নববর্ষ সংখ্যা ১৪২৭-১

 
নববর্ষ আমার পিতা পিতার পিতা তার পিতা কিভাবে পালন করেছে তা আজ মূখ্য হয়ে ওঠছে না। গোলাকায়নের যুগে আজ সবই বাণিজ্যিক। তাই আমাদের আনন্দ উৎসব সবই বাণিজ্যের হেয়াজতে চলে গেছে। প্রতিবছর সকল প্রকার উৎসবকে সামনে রেখে পসরা সবায় বেনিয়া। আমরা আনন্দ উপভোগ করতে তাদের খরিদদার হয়ে ওঠি। নববর্ষ এর বাইরে নয়। মামুলি এক পর্বকে সামনে রেখে বেনিয়ারা করে তুলেছে বাণিজ্যের অন্যতম নেয়ামক। তাদের বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধির জন্যই দরকার উৎসব। তাই তারা যেকোনো পর্বকে উৎসবে রূপ দেয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মিডিয়ায়। আর এই মিডিয়ার সহায়তায় ছোট উৎসবকে বৃহত্তর উৎসবে রূপান্তরিত করে। কিন্তু এবার করোনার করাল গ্রাসে বেনিয়াদের পসরা না বসলেও সৃজনশীল মানুষ তাদের সৃজনক্রিয়া বন্ধ করেনি। তাদের সৃজনে উঠে এসেছে পৃথিবীর কল্যাণের কথা। উৎসবের কথা। ভালোবাসার কথা। মোলাকাতের এই সংখ্যা সবাইকে সচেতন করবে আশা করা যায়। উৎসবকে বেনিয়ার চোখে না দেখে প্রকৃতির ভালোবাসায় দেখবে বলে আমরা আশা প্রকাশ করি।
-আফসার নিজাম, সম্পাদক
 
সূ চি ত্র
 
প্রতি বৈশাখে :: রেজাউদ্দিন স্টালিন
পাপহীন নববর্ষ :: আসাদ বিন হাফিজ
স্বাগত বৈশাখ :: তৈমুর খান
পহেলা বোশেখ :: ফরিদুজ্জামান
বৈশাখ :: কাজী রহিম শাহরিয়ার
বৈশাখ :: চন্দ্রশিলা ছন্দা
বোশেখ স্মৃতি :: মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
স্বাগত নতুন :: কিশলয় গুপ্ত
বৈশাখ এলে :: রুদ্র সাহাদাৎ
এবারের বৈশাখে যদি বেঁচে যাই :: শাহীন খান
প্রিয় নতুন বর্ষ :: শঙ্খশুভ্র পাত্র
চোখ পড়লেই হাসি দেই দূর বহুদূরে :: মোস্তফা হায়দার
কৃষকের দিনলিপি :: হাসান আবু নাঈম
বোশেখ মানে :: আশরাফ আলী চারু
আজ এ বৈশাখে :: ইসমাইল বিন আবেদীন
বৈশাখ এলো :: শেখ একেএম জাকারিয়া
রঙ্গিন বৈশাখ :: সালমা বিনতে শামছ
বৈশাখ ১৪২৭ :: অর্নিয়া অর্থি
আনন্দ আলোকে :: বিকাশ চন্দ
নববর্ষের শুভেচ্ছা :: সাকিব জামাল
..................................................
 
প্রতি বৈশাখে
রেজাউদ্দিন স্টালিন
 
হালখাতা ভিজে সাদা হয়ে আছে কান্না,
অক্ষরগুলো দেনা-পাওনার পান্না।
 
প্রতি বৈশাখে জীবিকার সংঘর্ষ,
ম্লান করে দেয় নির্মল নববর্ষ।
 
তবু বুকে হেঁটে এতোদূর এই বাঙলা,
বিদ্যুৎ দিয়ে সাজিয়েছে ঘর জাঙলা।
..................................................
 
পাপহীন নববর্ষ
আসাদ বিন হাফিজ
 
পাপহীন নববর্ষ
করোনার দান
নববর্ষের পান্তাভাত
ঘরে বসে খান।
..................................................
 
