সাত-সতের ও হিটলারের আত্মহত্যা ।। সাঈদ চৌধুরী
শুভ্র
কাশফুল, দিগন্ত জোড়া সবুজ আর
সুনীল আকাশ। আশ্বিনের সকালে প্রকৃতি যেন অনন্য রূপ
লাভ করেছে। বাড়ির কোনে বাঁশের ছাউনি,
আখের চারা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, মুলা, লালশাক, পালংশাক আর সরিষা চাষ
পরিবেশকে মনোরম করে তুলেছে। পুবের
আকাশ চিরে সূর্যের আলোর
ছোঁয়ায় গ্রামীণ জনপদে প্রাতঃভ্রমণে অপার্থিব আনন্দ! কাদামাটির গন্ধমাখা সৌরভ আমাকে টেনে
নেয় বার বার।
আশ্বিনের
ক্ষেতঝরা ক্লান্ত কৃষক, ফসলের মাঠ, গাছগাছালি, নদীজল
ও মুক্ত বিহঙ্গ নিবিড় ভাবে টানে। মেঠোপথে
হালকা হাওয়া আর ধূলিকণার মায়াবী
রূপ এই মাটির প্রতি
নাড়ির আত্মিক বন্ধনকে সমৃদ্ধ করে। সদ্য ভূমিষ্ঠ
বাছুর ও দুধালো গাভী
আর পুকুরে জাল টেনে মাছ
ধরার নানা কসরত চোখে
পড়ে। সব কিছুতেই গল্প-কবিতার উজ্জ্বল আভা ছড়িয়ে আছে।
শিবের
বাজার থেকে একটু দূরের
দিকে তাকালে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। উত্তর
পূর্ব দিকে খাসিয়া জৈন্তা
পাহাড়ের বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জি, পার্বত্য অঞ্চল ও পাহাড়ী ঝর্ণা।
ওসমানী বিমান বন্দরে বিমান ওঠানামার দূশ্য সবচেয়ে মনোরম।
এখান
থেকে উত্তর দিকে বর্ণি এলাকায়
নির্মাণাধীন হাইটেক পার্ক। আর দক্ষিণ দিকে
বাদাঘাট হয়ে সিলেট শহর।
এই হাইটেক পার্ক থেকে তামাবিল হয়ে
ভারতে পণ্য রপ্তানি হবে
খুব সহজ এবং সাশ্রয়ী।
এখানে তৈরি পণ্য সেভেন
সিস্টারস খ্যাত আসাম, মিজোরাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মণিপুর ও নাগাল্যান্ডে বৃহৎ
বাজার সম্প্রসারিত হবে।
শিবের
বাজার থেকে বাদাঘাট যেতে
এখন কুড়ি মিনিট লাগে।
পায়ে হেটে যাবার প্রচলন
আজকাল আর নেই। হেটে
যাবার সুবাদে অনেকের সাথে দেখা হত।
বাজার পাড়ি দিয়ে ছিমছাম
ও পরিপাটি বাড়িটি অনেক স্মৃতি বিজড়িত।
রাজারগাও মখজুনুল উলুমের মুহতামিম আব্দুল গনি সাহেবের। অত্যন্ত
বড় মাপের সমাজহিতৈষী। দেখা হলেই বাড়িতে
নিয়ে যেতেন। একটা কিছু খেয়ে
যেতে হয়।
বাবুরাগাও
মোড়ে দেখা যেত সরকুম
হাজিসাহেব মজলিশি আড্ডায় মেতে আছেন। রাস্তার
অদূরে বিশালাকার বাড়ি। সকাল বেলায় পাড়ার
লোকজন চলে আসেন তার
কাছে। ভোরের হালকা শীতের আমেজে খোলা জায়গায় বসে
চা খাওয়া আর রাজ্যের গল্প।
দূর থেকে দেখেই ডাক
দিতেন। ভাগনা, বেশি ব্যস্ত না
হলে একটু কথা বলি।
সে যে কত কথা!
সমাজ বিকাশের রূপ-রূপান্তরের মধ্য
দিয়ে তিন যুগের গল্প।
চেনা আদলের আলোচনা-সমালোচনা। কত রকমের স্মৃতিচারণ।
এপাড়ার
সালিশ ব্যক্তিত্ব তেরামিয়া থাকলে আর কথা নেই।
তিনি ছিলেন প্রাণসঞ্চারী গল্পের সারথী। আমার বাবার সাথে
সামাজিক বিচার আচারের স্মৃতি রোমন্থন করতেন। বিস্মৃত হতে চাইলেও হওয়া
যায় না। বার বার
ফিরে আসে সেই চেনা
পথ, হাসি হাসি মুখগুলি।
সতের
চৌধুরী বাড়িতে এক ডু না
মেরে বাদাঘাট যাওয়া হয়না। এই বাড়িকে ঘিরে
অনেক ইতিহাস জমে আছে। এটা
আমার বাপ-চাচার মামাবাড়ি।
আব্বা ও তার মামাতো
ভাই ছিলেন ভাল বন্ধু। সমাজ
উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে নিবেদিত
ছিলেন। উত্তর সিলেটের শিক্ষা ও যোগাযোগের উন্নয়নে
মুখ্য ভুমিকা পালন করেছেন। শিবের
বাজার থেকে বাদাঘাট সড়কটি
তাদের হাতেই নির্মিত হয়েছে।
গাব্রুমিয়া
চৌধুরী প্রভাবশালী সালিশ ব্যক্তিত্ব। দূরদর্শী ও জনদরদী। বিচক্ষণ
রাজনীতির ধারক ছিলেন। তাদের
কোন ছেলে নেই। আমিই
এই পরিবারের সন্তান হিসেবে বিবেচিত হই।
চৌধুরী
বাড়ি অনেক জায়গা জুড়ে
বিস্তৃত। চাচাত ভাইদের নিয়ে বড় গোষ্ঠী।
খন্ড খন্ড ভাবে অনেক
পরিবারের বসবাস। সম্পদের বাড়-বাড়ন্ত জৌলুশ
কিছুটা কমে গেলেও অভিজাত্য
ধরে রেখেছেন।
সেই
ছোট বেলা থেকে এবাড়ির
বিশেষ আচার অনুষ্ঠানে আমার
উপস্থিতি অপরিহার্য অনুভূত হয়। বিকেল বেলা
শহর থেকে ফেরার পথে
আসলে বেশি আনন্দ হয়।
আমি এলে বাড়ির ছোট-বড় অনেকই সমবেত
হন। গল্পের আসর জমে। সেই
সাথে মজার মজার বাহারি
খাবার।
এই
আসরে সবাই কিছু বলতে
হবে। এটাই নিয়ম। অনেকেই
জমিয়ে গল্প বলতে পারেন।
লিখে রাখলে হয়ত বহু লেখকের
চেয়ে ভাল গল্প হিসেবে
সমাদৃত হবে। কিন্তু তারা
কেউ লিখেনা। তাদের ধারণা গল্প লেখার মানুষ
দুনিয়ায় খুবই বিরল।
প্রায়
নিয়মিত আমাদের গল্পের আসর বসে। নতুন
কোন গল্প লিখলে ওখানে
পঠিত হয়। মাঝে মধ্যে
তাৎক্ষনিক কাহিনী গল্পের আদলে চালিয়ে দিতে
হয়। উপস্তিত আরো যারা গল্প
বলতেন এর মধ্যে আনোয়ারা
আপা সবচেয়ে পটু। কথার ফুলঝুরি
ফুটিয়ে সাবাইকে মুগ্ধ করতে তার জুড়ি
মেলা ভার।
কথা
সাহিত্যে এই ধরণের আসরের
অবদান অনেক। গল্প বলা বা
লেখার সময় এই আড্ডার
কথা মাথায় রাখি। এরাই আমার প্রথম
পাঠক। অনেকটা দাবা খেলার মতো।
একটা চাল দেয়ার সঙ্গে
সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় এই চাল নিয়ে
কী ভাবছে, পুরো খেলাটা সে
কীভাবে দেখছে, সেটাও ভাবতে হয়।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments