বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_উদ্ধার পর্ব : ৬৭তম প্রবাহ

 
রা­জার দক্ষি­­­স্ত মন্ত্রী, বু­দ্ধি মন্ত্রী-বল মন্ত্রী! মন্ত্রী­প্র­বর গা­জী রহ­মা­নের চক্ষেও আজ নি­দ্রা নাই, কথা সপ্ত­বি­­­তি প্র­বা­হের আর­ম্ভেই প্র­কাশ করা হইয়াছে। গা­জী রহ­মান এক্ষ­ণে মহা­ব্য­স্ত। নি­শা প্রায় শেষ হইয়া আসিল, গু­প্ত­­রে­রা পর্য­ন্ত ফি­রিয়া আসে নাই। আজি­কার সং­বাদ, দা­মে­স্ক নগ­রের সং­বাদ-এজি­দ্ শি­বি­রের নূতন সং­বাদ পর্য­ন্ত কোন সং­বা­দই প্রা­প্ত হই­তে পা­রেন নাই। দ্বি­তীয় দি­নে শি­বির আক্র­­ণের উদ্যো­গে জয়নাল আবে­দী­নের প্রাণ বধ হই­তে বি­রত হইল। ইহা­তে কী কোন নিগূঢ় তত্ত্ব আছে? আজ হউক, কাল হউক, শি­বির আক্র­মণ হই­বেই হই­বে,-সে ভয়ে জয়না­লের প্রা­­­ধে ক্ষা­ন্ত হই­বে কেন?
দূরদ­র্শী মন্ত্রী উপ­রো­ক্ত আলো­­নায় চি­ন্তার বেগ বি­স্তার করিয়াছেন। নগর প্রা­ন্তর, শি­বির, বন্দি­গৃহ, যু­দ্ধ­ক্ষে­ত্র, সৈনি­­দল, শূলদ­ণ্ড, এজি­দ্, মারওয়ান্, সক­লের বিষয় এক-এক­বার আলো­­না করি­তে­ছেন। আবার মনে উঠিল, জয়নাল বধে ক্ষা­ন্ত থা­কি­বে কেন? মারওয়ানের কূটবু­দ্ধির সী­মা বহুদূরব্যা­পী। নি­শাও প্রায় শেষ হইয়া আসিল, এখ­নো কেহ শি­বি­রে ফি­রি­তে­ছে না, ইহা­রই বা কা­রণ কি? আর যে দু­­টি ছদ্ম­বে­শীর কথা শু­নি­লাম, তা­হা­রা শি­বি­রের দি­কে আসি­তে­ছিল, প্র­­রী­দি­গের সত­র্ক­তায় কৃ­­কা­র্য হই­তে পা­রে নাই। দুই-তি­­বার চে­ষ্টা করিয়াও শি­বি­রের বহি­র্ভাগ রে­খার নি­­টে আসা দূরে থা­কুক, সহ­স্র হস্ত ব্য­­ধান হই­তেই ফি­রিয়া গিয়াছে। ইহা­রাই-বা কে? বি­শেষ গো­­­ভা­বে চর­দি­­কে, শে­ষে পঞ্চ­বি­­­তি আম্বা­জী সৈন্য­কেও পা­ঠাইয়াছি। তা­হা­রা-বা কী করিল? মন্ত্রী­প্র­বর এই সকল বিষয় চি­ন্তা করি­তে করি­তে শি­বির-অভ্য­ন্ত­­স্থ তৃ­তীয় দ্বার পর্য­ন্ত আসিয়া সর্ব­প্র­ধান দ্বা­রী মা­লি­­কে জি­জ্ঞা­সা করি­লেন, "কোন সং­বাদ জা­নি­তে পা­রিয়াছ?"
মা­লিক বলি­লেন, "আমি পর্য­ন্ত কোন সং­বাদ প্রা­প্ত হই নাই।"
মন্ত্রী­বর মৃ­দু­­ন্দ­­দে চতু­র্থ দ্বার পর্য­ন্ত যাইয়া সা­­কে জি­জ্ঞা­সা করি­লেন, "কোন সং­বাদ নাই?"
সাদ জোড়করে বলি­লেন, "আমি যে সং­বাদ পাইয়াছি, তা­হা বি­শেষ প্রয়োজ­নীয় নহে বলিয়া জা­নাই নাই।"
"কী সং­বাদ?"
