প্রেমেও
অসাধারণ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রথম যৌবনে নিবেদিত তরুণীর
প্রেম উপলব্ধ হয় কবির
শেষ জীবনে এবং তার
প্রতি নিজের আকর্ষণও আবিষ্কৃত
হয় বিগত যৌবনে। অথচ
বয়ঃসন্ধিক্ষণে নারীর একটুখানি ইঙ্গিতে
ঝাঁপিয়ে পড়ে পুরুষমাত্রই। এই
পুরুষটি নিজের ভাবজগতে জীবনের
শুরু থেকেই এমনই নিমগ্ন
ছিলেন যে প্রেমিকার দৈহিক
উৎপাতেও গায়ক-কবি শৈল্পিক
ঘোর থেকে জেগে ওঠেননি।
কিন্তু এসবেতে কিছু আসে
যায়নি বিদুষী মারাঠি রূপসী
তরুণী আন্না তড়খড়ের। উঠতি
কবির উত্তরকৈশোর ও প্রথমযৌবনের সন্ধিক্ষণে
দেখা সুঠাম সুপুরুষ রবীন্দ্রনাথের
প্রতি ভালোবাসা তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনটির
শেষ পর্যন্তই হৃদয়ে পোষণ করে
গেছেন আন্না।
সম্ভবত
আন্না-ট্যাগোরের প্রণয়-সম্পর্কের বিচিত্র
এই বিরল ধারার কারণেই
লক্ষ লক্ষ পৃষ্ঠার রবীন্দ্রচর্চার
পরিসরেও আন্না পাণ্ডুরং তড়খড়ের
কোনো জায়গা হয় না।
ফলে কাদম্বরী, রানু আর ওকাম্পোকে
নিয়ে ক্রমবর্ধিষ্ণু কোলাহলের তলে অশ্রুতির পরম্পরায়
আন্না-প্রসঙ্গটি আজ প্রায় সম্পূর্ণ
বিস্মৃত। স্বকাল থেকে অগ্রবর্তিনী
এই তড়খড়-কন্যাটিকে নিয়ে
বক্ষ্যমাণ লেখাটি বস্তুত একটি
স্মারক রচনা, যার উদ্দেশ্য
: তাঁকে যথাযোগ্য মর্যাদায় রবীন্দ্রজীবনীর বিষয়ীভূত করে সুশিক্ষিত সুসংস্কৃত
ও কৃতবিদ্য এই মহীয়সী নারীর
স্মরণীয় অর্জনগুলোকে রবীন্দ্র-গবেষণার আওতায় নিয়ে আসা।
রবীন্দ্রনাথ
১৮৭৮ সালের আগস্টে মেজদা
আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মস্থল আহমেদাবাদ ত্যাগ করে বোম্বাইতে
তাঁর বন্ধু ডাঃ আত্মারাম
পাণ্ডুরং-এর পরিবারে আশ্রয়
গ্রহণ করেন- প্রধানত স্পোকেন
ইংলিশে সড়গড় ও ইংরেজ
দের আদবকায়দায় ধাতস্থ হওয়ার উদ্দেশ্যে।
বঙ্গদেশের ব্রাহ্মসমাজের মতো মহারাষ্ট্র-গুজরাটের
‘প্রার্থনা সমাজ’-এর অন্যতম
প্রতিষ্ঠাতা আত্মারামের পরিবার বোম্বাই অঞ্চলে
ধর্ম ও সমাজ-সংস্কার
আন্দোলনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ
করেছিল। আর তাঁর বিলাতফেরৎ
কন্যা আন্না অগ্রণী ভূমিকা
গ্রহণ করেছিলেন নবীন রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজিয়ানায়
প্রশিক্ষিত করে তোলার।
রবীন্দ্রনাথ
লিখেছেন :
“কবির
কাছ থেকে একটা ডাকনাম
চাইলেন, দিলেম যুগিয়ে- সেটা
ভালো লাগল তাঁর কানে।
ইচ্ছে করেছিলেন সেই নামটি আমার
কবিতার ছন্দে জড়িয়ে দিতে।
বেঁধে দিলুম সেটাকে কাব্যের
গাঁথুনিতে; শুনলেন সেটা ভোরবেলাকার
ভৈরবী সুরে; বললেন, ‘কবি,
তোমার গান শুনলে আমি
বোধ হয় আমার মরণদিনের
থেকেও প্রাণ পেয়ে জেগে
উঠতে পারি।”
প্রভাতকুমার
মুখোপাধ্যায় অনুমান করেছেন, রবীন্দ্রনাথের
দেওয়া ডাক-নামটি হল
‘নলিনী’। এটি
তাঁর একটি অত্যন্ত প্রিয়
নাম, প্রথম জীবনে রচিত
বহু কাব্য-কবিতায় ও
নাটকে নামটি ব্যবহৃত হয়েছে।
কাব্য-নাটকে ‘নলিনী’ চরিত্রটি
প্রায়শই একটি চপল-স্বভাবা
আপাত-নিষ্ঠুরা, অথচ প্রেমময়ী নারী।
প্রশান্তকুমার পালের প্রশ্ন- বাস্তবের
এই ‘নলিনী’ সম্পর্কেও রবীন্দ্রনাথের
কি এই ধারণাই ছিল?
