নাইট ডান্স ।। শরীফ আহমেদ


বিয়ের আর কেবল পনেরো দিন বাকি। এখনো সব আয়োজনই অসম্পূর্ণ। অফিসের ব্যস্ততা বেশি বলে আবীর একদমই সময় পাচ্ছে না আয়োজন শেষ করার। তাছাড়া টাকা পয়সা রেডি করতেও দেরি হচ্ছে। কিন্তু আর দেরি করলে কিছুই শেষ করা যাবে না। এদিকে আবার বাসাও ভাড়া নিয়ে রাখা হয়েছে। চলতি মাসের দুই তারিখ ঢাকার পল্লবীতে একটি ছয় তলা বিল্ডিংয়ের তিন তলায় আটশ স্কয়ারফুটের ফ্লাটের এক মাসের ভাড়া এ্যাডভান্স করে রেখেছে আবীর। আগামী মাসের এক তারিখ বাসায় ওঠবে ওরা। তার আগে চলতি মাসের তিরিশ তারিখ শুক্রবার তৃণার সাথে তার বিয়ের তারিখ ঠিক করা আছে। এখন তার আগেই স্বর্ণালঙ্কার আর ফার্নিচার বানানো শেষ করতে হবে।
আজ মার্চ মাসের পনেরো তারিখ। অফিস থেকে আধাবেলার ছুটি নিয়ে দুপুর দেড়টার সময় আবীর বের হলো স্বর্ণালঙ্কার আর ফার্নিচারের অর্ডার দিতে।
অফিস থেকে বের হবার আগে সে তৃণাকে ফেইসবুকের মেসেঞ্জারে বলেছে, আমি দেড়টার সময় তোমার বাসার নিচে আসবো। তুমি নিচে নেমে আসবা।
তৃণা রিপ্লাই দিলো, আচ্ছা প্রিয় সখা। আমি রেডি হয়ে থাকবো।
একদম দেরি করবা না। সব কাজ শেষ করতে হবে আজই।
আচ্ছা বন্ধু।
ওকে।
অফিস থেকে বের হয়ে ওবারের একটা গাড়ি নিয়ে প্রথম মিরপুর নাম্বারে গেলো আবীর। গাড়িতে ওঠে বসে তৃণাকে মোবাইলে কল দিলো, তাড়াতাড়ি নামো আমি নিচে চলে এসেছি।
তৃণা বললো, আচ্ছা দশ মিনিট দাঁড়াও। আমি নামছি।
আবীরের তৃণার বাসায় পৌঁছাতে দশ মিনিট লাগবে। তাই দশ মিনিট আগেই কল দিলো। সে সব সময় এই কাজটাই করে। বাসার সামনে পৌঁছাবার দশ মিনিট আগেই বলে যে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ এখন যদি সে তৃণাকে বলতো যে আমি অফিস থেকে বের হয়েছি তুমি নিচে নেমে আসো তাহলে তৃণা কখনোই নিচে নেমে আসবে না। ভাববে আগে মাসুম আগে আসুক তারপর নামি। তৃণাকে ফোন করে নামতে বললে বলার পরও আরও দশ মিনিট বা কখনো পনেরো মিনিট লাগে নিচে নামতে তাই আবীর সব সময় দশ মিনিট আগেই বলে যে, সে তৃণার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে তৃণা দশ মিনিটের মধ্যে নেমে আসে। আর তৃণার নেমে এসে গেইটে দাঁড়ানোর সাথে সাথে আবীরও সেখানে পৌঁছে যায় তাই আর অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করতে হয় না।
আবীর তার মিরপুর ১০ নাম্বারের অফিস থেকে বের হয়ে ওবারে ফোন করে একটা এক্স করোলা গাড়ি নিয়েমিরপুর নাম্বার বাজারের পাশ দিয়ে সাত নাম্বার রোডে ঢুকলো। সেখানে তৃণা থাকে। তৃণা ব্যাচেলার। আরও তিনটা মেয়ের সাথে মেসে থাকে। আবীর তৃণাকে ফোন করার বারো মিনিটের মধ্যে তৃণার বাসার সামনে পৌঁছে গেলো। গাড়ি দাঁড় করিয়ে তৃণার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। তিন-চার মিনিটের মধ্যেই তৃণাকে দেখা গেলো বাসার গেইট দিয়ে বেরোতে।
তৃণা গাড়িতে ওঠলে ওরা ঢাকার বাইতুল মোকাররম গোল্ড জুয়েলারি মার্কেটে চললো স্বর্ণালঙ্কারের অর্ডার দেওয়ার জন্য। ঘড়িতে তখন একটা বেজে পঞ্চাশ। গাড়ি শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে দিয়ে মিরপুর দুই নাম্বার বাসস্ট্যান্ড হয়ে পীরের বাগ ষাট ফুট রোড দিয়ে আগারগাঁও উঠলো। সেখান থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার বাংলামটর হয়ে শেরাটন হোটেলের পাশ দিয়ে কাকরাইল হয়ে বাইতুল মোকাররম গেলো। সারাটা রাস্তা ওরা দুজন অত্যন্ত ঘনিষ্ট হয়ে বসে ছিলো। তৃণা বসেছিলো ড্রাইভারের পেছনের সিটে আর আবীর বসেছিলো তার গায়ের সাথে লেগে। আবীরের ডান হাত সারাটা রাস্তা তৃণাকে জড়িয়ে ছিলো। মাঝে মাঝে হাতটা আলতু ছুঁয়ে যাচ্ছিলো তৃণার উত্থিত বুকে। কিন্তু তৃণা সাথে সাথে হাতটা নিচে নামিয়ে দিচ্ছিলো প্রতিবারই। কারণ ছেলেদের হাত মেয়েদের উত্থিত বুকে কয়েক সেকেন্ডের বেশি রাখতে দিলে ভয়াবহ অনর্থ ঘটে যেতে পারে আর এই অনর্থটা বিয়ের আগে ঘটুক সেটা তৃণা চায় না। আবীরও সেটা চায় না তাই তৃণা নিজের বুক থেকে ওর হাতটা নামিয়ে দিলে আবীর কোনো আপত্তি করেনি।
বাইতুল মোকাররম মসজিদের জিপিওর পাশের রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে ওরা জুয়েলারি মার্কেটের একটা দোকানে ঢুকলো ওরা। সেটা থেকে বের হয়ে আরেকটি দোকানে ঢুকলো। আবীর তার জীবনের প্রথম স্বর্ণালঙ্কার অর্ডার করতে এসেছে। ওর ধারণা ছিলো এটা অনেক সময়ের ব্যাপার। কিন্তু এভাবে তিন-চারটি দোকান দেখে আবীর বুঝতে পারলো খুব সময় নিয়ে দেখার কিছু নেই। বিভিন্ন রকম মডেলের স্বর্ণালঙ্কার এখানে বানানো রয়েছে এগুলোর মধ্যে পছন্দ করে অর্ডার দিয়ে অর্ধেক বা অর্ধেকের কিছু কম টাকা অ্যাডভান্স করলে এক সপ্তাহের মধ্যে সেই মডেলের অলঙ্কারগুলো তৈরি হয়ে যাবে। সব দোকানেই বিভিন্ন রকম স্বর্ণালঙ্কার বানানো রয়েছে বা ডিশপ্লে করা আছে তাই বলে একটি বা দুটি দোকান থেকেই যে পছন্দ হয়ে যাবে তা নয়। আবার শত শত দোকান ঘুরারও কিছু নেই। এই জুয়েলারি মার্কেটে নিচতলা আর দুতলা মিলিয়ে কয়েকশত দোকান আছে। এতো দোকান ঘুরতে গেলে অনেক সময় লাগবে কিন্তু ওদের হাতে সময় খুব কম। বিয়ের জন্য যা যা করার আজকেই করতে হবে। বিশেষ করে স্বর্ণালঙ্কার আর ফার্নিচার আজকেই অর্ডার করতে হবে। তাই অল্প সময়ে কাজ শেষ করার জন্য আবীর পরের দোকানগুলোতে না ঢুকে বড় দোকান খুঁজতে লাগলো। বড় দোকানের সংখ্যা অবশ্য অনেক কম। পুরো জুয়েলারি মার্কেটে বড় দোকান পনেরো বিশটির বেশি হবে না।
খুঁজতে খুঁজতে আবীর একটি বড় দোকান পেলো। দোকানটার নাম-‘আলমাস জুয়েলার্স সেটাতে ঢুকলো ওরা। প্রথমে নেকলেস আর কানের সেট দেখলো। সোয়া এক ভরি থেকে তিন ভরি পর্যন্ত নেকলেস আর কানের সেট আছে। ওরা দেড় ভরির সেটগুলো দেখে একটা সেট পছন্দ করলো। নেকলেসটা চিকন নকশার বলে ওজন কম কিন্তু দেখতে মডার্ণ। সোনার রঙের মধ্যে লাল আর সবুজ রঙের সূতার কাজের মতো নকশা করা নেকলেসটা তৃণার খুব পছন্দ হলো। ওরা এটাই ঠিক করলো। তারপর হাতের বালা দেখলো। দুই হাতের দুইটি বালা এক ভরি থেকে তিন ভরি পর্যন্ত ওজনের হয়। হালকা নকশার মোটা পাইপের মতো বালা আছে আবার সলিড রডের মতো বালাও আছে। তৃণার সলিড রডের মতো বালা পছন্দ কিন্তু সলিড হওয়ায় এগুলো ওজনে বেশি। তবু দেড় ভরির মধ্যে একটা মডেল পাওয়া গেলো আর সেটাই নিলো ওরা। পাঁচ আনার মধ্যে আংটি নিলো। আর নাকফুলের বদলে কানের অতিরিক্ত দুই ছিদ্রে পরার জন্য দুই জোড়া নাকফুলের মতো ছোট দোল নিলো কারণ নাকফুলটা হবে হীরার।
তারপর অর্ডার দেওয়া শেষ হলো। অলঙ্কারগুলোর মোট দাম দুই লাখ বিশ হাজার টাকা হলো। অর্ডার করে পূবালী ব্যাংকের এক লাখ টাকার ব্যাংক চেক অ্যাডভান্স দিয়ে ওরা দোকান থেকে বের হলো। একটা কনফেকশনারিতে ঢুকে হালকা লাঞ্চ করলো। তারপর পুরানা পল্টনের দিকে হেঁটে এসে এবার সিএনজিতে ওঠে বসলো।
দুই.
পল্টন থেকে ওরা যাবে মিরপুর কাজীপাড়া ফার্নিচার মার্কেটে। বিয়ের পর বাসায় ওঠার আগে ফার্নিচার নিতে হবে বাসায়। আর আজকেই অর্ডার করতে হবে ফার্নিচার। তা না হলে আবার কবে অফিস থেকে ছুটি নেওয়া যাবে তার কোনো ঠিক নেই। আর অর্ডার দিতে দেরি হয়ে গেলে বাসার ফ্লোরে মাদুর পেতে বাসর রাত কাটাতে হবে। তাই এখন তাড়াতাড়ি ফার্নিচার মার্কেটে যেতে হবে। কিন্তু চাইলেই তো আর তাড়াতাড়ি যাওয়া যায় না। ঢাকা শহরের রাস্তা মানুষের মূল্যবান সময় নিজের মনে করে খেয়ে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ঘন্টার পর ঘন্টা তাই রাস্তায় কেটে যায় কোথাও যেতে হলে। দুপুরে যখন ওরা বের হয়েছিলো তখন রাস্তায় জ্যাম কম ছিলো। দুপুর বেলা প্রতিদিনই রাস্তায় জ্যাম কম থাকে। কিন্তু বিকেল যতো পরিপক্ব হয় ঢাকার রাস্তার ট্রাফিক জ্যামও ততো পরিপক্ব হয়। আজও তাই হয়েছে তাই ওরা তাড়াতাড়ি পল্টন থেকে কাজীপাড়া যেতে পারছে না। পথে হচ্ছে দেরি। কিন্তু দেরিতে হলেও পৌঁছাতে হবে। রাত আটটায় ফার্নিচারের দোকানগুলো বন্ধ হয়। তাই তার আগে যতটুকু সময় পাওয়া যায় তার মধ্যেই ফার্নিচার পছন্দ করা, দামদর করা আর অগ্রিম টাকা দিয়ে ফার্নিচার অর্ডার দেওয়া শেষ করতে হবে।
আগারগাঁও আর তালতলা পার হয়ে শেওড়াপাড়ার শুরু থেকে প্রচ- জ্যাম পড়লো। সিএনজি অটোরিকশা একদমই এগুতে পারছে না। টেনশান আর উদ্যোগে আবীর তৃণাকে খুব একটা আদরও করতে পারছে না।ঢাকার এই রাস্তায় জ্যাম সব সময়ই ছিলো কিন্তু এখন মেট্রোরেলের কাজ শুরু হওয়ার পর সেটা এখন দ্বিগুণ তিনগুণ হয়েছে। রাস্তার আইল্যান্ডসহ অর্ধেক রাস্তা দখল করে চলছে ঢাকা মেট্রোরেলের কাজ। আর কর্মক্ষেত্রে উঁচু ডিভাইডারের প্রাচীর দিয়ে পথচারী পারাপারও বন্ধ করে দেওয়া করা হয়েছে। ওভারব্রীজ ছাড়া এখন পথচারী পারাপার করতে পারছে না। শেওড়াপাড়া থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত আসতে আধঘণ্টা সময় লেগে গেলো। তারপর আল হেলাল হসপিটাল আর কাজীপাড়ার মাঝামাঝি রাস্তার ইউটার্নের জায়গা গাড়ি পারাপারের জন্য খোলা। সেখানেই ওরা নেমে রাস্তার পূর্বপাশে ফার্নিচার মার্কেটে গেলো।
প্রথমে ওরা ঢুকলো হাতিল ফার্নিচারের শোরুমে। ছয়তলা একটি বিল্ডিংয়ে মিরপুর কাজীপাড়ায় হাতিলের শোরুম। নিচতলা, প্রথম তলা আর দ্বিতীয় তলা পার হয়ে তৃতীয় তলায় গেলো। তৃতীয় তলায় ডাইনিং ফার্নিচার মানে ডাইনিং টেবিল আর ডাইনিং চেয়ার। তারপর চতুর্থ তলায় বেডরুম ফার্নিচার দেখতে পেলো। ঘুরে দেখতে লাগলো পুরো ফ্লোরটা। বিভিন্ন রকম বেডরুম ফার্নিচারের সেট সাজানো। দামগুলো দেখতে লাগলো ওরা। অনেক দামী থেকে অল্প দামের বিভিন্ন রকম ফার্নিচার সেট ছিলো সেখানে। বেড, আলমারি আর ড্রেসিং টেবিল মিলিয়ে বেডরুম ফার্নিচারের একটি সেট। ওরা একেকটি সেটের সবগুলোর আইটেমের দামই দেখছিলো। তবে বেডরুম আইটেমগুলোর তুলনায় ডাইনিং টেবিলের দামটা অনেক বেশি। বেড আর আলমারির দাম খুব বেশি নয়। কিন্তু ডাইনিং সেটের দাম বেশি বলে আর ডাইনিং সেটের জন্যই বেডরুম সেট আর ডাইনিং সেট মিলে পুরো প্যাকেজের দাম অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। ডাইনিং টেবিল আর চেয়ার মিলে ডাইনিং সেট। একেকটা ডাইনিং সেটের দাম পঁয়ত্রিশ হাজার থেকে পঞ্চান্ন হাজার টাকা। খুঁজতে খুঁজতে ওরা হঠাৎ একটি ডাইনিং সেট পেলো যার দাম চব্বিশ হাজার টাকা। হ্যাঁ। মাত্র চব্বিশ হাজার। আবীর ভালো করে দেখলো দামটা ঠিক তাই কি না বা কোথাও ভুল হচ্ছে কি না। না। ভুল হচ্ছে না। সত্যিই এই ডাইনিং সেটটার দাম অনেক কম। কিন্তু দাম কম হলেও ডাইনিং টেবিল চেয়ার কোনওটিই তো লো কোয়ালিটির বলে মনে হচ্ছে না।তারপর ওরা আরো কিছু ফার্নিচার দেখলো। একটি মেয়ে সেলসম্যানকে পেলো ওরা যে তাদের বললো, আলাদা আইটিম না কিনে পুরো একটি ফার্নিচার সেট থেকে সবগুলো আইটেম কিনলে পনেরো পারসেন্টডিশকাউন্ট পাওয়া যাবে। তাতে একটি বেডরুম সেটের মূল্য পড়বে পচানব্বই হাজার থেকে এক লাখ তিরিশ হাজার পর্যন্ত। আর একেক সেট থেকে একেক আইটেম মিলিয়ে নিলে পাওয়া যাবে মাত্র পাঁচ পারসেন্ট ডিশকাউন্ট।
ওরা সেলসগার্লটির মোবাইল নাম্বার নিয়ে হাতিলের শোরুম থেকে বের হলো অন্য শোরুমে যাওয়ার জন্য। আরো একটি বা দুটি শোরুম দেখা উচিত।দুইটি একতলা শোরুমে ঢুকে দেখলো সেখানে দাম আরও বেশি। তারপর ওরা ঢুকলো ওডআর্ট ফার্নিচারের শোরুমে। এই শোরুমটি চারতলা। অবশ্য ফ্লোরগুলো হাতিলের চেয়ে একটু ছোট। ওরা দেখতে লাগলো ফার্নিচার। চারতলা থেকে শুরু করলো। সেখানেই বেডরুম ফার্নিচারগুলো রয়েছে। তারপর নামলো তিনতলায়। সেখানে ড্রয়িংরুম ফার্নিচার। আপাতত সেটা খুব বেশি দেখার দরকার নেই কারণ এখন ড্রয়িংরুম ফার্নিচারকেনা সম্ভব নয়। তাছাড়া সময় খুব কম। রাত আটটা বেজে যাচ্ছে। তাই তারা নেমে গেলো দুতলায়। সেখানে প্রচুর ডাইনিং টেবিল। শোরুমের ম্যানেজার ক্যাটাগরীর একটা লোক সব সময় তাদের সাথে সাথে ছিলো সব ঘুরে দেখানোর জন্য। এই শোরুমের ডাইনিং সেটের দাম আরো বেশি। কমপক্ষে পঁয়তাল্লিশ হাজার থেকে শুরু আর আশি হাজার পর্যন্ত আছে। ওরা দুতলার সব দেখে শেষে ঠিক করলো এখান থেকে ভুল করেও ডাইনিং সেট নেওয়া যাবে না। তবে এখান থেকে বেডরুম সেট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। বেডরুম সেট তো চারতলায়। তাই ম্যানেজার লোকটাকে তা জানালে লোকটা বললো, আপনারা লিফটে চারতলায় ওঠে যান আর আমি সিঁড়িতে আসছি।
আবীর আর তৃণা চারতলায় যাওয়ার জন্য লিফটে উঠলো। আবীর আগে থেকেই বুঝতে পারছিলো যে, লিফটে ওরা ছাড়া অন্য কেউ থাকবে না আর হলোও তাই।
আবীর সরাসরি কোথাও তৃণাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খাওয়ার সুযোগ পেতো না। ওবার বা সিএনজিতে চড়ার সময় চুমো খাওয়া সম্ভব কিন্তু জড়িয়ে ধরা সম্ভব নয়। তাই আবীর অনেকবার ভেবেছে কোনও শপিং কমপ্লেক্সের লিফটে অন্য কেউ না থাকলে তৃণাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খাবে কিন্তু কখনো সে সুযোগও হয়নি। লিফটে তো কেউ না কেউ থাকেই। এখন লিফটে ওঠে যথাস্থানে নেমে পড়তে হয়। লিফটে ওঠে তো আর অপেক্ষা করা যাবে না যে কখন লিফট জনশূন্য নির্জন হবে। আর লিফটে চুমো খাবার এই পরিকল্পনা আবীরের থাকলেও তৃণা তাতে রাজি ছিলো না যে তারা অযথা লিফটে দাঁড়িয়ে থেকে লিফটের সাথে ওঠা নামা করে সুযোগ খোঁজবে নির্জন লিফটে জড়িয়ে ধরে চুমো খাওয়ার।
তবে আজ সেই সুযোগটা এসেছে। কিন্তু সময় খুব কম। লিফট দুতলা থেকে চারতলায় যাবে। দুই এক মিনিটের ব্যাপার। তাই আবীর লিফটে ওঠার সাথে সাথে তৃণাকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে চুমো খেলো লিফট খোলার আগ পর্যন্ত।ওরা চারতলায় গেলো। দেখে দেখে বেডরুম ফার্নিচারের সেট চয়েজ করলো। ডিশকাউন্ট দেওয়ার পর দাম দাঁড়ালো সাতাশি হাজার টাকা। আবীর বললো, আশি হাজার হলে কিনবে। কিন্তু ম্যানেজার অপারগ কারণ বিশ পারসেন্ট ডিশকাউন্টের পর আবার সাড়ে আট পারসেন্ট ডিশকাউন্ট দেওয়া সম্ভব নয়। সে আর এক হাজারো নামতে চাচ্ছে না তবে ৮৫ হাজার বললে হয়তো সেটা সে পারবে বলে ধরে নেওয়া যায় কিন্তু আবীর দামাদামিতে এক্সপার্ট তাই সে ৮০ হাজারেই বসে থাকলো। ম্যানেজারও ৮৫ হাজারে বসে থাকলো। এভাবে নীরবতার ভেতর দিয়ে সময় যেতে লাগলো। পাঁচ হাজার টাকা পার্থক্যের জন্য ক্রয় বিক্রয় অনিশ্চিত হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর ওডআর্ট ফার্নিচারের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর কোনও একটা প্রয়োজনে চারতলায় ওঠলে এই অনিশ্চিত অবস্থা খেয়াল করে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে কী সমস্যা হচ্ছে। ম্যানেজার তাকে সব খোলে বললো। তিনি বোধ হয় আবীরের মনোভাব বুঝতে পারলেন তার ওপর শোরুম বন্ধ করার সময় হয়ে গেছে তাই সময় নষ্ট না করে তিনি ম্যানেজারকে আশি হাজারেই সেল করতে বললেন। বিশ হাজার টাকা এ্যাডভান্স করে ওরা তিরিশ তারিখ ডেলিভারির তারিখ ঠিক করে সেখান থেকে বের হলো। তার দুইদিন পর আবীর গিয়ে আরও তিরিশ হাজার টাকা পেমেন্ট দিয়ে আসে।
মার্চ মাসের তিরিশ তারিখ বিকেলে তৃণা আর আবীরের বিয়ে হলো। কাজী অফিসে বিয়ে। চার-পাঁচ জন মানুষ নিয়ে কাজ সেরে ফেলা বলতে যা বোঝায় ঠিক সেরকম বিয়ে। বিয়ে শেষ করে সন্ধ্যার পরে ওরা নতুন বাসা দেখতে গেলো। গিয়ে দেখলো আগের ভাড়াটেরা নেমে যাচ্ছে। ওরা একদিন আগেই বাসা ছেড়ে দিয়েছে। ওরা তিন তলায় ওঠে দেখলো পুরো বাসা খালি হয়ে গেছে। আবীর দারোয়ান আঙ্কেলকে পাঁচশ টাকা দিয়ে এলো পরদিন দুপুরের আগেই সারা বাসা ঝাঁড়ু দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে রাখতে।
তৃণা আবীর দুজনই মেসে থাকে। ওদের ৩১ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যে মেস ছেড়ে দিতে হবে। তাই ওদের ৩১ তারিখ সন্ধ্যায় নতুন বাসায় ওঠতে হবে। এপ্রিলের এক তারিখ থেকে নতুন জীবন, নতুন সংসার।৩১ তারিখ সকালে একটা রুম পরিষ্কার করা শেষ হয়। এগারোটায় আবীরের মেস থেকে সবকিছু নিয়ে আসে নতুন বাসায়। তারপর দুপুর একটার সময় তৃণার মেস থেকেও সব কিছু নিয়ে আসে নতুন বাসায়। তারপর গ্যাসের চুলা লাগিয়ে ওরা দুপুর আড়াইটার সময় কাজীপাড়া ওড আর্ট ফার্নিচারে যায়। বাকি তিরিশ হাজার টাকা দিয়ে ফার্নিচার পাঠাতে বলে।
চারটার পর বেডরুমের সব ফার্নিচার বাসায় পৌঁছালো।রান্নাঘরের সব সরঞ্জাম, থালা বাসন, দরজা, জানালার পর্দা, বেডশিট, মশারি, কাঁথা, বালিশ ইত্যাদি সব আগেইকেনা ছিলো। আবীর আর তৃণা এইসব কিছু দুজন একসাথে কিনে তৃণার বাসায় রেখেছিলো। বিয়ের শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, পাজামা, পাঞ্জাবি ইত্যাদিও ওরা কিনে রেখেছিলো আবীরের মেসে। এখন শুধু বাকি রইলো বাসর ঘর সাজানো। তৃণাকে বাসায় রেখে আবীর সন্ধ্যার পর বের হয়ে মিরপুর ১১ নাম্বার বাসর ঘর সাজানোর দোকানে যায়। চার হাজার টাকার একটা ডিজাইন চয়েজ করে। দুই হাজার টাকা এ্যাডভান্স দিয়ে বাসায় চলে আসে। ততক্ষণে তৃণার মেস থেকে তার বান্ধবীরা চলে আসে। তৃণা গোসল করতে ঢুকে। গোসল শেষ হতে হতে বাসর সাজানোর লোকরা চলে আসে। তখন সাড়ে সাতটা বাজে। লোকরা বাসর সাজানো শুরু করে আর আবীর গোসল করতে ঢুকে।
বাসর সাজানো শেষ হয়। তৃণার বউ সাজা শেষ হয়। মেস থেকে আবীরের বন্ধুরাও আসে। আবীরের বর সাজা শেষ হয়। তারপর রাত নয়টায় সবাই মিলে ডিনার করতে বের হয়। ওরা মিরপুরভূতের বাড়িরেস্টুরেন্টে যায় ওরা। আরও অনেকেই আমন্ত্রিত ছিলো আজকের বিয়ের ডিনার পার্টিতে। অতিথি হয় সব মিলিয়ে বাইশ জন।
খাওয়ার অর্ডার দেওয়া হয়। খাবার আসার আগে হঠাৎ লাউড স্পিকারে ঘোষণা হয়, ভূত আসছে। সবাই সাবধান। ভূতুরে মিউজিক বেজে ওঠে। রেস্টুরেন্টের ওয়েটাররা সব ভূতের পোশাক আর মুখোশ পরে ভূত সেজে লাফালাফি করে দশ মিনিট। ভূতের বাড়ি বলে কথা। ভূত তো লাফাবেই।তারপর খাবার আসে। ডিনার শেষ করে রাত সাড়ে দশটায় ওরা বাসায় আসে। অতিথিদের দুই-তিন জন বাসা পর্যন্ত আসে ওদের এগিয়ে দেওয়ার জন্য। অল্প কিছুক্ষণ থেকে তারাও চলে যায়। তারপর শুরু হয় ওদের বাসর রাত।
তিন.
আবীর তৃণাকে বলেছিলো, মোমের আলোতে ওদের বাসর হবে। সে পাঁচটা মোমবাতিও কিনে এনেছে। মশারি টানিয়ে তৃণাকে বিছানায় রেখে ড্রেসিং টেবিলটার উপর মোমবাতিগুলো জ্বালাতে গিয়ে বুঝতে পারলো সেটা সম্ভব নয় কারণ ফুল স্পিডে চলছে সিলিং ফ্যান। এই এপ্রিল মাসে ফ্যান ছাড়া এক সেকেন্ডও থাকা সম্ভব নয়। তাই মোমের আলোয় বাসর করার চিন্তা বাদ দিয়ে লাইট নিভিয়ে আবীর মশারির ভেতর ঢুকলো। পরম ভালোবাসা আর অকৃত্রিম আবেশে জড়িয়ে ধরলো একে অন্যকে। অনেক আদর আর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ চুমো চলতে লাগলো ওদের মধ্যে। একে অন্যকে অসংখ্যবার বললো, আই লাভ ইউ ! আই লাভ ইউ !
পরস্পরের পরম সান্নিধ্যে পাগল হয় ওরা। খুলতে থাকে পোশাক। সব কিছু খোলে এক সময় সম্পূর্ণ পোশাকহীন হয় ওরা। তারপর গল্প করে একটু। সামান্য কিছু কথা কিন্তু কথাগুলোর মানে হয় অনেক বিশাল। আবীর বলে, তোমাকে বিয়ে করার জন্য আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। কোনওভাবেই মানতে পারছিলাম না যখন তুমি বলতে যে, আমাকে বিয়ে করবে না।
তৃণা বললো, শেষ পর্যন্ত আমি রাজি হলাম যখন বুঝলাম তুমি তোমার জীবনের সব সিদ্ধান্তই অনেক চিন্তা ভাবনা করে নাও। তাই বিশ্বাস করা যায় যে তুমি কখনো আমাকে অবহেলা করবে না।
তারপর তারা শুরু করলো দাম্পত্য জীবনের প্রথম উপভোগের কাহিনী। এক প্রেমের বিশাল বাস্তব কাহিনী। সারারাত, সারাদিন আর বছরের পর বছর চলতে চলতেও শেষ হয় না যে কাহিনী। রাত বারোটায় শুরু হয় ওদের এই উপভোগের কাহিনী। চলতে থাকে এই কাহিনীর প্রথম রাতের বিভিন্ন পর্ব।
দাম্পত্য জীবনের প্রথম রমণের ঝড়ে পাগল হয় ওরা।প্রচ- আবেগে প্রথম পর্বটা খুব বেশি দীর্ঘ হয় না। কিন্তু পরের পর্বগুলো অনেক দীর্ঘ হতে থাকে।চলতে থাকে কালবৈশাখী। আসে ভয়াবহ টর্নেডো। বিরতি দিয়ে দিয়ে প্রচ- কম্পনে কাঁপতে থাকে বিছানা। কাঁপতে থাকে কৃত্রিম কাঠের তৈরি ওডআর্ট ফার্নিচার থেকে আনা নতুন খাট।
তৃণাকে আবীরের অসম্ভব রমণীয় মনে হয় আর তৃণাও বুঝতে পারে যে আবীর রমণে অসম্ভব সফল। রাত বারোটায় বাসরের ফুলে সাজানো খাটের ওপর শুরু হওয়া ফুলশয্যার প্রচ- ভূমিকম্প পাঁচবার বিরতি নিয়ে রাত আড়াইটার পর অবশেষে একেবারে থামে সেদিনের মতো।
সব মিলিয়ে ছয় পর্বে শেষ হয় ওদের প্রথম রাতের রমণকাহিনী। পরদিন সকালে আবীর অফিসে গেলো। ফিরলো সন্ধ্যার আগে। রাতে চলতে আবার ওরা শুরু করলো দ্বিতীয় রাতের কাহিনী। আবার এলো টর্নেডো আবারো প্রচ- ভূমিকম্পে কাঁপলো কাঠের তৈরি খাটের বিছানা। দুই পর্বে শেষ হলো ওদের সেদিনের রমণের গল্প। এক ঘন্টা বিরতিসহ সময় লাগলো মোট দুই ঘন্টা।
পরদিন আবীর অফিসে গেলো দুপুরের পর। রাত আটটায় অফিস থেকে ফিরলে তৃণা জানালো, খাটের একটি কোনা নিচে নেমে গেছে। সেখানে বসতে গেলে একেবারে মেঝেতে নেমে যাচ্ছে আর ওঠে গেলে ওপরে ওঠে আসছে কিন্তু পুরোপুরি ওঠছে না। ছয় ইঞ্চি ডাউন হয়ে থাকছে। তবে সেই কোনা ছাড়া খাটের অন্য কোথাও বসলে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। অন্য কোনাগুলো ঠিক আছে।
আবীর দেখে বোঝার চেষ্টা করলো খাটের সমস্যাটা কী হয়েছে। সে দেখলো খাটের পায়ের মাথার দিকের দুইটি খাড়া অংশের সাথ দুইপাশের দুইটি আড়া দুইটি করে স্ক্রু দিয়ে লাগানো ছিলো। অন্য তিনটি কোনা এরকমই আছে কিন্তু পায়ের দিকের একটি কোনা খোলে গেছে। তবে স্ক্রু খোলেনি। স্ক্রু লাগানো কাঠের টুকরোটাই মাথার অংশ থেকে খোলে গেছে। স্ক্রু খোলে গেলে আবীর নিজেই লাগাতে পারতো কিন্তু যেভাবে খুলেছে তাতে শোরুমে ফোন করতে হবে। সে শোরুমে ফোন করলো। শোরুম থেকে বললো পরদিন সকালে এসে খাট মেরামত করে দিবে।সেদিন রাতেও ভাঙা খাটের ওপরেই চললো ভূমিকম্প। খাটের যে কোনাটা খোলে গেছে সেই কোনা বাদ দিয়ে তারা অন্য জায়গায় থাকার চেষ্টা করলো। দুজনই ভয়ে ভয়ে ছিলো যদি আরেকটা কোনা খোলে য়ায় তবে খাট বাদ দিয়ে মেঝেতে থাকতে হবে। যে পরিমাণ মশা তাতে মেঝেতে শুয়া অসম্ভব। খাট আর দেয়ালের মাঝের চার ফুট জায়গার মধ্যে দুইজন এক সাথে শুয়াই অনেক কঠিন হবে তার ওপর সেখানে মশারি টানানো যাবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
দুইজন লোক এসে পরদিন সকালে খাট মেরামত করে দিয়ে গেলো। তৃণা বাসায় একা তাই খাট ঠিক করার সময় আবীরের থাকা আবশ্যক আর সেজন্য আবীর দুই ঘন্টা দেরি করে অফিসে গেলো। লোকরা খাট ঠিক করার সময় বললো, আপনাদের খাট ভেঙে গেছে শুনে এমডি স্যার ম্যানাজার স্যারকে বললেন, তোমরা কী খাট বানায়া দিছো? ডেলিভারী দেওয়ার দুইদিনের মধ্যে খাট ভাঙে কেমনে?
ম্যানাজার স্যার বললো, খাটতো ঠিকই ছিলো। এখন ঘুমানোর বদলে কেউ যদি খাটের ওপর ডান্স করে তাহলে আমরা কী করবো?
ডান্স করে মানে? ডান্স করা মানে কী? তারা যথেষ্ট ভদ্র্রলোক ফ্যামিলি খাটের ওপর ডান্স করবে কেন?
স্যার ভদ্র্রলোক ফ্যামিলি কিন্তু নতুন ফ্যামিলি তো।
নতুন ফ্যামিলি মানে? নিউলি ম্যারিড না কি?
জিজ্ঞেস করিনাই স্যার তবে বেডরুম সেট তোসাধারনত সবাই নতুন বিয়ে হলেই কিনে।
সেটাই তো সবাই কিনে। কিন্তু কই আগে কখনো তো এতো তাড়াতাড়ি খাট ভাঙেনাই?
স্যার সবাই তো বেশি ডান্স করে না আর সব খাটও দুর্বল খাট থাকে না। এখন যেটা দুর্বল সেটাতেই যদি ডান্স করে তাহলে কী আর করা যাবে?
আবীর বললো, খাট ঠিক করেন ভাই। এতো কথার দরকার কী?
লোকটা বললো, না না স্যার। আপনাদের কোনও দোষ দিচ্ছি না। মজার কথা তাই শুনাইলাম আপনাকে।
তৃণা লজ্জায় আগেই পাশের রুমে চলে গিয়েছিলো।
খাট ঠিক করে লোকরা চলে গেলে আবীর অফিসে চলে গেলো। তখন আর তৃণার সাথে বিষয়ে কোনও কথা বলার সুযোগ হলো না। সন্ধ্যার পর বাসায় এসে আবীর তৃণাকে বললো, বিছানায় এতো ডান্স করবা না। তোমার ডান্সের জন্যই তো খাট ভাঙলো।
তৃণা বললো, ডান্স শুধু আমি করি? তুমি ডান্স করো না।
না। আমি কিছু করি না। সব তোমার দোষ।
ইইইস। সব আমার দোষ না?
তাহলে কার দোষ?
ডান্স মাস্টারের দোষ।
ডান্স মাস্টার? সেটা আবার কেডা?
ডান্স মাস্টার কেডা জানো না? আয়নার সামনে দাঁড়ায়া দেখো। কারে দেখা যায়।
কী বলতে চাচ্ছ? তুমি ডান্স করবা আর বলবা আমি ডান্স শিখাইছি?
হ্যা। তুমিই তো শিখাইছ। আমার বয়স কম আমি তো কিছুই বুঝতাম না।
ইসস। না বুঝেই খাট ভেঙে ফেললা?
ঠিক আছে। গোসল করে নাস্তা করো।
তারপর চলতে থাকে ওদের প্রতিরাতের নাইট ডান্স। আবার কখনো দিনেও ডান্স চলে।
ওদের বিয়ের চারমাস কেটে যায়। একদিন দুপুরে আবীর অফিসে বসেছিলো। তৃণা ওকে ফেইসবুকে মেসেজ পাঠায়, হাই সোনা কী করো?
কী আর করবো? অফিসে কাজ করি। তুমি কী করো?
কিছু না। আমার শুধু তোমার সাথে ডান্স করতে মন চায়।
হুম। কেমন ডান্স করি আমি?
হেব্বি। সেইরহম মজা পাই আমি।
আমি আজ অবধি শুনিনি এর চেয়ে বেশি কেউ করতে পারে।
আমিও শুনিনি বাসর রাতে কেউ ডান্স করে খাট ভাঙ্গছে।
বাসর রাতেই শেষ না। একটু অবসর হোক। আবার ভাঙবো।
সত্যি?
হুম। সত্যি। অপেক্ষা করো।
এবার খাট ভাঙ্গলে কিন্তু আর ফ্রী ঠিক করা যাইত না।
আচ্ছা পাঁচশ টাকা দিমুনে। তাইলে সাথে সাথে আইসা ঠিক কইরা দিয়া যাইবো।
হি হি হি। টাকা না হয় দিবা কিন্তু ওরা তো বুঝবে খাট কেমনে ভাঙ্গছে।বুঝবে আর শুধু মুখ টিপে হাসবে।
হাসুক। সবাই হাসুক। তাই বলে আমরা ডান্স করবো না?
করবো। আমরা মহাসমরূহে নাইট ডান্স করবো আর ভূমিকম্প টর্নেডো হবে আমাদের বিছানায়।
তারপর নাইট ডান্স চলতে থাকে। খাটের বিছানা হচ্ছে নাইট ডান্সের প্রকৃত জায়গা। পরিপূর্ণ নগ্নতা হচ্ছে নাইট ডান্সের প্রকৃত পোশাক। তবে এই পোশাক শুধু ডান্সের সময় নয় এই পোশাক ওরা ডান্স শেষের পরও সারা রাত পরে থাকে। আর কখনো দিনেও পরে। আবার দিনেও ডান্স হয় কখনো কখনো।
দেশে এখন গুম শব্দের খুব প্রচার প্রসার হয়েছে। তাই এই শব্দটা ব্যবহার করার জন্য তৃণা মাঝে মাঝে আবীরের লুঙ্গি গুম করে ফেলে। বিচিত্র এই দাম্পত্য। স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর লুঙ্গি গুম করার অভিযোগ একে আরও রোমাঞ্চকর করে।
তৃণা আবীরের কাছে পুরোপুরি এক্সিসেব্ল। আবীর তৃণাকে যখন ইচ্ছা যেভাবে ইচ্ছা বা যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ স্পর্শ করতে পারে। অনীহা বা বিরক্তি বিষয়টা একদমই নেই তৃণার পঁচিশ বছর পার হওয়া শরীর মনে। শারীরিক মিলন তো অল্প বা বেশি সব দম্পতিই করে কিন্তু শারীরিক মিলনকে একশ ভাগ এনজয় করতে কয়জন পারে? কয়টা দম্পতি রমণের পূর্ণ স্বাদ দিতে পারে পরস্পরকে? সব দাম্পত্যই মিষ্টি। সবার শারীরিক মিলনই স্বাদের হয়। কিন্তু মিষ্টিতে মিষ্টিতে তো অনেক তফাত আছে। সীমিত চিনি দিয়ে শরবত খেলে সেটা তো মিষ্টি হয়। আর প্রচুর চিনি দিয়ে বা পানি যতোক্ষণ চিনি গ্রাস করতে পারে ততো পরিমাণ চিনি দিয়ে শরবত বানালে সেটাও তো মিষ্টিইহয়। এখন এই দুই মিষ্টির মধ্যে তো অনেক তফাত। যে সারাজীবন শরবতের জন্য সীমিত চিনি পেয়ে এসেছে অপরিমাণ চিনির শরবতে কী অপরিমাণ স্বাদ আছে তা সে কিভাবে জানবে? আর জলের শরবতে চিনি যতো অপরিমাণই হোক না কেন তা কখনো মধুর মতো তৃপ্তি দেয় না। সব দাম্পত্য সম্পর্ক কি আর মধুর মতো তৃপ্তিকর হয়? শুধু মনের মিল দিয়ে সেটা হয় না। শরীরের রসায়নও মিলতে হয়।
ওরা এক সাথে প্রতিদিনই অনেক ইন্ডিয়ান বাংলা শর্টফিল্ম দেখে। দাম্পত্য সম্পর্কের অতৃপ্তি তৃতীয় কারও প্রতি ঘনিষ্ট হওয়া নিয়ে আছে অনেকগুলো শর্টফিল্ম। তিরিশ মিনিটের কম বা বেশি সময়ের হয় এই শর্টফিল্মগুলো। প্রেম বা দাম্পত্যের বদলে পরকীয়াকে আরো বেশি শিল্প সৌন্দর্য দিয়ে দেখানো এই শর্টফিল্মগুলোর একটিও ভিত্তিহীন নয়। বঙ্কিমচন্দ্রের সেই রোহিনী গোবিন্দলালের প্রেম থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত দাম্পত্যের অতৃপ্তি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে শারীরিক চাহিদার অসমতাই তো পরকীয়ার কারণ। প্রেম বা বিয়ে তো শরীর মনের তাড়না থেকেই হয়। তারপর দুজনের শরীর মনের রসায়ন না মিললে তৈরি হয় অতৃপ্তি অনির্ভরতা। যখন নিজের সঙ্গীকে দিয়ে নিজের সব শারীরিক মানসিক চাহিদা মেটেনা তখন খুব স্বাভাবিক কারণেই অন্য কারও প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। আকর্ষণকে ঘনিষ্টতায় পরিণত করার যোগ্যতা সাহস যার নেই সে সারাজীবন হতাশা, বঞ্চনা অতৃপ্তির দহনে দাহ্য হয় আর যার যোগ্যতা সাহস আছে সে পরকীয়া করে তৃপ্ত হয়। এটা সেই অতীতে বঙ্কিম মধুসূদনের যুগে যেমন ছিলো এখনো তেমন আছে। পরকীয়া মানে তো নিজের তৃপ্তি সুখ অর্জনের সংগ্রাম এটা দুশ্চরিত্র আচরণ কেন হবে?
তবে ধর্মীয়, সামাজিক আইনগত দৃষ্টিতে পরকীয়া করাটা দাম্পত্য অধিকার পরিপন্থী। কেউ পরকীয়া করলে তার স্বামী বা স্ত্রী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে কিন্তু এই আইন যদি প্রকৃত পক্ষেই মানুষের কল্যানে হতো তবে শাস্তিটা যে পরকীয়া করেছে তার হতো না হতো যে তাকে তৃপ্তি দিতে পারেনি তার।
শর্টফিল্ম দেখতে দেখতে ওরা প্রচ- শারীরিক মিলনের আসক্তি অনুভব করে। শুরু হয় রমণের মধুর পর্ব। শারীরিক মিলনের ধরন, স্থায়ীত্ব তৃপ্তি সম্পর্কে প্রাপ্ত বয়ষ্ক হবার পর ওরা যে ধারণা পেয়েছে তাতে ওরা মনে করে ওদের মিলন যতটুকু বৈচিত্র্যময় তৃপ্তিদায়ক তা ভাবনা বা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.