আলিফ লায়লা : আরব্য রজনী_পর্ব-৮৫
ইংরেজি অনুবাদ : ডঃ জে. সি. মারদ্রুস
বাংলা অনুবাদ : ক্ষিতিশ সরকার
তিনশো ষোলতম রজনীতে শাহরাজাদ। নতুন কাহিনী বলতে শুরু করে :
শাহরাজাদ শুরু করে–
অনেকাল আগের কথা। খোরশান শহরে এক ধনী ব্যবসায়ী থাকত। তার নাম ছিলো গ্লোরি। আলী শার নামে তার চাঁদের মত ফুটফুটে একটা ছেলে ছিলো। খুব বুড়ো হয়ে পড়ায় ব্যবসাদারের শরীরটাও অকেজো হয়ে পড়েছিলো। শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে বুঝতে পেরে বুড়ো একদিন ছেলেকে ডেকে বলে, আমি তো চললাম, যাবার আগে তোকে কটা কথা বলে যাই।
ছেলে জিজ্ঞেস করে, —কী কথা আব্ববাজান?
জীবনের এই আঁধার পথে নেইকো বন্ধু নেইকো আশা।
কোথাও খুঁজে পাবে নাকে প্রাণ-পিয়াসী ভালোবাসা।
ভালো যদি বাসতে চাওরে, ভালোবাস নির্জনতা।
নির্জনতা একাই খাঁটি, তার নেইকো কোন আবিলতা।
অথবা
এই দুনিয়ার দেখবে ছবি? দুই পাশেতেই আঁকা সে কি?
হয়ত হবে!–তাই তো মোরা সবাই দেখি!
সামনেতে তার ভণ্ডামি আর আঁকা আছে মিথ্যা আচার
পেছনেতে মিথ্যা আঁকা, আর যা আছে তাই তো মেকি!
ভ্ৰান্ত এক নিস্ফলতা এ পৃথিবী জামার মতন পরে আছে।
কোটের খোলস যেন। কোন দিন সেই শূন্য আঙ্গিনার মাঝে
বন্ধু যদি কদাচিৎ মিলে যায় আল্লার দয়ায়। দাওয়াই-এর মত
তাদের প্রলেপ দিও অতি সন্তপণে, সারে যেন পৃথিবীর ক্ষত।
আব্বাজানের কথা শুনে আলী শাহ বলে, -আমি তোমার কথাগুলো মনে রাখব। আর কিছু বলবে আব্বাজান?
—আমি মনে রাখব। আব্ববাজান।
–শোনো যে সব ধনদৌলত রেখে গেলাম, সেগুলো নষ্ট করবি না, উড়িয়ে দিবি না। এ দুনিয়ায় যার পয়সা আছে লোকে তাকেই মানুষ বলে মানে। একটা বয়েৎ শোনো–
সেদিন আমার বদ্যান্যতায় কুৎসা যারা করেছিলো
আজো তারা কুৎসা রটায়—যদিও আজ শিথিল মুঠোর পেশী।
সোনার খনি খুঁড়তে গিয়ে শত্রু যত হয়েছিলো
আজকে আমি দীন দরিদ্র, শত্রু তবু অনেক বেশী।
অভিজ্ঞতা যার বেশী তাকে কখনো অবহেলা করবি না। পাকা মাথার সঙ্গে পরামর্শ না করে কখনো বিদেশে যাবি না।
কবি বলেন–
সামনে থেকে দেখতে গেলে একটি কাচেই কাজ হবে।
পেছন থেকে দেখতে গেলে আরো একটি নিতে হবে।
আমার শেষ কথা-কখনো সরোব ছুবি না। দোজখের দোর হলো, সরাব। সরাব খেলে ভালোমন্দ জ্ঞান থাকে না। মাতালকে লোকে সব সময় ছোট নজরে দেখে। আমার কথাগুলো মনে রেখো বাপজান। অন্তর থেকে তোকে দোয়া করছি। এ দোয়া তোকে সবসময় ঘিরে থাকবে।
এক সঙ্গে এতগুলো কথা বলে বুড়ো হাঁপাতে থাকে, একটু চোখ বোজে। দেহের সমস্ত শক্তি জড়ো করে প্রার্থনার ভঙ্গীতে হাত দুখানি তোলার চেষ্টা করে। ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে মোনাজাত জানায়। আল্লাহর ওপর তার অসীম বিশ্বাসে সে যেন তাঁর পদপ্রান্তে পৌঁছতে পারে।
সময়। কবরের ফলকে আলী শার লিখে দিলো :
কেমন করে ভুলি!
এখন আমি ধূলির মধ্যে ধূলি হলাম
এ যে অন্যরকম ধূলি!
এভাবে সব কিছু খুইয়ে নিজের অবিমৃশ্যকারিতার চেহারাটা তার চোখের ওপর স্পষ্ট হয়ে উঠল। আব্বাজানের কথাগুলো বড় যে বুকে বাজে এখন। এতদিন যারা বন্ধুবান্ধবের বেশে তার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিলো তারা সব সরে পড়তে লাগল নানান অজুহাত দেখিয়ে। দিনের খানাটাও আর জোটাতে পারে না আলী শার। ভিক্ষণ করা ছাড়া আর উপায় রইলো না তার। ভিক্ষার থালা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাঁড়াল আলী শার। ঘুরতে ঘুরতে বাজারের কাছে এসে পড়ে একদিন, দেখে কিছু লোক জটলা করছে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে! কি হয়েছে দেখার জন্য ভিড়ের মধ্যে ঢুকে দেখে ভিড়ের ঠিক মাঝখানে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে-বেশ ফুটফুটে সুন্দর দেখতে।
ভোর হয়ে আসছে দেখে শাহরাজাদ চুপ করে গেলো।
তিনশ সতেরতম রজনীতে শাহরাজাদ। আবার বলতে শুরু করলো :
কুঁচ-বরণ কন্যা সে যে কোকিল কালো কেশ।
নিঃশ্বাসে তার মৃগ-গন্ধ চাকন চুকুন বেশ।
তার কুচের ওপর দেখতে পাবে মুক্তামালার মঞ্জুরী
শিশির-গলা মুক্তা-ঝুরি কোন বেহেস্তের অন্সরী!
সেই বুকেতে তুষার ধবল চাঁদের কিরণ পড়ে—
তার রূপের আলোয় ভুবন কালো নয়ন নাহি সরে।
মেয়েটির রূপের মাদকতায় ডুবে যায় আলী শার। চার পাশের কথা, নিজের অবস্থা সব ভুলে মন্ত্রমুগ্ধের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে মেয়েটাকে। ভীড়ের মধ্যে বাজারের ব্যবসায়ীরাই ছিলো সংখ্যায় বেশী! ওরা বলাবলি করছে একে বাঁদী করে নেওয়ার ক্ষমতা এখানে একমাত্র গ্লোরিদেরই আছে। তারা অবশ্য গ্লোরির ছেলের গোল্লায় যাওয়ার খবরটা তখনো শোনেনি।
মেয়েটিকে যে বেচিতে এনেছে তার প্রধান দালাল মেয়েটির পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ভিড়টা একবার ভালোভাবে দেখে নিয়ে সে চেঁচিয়ে বলতে থাকে, আসুন, এই মরুভূমির দেশের আমির, ওমরাহ, ব্যবসাদার সবাই এসে দেখুন। চাঁদের রানী আর গোলাপের রানী এই সুন্দরীর নাম—জুমুর্যুদ। কোন পুরুষ এখনো একে ছোঁয়নি। রাতে বিছানায় সব মেয়েকেই নিয়েই শোয়া যেতে পারে। কিন্তু এর মত মজা কেউ দিতে পারে না। এ যেন একঝুডি ফুল-যার গন্ধে নেশা ধরবে, মৌতাত লাগবে। নিন, নিন, নীলাম ডাকতে শুরু করুন। নীলামের নাম শুনে ভয় পাবেন না। যার যেমন খুশী দর হাঁকতে পারেন। আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে চাঁদের সালতানিয়তের মহারানী লজ্জাবতী কুমারী জুমুরুসদ-এখনো সে কোন পুরুষের সঙ্গে শোয়নি, —ফুলের মত শরীর-ডাকুন, ডাকুন–
প্রথমে এক ব্যবসায়ী চেঁচিয়ে বলে উঠল, —আমি পাঁচশ দিনার দরদিলাম। অন্য একজন সঙ্গে সঙ্গে বলল পাঁচশ দশ। ভিড়ের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলো কুৎসিত চেহারার একটা বুড়ো, নাম রশিদ-আল দিন। তার নীল চোখের কোণে পিচুটি জমে শক্ত হয়ে আছে। ভীড় ঠেলে সে সামনে এসে দাঁড়াল। চিলের মত গলার আওয়াজ তুলে বলে, —ছয়শ। আর একজন ছয়শ দশ বলতেই বুড়োটি প্রায় লাফিয়ে উঠল, একহাজার দিনার।
যারা এতক্ষণ ডাকছিলো তারা চুপ করে গেলো। দালাল বিক্রেতার কাছে গিয়ে বলে, এক ঔষ্ট হাজার দিনারে কি মেয়েটাকৈ ছেড়ে দেবেন?
মেয়েটির কাছে গিয়ে দালাল, বলে, -জুমুর্যুদ তুমি এই বৃদ্ধ রশিদ আল-দিনের কাছে বিক্রি হবে?
ওর মত লোকেদের জন্য একটা কবিতা আছে, শোনো :
অপরাধ নেয়নি কো—শুধু এক উৰ্ব্ব গ্ৰীব জিরাফের বেশে
উদাসীন চোখ দুটি দিয়েছিলো মেলে—
রাঙা অধরের কোণ থেকে একটি জবাব শুধু পড়েছিলো হেলে
আমার প্রার্থনার-শ্বেত পাক কেশ আমি ভালোবাসি না যে—
তুলোর মত তারে লালা দিয়ে দ্রব করি রাঙা মোর অধীরের মাঝে।
দালাল বললো—তোমাকে কথা যখন দিয়েছি তখন তুমি এই বুড়োকে নাও পছন্দ করতে পার। তাছাড়া তোমার মত রূপ এক হাজার দিনারে পাওয়া যায় না। নিদেন পক্ষে দশ হাজার দিনার হওয়া উচিত।
ভিড়ের দিকে তাকিয়ে দালাল বলল—এই ভদ্রলোকের দেওয়া দামে আর কেউ নেবেন?
জুমুর্যুদ দেখল, রশিদ আল-দিনের মত কুৎসিত নয়। ওর চোখের কোনায় পিচুটিও লেগে নেই। কিন্তু এ লোকটাও বুড়ো। যদিও বয়স লুকোবার জন্য চুল দাঁড়িতে কলপ মেখে আছে। জুমুর্যুদ চেঁচিয়ে ওঠে–ছিঃ ছিঃ ছিঃ, এই লোকটা! কি লজ্জা মাগো! এ বুড়োটা ছোড়া হওয়ার জন্য মুখে রঙ মেখেছে!
আমি তোমার সঙ্গী হতাম, সত্যি বলি শোনো–
প্ৰাণের অর্ঘদিতাম তোমার পায়–
তোমায় আমি গুরু বলে নিতাম তুলে শিরে
যদি তোমার শ্মশ্র গুম্ফ থাকত সাদা হয়ে।
কিন্তু তুমি রঙ মেখেছ, লাল করেছ দাঁড়ি।
তোমার সাথে আর কি যেতে পারি?
তোমায় দেখে ভয় করে যে, করব কি আর বল–
তোমায় দেখে ঝরে যাবে প্ৰেম অমৃত ফল।
-বাঃ, বাঃ, কি অমৃতকথা বলছি গো! উচ্ছাসে বলে উঠল দালাল।
—তুমি সাচ্চা বাতই বলেছ।
দ্বিতীয়জন নাকচ হবার সঙ্গে সঙ্গে আরএকজন জুমুর্যুদকে কিনতে চাইলো। লোকটার একটা চোখ কানা। জুমুর্যুদ হেসে বলল-ওগো আমার এক চোখা নাগর শোনো :
জানবে কেমন করে? কানা মানুষ মিথ্যেবাদী, মিথ্যেবাদী কানা।
এবার দালাল আরো একজনকে দেখাল। বেঁটে গোটাগোট্টা লোক! একগাল দাঁড়ি, তলপেট পর্যন্ত নেমে এসেছে। জুমুর্যুদ বলল–এই লোমওয়ালা লোকটার সঙ্গে যেতে বলছ? শোনো তবে :
তাই দেখে হায় কাঁপতে কাঁপতে চুপসে গেলো নারী।
–চারজনকেই অপছন্দ? দালাল আর ধৈর্য রাখতে পারে না। নাঃ, এ আমার কৰ্ম্ম নয়! তোমার জিনিস তুমিই বাছো বাপু। এরা সব নামিদামী আর মান্যগণ্য ব্যবসায়ী–এদের মধ্য থেকে একজনকে তুমি পছন্দ করে নাও। তোমাকে সওদা করে তিনিওবাড়ি চলে যান।
মেয়েটি এবার ভিড়ের দিকে চোখ তুলে তাকাল। প্রত্যেকটি লোককে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। চোখ ঘুরতে ঘুরতে এসে আলী শারের ওপর আটকে গেলো। ভিড়ের মধ্যে যারা, দাঁড়িয়েছিলো তাদের সঙ্গে আলী শার রূপ বা স্বাস্থ্যের কোন তুলনাই হয় না। ওর দিকে আঙুল দেখিয়ে জুমুর্যুদ দালালকে বললো—একেই খুঁজছি। আমি, একেই আমার চাই। ও আমাকে কিনে নিক। ওকে দেখে আমার চোখে রঙ ধরেছে। কি সুন্দর মুখ! কি দারুণ স্বাস্থ্যু! ওর আলিঙ্গনের জন্য মনটা আমার আকুলি-বিকুলি করছে। ওর গরম রক্তের আঁচ আমার গায়ে এসে লাগছে, আমি ক্রমেই পাগল হয়ে উঠছি। ও যেন কেমন মিষ্টি হাওয়া! ওকে দেখেই বোধ হয় কবি বলেছেন :
তোমার দিকে চেয়ে চেয়ে সবাই হলো তৃপ্ত।
যৌবন রে, তুমি দেখ নয়ন মেলে
রূপটা তোমার ঢাকার তরে যাচ্ছে ফেলে ফেলে
হাজার হাজার ওড়না যত
এই দুনিয়ায় সব হারানো মানব শিশুর মত।
আর এক কবি বলেছেন :
এমনি করে রূপটাকে তাই লুকিয়ে রোখ।
এ রূপতো লুকিয়ে রাখার নয়।
এ রূপ যে বিশ্বভুবন ছড়িয়ে দিতে হয়
ভারি তোমার জঙ্ঘা দুটি, সরু তোমার কটি;
প্রিয়া-মিলন লাগি তোমার একটু কি নাই ত্বরা?
তোমার অঙ্গে আমার অঙ্গ মিশিয়ে দিতে কি সুখ!
প্রিয় যখন আসবে উঠে তখন আমার কি দুখ!
ক্ষুধার্তকে অন্নদান,
ঈশ্বর বিধান।
জীবহত্যা পুণ্য নয়।
এ কথা সর্বশাস্ত্ব কয়।
প্রিয়, হে প্রিয় আমার
তোমার বিহনে মোর জগত আঁধার।
ওকে দেখে কবিতা কি ফুরোতে চায়?
গালেতে যার অস্ত রবির রঙ্গীন আলো
শপথ নিয়ে বলতে পারি
আমার ঘরে আসবে বলে কথা যে সে দিয়েছিলো।
সেই কথাটা বলতে গিয়ে লাজে
এখনো সে চক্ষু দুটি বন্ধ করে আছে।
মিলন শেষে, আছেই। আমার জানা
ও আমার সাথে করবে। প্রতারণা।
কিন্তু ধর…
দালাল মেয়েটার কবিতার তোড় দেখে অবাক হয়ে গেলো। বিক্রেতার কাছে গিয়ে কথাটা সে বলেই ফেলল।
বিক্রেতা হেসে বললো-মেয়েটার রঙ্গরস দেখে তোমরা তাজ্জব বনে যাবারই কথা। ওর রূপ তো দেখছো। মেয়েটা খালি যে অন্যের কবিতাই বলতে পারে তা না; ও নিজেও একজন কবি। সাতটা কলমে সাতটা কবিতা লিখতে পারে এক সঙ্গে। তাছাড়া ও সুন্দর দুটি হাতের কত গুণ আছে জান? রেশমী কাপড়ের ওপর সুন্দর সুন্দর নকসা তুলতে পারে ও। ওর হাতের তৈরী কাপেট বা পর্দা করতে ওর সময় লাগে মাত্র সাত থেকে আট দিন। ওকে যে কিনবে, কয়েক মাসের মধ্যেই তার দাম উশুল হয়ে যাবে।
এতগুণ মেয়েটার! দালাল বললো-এ। ধন যার ঘরে যাবে, সে কত ভাগ্যবান! মেয়েটা নিজেই এক অমূল্য রত্ন। ওকে পাহারা দিয়ে রাখতে হবে। আলী শার কাছে গিয়ে ওর হাত দু’খানা টেনে চুম্বন করে বললো—
ভোর হতে দেখে শাহরাজাদ চুপ করে গেলো।
তিনশ উনিশতম রজনীতে আবার শুরু করলো শাহরাজাদ :
জুমুর্যুদ বলোল কটাক্ষে আলী শারকে ঘায়েল করতে চাইলো। মুখ ঘুরিয়ে ফিসফিস করে দালালের হাত ধরে বললো—ওর কাছে আমাকে নিয়ে চলো ওর সঙ্গে কথা বলব। আমাকে যাতে ও কিনে নেয়। তার জন্য ওকে আমি বোঝাব। আমি ওর সঙ্গেই যাব–আর কারুর সঙ্গে না—না—না।
দালাল কি আর করে! তাকে নিয়ে আলী শার কাছে দাঁড় করিয়ে দিলো। আলী শার সামনে যেন বেহেস্তের হুরী। জুমুর্যুদ বলে—ওগো আমার ভালোবাসা, তোমার যৌবন আমার শরীরে যে আগুন ধরিয়ে দিলো! দাম বলছি না কেন? আমাকে খুব দামী বলে মনে হলে না হয় দাম বেশীই বলো। আর কম মনে হলো কমই বলো। যাহোক একটা কিছু বলো। যে দাম দেবে তাতেই আমি চলে যাব। আমি শুধু তোমার সঙ্গেই যাব।
আলী শারের চোখ ফেটে জল আসে আর কি! মাথা ঝাঁকিয়ে সে বলে-বেচার দিব্যি তো কেউ দেয়নি, কেনার কথাই বা ওঠে। কেন?
—ঠিক আছে, আট শতে কেনো। সাতশ? তাও না? থাক তুমি একশ দিনার দিয়ে দাও।
আলী শার বলে অত নেই আমার কাছে।
—কত কম পড়ছে? পুরো একশ দিনার না দিতে পারলে পরেই না হয় দিও। —জুমুর্যুদ হেসে আলী শার গায়ে ঢলে পড়ে।
শক্ত হয়ে যায় আলী শার। অক্ষম পুরুষের প্রাণে জ্বালা ধরে। জ্বালা চেপে রেখে সে বিলে—একশ দিনার তো দূরের কথা আমার কাছে এক কানা কডিও নেই। তুমি ফালতু সময় নষ্ট করছি। যাও, অন্য খদের দেখ।
ওর কাছে এক পয়সাও নেই সেটা জুমুর্যুদ বুঝলো। জুমুর্যুদ বললো।— ঠিক আছে। কেনার জন্যে তোমায় কোন পয়সা দিতে হবে না। আমার হাত ধরে এই জামাটা পরিয়ে দাও আর একখানা হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধর। ব্যস, আমি তোমার হয়ে যাব। আমাকে যে তুমি নিলে এতেই তা বোঝা যাবে।
যন্ত্রচালিতের মত আলী শার জুমুর্যুদকে জামা পরিয়ে দিয়ে ডান হাতে তার কোমর জড়িয়ে ধরার জন্যে হাতখানা ঘুরিয়ে আনলে, আর ঠিক সেই সময় জুমুর্যুদ হঠাৎ একটা দিনার ভর্তি থলি তার হাতে গুঁজে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে–এতে এক হাজার দিনার আছে। মনিবকে নাশ দিয়ে দাও। বাকী একশ নিজের কাছে রাখি। সামনে কষ্টের দিন আসছে কাজে লাগবে তখন।
আলী শারও ওর কথা মত ন শ’ দিনার দিয়ে জুমুর্যুদকে ঘরে নিয়ে গেলো।
আলী সার দীনকুটির দেখে জুমুর্যুদ মোটেই অবাক হলো না। অপরিসর একখানি ঘর। আসবাবপত্র বলতে শত ছিন্ন ময়লা আর তেলচিটে একখানি মাদুর। মাদুরখানা যে কবে কেনা হয়েছিলো তা বলা মুশকিল। এছাড়া ঘরে আর কিছু নেই। একটা হাজার দিনারের থলি আলি শার হাতে দিয়ে জুমুর্যুদ বলে—এক্ষুণি বাজারে যাও। সুন্দর আসবাব আর একখানা চমৎকার কাপেট কিনবে। ভালো ভালো খাবার দাবার আনবে। শরাবও এনে ভালো দেখে। আর আনবে আমার জন্যে একখানা বড়সড় চৌকো দোমাস্কাস সিস্কের কাপড়ের টুকরো। বাজারের সেরা জিনিসটি কিনবে। কাপড়ের রংটা চাই টকটকে লাল। এক লাচি সোনালী সুতো, এক লাচি রুপালী সুতো আর নানান রং-এর সাত লাচি সুতো আনবে। দাঁড়াও আরো আছে। বড় বড় কয়েকটা সূচ আর আমার আঙ্গুলে পরার জন্য একটা টোপর। মনে থাকবে তো সব? ভুলো না যেন। যাও তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।
বেশ কিছুক্ষণ পর বাজার সেরে আলী শারবাড়ি ফিরলো। জুমুর্যুদ প্রথমেই মেঝেতে কাপেট বিছিয়ে ফেললো। তার ওপর তোশক পাতলো। বালিশ তাকিয়া সুন্দর করে সাজানো হলো। ঘরটার আগেই সে ঝেড়ে পুছে রেখেছিলো। এবারে মোমবাতি ধরালো। তেশকের ওপর পাতল সাদা ধবধবে চাদর।
সব কাজ। সারা হলে দু’জনে মনের আনন্দে খানাপিনা শুরু করলো পাশাপাশি বসে। শরাব খেলো, অনেক কথা, অনেক ভাবনা দু’জনে দুজনকে বললো। অবরুদ্ধ বাসনার উন্মেষ হতে লাগলো ধীরে ধীরে। এবার বিছানায় যাবার পালা। দুজনেই ক্লান্ত। নতুন বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো দুজনে। নতুন বিছানার নতুন গন্ধের মাঝে গভীর আবেগে একে অন্যকে জড়িয়ে কাছে টেনে নিলো। জুমুর্যুদের যৌবনে অনাত্মাত ফুল এই প্রথম নিবেদন করলো তার বাঞ্ছিতের কাছে। মুহূর্তের জন্যও ছাড়াছাড়ি হলো না। অচ্ছেদ্য বাহুবন্ধনে আরো গভীর কোন সুখের দেশে পাডি জমায় তারা। কিন্তু সুখের রাত যেন বড়ই ক্ষণস্থায়ী। রাত ভোর হয়ে এলো। এক জোড়া যুবক-যুবতী ভোরের আলোয় যেন স্নান করলো।
সূর্যের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে জুমুরাদ কাজে বসে গেলো। রাতের সুখটুকু গায়ে লেপটে রয়েছে। গাল দুটো একটু বেশী লালচে লাগছে। দামাস্কাস সিস্কের টুকরো দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে একটা বাহারি পর্দা তৈরী করে ফেললো সে। নানান পশুপাখীর নকসা কি সুন্দর করে তুলে ফেললো পর্দায়। পর্দার মাঝে বিরাট বিরাট গাছের ছবি। ডালগুলি ফলভারে নুয়ে পড়েছে। গাছের ছায়ায় বসে দুদণ্ড জিরোতে মন চায়। সমস্তটা মিলিয়ে এক অনবদ্য প্রাণবন্ত প্রকৃতির ছবি। এত বড় কাজটা তুলতে জুমুর্যুদের সময় লেগেছে মাত্র আট দিন। জুমুর্যুদের দক্ষতা দেখে আল্লাকে মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানালো আলী শার।
পর্দার কাজ শেষ হলে ভালো করে সেটাকে ভাঁজ করে নিলো জুমুর্যুদ; তারপর সেটা আলী শারের হাতে দিয়ে বললো-বাজারের কোন দোকানদারের কাছে এটা নিয়ে যাও। পশ্চাশ দিনারের কমে বেচো না যেন। সেই সঙ্গে আর একটা কথা ভালো করে শুনে যাও। একদম ভুলো না, অচেনা কোন ফেরীওয়ালার কাছে পর্দটাি বেচো না। বেচলে, আমাদের দুজনের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে। বুঝেছি? অনেক শত্ৰু আমাদের রয়েছে। সুযোগের অপেক্ষায় অনেকেই রয়েছে ওৎ পেতে। তাই, অচেনা কাউকে বেচাবে না, সাবধান!
ভোর হয়ে আসছে দেখে চুপ করে গেলো শাহরাজাদ।
তিনশো কুড়িতম রজনী :
–হ্যাঁ বলছি।
ফেরা পথে অনেক সিস্কের কাপড় আর সোনালি-রূপালি সুতোর গুলি কিনে নিয়ে এলো আলী শার। এগুলি দিয়ে তৈরি হবে অনেক সুন্দর-সুন্দর পর্দা বা কাপোট। দেরী করলো না। জুমুর্যুদ; কাজ শুরু করে দিলো। ঠিক আট দিনের মাথায় সে একখানা বেশ চমৎকার কাপেট বুনে ফেললো। প্রথমটির চেয়ে এটি অনেক বেশী সুন্দর। এটিও বিক্ৰী হলো পঞ্চাশ দিনারে। এইভাবে সারা বছর ধরেই তারা কাজ করে গেলো। কাজের চাপে তাদের ভালোবাসার গায়ে এতটুকু জঙ ধরেনি; বরং, দিন-দিন তা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছে। প্রেম-সাগরের দুর্বর তুফানে ভেসে গিয়েছে তারা।
একদিন আলী শার একটা পোটলা নিয়েবাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। সেই পোটলাতে ছিলো। জুমুর্যুদের হাতে তৈরি একটা কর্পেট। বাজারে গিয়ে কিন্তু কোন ব্যবসাদারের কাছে বেচলো না; একটা দালাল ধরলো। তাকে সঙ্গে নিয়ে দালালটা দোকানে-দোকানে ঘুরে চেঁচাতে লাগলো। এমন সময় একজন খ্রীস্টান যাচ্ছিল তাদের পাশ দিয়ে। এই সব খ্রীস্টানরা সাধারণত বাজারে ঢোকার পথে এক জায়গায় দল বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে। কেনা-বেচার কাজে ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রয়োজনবোধে হাতে-পায়ে ধরতে পর্যন্ত তাদের বাধে না।
খ্রীস্টান দালালটা আলী শার দালালকে বললো-আমাকে কাপেটটা দাও। আমি তোমাকে ষাট দিনার দেব।
কিন্তু জুমুর্যুদের সতর্কবাণী আলী শার ভুলে যায় নি। লোকটা অচেনা তো বটেই। তার ওপরে সে খ্রীস্টান। খ্রীস্টানদের সে দু চোখে দেখতে পারত না, ঘৃণা করত। ওকে সে কাপেট বেচাবে না।
খ্রীস্টান ছাড়নেওয়ালা নয়। সে দাম চড়িয়ে দিয়ে বললো-একশ দিনার।
আলী শারের দালাল তার কানে-কানে বললো–এমন পয়মস্ত খদের ছেড়ে দেবেন না হুজুর।
আলী শার যাতে কাপেটা তাকেই বিক্রী করে এই জন্যে খ্রীস্টানটা অবশ্য আগেই তার দালালকে দশ দিনার ঘুষ দিয়ে রেখেছিলো। দালালটি তাকে এমনভাবে বিরক্ত করতে লাগলো যে বেচারা শেষ পর্যন্ত সেই খ্রীস্টানকেই একশ দিনারে কাপেটটা বেচে দিতে বাধ্য হলো। কিছুটা ভয়ও যে সে পেলো না সে কথা সত্যি নয়। ভয়ে-ভয়ে দিনারগুলি হাতে নিয়ে কাঁপতে-কাঁপতে বাজার থেকে বেরিয়ে এলো সে।
বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ এক সময় কী জানি কেন ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো আলী শার। খ্রীস্টানটা তার পিছু নিয়েছে। দাঁড়িয়ে পড়লো সে; তারপরে সে জিজ্ঞাসা করলো—এ মহল্লায় তো কোন খ্রীস্টান থাকে না; এদিকে কোন খ্রীস্টানকেও তো আসতে দেখিনি কোনদিন। তা, এপথে আপনার আগমন কেন?
কী আর বলবে আলী শার। বাড়ির দিকে সে হাঁটতে শুরু করে। বাড়ির মুখে এসে হঠাৎ কী মনে করে সে আবার পেছন ফিরে একবার তাকালো। কী ব্যাপার! খ্রীস্টানটা রাস্তার ওপর থেকে তারই দিকে এগিয়ে আসছে যে! ব্রাগে গরগর করে উঠল আলী শার; চেঁচিয়ে বললো।–ব্যাটা হতচ্ছাড়া কোথাকার! আমার তুই পিছু নিয়েছিস কেন?
আলী শার ভাবলো—কোন মুসলমান পাগলা কুকুরকে পানি দিতে পারবে না। এমন কথা আল্লাহ কোথাও বলেন নি। সেই জন্যে সে পানি আনার জন্যে দরজা ঠেলে ঘরের মধ্যে ঢুকে গেলো। পানি নিয়ে ফিরে আসছে এমন সময় জুমুর্যুদের সঙ্গে দেখা। দরজা খোলার আওয়াজ পেয়েই জুমুর্যুদ ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছিলো। আলী শারকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললো-ফিরতে এত দেরী হলো কেন তোমার? খু-উ-ব ভাবনা হচ্ছিল আমার। কাপেটটা তুমি কোথায় বেচলে? কোন নামকরা দোকানদারকে, না, কোন অচেনা খদেরকে?
জুমুর্যুদ বললো-আল্লাহর নামে বলছি, আজ আমার মনটা কেমন ছ্যাক ছ্যাক করছে। তা তুমি পানি নিয়ে চললে কোথায়?
আলী শার জবাবে খুব একটা খুশী হতে পারলো না জুমুর্যুদ। পানি নিয়ে বেরিয়ে গেলো আলী শার। উদ্বেগাকুল কণ্ঠে আবৃত্তি করলো জুমুর্যুদ–
হায়রে মুঢ় মানুষ তুমি ভাবিছ বুঝি
একটি চুমু হবে তোমার চিরদিনের পুঁজি?
ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল দিয়ে
একটু দূরে দেখো তাকিয়ে
রাহুগ্রস্ত চাঁদের হাসি
কারে বেড়ায় খুঁজি।
পানি এনে আলী শার দেখলো খ্রীস্টানটি এরই ভেতরে খোলা দরজা দিয়ে সটান বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে। তার চোখের ওপরে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো যেন। ক্ষেপে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। সে-শালা কুত্তার বাচ্চা কুত্তা! আমার অনুমতি না নিয়ে আমারই ঘরের দাওয়ায় আসিস-তোর এত বড় সাহস।
খ্রীস্টানটি হাত কচলিয়ে বললো—আমার গোস্তাকি মাপ করুন হুজুর। হাঁটতে-হাঁটতে আমার পা দুটো এমনি টনটন করছিলো যে আর আমি দাঁড়াতে পারছিলাম না। তাইত বাধ্য হয়ে চৌকাঠের এদিকে এসে পড়েছি। অবশ্য দরজা বারান্দার মধ্যে তফাত-ই বা কতটুকু? তাই না? একটু জিরিয়ে নিয়ে চলে যাব। আমাকে জোর করে বার করে দেবেন না। আল্লাহও আপনার ওপরে জোর করবেন না।
এই বলে লোকটি আলী শারের হাত থেকে পানির পাত্রটি নিলো; তারপরে অনেকটা পানি ঢকঢ়ক করে খেয়ে পাত্রটি তার হাতে ফিরিয়ে দিলো।
আলী শার চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। লোকটি চলে না যাওয়া পর্যন্ত সে পেছন ফিরতে সাহস করলো না। কিন্তু ঘন্টাখানেকের ভেতরেও লোকটির ওঠার যখন কোন লক্ষণ দেখা গেলো না তখনই চেঁচিয়ে উঠে বললো—বাড়ি থেকে বেরোবি, না, মতলবটা তোর কী? বেরো, বেরো, এখনই বেরিয়ে যা।
লোকটি বললো-মালিক, এ-দুনিয়ায় এমন কিছু মানুষ আছেন ভালো কাজ করার জন্যে যাদের লোকে চিরকাল মনে রাখে। আপনি দেখছি তাঁদের মত ভাগ্যবানদের খাতায় নাম লেখাতে চান না। কোন এক কবি আপনাদের মত মানুষদের জন্যেই বিলাপ করে লিখেছেন—
যাদের মনটা ছিলো নদীড় দিলের মত
না চাইতেই সবাই পেত জল
আজ তারা নেই। আজকে মানুষ কৃপণ হলো যত।
পানি-পিয়াসী পথিক দেখে নাড়ছে তারা কল,
বলছে ডেকে, জল নিয়ে যাও শূন্য কলস ভরি
তার আগেতে বাপু তোমায় ফেলতে হবে কড়ি।
তেষ্টায় আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছিল। মেহেরবানি করে আপনি পানি দিয়েছেন। আমার তেষ্টা মিটেছে। কিন্তু ক্ষিদের জ্বালায় আমার জানা যায়—যায়। আপনাদের এটোকীটা কোথাও যদি কিছু পড়ে থাকে তাই আমাকে দিন না খানিক, সেটুকু পেলেও আমার যথেষ্ট হবে। আর তাও যদি ফেলে দিয়ে থাকেন তাহলে অন্তত এক টুকরো পোড়া রুটিই দিন, আর সেই সঙ্গে এক টুকরো পেয়াজ। আজ তাই আমার কাছে কাবাব বলে মনে হবে।
আলী শার তো ক্ষেপে লাল। সে চিৎকার করে বললো-না। আর একটা কথাও না, বেরোও—আভি নিকালো। এ-বাড়িতে আর কিছু পাবে না তুমি—ভাগো…ভাগো…
কিন্তু কিছুই হলো না। একভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো লোকটা; বললো।—মাপ করবেন, হুজুর। বাড়িতে আপনার সত্যিই যদি কিছু না থেকে থাকে তো একশটা দিনার তো রয়েছে। কাপেট বেচে সেগুলি আপনি পেয়েছেন। তাই থেকে কিছু খাবার কিনে দিন, খাই। দোকান তো পাশেই। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করবেন। কেউ অন্তত বলতে পারবে না যে আপনারবাড়ি থেকে শুধু হাতে আমি ফিরে গিয়েছি। আপনার আমার মধ্যে যে নুন-রুটি দেওয়া-নেওয়া হয়নি সেকথাও বলতে পারবে না কেউ।
আলী শার ভাবলো—এ ব্যাটা সত্যিকারী পাগল। গলা ধাক্কা দিয়ে ওকে রাস্তায় বার করে দিই; তারপরে দেব কুকুর লেলিয়ে। এই ভেবে, লোকটাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাইরে বার করে দেওয়ার জন্যে যে-ই না সে হাতটা তুলেছে আমনি লোকটা বলে উঠলো—আমি আপনার কাছে চেয়েছি একটুকরো রুটি আর একটুকরো পেয়াজ। এর বেশী তো কিছু চাইনি। ওতেই আমার ক্ষিদে মিটে যাবে। আমার জন্যে। ওর বেশী। আপনি মোটেই খরচ করবেন না। জ্ঞানী ব্যক্তিরাও এর বেশী আরা কিছু চান না।
এক চিলতে শুকনো রুটি
তাই তা জ্ঞানী রাজার খানা।
শহর-বোঝাই সুখাদ্য খেয়েও
পেটুক জনের পেট ভরে না।
তিতিবিরক্ত হয়ে ভাবলো আলী শার-এ লোকটার হাত থেকে রেহাই নেই তার। এই ভেবে সে খাবারই কিনতে গেলো। বেরনোর আগে লোকটাকে এক পা-ও নড়াচড়া করতে নিষেধ করলো; তারপর দিয়ে গেলো দরজায় তালা! বাজার থেকে কিনে নিয়ে এলো মধুমাখানো ছানার পিঠে, শশা, কলা অরা গরম-গরম রুটি। চেঁচিয়ে বললো-এখন গেলো।
এত গালাগালিতেও মানুষটি চটলো না; বললো।—মালিক, আপনি সত্যিই মহানুভব! এত খাবার এনেছেন যে দশজনেও খেয়ে শেষ করতে পারবে না। আপনিও বসুন। এক সঙ্গে খাই।
আলী শার বললো—অত আদিখ্যেতা তোমাকে দেখাতে হবে না। তুমি একই গেলো। তা ছাড়া আমার ক্ষিদে নেই।
কিন্তু লোকটি নাছোড়বান্দা। সে বললো—সব জাতের মধ্যে একটা রীতি রয়েছে যে অতিথিদের সঙ্গে বসেই গৃহস্বামীকে খানা খেতে হয়। যে খায় না সে বেজন্ম।
ভোর হয়ে আসতেই গল্প থামিয়ে চুপ করে রইলো শাহরাজাদ।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
#উপন্যাস
#অনুবাদ
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#Molakat
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
No comments