শাহীন রায়হান এর কবিতা ও ছড়া ব্যাতিক্রমধর্মী এক আলোক প্রদীপ_শাহিদ উল ইসলাম

 
শাহীন রায়হান; সময়ের একজন প্রতিভাবান তরুণ কবি ছড়াকার। তার লেখার সাথে আমার পরিচয় পর্বের সূত্রপাত সুদীর্ঘ নয়। তথাপিও কেন জানি এই তরুণ কবি ছড়াকারের প্রতি আমার এক ধরণের ভালোলাগা কাজ করে। পরিচয় পর্বের শুরু থেকেই দেখেছি কবিতার প্রতি তার আগ্রহ, প্রেম ভালোবাসা; এবং একই দৃশ্য যতবার দেখেছি ততই মুগ্ধ হয়েছি। শুধু আগ্রহ নয়, তার লেখার মানও উন্নত। লেখায় আছে আধুনিকতার ছোঁয়া এবং ব্যতিক্রমতা। ব্যক্তি হিসেবে কবি শাহীন রায়হান সদা প্রাণবন্ত, হাস্যোজ্জ্বল, বন্ধুবৎসল এবং আড্ডা জমিয়ে রাখার মত একজন মানুষ।
 
ব্যক্তি শাহীন রায়হানকে নিয়ে আমি আজ আলোচনায় যেতে চাই না তবে কবি ছড়াকার শাহীন রায়হানকে নিয়ে দুটি কথা না বললেই নয়। শুরুতে আমি ছড়াকার শাহীন রায়হানকে নিয়ে কথা বলবো এবং শেষ করবো কবি শাহীন রায়হানকে দিয়েই। ছড়াকার শাহীন রায়হান এর লেখায় আমি খুঁজে পাই সমকাল এবং খুঁজে পাই ইতিহাস ঐতিহ্যকেও। লেখায় বিদ্যমান আছে দেশপ্রেম, প্রকৃতি মাটির প্রতি গভীর টান। তার লেখনিতে ফুটে উঠে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কথা, আছে সমাজের ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়ে তোলার প্রাণবন্ত প্রচেষ্টা।
যেমন, "আমাদের ঘুমন্ত বিবেক পথশিশুদের দুর্দশা" ছড়াটিতে শাহীন রায়হান পথশিশুদের দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে বলছেন,
"মারছে ছোবল নিত্য কেবল
পথ শিশুদের বুকে
নীরব বিষে মরছে ওরা
নিদারুণ এক দুঃখে।"
পাশাপাশি সমাজের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে একই ছড়ায় প্রশ্ন রেখেছেন
"ওদের জীবন কত্ত এমন
সলতে বিহীন রবে
দুঃখের ঘরে নতুন করে
ফুটবে আলো কবে?"
মাটির প্রতি ছড়াকার শাহীন রায়হানের রয়েছে প্রেম ভালোবাসার সু- গভীর মমতা। মাটিই প্রাণীজগতের একমাত্র ঘাঁটি। অন্য কোথাও আবাস স্থাপন সম্ভব নয়। শত চেষ্টার পর এই প্রাণীজগতকে শেষমেশ কিন্তু এই কোমল মাটির আবেশেই ফিরে আসতে হয়। আর সে কথা পরিষ্কারভাবেই ফুটে উঠেছে তার "একটি পাখি" ছড়াটিতে এমনভাবে-
"অবশেষে নেমে আসে মাটিতে
ফসল ভরা সবুজ শ্যামল পাটিতে
সবার সাথে আছে এখন সুখেই
আকাশ নয় নরম মাটির বুকেই।"
তার লেখায় আছে গ্রাম বাংলার সহস্র বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য আর প্রকৃতি প্রেমের কথা। তার শীত ছড়াটিতে সেরূপ ঘ্রাণই খুঁজে পাই আমরা-
"কুয়াশাতে মাঠ ঢেকেছে
ঝরছে শিশির কণা
কৃষক বধু নকশী পিঠায়
আঁকছে তার আলপনা
আলপনাটা দুঃখ সুখের
আলপনাটা প্রাণের
আলপনাটা নকশী পিঠায়
খেজুর রসের ঘ্রাণের"
লেখায় আছে স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং স্বাধীনতার প্রতি বিশ্বাস শ্রদ্ধা। "একটি গল্প" "বিজয় নিশান" ছড়া দুটিতে যেন সে কথাই ধ্বনিত হয় বারংবার। "একটি গল্প" ছড়াটিতে তিনি যেমন বলছেন,
"অত্যাচারে দেশের মানুষ
মরতো কেঁদে দুঃখে
হঠাৎ তাদের কঠিন পাথর
জন্ম নিলো বুকে
রক্ত ঢেলে হিংস্র পশু
করলো তারা শেষ
অবশেষে জন্ম নিলো
সোনার বাংলাদেশ।"
ঠিক তামনি মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা রেখে তিনি তার- "বিজয় নিশান" ছড়াটিতে বলছেন-
"কষ্টগুলো শক্তি করে
দেশার জন্য যায় লড়ে
শত্রুসেনা নিপাত করে
দেশ বাঁচানোর এই ঝড়ে
পায়ের নীচে শত্রু সেনার
যুদ্ধ ঘাঁটি গুঁড়িয়ে
ডিসেম্বরে বিজয় নিশান
দেয় বাঙ্গালী উড়িয়ে"
শৈশবের স্মৃতি ছড়াকারকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। থেকে থেকে তার মনে জেগে উঠে শৈশবের স্মৃতি। স্মৃতি কাতর হয়ে তাই ছড়াকার শাহীন রায়হান তার "বন ভোজন" ছড়াটিতে লিখেন-
"ছোট্ট কালে সবাই মিলে
কত্ত মাতামাতি
কাঠ জ্বালিয়ে রান্না করা
মজার চড়ুইভাতি
আজ তো সেসব হারিয়ে গেছে
বয়স নামক থাবায়
বনভোজনের স্মৃতি গুলো
নিত্য আহা ভাবায়।"
কবিতাতেও শাহীন রায়হান সিদ্ধহস্ত। তার কবিতায় উচ্চারিত বাক্য সমগ্র সরল এবং আবেগময়ী। প্রেম ঘৃণা আর প্রতিবাদে তার কবিতা হয়ে উঠে এক একটি নতুন যুদ্ধ হাতিয়ার। কবিতায় শব্দ ও আবেগের দামামা যেন হয়ে উঠে ছন্দ সচেতন এক তীব্র গতিময় ঘোড়া; যা গনমানুষের সহজবোধ্য পাঠ যোগ্যতার মাঝে আবদ্ধ থেকে গেয়ে উঠতে চায় নতুন এক কোরাস। তার "রক্তাক্ত কুমারীত্ব কতগুলো বুক ভাঙ্গা আর্তনাদ" কবিতায় আমরা সেরূপ প্রতিবাদ ও আবেগের স্ফুরণ দেখতে পাই; যেমন-
আজ- স্বপ্ন অবরুদ্ধ এক কফিনবদ্ধ লাশ
যার কুমারিত্ব বিবস্ত্র যৌবন ভূ- লুণ্ঠিত
প্রতিবাদী ঠোঁটে হিংস্রতার অগনিত দাগ
দেহটা দুর্বিনীত ঘাতকের পাশবিকতায় ক্ষত বিক্ষত
এক বিক্ষিপ্ত বিরানভূমি"
কবি শাহীন রায়হান এর কবিতায় বিরহও ফুটে উঠে একই সমান্ত্ররালে। আর বিরহ আবেগ ঘন হয়ে বৃষ্টি ঝরায় পাঠক হৃদয়ে। তারই স্ফুরণ আমরা দেখতে পাই তার "আমি চলে যাবার পর" কবিতাতিতে
"জানি
আমি চলে যাবার পর
পরিবর্তিত আবহাওয়ার মত পাল্টে যাবে তুমি
তারা খসার মত খসে যাবে তোমার ভালোবাসা
স্মৃতি গুলো গুম হবে হিমায়িত ডীপ ফ্রিজে"
কবি এখানে তার প্রিয় মানুষের প্রতি সংশয় প্রকাশ করেছেন।
তবে তার এই সংশয় ফেলনা নয়। আমাদের মৃত্যুর পর আমাদের প্রিয় মানুষেরা আমাদের ভুলে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে নতুন সাজ সজ্জায় জীবনকে সাজিয়ে তুলে আর নতুন কি? তবে আমরা কবি শাহীন রায়হানকে ভুলবো না। সে তার লেখনীর মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের কাব্যাকাশে বেঁচে থাকুক সহস্র সহস্র কালব্যাপী। সেইসাথে তার লেখা আমাদের মাঝে ব্যতিক্রমধর্মী এক আলোক প্রদীপ হয়ে বেঁচে থাকুক চিরটিকাল এমন কামনা রেখে শেষ করছি।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.