রজনী দ্বিপ্রহর। তিথির
পরিভাগে বিধুর অনুদয়, কিন্তু আকাশ নক্ষত্রমালায়
পরিশোভিত। মহা
কোলাহলপূর্ণ
সমর-প্রাঙ্গণ এক্ষণে সম্পূর্ণভাবে নিস্তব্ধ। দামেস্ক প্রান্তরে প্রাণীর
অভাব
নাই।
কিন্তু প্রায় সকলেই নিদ্রার
কোলে অচেতন।
জাগে কে?-প্রহরীদল,
সন্ধানী দল, আর
উভয়
পক্ষের
মন্ত্রীদল!
মন্ত্রীদল
মধ্যেও
কেহ
কেহ
আলস্যের পরিভোগে চক্ষু মুদিয়া চিন্তায়
নিমগ্ন হইতেছেন, কেহ
দিবাভাগে
সেই
অভাবনীয় ঘটনার কোন কোন
অংশ
ভাবিয়া উপবেশন স্থানেই
গড়াইয়া
পড়িয়াছেন, কেহ
শয়ন-শয্যার এক পার্শ্বে পড়িয়া আধ-জাগরণে আধ-স্বপনে জেয়াদের শির
শূন্য
দেহ
দেখিয়া চমকিয়া
উঠিতেছেন। যথার্থ জাগরিত কে? এক
পক্ষে
মারওয়ান, অন্য
পক্ষে
গাজী রহমান।
মারওয়ান আপন
নির্দিষ্ট বস্ত্রাবাসের বহির্দ্বারে সামান্য কাষ্ঠাসনোপরি উপবেশন করিয়া বলিতেছে, "ভাবিলাম কী? ঘটিল
কী?
এখনই-বা উপায়
কী?
রাজ্য রক্ষা, রাজজীবন
রক্ষা,
নিজের প্রাণরক্ষার উপায়
কী?
কী
ভ্রম!
কী
ভয়ানক
ভ্রম!
আশা
ছিল,
শত্রুকে শূলে দিয়া
জগতে নাম জাঁকাইব,-যুদ্ধে
জয়লাভ
করিব,-সেই আশাবারিধি গাজী রহমানের মস্তিষ্কতেজে ছদ্মবেশী বাহরামের
বাহুবলে
এবং
ওমর
আলীর
কৌশলে একেবারে পরিশুষ্ক হইয়া
গিয়াছে। এখন
জীবনের আশঙ্কা, রাজ-জীবনে সন্দেহ। জয়নাল
আবেদীনের বন্দিগৃহ হইতে
পলায়নে
আরো
সর্বনাশ ঘটিল। দ্বারে দ্বারে
প্রহরী, নগরে প্রবেশের দ্বারে
প্রহরী, বহির্দ্বারে প্রহরী, সকল
প্রহরীর চক্ষে
ধুলা দিয়া আপন
মুক্তি আপনিই
করিল।
কী
আশ্চর্য কাণ্ড!
এখন
আর
কার
জন্য
যুদ্ধ?আর কি
কারণে হানিফার সহিত
শত্রুতা? কেন প্রাণী ক্ষয়? জয়নালকে হানিফার হস্তে
না
দিতে পারিলে আর রক্ষা
নাই।
সন্ধির
প্রস্তাব মুখে
আনিতেও আমার আর
ক্ষমতা নাই-আর তাহাতে ভুলিবে না। সন্ধির
নিশানে আর
পড়িবে
না।
শত
সহস্র দূতের প্রস্তাবেও আর
কর্ণপাত করিবে
না।
পরাজয়
স্বীকারে মৃত্তিকায় তরবারি রাখিয়া দিলেও
আর
ছাড়িবে
না।
যদি
জয়নালের মুক্তির
কথা
গোপনেই থাকে, তাহা
হইলে যুদ্ধে
আমাদের লাভ কি?
জয়নালই যদি আমাদের হাত ছাড়া
হইল,
তবে
হানিফা পরাজয়ে
ফল
কি?
ফল
আছে।
মহারাজের প্রাণ,
স্বদেশের স্বাধীনতা,
সঙ্গে
সঙ্গে
আমার
প্রাণ
রক্ষা
করা
ভিন্ন আর কি
আশা?
কিন্তু ইহাতেও
আমার
বিশেষ সন্দেহ আছে।
হোসেনপুত্র জয়নাল-সিংহশাবক সিংহ।
আজই
হউক,
কালই হউক, দু'দিন পরেই হউক,
তাহার বলবিক্রম সে প্রকাশ করিবে-নিশ্চয় করিবে। সে নব-কেশরীর
নবগর্জনে
দামেস্ক নগর
কাঁপিবেই কাঁপিবে।আর
পিতৃ-প্রতিশোধ সে কালে লইবেই
লইবে।"
মারওয়ানের চিন্তার ইতি নাই।
দামেস্কের এ
দুর্দশা কেন
ঘটিল,
এও
এক
প্রশ্ন আছে। এজিদের দোষ, কি
তাহার দোষ-সে
কথারও
মীমাংসা
হইতেছে। সর্বোপরি
প্রাণের ভয়-মহাভয়।
যদি
আবদুল্লাহ্
জেয়াদকে ওমর আলীর
বধসাধন-ভার
অর্পণ
করিয়া
রাজসমীপে না যাইত, তাহা
হইলে এই নিশীথ সময়ে প্রান্তরে বসিয়া
আর
চিন্তার ভার বহন
করিতে হইত না।
এ
কথাটা বিশেষ
করিয়া
আলোচনা করিতেছে।
মারওয়ান যে
স্থানে বসিয়াছিলেন,
সে
স্থান
হইতে হানিফার শিবিরে প্রজ্বলিত দীপমালা সমুজ্জ্বল নক্ষত্রমালার ন্যায়
তাঁহার
চক্ষে
দৃষ্ট হইতেছিল। প্রদীপ্ত দীপরাশির উজ্জ্বলাভা মনঃসংযোগে
দেখিতে দেখিতে তাঁহার
মনে
নূতন
একটি কথার সঞ্চার
হইল।
কথাটা কিছু
গুরুতর-অথচ
নীচ।
কিন্তু মারওয়ানের হৃদয়ে
সে-কথার সঞ্চার আজ
নূতন
নহে।
বিশেষ আসন্নকালে বিপরীত বুদ্ধিবলে
মারওয়ান মনের
কথা
মুখে আনিলেন।
গুপ্তভাবে
হানিফার শিবিরে যাইয়া
জয়নালের কোন সন্ধান
জানিতে পারা যায় কি?
যদি
জয়নাল
হানিফার হস্তগত হইয়া থাকে, তবে সকলই বৃথা।
কোন
উপায়ে,
কী
কোন
কৌশলে, কোন
সুযোগে জয়নালের কোন সন্ধান
করিতে পারিলে, এখনো
রক্ষার
অনেক
উপায়
করা
যায়।
মদিনায় মায়মুনার
আবাসে কত নিশীথ সময়ে ছদ্মবেশে যাইয়া
কত
গুপ্ত সন্ধান করিয়াছি, কত
অসাধ্য সাধনা সহজে
সাধন করিয়াছি, আর
এ
দামেস্কনগর আপন দেশ,
নিজের অধিকার,
এখানে কী কিছুই করিতে
পারিব না? তবে
একটি কথা,-পাত্রভেদে
কিছু লঘু-গুরু আছে। আবার
একেবারে নিঃসন্দেহের কথাও নহে।
মোহাম্মদ হানিফা বুদ্ধিমান্।
প্রধানমন্ত্রী গাজী
রহমান অদ্বিতীয়
রাজনীতিজ্ঞ, চিন্তাশীল ও চতুর,-তাঁহাদের নিকট মারওয়ান পরাস্ত। কি জানি কী কৌশল করিয়া শিবির রক্ষার কী
উপায়
করিয়াছে, হঠাৎ
বিপদগ্রস্ত হইলেও
হইতে পারি।
অদ্বিতীয় ভালবাসার প্রাণপাখিটাই যে দেহপি র
হইতে একেবারে দূর না
হইতে পারে,
তাহাই বা কে
বলিবে? এও সন্দেহ;
নতুবা দামেস্ক প্রান্তরে এই নিশীথ সময়ে একা
একা
ভ্রমণ করিতে
মারওয়ান সন্দিহান্ নহে,
দামেস্ক-রাজমন্ত্রী
ভীত
নহে।"
এই
বলিয়া
মারওয়ান আসন
ছাড়িল!
দাঁড়াইয়া একটু চিন্তা
করিয়া
বলিল,
"একা
যাইব না, অলীদকে সঙ্গে
করিয়া
ছদ্মবেশে-পথিক-সাজে-সামান্য পথিক-সাজে বাহির হইব!"
মারওয়ান বেশ-পরিবর্তন
জন্য
বস্ত্রাবাস
মধ্যে
প্রবেশ করিল।
অলীদের চক্ষেও আজ
নিদ্রা নাই। মহাবীর হৃদয় আজ
মহাচিন্তায় অস্থির। এ
যুদ্ধের পরিণামের ফল কি?
সময়ের
যে
প্রকার গতি দেখিতেছি,
শেষ
ঘটনার নিয়তি-দেবী যে কোন
দৃশ্য দেখাইয়া
এ
অভিনয়নের যবনিকা পতন
করিবেন তাহা
তিনিই জানেন।
অলীদ
শিবিরের বাহিরে পদচারণা
করিয়া
বেড়াইতেছে, আর
ভাবিতেছে-মাঝে মাঝে বিমানে পরিশোভিত তারাদলের মিটি মিটি
ভাব
দেখিয়া মনে মনে
আর
একটি মহাভাবের ভাবনা ভাবিতেছে। কিন্তু সে ভাব
ক্ষণকাল-সে
জ্বলন্ত দৃঢ়
ভাব
হৃদয়ে
স্থান
পাইতেছে
না।
মায়াময়
সংসারের স্বার্থপূর্ণ ভাবই প্রবলবেগে তাহার
হৃদয়
অধিকার করিতেছে। নিশির
শেষের সহিত কি
আবার
রণভেরী বাজিয়া উঠিবে?
কার
ভাগ্যে কি আছে,
কে
বলিবে? আবার তারাদলে
নয়ন
পড়িল,-সেই মধুমাখা মিটি
মিটি হাসি
ভাব,-এ তারা
ও
তারা, কত তারা দেখিল,
কিন্তু অরুন্ধতী নক্ষত্র
তাহার নয়নে পড়িল
না।
তারাদল হইতে নয়ন ফিরাইয়া আনিতেই
হানিফার শিবিরে প্রদীপ্ত দীপালোকের
প্রতি চক্ষু পড়িল।
অলীদ
সে
দিকে মনঃসংযোগ না করিয়া
অন্যদিকে দৃষ্টি করিতেই
তীর
ধনু
হস্তে
লইল।
ছদ্মবেশী মারওয়ান কথা
না
কহিলে অলীদ-বাণে তখনই
তাহার জীবন
শেষ
হইত।
অলীদ
বলিল,
"নিশীথ সময়ে এ
বেশে কোথায়?
ভাগ্যে কথা বলিয়াছিলেন।"
"তাহাতেও দুঃখ
ছিল
না।
যে
গতিক
দেখিতেছি
তাহাতে দুই-এক দিনের
অগ্র-পশ্চাৎ মাত্র।ভাল তোমার চক্ষে যে
আজি
নিদ্রা নাই?"
"আপনার
চক্ষেই-বা কী আছে?"
"অনেক চেষ্টা করিলাম,-কিছুতেই
নিদ্রা হইল না।
মনে
শান্তি নাই?" আত্মার পরিতোষ কিসে
হইবে? নানা
প্রকার চিন্তায়
মন
মহা
আকুল
হইয়া
পড়িয়াছে। দেখ
দেখি কি ভ্রম!
কি
করিতে গিয়া কি
ঘটিল।জেয়াদের মৃত্যু, জেয়াদ নিজ
বুদ্ধিতেই টানিয়া আনিয়াছিল। এমন
আশ্চর্য ঘটনা,
অভাবনীয় বুদ্ধিকৌশল,
হাতে হাতে
চাতুরী, কখনোই দেখি
নাই,
আজ
পর্যন্ত কাহারো মুখে
শুনিও নাই। ধন্য
মোহাম্মদ হানিফা! ধন্য
মন্ত্রী গাজী রহমান।"
"গত বিষয়ের
চিন্তা বৃথা।
আলোচনাতে
কেবল আক্ষেপ ও
মনের
কষ্ট!
ও-কথা মনে করিবার প্রয়োজন নাই।
এখন
রাত্রি প্রভাতের পর উপায়
কি?
যুদ্ধ আর ক্ষান্ত থাকে
না,-সে যুদ্ধই-বা কাহার
জন্য,
মূলধন
তো
সরিয়া
পড়িয়াছে।"
"সেও কম
আশ্চর্য নহে।"
"সময় মন্দ
হইলে এই প্রকারই হইয়া
থাকে।"
"যাহা
হইবার হইয়াছে, এখন
চল
একবার হানিফার শিবিরের দিকে
যাইয়া
দেখিয়া আসি, কোন
সুযোগে জয়নালের কোন সন্ধান
লইতে পারি
কি-না, এখন মূল
কথা
জয়নাল
আবেদীন। যুদ্ধ
করিতে হইলেও
জয়নাল।
পরাভব স্বীকার
করিয়া
প্রাণরক্ষা-রাজ্যরক্ষা করিতে
হইলেও জয়নাল! সন্ধির
প্রস্তাব করিতে
হইলেও সেই জয়নাল।
জয়নালের সন্ধান না
করিয়া
আর
কোন
কথা
উঠিতে পারে
না।
জীবনে মরণে, রাজ্য
রক্ষণে সকল অবস্থাতেই জয়নালের প্রয়োজন।"
"তাহা
তো
শুনিলাম! কিন্তু একটি
কথা-এই নিশীথ
সময়ে
জয়নালের সন্ধান করিতে কি বিপক্ষ-শিবিরে সন্ধান
জানিতে যাইব-তাহাতে কৃতকার্য হইতে পারিব
কি-না, সে বিষয়ে
একটুকু ভাবা চাই। ছদ্মবেশ ধারণ
করিয়া
পথিক,
পরিব্রাজক, দীন-দুঃখীর
পরিচয়
দিলেই যে কার্যসিদ্ধি
হয়
তাহা নহে। এ
মদিনার মায়মুনা
নহে,
দগ্ধহৃদয় জায়েদা নহে।
এ
বড়
কঠিন
হৃদয়,
বৃহৎ
মস্তক।
এ
মস্তকে মজ্জার ভাগও
অতি
অধিক,
শক্তিও
বেশি পরিমাণ,
ক্ষমতাও অপরিসীম। প্রত্যক্ষ প্রমাণ তো অনেক
দেখিতেছি।
আবার
এই
নিশীথ সময়ে ছদ্মবেশে গোপন ভাবে
দেখিয়া অধিক আর
লাভ
কি
হইবে? তাহাদের গুপ্তসন্ধান জানিয়া সাবধান সতর্ক
হওয়া,
কি
কোন
কার্যের প্রতিযোগিতা
করা,
কি
নূতন
কার্যের অনুষ্ঠান
করা
বহু
দূরের
কথা,
শিবিরের বহিঃস্থ সীমার নিকট
যাইতে পার
কি-না সন্দেহ। তোমার ইচ্ছা হইয়াছে-চল দেখিয়া
আসি,
গাজী রহমানের সতর্কতাও জানিয়া
আসি;
কিন্তু লাভ কিছু হইবে
না,
বরং
বিপদের আশঙ্কাই অধিক।"
"লাভের
আশা
যাহা পূর্বেই বলিয়াছি। সে
যে
ঘটিবে না, তাহাও বুঝিতেছি। তথাচ
যদি
কিছু পারি।"
"পারিবে তো অনেক।
মানে মানে
ফিরিয়া আসিতে
পারিলেই রক্ষা।"
"আচ্ছা, দেখাই যাউক,
আমাদেরই তো
রাজ্য।"
"আচ্ছা, আমি
সম্মত
আছি।"
"তবে আর
বিলম্ব কি?
পোশাক লও।"
"পোশাক
তো
লইবই, আরো কিছু লইব।"
"সাবধান! কেহ যেন
হঠাৎ
না
দেখিতে পায়।"
ওত্বে
অলীদ
ছদ্মবেশে মারওয়ানের সঙ্গে
চুপে চুপে
বাহির হইল। প্রভাত না-হইতেই ফিরিয়া
আসিবে, এই কথা
পথে
স্থির
হইল।
কিঞ্চিৎ দূরে আসিয়া
মারওয়ান বলল,
"একেবারে সোজা পথে যাইব না।শিবিরের পশ্চাৎভাগ সম্মুখে করিয়া যাইতে হইবে। এখন আমাদের বাম পার্শ্ব হইয়া ক্রমে শিবির
বেষ্টন করিয়া যাইতে থাকিব।"
এই
যুক্তিই স্থির করিয়া
বাম
দিকেই যাইতে লাগিল।
ক্রমে হানিফার শিবিরের পশ্চাৎ দিক
তাহাদের চক্ষে
পড়িতে
লাগিল। সম্মুখে
যেরূপ
আলোর
পরিপাটি, সেইরূপ পশ্চাৎ পার্শ্ব সকল দিকেই সমান।সম্মুখ, পার্শ্ব, পশ্চাতের
কিছুই ভেদ নাই।
কখনো দ্রুতপদে, কখনো মন্দ মন্দ
ভাবে চতুর্দিক
লক্ষ্য
করিয়া
যথাসাধ্য সতর্কিতভাবে যাইতে লাগিল।
কিছু দূর গিয়া
নিশ্চয় বুঝিতে পারিল
যে,
তাহাদের সঙ্গে
সঙ্গে
আরো
লোক
আসিতেছে। আরো
কিছু দূর অগ্রসর হইলে
হাসি, রহস্য,
বিদ্রূপসূচক কোন কোন কথার
আভাস
তাহাদের কানে আসিতে
লাগিল। কোন্
দিকে, কত দূর
হইতে-এই কথার
আভাস
আসিতেছে, তাহা স্থির করিতে পারিল
না।
কারণ কখনো
দক্ষিণে, কখনো
বামে, কখনো
সম্মুখে আবার কখনো পশ্চাতে-অতি মৃদুমৃদু কথার
আভাস
কানে আসিতে
লাগিল।
উভয়ে
গমনে ক্ষান্ত
দিয়া
মনঃসংযোগে
বিশেষ লক্ষ্যে চারিদিকে
দেখিতে লাগিল। দেখিল,
কোন
দিকে কিছুই
নাই,
চারিদিকে
অন্ধকার, উপরে
তারকারাজি।
উভয়ে
আবার
যাইতে লাগিল। অনুমান
দশ
পদ
ভূমি
অতিক্রম করিয়া যাইলেই, মানব মুখোচ্চারিত অর্থসংযুক্ত
কথার
ঈষৎ
ভাব
স্পষ্ট শুনিতে লাগিল।
সে
কথার
প্রতি গ্রাহ্য
না
করিয়া
যাইতে লাগিল।কিন্তু আর
বেশিদূর যাইতে হইল না।
আনুমানিক পঞ্চ
হস্ত
পরিমাণ ভূমি পশ্চাৎ
করিতেই তাহাদের বাম পার্শ্ব হইতে
শব্দ
হইল-"আর নয়, অনেক
আসিয়াছ।"
মারওয়ান চমকিয়া উঠিল।
আবার
শব্দ
হইল,
"কী
অভিসন্ধি?"
মারওয়ান ও
অলীদ
উভয়েই
চমকিয়া উঠিল, অঙ্গ
শিহরিয়া উঠিল,-স্থির ভাবে
দাঁড়াইল।
আবার
শব্দ
হইল,
নিশীথ সময়ে রাজশিবিরের দিকে
কেন?
সাবধান! আর
অগ্রসর হইয়ো না।যদি
কোন
আশা
থাকে, সূর্য উদয়ের
পর।"
মারওয়ান ও
অলীদ
উভয়ে
ফিরিল, আর সে
পথের
দিকে ফিরিয়াও
চাহিল না। কিছুদূর আসিয়া অন্য
পথে
অন্য
দিকে শিবিরের অন্য দিক
লক্ষ্য
করিয়া
চলিতে লাগিল।
মারওয়ান বলিল,
"অলীদ!আমাদের ভুল
হইয়াছে;
এদিকে না আসিয়া
অন্য
দিকে যাওয়াই ভাল
ছিল।"
"অন্য কোন্ দিকে
যাওয়া
ভাল
ছিল
বলুন,
সেই
দিকেই যাই। ভুল
সংশোধন করিতে কতক্ষণ?যে দিকে
আপনার নিঃসন্দেহ বোধ
হয়,
সেই
দিকেই চলুন।"
মারওয়ান শিবিরের দক্ষিণ
পার্শ্বে যাইতে লাগিল,
সেই
দিকে যাইতে মনে কোন
সন্দেহ
হইল
না।
পশ্চাতে, সম্মুখে
কি
বামে কোন দিকেই আর ভারি বোধ হইল
না।
নিঃসন্দেহে যাইতে লাগিল।
অলীদ
বলিল,
"দেখিলে? গাজী রহমানের বন্দোবস্ত দেখিলে?"
"এদিকে
কি?"
"বোধ হয়,
এদিকের জন্য তত
আবশ্যক মনে করেন
নাই।"
"সে কী
আর
ভ্রম
নয়?"
"মারওয়ান! এখন
ও-কথা মুখে
আনিয়ো
না।
গাজী রহমানের ভ্রম-একথা মুখে
আনিয়ো
না।কার্য সিদ্ধি
করিয়া
নির্বিঘ্নে শিবিরে যাইয়া
যাহা বলিবার
বলিয়ো।
কোন
দিকে কি কৌশল করিয়াছে, তাহা তাহারাই জানে।"
"তা জানুক, এদিকে
কোন
বাধা নাই, নিঃসন্দেহে যাইতেছি, মনে
কোনরূপ শঙ্কা হইতেছে না।"
"আমি ভাই
আমার
কথা
বলি।
আমার
মনে
অনেক
কথা
উঠিয়াছে-ভয়েরও
সঞ্চার
হইয়াছে।আমি তোমার পশ্চাতে
থাকিব না। দুই
জনে
একত্রে সমান ভাবে যাইব।
কেহই কাহারো অগ্র-পশ্চাৎ
হইব
না।"
মারওয়ান হাসিয়া বলিল, "অলীদ! তুমি আজ মহাবীরের নাম
হাসাইলে!
অল্পমতি বালকগণের মনের গতির
সহিত,
পরিপক্ব মনের
সমান
ভাব
দেখাইলে!
বীরহৃদয়ে, ভয়!
দুইজনে
সমানভাবে
একত্র যাইতে পারিলেই নির্ভয়,
এ
কি
কথা?"
"মারওয়ান! আমরা যে কার্যে বাহির
হইয়াছি,
সে
কার্যের কথা মনে
আছে?
কার্যগতিকে সাহস,
রুচিগতিকে বল। এখন
তোমার মন্ত্রীত্ব
নাই,
আমারও
বীরত্ব নাই!
যেমন কার্য,
তেমনই স্বভাব।"
উভয়ে
হাসি-রহস্যে
একত্রে যাইতেছে, প্রজ্বলিত দীপের প্রদীপ্ত আভায় শিবির-দ্বার, মানুষের গতিবিধি স্পষ্টভাবে
দেখা যাইতেছে। গমনের বেগ কিছু বেশি
করিল,
সঙ্গে
সঙ্গে
হাসি-রহস্য
চলিতেছে। দুর্ভাগ্যক্রমে তাহাদের হাসিমুখ বেশিক্ষণ রহিল না।
দৈবাৎ
একটি শব্দ তাহাদের কর্ণে
প্রবেশ করিল। দক্ষিণে-বামে
দৃষ্টি করিল অন্ধকার-সম্মুখে
দীপালোক-গমনে ক্ষান্ত
হইল।
আবার
সেই
হৃদয়-কম্পনকারী শব্দ-ক্ষিপ্রহস্ত
নিক্ষিপ্ত তীরের শন্শন্
শব্দ।
অন্তরে জানিয়াছে-তীরের গতি,
মুখে বলিতেছে-"কিসের শব্দ?
অলীদ!
কিসের শব্দ?" কি বিপদ, মুখের
কথা
মুখে থাকিতেই তিনটি লৌহশর তাহাদের সম্মুখে
আসিয়া
পড়িল।
এখন
কি
করিবে, অগ্রে পা
ফেলিবে, কি
পাছে সরিবে,
কি
স্থিরভাবে
এক
স্থানে দণ্ডায়মান থাকিবে, কিছুই স্থির করিতে পারিল
না।
দক্ষিণ
পার্শ্ব হইতে
গম্ভীর
নাদে শব্দ হইল,
"শত্রু
হও,
মিত্র হও, ফিরিয়া যাও,-রাত্রে এ শিবিরে প্রবেশ নিষেধ-রাত্রে আঘাত
মহারাজের নিষিদ্ধ, তাহাতেই প্রাণ
বাঁচাইয়া গেলে; নতুবা
ঐ
স্থানেই ইহকালের মত পড়িয়া
থাকিতে!"
আর
কোন
কথা
নাই।
চতুর্দিকে নিঃশব্দ।
কিছুক্ষণ পরে
অলীদ
বলিল,
"মারওয়ান! এখন
আর
কথা
কি?
আঙ্গুল
পরিমাণ ভূমি আগে
যাইতে আর
কি
সাহস হয়?"
মারওয়ান মৃদুস্বরে
বলিল,
"ওহে
চুপ
কর!
প্রহরীরা
আমাদের নিকটেই আছে।"
"নিকটে থাকিলে তো ধরিয়া
ফেলিত।"
"ধরিবার
তো
কোন
কথা
নাই।
তবে
উহারা বিশেষ
সতর্কতার সহিত
শিবির রক্ষা করিতেছে।যে উদ্দেশ্যে আসিয়াছিলাম,
তাহা ঘটিল না।
এখন
নিরাপদে
শিবিরে যাইতে পারিলেই রক্ষা।"
"সে কথা
তো
আমি
আগেই
বলিয়াছি। এখন
লাভের মধ্যে প্রাণ
লইয়া
টানাটানি।"
মারওয়ান বলিল,
"আর
কথা
বলিব
না,
চুপে চুপে
নিঃশব্দে
চলিয়া
যাই।"
উভয়ে
কিছুদূর আসিয়া, "রক্ষা পাইলাম" বলিয়া দাঁড়াইল। চুপি চুপি
কথা
কহিতেও সাহস
হইল
না-পারিলও না।
কণ্ঠ-তালু শুষ্ক, জিহ্বা একেবারে নীরস,-তবু বহুদূরে সরিয়া
পড়িয়াছে। ক্ষণকাল পরে
একটু স্থির হইয়া
মারওয়ান বলিল,
"অলীদ!
বাঁচিলাম। চল, এখন
একটু স্থির হইয়া
আমাদের শিবিরে যাই।"
মুখের কথা শেষ
হইতেই পশ্চাদ্দিক
হইতে বজ্রনাদে শব্দ হইল-"সাবধান,
আর
কথা
বলিয়ো
না,-চলিয়া যাও;-ঐ
বৃক্ষ-ঐ তোমাদের সম্মুখের ঐ উচ্চ
খর্জুর
বৃক্ষ সীমা।
আমাদের নির্দিষ্ট সীমার
মধ্যে
থাকিতে পারিবে না।
যদি
প্রাণ
বাঁচাইতে চাও,
সীমার বাহিরে যাও।"
কি
করে,
উভয়ে
দ্রুতপদে
সীমা-বৃক্ষ
ছাড়িয়া
রক্ষা
পাইল। আর কোন
কথা
শুনিল না।মারওয়ান বলিল,
"জীবনে এমন
অপমান কখনোই
হই
নাই।
কী
লজ্জা!"
মারওয়ান বলিল,
"কী
বিপদ! হানিফার প্রহরীরা কি
প্রান্তরের চতুষ্পার্শে ঘিরিয়া রহিয়াছে?এখনো কিছুতেই মন সুস্থির হয় নাই।
এখনো হৃদয়ের চঞ্চলতা দূর
হয়
নাই।
এখানে দাঁড়াইব না।
এখন
সন্দেহ
হইতেছে! আমাদের দেশ-আমাদের রাজ্য,
সীমা-বৃক্ষ
উহাদের-কী আশ্চর্য? সীমা-বৃক্ষ না
ছাড়াইয়া আসিলে জীবন
যায়।
কী
ভয়ানক
ব্যাপার! চল, শিবিরে যাই।"
উভয়ে
নীরবে আপন
শিবিরাভিমুখে চলিল!
যাইতে যাইতে সম্মুখে একখণ্ড বৃহৎ শিলাখণ্ড
দেখিয়া মারওয়ান বলিল,
"অলীদ!
এই
শিলাখণ্ডের
উপরে একটু
বসিয়া
বিশ্রাম করি। নানা কারণে মন অস্থির
হইয়াছে। আর
কোন
গোলযোগ নাই।
ক্ষণকাল এই
স্থানে বসিয়া মনের
অস্থিরতা দূর
করি।
যেমন কার্যে
আসিয়াছিলাম
তাহার প্রতিফলও পাইলাম।"
অলীদ
মারওয়ানের কথায়
আর
কোন
আপত্তি না করিয়া
শিলাখণ্ডের
চতুষ্পার্শ একবার বেষ্টন
করিয়া
আসিল
এবং
নিঃসন্দেহভাবে
উভয়ে
বসিয়া
অস্ফুট
স্বরে দুই-একটি কথা কহিতে লাগিল।
এক
কথার
ইতি
না-হইতেই অন্য
কথা
তুলিলে কথার
বান্ধুনি থাকে না, সমাজ-বিশেষে
অসভ্যতাও প্রকাশ পায়। জয়নাল
আবেদীন বন্দিগৃহ
হইতে চলিয়া যাওয়ার
পর
এমন
সুযোগ পাই নাই
যে,
তাঁহার
বিবরণ পাঠকগণের গোচর
করি।
মারওয়ান ও
ওত্বে
অলীদ
শিলাখণ্ডের
উপর
বসিয়া
নির্বিঘ্নে মনের
কথা
ভাঙ্গচুর করুন,
এই
অবসরে আমরা জয়নালের
কথাটা বলিয়া রাখি।
জয়নাল
আবেদীন, ওমর আলীর
শূলের
ঘোষণা শুনিয়া বন্দিগৃহের সম্মুখস্থ প্রাঙ্গণ
হইতে প্রহরীদলের
অসাবধানতায় নাগরিক দলে মিশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়াছিলেন!
তিনি নামে
সকলের নিকট
পরিচিত কিন্তু
অনেকে তাঁহাকে
চক্ষে
দেখে নাই। মোহাম্মদ হানিফাকে
তিনি কখনো
দেখেন নাই, ওমর
আলীকেও দেখেন
নাই,-অথচ ওমর আলীর
প্রাণরক্ষার
জন্য
চেষ্টা করিবেন,
এই
দুরাশার কুহকে মাতিয়াই দামেস্কপ্রান্তরে আসিয়াছিলেন।
এজিদের শিবির,
হানিফার শিবির, ওমর আলীর
নিষ্কৃতি সমুদয়
দেখিয়াছেন, তাঁহার নিজের
প্রাণবধ করার
ঘোষণাও স্বকর্ণে শুনিয়াছেন। ঐ ঘোষণার পর তিলার্ধকালও
দামেস্কপ্রান্তরে অবস্থিত করেন নাই;
নিকটস্থ
এক
পর্বত
গুহায় আত্মগোপন করিয়া দিবা অতিবাহিত করিয়াছেন। নিশীথ সময়ে পর্বত
গুহা হইতে
বহির্গত হইয়া তাঁহার
প্রথম চিন্তা-কী উপায়ে মোহাম্মদ হানিফার সহিত
একত্রিত হইবেন।
সে
শিবিরে তাঁহার
পরিচিত লোক কেহই নাই! নিজ
মুখে নিজ পরিচয়
দিয়া
খাড়া
হইতেও নিতান্ত অনিচ্ছা।
ভাবিয়া কিছুই
স্থির
করিতে না পারিয়া, দুই-এক
পদে
হানিফার শিবিরাভিমুখেই যাইতেছেন।
অলীদ
বলিলেন, "মারওয়ান! কিছু শুনিতে পাইতেছ?"
"স্পষ্ট
বুঝিতে পারিতেছি
না,
কিন্তু মানুষের গতিবিধির ভাব বেশ
বুঝা যাইতেছে। একজন দুইজন নহে, বহুলোকের সাবধানে
পদবিক্ষেপ ভাব
অনুভব হইতেছে। আর এখানে থাকা
উচিত
নহে।
বোধ
হয়
বিপক্ষেরা
আমাদের পরিচয় পাইয়াছে, এখনো আমাদিগকে ছাড়ে
নাই।
ঐ
দেখ
সম্মুখে চাহিয়া
দেখ।
আমরা ছদ্মবেশে আসিয়াছি, কেবল তোমার
নিকটে একখানি তরবারি আর
আমার
নিকট সামান্য একখানি ছুরি
ভিন্ন অন্য কোন
অস্ত্র
আমাদের সঙ্গে নাই।
আর
থাকিলেই বা
কি
হইত?
তাহাদের তীরের মুখ হইতে দিনে
রক্ষা
পাওয়াই
দায়,
তায়
আবার
ঘোর
নিশা। মনঃসংযোগে কান
পাতিয়া শোন, যেন
চতুর্দিকেই লোকের গতিবিধি, চলাফেরা, সাড়া পাওয়া
যাইতেছে।
চল,
আর
এখানে থাকা
নহে।"
এই
বলিয়া
শিলাখণ্ড
হইতে উভয়ে গাত্রোত্থান করিয়া
সমতল ক্ষেত্রে
দণ্ডায়মান হইলেন।
জয়নাল
আবেদীনও নিকটবর্তী
হইয়া
গম্ভীর
স্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন,
"তোমরা কে?"
মারওয়ান থতমত খাইয়া সভয়
হৃদয়ে
উত্তর
করিল,
"আমরা পথিক, পথহারা হইয়া
এখানে আসিয়াছি।"
"নিশীথ
সময়ে
পথিক
পথহারা হইয়া
যুদ্ধক্ষেত্রে!
এ
কী
কথা?"
পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন, "ওহে পথিক! তোমরা কি
বিদেশী?"
"হাঁ, আমরা বিদেশী।"
"কী আশ্চর্য! তোমরা বিদেশী হইয়া এই
মহা
সংগ্রামস্থলে কি উদ্দেশ্যে আসিয়াছ? সত্য
বল,
কোন
চিন্তা নাই।"
মারওয়ান বলিল,
"যথার্থ বলিতেছি-আমরা
বিদেশী, অজানা দেশ, পথঘাটের ভাল
পরিচয়
নাই-চিনি না।
দামেস্ক নগরে চাকরির আশায় যাইতেছি।
দিবসে সৈন্যসামন্তের
ভয়;
রাত্রেই নগরে
প্রবেশ করিব আশা
এবং
অন্তরে নিগূঢ় তত্ত্ব।"
"তোমরা কোথা
হইতে আসিতেছ?
তোমাদের বসতি কোথায়?"
"আমরা
মদিনা হইতে
আসিতেছি। মদিনায় আমাদের
বাসস্থান।"
ভীমনাদে
শিলারাশির
পার্শ্ব হইতে
শব্দ
হইল-"ওরে ছদ্মবেশী নিশাচর! মদিনাবাসীরা
দামেস্কে চাকরির আশায়
আসিয়াছে? আর
কোথায় যাইবি? এই স্থানেই নিশা
যাপন কর। প্রভাতে পরীক্ষার পর মুক্তি।এক পদও আর অগ্রসর হইতে
পারিবি না।
যদি
চক্ষের
জ্যোতি থাকে,
দৃষ্টির ক্ষমতা থাকে,
তবে
যেদিকে ইচ্ছা
চাহিয়া দেখ, পঞ্চবিংশতি বর্শার ফলক
তোমাদের বক্ষঃ,
পৃষ্ঠ, বাহু
ও
পার্শ্ব লক্ষ্য করিয়া
স্থিরভাবে
রহিয়াছে।সাবধান, কোন কথার
প্রসঙ্গ করিয়ো
না,-নীরবে
তিন
মূর্তি
প্রভাত পর্যন্ত
এই
স্থানে দণ্ডায়মান থাক।
আর
যাইবার সাধ্য নাই। মোহাম্মদ হানিফার গুপ্ত সৈন্য দ্বারা তোমরা তিনজন সূর্যোদয়
পর্যন্ত বন্দি।" 
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
#উপন্যাস
#অনুবাদ
#মোলাকাত
#Molakat
#Novel
#Translation
#BanglaLiterature
#Literature
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#বাংলাসাহিত্য
#সাহিত্য
#বিষাধসিন্ধু
#মীর_মশাররফ_হোসেন
 
No comments