একজন পিউরিটান চলে গেলেন ।। মাহবুবুল হক

 
মাত্র ক'দিন আগে কবি, ছড়াকার, গীতিকার, বাচিক, সুরকার, বৈয়াকরণিক ও শুদ্ধাচারী আহমদ বাসির ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
 
বেশ গভীর রাতে সিএনসি'র মামুন আমাকে খবরটি দিয়েছে। সাধারণত এ ধরনের খবর প্রথমে একটা প্রচণ্ড ধাক্কা দেয়। অবিশ্বাস্য মনে হয়। আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি।  স্তম্ভিত হয়ে যাই। আর আমার ক্ষেত্রে বরাবর যে ঘটনাটি ঘটে তা হল- অল্পক্ষণের মধ্যেই টয়লেটে যেতে হয়। অসুস্থ হয়ে পড়ি। অসারতায় ম্রিয়মান হয়ে যাই।  কিন্তু এক্ষেত্রে আমার যেন কিছুই হলো না। টয়লেটে যেতে হলো না। মাত্র একটু স্থবিরতা অনুভব করলাম। আর বাসায় সেদিন কেউ ছিলনা। আমি ছিলাম একদম একা। আর চারপাশে থাকা ফেরেশতারা। আমি কিছুটা কাঁদলাম। তাহাজ্জুদে তার জন্য দোয়া করলাম এবং স্নেহভাজন কবি ইউসুফের জন্যও দোয়া করলাম। সে প্রভাতে আর ঘুম আসেনি। বারবার শুধু একটি কথাই মনে হচ্ছিল: আমাদেরকে শাসন করার তরুণ বন্ধুটি চলে গেলেন। সামনাসামনি, মুখোমুখি ভুলটি ধরিয়ে দেওয়ার শুদ্ধাচারী মানুষটি চলে গেলেন। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন আমাদের দেশের কবি তালিম হোসেন। যাকে আমরা পাকিস্তান আমলে পিউরিটান কবি বলে সম্ভাষণ জানাতাম। আমাদের দেশে 'পিউরিটান'-এই শব্দটি এখন খুব বেশি উচ্চারিত হয় না। ষাটের দশকে বেশ হত। আসলে খ্রিস্টানদের মধ্যে যারা মৌলবাদী তাদেরকেই পিউরিটান বলা হত। পিওর থেকে পিউরিটান বাংলায় যাকে আমরা বলি শুদ্ধাচারী। ধর্ম থেকে এই শব্দটি কোন এক সময় সাহিত্যে চলে এলো। আমি গবেষক বা ইতিহাসবিদ নই। সাধারণ পাঠক মাত্র। বিলাতে পিউরিটান কবি ও সাহিত্যজনদের একটা সোসাইটি গড়ে উঠলো সহজ-সরল নাম ছিল 'পিউরিটান সোসাইটি।' কোথায় কখন পড়েছি এখন আর মনে নেই। ওই সোসাইটি বিলাতের কোনো এক জায়গায় একটা পল্লীও গড়ে তুলেছিল, নামটাও ছিল মনে হয় এই ধরনের 'ডেন অব পিউরিটান সোসাইটি'। (ভুল হলে মাফ চাই) দেশে কবি-সাহিত্যিক পল্লী না হলেও ব্যাংকপাড়া, ব্যাংক পল্লী, শিক্ষক পল্লী, সরকারি কর্মচারী এলাকা, সরকারি আবাসন, কর্মচারী আবাস এই ধরনের আবাসিক এলাকা গড়ে ওঠেছে। ঐ ধরনের একটা ছোটখাটো পল্লী গড়ে তুলেছিল শুদ্ধাচারী কবি সাহিত্যজনরা।
 
ভুল হলে বিশেষ করে সাহিত্যজনদের ব্যানারে, চিঠিতে বা লেখালেখিতে, এখন যারা কথা বলেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন। অন্য দুজন হলেন ইসমাইল হোসেন দিনাজী ও আতিক হেলাল। তবে আমরা ভয় করতাম কবি আহমদ বাসিরকে। মনে পড়ে সিএনসি যেদিন তাকে পদক তুলে দিচ্ছিল সেদিন ব্যানারে কি একটা যেন ভুল ছিল। কবি আহমদ বাসির খুব সূক্ষ্ম ভাষায় আমাদের সমালোচনা করেছিলেন। ভুলটা আমার চোখেও পড়েছিল। কিন্তু তখন শুদ্ধ করার অবকাশ ছিল না। আমি জানতাম বাসিরের চোখে এটা পড়বে। জীবনের একটা সময় আমিও বাসিরের মতো ছিলাম। ভুলটাই আমার চোখে পড়তো। আমি শুধু লেখকদের বানান  ভুলটাই ধরতাম না, দোকানে দোকানে গিয়ে সাইনবোর্ড ঠিক করে দিতাম এবং বলা বাহুল্য শতকরা ৯০ ভাগ সাইনবোর্ডে ভুল বানান থাকতো। এখনো থাকে। তবে অনেকদিন পূর্ব থেকেই আমি অনেকটা নমনীয় ও সহনশীল হয়ে গেছি।
 
আমার বাসার প্রধান দরজার নেমপ্লেটে লেখা আছে 'শোকর-সবর'। আর্টিস্ট 'শোকর' আঁকতে গিয়ে মাঝের এ-কার দিয়ে দিয়েছে। ভুলটা আমার চোখে পড়েছে। ভেবেছি কোন এক সময় শুদ্ধ করে নেব। কিন্তু গত ১০ বছরেও শুদ্ধ করা হয়নি। অসুস্থ হওয়ার আগে একদিন বুলবুল সরওয়ার আমার বাসায় এসেছিল। লেখাটি দেখেই সে চিৎকার করে বলে উঠেছিল: এটা কি করে সম্ভব মাহবুব ভাই! এটা কি করে সহ্য করছেন !বানান ভুল আপনি প্রতিদিন দেখছেন অথচ সংশোধন করছেন না। আপনি এতটাই পাল্টে গেছেন। বললাম, জীবনে এডজাস্টমেন্ট  ও কম্প্রোমাইজ করতে করতে এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন আর আগের মত দাড়ি কমা নিয়ে মাথা ঘামাই না। আহমদ বাসির সেদিন আমাদের মতো সহনশীলদের বিরুদ্ধে একহাত নিয়েছিলেন। বলেছিলেন :না জানলে যারা জানে তাদের কে ফোন করতে পারতেন। ডিকশনারি দেখতে পারতেন। গুগলে খুঁজে দেখতে পারতেন। তার ওই বক্তৃতায় সিএনসি'র সাথে সংশ্লিষ্টরা দুঃখ পেয়েছিলেন।  কিন্তু আমি ওদের বলেছি আহমদ বাসির ঠিক কাজটি করেছেন। চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখালে কোনো সমাজ নড়েচড়ে বসে না। লজ্জা  থেকে যদি আমাদের আত্মসম্মানবোধটুকু ফিরে আসে তবে সেটাই হবে আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি আমার বক্তৃতায় তাকে সমর্থন করে কথা বলেছি।
 
এ ধরনের ঘটনা একবার নয় বেশ কয়েকবারই ঘটেছে। একদিন তিনি বলছিলেন: এখন আর কোন সভায় যেতে ইচ্ছে করে না। যখনি শুনি বাঙালি মুসলমানের সভা, তখনই বুঝি সেখানে অনেক ধরনের ভুলভ্রান্তি থাকবে। ভুলত্রুটি আর দেখতে ভালো লাগে না। এইতো এখানে চেয়ারগুলো সুন্দর করে বসানো হয়নি, ব্যানারের দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ঠিক নেই, গ্রাফিকও ঠিক নেই, শব্দচয়নও এলোমেলো, কোন কিছুতেই নান্দনিকতা নেই।
 
তিনি শুধু শুদ্ধাচারী ছিলেন না, ছিলেন নান্দনিকও। তাদের একটা সংগঠন আছে। নামটা অপ্রচলিত হলেও খুব সুন্দর নান্দনিক নাম। কেউ কেউ এই নামটি পছন্দ করত না। বলতেন লোকেরা বুঝবে না। আমি বলতাম ভালোই হয়েছে, সবার বোঝার দরকার নেই। ঐটুকু যারা বুঝবে তারাই যেন ওখানে যায়। না বুঝা লোক গুলো ওখানে না যাওয়াই ভালো। তাহলে একদিন সেখানেই একটা পিউরিটান সোসাইটি গড়ে উঠবে।
 
তার মৃত্যুকে আমি অত্যন্ত স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে করছি। কারণ লেখাপড়া শেষ করার পর এই দেশ ও রাষ্ট্র থেকে তিনি একটা কর্মসংস্থান চেয়েছিলেন। পাননি। বহু বছর ধরে তিনি একরকম বেকার। মাঝে মাঝে কিছু কাজ পেয়েছেন। আবার বেকার হয়েছেন। তবে শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাইরে কোন কাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন এমনটি আমি শুনিনি। নিজের উৎসাহ, উদ্যম, যৌবন, অনুপ্রেরণায় বন্ধুদের নিয়ে কিছু কিছু কাজ করেছিলেন। সফল হয়েছেন বলে শোনা যায়নি।
 
তিন সন্তানের বাবা হয়েছেন। দায়দায়িত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বয়সটাও ধীরে ধীরে বাড়ছিল। এসব চিন্তা তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। কোনো অবলম্বনই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে টুকিটাকি কাজ করে সংসার  চলছিল না। নিজের বিকাশ বরাবর ব্যাহত হচ্ছিল, স্বপ্নগুলো ভাঙচুর হচ্ছিল, আশা-ভরসা তছনছ হচ্ছিল, আত্মমর্যাদা খানখান হচ্ছিল। এত বিনাশী অবস্থায় একজন অবিনাশী মানুষ কি করে বেঁচে থাকে। সৃজনশীলতায় ভরপুর মানুষটি মহাসমুদ্রে শুধু সাঁতার কাটছিলেন। কাউকে বিরক্ত করেননি। কাউকে খুব কষ্ট দেননি। নিজেও বীতশ্রদ্ধ হননি। তবুও আপন মালিকের কাছে চলে গেলেন। দুনিয়াতে কে কি দিয়ে গেল সেটা যেমন বড় কথা, তার চেয়ে বড় কথা হলো কে কি দিতে চেয়েছিল বা কার মধ্যে কি সম্ভাবনা ছিল।
 
অল্প বয়সে নজরুল চলে গিয়েছেন, চলে গেছেন সুকান্ত কিন্তু তাদের ঝলক আমরা প্রতিনিয়ত টের পাই। তারা প্রতিনিয়ত আমাদের ধাক্কা দেয়। বাসিরও প্রতিনিয়ত আমাদের ধাক্কা দিয়ে যাবেন। বলবেন- ভুল করছেন কেন, একটু নিজেকে ভালোবাসুন, একটু আন্তরিক হোন, একটু নিষ্ঠাবান হন, একটু সচেতন হোন, একটু সতর্ক হোন, একটু সাবধান হোন। পরে আরো লিখব ইনশাল্লাহ।
 
দেরি হওয়ায় বন্ধুগণ আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আমি অসুস্থ ও বয়স্ক, একটা অস্থির জীবন যাপন করছি। আশা করি আপনাদের কাছে ক্ষমা পাব।
 
দুই.
একবার এক মিটিংয়ে ইতিহাসবিদ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান প্রধান অতিথি ছিলেন। সাহিত্যের কোন একটা বিষয় নিয়ে সভা চলছিল। আমি ছিলাম সর্বশেষ বক্তা। আমার আগে আহমদ বাসির সহ বেশ কয়েকজন বক্তা ছিলেন ।প্রধান অতিথি তার ভাষণে বললেন সাহিত্যে তরুণরাই এখন এগিয়ে যাচ্ছে। এইতো মাহবুব-এর তুলনায় আহমদ বাসির অনেক ভালো বলেছে।
 
আহমদ বাসির কোনো টেলিভিশনের জন্য আমার একটা ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। ইন্টারভিউ কালে তিনি যেসব প্রশ্ন করেছিলেন তা ছিল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। তার প্রশ্ন শুনে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সাধারণত উপস্থাপকগণ এত গভীরে গিয়ে প্রশ্ন করেন না।
 
তিনি ছিলেন একজন সমাজচিন্তক ও গবেষক। তার ছড়ানো কবিতা গান আবৃত্তি বক্তৃতা আলোচনা, এসব যদি আমরা খুটিয়ে দেখি তাহলে দেখব তিনি ছিলেন একজন সত্যিকার অর্থে শান্তির পক্ষে পরিবর্তনকামী।
অর্থহীন বা মূল্যহীন কোন কাজ তিনি করেননি, যা করেছেন বুঝেশুনে করেছেন। যে কাজ মানুষের, সমাজের, দেশের, জাতির ও এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর কাজে লাগবে। তার ভিশণটা পরিষ্কার ছিল, ক্যানভাসটা বড় ছিল। গন্তব্যটা সুস্পষ্ট ছিল। এমনকি চলার পথটা ও ছিল সোজাসাপ্টা। তরুণদের সাথে তিনি মিশতেন। বড়দের সঙ্গেও তার মেলামেশা ছিল সাবলীল। বড়রা তার সাথে মিশতে দ্বিধা করত না। বরং স্বচ্ছন্দ বোধ করত। কন্ঠটা ছিল ভারী। বলার সময় গোছগাছ ও শুদ্ধ করে বলার চেষ্টা করতেন।
 
 তার গ্রামের বাড়ি ছিল নোয়াখালীর গ্রামে। কিন্তু নোয়াখালীর কোনোএক্সেনট তার ভাষায় ছিলনা ।বড়রা সময় সময় তার কাছ থেকে পরামর্শ এমনকি উপদেশ নিতেন। সেই অমিত যোগ্যতা তার ছিল। আমার লেখা কেন প্রকাশিত হয় না এ নিয়ে তার উদ্বেগ ছিল। বলতেন: যদি ভালো না লাগে তবে এক মলাটের মধ্যে অথবা ভাল হয় যদি সাবজেট অনুযায়ী আলাদা আলাদা সমগ্র করতে পারেন, করুন। বইয়ের নাম দিন মাহবুবুল হক সমগ্র। প্রয়োজন হলে আমি আপনাকে হেল্প করব।
 
আমি বলেছিলাম কি করবো জানি না, তবে তোমার হাতে আমার লেখাগুলো আমি দিতে চাই না কারণ তুমি কেটেকুটে সব শেষ করে দিবে এবং বলবে যেভাবে আছে এভাবে প্রকাশ করা যাবে না। আপনার বদনাম হবে।
 
লোকেরা আপনাকে ছোট ভাববে। আমি এমনিতেই বনসাই। দেখা যাক কি হয়। জীবনের সবকিছুই এখন আল্লাহর ওপর সোপর্দ করেছি। আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করেছি। যা হয় হবে  ও নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছি না। আমার এই জবাবের পরে তিনি আর আমাকে কিছু বলেননি। বুলবুল সরওয়ারের উদ্ধৃতি দিয়ে অন্য এক সময় বলেছিলেন: সম্ভব হলে সৃজন প্রকাশনী রিভাইভ করুন অথবা সিএনসি থেকে প্রকাশনা শুরু করে দিন। আগে যে ভুল করেছিলেন সেটা শুধরে নিন। নিজের তিনটা প্রকাশনী থেকে বনধুদের শতশত বই বের করলেন অথচ নিজের পান্ডুলিপিগুলো  প্রকাশ করলেন না। সেই ঐতিহ্য ভুলে যান। সেই শোভনতা এখন আর কোন কাজে লাগবে না।
 
গত ৭০ বছর ধরেই তো দেখছি লেখকরা নিজের প্রকাশনী থেকে নিজের বই প্রকাশ করছে। আপনারও করা উচিত ছিল। বুলবুল সরওয়ার যে আপনাকে গালাগালি করে সেটা অনেকটা সঠিক। সে আপনাকে চিনে, ভালোবাসে, সেজন্যই তিনি ওই সব কথা বলে বেড়ান আর আপনি ওসব কারণে তার ওপর রাগ হন। ভালো শিক্ষক, ভালো প্রফেসর ভালো অভিভাবক হতে পারতেন।
 
আমি যদি ১০০০ সাহিত্যকর্মীকে চিনে থাকি তাহলে তিনি তাদের মধ্যে একদম আলাদা একজন মানুষ পৃথক। একজন সাহিত্য জন। তিনি স্বতন্ত্র। আলাদা বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অভিভাবক হওয়ার সমস্ত গুণ পনা তার ছিল।
 
"এটা করো, ওটা করো না "এইটুকু বলার লোকত আমাদের ক্ষেত্রে নাই। স্বার্থের কারণে আমরা এখন চুপচাপ। পেছনে শত শত মন্দ বলি, বদনাম করি, গীবত করি, আর সামনে আসলে বলি আপনার মত মানুষ হয় না।
 
আহমদ বাসির কারো জন্য তেল নিয়ে অপেক্ষা করতেন না। অযাচিতভাবে সম্মান প্রদর্শন করতেন না। তার সব কিছু তে ব্যালেন্স ছিল। অতিরিক্ত কিছু ছিল না। যথাযথ ছিল যথোপযুক্ত ছিল। সাযুজ্যতা ছিল। সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। যা ভাবতেন অকপটে তা বর্ণনা করতেন। বাগাড়ম্বরতা ছিল না। যথেষ্ট বিনয়ী ছিলেন। লোভ মোহ এবং মাৎসর্য তার মধ্যে ছিল না। কেউ তার চেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে, তাকে টেনে নামাতে হবে। এমন হিংসা ও বিদ্বেষভাব তার মধ্যে ছিল না।
 
আল্লাহর গোলাম হতে চেয় ছিলেন, হক্কুল্লাহ ও হক্কুল ইবাদ বুঝতেন। ইসলামী আদর্শের অনুসারী ছিলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি চলে গেছেন। তার শূন্যস্থানকে পূরণ করবে আমার জানা নেই। বোধহয় এ কথা বলার অধিকার আমাদের যে তিনি অকালে চলে গেছেন বা তার শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। আমরা খালি নিজেরে হারিয়ে খুঁজছি ।কবে যে এ খোজার শেষ হবে, খানিক পর এক কে জানে?
 
