নভেম্বরের
২ তারিখে মাস্তুল গ্রুপের সাহিত্য পত্রিকা মাসিক Daktikit এর পরিচালক হিসেবে জয়েন করি!
বোরহান ভাই বললেন, দ্রুত পত্রিকার প্লান দেন। আমি, কবি Aminul Islam এবং Lokman
Hossen Jibon মিলে ফেব্রুয়ারি সংখ্যার জন্য পত্রিকার একটা খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করি।
৬/৭ নভেম্বর পত্রিকার ম্যাটার প্লান ও বাজেট প্লান নিয়ে নিয়ে বোরহান ভাইয়ের রুমে ঢুকে
দেখি Ahmad Basir, Ar Saifullah. সহ আরো কয়েকজন উপস্থিত আছেন।
সকলের
উপস্থিতিতে আমি প্লান পড়ে শোনানোর পর আহমদ বাসির ভাই তিনটা পরামর্শ দিলেন– ১. ফেব্রুয়ারিতে
আল মাহমুদের মৃত্যুবার্ষিকী, অতএব আল মাহমুদের একটা লেখা রাখতে হবে! ২. ফাহমিদ-উর-রহমান
ও মোহাম্মাদ আজমের দুইটা বই যথাক্রমে "আ মরি বাংলা ভাষা" এবং "বাংলা
ভাষায় উপনিবেশায়ন (এ রকম একটা নাম, হুবহু মনে করতে পারছি না)"–এর আলোচনা রাখা
এখন সময়ের দাবী। ৩. পত্রিকার ভেতরে ইলাস্ট্রেশনের জন্য ভালো বাজেট রাখতে হবে!
বাসির
ভাইয়ের পরামর্শের পর বোরহান একবাক্যে বাজেট পাশ করে দিলেন। পত্রিকার প্লান পাশ হবার
পর শুরু হলো আমার আর আমিনুল ভাইয়ের দৌড়ঝাপ! লেখকদের ফোন করা, কারো সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ
সহ অনলাইনে প্রচারনাও শুরু করলাম।
আশকার
ইবনে শাইখের উপর সংখ্যা করবো, কিন্তু লেখকদের কাছে তার বই নেই, ফাহমিদ উর রহমানের বই
নিয়ে আলোচনা করার লোক পাচ্ছি না, আল মাহমুদের অপ্রকাশিত লেখার জন্য আবিদ আজম-এর দ্বারস্থ
হলাম, সেও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি! বাধ্য হয়ে আবার
বাসির ভাইকে ফোন করলাম—ভাই দেখা করতে হবে।
তিনি
বললেন—কালশী আছি, চলে এসো। মিরপুর ডিওএইচএস থেকে বের হয়ে কবি Rafik Liton এর সহ গেলাম
বাইতুর রহমত মসজিদের সামনে। গিয়ে দেখি বাসির ভাই আর কবি Redwanul Haque ভাই বসে আছেন।
আমাদের দেখেই রেদওয়ান ভাই হেসে উঠলেন। বাসির ভাই টুল দেখিয়ে বসতে বলে দোকানিকে চায়ের
কথা বললেন।
আমি
সমস্যার কথা বললাম! বাসির ভাই হাসলেন, বললেন আবিদ আজম আল মাহমুদের লেখা জোগাড় করতে
না পারলে তুমি আল মাহমুদের অভিভাষণ ছেপে দাও, আমার কাছে আছে! তবে কাগজপত্র ঘেটে বের
করতে হবে, তুমি একদিন এসো, দুইজনে মিলে বের করবো! বললাম ঠিক আছে!
ফাহমিদ-উর-রহমান
ও মোহাম্মদ আজমের বইয়ের আলোচনার কথা বললাম–কয়েকজনকে রিকোয়েস্ট করেছি, কিন্তু খুব একটা
ভরসা পাচ্ছি না! বললেন—তাহলে আমাকেই বই জোগাড় করে দাও আমি লিখে দেবো! বলতে বলতে রেদওয়ান
ভাইকে বললেন—নিজাম কই?
কিছুক্ষণ
পর আফসার নিজাম ভাই এলেন! পরনে কালো লুঙি! কালো লুঙি সচরাচর দেখা যায় না! নিজাম ভাই
এটা কই পেলেন তা নিয়ে কিছুক্ষণ কথা হলো! আমি নিজাম ভাইকে ডাকটিকিট বের হচ্ছে জানিয়ে
লেখা চাইলাম। নিজাম ভাই লেখা দেবেন বলে জানালেন— তার কাছে আশকার ইবনে শাইখের উপর মোহাম্মদ
আবদুল মান্নানের একটা লেখা আছে। সেটাও দেবেন। আমি অপ্রত্যাশিতভাবে একটা লেখা পাবার
আনন্দে খুশি হয়ে গেলাম।
বাসির
ভাই, নিজাম ভাই ও রেদওয়ান ভাই আলাদা কথা বলতে চাওয়ায় আমি আর রফিক লিটন পাশে সরে গল্প
গুজব করলাম কিছুক্ষণ! তারপর দেরি হয়ে যাচ্ছে
দেখে বাসির ভাইকে বলে চলে আসলাম। এই-ই তার সাথে আমার শেষ দেখা!
এরপর
কয়েকবার কথা হলো ফোনে! সর্বশেষ মৃত্যুর আগেরদিন মঙ্গলবার সকাল বারোটার দিকে কল করলাম।
আল মাহমুদের অভিভাষণ কখন খুজবো, জিজ্ঞেস করতেই বললে ২/৩ দিন পর এসো!
বুধবার
আমার খুব ব্যস্ত দিন গেছে! অফিসেও যাইনি। সকালে ভোরে উঠে সদরঘাট গিয়ে আব্বা-আম্মাকে
রিসিভ করেছি, তারপর নাস্তা সেরে আব্বাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাংলাবাজার প্রেসে গেলাম।
Envelope Publications এর চারটা বই প্রেসে দিয়ে বাসায় পৌছলাম রাত ১০টার দিকে। খাওয়া
দাওয়া সেরে শুয়েছি, মেয়ে দুষ্টুমি করছে বুকের উপর বসে! এমন সময় ফোন পেলাম— বাসির ভাই
নেই! লাফিয়ে উঠে বসতেই Sumaiya Tahsin ইন্না-লিল্লাহ পড়তে শুরু করলো! বললো কী হয়েছে!
তাকে কিছু বলার আগেই রফিক লিটনের ফোন! তখনো পুরোপুরি বিশ্বাস হচ্ছে না! জীবন ভাই ও
বাসির ভাইয়ের শালা নিজাম ভাইকে ফোন করে নিশ্চিত হয়ে ফেইসবুকে খবরটা শেয়ার করলাম। এই
ফাকে সুমাইয়া গেঞ্জি আর প্যান্ট নিয়ে এসেছে! বললো দ্রুত বের হও, এত রাতে গাড়ি পাইবা
কিনা জানি না।
আমি
বের হলাম। চারদিক থেকে ফোন আসছে, অধিকাংশই বিশ্বাস করতে চাইছেন না। আমিও মনে মনে ভাবছি,
নিউজটা যেন মিথ্যে হয়! এটা যেন রফিক লিটন, জীবন ভাই ও নিজাম ভাইদের একটা ফান হয়! গাড়িতে
বসে Abdul Hye Sikderকে ফোন করলাম। শিকদার ভাই ধমকে উঠলেন—কে? কোন বাসির? আমাদের বাসির!
তারপর তোতলানো শুরু করলেন! কিছুক্ষণ আ-উ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন! আমার কিছু বলার
ভাষা ছিল না!
কবি
Noman Sadik সহ আরো কাকে যেন ফোন করলাম। ফেসবুকে যারা তখনও পর্যন্ত নিউজ পায়নি, বা
পাওয়ার সম্ভাবনা কম তাদেরকেই ফোন করতে লাগলাম।
রামপুরা
ব্রীজ পর্যন্ত যাওয়ার পর জীবন ভাই বললেন, "ঢাকায় জানাযা হচ্ছে না, লাশ নিয়ে আমরা
নোয়াখালী রওয়ানা হলাম"। বললাম–কখন? তিনি জানালেন— আমরা প্যারিস রোড থেকে বের হচ্ছি!
আমি বললাম—আমি চিটাগং রোড গিয়ে দাড়াই, আপনারা আমাজে তুলে নিয়েন!
ইতোমধ্যে,
বাসির ভাইয়ের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান সংকল্প শিশু-কিশোর সংসদ, কালশী বিহারী ক্যাম্প ও
ক্যাম্পের আশপাশের লোকজনের অনুরোধে লাশ নিয়ে কালশী রাখা হলো শেষ বিদায়ের জন্য। জীবন
ভাই ফোনে এসব জানিয়ে বললেন, আপনি একটু ওয়েট করেন, আমাদের দেরি হবে! অবশেষে রাত পৌনে
দুইটায় কাচপুর থেকে গাড়িতে উঠলাম। গাড়িতে উঠে দেখি— বোরহান ভাই, সাইফুল্লাহ ভাই, জীবন
ভাই, মহিব্বুল্লাহ আজাদ, রফিক লিটন; সকলেই বিমর্ষ! সকলের সাথেই বাসির ভাইর অসংখ্য স্মৃতি!
স্মৃতি
হাতড়ে হাতড়ে ফজর নামাজের কিছুক্ষণ পর আমরা বাসির ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতে হাজির হই। ইতোমধ্যে
Mozammel Hussein ভাইও এসে হাজির হন! রাতেই তাকে ফোন করে খবর জানিয়েছিলাম। বাসির ভাইয়ের
প্রথম বই "গোপন মাটির বীজতলা” প্রকাশের সমস্ত খরচ দিয়েছিলেন তিনি! বাসির ভাই,
আমি, মোজম্মেল ভাই, হোসাইন ভাই অনেক প্লান করেছিলাম! সে সব কিছুই হয়নি আমার ব্যার্থতা
ও অযোগ্যতায়!
যা-ই
হোক! আমরা জানাজা ও দাফন শেষে ফিরলাম ঢাকায়! ফেরার পথে কবি আবিদ আজমকে নিয়ে নিলাম আমাদের
সাথে (তিনি আর কবি মাহমুদ বিন হাফিজ অন্য গাড়িতে গিয়েছিলেন!)।
ফেরার
পথে চারজনের গাড়িতে আমরা সাতজন আহমদ বাসিরের গান শুনতে শুনতে চলে এলাম। খুৎবার তলোয়ার,
আয়া সোফিয়া, নয়ছয় নয়ছয় করিস না মন—এর মত অসাধরন গান ও কবিতা লেখার আহমদ বাসির আর নেই—ভাবতেই
বুক ভারী হয়ে উঠে।
মহান
আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন— তিনি আহমদ বাসিরের সকল ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে দিয়ে তাকে যেন
জান্নাতে দাখিল করে নেন!
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments