বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_উদ্ধার পর্ব : ৬৬তম প্রবাহ

 
রজ­নী দ্বি­প্র­হর। তি­থির পরি­ভা­গে বি­ধুর অনুদয়, কি­ন্তু আকাশ নক্ষ­ত্র­মা­লায় পরি­শো­ভিত। মহা কো­লা­­লপূর্ণ সমর-প্রা­ঙ্গণ এক্ষ­ণে সম্পূর্ণ­ভা­বে নি­স্ত­ব্ধ। দা­মে­স্ক প্রা­ন্ত­রে প্রা­ণীর অভাব নাই। কি­ন্তু প্রায় সক­লেই নি­দ্রার কো­লে অচে­তন। জা­গে কে?-প্র­­রী­দল, সন্ধা­নী দল, আর উভয় পক্ষের মন্ত্রী­দল! মন্ত্রী­দল মধ্যেও কেহ কেহ আল­স্যের পরি­ভো­গে চক্ষু মু­দিয়া চি­ন্তায় নি­­গ্ন হই­তে­ছেন, কেহ দি­বা­ভা­গে সেই অভা­­নীয় ঘট­নার কোন কোন অংশ ভা­বিয়া উপ­বে­শন স্থা­নেই গড়াইয়া পড়িয়াছেন, কেহ শয়ন-শয্যার এক পা­র্শ্বে পড়িয়া আধ-জা­­­ণে আধ-স্ব­­নে জেয়াদের শির শূন্য দেহ দে­খিয়া চম­কিয়া উঠি­তে­ছেন। যথা­র্থ জা­­রিত কে? এক পক্ষে মারওয়ান, অন্য পক্ষে গা­জী রহ­মান
মারওয়ান আপন নি­র্দি­ষ্ট বস্ত্রা­বা­সের বহি­র্দ্বা­রে সা­মা­ন্য কা­ষ্ঠা­­নো­­রি উপ­বে­শন করিয়া বলি­তে­ছে, "ভা­বি­লাম কী? ঘটিল কী? এখ­নই-বা উপায় কী? রা­জ্য রক্ষা, রা­­জী­বন রক্ষা, নি­জের প্রা­­­ক্ষার উপায় কী? কী ভ্রম! কী ভয়ানক ভ্রম! আশা ছিল, শত্রু­কে শূলে দিয়া জগ­তে নাম জাঁকা­ইব,-যু­দ্ধে জয়লাভ করিব,-সেই আশা­বা­রি­ধি গা­জী রহ­মা­নের মস্তি­ষ্ক­তে­জে ছদ্ম­বে­শী বা­­রা­মের বা­হু­­লে এবং ওমর আলীর কৌ­­লে একে­বা­রে পরি­শু­ষ্ক হইয়া গিয়াছে। এখন জী­­নের আশ­ঙ্কা, রাজ-জী­­নে সন্দেহ। জয়নাল আবে­দী­নের বন্দি­গৃহ হই­তে পলায়নে আরো সর্ব­নাশ ঘটিল। দ্বা­রে দ্বা­রে প্র­­রী, নগ­রে প্র­বে­শের দ্বা­রে প্র­­রী, বহি­র্দ্বা­রে প্র­­রী, সকল প্র­­রীর চক্ষে ধু­লা দিয়া আপন মু­ক্তি আপ­নিই করিল। কী আশ্চ­র্য কা­ণ্ড! এখন আর কার জন্য যু­দ্ধ?আর কি কা­­ণে হা­নি­ফার সহিত শত্রু­তা? কেন প্রা­ণী ক্ষয়? জয়না­­কে হা­নি­ফার হস্তে না দি­তে পা­রি­লে আর রক্ষা নাই। সন্ধির প্র­স্তাব মু­খে আনি­তেও আমার আর ক্ষ­­তা নাই-আর তা­হা­তে ভু­লি­বে না। সন্ধির নি­শা­নে আর পড়িবে না। শত সহ­স্র দূতের প্র­স্তা­বেও আর কর্ণ­পাত করি­বে না। পরাজয় স্বী­কা­রে মৃ­ত্তি­কায় তর­বা­রি রা­খিয়া দি­লেও আর ছাড়িবে না। যদি জয়না­লের মু­ক্তির কথা গো­­নেই থা­কে, তা­হা হই­লে যু­দ্ধে আমা­দের লাভ কি? জয়না­লই যদি আমা­দের হাত ছাড়া হইল, তবে হা­নি­ফা পরাজয়ে ফল কি? ফল আছে। মহা­রা­জের প্রাণ, স্ব­দে­শের স্বা­ধী­­তা, সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রাণ রক্ষা করা ভি­ন্ন আর কি আশা? কি­ন্তু ইহা­তেও আমার বি­শেষ সন্দেহ আছে। হো­সে­­পু­ত্র জয়নাল-সি­­­শা­বক সি­ংহ। আজই হউক, কা­লই হউক, দু'দিন পরেই হউক, তা­হার বল­বি­ক্রম সে প্র­কাশ করি­বে-নি­শ্চয় করি­বে। সে নব-কে­­রীর নব­­র্জ­নে দা­মে­স্ক নগর কাঁপি­বেই কাঁপি­বে।আর পি­তৃ-প্র­তি­শোধ সে কা­লে লই­বেই লই­বে।"
মারওয়ানের চি­ন্তার ইতি নাই। দা­মে­স্কের দু­র্দ­শা কেন ঘটিল, এও এক প্র­শ্ন আছে। এজি­দের দোষ, কি তা­হার দোষ-সে কথারও মী­মা­­সা হই­তে­ছে। সর্বে­­­রি প্রা­ণের ভয়-মহাভয়। যদি আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ­কে ওমর আলীর বধ­সা­ধন-ভার অর্পণ করিয়া রা­­­মী­পে না যা­ইত, তা­হা হই­লে এই নি­শীথ সময়ে প্রা­ন্ত­রে বসিয়া আর চি­ন্তার ভার বহন করি­তে হইত না। কথা­টা বি­শেষ করিয়া আলো­­না করি­তে­ছে
মারওয়ান যে স্থা­নে বসিয়াছি­লেন, সে স্থান হই­তে হা­নি­ফার শি­বি­রে প্র­জ্ব­লিত দী­­মা­লা সমু­জ্জ্বল নক্ষ­ত্র­মা­লার ন্যায় তাঁহার চক্ষে দৃ­ষ্ট হই­তে­ছিল। প্র­দী­প্ত দী­­রা­শির উজ্জ্ব­লা­ভা মনঃ­সং­যো­গে দে­খি­তে দে­খি­তে তাঁহার মনে নূতন এক­টি কথার সঞ্চার হইল। কথা­টা কি­ছু গু­রু­তর-অথচ নীচ। কি­ন্তু মারওয়ানের হৃদয়ে সে-কথার সঞ্চার আজ নূতন নহে। বি­শেষ আস­ন্ন­কা­লে বি­­রীত বু­দ্ধি­­লে মারওয়ান মনের কথা মু­খে আনি­লেন। গু­প্ত­ভা­বে হা­নি­ফার শি­বি­রে যাইয়া জয়না­লের কোন সন্ধান জা­নি­তে পা­রা যায় কি? যদি জয়নাল হা­নি­ফার হস্ত­গত হইয়া থা­কে, তবে সক­লই বৃ­থা। কোন উপায়ে, কী কোন কৌ­­লে, কোন সু­যো­গে জয়না­লের কোন সন্ধান করি­তে পা­রি­লে, এখ­নো রক্ষার অনেক উপায় করা যায়। মদি­নায় মায়মু­নার আবা­সে কত নি­শীথ সময়ে ছদ্ম­বে­শে যাইয়া কত গু­প্ত সন্ধান করিয়াছি, কত অসা­ধ্য সা­­না সহ­জে সা­ধন করিয়াছি, আর দা­মে­স্ক­­গর আপন দেশ, নি­জের অধি­কার, এখা­নে কী কি­ছুই করি­তে পা­রিব না? তবে এক­টি কথা,-পা­ত্র­ভে­দে কি­ছু লঘু-গু­রু আছে। আবার একে­বা­রে নি­­­ন্দে­হের কথাও নহে। মো­হা­ম্মদ হা­নি­ফা বু­দ্ধি­মা­ন্। প্র­ধা­­­ন্ত্রী গা­জী রহ­মান অদ্বি­তীয় রা­­নী­তি­জ্ঞ, চি­ন্তা­শীল চতুর,-তাঁহা­দের নি­কট মারওয়ান পরা­স্ত। কি জা­নি কী কৌ­শল করিয়া শি­বির রক্ষার কী উপায় করিয়াছে, হঠাৎ বি­­­গ্র­স্ত হই­লেও হই­তে পা­রি। অদ্বি­তীয় ভা­­বা­সার প্রা­­পা­খি­টাই যে দে­­পি হই­তে একে­বা­রে দূর না হই­তে পা­রে, তা­হাই বা কে বলি­বে? এও সন্দেহ; নতু­বা দা­মে­স্ক প্রা­ন্ত­রে এই নি­শীথ সময়ে একা একা ভ্র­মণ করি­তে মারওয়ান সন্দি­হা­ন্ নহে, দা­মে­স্ক-রা­­­ন্ত্রী ভীত নহে।"
এই বলিয়া মারওয়ান আসন ছাড়িল! দাঁড়াইয়া এক­টু চি­ন্তা করিয়া বলিল, "একা যা­ইব না, অলী­­কে সঙ্গে করিয়া ছদ্ম­বে­শে-পথিক-সা­জে-সা­মা­ন্য পথিক-সা­জে বা­হির হইব!"