তিন.
একদিক থেকে সিএনসি সৌভাগ্যবান। কারণ সিএনসি আহমদ বাসিরকে সম্মানিত পদক প্রদান করেছে। আমরা যখন তরুণদের পদক প্রদান শুরু করেছিলাম, আমাদের কিছু বন্ধু এই কর্মসূচির বিরোধিতা করেছে। তাদের যুক্তি ছিল এরা ভবিষ্যতে সাহিত্যের সঙ্গে বা সংস্কৃতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে কিনা বলা মুশকিল। এখন তারা পড়ালেখা করছে, বাপ-বেটার জীবন যাপন করছে, সে কারণে হয়তো সাহিত্য ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত আছে। যখন কর্মসংস্থানে জড়িয়ে পড়বে তখন হয়তো আর এই সাধনা ও চর্চার সাথে যুক্ত নাও থাকতে পারে। কথাগুলোর মধ্যে যুক্তি ছিল না এমন নয় কিন্তু আমাদের পক্ষের যুক্তি ছিল বহুকাল ধরেই বহু জন বলে আসছে তরুণরা পুরস্কার পায় না পুরস্কার পায়  বৃদ্ধরা। যখন তাদের আর কোনো স্বপ্ন থাকে না। কোনো উৎসাহ ও উদ্যম থাকে না। আখের গোছানোর  কাজে তখন তারা বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাছাড়া অনেকেই এ পৃথিবী ছেড়ে আরেক পৃথিবীতে পাড়ি জমান। আমাদের পক্ষের যুক্তি  হল অতীতে যে কাজগুলো করা হয়নি বা অতীতে যে ভুলগুলি করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কিছু না কিছু সংশোধন করা দরকার। তরুণদের পৃষ্ঠপোষকতা বা উৎসাহ উদ্দিপনা না জোগালে তারা এগিয়ে আসবে কেন? তাদের মাথায় ও পিঠে হাত বোলাতে হবে। তাছাড়া আমাদের বিবেচনায় শুধু লেখালেখি প্রাধান্য পায়নি, অন্য অনেক কিছু কে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি। যেমন তরুণটি স্বপ্ন দেখে কিনা, তার ভিতরে উৎসাহ ও উদ্দীপনা আছে কিনা, পজেটিভ কিনা, দেশ জাতি ও সমাজকে ভালোবাসে কিনা, নিজস্ব ঐতিহ্য সাহিত্য সংস্কৃতি ও জীবনবোধকে ভালোবাসে কিনা,
 
শুধু অধিকার নিয়ে ব্যস্ত থাকে নাকি নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ খেয়াল রাখে কিনা, Sacrifìce করে কিনা, মনটা দরদী কিনা, অল্পলোককে ভালোবাসে না অনেককে, পড়ালেখা ও গবেষনা মন আছে কিনা সৎ চিন্তা সৎ কর্মে কিছুটা নিয়োজিত আছে কিনা অর্থাৎ একজন তরুণের মধ্যে কিছু সম্ভাবনা পরখ করেআমরা কিছু কিছু পদক প্রদান করেছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিলেন অসুস্থ। ভেবেছি কখন চলে যান। আহমদ বাসির চলে যাওয়ায় এখন আমরা আবারো ভাবছি সম্ভাবনা দেখে পুরষ্কার দিতে হবে।
১. এখন আহমদ বাসির এর জন্য আমাদের প্রধান কর্তব্য হলো তার একটা "সাহিত্য সমগ্র" প্রকাশ করা। ডোনেশন ও লোন করে হলেও কাজটি এখনই করে ফেলা উচিত।
২. যে সব ব্যাংক ওয়াকফ করা আছে, সেসব ব্যাংকে ধরনা দেওয়া।
৩. সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা সঠিকভাবে জানা (বাসির)।
৪. কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা দরকার তা নিরূপণ করা এক্ষেত্রে ভালো ভাবে না জেনে সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত হবে না। অনেকে সাহায্য নিতে চান না বা সাহায্যের প্রয়োজন নাই। সবার আত্মসম্মানবোধ একরকম নয়। যাকাত দেওয়া যেমন ফরজ ক্ষেত্রবিশেষে যাকাত নেওয়া ফরজ কিন্তু অনেকেই গ্রহণ করতে চান না।
 
উৎসঙ্গ সৃজন চিনতন এই কাজগুলো করতে পারে। আশাকরি তারা সঠিক কাজগুলো ইতিমধ্যেই করতে শুরু করেছেন। দেরি করলে প্রাণের টানটা কমে যাবে। আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড। প্রয়োজন হলে আমাদের মত বয়স্ক তরুণদের উপদেশ ও পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। মহান আল্লাহ যেন তার মত করে বিষয়গুলি সাজিয়ে দেন সেই দোয়াই করছি।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.