বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_মহরম পর্ব : ২৩তম প্রবাহ
স্বার্থপ্রসবিনী গর্ভবতী আশা যতদিন সন্তান প্রসব না করে, ততদিন আশাজীবী লোকের সংশিত মানসাকাশে ইষ্টচন্দ্রের উদয় হয় না। রাত্রির পর দিন, দিনের পর রাত্রি আসিতে লাগিল। এই রকমে দিবা-রজনীর যাতায়াত। জেয়াদের মানসাকাশে এতদিন শান্তিচন্দ্রের উদয় হয় নাই। সর্বদা অন্যমনস্ক। সর্বদাই দুশ্চিন্তাতে চিরনিমগ্ন। ইহা এক প্রকার মোহ। জেয়াদ্ দিন-দিন-দিন গণনা করিতেছেন, ক্রমে গণনার দিন পরিপূর্ণ হইল। মদিনা হইতে কাসেদ্ ফিরিয়া আসিল, কুফা আগমনে হোসেনের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এতদিন না-আসিবার কারণ কী? দিনের পর দিন যাইতে লাগিল, সূর্যের পর চন্দ্র আসিতে লাগিল, বিনা চন্দ্রে নক্ষত্রের উদয় সম্ভব। সে দিনও ক্রমে ক্রমে উত্তীর্ণ হইল, নিশ্চয় যেদিন আসিবেন সাব্যস্ত করিয়াছিলেন, তাহাও গত হইয়া গেল, তাহার পর পরিজন লইয়া একত্র আসিবার যে বিলম্ব সম্ভব তাহাও গণনা করিয়া শেষ করিলেন। কিন্তু হোসেন আসিলেন না; জেয়াদ্ বড়ই ভাবিত হইলেন। দিবারাত্রি চিন্তা! কি কৌশলে হোসেনকে হস্তগত করিয়া বন্দিভাবে এজিদের হস্তে সমর্পণ করিবেন, সেই চিন্তাই মহা প্রবল। পুনরায় সংবাদ পাঠাইতে মনস্থ করিয়া ভাবিলেন, "যে বংশের সন্তান, অন্তর্যামী হইতেই-বা আশ্চর্য কী? আমার অব্যক্ত মনোগত ভাব বোধ হয় জানিতে পারিয়াছেন। আবার সংবাদ দিয়া কি নূতন প্রকার নূতন বিপদে নিপতিত হইব?" পরামর্শ স্থির হইল না। নানাপ্রকার ভাবিতেছেন, এমন সময়ে নূতন সংবাদ আসিল, মদিনা হইতে হোসেনের প্রেরিত সহস্র সৈন্যসহ মোস্লেম আসিয়া নগরে উপস্থিত! রাজদরবারে আসিতে ইচ্ছুক। পরম্পরায় এই সংবাদ শুনিয়া জেয়াদ্ আরো চিন্তিত হইলেন। হোসেন স্বয়ং না আসিয়া দূত পাঠাইবার কারণ কি? হইতে পারে এটি আমার প্রথম পরীক্ষা। আমার মনোগত ভাব জানিবার জন্যই হয়তো দূত প্রেরণ। মনে মনে এইরূপ স্থির করিয়া সাদরে মোস্লেমকে অভ্যর্থনা করিয়া সভাগৃহে আনিতে প্রধান মন্ত্রীকে আদেশ করিলেন।
মোস্লেম সভায় উপস্থিত হইলে জেয়াদ্ করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, "দূতবর! বোধ হয়, প্রভু হোসেনের আজ্ঞাক্রমেই আপনার আগমন হইয়াছে। প্রভুর না আসিবার কারণ কী? এ সিংহাসন তাঁহার জন্য শূন্য আছে। রাজকার্য বহুদিন হইতে বন্ধ রহিয়াছে। প্রজাগণ ও সভাসদ্গণ প্রভুর আগমন প্রতীক্ষায় পথপানে চাহিয়া রহিয়াছে। আমি যে চিরকিঙ্কর, দাসানুদাসেরও অনুপযুক্ত, আমিও সেই পবিত্র পদসেবা করিবার আশায় এতদিন সমুদয় কার্য পরিত্যাগ করিয়া বসিয়া আছি। কী দোষে প্রভু আমাদিগকে বঞ্চিত করিলেন, বুঝিতে পারিতেছি না।"
