শাহিন আলম’র ছড়া

 
আমিই হবো সেরা
 
এটাই যদি ভাবো-
কথায় কথায় কাজের ফাঁকে
ডিগবাজি রোজ খাবো
ভুল ধারনা ভুল
পড়ার সময় এখন ফাঁকি
দিইনা তো এক চুল।
 
আম্মু আমার কান ধরবে
হাসবে তুমি পাজি?
ধরছি তবে বাজি
আমি এখন অঙ্ক কষি
নিয়ম করে পড়তে বসি
আমায় যদি তুচ্ছ ভাবো
হারবে তুমি আজ-ই।
 
সামনে বছর পরিক্ষাতে
আমিই হবো সেরা
আর হবেনা ফেরা
ভবিষ্যৎ এর রাস্তা আমার
থাকবে আলোক ঘেরা।
..................................................
 
বর্ষা এলে
 
বর্ষা এলে সবুজ পাতা গান করে
চাতক সে জল পান করে
বর্ষা এলেই চারণভূমি
পিঠখানা টানটান করে।
 
বর্ষা এলে নদীর বুকে জল বাড়ে
গাছের ডালে ফল বাড়ে
নৌকা দিয়ে পারাপারে
মানুষজনের ঢল বাড়ে।
 
বর্ষা এলে হরেক রকম ফুল ফোটে
নদীর নতুন কূল ওঠে
বর্ষা এলে মনের মাঝে
খুশির হুলুস্থুল ওঠে।
..................................................
 
এমন যদি হতো
 
এমন যদি হতো-
সময়গুলো কাটতো শুধু আমার খুশি মতো
সাতসকালে পাখির গানে ভাঙতো আমার ঘুম
সুর্য মামা জানলা দিয়ে আমায় দিতো চুম।
 
আঁখি মেলেই দেখি যদি দুইটা প্রজাপতি
আমার ঘরে বেড়ায় উড়ে কি- বা হবে ক্ষতি?
ফুল পাখিদের সঙ্গে খেলে হিজলতলীর বনে
আনন্দ তাই ছড়িয়ে দিতাম কাঠবিড়ালির মনে।
 
দুপুরবেলা ডুব সাঁতারে কাটতো সময় ঘাটে
বিকেল বেলা ঘুড়ি নিয়ে যেতাম খোলা মাঠে।
সন্ধ্যা হলেই চাঁদের বুড়ির গল্প শুনে শুনে
আকাশটাকে রাঙিয়ে দিতাম তারাদের জাল বুনে।
 
ঘুমের দেশের মিষ্টি পরী আসতো নেমে ঘরে
দু'জন মিলে ঘুমিয়ে যেতাম আমার খাটের পরে।
কল্পনাতে চিন্তা করি এমন যদি হয়
ভাসবো সুখে মানবোনা তো কোথাও পরাজয়।
..................................................
 
পাঠশালা
 
শীত কুয়াশার আঁধার ছিঁড়ে
সূর্য এলো উঠে
উঠলো গোলাপ ফুটে
আলসেমিতে ঘুমিয়ে থাকার
বাঁধন গেল টুটে।
 
সেই সুরুজে খবর দিলো
অনেক হলো বেলা
সময়কে নয় হেলা
পাঠশালাতে যেতেই হবে
যেথায় জ্ঞানের মেলা।
 
জ্ঞান ছাড়া তো জীবন বৃথা
রোজ সকালে তাই
সূর্য ওঠার পরক্ষণেই
পাঠশালাতে যাই।
..................................................
 
শিল্পীর রঙে আঁকা দেশ
 
আমার এই দেশ
সাদা আর নীলে ভরা আকাশের বেশ
ঈশানের কোনে জমা কালো তার কেশ
অপরুপ ছায়া ঘেরা সুখ সমাবেশ।
 
এই দেশে বর্ষাতে সুখ ঝরে সুখ
মাঠে মাঠে ভেসে ওঠে ফসলের মুখ
খাল বিল নদী নালা ভরে যায় মাছে
মোহনীয় ফুল ফোটে কদমের গাছে।
 
শীতের সন্ধ্যাবেলা রসে ভেজা পিঠা
খেজুরের দানা গুড় লাগে বড় মিঠা
গভীর রাত্রে শুনি শেয়ালের হাঁক
ভুতুড়ে সময় আসে, সেই কথা থাক।
 
এই দেশে কিশোরী পুকুরের জলে
দুপুর পেরিয়ে যায় সাঁতারের ছলে
কিশোর উড়ায় ঘুড়ি ধান কাটা মাঠে
জাল দিয়ে মাছ ধরে চিত্রার ঘাটে।
 
এই দেশে বৌদিরা মুখে দিয়ে পান
ননদের বিয়ে নিয়ে গায় সবে গান
নতুন ধানের ভাজে চিড়ে মুড়ি খই
খাঁটি দুধ দুয়ে এনে পেতে রাখে দই।
 
এই দেশে ঘুম ভাঙে পাখিদের গানে
আযানের সুর ধ্বনি ভেসে আসে কানে
আবার ঘুমাতে যায় জোনাকির সাথে
চাঁদ আর জোসনা ছুঁয়ে দিই হাতে।
 
আমার এই দেশ ঠিক স্বর্গের মতো
পাহাড়ের ঝর্না স্রোত বয় কতো
শিল্পীর রঙে আঁকা আমার এই দেশ
এই মাটি মেখে হোক জীবনটা শেষ।
..................................................
 
বিষাক্ত আলো
 
গাছ থেকে ফল পাই, গাছ থেকে ছায়া
অন্তরে বেড়ে ওঠে প্রকৃতির মায়া
অপরুপ ফুল ফোটে কি দারুন আহা!
মধু আছে পান করে মৌমাছি তাহা।
 
ডালে বসে পাখি গায় সুমধুর গান
সেই সুর দিয়ে যায় অন্তরে টান
সবুজ পাতার ফাঁকে গড়ে তোলে বাসা
ডিম পাড়ে বেড়ে ওঠে স্বপ্ন আশা।
 
সেই গাছ কেটে ফেলি দ্বিধাহীন ভাবে
মনে করি এরকম সুখে দিন যাবে
গাছহীন পরিবেশ নয় মোটে ভালো
পৃথিবীতে ছড়াবে বিষাক্ত আলো।
..................................................
 
এমন বর্ষাকালে
 
এমন বর্ষাকালে
বৃষ্টি যখন টাপুরটুপুর পড়ছে ঘরের চালে
মন করে আনচান
বাইরে যাবার টান
ইচ্ছে করে মাছ ধরি ওই জঙলাপাড়ের খালে।
 
ইচ্ছে করে আজ সারাদিন দষ্যিপনায় কাটুক
বন্ধু যে চায় বইয়ের পাতা ঘাটুক
বৃষ্টি মেখে বর্ষা হবো
কাদায় হেঁটে ফর্সা হবো
মনটা আমার মন থেকে আজ হিংসা দ্বেষ ছাটুক।
 
বৃষ্টি তুমুল বৃষ্টি
সব ভিজিয়ে করুক ধরায়
নতুন দিনের সৃষ্টি।
..................................................
 
খোকা
 
মা বলে শোন খোকা-
বেশী বেশী মিষ্টি খেলে দাঁতে হবে পোকা
আইসক্রীমের ধারে কাছেও যাসনে যেন বোকা
কিন্তু খোকা মিষ্টি খেতে জেদ ধরে একরোখা।
 
মিষ্টি খোকার ভীষণ প্রিয় খাবার
এক নিমিষে করতে পারে সাবাড়
রসমালাই এর বাটি
ডজন খানেক চকলেটে তার থামে কান্নাকাটি।
 
খোকার জন্য থাকতে হবে মিষ্টি ফ্রীজে জমা
জুসে যদি হাত দিয়েছে তার বড় বোন তমা
অমনি খোকার রাগ
খোকার খাবার করতে নারাজ কারও সাথে ভাগ।
 
বাংলা জুড়ে এমন খোকা ঘরে ঘরেই আছে
চকলেট এবং মিষ্টি অতি প্রিয় যাদের কাছে।
..................................................
 
আমার ভীষণ ইচ্ছে করে
 
ভাইয়া আমার ইশকুলে যায় ব্যাগের ভিতর বই
ছুটির দিনে পরাণ খুলে খুব করে হইচই
সেই স্কুলে খেলার মাঠে টিফিনে হয় খেলা
একপাশে তার ফুলের বাগান ভ্রমর কাটায় বেলা।
 
ভাইয়া আমার সন্ধ্যা ভোরে পড়তে বসে রোজ
আম্মু রাখে ভাইয়া' প্রতি অধিক খেয়াল খোঁজ
আমার ভীষণ ইচ্ছে করে ইশকুলেতে পড়ি
মজার মজার বইয়ের সাথে আলোর জীবন গড়ি।
 
আম্মু বলেন হয়নি বয়স ইশকুলেতে যাবার
এসব নিয়ে অনেক সময় বাকি আছে ভাবার
বর্ণামালা ঘরেই পড়ি, পড়তে আমায় হয়
অপেক্ষা রোজ বয়স কবে পূর্ণ হবে ছয়।
..................................................
 
আমার বাবা
 
ইশকুলেতে সবার বাবা
দাঁড়িয়ে থাকে রোজ
আমিই শুধু পাইনে খুঁজে
আমার বাবার খোঁজ।
 
মা বলেছেন তারার দেশে
লুকিয়ে আছে বাবা
মিছেই নাকি তাকে নিয়ে
সারাটা দিন ভাবা।
 
আঁধার রাতে একলা দেখি
সব তারাদের ঢেউ
কোন তারাটা আমার বাবা
বলতে পারো কেউ?

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.