"শি­বির বহি­র্দ্বা­রের চন্দ্র­রে­খা পর্য­ন্ত সা­­বা­জের প্র­­রায় আছে! তা­হার কি­ছু দূরেই সী­মা-নি­র্দি­ষ্ট খর্জুর বৃ­ক্ষ! সেই বৃ­ক্ষের কি­ঞ্চিৎ দূরে স্তূপা­কার শি­লা­­ণ্ডো­­রি সেই দু­­টি লোক অস্ফুট স্ব­রে কী আলাপ করি­তে­ছিল। অনু­মা­নে বোধ হয়, তা­হা­রা কো­নরূপ দু­­ভি­­ন্ধি­তেই আসিয়াছিল।"
মন্ত্রী­বর আরো চি­ন্তিত হই­লেন। ক্র­মে শি­বি­রের বহি­র্দ্বার পর্য­ন্ত যাইয়া দাঁড়াই­তেই সু­­ক্ষ প্র­­রী আব্দুল কা­দের কর­জোড়ে বলিল, "শি­লা সম­ষ্টির নি­­টে যে দু­­জন ছদ্ম­বে­শী বসিয়াছিল, তা­হা­দের সঙ্গে আর এক­জন আসিয়া মি­শিয়াছে। সকল সং­বা­দে কোন বি­শেষ সা­­ত্ব নাই বলিয়া চরে­রা পু­­রায় গিয়াছে।"
উভয়ে এই কথা হই­তে­ছে, ইতি­­ধ্যে দা­মে­স্ক­­­রে প্রে­রিত গু­প্ত­চর দ্বা­রে প্র­বেশ করি­তেই মন্ত্রী­­­কে দে­খিয়া নত­শি­রে অভি­বা­­নপূর্বক বলিল, "আজ বড় ভয়ানক সং­বাদ আনি­তে হইয়াছে। জয়নাল আবে­দীন বন্দি­গৃ­হে নাই। এজি­দের আজ্ঞায় মারওয়ান জয়নাল আবে­দী­­কে ধরিয়া আনি­তে গিয়াছিল, না পাইয়া ফি­রিয়া আসিয়াছে। দা­মে­স্ক নগ­রে ঘরে ঘরে এজি­দের সন্ধা­নী লোক ফি­রি­তে­ছে; রা­­পথ, গু­প্ত­পথ, দীন-দরি­দ্রের কু­টীর তন্ন­­ন্ন করিয়া খুঁজিয়া বেড়াই­তে­ছে। জয়নাল আবে­দীন কো­থায় গিয়াছেন, তা­হার কোন সন্ধান পাওয়া যা­­তে­ছে না।"
সং­বাদ শু­নিয়া গা­জী রহ­মান একে­বা­রে নি­স্ত­ব্ধ হই­লেন। বহু চি­ন্তার পর সা­ব্য­স্ত হইল, জয়নাল আবে­দীন নগর হই­তে বা­হির হইয়াছেন, সন্দেহ নাই। শত্রু হস্তেও পতিত হন নাই। কি­ন্তু আশ­ঙ্কা অনেক। এই অভা­­নীয় সং­বা­দে মন্ত্রী­প্র­­রের মস্তক ঘু­রিয়া গেল, মস্তি­ষ্কের মজ্জা চি­ন্তা­­ক্তির অপ­রি­সীম বে­গে অধি­­তর আলোড়িত হইয়া বি­ন্দু বি­ন্দু ঘর্ম-বি­ন্দু­তে ললাট পরি­শো­ভিত হইল
এক­জন গু­প্ত­চর আসিয়া সেই সময় বলি­তে লা­গিল, "সেই নি­শা­­­দ্বয় শি­লা­­ণ্ডে বসিয়া আলাপ করি­তে­ছে, কোন কথাই স্প­ষ্ট বু­ঝা যা­­তে­ছিল না। কে­বল 'মদি­না', 'চতুর', 'ফি­রিয়া যাই',-এই তি­­টি কথা বু­ঝা গিয়াছিল। ইতি­­ধ্যে আর এক­জন লোক হঠাৎ সে­­খা­নে উপ­স্থিত হই­তেই উহা­রা যেন ভয়ে ভীত হইয়া গা­ত্রো­ত্থান করিল। আগ­ন্তুক জি­জ্ঞা­সা করিল, 'তো­­রা কে?' তা­হা­তে তা­হা­রা উত্তর করিল-'আম­রা পথিক!' পু­­রায় প্র­শ্ন-'পথিক -পথে কেন?' উত্তর-'পথ ভু­লিয়া।' আবার প্র­শ্ন-'কো­থায় যা­­বে?' উত্তর-'দা­মে­স্ক নগ­রে।' 'কি আশা?'-'চা­­রি', 'বস­তি কো­থায়?'-'মদি­না।' চতু­র্দিক হই­তে শব্দ হইল, 'আর কো­থায় যা­­বি?মদি­নার লোক চা­­রির জন্য দা­মে­স্কে!' আম্বা­জী গু­প্ত সৈন্য­গণ বর্শা­­স্তে তি­­­­কেই ঘি­রিয়া ফে­লিল, পঞ্চ­বি­­­তি বর্শা­­লক তা­হা­দের বক্ষঃ এবং পৃ­ষ্ঠে উত্থিত হইয়া তি­­­­কে বন্দি করিল। প্র­ভা­তে পরিচয়-পরী­ক্ষার পর মু­ক্তি।"
মন্ত্রী­বর এই সকল কথা মনের সহিত শু­নিয়া আদেশ করি­লেন, "এখ­নই আর শত বর্শা­ধা­রী সৈন্য লইয়া ভি­ন্ন ভি­ন্ন পথে বন্দি তি­­­­কে বি­শেষ সত­র্ক­তার সহিত আনিয়া তিন স্থা­নে আব­দ্ধ কর। সা­­ধান, কা­হা­রো সহিত যেন কেহ আর কোন কথা না কহি­তে পা­রে, দে­খা না করি­তে পা­রে।-বন্দি­গণ প্র­তি কোন প্র­কার অব­জ্ঞা বা অপ­মা­নসূচক কোন কথা কেহ প্রয়োগ না করে। সা­­ধান! আর তো­­রা কেহ দা­মে­স্ক নগ­রে যাও, কেহ কেহ এজি­দ্-শি­বি­রের নি­কটও সন্ধান কর। নি­­­­র্তী পর্বত, বন, উপ­বন, যে­খা­নে মা­নু­ষের গতি­বি­ধি যাওয়া-আসা সম্ভব মনে কর, সে­­খা­নেই সন্ধান করি­বে। আর সত­র্ক হইয়া সর্ব­দা মনে রা­খিয়া দে­খিয়ো যে, কেহ কা­হা­কে ধরিয়া কো­থাও লইয়া যায় কি না। যদি ধরিয়া লয়, তা­হার অনু­­­ণে যা­­বে-দুই-এক­জন আসিয়া শি­বি­রে সং­বাদ দি­বে, নি­শা অব­সা­নের সহিত আমি ইহার সং­বাদ তো­মা­দের নি­কট চা­হি। চর­গণ, আজিই তো­মা­দের পরি­শ্র­মের শেষ দিন। আজি­কার পরি­শ্র­মই যথা­র্থ পরি­শ্রম! প্র­ভুর উপ­কার সা­হা­য্যের জন্য প্রা­­­ণে সন্ধান লই­বে-প্র­ত্যু­ষে পু­­স্কার। আমি তো­মা­দের আগ­মন প্র­তী­ক্ষায় জা­­রিত রহি­লাম।"
গু­প্ত­­­গণ মন্ত্রী­­রের পদ­চু­ম্বন করিয়া স্ব-স্ব গন্ত­ব্য­­থে যথে­চ্ছা চলিয়া গেল। মন্ত্রী­বর চক্ষের পলক ফি­রা­­তে অব­সর পা­­লেন না। কে-কো­থায়-কো­ন্ পথে চলিয়া গেল, তা­হা স্থির করি­তে পা­রি­লেন না।এক­টু চি­ন্তা করিয়া আর এক­টি আজ্ঞা প্র­চার করি­লেন যে, "নি­শা­­সা­নের পূর্বে এজি­দ্ শি­বি­রের নি­কট ভে­রী বা­জা­­তে বা­জা­­তে ঘো­­ণা করি­বে, তি­­টি লোক আমা­দের হা­তে বন্দি, যদি তো­মা­দের শি­বি­­স্থ কেহ হয়, তবে সূর্যে­াদয়ের পর চা­হিয়া পা­ঠা­­লেই ছাড়িয়া দিব।" মন্ত্রী­বর এই আজ্ঞা প্র­চার করিয়া বহি­র্দ্বার হই­তে চলিয়া গে­লেন

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

#উপন্যাস
#অনুবাদ
#মোলাকাত
#Molakat
#Novel
#Translation
#BanglaLiterature
#Literature
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#বাংলাসাহিত্য
#সাহিত্য
#বিষাধসিন্ধু
#মীর_মশাররফ_হোসেন

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.