বহুকাল
পরে ১৯২৭ সালের ১
জানুয়ারি অতুলপ্রসাদ সেন ও দিলীপকুমার
রায়ের সঙ্গে আলাপে রবীন্দ্রনাথ
এই তরুণীর কথা স্মরণ
করেছেন :
‘তখন
আমার বয়স বছর ষোলো।
আমাকে ইংরেজি কথা বলা
শেখানোর জন্যে পাঠানো হ’ল বম্বেতে একটি
মারাঠি পরিবারে।...সে-পরিবারের নায়িকা
একটি মারাঠি ষোড়শী। যেমন
শিক্ষিতা, তেমনি চালাক-চতুর,
তেমনি মিশুক।...তার স্তাবক-সংখ্যা
নিতান্ত কম ছিল না-
বিশেষ আরো এই জন্যে
যে ঐ বয়সেই সে
একবার বিলেত চক্র দিয়ে
এসেছিল। সেসময়ে মেয়েদের বিলেত-যাওয়া আজকের মতন
পাড়া-বেড়ানো গোছের ছিল
না, মনে রেখো।
আমার
সঙ্গে সে প্রায়ই যেচে
মিশতে আসত। কত ছুতো
ক’রেই সে ঘুরত
আমার আনাচে কানাচে।- আমাকে
বিমর্ষ দেখলে দিত সান্ত¦না, প্রফুল্ল দেখলে
পিছন থেকে ধরত চোখ
টিপে।
একথা
আমি মানব যে আমি
বেশ টের পেতাম যে
ঘটবার মতন একটা কিছু
ঘটছে, কিন্তু হায় রে,
সে-হওয়াটাকে উস্কে দেওয়ার দিকে
আমার না ছিল কোনোরকম
তৎপরতা, না কোনো প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব।
একদিন
সন্ধ্যাবেলা...সে আচম্কা এসে হাজির
আমার ঘরে। চাঁদনি রাত।
চার দিকে সে যে
কী অপরূপ আলো হাওয়া!...কিন্তু আমি তখন
কেবলই ভাবছি বাড়ির কথা।
ভালো লাগছে না কিছুই।
মন কেমন করছে বাংলাদেশের
জন্যে, আমাদের বাড়ির জন্যে,
কলকাতার গঙ্গার জন্যে। হোমসিক্নেস
যাকে বলে।
সে
ব’লে বসল : ‘আহা,
কী এত ভাবো আকাশপাতাল!’
তার
ধরণধারণ জানা সত্ত্বেও আমার
একটু যেন কেমন কেমন
লাগল। কারণ সে প্রশ্নটি
করতে না করতে একেবারে
আমার নেয়ারের খাটির উপরেই এসে
বসল।
কিন্তু
কী করি- যা হোক
হুঁ হাঁ ক’রে
কাজ সেরে দিই। সে
কথাবার্তায় বোধহয় জুৎ পাচ্ছিল
না, হঠাৎ বলল :
‘আচ্ছা
আমার হাত ধ’রে
টানো তো- টাগ্-অফ্ -ওয়ারে দেখি
কে জেতে?’
আমি
সত্যিই ধরতে পারি নি,
কেন হঠাৎ তার এতরকম
খেলা থাকতে টাগ্-অফ্-ওয়ারের কথাই মনে
প’ড়ে গেল। এমন
কি আমি এ শক্তি
পরীক্ষায় সম্মত হ’তে
না হ’তে সে
হঠাৎ শ্লথভাবে হার মানা সত্ত্বেও
আমার না হ’ল
পুলক-রোমাঞ্চ না খুলল রসজ্ঞ
দৃষ্টিশক্তি। এতে সে নিশ্চয়ই
আমার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বিশেষ রকম সন্দিহান
হ’য়ে পড়েছিল।
শেষে
একদিন বলল তেমনি আচম্কা
: ‘জানো কোনো মেয়ে ঘুমিয়ে
পড়লে যদি তার দস্তানা
কেউ চুরি করতে পারে
তবে তার অধিকার জন্মায়
মেয়েটিকে চুমো খাওয়ার?’