মারওয়ান বেশ-পরি­­র্তন জন্য বস্ত্রা­বাস মধ্যে প্র­বেশ করিল
অলী­দের চক্ষেও আজ নি­দ্রা নাই। মহা­বীর হৃদয় আজ মহা­চি­ন্তায় অস্থির। যু­দ্ধের পরি­ণা­মের ফল কি? সময়ের যে প্র­কার গতি দে­খি­তে­ছি, শেষ ঘট­নার নিয়তি-দে­বী যে কোন দৃ­শ্য দে­খাইয়া অভিনয়নের যব­নি­কা পতন করি­বেন তা­হা তি­নিই জা­নেন
অলীদ শি­বি­রের বা­হি­রে পদ­চা­­ণা করিয়া বেড়াই­তে­ছে, আর ভা­বি­তে­ছে-মা­ঝে মা­ঝে বি­মা­নে পরি­শো­ভিত তা­রা­­লের মি­টি মি­টি ভাব দে­খিয়া মনে মনে আর এক­টি মহা­ভা­বের ভা­­না ভা­বি­তে­ছে। কি­ন্তু সে ভাব ক্ষ­­কাল-সে জ্ব­­ন্ত দৃঢ় ভাব হৃদয়ে স্থান পা­­তে­ছে না। মায়াময় সং­সা­রের স্বা­র্থপূর্ণ ভা­বই প্র­­­বে­গে তা­হার হৃদয় অধি­কার করি­তে­ছে। নি­শির শে­ষের সহিত কি আবার রণ­ভে­রী বা­জিয়া উঠি­বে? কার ভা­গ্যে কি আছে, কে বলি­বে? আবার তা­রা­­লে নয়ন পড়িল,-সেই মধু­মা­খা মি­টি মি­টি হা­সি ভাব,- তা­রা তা­রা, কত তা­রা দে­খিল, কি­ন্তু অরু­ন্ধ­তী নক্ষ­ত্র তা­হার নয়নে পড়িল না। তা­রা­দল হই­তে নয়ন ফি­রাইয়া আনি­তেই হা­নি­ফার শি­বি­রে প্র­দী­প্ত দী­পা­লো­কের প্র­তি চক্ষু পড়িল। অলীদ সে দি­কে মনঃ­সং­যোগ না করিয়া অন্য­দি­কে দৃ­ষ্টি করি­তেই তীর ধনু হস্তে লইল। ছদ্ম­বে­শী মারওয়ান কথা না কহি­লে অলীদ-বা­ণে তখ­নই তা­হার জী­বন শেষ হইত
অলীদ বলিল, "নি­শীথ সময়ে বে­শে কো­থায়? ভা­গ্যে কথা বলিয়াছি­লেন।"
"তা­হা­তেও দু­ঃখ ছিল না। যে গতিক দে­খি­তে­ছি তা­হা­তে দুই-এক দি­নের অগ্র-পশ্চাৎ মা­ত্র।ভাল তো­মার চক্ষে যে আজি নি­দ্রা নাই?"
"আপ­নার চক্ষেই-বা কী আছে?"
"অনেক চে­ষ্টা করি­লাম,-কি­ছু­তেই নি­দ্রা হইল না। মনে শা­ন্তি নাই?" আত্মার পরি­তোষ কি­সে হই­বে? না­না প্র­কার চি­ন্তায় মন মহা আকুল হইয়া পড়িয়াছে। দেখ দে­খি কি ভ্রম! কি করি­তে গিয়া কি ঘটিল।জেয়াদের মৃ­ত্যু, জেয়াদ নিজ বু­দ্ধি­তেই টা­নিয়া আনিয়াছিল। এমন আশ্চ­র্য ঘট­না, অভা­­নীয় বু­দ্ধি­কৌ­শল, হা­তে হা­তে চা­তু­রী, কখ­নোই দে­খি নাই, আজ পর্য­ন্ত কা­হা­রো মু­খে শু­নিও নাই। ধন্য মো­হা­ম্মদ হা­নি­ফা! ধন্য মন্ত্রী গা­জী রহ­মান।"
"গত বিষয়ের চি­ন্তা বৃ­থা। আলো­­না­তে কে­বল আক্ষেপ মনের কষ্ট! -কথা মনে করি­বার প্রয়োজন নাই। এখন রা­ত্রি প্র­ভা­তের পর উপায় কি? যু­দ্ধ আর ক্ষা­ন্ত থা­কে না,-সে যু­দ্ধই-বা কা­হার জন্য, মূলধন তো সরিয়া পড়িয়াছে।"
"সেও কম আশ্চ­র্য নহে।"
"সময় মন্দ হই­লে এই প্র­কা­রই হইয়া থা­কে।"
"যা­হা হই­বার হইয়াছে, এখন চল এক­বার হা­নি­ফার শি­বি­রের দি­কে যাইয়া দে­খিয়া আসি, কোন সু­যো­গে জয়না­লের কোন সন্ধান লই­তে পা­রি কি-না, এখন মূল কথা জয়নাল আবে­দীন। যু­দ্ধ করি­তে হই­লেও জয়নাল। পরা­ভব স্বী­কার করিয়া প্রা­­­ক্ষা-রা­জ্য­­ক্ষা করি­তে হই­লেও জয়নাল! সন্ধির প্র­স্তাব করি­তে হই­লেও সেই জয়নাল। জয়না­লের সন্ধান না করিয়া আর কোন কথা উঠি­তে পা­রে না। জী­­নে মর­ণে, রা­জ্য রক্ষ­ণে সকল অব­স্থা­তেই জয়না­লের প্রয়োজন।"
"তা­হা তো শু­নি­লাম! কি­ন্তু এক­টি কথা-এই নি­শীথ সময়ে জয়না­লের সন্ধান করি­তে কি বি­­ক্ষ-শি­বি­রে সন্ধান জা­নি­তে যা­ইব-তা­হা­তে কৃ­­কা­র্য হই­তে পা­রিব কি-না, সে বিষয়ে এক­টু­কু ভা­বা চাই। ছদ্ম­বেশ ধা­রণ করিয়া পথিক, পরি­ব্রা­জক, দীন-দু­­খীর পরিচয় দি­লেই যে কা­র্য­সি­দ্ধি হয় তা­হা নহে। মদি­নার মায়মু­না নহে, দগ্ধ­হৃদয় জায়েদা নহে। বড় কঠিন হৃদয়, বৃহৎ মস্তক। মস্ত­কে মজ্জার ভাগও অতি অধিক, শক্তিও বে­শি পরি­মাণ, ক্ষ­­তাও অপ­রি­সীম। প্র­ত্য­ক্ষ প্র­মাণ তো অনেক দে­খি­তে­ছি। আবার এই নি­শীথ সময়ে ছদ্ম­বে­শে গো­পন ভা­বে দে­খিয়া অধিক আর লাভ কি হই­বে? তা­হা­দের গু­প্ত­­ন্ধান জা­নিয়া সা­­ধান সত­র্ক হওয়া, কি কোন কা­র্যের প্র­তি­যো­গি­তা করা, কি নূতন কা­র্যের অনু­ষ্ঠান করা বহু দূরের কথা, শি­বি­রের বহি­­স্থ সী­মার নি­কট যা­­তে পার কি-না সন্দেহ। তো­মার ইচ্ছা হইয়াছে-চল দে­খিয়া আসি, গা­জী রহ­মা­নের সত­র্ক­তাও জা­নিয়া আসি; কি­ন্তু লাভ কি­ছু হই­বে না, বরং বি­­দের আশ­ঙ্কাই অধিক।"
"লা­ভের আশা যা­হা পূর্বেই বলিয়াছি। সে যে ঘটি­বে না, তা­হাও বু­ঝি­তে­ছি। তথাচ যদি কি­ছু পা­রি।"
"পা­রি­বে তো অনেক। মা­নে মা­নে ফি­রিয়া আসি­তে পা­রি­লেই রক্ষা।"
"আচ্ছা, দে­খাই যা­উক, আমা­দে­রই তো রা­জ্য।"
"আচ্ছা, আমি সম্মত আছি।"
"তবে আর বি­­ম্ব কি? পো­শাক লও।"
"পো­শাক তো লই­বই, আরো কি­ছু লইব।"
"সা­­ধান! কেহ যেন হঠাৎ না দে­খি­তে পায়।"
ওত্বে অলীদ ছদ্ম­বে­শে মারওয়ানের সঙ্গে চু­পে চু­পে বা­হির হইল। প্র­ভাত না-হই­তেই ফি­রিয়া আসি­বে, এই কথা পথে স্থির হইল। কি­ঞ্চিৎ দূরে আসিয়া মারওয়ান বলল, "একে­বা­রে সো­জা পথে যা­ইব না।শি­বি­রের পশ্চাৎভাগ সম্মু­খে করিয়া যা­­তে হই­বে। এখন আমা­দের বাম পা­র্শ্ব হইয়া ক্র­মে শি­বির বে­ষ্টন করিয়া যা­­তে থা­কিব।"
এই যু­ক্তিই স্থির করিয়া বাম দি­কেই যা­­তে লা­গিল। ক্র­মে হা­নি­ফার শি­বি­রের পশ্চাৎ দিক তা­হা­দের চক্ষে পড়িতে লা­গিল। সম্মু­খে যেরূপ আলোর পরি­পা­টি, সে­ইরূপ পশ্চাৎ পা­র্শ্ব সকল দি­কেই সমান।সম্মুখ, পা­র্শ্ব, পশ্চা­তের কি­ছুই ভেদ নাই। কখ­নো দ্রু­­­দে, কখ­নো মন্দ মন্দ ভা­বে চতু­র্দিক লক্ষ্য করিয়া যথা­সা­ধ্য সত­র্কি­­ভা­বে যা­­তে লা­গিল। কি­ছু দূর গিয়া নি­শ্চয় বু­ঝি­তে পা­রিল যে, তা­হা­দের সঙ্গে সঙ্গে আরো লোক আসি­তে­ছে। আরো কি­ছু দূর অগ্র­সর হই­লে হা­সি, রহ­স্য, বি­দ্রূপসূচক কোন কোন কথার আভাস তা­হা­দের কা­নে আসি­তে লা­গিল। কো­ন্ দি­কে, কত দূর হই­তে-এই কথার আভাস আসি­তে­ছে, তা­হা স্থির করি­তে পা­রিল না। কা­রণ কখ­নো দক্ষি­ণে, কখ­নো বা­মে, কখ­নো সম্মু­খে আবার কখ­নো পশ্চা­তে-অতি মৃ­দু­মৃ­দু কথার আভাস কা­নে আসি­তে লা­গিল
উভয়ে গম­নে ক্ষা­ন্ত দিয়া মনঃ­সং­যো­গে বি­শেষ লক্ষ্যে চা­রি­দি­কে দে­খি­তে লা­গিল। দে­খিল, কোন দি­কে কি­ছুই নাই, চা­রি­দি­কে অন্ধ­কার, উপ­রে তা­­কা­রা­জি
উভয়ে আবার যা­­তে লা­গিল। অনু­মান দশ পদ ভূমি অতি­ক্রম করিয়া যা­­লেই, মা­নব মু­খো­চ্চা­রিত অর্থ­সং­যু­ক্ত কথার ঈষৎ ভাব স্প­ষ্ট শু­নি­তে লা­গিল। সে কথার প্র­তি গ্রা­হ্য না করিয়া যা­­তে লা­গিল।কি­ন্তু আর বে­শিদূর যা­­তে হইল না। আনু­মা­নিক পঞ্চ হস্ত পরি­মাণ ভূমি পশ্চাৎ করি­তেই তা­হা­দের বাম পা­র্শ্ব হই­তে শব্দ হইল-"আর নয়, অনেক আসিয়াছ।"
মারওয়ান চম­কিয়া উঠিল
আবার শব্দ হইল, "কী অভি­­ন্ধি?"
মারওয়ান অলীদ উভয়েই চম­কিয়া উঠিল, অঙ্গ শি­­রিয়া উঠিল,-স্থির ভা­বে দাঁড়াইল
আবার শব্দ হইল, নি­শীথ সময়ে রা­­শি­বি­রের দি­কে কেন? সা­­ধান! আর অগ্র­সর হইয়ো না।যদি কোন আশা থা­কে, সূর্য উদয়ের পর।"
মারওয়ান অলীদ উভয়ে ফি­রিল, আর সে পথের দি­কে ফি­রিয়াও চা­হিল না। কি­ছুদূর আসিয়া অন্য পথে অন্য দি­কে শি­বি­রের অন্য দিক লক্ষ্য করিয়া চলি­তে লা­গিল। মারওয়ান বলিল, "অলীদ!আমা­দের ভুল হইয়াছে; এদি­কে না আসিয়া অন্য দি­কে যাওয়াই ভাল ছিল।"
"অন্য কো­ন্ দি­কে যাওয়া ভাল ছিল বলুন, সেই দি­কেই যাই। ভুল সং­শো­ধন করি­তে কত­ক্ষণ?যে দি­কে আপ­নার নি­­­ন্দেহ বোধ হয়, সেই দি­কেই চলুন।"
মারওয়ান শি­বি­রের দক্ষিণ পা­র্শ্বে যা­­তে লা­গিল, সেই দি­কে যা­­তে মনে কোন সন্দেহ হইল না। পশ্চা­তে, সম্মু­খে কি বা­মে কোন দি­কেই আর ভা­রি বোধ হইল না। নি­­­ন্দে­হে যা­­তে লা­গিল
অলীদ বলিল, "দে­খি­লে? গা­জী রহ­মা­নের বন্দো­­স্ত দে­খি­লে?"
"এদি­কে কি?"
"বোধ হয়, এদি­কের জন্য তত আব­শ্যক মনে করেন নাই।"
"সে কী আর ভ্রম নয়?"
"মারওয়ান! এখন -কথা মু­খে আনিয়ো না। গা­জী রহ­মা­নের ভ্রম-এক­থা মু­খে আনিয়ো না।কা­র্য সি­দ্ধি করিয়া নি­র্বি­ঘ্নে শি­বি­রে যাইয়া যা­হা বলি­বার বলিয়ো। কোন দি­কে কি কৌ­শল করিয়াছে, তা­হা তা­হা­রাই জা­নে।"
"তা জা­নুক, এদি­কে কোন বা­ধা নাই, নি­­­ন্দে­হে যা­­তে­ছি, মনে কো­নরূপ শঙ্কা হই­তে­ছে না।"
"আমি ভাই আমার কথা বলি। আমার মনে অনেক কথা উঠিয়াছে-ভয়েরও সঞ্চার হইয়াছে।আমি তো­মার পশ্চা­তে থা­কিব না। দুই জনে এক­ত্রে সমান ভা­বে যা­ইব। কে­হই কা­হা­রো অগ্র-পশ্চাৎ হইব না।"
মারওয়ান হা­সিয়া বলিল, "অলীদ! তু­মি আজ মহা­বী­রের নাম হা­সা­­লে! অল্প­­তি বা­­­­ণের মনের গতির সহিত, পরি­­ক্ব মনের সমান ভাব দে­খা­­লে! বী­­হৃদয়ে, ভয়! দু­­­নে সমা­­ভা­বে এক­ত্র যা­­তে পা­রি­লেই নি­র্ভয়, কি কথা?"
"মারওয়ান! আম­রা যে কা­র্যে বা­হির হইয়াছি, সে কা­র্যের কথা মনে আছে? কা­র্য­­তি­কে সা­হস, রু­চি­­তি­কে বল। এখন তো­মার মন্ত্রী­ত্ব নাই, আমারও বী­­ত্ব নাই! যে­মন কা­র্য, তে­­নই স্ব­ভাব।"
উভয়ে হা­সি-রহ­স্যে এক­ত্রে যা­­তে­ছে, প্র­জ্ব­লিত দী­পের প্র­দী­প্ত আভায় শি­বির-দ্বার, মা­নু­ষের গতি­বি­ধি স্প­ষ্ট­ভা­বে দে­খা যা­­তে­ছে। গম­নের বেগ কি­ছু বে­শি করিল, সঙ্গে সঙ্গে হা­সি-রহ­স্য চলি­তে­ছে। দু­র্ভা­গ্য­ক্র­মে তা­হা­দের হা­সি­মুখ বে­শি­ক্ষণ রহিল না। দৈবাৎ এক­টি শব্দ তা­হা­দের কর্ণে প্র­বেশ করিল। দক্ষি­ণে-বা­মে দৃ­ষ্টি করিল অন্ধ­কার-সম্মু­খে দী­পা­লোক-গম­নে ক্ষা­ন্ত হইল। আবার সেই হৃদয়-কম্প­­কা­রী শব্দ-ক্ষি­প্র­­স্ত নি­ক্ষি­প্ত তী­রের শন্শ­ন্ শব্দ। অন্ত­রে জা­নিয়াছে-তী­রের গতি, মু­খে বলি­তে­ছে-"কি­সের শব্দ? অলীদ! কি­সের শব্দ?" কি বি­পদ, মু­খের কথা মু­খে থা­কি­তেই তি­­টি লৌ­­শর তা­হা­দের সম্মু­খে আসিয়া পড়িল। এখন কি করি­বে, অগ্রে পা ফে­লি­বে, কি পা­ছে সরি­বে, কি স্থি­­ভা­বে এক স্থা­নে দণ্ডায়মান থা­কি­বে, কি­ছুই স্থির করি­তে পা­রিল না। দক্ষিণ পা­র্শ্ব হই­তে গম্ভীর না­দে শব্দ হইল, "শত্রু হও, মি­ত্র হও, ফি­রিয়া যাও,-রা­ত্রে শি­বি­রে প্র­বেশ নি­ষেধ-রা­ত্রে আঘাত মহা­রা­জের নি­ষি­দ্ধ, তা­হা­তেই প্রাণ বাঁচাইয়া গে­লে; নতু­বা স্থা­নেই ইহ­কা­লের মত পড়িয়া থা­কি­তে!"
আর কোন কথা নাই। চতু­র্দি­কে নি­­­ব্দ। কি­ছু­ক্ষণ পরে অলীদ বলিল, "মারওয়ান! এখন আর কথা কি? আঙ্গুল পরি­মাণ ভূমি আগে যা­­তে আর কি সা­হস হয়?"
মারওয়ান মৃ­দু­স্ব­রে বলিল, "ওহে চুপ কর! প্র­­রী­রা আমা­দের নি­­টেই আছে।"
"নি­­টে থা­কি­লে তো ধরিয়া ফে­লিত।"
"ধরি­বার তো কোন কথা নাই। তবে উহা­রা বি­শেষ সত­র্ক­তার সহিত শি­বির রক্ষা করি­তে­ছে।যে উদ্দে­শ্যে আসিয়াছি­লাম, তা­হা ঘটিল না। এখন নি­রা­­দে শি­বি­রে যা­­তে পা­রি­লেই রক্ষা।"
"সে কথা তো আমি আগেই বলিয়াছি। এখন লা­ভের মধ্যে প্রাণ লইয়া টা­না­টা­নি।"
মারওয়ান বলিল, "আর কথা বলিব না, চু­পে চু­পে নি­­­ব্দে চলিয়া যাই।"
উভয়ে কি­ছুদূর আসিয়া, "রক্ষা পা­­লাম" বলিয়া দাঁড়াইল। চু­পি চু­পি কথা কহি­তেও সা­হস হইল না-পা­রিলও না। কণ্ঠ-তা­লু শু­ষ্ক, জি­হ্বা একে­বা­রে নী­রস,-তবু বহুদূরে সরিয়া পড়িয়াছে। ক্ষ­­কাল পরে এক­টু স্থির হইয়া মারওয়ান বলিল, "অলীদ! বাঁচি­লাম। চল, এখন এক­টু স্থির হইয়া আমা­দের শি­বি­রে যাই।"
মু­খের কথা শেষ হই­তেই পশ্চা­দ্দিক হই­তে বজ্র­না­দে শব্দ হইল-"সা­­ধান, আর কথা বলিয়ো না,-চলিয়া যাও;- বৃ­ক্ষ- তো­মা­দের সম্মু­খের উচ্চ খর্জুর বৃ­ক্ষ সী­মা। আমা­দের নি­র্দি­ষ্ট সী­মার মধ্যে থা­কি­তে পা­রি­বে না। যদি প্রাণ বাঁচা­­তে চাও, সী­মার বা­হি­রে যাও।"
কি করে, উভয়ে দ্রু­­­দে সী­মা-বৃ­ক্ষ ছাড়িয়া রক্ষা পা­ইল। আর কোন কথা শু­নিল না।মারওয়ান বলিল, "জী­­নে এমন অপ­মান কখ­নোই হই নাই। কী লজ্জা!"
মারওয়ান বলিল, "কী বি­পদ! হা­নি­ফার প্র­­রী­রা কি প্রা­ন্ত­রের চতু­ষ্পা­র্শে ঘি­রিয়া রহিয়াছে?এখ­নো কি­ছু­তেই মন সু­স্থির হয় নাই। এখ­নো হৃদয়ের চঞ্চ­­তা দূর হয় নাই। এখা­নে দাঁড়াইব না। এখন সন্দেহ হই­তে­ছে! আমা­দের দেশ-আমা­দের রা­জ্য, সী­মা-বৃ­ক্ষ উহা­দের-কী আশ্চ­র্য? সী­মা-বৃ­ক্ষ না ছাড়াইয়া আসি­লে জী­বন যায়। কী ভয়ানক ব্যা­পার! চল, শি­বি­রে যাই।"
উভয়ে নী­­বে আপন শি­বি­রা­ভি­মু­খে চলিল! যা­­তে যা­­তে সম্মু­খে এক­­ণ্ড বৃহৎ শি­লা­­ণ্ড দে­খিয়া মারওয়ান বলিল, "অলীদ! এই শি­লা­­ণ্ডের উপ­রে এক­টু বসিয়া বি­শ্রাম করি। না­না কা­­ণে মন অস্থির হইয়াছে। আর কোন গো­­যোগ নাই। ক্ষ­­কাল এই স্থা­নে বসিয়া মনের অস্থি­­তা দূর করি। যে­মন কা­র্যে আসিয়াছি­লাম তা­হার প্র­তি­ফলও পা­­লাম।"
অলীদ মারওয়ানের কথায় আর কোন আপ­ত্তি না করিয়া শি­লা­­ণ্ডের চতু­ষ্পা­র্শ এক­বার বে­ষ্টন করিয়া আসিল এবং নি­­­ন্দে­­ভা­বে উভয়ে বসিয়া অস্ফুট স্ব­রে দুই-এক­টি কথা কহি­তে লা­গিল
এক কথার ইতি না-হই­তেই অন্য কথা তু­লি­লে কথার বা­ন্ধু­নি থা­কে না, সমাজ-বি­শে­ষে অস­ভ্য­তাও প্র­কাশ পায়। জয়নাল আবে­দীন বন্দি­গৃহ হই­তে চলিয়া যাওয়ার পর এমন সু­যোগ পাই নাই যে, তাঁহার বি­­রণ পা­­­­ণের গো­চর করি। মারওয়ান ওত্বে অলীদ শি­লা­­ণ্ডের উপর বসিয়া নি­র্বি­ঘ্নে মনের কথা ভা­ঙ্গ­চুর করুন, এই অব­­রে আম­রা জয়না­লের কথা­টা বলিয়া রা­খি
জয়নাল আবে­দীন, ওমর আলীর শূলের ঘো­­ণা শু­নিয়া বন্দি­গৃ­হের সম্মু­­স্থ প্রা­ঙ্গণ হই­তে প্র­­রী­­লের অসা­­ধা­­তায় না­­রিক দলে মি­শিয়া যু­দ্ধ­ক্ষে­ত্রে আসিয়াছি­লেন! তি­নি না­মে সক­লের নি­কট পরি­চিত কি­ন্তু অনে­কে তাঁহা­কে চক্ষে দে­খে নাই। মো­হা­ম্মদ হা­নি­ফা­কে তি­নি কখ­নো দে­খেন নাই, ওমর আলী­কেও দে­খেন নাই,-অথচ ওমর আলীর প্রা­­­ক্ষার জন্য চে­ষ্টা করি­বেন, এই দু­রা­শার কু­­কে মা­তিয়াই দা­মে­স্ক­প্রা­ন্ত­রে আসিয়াছি­লেন। এজি­দের শি­বির, হা­নি­ফার শি­বির, ওমর আলীর নি­ষ্কৃ­তি সমুদয় দে­খিয়াছেন, তাঁহার নি­জের প্রা­­বধ করার ঘো­­ণাও স্ব­­র্ণে শু­নিয়াছেন। ঘো­­ণার পর তি­লা­র্ধ­কালও দা­মে­স্ক­প্রা­ন্ত­রে অব­স্থিত করেন নাই; নি­­­স্থ এক পর্বত গু­হায় আত্ম­গো­পন করিয়া দি­বা অতি­বা­হিত করিয়াছেন। নি­শীথ সময়ে পর্বত গু­হা হই­তে বহি­র্গত হইয়া তাঁহার প্র­থম চি­ন্তা-কী উপায়ে মো­হা­ম্মদ হা­নি­ফার সহিত এক­ত্রিত হই­বেন। সে শি­বি­রে তাঁহার পরি­চিত লোক কে­হই নাই! নিজ মু­খে নিজ পরিচয় দিয়া খাড়া হই­তেও নি­তা­ন্ত অনি­চ্ছা। ভা­বিয়া কি­ছুই স্থির করি­তে না পা­রিয়া, দুই-এক পদে হা­নি­ফার শি­বি­রা­ভি­মু­খেই যা­­তে­ছেন
অলীদ বলি­লেন, "মারওয়ান! কি­ছু শু­নি­তে পা­­তেছ?"
"স্প­ষ্ট বু­ঝি­তে পা­রি­তে­ছি না, কি­ন্তু মা­নু­ষের গতি­বি­ধির ভাব বেশ বু­ঝা যা­­তে­ছে। এক­জন দু­­জন নহে, বহু­লো­কের সা­­ধা­নে পদ­বি­ক্ষেপ ভাব অনু­ভব হই­তে­ছে। আর এখা­নে থা­কা উচিত নহে। বোধ হয় বি­­ক্ষে­রা আমা­দের পরিচয় পাইয়াছে, এখ­নো আমা­দি­­কে ছাড়ে নাই। দেখ সম্মু­খে চা­হিয়া দেখ। আম­রা ছদ্ম­বে­শে আসিয়াছি, কে­বল তো­মার নি­­টে এক­খা­নি তর­বা­রি আর আমার নি­কট সা­মা­ন্য এক­খা­নি ছু­রি ভি­ন্ন অন্য কোন অস্ত্র আমা­দের সঙ্গে নাই। আর থা­কি­লেই বা কি হইত? তা­হা­দের তী­রের মুখ হই­তে দি­নে রক্ষা পাওয়াই দায়, তায় আবার ঘোর নি­শা। মনঃ­সং­যো­গে কান পা­তিয়া শোন, যেন চতু­র্দি­কেই লো­কের গতি­বি­ধি, চলা­ফে­রা, সাড়া পাওয়া যা­­তে­ছে। চল, আর এখা­নে থা­কা নহে।" এই বলিয়া শি­লা­­ণ্ড হই­তে উভয়ে গা­ত্রো­ত্থান করিয়া সম­তল ক্ষে­ত্রে দণ্ডায়মান হই­লেন
জয়নাল আবে­দীনও নি­­­­র্তী হইয়া গম্ভীর স্ব­রে জি­জ্ঞা­সা করি­লেন, "তো­­রা কে?"
মারওয়ান থত­মত খাইয়া সভয় হৃদয়ে উত্তর করিল, "আম­রা পথিক, পথ­হা­রা হইয়া এখা­নে আসিয়াছি।"
"নি­শীথ সময়ে পথিক পথ­হা­রা হইয়া যু­দ্ধ­ক্ষে­ত্রে! কী কথা?"
পু­­রায় জি­জ্ঞা­সা করি­লেন, "ওহে পথিক! তো­­রা কি বি­দে­শী?"
"হাঁ, আম­রা বি­দে­শী।"
"কী আশ্চ­র্য! তো­­রা বি­দে­শী হইয়া এই মহা সং­গ্রা­­স্থ­লে কি উদ্দে­শ্যে আসিয়াছ? সত্য বল, কোন চি­ন্তা নাই।"
মারওয়ান বলিল, "যথা­র্থ বলি­তে­ছি-আম­রা বি­দে­শী, অজা­না দেশ, পথ­ঘা­টের ভাল পরিচয় নাই-চি­নি না। দা­মে­স্ক নগ­রে চা­­রির আশায় যা­­তে­ছি। দি­­সে সৈন্য­সা­­ন্তের ভয়; রা­ত্রেই নগ­রে প্র­বেশ করিব আশা এবং অন্ত­রে নিগূঢ় তত্ত্ব।"
"তো­­রা কো­থা হই­তে আসি­তেছ? তো­মা­দের বস­তি কো­থায়?"
"আম­রা মদি­না হই­তে আসি­তে­ছি। মদি­নায় আমা­দের বা­­স্থান।"
ভী­­না­দে শি­লা­রা­শির পা­র্শ্ব হই­তে শব্দ হইল-"ওরে ছদ্ম­বে­শী নি­শা­চর! মদি­না­বা­সী­রা দা­মে­স্কে চা­­রির আশায় আসিয়াছে? আর কো­থায় যা­­বি? এই স্থা­নেই নি­শা যা­পন কর। প্র­ভা­তে পরী­ক্ষার পর মু­ক্তি।এক পদও আর অগ্র­সর হই­তে পা­রি­বি না। যদি চক্ষের জ্যো­তি থা­কে, দৃ­ষ্টির ক্ষ­­তা থা­কে, তবে যে­দি­কে ইচ্ছা চা­হিয়া দেখ, পঞ্চ­বি­­­তি বর্শার ফলক তো­মা­দের বক্ষঃ, পৃ­ষ্ঠ, বা­হু পা­র্শ্ব লক্ষ্য করিয়া স্থি­­ভা­বে রহিয়াছে।সা­­ধান, কোন কথার প্র­­ঙ্গ করিয়ো না,-নী­­বে তিন মূর্তি প্র­ভাত পর্য­ন্ত এই স্থা­নে দণ্ডায়মান থাক। আর যা­­বার সা­ধ্য নাই। মো­হা­ম্মদ হা­নি­ফার গু­প্ত সৈন্য দ্বা­রা তো­­রা তি­­জন সূর্যে­াদয় পর্য­ন্ত বন্দি।"

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

#উপন্যাস
#অনুবাদ
#মোলাকাত
#Molakat
#Novel
#Translation
#BanglaLiterature
#Literature
#সাহিত্য_ম্যাগাজিন
#ওয়েব_ম্যাগাজিন
#বাংলাসাহিত্য
#সাহিত্য
#বিষাধসিন্ধু
#মীর_মশাররফ_হোসেন

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.