সেই রাতটি ছিল চূড়ান্তভাবে মহান যৌনতার প্রশ্রয়ে নিবেদিত মহা জাগতিক মহামিলনের রাত। অনৈতিক,আপত্তিকর যৌন আকাঙ্ক্ষার অম্তিত্ব অবস্থান করে মাথার ভিতর। রঙ চাড়িয়ে শব্দে প্রকাশ করি। বাইরের জীবনে ধারাবাহিকভাবে স্বীকৃতি পাই। অন্তরালে লালিত সেইসব অন্ধকারের আলোকসভ্যতার মিথ্যাচার থেকে টেনে বের করে দেয় তার চিঠি। কটরির লেখা চিঠি। তার সাথে ভিতরে ভিতরে অবাঞ্ছিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাকে পরাজিত করে। বুঝতে পারি আমার কৌতূহল নিবারণের জন্য একটি সম্পূর্ণ জীবনকাল যথেষ্ট নয়। দৃষ্টি গভীরতা সারা চোখ জুড়ে সঞ্চয় করে তার চিঠির পবিত্র শব্দগুলির দিকে তাকিয়ে থাকি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে অনেক গল্প। ওই রাতেই মাত্রাধিক আনন্দবিভোরতায় তার ও আমার জীবন সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই। তার পরের দিনগুলিতেও নিরবিচ্ছিন্ন যৌন আবিষ্টতায় বন্দী তাকাকালীন চিরদিনের বন্দিত্ব গ্রহণ করার সংকল্প দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করি। চরম শান্তির পরেও আমি তার স্তনের বোঁটায় ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিই, তার বিস্ময় বিভোরতা তখনো কাটেনি। পর পর অনেকগুলো রাত আমাদের পৃথিবী ভুলিয়ে রাখে। মহাজাগতিক নির্দোষ নীরবতার বুকে শব্দে প্রকাশ না পাওয়া কোলাহল হৃদয়, আর আমাদের কথার শেষ হয় না। ওর চলে যা ওয়া নিয়ে কোনও রকম সন্দেহ করার অবকাশ ছিল না। থাকলে ওকে চিরকালীন বন্দিত্বের শৃঙ্খল পরিয়ে দিতাম। পরে তার চিঠি আমাকে তার সিদ্ধান্তে নতজানু হতে বাধ্য করে। আমার অস্তিত্ব সম্বন্ধে অধিকতর উপলব্ধিতে পৌঁছাতে পারি। প্রত্যয়ী হয়ে উঠি। জীবন প্রক্রিয়ার সামাজিক অস্তিত্বেই নিরূপিত হয় তার সচেতনতা, এই বিশ্বাস থেকে সরে আসি। তার পুরুষের প্রতি ঘৃণা, তারই মাঝে কোনও পুরুষের ব্যবহার পর্যাপ্ত স্বস্তি,অনুভূতির প্রকাশ, কৃতজ্ঞতা তার চিঠি পড়ে অনুমান করতে পারি। অন্যদের মতো আমিও আশা করেছি মেয়েরা উঠোন ঝাট দেবে, কাপড় কাচবে, পুরুষের চোট প্যান্টে আঁঠার মতো কিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করবে। যেমটি জন্মের শুরু থেকে হয়ে আসছে। তার চিঠি চূড়ান্ত শিক্ষা দেয়, তাদের ও তাপ উত্তাপ আছে, তাদের চাওয়া-পাওয়াগুলি সম্মান দেয়া উচিত। আর এইটুকু হলেই তারা কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞতা হল এক ধরনের মুক্তি। কটরি পরিচিত জীবনকে পরিত্যাগ করেছে কোনও মূল্যবোধ থেকে নয়, বরং তার জীবনে ঘটে যাওয়া নির্যাতনগুলি তাকে চেতনার দরজা খুলে দিয়েছে। সে উপলব্দি করেছে জীবন অতি মূল্যবান সম্পদ। আর তার আয়ুষ্কাল অতি সামান্য। এই সময়টুকু তার ক্ষতের যন্ত্রণা আঁকড়ে, মানুষের উপহাস, ঘৃণা, অবজ্ঞা নিয়ে সময়কে অবজ্ঞা করা মানে জীবনের আনন্দ থেকে সরে যওয়া। জীবনের ক্ষতগুলো যেমন সত্য, আনন্দ ও তেমন ই সত্য। যখন আমি পুরো চিঠিটি পড়িনি, শুধু শুরুটা পড়েছিলাম, মুহূর্তে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। চারিদিকে জনমানব শূন্য মরুভূমি, পরিত্যক্ত এক অজানা নির্জন স্থানে নির্বাসিত আমি তার বিরহ যাপন করছি।
তার সাথে প্রথম মিলনের পরের দিনগুলি রাত-অন্ধকারের চেনা আতঙ্ক তখন আমার সারা শরীর জুড়ে। আলোকোজ্জ্বল এক শূন্যতার ভিতর তারকাদের সম্মিলন। কারা কতজন জানি না। শুধু পূর্বের মতো সঙ্গীদের শারীরিক আকারকে বিবর্ণ ছায়ায় পরিবর্তিত করে ফেলেছে। চিনতে পারি না। হৃদয়ের দরজাটি খুলেও চিনতে কষ্ট হয়।
প্রতি রাতে ওর নিশ্বাসের শব্দ অন্য যাবতীয় শব্দকে ছাপিয়ে উঠত, আমি সেই শব্দে ঘুমিয়ে পড়তাম। ওর নিশ্বাসের শব্দে ভরে যেত খাট, বিছানা শহরের রাস্তা আর নেচে উঠত বিদ্যুতবাহি খুঁটিগুলি। তাদের মাথার উপর আলোগুলি নেচে উঠত। এমন কি গোটা পৃথিবী। ঘুমিয়ে যাবার পর রাতের অন্ধকারে নিজের স্থান খুঁজে নিতে ও পরে ওকে জড়িয়ে ধরতে কোনও অসুবিধা হত না। তারপর জানি না সেও কেমন করে কোন অলৌকিক ক্ষমতায় আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরত। আর ঘুমের মধ্যে কিছু অশ্লীল সংলাপ জুড়ে থাকত আমাদের দুই জোড়া ঠোঁটের প্রান্ত সীমা ছুঁয়ে। যৌনতার ছন্দ সম্বন্ধে সহজাত জ্ঞান আর ভঙ্গিমার বিবরণ এক অর্ন্তলীন মহতী অশ্লীলতা আমাদেরকে নিবিড় সম্পর্কে বেঁধে দিত। এইভাবে একদিন নয় অনেক অনেক দিনের নিয়মিত মাঝ রাতের গোটাটাই ব্যবহার করে সুখ ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে ভোর রাতের ঝি ঝি পোকার ডাক থামিয়ে ওর নিশ্বাসের শব্দ শুনতাম।
আজ নিশ্চিত হতে পারি না এই সব আতঙ্ক জড়ানো অদৃশ্য ছায়াগুলি একদিন প্রতরণার দায়ে অভিযুক্ত হবে কি না। অথবা আমি। এমন ও হতে পারে একে অপরকে প্রতারক বলে চিনে নিতে পারি। একা আছি বলেই নিজের সাথে নিজের পাগলামি শুরু হয়ে যাবে ফেলে আসা মৃতরাতগুলির মতো। দেখছি বারবার দেখছি চারপাশের ছায়াগুলিকে যেগুলি বারবার আমার একাকীত্বের সঙ্গী হয়েছে তার অনুপস্থিতিতে। তেমনটাই আজকের রাতটি আমার শরীরে নিবিড় হতে চাইছে। আর প্রতিরাতের মতো ছায়াদের একটির কন্ঠস্বর চেনা বলে মনে হচ্ছে। নিঃসঙ্গ সময়ে নির্জনতার আতঙ্ক আমাকে চেপে ধর। সে নেই, তাকে ফোন করব তেমন কোন ও পথ সে রেখে যায়নি।
এখানে আমি দেখতে পাচ্ছি রাতের আক্রমণগুলি আমাকে আমার অবস্থান থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। চেনা কন্ঠস্বরটি ক্রমশ আরও আতঙ্কিত করে চলেছে। এবার হয়তো মরেই যাবো। আমার মাংসপেশী দ্রুত উড়বে মহা শূন্যতায়। নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকি যে কোনও স্পর্শনযোগ্য বস্তুর জন্য। শক্ত প্রতিরোধ তৈরি করতে না পারলে ছায়াটি শারীরিক প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে। এখন এই ভয়ংকর ছায়ার আধিপত্য বিস্তারকারী রাত মহান নৈশব্দের মধ্যে নিজেকে খুঁজে পেতে চলেছি। অন্ধকার যত ঘন হচ্ছে চেনা কন্ঠস্বরটি তত নিবিড় হতে থাকে।
পৃথিবীর উপরিতলে কোনো প্রবহমান নদীর ধারা দেখতে পাই না, জমি ডাঙা-ডহর, বনভূমি, গ্রাম-শহর, এমনকি আমার প্রতিবেশীরা পেছনের দিকে দ্রুত সরে গিয়ে মাত্রাধিক দূরত্বে পৌঁছে গেছে। বিষাদের অশ্রুজল ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া এক বিরাট নদী। সেই নদীর জলধারায় জল শুধুই জল।
ছায়ার লাম্পট্য আতঙ্ক অশরীরী শরীর হতে চাইছে। চিৎকার করে উঠি, দাঁড়াও এসো না, কাছে এসো না। যদিও এই কাছে আসাটা পূর্বে বার বার ঘটেছে আর আমি ডুবে গেছি এক অন্ধকার আলোকময় সমাপ্তিতে। তখন কটরির মুখ শুধু তার ই মুখ। এই অবাঞ্ছিত ঘটনাটি যে মনে মনে লালন করি সেটা স্বীকার করতে আমার নিজের কাছে লজ্জা হয় অথবা অন্য কিছু, জানি না। প্রশ্ন করি, কে তুমি?
ছায়ার কন্ঠস্বরে মৃদু কম্পন অনুভব করি। পেছনের ছায়াগুলি হারিয়ে যায়। একমাত্র আমার সম্মুখের ছায়াটি ক্রমে রূপ বদল করতে থাকে। কটরি কি নিঃসঙ্গ রাতগুলিতে আমারই মতো ছায়াদের আক্রমণ সহ্য করে? শূন্যতাকে আলিঙ্গন করে? ওর মুখ স্পষ্ট হয়। লক্ষ্য করি তার চোখের নড়াচড়া, তার নাসারন্ধের আক্ষেপ বক্র মুখ, ভ্রুর কুঞ্চন আর থুতনির গাম্ভীর্য। এই টুকু দেখার মধ্যে কোনও মিথ্যাচার লুকিয়ে ছিল না। শূন্যতার এই রাতে অলৌকিক ভাবে পুননির্মত হতে থাকে সুক্ষ্ম ভালোবাসার বিন্যাস আমার ভিতর। এই মুহূর্তটার ভিতরকার সময়টুকু এক আলোকোজ্জ্বল মহাকাশ।
চিঠির পরের অংশে... তার পরের রাতগুলি মধুর হয়ে উঠেছিল। এই বিভোরতার কেমন করে দুই মাস কেটে গেছে আমরা টের পাইনি। সেদিন ভোরে পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। জানালার ধারে যাব, উঠে দাঁড়াতেই চারপাশ অন্ধকার হয়ে এল, মনে হল পড়ে যাব, খাটেই বসে পড়লাম। একটু বিশ্রামের পর, আমার হিসেব মিলে গেল। একদিন যা চাইতে গিয়ে আর চাওয়া হয়নি, তাই পেয়ে গেছি আমি। আনন্দে পৃথিবীময় লাফিয়ে বেড়াতে ইচ্ছে করছে, কী করব, কাকে বলব, অস্থিরতার ভিতরের অস্থিরতায় ঢুকে পড়ছি। অন্তর মাঝে লুকিয়ে রাখা ব্লু প্রিন্ট তখন চোখের সম্মুখে ভেসে উঠছে। চেয়ে দেখি রতিক্লান্ত তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছ। খুব সাবধানে তোমার ঠোঁটের ওপর চেপে ধরলাম আমার ঠোঁট। এক কালজয়ী পবিত্র নগ্নতার কাছে কৃতজ্ঞতায় নত হলাম। আর মনে মনে তখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেললাম। ততক্ষণে তুমি জেগে উঠেছ , তখন তো আর তোমার বাহুবন্ধে নিজেকে ছেড়ে দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। সেই সকালের আদরটা প্রতিদিনের নতুন নতুন আদরের থেকে একেবারে আলাদা। তারপরের রাতে চিঠিটা তোমাকে লিখি। আর সকালে তোমার অজান্তে বেরিয়ে আসি।
তার চিঠির শুরুতে “ক্ষমা করো” এই দু’টি শব্দ অর্ধেক পাতা জুড়ে আমাকে বিব্রত করছিল। আর তার সিদ্ধান্তটি ছিল ধ্রোণাচার্যের শরশয়্যার মতো।
কটরি লিখেছে, তোমাকে ঠকানোর কোনো প্রশ্ন ই ওঠে না। তোমার শরীরের অংশ আমার শরীরের ভিতর বয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আরও কয়েকমাস পার হলে নির্দিষ্ঠ সময়ে পৃথিবীতে পা রাখবে আমার সন্তান।
সে তার সন্তানের পিতৃ পরিচয় দিতে নারাজ। সে তার একক মা। আর এই লড়াইটা করার জন্য তার চলে যাওয়া। প্রজন্মপ্রবাহের ধারাটি সচল রাখার মহতী উদ্যোগের সাফল্য সে একা নিতে চায়। আর বার বার ক্ষমা চায়।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
#উপন্যাস
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#Molakat
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#স্মৃতিছায়অপাঠ
#ফজলুল_হক
No comments