ব’লে খানিক বাদে
আমার আরাম কেদারায় নেতিয়ে
পড়ল নিদ্রাবেশে। ঘুম ভাঙতেই সেই
চাইল পাশে তার দস্তানার
দিকে। একটিও কেউ চুরি
করে নি।’
বউঠাকরুন
কাদম্বরী দেবী রবীন্দ্রনাথের সুপুরি-কাটা হাতের গুণ
ছাড়া অন্য-কিছুরই প্রশংসা
করতেন না, ‘এমন-কি
চেহারারও খুঁত ধরে বিধাতার
উপর রাগ ধরিয়ে দিতেন।’
কিন্তু এই তরুণীর মুখেই
তিনি প্রথম শুনেছিলেন তাঁর
চেহারার প্রশংসা। আন্না তাঁকে বলেছিলেন,
‘একটা কথা আমার রাখতেই
হবে, তুমি কোনো দিন
দাড়ি রেখো না, তোমার
মুখের সীমানা যেন কিছুতেই
ঢাকা না পড়ে।’
রবীন্দ্রনাথ
তাঁর এই কথা অবশ্য
রাখেন নি, কিন্তু আন্নার
প্রেমমুগ্ধ অন্তরের রূপটি এই অনুরোধের
মধ্যেই ধরা পড়েছে। রসশাস্ত্রের
বিচারে আন্না-কে অনেকটা
প্রগল্ভা নায়িকার পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে,
কিন্তু তরুণ রবীন্দ্রনাথের কাছে
না হলেও পরিণত রবীন্দ্রনাথের
কাছে সে প্রেম যথেষ্ট
গুরুত্ব লাভ করেছে। উপরোক্ত
কথোপকথনের সূত্রেই তিনি বলেছিলেন :
‘কিন্তু
সে মেয়েটিকে আমি ভুলি নি
বা তার সে আকর্ষণকে
কোনো লঘু লেবেল মেরে
খাটো ক’রে দেখি
নি কোনো দিন। আমার
জীবনে তারপরে নানান অভিজ্ঞতার
আলোছায়া খেলে গেছে- বিধাতা
ঘটিয়েছেন কত যে অঘটন-
কিন্তু আমি একটা কথা
বলতে পারি গৌরব ক’রে : যে, কোনো
মেয়ের ভালোবাসাকে আমি কখনো ভুলেও
অবজ্ঞার চোখে দেখি নি-
তা সে-ভালোবাসা যে-রকমই হোক না
কেন। প্রতি মেয়ের স্নেহ
বলো, প্রীতি বলো, প্রেম
বলো, আমার মনে হয়েছে
একটা প্রসাদ- favour : কারণ আমি একথা
বারবারই উপলব্ধি করেছি যে প্রতি
মেয়ের ভালোবাসা তা সে যে-রকমের ভালোবাসাই হোক
না কেন- আমাদের মনের
বনে কিছু না কিছু
আফোটা ফুল ফুটিয়ে রেখে
যায়- সে-ফুল হয়ত
পরে ঝ’রে যায়
কিন্তু তার গন্ধ যায়
না মিলিয়ে।’
আন্না-র প্রেমকে রবীন্দ্রনাথ
সবর্শ্রেষ্ঠ স্বীকৃতি দিয়েছেন শেষ বয়সে :
‘জীবনযাত্রার
মাঝে মাঝে জগতর অচেনা
মহল থেকে আসে আপন-মানুষের দূতী, হৃদয়ের দখলের
সীমানা বড়ো করে দিয়ে
যায়। না ডাকতেই আসে,
শেষকালে একদিন ডেকে আর
পাওয়া যায় না। চলে
যেতে যেতে বেঁচে-থাকার
চাদরটার উপরে ফুলকাটা কাজের
পাড় বসিয়ে দেয়, বরাবরের
মতো দিনরাত্রির দাম দিয়ে যায়
বাড়িয়ে।’
প্রভাতকুমার
মুখোপাধ্যায় অনুমান করেছেন, শৈশবসংগীত
কাব্যগ্রন্থের ‘ফুলের ধ্যান’ ও
‘অপ্সরা-প্রেম’ কবিতা-দুটিতে
এই তরুণীর মর্মবেদনা কবির
ভাষায় রূপ পেয়েছে এবং
‘আমি স্বপনে রয়েছি ভোর,
সখী, আমারে জাগায়ো না’
গানটির মধ্যে দস্তানা চুরির
কৌতুককর কাহিনীর স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
মালতীপুঁথি-তে পাওয়া না
গেলেও রবিজীবনীকারের ধারণা ‘ভগ্নহৃদয়’ কাব্যের
চতুর্থ সর্গে কবির অষ্টম
