ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই
প্রশ্নমালা
১. আশির
দশকের এদেশে নতুন উদ্যম নিয়ে ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু হয়েছিলো। গত ৩ দশকে এ আন্দোলনের নিরবচ্ছিন্ন কর্মকান্ড শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইসলামী কাঠামো বিনির্মাণে কতোটা সফল হতে পেরেছে।
২. এ আন্দোলনের সাফল্যের পাল্লাটা ভারি হতে পারেনি কেনো?
৩. কেউ কেউ বলছেন ‘ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলনে উদ্যমহীনতার ঘুণপোকা প্রবেশ করেছে’ এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
৪. বর্তমান
যুগটাকে ইমেজের যুগ বলে কেউ কেউ অভিহিত করেন, কেউ কেউ বলেন ডিজিটাল উমেজের যুগ। এ যুগে দাওয়াতি কাজের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তি নির্ভর ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া। নি:সন্দেহে এসব প্রযুক্তিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হলে শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক তথা বুদ্ধিবৃত্তির ভিত্তিটা মজবুত হওয়া চাই। এই মজবুতির জন্য আদর্শিক শক্তির পক্ষে সৃজনশীল ও মননশীল মানুষদের যেভাবে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন অনেকে মনে করেন সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না বলে ইসলামি সাংস্কৃতিক আন্দোলন শক্তি অর্জন করতে পারছে না আপনার কি মনে হয়।
৫. অনেকের
কথাই আমরা জানি, যারা আদর্শিক শক্তির ছায়াতলে ইসলামি শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রতিভাবন কর্মী হিশেবে গড়ে উঠেছেন কিন্তু বেশিদিন অবস্থান করতে পারেননি। তাদের কেউ কেউ বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু কাজ করছেন, অনেকে সাবার উদ্যম হারিয়ে কর্ম তৎপরতাই বন্ধ করে দিয়েছেন, এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করছেন।
৬. কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরা অনুসন্ধিৎসু, চিন্তাশীল ও অনুভীতিপ্রবণ হওয়ায় তারা সাধারণের চেয়ে আলাদা। স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদেরকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেছেন। সমকালীন আদর্শিক শক্তি কী তা নিরূপণ করতে সক্ষম হয়েছে।
৭. শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা সম্মানজনক পৃষ্ঠপোষকতার মুখাপেক্ষী অন্তত ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ একটি সমাজ এসবের বিনিময় দেয়ার জন্য সর্বাÍকভাবে প্রস্তুত না হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব কতটা প্রকট?
আমরা এগিয়েছি অনেকখানি কিন্তু হেরার রাজ তোরন এখনো বহুদূর
সৈয়দ রফিক
গত ২৮ জুলাই ০৮ আমার স্নেহ ভাজন লেখক কবি আহমদ বাসির ও আফসার নিজাম এসে বাংলাদেশের ইসলামী সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই শিরোনামে সাত প্রশ্নের এক প্রশ্নমালা আমার সামনে উপস্থাপন করে বললো, শানিত জবাব চাই। প্রসঙ্গক্রমে কবি আল মাহমুদ যে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে দ্বিধা করেছেন তাও সে প্রকাশ করলো।
প্রশ্নগুলোর চরিত্র বিশ্লেষণ করলে তিনটি বিষয় উঠে আসে- ১. ইসলামী সংস্কৃতি আন্দোলনের ইতিহাস বিশ্লেষণ ২. ইসলামী সংস্কৃতি আন্দোলনের গতিধারা মূল্যায়ন ৩. সাফল্য ও ব্যর্থতার পরিমাপ। বলতে দ্বিধা নেই- প্রশ্নবালায় প্রশ্নকর্তার মধ্যে বিরজমান প্রাপ্তি যা, তা মানোত্তীর্ণ না হলেও আমাদের ধারণায় নগন্য নয় বা অস্বীকার করার মতো নয়। বরং আরো এগিয়ে বলা যায়- এর গতিধারার খরস্রোতকে আগলে সুযোগ একেবারই কম।
মূলত
সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়েই ইসলমী সংস্কৃতি আন্দোলন একটা মাত্র অর্জন করে যা বাংলা ভাষা ভাসি বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে যুগপৎ আশা ও উদ্যমের সৃষ্টি করে। একথা মানি বা না মানি ইসলামী সংস্কৃতি আন্দোলন একেবারে নিরেট পরিকল্পনার মাধ্যমে যেমন এগোয় না, আবার একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় এর গতিধারাকে নিজস্ব প্রকৃতিতে এগোনোর জন্য প্রয়োজন একটা উদার লক্ষ যা না থাকলে গতিহীনতা পেয়ে না বসলেও নিরবিচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাওয়াটা সম্ভব হয় না।
প্রকৃত
অর্থে মাঝে মধ্যে সমন্বিত পরিকল্পনায় আমরা যুথবদ্ধ হবার প্রয়াসও পেয়েছি। কিন্তু সমস্যা হলো কেন্দ্রীয় থিংক ট্যাংক এর বিশ্লেষণ ও একে এ্যাকশন প্লান এর স্রোতধারায় এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য যে মনস্কমনা দরকার, যে মনীষার প্রয়োজন সেটার যেমান অভাব ছিলো, তেমনি অভাব আছে প্রায়রিটি যাচাইয়ের ও কমিটমেন্টের, আছে আমাদের সিদ্ধান্তের অপরিপক্কতা। কেমন যেনো দূরবর্তী লক্ষে এগিয়ে যাবার চাইতে নগদপ্রাপ্তির টেনশন আমাদেরকে পেয়ে বসেছে। অতীত রাজনীতির ভ্রম এবং দ্বিধা আমাদের মধ্যে পিছুটানের সৃষ্টি করেছে। যার কারণে বারবার রাজনৈতিক বিবেচনা প্রাধান্য পেয়েছে পরিকল্পনা গ্রহণে। রাজনৈতিক অংগনে আমরা এগিয়েও গিয়েছি অনেকখানি। কিন্তু এ এগিয়ে যাওয়াকে স্থৈর্য দান করার জন্য প্রয়োজন যে মনীষার উন্মেষ, তার জন্য আমরা যত্নবান হতে পরিনি- না সিদ্ধান্তে না অর্থব্যয়ে। রাজনীতির নেশা পেয়ে বসলে বৃদ্বিবৃত্তিকে আপারহ্যান্ড দেয়ার চাইতে অবদমনের মানসিকতা প্রাধান্য পায়। ইজতিহাদের মাধ্যমে শরীয়তের সীমাসরহদ রক্ষার চাইতে আপোষকামিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে অবলীলায়। বরং ফতোয়ার খড়গ ব্যবহৃত হয় সংস্কৃতির ফুল-ফসল দলন আর প্রজাপতির ডানা ভাঙ্গতে। ইবনে খলদুনের জীবনী ঘাটতে গিয়ে দেখা যায় ক্ষমতার কাছাকাছি যাবার ব্যাকুলতা কিভাবে তাঁকে আপোষকামী করেছে। আল্লামা ইকবাল এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম- আজীবন-মরনঅবধি।
সংস্কৃতি আন্দোলনের যাবতীয় অর্জনকে সশ্রদ্ধচিত্তে তসলীম করি। দ্বিধাহীন চিত্তে বলি- আমরা এগিয়েছি অনেকখানি। কিন্তু হেরার রাজ তোরন এখনো বহুদূর। আমরা সবাই মিলে শ্রম ঘাম দিয়ে শত শত অযুত অজস্র বর্ণিল পুঁতি সৃষ্টি করেছি। দু:খ, মালা গাঁথতে পারলাম না। তবে হতাশা আমার হৃদয়কে ক্লেদাক্ত করতে পারবে না কোনো দিন। বিশ্বাসে আমি অটুট, আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়াই আমার কাছে বড় নয়- না নিজের জন্য, না সংস্কৃতি আন্দোলননের জন্য।
তবে নিরেট বিচারে আমাদের সব অর্জনকে মিলিয়ে দেখলে- একে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বলা যায়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অভিধায় অভিষ্কিত করা যায় না। সাংস্কৃতিক বিপ্লবতো অনেক বড় কথা। কারণ কি? দেশব্যাপী কাঠামো নির্মাণে আমরা সক্ষম হইনি। এটা আমাদের সিদ্ধান্তে বলশালীতার অভাব, গৃহদাহ আর কিছুটা হানাহানি আর মানবিক বিদ্বেষ, কারো কারো নিরেট স্বার্থ পরতা, কিছুটা ব্যবসা। তবে আমি শংকিত নই। কারণ এ আত্মসমালোচনাই আমাদের মধ্যে তৈরি করবে যুথবদ্ধ হবার মানসিকতা, আরশের ছায়া আমাদের ধাবিত করবে জান্নতের পথে।
লাগসই
প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা বরাবরই পিছিয়ে আছি। সমন্বিত পরিকল্পনা, লোকবল তৈরি ও কাজের ক্ষেত্র তৈরি ভিন্ন আর কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের
কেউ কেউ অতি স্পর্শকাতরতার কারণে স্রোতের সঙ্গে সাঁতার কাটতে পারছেন না। কারণ যাই থাক, লক্ষ অটুট থাকলে উদ্যম হারাতে নেই। নদী কখনো স্রোত হারায় না। নিজস্ব নিয়মে পথ করে নেয়।
মাতাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা পরিহার করা শ্রেয়। শত ফুল ফুটতে দাও’ বাগানের শোভা বর্ধন হবে, আমি এ নীতিতে বিশ্বাসী।
সবশেষে
বলবো- ইসলামী সংস্কৃতি আন্দোলনের জন্য আমি পৃষ্ঠপোষকতার চাইতে বক্ষপোষকতায় বিশ্বাসী।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
#সাক্ষাৎকার
#মোলাকাত
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#Molakat
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#সাহিত্য
#সৈয়দ_রফিক
#আহমদ_বাসির
#আফসার_নিজাম
No comments