আলিফ লায়লা : আরব্য রজনী_পর্ব-১০৬


ইংরেজি
অনুবাদ : ডঃ জে. সি. মারদ্রুস
বাংলা অনুবাদ : ক্ষিতিশ সরকার
 
চারশো বিয়াল্লিশতম রজনী। আবার সে বলতে থাকে :
অনেকদিন ধরে অনেক পথ ঘুরে, অবশেষে একদিন তারা বুড়ি ডিলাইলাহকে পাকড়াও করতে পারলো। গাধার মালিকই চিনতে পেরেছিলো তাকে। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচামেচি চিৎকার করে সে লোকজন জড়ো করে ফেললো। হজ মহম্মদ সওদাগর সিদি মুসিন এবং ইহুদী জহুরী আজারিয়াহ। আর মুর নাপিত হজ মাসুদও এসে পড়লো ঘটনাস্থলে। ওরা পাঁচজনে মিলে
খালিদ তখন খানা-পিনা করে নাক ডাকিয়ে দিবানিদ্রা দিচ্ছিল। পাহারাদার বললো, কী ব্যাপার? এখন সাহেবের সঙ্গে মুলাকাত হবে না। তিনি এখন শুয়েছেন। আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন, আর এই জেনেনা লোককে আমি অন্দরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর কোতোয়াল সাহেব ঘুম থেকে উঠলে তাকে আপনাদের মামলা জানাবেন।
ওরা পাঁচজন বৈঠকখানায় বসে রইলো, আর একটি খোজা এসে বুড়ি ডিলাইলাহকে প্রাসাদের অন্দরমহলে নিয়ে গেলো।
এক সদাশয় শুভ্বকেশ বৃদ্ধাকে এই সময়ে কোতোয়ালের কাছে আসতে দেখে কোতোয়াল-বিবি কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে, আপনার কী মামলা, মা? কেন এসেছেন তার কাছে?
বুড়ি হেসে বলে, না, আমার কোনও মামলা-মোকদ্দমার ব্যাপার নাই। খালিদ সাহেবের সঙ্গে আমার কথাবার্তা সব হয়ে গেছে। আমার স্বামীর বান্দা কেনা-বেচার ব্যবসা। তিনি কাজের তাগিদে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ান। এবার যাওয়ার আগে আমার কাছে পাঁচটা মামলুক রেখে বলে গেলেন ঘরে পয়সা কড়ি যা রেখে গেলাম, আমার দেশে ফেরার আগে যদি তা ফুরিয়ে যায়। তবে এই পাঁচটা বান্দা কোনও আমির বাদশাহর কাছে বিক্রি করে সংসার চালিও। খালিদ সাহেবকে বলতেই তিনি বললেন, পাঁচটাই তার দরকার। তাই ওদের আজ নিয়ে এসেছি। ওই দেখ মা, বৈঠকখানার বারান্দায় ওরা বসে আছেওই পাঁচটি আমার সেরা বান্দা। দারুন কাজের লোক। আর বুদ্ধি সুদ্ধিও ঢের!
খালিদ-বিবি জানলার পর্দার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখলো, সত্যিই পাঁচটিই বেশ ভালোজাতের মানুষ। বললো, তা কত দাম কিছু ঠিক হয়েছে মা?
বৃদ্ধ বেমালুম বলে ফেললো, এক হাজার দুশো দিনার-একেবারে জলের দাম। নেহাত বিপদে পড়েছি, পয়সাকডির দরকার তাই। না হলে বাজারে নিলামে তুললে অনেক বেশি ইনাম পাওয়া যেত।
আমির-বিবিরও তাই ধারণা। মাত্র বারোশো দিনারে এই রকম পাঁচ পাঁচটা ম্যামলুক মেলানো ভার। বাজারে গেলে, চাই কি, এক একটার দাম হাজার দিনার হাঁকবে।
খালিদ গৃহিণী আব্দর যত্নর মাত্ৰাটা একটু বাড়িয়ে দেয়। ইশারা করতেই একটি চাকরানী এসে এক গেলাস পেস্তার শরবৎ এনে রাখে। খালিদ বৌ বলে, মেহেরবানী করে চুমুক দিন। আচ্ছা মা, দাম নেওয়া ছাড়া কী আর কোনও দরকার আছে তার সঙ্গে? তিনি এইমাত্র খানা-পিনা সেরে শুয়েছেন। ঘুম থেকে উঠতে তো সন্ধ্যে হয়ে যাবে। এতক্ষণ কী আপনি অপেক্ষা করবেন? না, আমি দামটা দিয়ে দেব, নিয়ে যাবেন? পরে সময় মতো একবার এসে ভোট করে যাবেন?
বৃদ্ধার তীর অব্যৰ্থ। এইভাবেই সে তাকে গেঁথে ফেলতে চেয়েছিলো। বললো, পয়সা ছাড়া তো তার সঙ্গে আমার অন্য কোনও দরকার নাই, মা!
তা হলে আমি দেখি আমার কাছে আছে কিনা, থাকে। যদি আপনাকে দিয়ে দিই দামাটা। না হলে স্রেফ এই টাকাটার জন্যে আপনি এতোটা সময় বসে বসে হয়রান হবেন?
অন্য ঘরে চলে গেলো সে। কয়েক মুহূর্ত পরে একটা বটুয়া এনে বললো। কিন্তু পুরো বারোশো তো এখন হচ্ছে না, মা। এতে এক হাজার আছে!
প্রায় ছোঁ মেরেই থলেটা হাতে নিয়ে বুড়ি ডিলাইলাহ বলে, ঠিক আছে। এতেই আমার একটা দিন দিব্যি চলে যাবে। আমার ফেরার সময় হয়ে এসেছে।
কিন্তু আপনার আরও দুশো দিনার বাকী রয়ে গেলো যে মা?
তা থাক। ধরে একশো দিনার দিলাম তোমার শরবতের দাম। আর একশো না হয়। পরে কখনও নিযে যাবো।
খালিদ-গৃহিণী ভাবে, যাক, মুফতে দুশো দিনার বাণিজ্য হয়ে গেলো! ভাগ্যে খালিদ-সাহেব গতকাল তাকে টাকাটা দিয়েছিলো অন্য একটা সামান কেনার জন্য!
ধূর্ত বুড়ি এবার পলায়নের পথ খোঁজে।তা হলে মা, আমি আর অপেক্ষা করবো না। কিন্তু সদর দরজার সামনে আমার এতোদিনের চেনা-জানা-বান্দাগুলো বসে আছে। দিনে দিনে মায়া-মমতা জড়িয়ে গেছে, এখন এখানে ফেলে রেখে ওদের মুখের সামনে দিয়ে চলে যেতে আমার কলিজা ফেটে যাবে। তুমি বরং আমাকে খিড়কীর দরজা দিয়ে বের করে দাও মা।
খালিদ-গৃহিনী নিজে তাকে সঙ্গে করে খিড়কীর দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে বাইরে বের করে দেয়।
ডিলাইলাহ হন হন করে হেঁটে বাড়িতে ফিরে আসে। জাইনাব এসে হেসে জিজ্ঞেস করে, আজ আবার কাকে জগ দিয়ে এলে মা?
ডিলাইলাহ বলে আজ বড় মজার কাণ্ড করে এসেছি রে। সেই গাধার মালিক, রঙের আজ কোতোয়াল খালিদের বিবির কাছে এক হাজার দিনারে বেঁচে দিয়ে এসেছি। ওই কুৰ্ত্তার বাচ্চা গাধার মালিকটাই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। বার বার ছোঁড়াটাই আমাকে চিনে ফেলছে। এবারও ওরই জন্যে আমি ধরা পড়েছিলাম। আমাকে ধরতে পেরে ওদের কী আনন্দ! কোতোয়ালীতে নিয়ে গিয়ে তুললো। তা আমিও পাকাল মাছ। ওদের গায়ে কাদা লেপে দিয়ে পিছলে বেরিয়ে এসেছি। নে, এখন ঠ্যালা বোঝ। শয়তানের বেহদ্দ যখন শুনবে, ওদের জন্যেই তার হাজার দিনার খোয়া গেছে, তখন কী আর ওদের আস্ত রাখবে, ভেবেছিস!
জাইনাব এবার সত্যিই ভয়ে কেঁপে ওঠে, মা, ঢের হয়েছে, এবার ক্ষান্ত দাও, একেবারে সাক্ষাৎ কোতায়ালকে চোট করে এসেছে তুমি। ভেবেছো, সে তোমাকে ছেড়ে দেবে? কথায় আছে না স্যাকরার ঠিকঠাক কামারের এক ঘা। তুমি লোকের চোখে ধুলো দিয়ে দিনে দিনে যা সংগ্রহ করছে, খালিদ তোমাকে একবার কত্তজায় পেলে তার দশগুণ বের করে নেবে তোমার কাছ থেকে।
এইভাবে অনেক উপমা উদাহরণ দিয়ে মাকে নিরস্ত করার প্রয়াস করতে থাকলো জাইনাবি, অনেক হয়েছে। এই পয়সাই সারা জীবনে আমরা খেতে পারবো না। আর বেশি ঝুকি নিয়ে কাজ নাই। অতিলোভে তাতী নষ্ট!
এদিকে কোতোয়াল খালিদ নিদ্রা পরিহার করে যখন বাইরে এলেন, তার বিবি এসে তাকে সুখবরটি পরিবেশন করে বললো। খোদা মেহেরবান, আশা করি তোমার সুখ-নিদ্রা হয়েছে। তা, তুমি বেশ ভালো সওদা করেছে তো! কিন্তু আমাকে জানাও নি কেন গো?
খালিদ বোকার মতো বিবির মুখের দিকে তাকায়, ভালো সওদা? কীসের সওদা?
আহা, কী তোমার ভুলো মন, তুমি যে পাঁচ পাঁচটা ম্যামলুক বান্দা কিনেছো, সে কথা কী বেমালুম ভুলে বসে আছো?
বান্দা! আমি কোনও বান্দা ফান্দা কিনিনি কারো কাছ থেকে। কে তোমাকে এই সব আজগুবি খবর দিলো?
বা বা, বলিহারী তোমার স্মরণ শক্তি! একটা বৃদ্ধার কাছ থেকে তুমি বারোশো দিনারে পাঁচটা বান্দা কেননি? আজ তো, তুমি ঘুমিয়ে পড়লে সেই বুড়ি এসেছিলো, দেখ বাইরের বৈঠকখানায় বান্দাগুলো বসে আছে। তা জন্যে বসে থাকবে? কিন্তু যাই বলো, এতো সস্তাযেন একেবারে
থামো, গর্জে ওঠে খালিদ, বারশো দিনার দিয়ে দিয়েছে তাকে?
বৌটা বুঝতে পারে না, অন্যায়টা সে কী করেছে। বলে, হ্যাঁ।
কোতোয়াল আর এক তিল বসে না। প্রায় ছুটেই বাইরে চলে আসে। কিন্তু সেখানে সেই পাঁচটি প্রতারিত সন্তান ছাড়া অন্য কোনও নাফর বান্দাকে দেখতে পায় না সে। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ গোল করে খালিদ পাহারাদারকে প্রশ্ন করে, বান্দাগুলো কোথায়?
পাহারাদার বোকার মতো এদিক ওদিক তাকায়, জী বান্দা?
হ্যাঁ পাঁচটি বান্দা, তোমার মালকিন, আজ দুপুরে এক বৃদ্ধার কাছ থেকে কিনেছে। সেই পাঁচটা বান্দা কোথায়?
হুজুর, আমি তো তেমন কোনও খবর জানি না।
খালিদ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গী করে তাড়ফায়, আমি তো কোনও খবর জানি না- কিছুই যখন খবর রাখ না, তো এখানে সুরৎ-এর বাহার দেখাবার জন্যে থাকার কী দরকার? বিদেয় হও-যত্তোসব বোদর কা। বাচ্চা
পাহারাদার কাচুমাচু মুখে বলে, আপনি যখন ঘুমিয়েছিলেন, সেই সময় এই পাঁচজনের সঙ্গে এক বুড়ি এসেছিলো। সে-বুড়িকে আমি অন্দরে পাঠিয়ে দিয়েছি, হুজুর।
খালিদ বলে, ওঃ তোমরা? তা এখানে নবাবের মতো বসে আছো কেন? গতর তোলো? যাও কাজে হাত লাগাও। তোমাদের মালকিন আমার কাছে বিক্রি করে গেছে তোমাদের।
খালিদের কথা শুনে ওরা পাঁচজনে সোরগোল তুলে কেঁদে ওঠে। আপনার কেমন তরো বিচার হলো আমির সাহেব? আপনার নামে খলিফার কাছে নালিশ করবো আমরা। আমরা খলিফার অনুরক্ত প্রজা। নিয়ম মাফিক কর দিইআমরা স্বাধীন-মুক্ত মানুষ। আমরা কি নফর বান্দা যে, আমাদের নিয়ে কেনাবেচার বেসাতি করবেন? ঠিক আছে, আগে খলিফার কাছে চলুন, তারপর যা বিধি-ব্যবস্থা তিনিই করবেন।
গল্প থামিয়ে শাহরাজাদ চুপ করে গেলো। শারিয়ার দেখলো, রাত শেষ হয়ে আসছে।
চারশো তেতাল্লিশতম রজনীতে আবার শাহরাজাদ বলতে শুরু করে :
খালিদ গর্জে ওঠে, যদি তোমরা নফর বান্দা না হবে, তাহলে তোমরা কী? নিশ্চয়ই চোর ছ্যাচোর বদমাইশ গুণ্ডা? শয়তান বুড়িটার সঙ্গে সাঁট করে আমার বিবিকে ধোঁকা দিয়ে পয়সা বের করে নিয়েছ। আমি কী তোমাদের অত সহজে ছাড়বো, ভেবেছো? বিদেশী মুসাফীরদের কাছে প্রত্যেককে একশো দিনারে বেচে দেবো।
খালিদ আর পাঁচজন প্রতারিতের মধ্যে যখন এইরুপ বাকবিতণ্ডা বাচসা চলছে, এমন সময় খালিফার দেহরক্ষী শেরকা বাচ্চ মুস্তাফা সেখানে এসে হাজির হয়।
ইতিপূর্বে মুস্তাফা এসে তার বিবির প্রতারিত হওয়ার সমস্ত বিবরণ দিয়ে খালিদের কাছে এজাহার দিয়ে গিয়েছিলো। সে সম্পর্কে খালিদ কী হদিশ করতে পারলো কী পারলো না, তারই খোঁজ নিতে এসেছে সে।
সেইদিনের সেই ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়ত খাতুন তাকে খোঁচাচ্ছে, শুধু তোমার জন্যে আজ আমার এই দশা হলো। তুমি যদি আমাকে ভয় না দেখাতেঅন্য মেয়ে ঘরে আনবে বলে, তাহলে তো আমি সেই পীরের দরগায় যাওয়ার জন্যে বদমাইশ বুড়িটার সঙ্গে পথে বের হতাম না। তুমি যদি সে-দিন আমাকে নিষ্ঠুরভাবে আঘাত না করতে তা হলে এই সর্বনাশ আমার হতো না।
খালিদকে দেখামাত্র সে জ্বলে ওঠে, কী খালিদ, সেই শয়তান বুড়িটার খোঁজ পেলে?
খালিদ মাথা হোঁট করে থাকে। মুস্তাফা এবার গর্জে ওঠে, তুমি একটা অপদার্থ তোয়াল। সারা শহরটা চোর বদমাইশ-এর আস্তানা হয়ে গেলো, সে দিকে তোমার কোনও হুঁশ নাই। শুধু নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে! যেমন তোমার অপদার্থ পাহারা পেয়াদা তেমনি তোমার গোবর-ঠাসা মগজ। একেবারে অকস্মার টেকি। তা না হলে, সাত সকালে দিনের আলোয় খলিফার আমিরের বাড়িতে ঢুকে তার বিবিকে রাস্তায় বের করে নিয়ে সর্বস্ব লুটে নেবার সাহস হয় কী করে ঠগ চোরদের? আমার যা লোকসান হয়েছে, তার জন্যে আমি একমাত্র তোমাকেই দায়ী করবো।আর কাউকে জানি না আমি।
তখন বুকে সাহস পেয়ে পাঁচ প্রতারিতও চিৎকার করে ওঠে, আমির সাহেব, আমাদের সকলের অবস্থাও ঠিক একই রকম। আমরাও সেই ধূর্ত বুড়ির ধাপ্লায় ভুলে যথাসর্বস্ব খুইয়েছি। তারই নালিশ করতে এসেছিলাম। আমরা এই কোতোয়ালের কাছে-আর্জি ছিলো ন্যায্য বিচার।
-কীসের বিচার?
তখন পাঁচজনে প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতারিত হওয়ার করুণ কাহিনী শোনালো তাকে। আমির মুস্তাফা গম্ভীর হয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, হুম, তোমাদের দশাও দেখছি একই রকম। সবই এই কোতোয়ালের অকৰ্মণ্যতাকোনও গুরুত্বই সে বুঝতে পারেনি।
খালিদ বিনীত হয়ে বলে, আমির সাহেব, আপনার বিবির কাছে আপনি খাটো হয়ে যাচ্ছেন, এটা আমি বুঝি। আপনি খলিফার দরবারে এখন একজন জাঁদরেল আমির। এই সামান্য একটা ঠগ জোচ্চোরকে শায়েস্তা না করতে পারলে ইজৎ থাকে কী করে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমির সাহেব, আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি, যেনি-তেন প্রকারে সেই শয়তান বুড়িকেই আমি ধরবোই।
আমির তাচ্ছিল্য দেখিয়ে বলে, তোমার কেরামতী আর দেখতে চাই না। আমি নিজেই এর ব্যবস্থা করছি। আচ্ছা শোনো, মুস্তাফা প্রতারিত পাঁচজনের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাদের মধ্যে কেউ আছ যে, বুড়িটাকে দেখলে চিনতে পারবে?
সবাই সমস্বরে বলে, আমরা সকলেই তাকে চিনতে পারবো, হুজুর।
গাধার মালিক বিশেষভাবে বলে, হাজারটা শয়তানীর মধ্যেও যদি সে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে, আমি তাকে এক নজরেই টেনে বার করতে পারবো। আমি বলি কি, হুজুর, আমার সঙ্গে আপনি মেহেরবানী করে জানা-দশোক সিপাই দিন। তারপর দেখুন, আমি তাকে আপনার কাছে হাজির করতে পারি কি না।
সঙ্গে সঙ্গে দশজন সিপাই সঙ্গে দিয়ে ওদের পাঁচজনকে, শয়তান বুড়িটাকে পাকড়াও করে আনার উদ্দেশ্যে, পাঠানো হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুড়ির সন্ধানও তারা পেয়ে গেলো। ওদের দেখামাত্র উর্ধশ্বাসে পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু সিপাইরা তাকে ধরে ফেলে। পিঠামোড়া করে বেঁধে কোতোয়ালের কাছে নিয়ে আসে।
কোতোয়াল খালিদ গর্জে ওঠে, চুরির মাল-পত্র সব কোথায় রেখেছে?
ডিলাইলাহ অবাক হওয়ার ভান করে বলে, জীবনে আমি কারো একটা কুটো চুরি করিনি। বুঝতেই পারছি না, কেন আমাকে ধরে এনেছেন। আপনি?
খালিদ ক্ৰোধে কাঁপতে থাকে, বুঝিয়ে আমি দিচ্ছি। এ্যাই, এই মেয়েছেলেটাই আজকের রাতের মতো কয়েদখানার আঁধার ঘরে বন্ধ করে রাখি।
কিন্তু কয়েদখানার সর্দার বললো, আমাকে মাফ করবেন, হুজুর, আমি পারবো না?
খালিদ চিৎকার করে ওঠে, কেন, কেন পারবে না?
সর্দার বলে, এই বুড়ির ছলচাতুরী বড় মারাত্মক। সে যে কী ভাবে আমার লোকজনদের চোখে ধুলো দিয়ে হাওয়া হবে, তা কেউ জানে না। তাই আমি এতো বড় ঝুঁকি কাঁধে নিতে পারবো না, হুজুর।
খালিদ গুম মেরে গেলো কিছুক্ষণ। তারপর পঞ্চ প্রতারিতদের প্রতি নির্দেশ করে বললো, ঠিক আছে, আজ সারারাত একে তোমরা সকলে মিলে পাহাড়া দেবে। তারপর কাল সকালে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। চলো, বুড়িটাকে আমরা বাগদাদ শহরের সীমানার বাইরে গিয়ে একটা খুঁটির সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রাখি।
খালিদ ঘোড়ায় চাপলো। সিপাইরা বুড়ি ডিলাইলাহকে টানতে টানতে নিয়ে চললো। শহরের প্রাচীর সীমা পার হয়ে একটা ফাঁকা জাযগায় একটা খুঁটি পুঁতে তার সঙ্গে ডিলাইলাহর চুল জড়িয়ে বাঁধা হলো। তারপরই পাঁচজন প্রতারিতকে পাহারায় মোতায়েন করে বাকী লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে কোতোয়াল ফিরে এলো তার বাড়িতে।
সবাই মিলে, বিশেষ করে গাধার মালিক বুড়ির আদ্যশ্ৰাদ্ধ করতে লাগলো। যত রকম মুখ খারাপ করে গালাগাল, খিস্তি খেউর। সম্ভবকিছুই বাদ করলো না।
কিন্তু কতক্ষণ আর এইভাবে এক ঘেয়ে গালিগালাজ করে কাটানো যায়। গত কয়েকটা দিন বুড়ির সন্ধানে ঘুরে ঘুরে সকলেই ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। এদিকে রাত বাড়তে থাকে। ওদেরও চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। খানাপিনা শেষ করে নেয় সকলে। তারপর আর একদণ্ড তারা চোখ মেলে থাকতে পারে না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
নিশুতি নিঃঝুম রাত। ডিলাইলাহকে বৃত্তাকারে ঘিরে পড়ে পড়ে নাক ডাকতে থাকে সেই পঞ্চ-প্রহরী। তখনও কিন্তু ধূর্ত বুড়ি জেগে। রাত আরও গম্ভীর হতে থাকে। হঠাৎ ডিলাইলাহ দেখলো, দুটি দস্যু ঘোড়ায় চেপে এইদিকে আসছে। রাতের নিস্তব্ধতায় ওদের অনুচ্চ আলোপও বেশ পরিষ্কার শুনতে পায় সে।
একজন বলছেঃ আচ্ছা ভাইসোব এই সুন্দর বাগদাদ শহরে সব চাইতে মজার কাজ তুমি কী করেছে?
রাত্রি শেষ হয়ে আসছে দেখে শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।
চারশো চুয়াল্লিশতম রজনীতে আবার সে বলতে থাকে :
-আল্লাহর দোয়ায় আমি আমার সব চাইতে পেয়ারের খানা বেশ পেট ভরে খেয়েছি। খুব খাটি মধু-মাখানো পিঠে আর মাখন আমার খুব প্রিয় খাদ্য। এখনও তার সুবাস নাকে লেগে রয়েছে।
এই সময় তারা ডিলাইলাহর আরও কাছে এসে পড়ে।
কে তুমি? এখানে এসেছে কেন?
ডিলাইলাহ গলায় মধু ঢেলে প্রার্থনার ভঙ্গীতে বলে, শেখ সাহেব, আপনারা আমাকে বাচন।
আরব দস্যদের একজন বলে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান তাকে ডাকো। তিনিই একমাত্র রক্ষাকর্তা। কিন্তু এই খুঁটির সঙ্গে কে তোমাকে বেঁধে রেখেছে?
তা হলে আমার দুঃখের কাহিনী শুনুন মুসাফির, আমার একটি দুশমন আছে। সে মধু দিয়ে পিঠে আর মাখনের মিঠাই বানাতে ওস্তাদ। সারা বাগদাদ শহরে এইজন্যে তার খুব নাম-ডাক। তার মতো জিভে জল আনা মধু আর সরের মিঠাই আর কেউই বানাতে পারে না। এই লোকটা আমাকে একদিন খুব মারধোর করেছিলো। তারই প্রতিহিংসায় জ্বলছিলাম আমি। ওর দোকানে গিয়ে মিঠাই মণ্ডার বারকোষে থুথু ছিটিয়ে দিলাম। কোতোয়ালের কাছে সে আমার নামে নালিশ করেছিলো। তারই সাজা হিসেবে সে আমাকে এই খুঁটিতে বেঁধে রেখে গেছে। একমাত্র একটা শর্তেই সে আমাকে খালাস দিতে পারে। সে হলো কোতোয়ালের সামনে দশখানা থালা-ভর্তি মধু-পিঠা খেতে হবে। যতদিন আমি তা খেতে না পারবো, ততদিন আমাকে এইভাবে সাজা পেতেই হবে। সকাল হতে না হতেই কাল আমার সামনে দশথালা মধু-পিঠা এনে ধরা হবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন শেখ সাহেব, কোনও মিঠাই-এর গন্ধ আমি বরদাস্ত করতে পারি না। বমি এসে যায়। বিশেষ করে মধুর পিঠা দেখা মাত্র আমার কাঁপুনী দিয়ে জ্বর আসে। অথচ ভাবুন, অখাদ্য খাবার একটা দুটো নয়, দশ-দশ থালা আমাকে উদারস্থ করতে হবে। তবে আমি ছাড়া পাবো! ইয়া আল্লাহ, আমার কপালে আরও কদিন এই সাজা লেখা আছে একমাত্র তুমিই জান। না খেয়ে খেয়ে একদিন এখানেই আমাকে শুকিয়ে মরতে হবে।
বাদাবী-দস্যু টোপ গিললো, আমরা আরব, তুমিও আরব। তোমার দুঃখে আমাদের বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা বাগদাদ শহরের নামজাদা মধু-পিঠের লোভেই এখানে এসেছি। আর সেই পিঠের গন্ধ তুমি সহ্য করতে পার না? যাই হোক, তোমার কষ্ট দেখে আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে। যদি চাও, তবে তোমার হয়ে আমরা তোমার পিঠেগুলো উদারস্থ করতে পারি।
কিন্তু ওরা তো আপনাদের তা খেতে দেবে না। কোতোয়ালের হুকুম আছে, শহরের বাইরে একটা খুঁটিতে বাধা আছে যে, তাকে খাওয়াতে হবে দশথালা মধুর পিঠা। মধু-পিঠা যদি খেতে চান তবে এই খুঁটিতে বাঁধা থাকতে হবে।
বাদাবীদের একজন অপরজনকে বললো, আমি তো অনেক মধুর পিঠে খেয়ে পেট ডাই করে এসেছি। আমি চলি, তুমি বরং খাও।
সে চলে গেলো। অন্য বাদাবীটা তখন বললো, কিন্তু আমি যদি তোমার জায়গায় বাধা হয়ে থাকি, তবে তো, কাল সকালে কোতোয়ালদের লোক এসে আমাকে দেখে চিনে ফেলবে। তারা ভাববে, মেয়েছেলেটা গেলো কোথায়?
ডিলাইলাহ বললো, আমিও সে-কথা ভেবেছি। শুনুন, আপনি আপনার সাজপোশাক আমাকে দিন, আর আমি আমার এই সাজপোশাক আর বোরখা আপনাকে ছেড়ে দিচ্ছি। বোরখায় তো আপনার সর্বাঙ্গ ঢাকাই থাকবে। ওরা চিনবে কী করেআপনি পুরুষ না মেয়ে?
বাদাবী বললো, হুঁ, ঠিক বলেছো।
তারপর দুজনে পরস্পরের সাজপোশাক বদলে নিলো। বাদাবীর পোশাক পরে ডিলাইলাহ ঘোড়ার পিঠে লাফিয়ে উঠে বসে। আর বাদাবী ডাকাতটা বোরখা পরে সেই খুঁটিটার সঙ্গে নিজেকে, শক্ত করে বাঁধে।
সকাল হতে পঞ্চ-প্রহরীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। গাধার মালিক এগিয়ে গিয়ে বন্দীকে প্রশ্ন করে, কী গো বুড়ি, তোমার ঘুমটুম কেমন হলো?
বাদাবীটা তার কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে হেঁড়ে গলায় প্রশ্ন করে, মেরা পিঠা কঁহা, পিঠা লে আও।
এ্যাঁ! যে পুরুষ মানুষের গলা! একি হলো?
গাধার মালিক প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে, এখানে তুমি কী করছো? আর বুড়িটাকেই বা ছেড়ে দিলে কেন?
কিন্তু বাদাবী দস্যু সে কথার জবাব দেয় না। তার সেই এক কথা। আমার পিঠে কোথায়, জলদি নিয়ে এসো। আমার বডড খিদে পেয়ে গেছে। সারাটা রাত আমার কিছুই খাওয়া হয়নি। সুতরাং ঝটপট নিয়ে এসো।
গাধার মালিক তবু প্রশ্ন করে, বুড়িটা গেলো কোথায়?
তাকে আমি ছেড়ে দিয়েছি। সে তো মধু-পিঠে খেতে পারবে না। খামোকা তাকে আটকে রেখে কী লাভ? তাই আমি তাকে খালাস করে দিয়েছি।
পঞ্চ-প্রতারিত বুঝতে পারে, এই দুর্ধর্ষবাদাবী ডাকাতকেও বুড়িটা প্রতারণার ফাঁদে আটকে রেখে হাওয়া হয়ে গেছে। ওদের চোখে মুখে হতাশার করুণ ছবি ফুটে ওঠে। কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে, আল্লাহ যাকে ছেড়ে দেবে, মানুষ তাকে কী বেঁধে রাখতে পারে?
এরপর কী করা যায়, কী তারা বলবে কোতোয়ালের কাছে, তাই ভেবে সবাই তখন আকুল। এমন সময় ঘোড়ায় চেপে কোতোয়াল এসে হাজির হলো সেখানে। তার সঙ্গে একদল সশস্ত্ব সিপাই।
বাদাবী তখন কোতোয়ালকে উদ্দেশ্য করে হুঙ্কার ছাড়ে, কই, আমার মধুর পিঠে কোথায়?
খালিদ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, কী ব্যাপার, সব কী? বুড়িটা কোথায় গেলো? তো একটা দামড়া।
পঞ্চ-প্রহরী মাথা চুলকায়, বলে, এই হচ্ছে নসীব। ধূর্ত বুড়িটা এই বাদাবীকে বোকা বানিয়ে এখানে বেঁধে রেখে সে তার ঘোড়া নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে। আপনার দোষেই সে আজ পালিয়ে গেলো। চলুন, আপনাকে আমরা খলিফার দরবারে নিয়ে যাবো। আপনি যদি জনকয়েক সিপাই আমাদের সঙ্গে দিতেন, সে তো এইভাবে পালাতে পারতো না। সুতরাং এর জন্যে একমাত্র আপনিই দায়ী। আপনি কী ভেবেছিলেন, আমরা আপনার কেনা গোলাম? সারারাত জেগে আপনার হুকুম তামিল করবো?
তখন খালিদ বাদাবীকে জিজ্ঞেস করে, ব্যাপার কী বলে তো? তুমি এখানে এলে কী করে?
বাদাবী-দস্যু সমস্ত কাহিনী খুলে বললো তাকে।
আমাকে সে বলেছে, এখানে এই খুঁটিতেই বাঁধা থাকলে সকাল বেলায় থালা-থালা ভর্তি মধু-পিঠে আর মাখন পিঠে খেতে পাওয়া যাবে। তা সকাল তো অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। কোথায়, আমার পিঠে কোথায়, নিয়ে এসো।
বাদাবীর কথা শুনে খালিদ আর তার সিপাইরা হেসে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু পঞ্চ প্রতারিতরা রাগে গরগর করতে থাকে।
ওসব হাসি-টাসি রাখুন। এখন খলিফার কাছে যেতে হয়ে আপনাকে। আমরা এর একটা বিহিত চাই।
বাদাবীটা তখন তড়পাতে থাকে, এখনও বলছি, ওসব ধোঁকাবাজী ছাড়ো, মধু-পিঠা নিয়ে g[तीं।
কিন্তু তার কথায় কেউ- কৰ্ণপাত করলো না। সবাই শুধু হাসতে থাকে। অবেশষে বাদাবী বুঝতে পারে, বুড়িটা তাকে ধোঁকা দিয়ে তার সাজ-পোশাক আর ঘোড়াটা নিয়ে কেটে পড়েছে। মধু-পিঠা আর মাখন-পিঠার গল্পসব বানানো।
খালিদ দেখলো, মামলা বড় জটিল আকার ধারণ করছে। অবস্থায় কানে তুলো দিয়ে বসে থাকলে ভবিরা ভুলবে না। তাই সে বাধ্য হয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে খলিফার দরবারে এসে হাজির হয়।
রাত্রি শেষ হতে চলেছে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
চারশে পায়তাল্লিশতম রজনী। শাহরাজাদ। আবার কাহিনী শুরু করে :
খলিফার সাক্ষাৎ মঞ্জুর হলো। খালিদ তার দলবল নিয়ে দরবার-কক্ষে প্রবেশ করে। খলিফা হারুন অল রসিদ তখতে আসীন। তার একপাশে দেহরক্ষী মুস্তাফা দণ্ডায়মান। উজির আমিরে ঠাসা পরিপূর্ণ দরবার মহল।
খলিফা নিজেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলেন। প্রথমে তিনি সেই গাধার মালিককে জেরা করতে শুরু করলেন। এবং শেষ করলেন কোতোয়াল খালিদকে দিয়ে। প্রত্যেকে যে-যার কাহিনী বলে গেলো। খলিফা হারুন অল রসিদ বিষম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।
তাজ্জব কাণ্ডকারখানা! যাইহোক, আবার পূর্ব-পুরুষদের সুনাম যাতে রক্ষা হয়, সে-জন্য যার যা খোয়া গেছে সবই পূরণ করে দেওয়া হবে আমার ধনাগার থেকে। গাধার মালিক তার গাধা পাবে। সওদাগর পাবে হাজার দিনারের বটুয়া, রঙের কারবারীর দোকানের যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করে দেবো আমি। ইহুদী জহুরীর সোনাদানা যা গেছে, তাও সে পাবে। নাপিতের জন্য একটা দোকান তৈরি করে দেওয়া হবে, আর এই বাদাবীসেও ফেরত পাবে তার সাজ-পোশাক এবং একটি আরবী ঘোড়া। ছাড়াও তাকে দিতে হবে দশখানা থালা-ভর্তি বাগদাদের বিখ্যাত মধু-পিঠা। খেয়ে যাতে তার প্রাণ ভরে যায়। কিন্তু সবার আগে আমার হুকুমসেই বুড়িটাকে আমার সামনে হাজির করতে হবে। শোনো খালিদ এবং মুস্তাফা, তোমরা এখন বেরিয়ে পড়। আজ সন্ধ্যার আগে সেই বুড়িকে এখানে ধরে নিয়ে এসো। তারপর আজ রাতে আমার এইখানেই খানা-পিনা করবো। কিন্তু খালি হাতে ফিরবে না। মনে রেখে রাতের খানা তোমাদের এখানেই খেতে হবে। যাও, এই আমার হুকুম।
আমির খালিদ প্রমাদ গুনলো। খলিফার এই কথার অর্থ সে ভালোভাবেই জানে। নিজের ক্ষমতা জানিয়ে সে নিস্কৃতি চায়, আমাকে রেহাই দিন, জাঁহাপনা। কাজ আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। ধূর্ত শয়তানীকে কাজায় আনা আমার কম্মো নয়। যে কী-ভাবে কখন চোখে ধুলো দিয়ে বুড়বাক বানিয়ে হাওয়া হয়ে যাবে তা কল্পনারও অতীত। মেহেরবানী করে ভার আপনি অন্য কাউকে দিন। আমি পারবো না।
খলিফা হো হো করে হেসে উঠলেন। তাহলে আর কোতোয়াল হয়ে বসে থেকে কী করবে। অন্য কোনও কাজ দিতে হবে তোমাকে, কী বলো?
খালিদ বলে, ধর্মাবতার! আপনার সুযোগ্য দক্ষিণ হস্ত শহরের সেরা সিপাই-প্রধান আহমদকেই এই দায়িত্ব দিন। আমার মনে হয় তার চোখে ফাঁকি দিয়ে সে বুড়ি নিস্তার পাবে না। তার বিচক্ষণতা এবং বেতন আমার চেয়ে অনেক বেশি। কাজ তারই উপযুক্ত। এতোদিনে সে শুধু আপনার কাছ থেকে দামী দামী উপহার মোটা অঙ্কের ইনাম নিয়ে আসছে। কাজের নমুনা কিছুই দেখায়নি। এবার তাকে এই ভারটা দিন, জাঁহাপনা। তারপর বোঝা যাবে তার এলেম।
খলিফা মাথা নাড়লেন, ঠিক, ঠিক বলেছে খালিদ। কই, আহমদ, এদিকে সামনে এসে দাঁড়াও।
তৎক্ষণাৎ আহমদ খলিফার সামনে এসে আভূমি আনত হয়ে কুর্ণিশ করে দাঁড়ালো।মহামান্য ধর্মাবতার, আপনার আজ্ঞা আমার শিরোধাৰ্য, আদেশ করুন, জাঁহাপনা!
শোনো আহমদ, খলিফা বলতে থাকেন, ধূর্ত ঠগ বুড়ি মেয়েছেলে এই বাগদাদ শহরের নিরীহ মানুষকে প্রতারণা করে বেড়াচ্ছে। সে-সব কাহিনী তুমিও নিশ্চয়ই এখানে শুনেছো। এখন আমার কথা হচ্ছে, ধরনের ব্যাপার আমার শহরে চলতে দিতে পারি না। আমি তোমাকে ভার দিচ্ছি, যে ভাবে পারো আজই মেয়েছেলেটাকে আমার সামনে হাজির কর।
আহমদ আর বিলম্ব করলো না। চল্লিশজন সিপাই ঘোড়-সওয়ার নিয়ে সে শহরের পথে বেরিয়ে পড়লো। বাদাবী দাসু এবং সেই পঞ্চ প্রতারিতরা দরবারেই রয়ে গেলো।
আহমদের প্রধান সাগরেদ চল্লিশ সিপাই-এর সর্দার আলী। এইসব তল্লাসী এবং গ্রেপ্তারে মহা-ওস্তাদ। তার প্রধান কারণ এক সময়ে সে- চোর ডাকাত দলের পাণ্ডা ছিলো। আটঘাট তার সবই নখদর্পণে। সে বললো, আহমদ সাহেব বুড়িকে পাকড়াও করা খুব একটা সহজ কাজ হবে মনে করবেন না। সারা বাগদাদে অমন হাজার-হাজার বুড়ি মেয়েছেলের দেখা পাবেন আপনি। তার মধ্যে কে যে শয়তানী কী করে ধরবেন? আহমদ পাল্টা প্রশ্ন করে, তাহলে কী করবে, ভাবছো?আমার মনে হয় কী জানেন, বিষয়ে হাসান সাহেবের যুক্তি-পরামর্শ নিলে ভালো হতো। তাঁর মাথায় অনেক ভালো বুদ্ধি খেলে। এই ধরনের ধূর্ত শয়তান ঠগদের সেই কাবু করতে পারবে। কারণ আমরা বরাবরই ডাকাতি রাহাজানি ছিনতাই লুঠপাঠ করে কামিয়েছি, আর হাসান সাহেব তো পয়সা কামিয়েছেন লোককে ধোঁকা দিয়ে, ঠকিয়ে, চালাকী করে, বুদ্ধি খাটিয়ে। সুতরাং ব্যাপারটা তিনিই ভালো রপ্ত করতে পারবেন।
না না না, আহমদ প্ৰায় চিৎকার করে ওঠে, এতোবড় নাম কেনার সুযোগ যখন আমার কপালে জুটেই গেছে সে সৌভাগ্যের বখরা আমি অন্য কাউকে দিতে চাই না।
এই সময় তারা চলতে চলতে হাসানের বাড়ির সামনে এসে পড়েছিলো। কিন্তু আহমদের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নাই। সে গলা ফাটিয়ে তখনও বলে চলেছে, একটা বুড়িকে পাকড়াও করা এমন কী শক্ত কাজ! অথচ তার জন্যে দরবারে আমার কী ইজ্জত বাড়বে একবার ভাবে তো! আর এই জিনিসের ভাগ দেবো। আমি হাসানকে? সে কখনো হতে পারে না।
আহমদের অশ্বারোহী বাহিনীর খুরধ্বনি শুনে সে জানলার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো। সেখান থেকেই সে আহমদের সব কথা স্পষ্ট শুনতে পেলো। মনে মনে ভাবলো, ঠিক আছে আহমদ, তুমি আজ খলিফার বড় পেয়ারের লোক হয়েছে। কিন্তু আমারও নাম হাসান, দেখি তোমার দৌড় কতদূর।
শহরের মাঝখানে এসে আহমদ তার সেপাইদের চারভাগে বিভক্ত করে শহরের চারদিকে অনুসন্ধান করতে পাঠিয়ে দিলো। বললো, তোমরা তল্লাসী চালিয়ে সবাই মুস্তাফার বাড়ির গলির মুখে চলে আসবে সবাই। আমি সেখানে অপেক্ষা করবো।
নিমেষের মধ্যে সারা শহরময় রটে গেলো; আহমদের সিপাইরা শহরেরবাড়ি বাড়ি খানাতল্লাসী করে সেই ধূর্ত বুড়িকে গ্রেপ্তার করতে বেরিয়েছে। কথাটা ডিলাইলাহ জাইনাবের কানে পৌঁছতেও দেরি হয় না। জাইনাব বলে মা, এখন কী উপায় হবে?
ডিলাইলাহ বলে, ঘাবড়াসনে বেটা, কিছু ভয় নাই। আমি খবর পেয়েছি, আহমদের সঙ্গে হাসান নাই। সে একা তার দলবল নিয়ে বেরিয়েছে। এই আহমদটা একটা মাথা-মোটা। ঘটে এক ফোটা বুদ্ধি নাই, ওকে আমি আদৌ ডরাই না। হ্যাভয়ের কথা হতো, যদি হাসান ওর সঙ্গে থাকতো। লোকটা মহা ঠগবাজ। আর লোক ঠকাতে গেলে মগজে বুদ্ধি ধরতে হয়। তা তার আছে। সেইজন্যেই ওকে আমার ভয় ছিলো। খলিফা। যদি আমাকে পাকড়াও করার জন্য হাসানকে ভার দিত, আমি বলতে পারি। আমাকে সে গ্রেপ্তার করতে পারতো। কিন্তু আহমদের চৌদ্দ পুরুষেরও সাধ্যি হবে না, আমাকে কাজ করতে। তবে আজকে আমার শরীরটা ভালো নাই বাছা, আমি আর পথে বেরুবো না। এক কাজ কর, আজ তুই একটু খেল দেখিয়ে দে ওদের। প্রমাণ করে দে দেখি, মা-এর চেয়ে মেয়ে কিছু কমতি যায় না! চল্লিশটা সিপাইকে এমন শিক্ষা দিতে হবে যা তারা জীবনে ভুলতে পারবে না। কী, পারবি না?
জাইনাব হাসে, তোমার দেয়া থাকলে কোন কাজ আটকায়, মা? রাত্রি শেষ হয়। অন্ধকার কেটে আসে শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
চারশো ছেচল্লিশতম রজনীতে আবার কাহিনী শুরু করে সে :
জাইনাবের শরীর খানা সাপিনীর মতো লকলকে। গভীর আয়ত টানাটানা চোখ, সুন্দর মুখের গড়ন, উদ্যত বুক, সরু কোমর, ভারী নিতম্ব। এক কথায় কামনার বহ্নিশিখা। খুব জমকালো সাজ-পোশাকে সাজগোজ করলে সে। আর খুব পাতলা রেশমী বোরখায় ঢাকিলো তার অঙ্গ। বলা যায়, আরও বেশী করে দেখাবার জন্য, প্রলুব্ধ করার জন্যই এই ঢাকনা পরলো সে। এই রকম মোহিনী মূর্তি ধরে মায়ের কপালে চুমু খেয়ে সে বললো, মা আমার এই কুমারী যৌবনের কসম খেয়ে তোমাকে বলছি, চল্লিশটা সিপাইকে আজ আমি বাঁদর নাচ নাচাবো, তবে ছাড়বো।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে সোজা মুস্তাফার বাড়ির দিকে রওনা হলো। মুস্তাফার বাড়ির কাছাকাছি মসুলের হজ করিমের শরাবখানা। দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলো সে। জাইনাব মিষ্টি করে হাসির বান ছুঁড়লো তার দিকে।
হজ করিম ধন্য হয়ে গেলো। সে বারবার মাথা হেলিয়ে তাকে স্বাগত জানাতে থাকলো। জাইনাবি কাছে এগিয়ে গিয়ে হজ করিমের হাতে পাঁচটা দিনার গুঁজে দেয়।
এই পাঁচটা দিনার রাখুন করিম সাহেব। আমি আপনার বড় ঘরটা এক দিনের জন্য ভাড়া নিচ্ছি। আমার কিছু ইয়ারদোস্তারা ফুর্তি করতে আসবে।সেইজন্যে আপনার কাছে আমার আর্জি, এই একটা দিনের জন্য আপনি আপনার উটকো খদেরদের ঢোকাবেন না। আপনার কোনও লোকসান হবে না, সে ভরসা আপনাকে দিচ্ছি।
হজ করিম বললো, শুধু আপনার জন্য, আপনার সুন্দর চোখের জন্য আমি আপনাকে মাঙনায় ঘরখানা ছেড়ে দিচ্ছি। শুধু আমার একটা অনুরোধ, আপনার মেহেমানদের আপ্যায়ন করার জন্য শরাব খাওয়াতে কাপণ্য করবেন না।
জাইনাব হেসে বলে আমার দোস্তারা এক একটা মদের পিপে। শরাবে তাদের অরুচি নাই।
আপনার দোকানে যত মন্দ আছে সবই সাবাড় করে দেবে তারা।
এই বলে জাইনাব আবার নিজেরবাড়ি ফিরে যায়। সেখানে বাধা ছিলো সেই ছেলেটার গাধা আর বাদাবীর ঘোড়া। সে ভাড়া নিয়ে তাদের পিঠে বোঝাই করে গালিচা, আসন, তাকিয়া, পেয়ালা, পিরিচ এবং অন্যান্য সাজ-সরঞ্জাম। তার পর আবার ফিরে আসে হজ করিমের শরাবখানায়।
সে খুব কায়দা করে সরাইখানার সদর দরজা থেকে আরম্ভ করে ভিতরের ঘর পর্যন্ত চমৎকারভাবে সাজায়। ঘরের মেজেয় দামী গালিচাখানা বিছিয়ে দেয়। আর বড় বড় মদের বাহারী ঝারি বসিয়ে দেয় সদর দরজায় দুইপাশে। তার সঙ্গে নানারকম লোভনীয় বাদশাহীখানার রেকবীও থরে থরে সাজিয়ে রাখে। সেখানে। নিজেও দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আহমদের দশজন অশ্বারোহী সিপাই এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে আহমদের প্রধান সাগরেদ আলীও ছিলো। তার সাজগোজ একেবারে জাঁদরেল সেনাপতির মতো। নজন অনুচরকে সঙ্গে নিয়ে সে শরাবখানার ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে, ক্ষিপ্র হাতে জাইনাব তার মুখের নাকাব সরিয়ে দেয়। আলী অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়, তুমি এখানে কী করছে খুকি?
আলীর শরীরে রক্ত চনমান করে ওঠে। মেয়েটার দেহে যাদু আছে। জাইনাব বলে, আপনিই কী কাপ্তান আহমদ?
খোদা হাফেজ, না। আমি নই। কিন্তু আমি ওই সিপাইদলের সেনাপতি। আমার নাম আলী। তাঁ, আহমদকে খুঁজছো কেন? শোনো সুন্দরী, তোমার জন্য আমি যা করতে পারি, স্বয়ং আহমদ তা করতে পারবে না। বলো তোমার কী চাই?
জাইনাব ফিসফিস করে বলে, আপনিই তো জাঁদরেল, কেন পারবেন না। আপনি? নিশ্চয়ই পারবেন। তা এখানে দাঁড়িয়ে রইলেন কেন? চলুন ভিতরে চলুন। একটু আরাম করবেন।
জাইনাব দশজনকেই সঙ্গে করে বড় ঘরের ফরাশে নিয়ে গিয়ে বসায়। গোল হয়ে বসে সকলে। তাদের ঠিক মাঝখানে একটা বিরাট বড় মদের ঝারি বসিয়ে দেয় সে। এই ঝারির শরাবে সে মিশিয়ে রেখেছিলো এক ঢেলা আফিং। পর পর দু পোয়ালা পেটে যেতেই বাছাধনীরা ওর গায়ে ঢলে পড়লো। তারপর পালকের মধ্যেই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলো তারা। জাইনাব তাদের পা ধরে হিডি হিডি করে টানতে টানতে নিয়ে গেলো খিডিকীর দরজায়। দরজা খুলে ওদের গড়িয়ে দিলো কদমাক্ত নোঙরা আস্তাবলে। এইভাবে এক এক করে সবাইকে টেনে নিয়ে এসে সে গাদা করে রাখলে সেখানে।
এরপর আবার সে ফরাশ-টরাশ ঠিকঠাক করে ঝেড়ে-পুছে আবার এসে দাঁড়ালো সদর দরজার পাশে। কিছুক্ষণ বাদে আরও দশজন আহমদের সিপাই এসে দাঁড়ায় সেখানে। ঠিক একই কায়দায় তাদেরও কুপোকাৎ করে একইভাবে শরাবখানার পিছনে গাদা দিয়ে রেখে দেয় সে। এইভাবে তৃতীয় এবং চতুর্থ বাহিনীর কুড়িজনকেও সে চোখের বাণ মেরে, আফিং-মেশানো মদ খাইয়ে অচৈতন্য করে শরাবখানার পিছনে গাদা করে রেখে আসে।
জাইনাব আবার ঘরটা সাজিয়ে গুছিয়ে সদরে এসে দাঁড়ায়। আসল মক্কেল এখনও আসেনি। কিন্তু জাইনাব জানে, ফাঁদ যখন সে পেতে বসে আছে, আসতে তাকে হবেই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকট হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দাঁড়ালো সে। তার চোখ দুটো ভাটার মতো জ্বলছিলো। চোয়াল পাথরের মতো কঠিন হয়ে উঠেছিলো। ইয়া বড় হাতের চাবুকখানা বাঁই বাঁই করে ঘোরাতে ঘোরাতে সে গর্জে ওঠে, কোথায় সেই সব কুত্তার বাচ্চাগুলো।
ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নেমে পড়লো আহমদ। শরাবখানার দেয়ালের একটা গজালে লটকে দিলো লাগামটা। আমি তাদের তো এই রাস্তার মুখটায় জড়ো হয়ে থাকতে বলেছিলাম। তা শরাব-এর লোভ আর ছাড়তে পারেনি বেল্লিকরা। একেবারে নেশায় বুদ হয়ে গেছে।
জাইনাব দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে এমন মায়াবিনীর হাসি হাসে, তার টাল আর সামলাতে পারে না বেচারা আহমদ। ওর চোখ দুটো চেটে চেটে খেতে থাকে জাইনাবের কামলোভাতুর শরীরখানা। তাক বুঝে জাইনাবের সরু কোমরখানা দুলে ওঠে। তার ভারী নিতম্ব আর কচি কদু-সদৃশ স্তনদুটি আহমদের বুকের রক্তে তুফান তুলে। চোখের বিদ্যুৎ হেনে জাইনাব এক অপূর্ব লাস্যময়ী ঢং করে জিজ্ঞেস করে, কার কথা বলছেন, মালিক?
আহমদের অবস্থা তখন সপ্তমে। বুকের রক্তে নাচন ধরেছে। মাথা বিমঝিম করছে, সারা শরীর কেমন শিরশির করছে।
জাইনাব তখন দুই পা ফাঁক করে এমন একটা অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গী করে দাঁড়িয়েছে যা দেখে আহমদের সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। কোনও রকমে বলতে পারে, আমার চল্লিশজন সিপাই এখানে আসার কথা ছিলো, কিন্তু সুন্দরী, আমি বুঝতে পারছি না, তারা এখনও এলো না কেন? কিম্বা এসে তোমার দোকানে ঢুকে মদ গিলতে শুরু করেছে কিনা?
জাইনাব একদম সামনে নেমে এসে আহমদের হাত ধরে ওপরে তুলতে তুলতে বলে, আপনি ভিতরে বিশ্রাম করুন। আপনার চল্লিশজন সিপাই- এসেছিলো। আপনার জন্যে অপেক্ষাও করছিলো। হঠাৎ ওরা দেখতে পেলো, রাস্তার ওপাশ দিয়ে ডিলাইলাহ বুড়ি হন।হন। করে পালাচ্ছে। তাই সবাই তার পিছনে ধাওয়া করেছে। আপনার প্রধান সাগরেদ। আলীসাহেব আমায় বলে গেছেন, আপনি আসবেন। আপনি এলে যেন আপনাকে খুব আদর-আপ্যায়ন করি, তাও আমাকে হুকুম করে গেছেন। আর এও বলে গেছেন, ডিলাইলাহর জন্য আপনি যেন বিন্দুমাত্র চিন্তা না করেন। একবার যখন তার হদিশ করতে পেরেছে, ধরে তাকে নিয়ে আসবেই আপনার কাছে। শুনলেন তো সব, এবার তা হলে চলুন, ভিতরে গিয়ে আরাম করে বসবেন। তারপর একটু পরেই বামাল সুদ্ধ এসে হাজির হবে আপনার লোকজন।
মন্ত্রমুগ্ধ মানুষের মতো আহমদ জাইনাবের কাঁধে ভর দিয়ে শরাবখানার ভিতরে ঢুকে পড়ে। জাইনাবা ওকে বড় ঘরের ফরাশে নিয়ে গিয়ে বসায়। আহমদের রক্তে তখন আগুন ধরে গেছে।
শরাব লে আও।
জাইনাব পেয়ালা ভরে সেই আফিং মেশানো মদ এনে আহমদের মুখে ধরে। এক চুমুকেই সাবাড়া করে দেয় সে। আর এক পেয়ালাও খেয়ে ফেলে। তারপরই ক্রিয়া আরম্ভ হয়ে যায়। জোর করে চোখ খুলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে সে দু-একবার। হাত দুখানা বাড়িয়ে দিয়ে জাইনাবকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। প্রায় অস্পষ্ট জড়ানো কণ্ঠে মিনতি করে ডাকে, আমার বুকে এসো গো সুন্দরী, তোমাকে গড়িয়ে দেবো-সাতনরী হার
ওর কথা আর শেষ হয় না। জাইনাব নিজেকে সরিয়ে নেয়। আহমদের বিপুল বিশাল দেহখানা এলিয়ে পড়ে যায় ফরাশে। আহমদ-এর গায়ে অনেক রত্নাভরণ ছিলো। এক এক করে সব সে খুলে নেয়এমন কি তার দামী সাজ-পোশাকটা পর্যন্ত। শুধু একটা ইজার রেখে দেয় তার কোমরে। তারপর একই কায়দায় টানতে টানতে নিয়ে যায় খিডিকীর ওপারে। তার অনুচর চল্লিশজনের গাদার উপর চাপিয়ে দেয় তার দেহটাও।
এরপর যাবতীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে বেঁধে নিয়ে খিড়কীর ওপাশে বেঁধে রাখা সেই গাধা আর ঘোড়াটার পিঠে চাপিয়ে সোজা বাড়ির পথে পাড়ি দেয়। জাইনাব।
মেয়ের কীর্তি শুনে মা ডিলাইলাহর আর আনন্দ ধরে না।
এই না হলে আমার মেয়ে। ধন্যি আমি, তোকে গভূভে ধরেছিলাম বেটি!
এই সময়ে রাত্রি প্রভাত হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

#উপন্যাস
#অনুবাদ
#মোলাকাত
#Molakat
#Novel
#Translation
#BanglaLiterature
#Literature
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#বাংলাসাহিত্য
#আলিফ_লায়লা
#সাহিত্য

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.