গানটি- ‘শুনেছি- শুনেছি কি নাম
তাহার-/ শুনেছি- শুনেছি তাহা!/ নলিনী-নলিনী-নলিনী-/ কেমন
মধুর আহা!’ ইত্যাদি আন্না-কে লক্ষ্য করেই
রচিত।
রবীন্দ্রনাথের
‘গ্যেটে ও তাঁহার প্রণয়িনীগণ’-নামক প্রবন্ধটিতে এক
জায়গায় আছে :
‘এক
প্রকার তাস খেলা আছে,
হারিলে চুম্বন দ- দিতে
হয়- গ্যেটে এই চুম্বনের
পরিবর্তে কবিতা উপহার দিতেন-
কিন্তু যে মহিলার তাঁহার
নিকট হইতে চুম্বন প্রাপ্য
থাকিত তাঁহার যে মর্ম্মে
আঘাত লাগিত তাহা বলা
বাহুল্য।’
এই
বর্ণনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতার কোনো যোগ আছে
কিনা সেটা রসজ্ঞ পাঠকদের
অনুমেয়- বলেছেন
রবিজীবনীকার।
ডাঃ
আত্মারাম পাণ্ডুরঙের (১৮২৩-১৮৯৮) কন্যা
আন্না তড়খড়-এর সঙ্গে
রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ-সম্পর্ক মাত্র এক মাস
বা তার সামান্য কিছু
বেশি হলেও এঁর স্মৃতি
বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত তাঁর
মনে অম্লান ছিল। এই
জন্য আন্না রবীন্দ্রপ্রণয়িনীদের মধ্যে অবশ্যই
গণ্য।
১১
নভেম্বর ১৮৭৯ তারিখে বরোদা
কলেজের উপাধ্যক্ষ হ্যারন্ড লিটল্ডেলের সঙ্গে আন্না-র
বিবাহ হয়।
১৮৮০
সালে আন্না বরোদার রানীর
গৃহশিক্ষিকা রূপে নিযুক্ত হন।
বরোদাতে কিছুকাল থাকার পর লিট্লডেল-দম্পতি এডিনবরাতে চলে
যান। আন্না-র দুটি
কন্যা জন্মগ্রহণ করে। ভারত ত্যাগের
পর মাতৃভূমির সঙ্গে বা নিজের
পরিবারের সঙ্গে আন্না-র
বিশেষ কোনো যোগাযোগ ছিল
না বলে মনে হয়।
আন্না-র মৃত্যু হয়
৫ জুলাই ১৮৯১ তারিখে
এডিনবরা শহরে।
তাঁর
মৃত্যুর পর বামাবোধিনী পত্রিকায়
প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে আন্না-সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য
পরিবেশিত হয়। রচনাটির অংশবিশেষ
এখানে উদ্ধৃত হল :
‘বোম্বাইয়ের
সুপ্রসিদ্ধ সমাজ-সংস্কারক আত্মারাম
পাণ্ডুরংয়ের বিদুষী কন্যা গত
৫ই জুলাই তারিখে এডিনবরা
নগরে মানবলীলা সংবরণ করেন-...যে
সকল ভারতমহিলা পাশ্চাত্য শিক্ষায় সর্ব্বপ্রথমে সুশিক্ষিতা হন, আন্নাবাই তাঁহাদিগের
মধ্যে একজন। তাঁহার পিতা
সদালাপী, উন্নতমনা, মার্জ্জিতবুদ্ধি, জ্ঞানী ও পরম
ধার্ম্মিক। ইনি বালিকা কন্যাকে
অধ্যায়নার্থে ইংল্যাণ্ডে প্রেরণ করেন। ইহাতে
ইনি সমাজের বিরাগভাজন হন।
কিন্তু কিছুতেই ভয় পান নাই;
জাতিভেদের বন্ধন উল্লঙ্ঘন করিয়া
কিছুমাত্র দুঃখিত হন নাই।
বুদ্ধিমতী আন্না অলৌকিকী শক্তির
পরিচায়িকা। ষোড়শ বৎসরে তিনি
যেরূপ গুণবতী হইয়া উঠিয়াছিলেন,
সেরূপ দৃষ্টান্ত বিরল। ডাক্তার আনন্দীবাই
যে অসামান্য মনস্বিতার পরিচয় দেন স্ত্রী
কবি বঙ্গ-যুবতী কুমারী
তরুদত্ত যে কবিত্বের লালিত্যে
অখিল সভ্য জগৎকে বিমুগ্ধ
করেন, ইঁহারও সেই শক্তি
ছিল, বিকাশের সম্পূর্ণ সুযোগ হয় নাই।...গীতবাদ্যে তিনি সুনিপুণা ছিলেন।
মাতৃভাষা মহারাষ্ট্রীয় ব্যতীত তিনি ইংরাজী,
ফরাসী, জর্ম্মণ ও পর্ত্তুগীজ ভাষায়
ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এই
সকল ভাষায় কথোপকথন করিতে
পারিতেন। তিনি সংস্কৃতও কিছু
কিছু জানিতেন। তাঁহার রীতি নীতি
চাল চলন এত ভাল
ছিল, তিনি এরূপ সদালাপিনী
ছিলেন, যে একবার যিনি
তাঁহার সহিত বাক্যালাপ করিয়াছেন,
তিনিই তাঁহার হৃদয়গ্রাহিতার প্রশংসাবাদ
না করিয়া থাকিতে পারিবেন
না।
‘আন্নাবাই
“নলিনী” ('Lotus-Flower')
স্বাক্ষরিত বিবিধ প্রবন্ধ, ছোট
ছোট গদ্য ও পদ্য
দেশীয় ও বিলাতী সংবাদপত্র
ও সাময়িক পত্রাদিতে লিখিতেন।
চিকালগোদা নামক স্থানে মনের
মত একটি বাটী নির্মাণ
করাইয়া তিনি তাহাতে বাস
করিতেন।
ভুবন
বিখ্যাত বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বালী হইতে প্রত্যাগমনকালে
শকট হইতে পতনে উদরে
বেদনা লাগে। এই বেদনাই
তাঁহার সাংঘাতিক রোগের মুখ্য কারণ,
আন্নাবাইয়েরও তদ্রƒপ। একদা
সেকেন্দারাবাদে একটি শকট দুর্ঘটনা
দুই বৎসর পূর্বে ঘটে, কিন্তু তদবধি
ইঁহার স্বাস্থ্যভঙ্গ হয়। পীড়া নিবন্ধন
ইতি গত এপ্রেলমাসে ইয়ুরোপ
যাত্রা করেন; এবং সেখানেই
পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হন।...’
এই
জীবনবৃত্তান্তে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়
বিষয়টি হচ্ছে যে, বিবাহিত
জীবনেও তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভোলেন
নি। সেই কিশোর-কবির
প্রদত্ত আদরের ডাক নাম
‘নলিনী’ স্বাক্ষরেই তিনি প্রবন্ধাদি প্রকাশ
করতেন- তাঁর অপেক্ষাকৃত পরিণত
মনেও সেই ‘আপন-মানুষের
দূত’ গভীর স্বাক্ষর এঁকে
দিয়েছিলেন, এ তারই প্রমাণ।
এ-প্রসঙ্গে এই তথ্যটিও উল্লেখযোগ্য
যে, তাঁর এক ভ্রাতুষ্পুত্রের
নাম রাখা হয়েছিল ‘রবীন্দ্রনাথ’।
এই
পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘকাল পরেও
রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ ছিল। আন্না-র
কনিষ্ঠা ভগিনী মানক-কে
২৯ জানুয়ারি ১৯১৪ তারিখে রবীন্দ্রনাথ
লিখেছেন : It is nice of
you to write to me as you have done. Your voice belongs to that little world of
familiar faces in a city of strangers where I took my shelter when I was
seventeen and where you were just emerging from your nebulous stage of
indistinctness....The other day when I accepted an invitation to come to Bombay
I hoped to see you and talk to you of the old days spent under your father's
roof. [সূত্র
: রবিজীবনী ২য় খণ্ড, পৃ.
৪-৫]
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments