আলিফ লায়লা : আরব্য রজনী_পর্ব-১০৬
ইংরেজি অনুবাদ : ডঃ জে. সি. মারদ্রুস
বাংলা অনুবাদ : ক্ষিতিশ সরকার
খালিদ তখন খানা-পিনা করে নাক ডাকিয়ে দিবানিদ্রা দিচ্ছিল। পাহারাদার বললো, কী ব্যাপার? এখন সাহেবের সঙ্গে মুলাকাত হবে না। তিনি এখন শুয়েছেন। আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন, আর এই জেনেনা লোককে আমি অন্দরে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর কোতোয়াল সাহেব ঘুম থেকে উঠলে তাকে আপনাদের মামলা জানাবেন।
ওরা পাঁচজন বৈঠকখানায় বসে রইলো, আর একটি খোজা এসে বুড়ি ডিলাইলাহকে প্রাসাদের অন্দরমহলে নিয়ে গেলো।
এক সদাশয় শুভ্বকেশ বৃদ্ধাকে এই সময়ে কোতোয়ালের কাছে আসতে দেখে কোতোয়াল-বিবি কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে, আপনার কী মামলা, মা? কেন এসেছেন তার কাছে?
আমির-বিবিরও তাই ধারণা। মাত্র বারোশো দিনারে এই রকম পাঁচ পাঁচটা ম্যামলুক মেলানো ভার। বাজারে গেলে, চাই কি, এক একটার দাম হাজার দিনার হাঁকবে।
খালিদ গৃহিণী আব্দর যত্নর মাত্ৰাটা একটু বাড়িয়ে দেয়। ইশারা করতেই একটি চাকরানী এসে এক গেলাস পেস্তার শরবৎ এনে রাখে। খালিদ বৌ বলে, মেহেরবানী করে চুমুক দিন। আচ্ছা মা, দাম নেওয়া ছাড়া কী আর কোনও দরকার আছে তার সঙ্গে? তিনি এইমাত্র খানা-পিনা সেরে শুয়েছেন। ঘুম থেকে উঠতে তো সন্ধ্যে হয়ে যাবে। এতক্ষণ কী আপনি অপেক্ষা করবেন? না, আমি দামটা দিয়ে দেব, নিয়ে যাবেন? পরে সময় মতো একবার এসে ভোট করে যাবেন?
—কিন্তু আপনার আরও দুশো দিনার বাকী রয়ে গেলো যে মা?
খালিদ-গৃহিণী ভাবে, যাক, মুফতে দুশো দিনার বাণিজ্য হয়ে গেলো! ভাগ্যে খালিদ-সাহেব গতকাল তাকে টাকাটা দিয়েছিলো অন্য একটা সামান কেনার জন্য!
খালিদ-গৃহিনী নিজে তাকে সঙ্গে করে খিড়কীর দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে বাইরে বের করে দেয়।
ডিলাইলাহ হন হন করে হেঁটে বাড়িতে ফিরে আসে। জাইনাব এসে হেসে জিজ্ঞেস করে, আজ আবার কাকে জগ দিয়ে এলে মা?
এইভাবে অনেক উপমা উদাহরণ দিয়ে মাকে নিরস্ত করার প্রয়াস করতে থাকলো জাইনাবি, অনেক হয়েছে। এই পয়সাই সারা জীবনে আমরা খেতে পারবো না। আর বেশি ঝুকি নিয়ে কাজ নাই। অতিলোভে তাতী নষ্ট!
–থামো, গর্জে ওঠে খালিদ, বারশো দিনার দিয়ে দিয়েছে তাকে?
কোতোয়াল আর এক তিল বসে না। প্রায় ছুটেই বাইরে চলে আসে। কিন্তু সেখানে সেই পাঁচটি প্রতারিত সন্তান ছাড়া অন্য কোনও নাফর বান্দাকে দেখতে পায় না সে। দাঁতে দাঁত চেপে চোখ গোল করে খালিদ পাহারাদারকে প্রশ্ন করে, বান্দাগুলো কোথায়?
খালিদ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গী করে তাড়ফায়, আমি তো কোনও খবর জানি না-ত কিছুই যখন খবর রাখ না, তো এখানে সুরৎ-এর বাহার দেখাবার জন্যে থাকার কী দরকার? বিদেয় হও-যত্তোসব বোদর কা। বাচ্চা
পাহারাদার কাচুমাচু মুখে বলে, আপনি যখন ঘুমিয়েছিলেন, সেই সময় এই পাঁচজনের সঙ্গে এক বুড়ি এসেছিলো। সে-বুড়িকে আমি অন্দরে পাঠিয়ে দিয়েছি, হুজুর।
খালিদ বলে, ওঃ তোমরা? তা এখানে নবাবের মতো বসে আছো কেন? গতর তোলো? যাও কাজে হাত লাগাও। তোমাদের মালকিন আমার কাছে বিক্রি করে গেছে তোমাদের।
খালিদের কথা শুনে ওরা পাঁচজনে সোরগোল তুলে কেঁদে ওঠে।–এ আপনার কেমন তরো বিচার হলো আমির সাহেব? আপনার নামে খলিফার কাছে নালিশ করবো আমরা। আমরা খলিফার অনুরক্ত প্রজা। নিয়ম মাফিক কর দিই—আমরা স্বাধীন-মুক্ত মানুষ। আমরা কি নফর বান্দা যে, আমাদের নিয়ে কেনাবেচার বেসাতি করবেন? ঠিক আছে, আগে খলিফার কাছে চলুন, তারপর যা বিধি-ব্যবস্থা তিনিই করবেন।
গল্প থামিয়ে শাহরাজাদ চুপ করে গেলো। শারিয়ার দেখলো, রাত শেষ হয়ে আসছে।
চারশো তেতাল্লিশতম রজনীতে আবার শাহরাজাদ বলতে শুরু করে :
খালিদ আর ঐ পাঁচজন প্রতারিতের মধ্যে যখন এইরুপ বাকবিতণ্ডা বাচসা চলছে, এমন সময় খালিফার দেহরক্ষী শেরকা বাচ্চ মুস্তাফা সেখানে এসে হাজির হয়।
ইতিপূর্বে মুস্তাফা এসে তার বিবির প্রতারিত হওয়ার সমস্ত বিবরণ দিয়ে খালিদের কাছে এজাহার দিয়ে গিয়েছিলো। সে সম্পর্কে খালিদ কী হদিশ করতে পারলো কী পারলো না, তারই খোঁজ নিতে এসেছে সে।
সেইদিনের সেই ঘটনার পর থেকে প্রতিনিয়ত খাতুন তাকে খোঁচাচ্ছে, শুধু তোমার জন্যে আজ আমার এই দশা হলো। তুমি যদি আমাকে ভয় না দেখাতে—অন্য মেয়ে ঘরে আনবে বলে, তাহলে তো আমি সেই পীরের দরগায় যাওয়ার জন্যে ঐ বদমাইশ বুড়িটার সঙ্গে পথে বের হতাম না। তুমি যদি সে-দিন আমাকে নিষ্ঠুরভাবে আঘাত না করতে তা হলে এই সর্বনাশ আমার হতো না।
খালিদকে দেখামাত্র সে জ্বলে ওঠে, কী খালিদ, সেই শয়তান বুড়িটার খোঁজ পেলে?
তখন বুকে সাহস পেয়ে ঐ পাঁচ প্রতারিতও চিৎকার করে ওঠে, আমির সাহেব, আমাদের সকলের অবস্থাও ঠিক একই রকম। আমরাও সেই ধূর্ত বুড়ির ধাপ্লায় ভুলে যথাসর্বস্ব খুইয়েছি। তারই নালিশ করতে এসেছিলাম। আমরা এই কোতোয়ালের কাছে-আর্জি ছিলো ন্যায্য বিচার।
-কীসের বিচার?
খালিদ বিনীত হয়ে বলে, আমির সাহেব, আপনার বিবির কাছে আপনি খাটো হয়ে যাচ্ছেন, এটা আমি বুঝি। আপনি খলিফার দরবারে এখন একজন জাঁদরেল আমির। এই সামান্য একটা ঠগ জোচ্চোরকে শায়েস্তা না করতে পারলে ইজৎ থাকে কী করে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমির সাহেব, আপনাকে আমি কথা দিচ্ছি, যেনি-তেন প্রকারে সেই শয়তান বুড়িকেই আমি ধরবোই।
আমির তাচ্ছিল্য দেখিয়ে বলে, তোমার কেরামতী আর দেখতে চাই না। আমি নিজেই এর ব্যবস্থা করছি। আচ্ছা শোনো, মুস্তাফা প্রতারিত পাঁচজনের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমাদের মধ্যে কেউ আছ যে, ঐ বুড়িটাকে দেখলে চিনতে পারবে?
গাধার মালিক বিশেষভাবে বলে, হাজারটা শয়তানীর মধ্যেও যদি সে ছদ্মবেশে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে, আমি তাকে এক নজরেই টেনে বার করতে পারবো। আমি বলি কি, হুজুর, আমার সঙ্গে আপনি মেহেরবানী করে জানা-দশোক সিপাই দিন। তারপর দেখুন, আমি তাকে আপনার কাছে হাজির করতে পারি কি না।
সঙ্গে সঙ্গে দশজন সিপাই সঙ্গে দিয়ে ওদের পাঁচজনকে, শয়তান বুড়িটাকে পাকড়াও করে আনার উদ্দেশ্যে, পাঠানো হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুড়ির সন্ধানও তারা পেয়ে গেলো। ওদের দেখামাত্র উর্ধশ্বাসে পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু সিপাইরা তাকে ধরে ফেলে। পিঠামোড়া করে বেঁধে কোতোয়ালের কাছে নিয়ে আসে।
কোতোয়াল খালিদ গর্জে ওঠে, চুরির মাল-পত্র সব কোথায় রেখেছে?
কিন্তু কয়েদখানার সর্দার বললো, আমাকে মাফ করবেন, হুজুর, আমি পারবো না?
খালিদ গুম মেরে গেলো কিছুক্ষণ। তারপর পঞ্চ প্রতারিতদের প্রতি নির্দেশ করে বললো, ঠিক আছে, আজ সারারাত একে তোমরা সকলে মিলে পাহাড়া দেবে। তারপর কাল সকালে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। চলো, বুড়িটাকে আমরা বাগদাদ শহরের সীমানার বাইরে গিয়ে একটা খুঁটির সঙ্গে শক্ত করে বেঁধে রাখি।
খালিদ ঘোড়ায় চাপলো। সিপাইরা বুড়ি ডিলাইলাহকে টানতে টানতে নিয়ে চললো। শহরের প্রাচীর সীমা পার হয়ে একটা ফাঁকা জাযগায় একটা খুঁটি পুঁতে তার সঙ্গে ডিলাইলাহর চুল জড়িয়ে বাঁধা হলো। তারপরই পাঁচজন প্রতারিতকে পাহারায় মোতায়েন করে বাকী লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে কোতোয়াল ফিরে এলো তার বাড়িতে।
সবাই মিলে, বিশেষ করে গাধার মালিক বুড়ির আদ্যশ্ৰাদ্ধ করতে লাগলো। যত রকম মুখ খারাপ করে গালাগাল, খিস্তি খেউর। সম্ভব—কিছুই বাদ করলো না।
কিন্তু কতক্ষণ আর এইভাবে এক ঘেয়ে গালিগালাজ করে কাটানো যায়। গত কয়েকটা দিন বুড়ির সন্ধানে ঘুরে ঘুরে সকলেই ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো। এদিকে রাত বাড়তে থাকে। ওদেরও চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসে। খানাপিনা শেষ করে নেয় সকলে। তারপর আর একদণ্ড তারা চোখ মেলে থাকতে পারে না। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।
নিশুতি নিঃঝুম রাত। ডিলাইলাহকে বৃত্তাকারে ঘিরে পড়ে পড়ে নাক ডাকতে থাকে সেই পঞ্চ-প্রহরী। তখনও কিন্তু ধূর্ত বুড়ি জেগে। রাত আরও গম্ভীর হতে থাকে। হঠাৎ ডিলাইলাহ দেখলো, দুটি দস্যু ঘোড়ায় চেপে এইদিকে আসছে। রাতের নিস্তব্ধতায় ওদের অনুচ্চ আলোপও বেশ পরিষ্কার শুনতে পায় সে।
একজন বলছেঃ আচ্ছা ভাইসোব এই সুন্দর বাগদাদ শহরে সব চাইতে মজার কাজ তুমি কী করেছে?
চারশো চুয়াল্লিশতম রজনীতে আবার সে বলতে থাকে :
এই সময় তারা ডিলাইলাহর আরও কাছে এসে পড়ে।
–কে তুমি? এখানে এসেছে কেন?
আরব দস্যদের একজন বলে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান তাকে ডাকো। তিনিই একমাত্র রক্ষাকর্তা। কিন্তু এই খুঁটির সঙ্গে কে তোমাকে বেঁধে রেখেছে?
বাদাবী-দস্যু টোপ গিললো, আমরা আরব, তুমিও আরব। তোমার দুঃখে আমাদের বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমরা বাগদাদ শহরের নামজাদা মধু-পিঠের লোভেই এখানে এসেছি। আর সেই পিঠের গন্ধ তুমি সহ্য করতে পার না? যাই হোক, তোমার কষ্ট দেখে আমাদেরও খুব খারাপ লাগছে। যদি চাও, তবে তোমার হয়ে আমরা তোমার পিঠেগুলো উদারস্থ করতে পারি।
কিন্তু ওরা তো আপনাদের তা খেতে দেবে না। কোতোয়ালের হুকুম আছে, শহরের বাইরে একটা খুঁটিতে বাধা আছে যে, তাকে খাওয়াতে হবে দশথালা মধুর পিঠা। মধু-পিঠা যদি খেতে চান তবে এই খুঁটিতে বাঁধা থাকতে হবে।
বাদাবীদের একজন অপরজনকে বললো, আমি তো অনেক মধুর পিঠে খেয়ে পেট ডাই করে এসেছি। আমি চলি, তুমি বরং খাও।
সে চলে গেলো। অন্য বাদাবীটা তখন বললো, কিন্তু আমি যদি তোমার জায়গায় বাধা হয়ে থাকি, তবে তো, কাল সকালে কোতোয়ালদের লোক এসে আমাকে দেখে চিনে ফেলবে। তারা ভাববে, মেয়েছেলেটা গেলো কোথায়?
তারপর দুজনে পরস্পরের সাজপোশাক বদলে নিলো। বাদাবীর পোশাক পরে ডিলাইলাহ ঘোড়ার পিঠে লাফিয়ে উঠে বসে। আর বাদাবী ডাকাতটা বোরখা পরে সেই খুঁটিটার সঙ্গে নিজেকে, শক্ত করে বাঁধে।
সকাল হতে পঞ্চ-প্রহরীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। গাধার মালিক এগিয়ে গিয়ে বন্দীকে প্রশ্ন করে, কী গো বুড়ি, তোমার ঘুমটুম কেমন হলো?
—এ্যাঁ! এ যে পুরুষ মানুষের গলা! একি হলো?
গাধার মালিক তবু প্রশ্ন করে, বুড়িটা গেলো কোথায়?
পঞ্চ-প্রতারিত বুঝতে পারে, এই দুর্ধর্ষবাদাবী ডাকাতকেও বুড়িটা প্রতারণার ফাঁদে আটকে রেখে হাওয়া হয়ে গেছে। ওদের চোখে মুখে হতাশার করুণ ছবি ফুটে ওঠে। কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে, আল্লাহ যাকে ছেড়ে দেবে, মানুষ তাকে কী বেঁধে রাখতে পারে?
বাদাবী তখন কোতোয়ালকে উদ্দেশ্য করে হুঙ্কার ছাড়ে, কই, আমার মধুর পিঠে কোথায়?
পঞ্চ-প্রহরী মাথা চুলকায়, বলে, এই হচ্ছে নসীব। ঐ ধূর্ত বুড়িটা এই বাদাবীকে বোকা বানিয়ে এখানে বেঁধে রেখে সে তার ঘোড়া নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছে। আপনার দোষেই সে আজ পালিয়ে গেলো। চলুন, আপনাকে আমরা খলিফার দরবারে নিয়ে যাবো। আপনি যদি জনকয়েক সিপাই আমাদের সঙ্গে দিতেন, সে তো এইভাবে পালাতে পারতো না। সুতরাং এর জন্যে একমাত্র আপনিই দায়ী। আপনি কী ভেবেছিলেন, আমরা আপনার কেনা গোলাম? সারারাত জেগে আপনার হুকুম তামিল করবো?
—আমাকে সে বলেছে, এখানে এই খুঁটিতেই বাঁধা থাকলে সকাল বেলায় থালা-থালা ভর্তি মধু-পিঠে আর মাখন পিঠে খেতে পাওয়া যাবে। তা সকাল তো অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। কোথায়, আমার পিঠে কোথায়, নিয়ে এসো।
বাদাবীর কথা শুনে খালিদ আর তার সিপাইরা হেসে লুটিয়ে পড়ে। কিন্তু পঞ্চ প্রতারিতরা রাগে গরগর করতে থাকে।
—ওসব হাসি-টাসি রাখুন। এখন খলিফার কাছে যেতে হয়ে আপনাকে। আমরা এর একটা বিহিত চাই।
বাদাবীটা তখন তড়পাতে থাকে, এখনও বলছি, ওসব ধোঁকাবাজী ছাড়ো, মধু-পিঠা নিয়ে g[तीं।
কিন্তু তার কথায় কেউ-ই কৰ্ণপাত করলো না। সবাই শুধু হাসতে থাকে। অবেশষে বাদাবী বুঝতে পারে, ঐ বুড়িটা তাকে ধোঁকা দিয়ে তার সাজ-পোশাক আর ঘোড়াটা নিয়ে কেটে পড়েছে। মধু-পিঠা আর মাখন-পিঠার গল্প—সব বানানো।
খালিদ দেখলো, মামলা বড় জটিল আকার ধারণ করছে। এ অবস্থায় কানে তুলো দিয়ে বসে থাকলে ভবিরা ভুলবে না। তাই সে বাধ্য হয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে খলিফার দরবারে এসে হাজির হয়।
রাত্রি শেষ হতে চলেছে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
চারশে পায়তাল্লিশতম রজনী। শাহরাজাদ। আবার কাহিনী শুরু করে :
খলিফা নিজেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করলেন। প্রথমে তিনি সেই গাধার মালিককে জেরা করতে শুরু করলেন। এবং শেষ করলেন কোতোয়াল খালিদকে দিয়ে। প্রত্যেকে যে-যার কাহিনী বলে গেলো। খলিফা হারুন অল রসিদ বিষম বিস্ময়ে হতবাক হয়ে রইলেন কিছুক্ষণ।
—তাজ্জব কাণ্ডকারখানা! যাইহোক, আবার পূর্ব-পুরুষদের সুনাম যাতে রক্ষা হয়, সে-জন্য যার যা খোয়া গেছে সবই পূরণ করে দেওয়া হবে আমার ধনাগার থেকে। গাধার মালিক তার গাধা পাবে। সওদাগর পাবে হাজার দিনারের বটুয়া, রঙের কারবারীর দোকানের যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করে দেবো আমি। ইহুদী জহুরীর সোনাদানা যা গেছে, তাও সে পাবে। নাপিতের জন্য একটা দোকান তৈরি করে দেওয়া হবে, আর এই বাদাবী—সেও ফেরত পাবে তার সাজ-পোশাক এবং একটি আরবী ঘোড়া। এ ছাড়াও তাকে দিতে হবে দশখানা থালা-ভর্তি বাগদাদের বিখ্যাত মধু-পিঠা। খেয়ে যাতে তার প্রাণ ভরে যায়। কিন্তু সবার আগে আমার হুকুম—সেই বুড়িটাকে আমার সামনে হাজির করতে হবে। শোনো খালিদ এবং মুস্তাফা, তোমরা এখন বেরিয়ে পড়। আজ সন্ধ্যার আগে সেই বুড়িকে এখানে ধরে নিয়ে এসো। তারপর আজ রাতে আমার এইখানেই খানা-পিনা করবো। কিন্তু খালি হাতে ফিরবে না। মনে রেখে রাতের খানা তোমাদের এখানেই খেতে হবে। যাও, এই আমার হুকুম।
আমির খালিদ প্রমাদ গুনলো। খলিফার এই কথার অর্থ সে ভালোভাবেই জানে। নিজের ক্ষমতা জানিয়ে সে নিস্কৃতি চায়, আমাকে রেহাই দিন, জাঁহাপনা। এ কাজ আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। ঐ ধূর্ত শয়তানীকে কাজায় আনা আমার কম্মো নয়। ও যে কী-ভাবে কখন চোখে ধুলো দিয়ে বুড়বাক বানিয়ে হাওয়া হয়ে যাবে তা কল্পনারও অতীত। মেহেরবানী করে এ ভার আপনি অন্য কাউকে দিন। আমি পারবো না।
খলিফা হো হো করে হেসে উঠলেন। —তাহলে আর কোতোয়াল হয়ে বসে থেকে কী করবে। অন্য কোনও কাজ দিতে হবে তোমাকে, কী বলো?
খলিফা মাথা নাড়লেন, ঠিক, ঠিক বলেছে খালিদ। কই, আহমদ, এদিকে সামনে এসে দাঁড়াও।
তৎক্ষণাৎ আহমদ খলিফার সামনে এসে আভূমি আনত হয়ে কুর্ণিশ করে দাঁড়ালো।—মহামান্য ধর্মাবতার, আপনার আজ্ঞা আমার শিরোধাৰ্য, আদেশ করুন, জাঁহাপনা!
আহমদ আর বিলম্ব করলো না। চল্লিশজন সিপাই ঘোড়-সওয়ার নিয়ে সে শহরের পথে বেরিয়ে পড়লো। বাদাবী দাসু এবং সেই পঞ্চ প্রতারিতরা দরবারেই রয়ে গেলো।
আহমদের প্রধান সাগরেদ চল্লিশ সিপাই-এর সর্দার আলী। এইসব তল্লাসী এবং গ্রেপ্তারে মহা-ওস্তাদ। তার প্রধান কারণ এক সময়ে সে-ও চোর ডাকাত দলের পাণ্ডা ছিলো। আটঘাট তার সবই নখদর্পণে। সে বললো, আহমদ সাহেব ঐ বুড়িকে পাকড়াও করা খুব একটা সহজ কাজ হবে মনে করবেন না। সারা বাগদাদে অমন হাজার-হাজার বুড়ি মেয়েছেলের দেখা পাবেন আপনি। তার মধ্যে কে যে শয়তানী কী করে ধরবেন? আহমদ পাল্টা প্রশ্ন করে, তাহলে কী করবে, ভাবছো?–আমার মনে হয় কী জানেন, এ বিষয়ে হাসান সাহেবের যুক্তি-পরামর্শ নিলে ভালো হতো। তাঁর মাথায় অনেক ভালো বুদ্ধি খেলে। এই ধরনের ধূর্ত শয়তান ঠগদের সেই কাবু করতে পারবে। কারণ আমরা বরাবরই ডাকাতি রাহাজানি ছিনতাই লুঠপাঠ করে কামিয়েছি, আর হাসান সাহেব তো পয়সা কামিয়েছেন লোককে ধোঁকা দিয়ে, ঠকিয়ে, চালাকী করে, বুদ্ধি খাটিয়ে। সুতরাং এ ব্যাপারটা তিনিই ভালো রপ্ত করতে পারবেন।
–না না না, আহমদ প্ৰায় চিৎকার করে ওঠে, এতোবড় নাম কেনার সুযোগ যখন আমার কপালে জুটেই গেছে সে সৌভাগ্যের বখরা আমি অন্য কাউকে দিতে চাই না।
এই সময় তারা চলতে চলতে হাসানের বাড়ির সামনে এসে পড়েছিলো। কিন্তু আহমদের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নাই। সে গলা ফাটিয়ে তখনও বলে চলেছে, একটা বুড়িকে পাকড়াও করা এমন কী শক্ত কাজ! অথচ তার জন্যে দরবারে আমার কী ইজ্জত বাড়বে একবার ভাবে তো! আর এই জিনিসের ভাগ দেবো। আমি হাসানকে? সে কখনো হতে পারে না।
আহমদের অশ্বারোহী বাহিনীর খুরধ্বনি শুনে সে জানলার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো। সেখান থেকেই সে আহমদের সব কথা স্পষ্ট শুনতে পেলো। মনে মনে ভাবলো, ঠিক আছে আহমদ, তুমি আজ খলিফার বড় পেয়ারের লোক হয়েছে। কিন্তু আমারও নাম হাসান, দেখি তোমার দৌড় কতদূর।
শহরের মাঝখানে এসে আহমদ তার সেপাইদের চারভাগে বিভক্ত করে শহরের চারদিকে অনুসন্ধান করতে পাঠিয়ে দিলো। বললো, তোমরা তল্লাসী চালিয়ে সবাই মুস্তাফার বাড়ির গলির মুখে চলে আসবে সবাই। আমি সেখানে অপেক্ষা করবো।
নিমেষের মধ্যে সারা শহরময় রটে গেলো; আহমদের সিপাইরা শহরেরবাড়ি বাড়ি খানাতল্লাসী করে সেই ধূর্ত বুড়িকে গ্রেপ্তার করতে বেরিয়েছে। কথাটা ডিলাইলাহ জাইনাবের কানে পৌঁছতেও দেরি হয় না। জাইনাব বলে মা, এখন কী উপায় হবে?
চারশো ছেচল্লিশতম রজনীতে আবার কাহিনী শুরু করে সে :
বাড়ি থেকে বেরিয়ে সে সোজা মুস্তাফার বাড়ির দিকে রওনা হলো। মুস্তাফার বাড়ির কাছাকাছি মসুলের হজ করিমের শরাবখানা। দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিলো সে। জাইনাব মিষ্টি করে হাসির বান ছুঁড়লো তার দিকে।
হজ করিম ধন্য হয়ে গেলো। সে বারবার মাথা হেলিয়ে তাকে স্বাগত জানাতে থাকলো। জাইনাবি কাছে এগিয়ে গিয়ে হজ করিমের হাতে পাঁচটা দিনার গুঁজে দেয়।
—এই পাঁচটা দিনার রাখুন করিম সাহেব। আমি আপনার বড় ঘরটা এক দিনের জন্য ভাড়া নিচ্ছি। আমার কিছু ইয়ারদোস্তারা ফুর্তি করতে আসবে।সেইজন্যে আপনার কাছে আমার আর্জি, এই একটা দিনের জন্য আপনি আপনার উটকো খদেরদের ঢোকাবেন না। আপনার কোনও লোকসান হবে না, সে ভরসা আপনাকে দিচ্ছি।
হজ করিম বললো, শুধু আপনার জন্য, আপনার ঐ সুন্দর চোখের জন্য আমি আপনাকে মাঙনায় ঘরখানা ছেড়ে দিচ্ছি। শুধু আমার একটা অনুরোধ, আপনার মেহেমানদের আপ্যায়ন করার জন্য শরাব খাওয়াতে কাপণ্য করবেন না।
জাইনাব হেসে বলে আমার দোস্তারা এক একটা মদের পিপে। শরাবে তাদের অরুচি নাই।
আপনার দোকানে যত মন্দ আছে সবই সাবাড় করে দেবে তারা।
এই বলে জাইনাব আবার নিজেরবাড়ি ফিরে যায়। সেখানে বাধা ছিলো সেই ছেলেটার গাধা আর বাদাবীর ঘোড়া। সে ভাড়া নিয়ে তাদের পিঠে বোঝাই করে গালিচা, আসন, তাকিয়া, পেয়ালা, পিরিচ এবং অন্যান্য সাজ-সরঞ্জাম। তার পর আবার ফিরে আসে হজ করিমের শরাবখানায়।
সে খুব কায়দা করে সরাইখানার সদর দরজা থেকে আরম্ভ করে ভিতরের ঘর পর্যন্ত চমৎকারভাবে সাজায়। ঘরের মেজেয় দামী গালিচাখানা বিছিয়ে দেয়। আর বড় বড় মদের বাহারী ঝারি বসিয়ে দেয় সদর দরজায় দুইপাশে। তার সঙ্গে নানারকম লোভনীয় বাদশাহীখানার রেকবীও থরে থরে সাজিয়ে রাখে। সেখানে। নিজেও দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আহমদের দশজন অশ্বারোহী সিপাই এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাদের সঙ্গে আহমদের প্রধান সাগরেদ আলীও ছিলো। তার সাজগোজ একেবারে জাঁদরেল সেনাপতির মতো। নজন অনুচরকে সঙ্গে নিয়ে সে শরাবখানার ভিতরে ঢুকে পড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে, ক্ষিপ্র হাতে জাইনাব তার মুখের নাকাব সরিয়ে দেয়। আলী অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়, তুমি এখানে কী করছে খুকি?
জাইনাব দশজনকেই সঙ্গে করে বড় ঘরের ফরাশে নিয়ে গিয়ে বসায়। গোল হয়ে বসে সকলে। তাদের ঠিক মাঝখানে একটা বিরাট বড় মদের ঝারি বসিয়ে দেয় সে। এই ঝারির শরাবে সে মিশিয়ে রেখেছিলো এক ঢেলা আফিং। পর পর দু পোয়ালা পেটে যেতেই বাছাধনীরা এ ওর গায়ে ঢলে পড়লো। তারপর পালকের মধ্যেই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলো তারা। জাইনাব তাদের পা ধরে হিডি হিডি করে টানতে টানতে নিয়ে গেলো খিডিকীর দরজায়। দরজা খুলে ওদের গড়িয়ে দিলো কদমাক্ত নোঙরা আস্তাবলে। এইভাবে এক এক করে সবাইকে টেনে নিয়ে এসে সে গাদা করে রাখলে সেখানে।
এরপর আবার সে ফরাশ-টরাশ ঠিকঠাক করে ঝেড়ে-পুছে আবার এসে দাঁড়ালো সদর দরজার পাশে। কিছুক্ষণ বাদে আরও দশজন আহমদের সিপাই এসে দাঁড়ায় সেখানে। ঠিক একই কায়দায় তাদেরও কুপোকাৎ করে একইভাবে শরাবখানার পিছনে গাদা দিয়ে রেখে দেয় সে। এইভাবে তৃতীয় এবং চতুর্থ বাহিনীর কুড়িজনকেও সে চোখের বাণ মেরে, আফিং-মেশানো মদ খাইয়ে অচৈতন্য করে শরাবখানার পিছনে গাদা করে রেখে আসে।
জাইনাব আবার ঘরটা সাজিয়ে গুছিয়ে সদরে এসে দাঁড়ায়। আসল মক্কেল এখনও আসেনি। কিন্তু জাইনাব জানে, ফাঁদ যখন সে পেতে বসে আছে, আসতে তাকে হবেই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিকট হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে ঘোড়া ছুটিয়ে এসে দাঁড়ালো সে। তার চোখ দুটো ভাটার মতো জ্বলছিলো। চোয়াল পাথরের মতো কঠিন হয়ে উঠেছিলো। ইয়া বড় হাতের চাবুকখানা বাঁই বাঁই করে ঘোরাতে ঘোরাতে সে গর্জে ওঠে, কোথায় সেই সব কুত্তার বাচ্চাগুলো।
ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নেমে পড়লো আহমদ। শরাবখানার দেয়ালের একটা গজালে লটকে দিলো লাগামটা। —আমি তাদের তো এই রাস্তার মুখটায় জড়ো হয়ে থাকতে বলেছিলাম। তা শরাব-এর লোভ আর ছাড়তে পারেনি বেল্লিকরা। একেবারে নেশায় বুদ হয়ে গেছে।
জাইনাব দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে এমন মায়াবিনীর হাসি হাসে, তার টাল আর সামলাতে পারে না বেচারা আহমদ। ওর চোখ দুটো চেটে চেটে খেতে থাকে জাইনাবের কামলোভাতুর শরীরখানা। তাক বুঝে জাইনাবের সরু কোমরখানা দুলে ওঠে। তার ভারী নিতম্ব আর কচি কদু-সদৃশ স্তনদুটি আহমদের বুকের রক্তে তুফান তুলে। চোখের বিদ্যুৎ হেনে জাইনাব এক অপূর্ব লাস্যময়ী ঢং করে জিজ্ঞেস করে, কার কথা বলছেন, মালিক?
জাইনাব তখন দুই পা ফাঁক করে এমন একটা অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গী করে দাঁড়িয়েছে যা দেখে আহমদের সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। কোনও রকমে বলতে পারে, আমার চল্লিশজন সিপাই এখানে আসার কথা ছিলো, কিন্তু সুন্দরী, আমি বুঝতে পারছি না, তারা এখনও এলো না কেন? কিম্বা এসে তোমার দোকানে ঢুকে মদ গিলতে শুরু করেছে কিনা?
মন্ত্রমুগ্ধ মানুষের মতো আহমদ জাইনাবের কাঁধে ভর দিয়ে শরাবখানার ভিতরে ঢুকে পড়ে। জাইনাবা ওকে বড় ঘরের ফরাশে নিয়ে গিয়ে বসায়। আহমদের রক্তে তখন আগুন ধরে গেছে।
–শরাব লে আও।
জাইনাব পেয়ালা ভরে সেই আফিং মেশানো মদ এনে আহমদের মুখে ধরে। এক চুমুকেই সাবাড়া করে দেয় সে। আর এক পেয়ালাও খেয়ে ফেলে। তারপরই ক্রিয়া আরম্ভ হয়ে যায়। জোর করে চোখ খুলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে সে দু-একবার। হাত দু’খানা বাড়িয়ে দিয়ে জাইনাবকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। প্রায় অস্পষ্ট জড়ানো কণ্ঠে মিনতি করে ডাকে, আমার বুকে এসো গো সুন্দরী, তোমাকে গড়িয়ে দেবো-সাতনরী হার—
ওর কথা আর শেষ হয় না। জাইনাব নিজেকে সরিয়ে নেয়। আহমদের বিপুল বিশাল দেহখানা এলিয়ে পড়ে যায় ফরাশে। আহমদ-এর গায়ে অনেক রত্নাভরণ ছিলো। এক এক করে সব সে খুলে নেয়—এমন কি তার দামী সাজ-পোশাকটা পর্যন্ত। শুধু একটা ইজার রেখে দেয় তার কোমরে। তারপর একই কায়দায় টানতে টানতে নিয়ে যায় খিডিকীর ওপারে। তার অনুচর চল্লিশজনের গাদার উপর চাপিয়ে দেয় তার দেহটাও।
এরপর যাবতীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে বেঁধে নিয়ে খিড়কীর ওপাশে বেঁধে রাখা সেই গাধা আর ঘোড়াটার পিঠে চাপিয়ে সোজা বাড়ির পথে পাড়ি দেয়। জাইনাব।
মেয়ের কীর্তি শুনে মা ডিলাইলাহর আর আনন্দ ধরে না।
–এই না হলে আমার মেয়ে। ধন্যি আমি, তোকে গভূভে ধরেছিলাম বেটি!
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
#উপন্যাস
#অনুবাদ
#মোলাকাত
#মোলাকাত
#Molakat
#Novel
#Translation
#BanglaLiterature
#Literature
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#বাংলাসাহিত্য
#বাংলাসাহিত্য
#আলিফ_লায়লা
#সাহিত্য

No comments