মোস্লেম বলিলেন, "ইমাম হোসেন শীঘ্রই মদিনা পরিত্যাগ করিবেন। মদিনাবাসীরা অনেক প্রতিবন্ধকতা করায় শীঘ্র শীঘ্র আসিতে পারেন নাই। আপনাকে সান্ত্বনা করিয়া আশ্বস্ত করিবার জন্য অগ্রে আমাকে পাঠাইয়া দিয়াছেন, তিনি শীঘ্রই আসিবেন।"
আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ পূর্ববৎ করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, "আপনি প্রভুর পক্ষ হইতে আসিয়াছেন, আমরা আপনাকে প্রভুর ন্যায়ই গ্রহণ করিব, প্রভুর ন্যায়ই দেখিব এবং প্রভুর ন্যায়ই মান্য করিব।" এই বলিয়া মোস্লেমকে রাজসিংহাসনে বসাইয়া আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ ভৃত্যের ন্যায় সেবা করিতে লাগিলেন। অমাত্যগণ, সভাসদ্গণ, রাজকর্মচারিগণ, সকলেই আসিয়া রীত্যানুসারে উপঢৌকন সহিত নতশিরে ভক্তিসহকারে রাজদূতকে রাজা বলিয়া মান্য করিলেন। ক্রমে অধীন রাজগণও মর্যাদা রক্ষা করিয়া ন্যূনতা স্বীকারে নতশিরে প্রণিপাত করিলেন।
মোস্লেম কিছুদিন নির্বিঘ্নে রাজকার্য চালাইলেন, অধীন সর্বসাধারণ তাঁহার নিরপেক্ষ বিচারে আশার অতিরিক্ত সুখী হইলেন; সকলেই তাঁহার আজ্ঞাকারী। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ সদাসর্বদা আজ্ঞাবহ কিঙ্করের ন্যায় উপস্থিত থাকিয়া মোস্লেমের আদেশ প্রতিপালনে ভক্তির প্রাধান্য দেখাইলেন। মোস্লেমের মনে সন্দেহের নামমাত্রও রহিল না। অনেক অনুসন্ধান করিয়াও কোনপ্রকারে কপট ভাবের লক্ষণ, ষড়যন্ত্রের কু-অভিসন্ধি, এজিদের সহিত যোগাযোগের কুমন্ত্রণা, এজিদের পক্ষ হইয়া বাহ্যিক প্রণয়ভাব, অন্তরে তদ্বিপরীত, ইহার কিছুই জানিতে পারিলেন না। দুই কর্ণ হইলে তো সন্ধানের অঙ্কুর পাইবেন? যাহা আছে, তাহা জেয়াদের অন্তরেই রহিয়াছে। কুফা নগরে জেয়াদের অন্তর ভিন্ন হোসেন সম্বন্ধীয় নিগূঢ় কথা কাহারো কর্ণে প্রবেশ করে নাই।এমন কি, জেয়াদ্ অন্তর হইতে সে কথা আপন মুখে আনিতেও কত সতর্কভাব অবলম্বন করিয়াছেন, অপরের কর্ণে যাইবার কোনই সম্ভাবনা নাই। মোস্লেম পরাস্ত হইলেন। তাঁহার সন্ধান ব্যর্থ হইল, চতুরতা ভাসিয়া গেল।বাধ্য হইয়া কুফার আনুপূর্বিক সমস্ত বিবরণ মদিনায় লিখিয়া পাঠাইলেন।
এই লিখিলেন,-
"হজরত! নির্বিঘ্নে আমি কুফায় আসিয়াছি। রাজা জেয়াদ্ সমাদরে আমাকে গ্রহণ করিয়াছেন।কোন কপটতা জানিতে পারি নাই। নগরবাসীরা ইমাম নামে চিরবিশ্বস্ত এবং চিরভক্ত, লক্ষণে তাহাও বুঝিলাম।এখন আপনার অভিরুচি।
বশংবদ- মোস্লেম।"
হোসেন পত্র পাইয়া মহা সন্তুষ্ট হইলেন। পুত্র, কন্যা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভ্রাতৃবধূদ্বয় প্রভৃতির সহিত ঈশ্বরের নাম করিয়া কুফায় যাত্রা করিলেন। ষষ্টি সহস্র লোক মদিনা পরিত্যাগ করিয়া হোসেনের অনুগামী হইল।ইমাম হোসেন সকলের সহিত একত্রে কুফাভিমুখে আসিতে লাগিলেন; কিন্তু এজিদের কথা মনে হইলেই তাঁহার মুখ সর্বদা রক্তবর্ণে রঞ্জিত হইয়া উঠিত। হজরতের রওজা আশ্রয়ে থাকায় কোনদিন কোন মুহূর্তে অন্তরে ভয়ের সঞ্চার হয় নাই। এক্ষণে প্রতি মুহূর্তে এই আশঙ্কা যে, এজিদের সৈন্য পশ্চাদ্বর্তী হইয়া আক্রমণ করিলে আর নিস্তার নাই। ক্রমে এগারো দিন অতীত হইল, এগারো দিনের পর হোসেনের অন্তর হইতে এজিদের ভয় ক্রমে ক্রমে দূর হইতে লাগিল। মনে সাহস এই যে, কুফা অতি নিকটে, সেখানে এজিদের ক্ষমতা কি?একেবারে নিশ্চিন্ত হইয়া যাইতে লাগিলেন। আবদুল্লাহ্ জেয়াদের গুপ্তচরগণ চতুর্দিকে রহিয়াছে, হোসেনের মদিনা পরিত্যাগ হইতে এ পর্যন্ত যে দিন যে প্রকারে যে স্থানে অবস্থিতি করিতেছেন, যেখানে যাইতেছেন, সকল সংবাদই প্রতিদিন দামেস্কে এবং কুফায় যাইতেছে। কুফা নগরে মোস্লেমেকে প্রকাশ্য রাজসিংহাসনে জেয়াদ্ বিশেষ ভক্তিসহকারে বসাইয়াছেন। মোস্লেম প্রকাশ্যে রাজা, কিন্তু জেয়াদের মতে তিনি এক প্রকার বন্দি। সহস্র সৈন্য সহিত মোস্লেম কুফায় বন্দি। জেয়াদ্ এমন কৌশলে তাঁহাকে রাখিয়াছেন এবং মোস্লেমের আদেশানুসারে কার্য করিতেছেন যে, মোস্লেম যে জেয়াদ্-চক্রে বাস্তবিক সৈন্যসহ বন্দি, তাহা তিনি কিছুই জানিতে পারিতেছেন না; কেবল হোসেনের আগমন প্রতীক্ষা।
ঈশ্বরের মহিমার অন্ত নাই। একটি সামান্য বৃক্ষপত্রে তাঁহার শত সহস্র মহিমা প্রকাশ পাইতেছে।একটি পতঙ্গের ক্ষুদ্র পালকে তাঁহার অনন্ত শিল্পকার্য বিভাসিত হইতেছে। অনন্ত বালুকারাশির একটি ক্ষুদ্র বালুকাকণাতে তাঁহার অনন্ত করুণা আঁকা রহিয়াছে। তুমি-আমি সে করুণা হয়তো জানিতে পারিতেছি না; কিন্তু তাঁহার লীলাখেলার মাধুর্য, কীর্তিকলাপের বৈচিত্র, বিশ্বরঙ্গভূমির বিশ্বক্রীড়া একবার পর্যালোচনা করিলে ক্ষুদ্র মানববুদ্ধি বিচেতন হয়। তন্মধ্যে প্রবেশ করিয়া অণুমাত্রও বুঝিবার ক্ষমতা মানুষী বুদ্ধিতে সুদুর্লভ! সেই অব্যর্থ কৌশলীর কৌশলচক্র ভেদ করিয়া তন্মধ্যে প্রবেশ করে কাহার সাধ্য? ভবিষ্যদ্গর্ভে কি নিহিত আছে, কে বলিতে পারে? কোন্ বুদ্ধিমান্ বলিতে পারেন যে, মুহূর্ত অন্তে তিনি কি ঘটাইবেন? কোন মহাজ্ঞানী পণ্ডিত তাঁহার কৌশলের কণামাত্র বুঝিয়া তদ্বিপরীত কার্যে সক্ষম হইতে পারেন? জগতে সকলেই বুদ্ধির অধীন, কিন্তু ঈশ্বরের নিয়োজিত কার্যে বুদ্ধি অচল, অক্ষম, অস্ফুট এবং অতি তুচ্ছ। ষষ্টি সহস্র লোক হোসেনের সঙ্গে কুফায় যাইতেছে, সূর্যদেব পথ দেখাইতেছেন, তরু পর্বত নির্ঝরিণী পথের চিহ্ন দেখাইয়া লইয়া যাইতেছে, কুফার পথ পরিচিত; কত লোক তন্মধ্যে রহিয়াছে, কত লোক সেই পথে যাইতেছে, চক্ষু বন্ধ করিয়াও তাহারা কুফা নগরে যাইতে অসমর্থ নহে। সেই সর্বশক্তিমান পূর্ণ কৌশলীর কৌশলে আজ সকলেই অন্ধ-চক্ষু থাকিতেও অন্ধ।তাঁহার যে আজ্ঞা সেই কার্য; এক দিন যে আজ্ঞা করিয়াছেন, তাহার আর বৈলক্ষণ্য নাই, বিপর্যয় নাই, ভ্রম নাই। একবার মনোনিবেশপূর্বক অনন্ত আকাশে, অনন্ত জগতে, অনন্ত প্রকৃতিতে বাহ্যিক নয়ন একেবারে নিপ্তি করিয়া যথার্থ নয়নে দৃষ্টিপাত কর, সেই মহাশক্তির কিঞ্চিৎ শক্তি বুঝিতে পারিবে। যাহা আমরা ধারণা করিতে পারি, তাহা দেখিয়া একেবারে বিহ্বল হইতে হয়। তাঁহার আজ্ঞা অলঙ্ঘনীয়, বাক্য অব্যর্থ! হোসেন মহানন্দে কুফায় যাইতেছেন-ভাবিতেছেন, কুফায় যাইতেছি, কিন্তু ঈশ্বর তাঁহাকে পথ ভুলাইয়া বিজন বন কারবালার পথে লইয়া যাইতেছেন, তাহা তিনি কিছুতেই বুঝিতে পারিতেছেন না। কেবল তিনি কেন, ষষ্টি সহস্র লোক চক্ষু থাকিতে যেন অন্ধ। আবদুল্লাহ্ জেয়াদের সন্ধানী অনুচর গোপনে আবদুল্লাহ্ জেয়াদের নিকট যাইয়া সংবাদ দিল যে, ইমাম হোসেন মদিনা হইতে ষষ্টি সহস্র সৈন্য সঙ্গে করিয়া কুফায় আসিতেছিলেন, পথ ভুলিয়া ঘোর প্রান্তরে কারবালাভিমুখে যাইতেছেন। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ মহা সন্তুষ্ট হইয়া শুভসংবাদবাহী আগন্তুক চরকে যথোপযুক্ত পুরস্কৃত করিয়া বলিলেন, "তোমাকেই আজ কাসেদ্পদে বরণ করিয়া দামেস্কে পাঠাইতেছি।"
আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ এজিদের নিকট পত্র লিখিলেন, "বাদশার অনুগ্রহে দাসের প্রাণদান হউক!আমি কৌশল করিয়া মোহাম্মদের রওজা হইতে ইমাম হোসেনকে বাহির করিয়াছি। বিশ্বস্ত গুপ্ত সন্ধানী অনুচরমুখে সন্ধান পাইলাম যে, ইমাম হোসেন কুফা নগরের পথ ভুলিয়া দাস্ত কারবালা অভিমুখে যাইতেছেন।তাঁহার পূর্বপ্রেরিত সাহসী মহাবীর মোস্লেমকে কৌশলে বন্দি করিয়া রাখিয়াছি। এই অবসরে হোসেনের পশ্চাৎ পশ্চাৎ কতকগুলি ভাল ভাল সৈন্য প্রেরণ করা নিতান্ত আবশ্যক। ওত্বে অলীদকে কুফার দিকে সৈন্যসহ পাঠাইলে প্রথমে মোস্লেমকে মারিয়া পরে তাহারাও হোসেনের পশ্চাদ্বর্তী হইয়া হোসেনকে আক্রমণ করিবে। প্রথমে মোস্লেমকে মারিতে পারিলে, আর হোসেনের মস্তক দামেস্কে পাঠাইতে কিছুই বিঘ্ন হইবে না,-ক্ষণকাল বিলম্ব হইবে না।"
আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ স্বহস্তে পত্র লিখিয়া গুপ্তসন্ধানী অনুচরকে কাসেদ্ পদে নিযুক্ত করিয়া দামেস্কে পাঠাইলেন। এদিকে মোস্লেমের নিকট দিন দিন আরো ন্যূনতা স্বীকার করিয়া, তাঁহার যথোচিত সেবা করিতে লাগিলেন এবং সময়ে সময়ে হোসেনের আগমনে বিলম্বজনিত দুঃখে নানাপ্রকার দুঃখ প্রকাশ করিয়া, মোস্লেমকে নিশ্চিন্ত রাখিবার চেষ্টা করিতে লাগিলেন।
মোস্লেম সভায় উপস্থিত হইলে জেয়াদ্ করজোড়ে বলিতে লাগিলেন, "দূতবর! বোধ হয়, প্রভু হোসেনের আজ্ঞাক্রমেই আপনার আগমন হইয়াছে। প্রভুর না আসিবার কারণ কী? এ সিংহাসন তাঁহার জন্য শূন্য আছে। রাজকার্য বহুদিন হইতে বন্ধ রহিয়াছে। প্রজাগণ ও সভাসদ্গণ প্রভুর আগমন প্রতীক্ষায় পথপানে চাহিয়া রহিয়াছে। আমি যে চিরকিঙ্কর, দাসানুদাসেরও অনুপযুক্ত, আমিও সেই পবিত্র পদসেবা করিবার আশায় এতদিন সমুদয় কার্য পরিত্যাগ করিয়া বসিয়া আছি। কী দোষে প্রভু আমাদিগকে বঞ্চিত করিলেন, বুঝিতে পারিতেছি না।"
মোস্লেম কিছুদিন নির্বিঘ্নে রাজকার্য চালাইলেন, অধীন সর্বসাধারণ তাঁহার নিরপেক্ষ বিচারে আশার অতিরিক্ত সুখী হইলেন; সকলেই তাঁহার আজ্ঞাকারী। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ সদাসর্বদা আজ্ঞাবহ কিঙ্করের ন্যায় উপস্থিত থাকিয়া মোস্লেমের আদেশ প্রতিপালনে ভক্তির প্রাধান্য দেখাইলেন। মোস্লেমের মনে সন্দেহের নামমাত্রও রহিল না। অনেক অনুসন্ধান করিয়াও কোনপ্রকারে কপট ভাবের লক্ষণ, ষড়যন্ত্রের কু-অভিসন্ধি, এজিদের সহিত যোগাযোগের কুমন্ত্রণা, এজিদের পক্ষ হইয়া বাহ্যিক প্রণয়ভাব, অন্তরে তদ্বিপরীত, ইহার কিছুই জানিতে পারিলেন না। দুই কর্ণ হইলে তো সন্ধানের অঙ্কুর পাইবেন? যাহা আছে, তাহা জেয়াদের অন্তরেই রহিয়াছে। কুফা নগরে জেয়াদের অন্তর ভিন্ন হোসেন সম্বন্ধীয় নিগূঢ় কথা কাহারো কর্ণে প্রবেশ করে নাই।এমন কি, জেয়াদ্ অন্তর হইতে সে কথা আপন মুখে আনিতেও কত সতর্কভাব অবলম্বন করিয়াছেন, অপরের কর্ণে যাইবার কোনই সম্ভাবনা নাই। মোস্লেম পরাস্ত হইলেন। তাঁহার সন্ধান ব্যর্থ হইল, চতুরতা ভাসিয়া গেল।বাধ্য হইয়া কুফার আনুপূর্বিক সমস্ত বিবরণ মদিনায় লিখিয়া পাঠাইলেন।
এই লিখিলেন,-
বশংবদ- মোস্লেম।"
ঈশ্বরের মহিমার অন্ত নাই। একটি সামান্য বৃক্ষপত্রে তাঁহার শত সহস্র মহিমা প্রকাশ পাইতেছে।একটি পতঙ্গের ক্ষুদ্র পালকে তাঁহার অনন্ত শিল্পকার্য বিভাসিত হইতেছে। অনন্ত বালুকারাশির একটি ক্ষুদ্র বালুকাকণাতে তাঁহার অনন্ত করুণা আঁকা রহিয়াছে। তুমি-আমি সে করুণা হয়তো জানিতে পারিতেছি না; কিন্তু তাঁহার লীলাখেলার মাধুর্য, কীর্তিকলাপের বৈচিত্র, বিশ্বরঙ্গভূমির বিশ্বক্রীড়া একবার পর্যালোচনা করিলে ক্ষুদ্র মানববুদ্ধি বিচেতন হয়। তন্মধ্যে প্রবেশ করিয়া অণুমাত্রও বুঝিবার ক্ষমতা মানুষী বুদ্ধিতে সুদুর্লভ! সেই অব্যর্থ কৌশলীর কৌশলচক্র ভেদ করিয়া তন্মধ্যে প্রবেশ করে কাহার সাধ্য? ভবিষ্যদ্গর্ভে কি নিহিত আছে, কে বলিতে পারে? কোন্ বুদ্ধিমান্ বলিতে পারেন যে, মুহূর্ত অন্তে তিনি কি ঘটাইবেন? কোন মহাজ্ঞানী পণ্ডিত তাঁহার কৌশলের কণামাত্র বুঝিয়া তদ্বিপরীত কার্যে সক্ষম হইতে পারেন? জগতে সকলেই বুদ্ধির অধীন, কিন্তু ঈশ্বরের নিয়োজিত কার্যে বুদ্ধি অচল, অক্ষম, অস্ফুট এবং অতি তুচ্ছ। ষষ্টি সহস্র লোক হোসেনের সঙ্গে কুফায় যাইতেছে, সূর্যদেব পথ দেখাইতেছেন, তরু পর্বত নির্ঝরিণী পথের চিহ্ন দেখাইয়া লইয়া যাইতেছে, কুফার পথ পরিচিত; কত লোক তন্মধ্যে রহিয়াছে, কত লোক সেই পথে যাইতেছে, চক্ষু বন্ধ করিয়াও তাহারা কুফা নগরে যাইতে অসমর্থ নহে। সেই সর্বশক্তিমান পূর্ণ কৌশলীর কৌশলে আজ সকলেই অন্ধ-চক্ষু থাকিতেও অন্ধ।তাঁহার যে আজ্ঞা সেই কার্য; এক দিন যে আজ্ঞা করিয়াছেন, তাহার আর বৈলক্ষণ্য নাই, বিপর্যয় নাই, ভ্রম নাই। একবার মনোনিবেশপূর্বক অনন্ত আকাশে, অনন্ত জগতে, অনন্ত প্রকৃতিতে বাহ্যিক নয়ন একেবারে নিপ্তি করিয়া যথার্থ নয়নে দৃষ্টিপাত কর, সেই মহাশক্তির কিঞ্চিৎ শক্তি বুঝিতে পারিবে। যাহা আমরা ধারণা করিতে পারি, তাহা দেখিয়া একেবারে বিহ্বল হইতে হয়। তাঁহার আজ্ঞা অলঙ্ঘনীয়, বাক্য অব্যর্থ! হোসেন মহানন্দে কুফায় যাইতেছেন-ভাবিতেছেন, কুফায় যাইতেছি, কিন্তু ঈশ্বর তাঁহাকে পথ ভুলাইয়া বিজন বন কারবালার পথে লইয়া যাইতেছেন, তাহা তিনি কিছুতেই বুঝিতে পারিতেছেন না। কেবল তিনি কেন, ষষ্টি সহস্র লোক চক্ষু থাকিতে যেন অন্ধ। আবদুল্লাহ্ জেয়াদের সন্ধানী অনুচর গোপনে আবদুল্লাহ্ জেয়াদের নিকট যাইয়া সংবাদ দিল যে, ইমাম হোসেন মদিনা হইতে ষষ্টি সহস্র সৈন্য সঙ্গে করিয়া কুফায় আসিতেছিলেন, পথ ভুলিয়া ঘোর প্রান্তরে কারবালাভিমুখে যাইতেছেন। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ মহা সন্তুষ্ট হইয়া শুভসংবাদবাহী আগন্তুক চরকে যথোপযুক্ত পুরস্কৃত করিয়া বলিলেন, "তোমাকেই আজ কাসেদ্পদে বরণ করিয়া দামেস্কে পাঠাইতেছি।"
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Facebook: facebook.com/samoiki
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments