি সৃষ্টিকে পুরোদস্তুর বেইজ্জতির জীবন দান করছি আমরা? মানুষ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কি তবে অমূলক প্রমাণ করছে মানুষ? এটাও কি সম্ভব? পাপের বোঝাই ভারি হয়ে গেছে। এবারতো যেতেই হবে। তবুও কি আমরা পবিত্র ভালোবাসার নামে নোংরামি করে যাবো? লোভের বাটখারায়, যৌন চাহিদা মেটাতে ভালোবাসাকে তুরুপের তাজ বানাবো? তবে কে আমাদের ভালোবাসবে? প্রভু, প্রকৃতি সহায় হবে না আর অন্তর থেকে। ফেরাউনেরও অনেক সম্পদ ছিল, ক্ষমতার অহংকার ছিল। সে আজ কোথায়? পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে ফেরাউনের চিহ্ন, দেহ রেখে দেয়া হয়েছে যাতে মানুষের শিক্ষা হয়।কিন্তু এতো বুদ্ধিমান আমরা, নিজেদের বড়ই চতুর ভাবি। তলানীতে গিয়ে ঠেকবে সেই অহংকার। একদিন সবকিছুই শেষ হয়ে যাবে। তখন আর পালাবার পথ পাবে না মানবজাতি।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ডিজিটাল ডিভাইসের যুগে ভালোবাসার বহুরূপী রূপ চিনতে হবে। জীবনে চলতে চলতে এই রকমফের বাস্তবতার নিরিখে বিচার করে সহীহ্ পথটিই বেছে নিতে হবে। ইন্টারনেট, মোবাইলেই এখন অধিকাংশ অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ এনে দিয়েছে সহজেই। বয়স, রুচি আর দৈহিক সৌন্দর্য্য মনকে প্রলুদ্ধ করছে। বারবার প্ররোচনার জন্য মোবাইলের কলই যথেষ্ট। মানুষ বারবার রিফিউজ করতে পারে না।মনের সেই জোর কোথায়? একদিকে চাহিদা অন্যদিকে পুরো দুনিয়া নেটের দৌড়গোড়ায়। কিছুতেই যেন মানুষের আজ রেহাই নেই। মানুষ যেন নিজেকেই নিজে শেষ করার প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, ব্যবহারের মহা আয়োজনে ব্যস্ত। এখন লাশ কাটা ঘরে ঢুকতে কেউ ভয় পায় না আগের মতো। ওখানেও একটি নেটের ডিভাইস চালাতে পারলেই রাত পার হয়ে যাচ্ছে ময়নাতদন্তের জন্য ফেলে রাখা লাশের পাশে। আর ভালোবাসার রিয়েক্ট এন্থেম ফণা তুলছে বিষাক্ত সাপের মতো। কল্পনার রাজ্যে বসবাস ভালোবাসা অনুমোদন দেয় না। একে আমরাই কুলষিত করছি। ফুলের ঘ্রাণ, এর বিকাশ খেয়াল করুন। কতটা ভালেবাসা দিয়ে ফুলের সৃষ্টি, ক্রমবিকাশ। যেই মৌমাছি ফুলের মধু খায় তখনই ফুলগুলো কেমন যেন চুপসে যায়। এক সময় ঝরে পড়ে। ভালোবাসাও তেমন। একে বিশ্বাস, সততায় লালন পালন করতে হয়। জীবনে দুঃখ সুখ পাশাপাশি। একচেটিয়া কারো রাজত্ব নেই। ধৈর্যের দেয়াল, মানসিক দৃঢ়তা অকুতোভয় যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে অবতীর্ণ করতে হবে। বাস্তবতা মনের আয়নায় দেখে নিতে হবে। স্রষ্টাকেই ভালোবাসাতে হবে সব থেকে বেশি। মনে রাখতে হবে কবরে এই বিশুদ্ধ ভালোবাসা আমাদের নাজাতের জন্য সওয়াল করবে। ঈমানদার বান্দার জন্য ভালোবাসা নিয়ামত,বেহেশতের এক টুকরো প্রশান্তি। তাই আসুন পবিত্র ভালোবাসা নিয়ে অযাচিত, অশোভন লোভাতুর লালসার খেলা বন্ধ করি। ক্ষণস্থায়ী জীবনে ভালোবাসার নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে রাখুক সকলকে এই কামনা করি।
-------------------------------
পারভীন আকতার
শিক্ষক,কবি ও প্রাবন্ধিক।
চট্টগ্রাম।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments