মোশাররফ হোসেন খান’র কিশোর কবিতা
রঙিন জামা
যে জামাটি অনেক গাঢ়!
জোসনা মাখা শরৎ রাতে।
কোথায় কোথায় সেসব থাকে!
গভীর বনে ছুটে যাও
গুল্ম লতা কুড়িয়ে নাও
সবুজ পাতা যত্ত পাও
তারই সাথে চুমকি তারা
আর কিছু নাও ঝর্ণাধারা
ঘুঘু পাখির চোখের মত
বোনের ফুল কোড়াও শত
বন মোরগের ঝুঁটি নাও
প্রজাপতির ডানা দাও
হরিণ চোখের কাজল নিও
বন বাদুড়ের ডানা দিও।
নকশী কাঁথা সামনে রাখো
সেই জামাটির নকশা আঁকো।
বুনো গাছের কাঁটা দিয়ে।
সেই জামাটি শেষ হলে
ধুয়ে নিও শিশির জলে।
দেখতে লাগে চমৎকার!
শখ যে বড় এমন জামার!
হোক না সবাই হতবাক!!
গা ছমছম করে
পাহাড়ি এক ছোট্ট মেয়ে
ঝরনা হয়ে ঝরে!
তারার মতো চক্ষু তার
পা দুখানা তুলতুল,
হাজার বনফুল।
সবুজ পাতার বসন তার
স্বর্ণলতার রঙিন হার।
বনফুলের ঝুমকো কানে
ছুটে বেড়ায় বান্দরবানে।
তারই জন্য পাগল পারা।
খরস্রোতা নদীগুলি
তারই নামে ওঠে দুলি।
সেই মেয়েটি ছুটতে থাকে।
খোঁপায় গোঁজে গন্ধরাজ
বুনো ফুলেই সকল সাজ।
বন বাদাড়ে ছড়ায় ঘ্রাণ।
নাইক্ষ্যংছড়ি কতদূর?
নাম বলে না কেউ
চোখ রাঙিয়ে বলে আমার
গুনতে থাকো ঢেউ!
কেউ বলে না নামটি তার।
নাম দিয়েছি ‘পুষ্পকলি’!
জলদি করে বলো
বনের পাখি দেয় না উড়াল
চক্ষু টলোমলো!
ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদছে
করুণ সুরে সকাল থেকে
মা মা বলে ডাকছে!
শুনতে কি পাও ডাক?
নিচ্ছে হাজার বাঁক!
কেউ দেয় না কেউ
সাগর নদী ঝরনা ধারাও
তোলে শোকের ঢেউ!
তাইতো বসে কানছে!
থামাও তাদের কান্না
তাদের জন্য বসাও হাঁড়ি
জলদি করো রান্না।
--------------------------------------------------
পত্ পত্ করে
আমার পতাকা উড্ডীন থাকুক
লক্ষ বছর ধরে ॥
আমার পতাকা উর্ধ্বে রেখেছে
উঁচু করে শির
লাল-সবুজে জানান দিয়ে দেয়
আমরা কত বড় বীর,
তরতাজা রক্তের জয়!
অনেক বেশি দামি
বহু ত্যাগের বিনিময়ে পেয়েছি
বিজয়ের পতাকা আমি।
--------------------------------------------------
দিকনা তুফান হানা
স্বপ্ন-জয়ের সাহস নিয়ে
ঊর্ধ্বে মেলো ডানা।
স্বপ্ন-সাহস থাকতে হবে
এমন মানুষ হতে হবে
জগৎ মাঝে অমর রবে।
আজকে সফল হইছো যেমন
সকল বাধা পেরিয়ে জগৎ
গড়তে হবে সামনে তেমন।
ফুল ফোটাবে ভাই
জ্ঞান-গরিমায় জগৎটাকে
সাজিয়ে তোলা চাই।
সবার জন্য রইছে খোলা
সম্ভাবনার সকল দুয়ার।
হৃদয় গভীরে
সে আগুন ছড়িয়ে পড়ুক
ভেতর-বাহিরে।
ঘোর কুয়াশায় ঢাকছে ভোর,
সূর্য ওঠার সকল দোর?
তোমরাই জানি ঝড়
নতুন করে তোমরাই পার
গড়তে স্বপ্নের ঘর।
--------------------------------------------------
ঘোর কুয়াশায় ঢাকছে ভোর,
সূর্য ওঠার সকল দোর?
উথাল-পাতাল স্রোত দেখেও ভয় পায় না কেউ।
ভয়কে ভুলে নতুন জগৎ তারাই করে জয়।
--------------------------------------------------
মাগো তোমার আদর সোহাগ লক্ষ আঁধার চেরা ॥
তোমার মায়ায় ঝরে পড়ে ফুল যে রাশি রাশি।
স্বপ্নলোকের চাবি তুমি ভালোবাসার ডেরা ॥
তোমার বুকের সকল সুধা পেতে আমি চাই।
দূর-দূরান্তে আছি একা
মাগো তোমার পাইনা দেখা
বলো মাগো তোমার ছোঁয়া কেমন করে পাই।
তোমার জন্য মাগো আমি কেবল পাগল পারা ॥
আজও কি মা পথের দিকে তাকিয়ে তুমি আছো?
বয়ে যায় নিরবধিÑ
সকল কষ্ট ভুলে মা আমার চোখে ভাসো।
তবু যে মা সাঁঝের কালে হয় না আমার ফেরা ॥
তোমার ভালোবাসার ঋণ
শোধ হবে কি কোনো দিন
বিশ্বময় ছড়িয়ে আছে তোমার মুখের ছবি
যে ছবিটা যায় না আঁকা, ব্যর্থ শিল্পীÑকবি।
সেই ছবিটা সকল ছবির চেয়েও অনেক সেরা ॥
আমার বুকে সাহস জ্বালো
দূরে কিংবা কাছে থাকি ভুলে যেওনা,
তুমি যে মা আমার কাছে সেইযে পাহাড় হেরা ॥
--------------------------------------------------
মন ছুটে যায় পাখির মতো আমার সবুজ গাঁয়।
তিন দিকে তার গাছাগাছালি তেপান্তরের মাঠ।
মাঠ পেরুলে পদ্মদিঘি শান্ত নদীর তীর
চৈত্র মাসে মাট ফেটে হয় শত চৌচির।
তারই বুকে লাঙল ফালায় স্বপ্ন বোনে চাষি
পাখ-পাখালির কিচির-মিচির ভালো বাসাবাসি।
তারই মাঝে গরু নিয়ে মাঠে কাটে বেলা।
পাখির বাসা কাঠ বিড়ালি কেবল খোঁজাখুঁজি
বাউড়ি হাওয়ায় যায় উড়ে যায় গায়ের গামছা বুঝি!
কাসার থালায় বাজনা বাজে ঢং ঢঙা ঢংঢং।
কখনো বা কোচড় ভরা আম জামরুল তাল।Ñ
সুদূর থেকে বাবার শাসন ভারী গলা শুনি।
জোছনা রাতে পুকুর পাড়ে বসে চাঁদের হাট
মিটির-মিটির জোনাক জ্বলা শান বাঁধানো ঘাট।
তারার সাথে সখ্য ভারি, জোছনার সাথে বেশ
ঘুমের মাঝেও থাকে যেন তাদের ছবির রেশ।
ঘুম আসে না সেসব ফেলে, ঝিঁঝি পোকার ডাকে
রাত দুপুরে পিঠা খেতে ডাকি শুধু মাকে।
ভোরের লাল সূর্য দেখতে আস্তে খুলি দোর।
দোরটা খুলে বাইরে এলাম পা বাড়ালাম যেই
সামনে শুধু মরু ধু-ধু শৈশব কালটা নেই!
বিশ্ব ঘুরে পাই না কোথাও একটু ভালোবাসা।
টুপটাপ ঝরে তবু শৈশবেরই স্মৃতি।
ছেলেবেলার কত স্মৃতি মনে পড়ে যায়
উথলে ওঠে সেসব কথা চেপে রাখা দায় ॥
--------------------------------------------------
কী যে শোভা গাছে গাছে আমের মুকুল!
নূপুরের ধুম যেই
উঠলো বেজে রুমঝুম কাঁপলো আমূল ॥
শান বাঁধা পুকুরে
পরীদের হাট বসে গল্পে অতুল ॥
আকাশের সীমা ঘুরে
নেচে-গেয়ে পাড়ি দেয় রঙিন শিমুল ॥
মিটি মিটি জোনাক জ্বলে
আমিও তাদের দলে
চকচকে দোলে সোনা দেদুল দুল ॥
জানালাটা খুলে দেই
তারপর দেখি শুধু জোছনার চুল ॥
--------------------------------------------------
ছড়া-ছন্দে আজকে আমি মিলটা দেব কার?
ঝুমকো লতা মেঠো ফুলের দৃশ্য জাগে মনে।
ঝিঁঝির সাথে হয় না কথা টিয়ার সাথেও না
দুধের বাটি বাড়িয়ে ধরে আর ডাকে না মা।
স্বপ্ন ডানার উড়াল এখন আর হয় না তেমন।
নদীর পাড়ে বসে বসে যে কাটাতো দিন
তার যে এখন বেড়েই গেছে কলস ভরা ঋণ।
ঋণ নয়গো ঋণ নয়গো বলো গুপ্তধন
সাগর বলে, তোমার মতো হয়বা কতজন?
বড় হবার স্বপ্ন দিত পদ্ম-দিঘিরাও।
বাবার কথাÑছন্নছাড়া হবেই বুঝি কবি
কীযে হলাম বুঝি না ছাই, সবই এখন ছবি।
No comments