স্বাগত বৈশাখ
তৈমুর খান
 
নববর্ষ, লিখছি তোকে
এই আমাদের ভাঙাচোরা দেশ
সম্প্রীতির আলো জ্বেলে আয়
আঁধারে আজ হানছে বিদ্বেষ।
 
ঝরাপাতার বন পেরিয়ে
সবুজ পাতা হাসে
অবুঝ কেন যুগের বাতাস
আগুন দিতে আসে?
 
ডাইনে বাঁয়ে দুটি হাতেই
আলিঙ্গনের ডাক
কালের মানুষ নববর্ষে
নতুন বন্ধু পাক।
 
দুঃখবনে উড়ুক পাখি
সুখের গানে আনন্দ সব পাক
ঢেউ উঠুক মরা গাঙে
সম্পর্কের ডিঙি ভেসে যাক।
..................................................
 
পহেলা বোশেখ
ফরিদুজ্জামান
 
ঢেকে রাখি দুখ পেটে লাগা ভুক
এই মহামারী কালে।
পহেলা বোশেখ আজ দিল ঠেক
গাটতি যখন চালে।
খেয়ে চমচম চড়ে টমটম
দেইনিতো চক্কর।
হাতে নাই কাজ এ বেকার আজ
ফকির ও ফক্কর।
গাঁজনের মেলা চড়কের চেলা
বসে নাই রথখোলা।
মঙল ওড়েনি মিছিল ঘোরেনি
তাই মন আলাভোলা।
কুলা ডুলা বাঁশি বড় ভালোবাসি
তার থেকে আজ দূরে।
মনজোড়া বাঁধ ওঠে অনুনাদ
মন ভাঙ্গার সুরে।
ভাঙে মনতীর তাই বিড়বিড়
করে বলি কতো কথা।
দুঃখে কাতর যে হল পাথর
ভাঙে নাই নীরবতা।
মৃত যে আপন দূরেতে দাফন
বুকেতে জগদ্দল।
এমন নিদানে মেনেছি বিধানে
ধরে রেখে মনোবল।
ক্ষুধার দুনিয়া গদ্য ধুনিয়া
পদ্য লেখার দায়।
যদি মহামারী লাশ সারি সারি
শীঘ্রই উবে যায়।
হাতে নিয়ে বাতি কেউ অমারাতি
বিদূরিত করে যদি।
ফের হবে মেলা সুজনের বেলা
ধরাধামে নিরবধি।
..................................................
 
বৈশাখ
কাজী রহিম শাহরিয়ার
 
নতুন দিনের গান এলোমেলো বাতাসের বাঁকে
জীবনের, প্রকৃতির ভাঙাগড়া খেলা দেখি আমি
পুরনো দিনের স্মৃতি, দোলে মেঘে আসন্ন আগামী
জীর্ণতা ঘুচাতে জানি, আনে ঝড় আরুদ্র বৈশাখে
 
কালের বৈশাখী ঝড় চেতনাকে জাগাতে কি আসে?
অজস্র শক্তির দ্বার খুলে দিতে তার আগমন
অন্তরে আরেক ঝড় বয়ে যায়, দোলে এই মন
অজানা শংকায়, তবে এ ঝড়ের আড়ালে কে হাসে?
 
নির্দয় ঝড়ের শক্তি কার মহাশক্তির স্মারক?
মেঘপুঞ্জে লেখা তার সব কথা, সব সুর, গান
অপার্থিব দ্যুতি এক চেতনায় জ্বলে অনির্বাণ
যৌবনের দীপ্ত তেজ, যেন মহামুক্তির আরক!
 
জীবন-মৃত্যুর ছবি বৈশাখের উদ্যাম হাওয়ায়
যেন মহা-প্রলয়ের আগাম খবর দিয়ে যায়!
..................................................
 
বৈশাখ
চন্দ্রশিলা ছন্দা
 
চোখ যায় যদ্দুর
মাঠপোড়া রোদ্দুর
চৈত্রের দুপুরে
খাঁ খাঁ শূন্যতা
হাঁটু জল পুকুরে।
 
এরমাঝে কড়া নাড়ে
মধুমাস বৈশাখ
উৎসব হালখাতা
পার্বণ ঢোল ঢাক
 
আনন্দ উল্লাস
খৈ মুড়ি মুড়কি
বৈশাখ বরণে
চাই চিড়া গুড় কি?
 
চাই ছড়া কবিতা
গান আর মেঠো সুর
আনন্দ হরষে
দুঃখকে করি দূর।
..................................................
 
বোশেখ স্মৃতি
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
 
আম কুড়ানি দেখা যায় না
বোশেখ মাসে ঝড়ে,
কই হারালো এসব স্মৃতি
মন যে কেমন করে।
 
ছোট ছোট আমের চারা
হাতের কাছেই ধরে,
ঝড় তুফানে আম পড়ে না
কুড়াই কেমন করে?
 
ঘরের দোরেই আম গাছটি
আমের থোকা ঝুলে,
মনে চাইলেই হাত বাড়িয়ে
নেই যে মুঠে তুলে।
..................................................
 
স্বাগত নতুন
কিশলয় গুপ্ত
 
না, আমাকে নয়- ভালো তুমি অন্য কাউকে বাসো
জানি তো, এই অনন্ত আকাশও
ধরে রাখে না শুধুই একলা চাঁদ
যেমন গৃহস্থ চাষী- চাষাবাদ
শেষে পাখীরা অবহেলিত ধান খুঁটে খায়।
 
মাটির গভীরে থাকা ইচ্ছাদের ডাকি- উঠে আয়
আমাদের যেতে হবে বহুদূর
আপাতত এখানে রোদ্দুর
পেতেছে শামিয়ানা। দৃষ্টি রেখেছে পথ
 
হে ত্রিকালদর্শী, অনন্তবর্ষীয় হজরত
নক্ষত্রের মাটির বাড়ীতে
কে রাখবে পা- কে সাজবে সনাতন শাড়ীতে
সে গল্প সাধারণ পাঠকের অজানা থাক
সূর্যের সাথে জ্যোৎস্নার অনেকটা ফারাক।
 
জানি, একদিন মরে যাবে শ্বাশত সর্বনাশও
না, আমাকে নয়- ভালো তুমি অন্য কাউকে বাসো
..................................................
 
বৈশাখ এলে
রুদ্র সাহাদাৎ
 
বৈশাখ এলে গ্রামের কথা মনে পড়ে খুব
আমাদের মাটির টিনশেড দুতলা বাড়ি,মাটির সিঁড়ি
পিতামহের হাতে গড়া, মক্তবে হুজুরের বয়ান করা যেনো সেই স্বর্গ।
 
এখনো আমাদের একই ঠিকানা
গোরকঘাটা, বুধাগাজী পাড়া, আলিশান রোড়।
 
স্মৃতিতে চলচ্চিত্রের মতোন ভাসে শৈশব
 
বাবার কড়া শাসন, মায়ের ধমক যা পড়তে বস
ভাইয়ের আদর, দিদির ভালোবাসা।
 
বৈশাখ এলে আমি নিজেই আঁকি নিজের ছবি
ঘুমের ঘোরে হারানো দিন খুঁজি
মাঝেমাঝে আমিও হয়ে যাই কবি
 
এত্তোকিছু বুঝি না হারানো ভালোবাসাই খুঁজি...
..................................................
 
এবারের বৈশাখে যদি বেঁচে যাই
শাহীন খান
 
এবারের বৈশাখ সাদামাটা খুব
বিরহের দরিয়া দিছে সে যে ডুব।
ঘর বন্দি মানুষের করুন দশা
আঁধার নেমে এলো যেন সহসা!
 
এবারের বৈশাখ "কোভিডে" ভরা
দিশেহারা হয়ে আছে বসুন্ধরা
দিনদিন বেড়ে চলে লাশের বহর
নেই নেই ভালো নেই মনের শহর!
 
এবারের বৈশাখ নয় ইলিশের
নয় নয় সে তো নয় পান্তাভাতের
সুনশান নিরাবতা বেদনা মাখা
কষ্টের কালিমায় রয়েছে ঢাকা।
 
এবারের বৈশাখে যদি বেঁচে রই
নিয়মিত নামাজেতে আমি দাঁড়াবই
দোয়া চাই দোয়া করো ওহে রহমান
চিকিৎসার পথ্য করো কিছু দান।
..................................................
 
প্রিয় নতুন বর্ষ
শঙ্খশুভ্র পাত্র
 
আগুনঝরা বোশেখে
গাছের তলে বসে কে
গায়ে-পিঠে মাখছে ছায়া—
মিঠে-হাওয়ার স্পর্শ?
 
জল নাইকো পুকুরে
ধুঁকছে নেড়ি-কুকুরে
ঘেমে-নেয়ে কারোর দেখি
মুখখানি বিমর্ষ৷
 
দেখা হতেই শুরুতে
চলছে লঘু-গুরুতে—
গরম নিয়ে কতরকম
ফন্দি-পরামর্শ৷
 
ভরদুপুরে—বিজনে
দিব্যি আছি বীজনে
শাঁখ বাজিয়ে বরণ করি
প্রিয় নতুন বর্ষ৷
..................................................
 
চোখ পড়লেই হাসি দেই দূর বহুদূরে
মোস্তফা হায়দার
 
বৈশাখের হালখাতার খেরোখাতায়
বাৎসরিক পার্বন দেয় পাঁচপোড়নের ডাক
জীবনের ধারাপাতে বসন্তের কোকিল খুঁজেছি
খুঁজতে খুঁজতে কখনো সুবর্ণা, কখনো ঈশিতা
কখনো বা সালমাকে পেয়েছি উর্মিলার মাঝে;
 
রোদের তপ্ততায় হাঁপাতে হাঁপাতে
কতজনের পাঁজরের দৃশ্যও করেছিল ব্যকুল
ইচ্ছের কাঠিন্যতায় সঙবরেণে লাগিয়েছি তালা
চাবিহীন এ সমাজে- রোদনে রোদন
                      বাড়তে
                        বাড়তে
ভেঙ্গে গেছে চাতাল নারীদের হালহাকিকত;
 
বৈশাখ এলেই চৈতালিকোকিলের সুরের রিনিঝিনি
চাতালদের নিয়ে যায় খুটেমুটে খাওয়া মঙ্গল শোভ্যাত্রায়!
তখনই মনে পড়ে
           হারানো দিনের স্মৃতি
সংস্কৃতির অপছায়ায় ভাসতে থাকা বিশ্বাসহীনতার।
 
ডুবসাঁতারে কাবলাগোটা গিলে খাওয়া
আর পাঁচপোড়ন নামে বাঙালিপনায়
ডালকড়ি ভাজার কাছে বন্ধী ছিল বৈশাখের বিশ্বাস!
মাটির পুতুল, ঘড়িঘাট্টা, হাঁড়িপাতিলে
যে টুকু প্রেম ছিল- তা যেন হারিয়েছে চাতাল মাতালের কাছে!
 
আজ করোনার এই বৈশাখে
                 করোনার চেয়ে হিংস্রতা
আর হরিলুটের দৃশ্যে খুঁজি হারানো বিশ্বাসের প্রেম
যে প্রেম হৃদয়ে জাগে, অনুরণন যোগায়
চোখ পড়লেই হাসি দেই দূর বহুদূরের।
 
এই বৈশাখে বৈশ্মিক আক্রান্ততার চেয়ে
সবুজের প্রান্তর আজ রক্তসুধাপানে বড়ই ব্যস্ত!
অমঙ্গলযাত্রার কাছে ধুলোয় মিশেছে বাঙালিত্ব
ভোগের এই বৈশাখে টান না পড়ুক বিপরীত পাঁজরে
উদয়ের শোকেসে গান শুনতে ইচ্ছে করুক
'তুমি সুন্দর, তাই চেয়ে থাকি এই কী মোর অপরাধ'
..................................................
 
কৃষকের দিনলিপি
হাসান আবু নাঈম
 
আমি লাঙল ভালবাসি
ভালবাসি এই সবুজের মাঠ, খরখরে মাটির শীর্ণ কৃষক।
ভালবাসাই আমার কাছে বড়ো ভালদাম,
সব চেয়ে দামী।
বন্ধ্যা মাটির অলস তৃণ-শিশিরে করে আচ্ছন্ন,
খরতর এই বৈশাখী ফসলের মাঠ।
এ মাটির গর্ভে
সুপুষ্ট ফসলেরা উঁকি দেয়, তীব্র বেদনা বোধ কষাঘাতে,
দেখেছ কি?
এটা গোপন- একান্ত কিংবা প্রকাশ্যে জনলোক।
দুটি লাল গরু
গেরস্তালির ক্ষনেক তৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস, মুছে আসন্ন দহনে
বেলা যায়।
আঙিনায় ঘূনপোকার বসবাস
জোয়াল, লাঙল, টুয়া অলস চিরবৈরী।
কাস্তের ঝকঝকে চকচকে বাঙালি
ডাল ভাতে হামাগুড়ি বহমান কাল
তবুও
বীজ ত্বকে ভবিষ্যৎ ঝুলে থাকে প্রাণ
খর্ব ধূলো স্হান পেলো
মুঠো মুঠো ভরে রাখা সোনা ধান।
আমি ভালোবাসি লাঙল ধরে রাখা কৃষকের মুখ
কৃষাণীর হাতে ঝরে পড়া উড়ো ধান।
..................................................
 
বোশেখ মানে
আশরাফ আলী চারু
 
বোশেখ মানে গ্রীষ্ম এলো
নয়া বছর সেই সাথে
বোশেখ মানে পান্তা ইলিশ
পাটের পাতা শাক পাতে।
 
বোশেখ মানে চালবিলানি
আউশ ধানের বীজ বোনা
বোশেখ মানে চাঁদনী রাতে
গোনাই বিবি গান শোনা।
 
বোশেখ মানে ডুগডুগি আর
হরকিসিমের তাত শাড়ি
বোশেখ মানে উৎসবে আর
হালখাতাটায় জোশ ভারি।
..................................................
 
আজ এ বৈশাখে
ইসমাইল বিন আবেদীন
 
চৈতালি দুপুর বিদায় নিয়েছে একদিন আগেই
কিন্তু সেই কাঠফাটা রোদে ঘোরা হয়নি সারামাঠ।
খেঁকশিয়ালের ডাক শুনতে শিমুল গাছের আড়ালে লুকোনো,
ঘুড়ি উড়োনো, নজুর সাথে ফাঁদ পেতে ধরা হয়নি যে ঘুঘুও।
হয়নি দু-একটা কচি আম কুড়োনোর
আশায় গাছের নিচে দল বেঁধে বসা।
 
আজ পহেলা বৈশাখ। ঘুম থেকে উঠে দেখা হয়নি বাবা-মাকে
খাওয়া হয়নি মায়ের হাতের সাদা ক্ষীর, পান্তা ও বেগুন ভাজি;
যাওয়া হয়নি বাত্তুলসী ধানের বীজ নিয়ে দূর মাঠে
শোনা হয়নি বৈশাখের গান আর রাখালের বাঁশি-
শুনছি কেবলই ঘুঘুর ডাক- বাবা ঘুট্টু ফের, ফের..
 
গেল বার পাহাড়ের গায়ে ঘুঘুর এ আর্তনাদ
শুনে মনে পড়েছিল মাকে!
খেলার সাথী নজরুল- মানে নজু; ও আমাকে বলতো-
ঘুঘু পাখিটার ছেলে হারিয়েছে; তাই খুঁজে ফিরছে-
আমি বলতাম থাক না! ওকে ধরে আর কাজ নেই।
ধরা হয়নি ছেলে খোঁজা সে মা পাখিটাকে
তবু আজ বৈশাখের এ প্রভাতে আমি সেই একই ডাক যেন শুনতে পাচ্ছি!
বাবা ঘুট্টু ফের, ফের…
এখনো কি মা পাখিটা সেই ছেলেটাকে খুঁজে পায়নি?
ছেলেটি এখনো ফেরেনি বাসায়?
নাকি মায়ের ডাক সে আজও শুনতে পায়নি!
কিন্তু এই নির্জন পাহাড়ে
আমি আমার মায়ের ডাক শুনতে পাই
আমি যে মাকেই খুঁজে ফিরি।
মাগো, কোথায়- কেমন আছ!
আজ এ বৈশাখে, প্রভাত বেলায়?
..................................................
 
বৈশাখ এলো
শেখ একেএম জাকারিয়া
 
বৈশাখ এলো, দুয়ার খোলো
বরণ করো তারে,
নতুন ভাবে, নতুন সাজে
গড়ো জীবনটারে।
 
পুরনো গ্লানি,চোখের পানি
ধুয়ে মুছে হোক সাফ,
ভুলে যাও সব, ডাকো যে রব
হাত তুলে চাও মাফ।
 
হাত ধরে হাত,গাও দিবা রাত
নতুন দিনের গান,
এসো বৈশাখ, পাপ দূরে যাক
উঠুক হেসে প্রাণ।
..................................................
 
রঙ্গিন বৈশাখ
সালমা বিনতে শামছ
 
বার্ধক্য চৈত্রের ঝিমিয়ে হেঁটে চলা,
নিরিবিলি প্রস্থান,
কচি পাতাদের অজস্র কথা বলা।
বাতাসের কানে কানে শিশ দিয়ে বলে যায়;
এলো যে বৈশাখ।
সূর্যের তেজ ভীষন,
ক্লান্ত হয় দেহ-মন।
হঠাৎ ই দমকা ঝড়ো হাওয়া
প্রকৃতির বিধ্বংসী খেলা,
প্রখন তাপ, এই বৃষ্টি
বৈশাখীর এই বেলা।
বার্ষিক গতিতে আসা
চক্রাকার বৈশাখী দিন,
বাঙ্গালির প্রাণের মাস
খুশিতে বাজায় বীণ।
রং মাখা দিবস গুলো
হয়ে উঠুক রঙ্গিন।
..................................................
 
বৈশাখ ১৪২৭
অর্নিয়া অর্থি
 
যেতে পারিনি রমনার বট মূলে,
ছিল না তো পয়লা বৈশাখ আটকে।
হইনি হৈচৈ বৈশাখের মেলা,
শান্ত হয়ে কাটে সারা বেলা।
 
বৈশাখ উৎসব নিরুৎসব হলেও দেশে,
উৎসব হয়েছে প্রতিটি বন্ধ ঘরে ঘরে।
শোনা যায়নি কোনো বৈশাখের গান,
হয়েছে চারদিকে শুধু করোনা ভাইরাসের গান।
 
হয়নি প্রতি বছরের মতো বৈশাখ পালন,
তবুও পান্তা-ইলিশ,শাড়ি-ফুল পড়ে বৈশাখ করেছি গ্রহণ।
..................................................
 
আনন্দ আলোকে
বিকাশ চন্দ
 
শেষ বছরের সকালে মাস পয়লায় তখন কৃষ্ণচূড়া বরণ
টলটলে জলের নাচন এদিক ওদিক অবসাদের ঢেউ
বন পাখিদের গানে ব্যাস্ত দোয়েল শালিক পায়রা টিয়া  
রঙ বাহারি সময় কথা জানে কিছু শুদ্ধ সোপান
তবুও সামাজিক দূরত্বে ধীরে ধীরে নতুন বছর পালা
অস্পষ্ট মুখেরাও জানে একটু খুশির ধমনী স্পন্দন।
 
টুকরো টুকরো ছড়িয়ে পড়েছে কথা হাসি গান
বিনীত বসন্ত বৌরি আলগোছে ডেকে ওঠে একা
এ কেমন সময় যেন উৎসবের আড়ালে আত্ম পরিহাস
তবুওতো হার্দিক আবেদন আগামী বছরের নির্মিতি কাল
এই সবে বরণ বার্তা নদী জল মাটি ও আকাশে
আপন মাধুর্যে ঢেউ দোলে নদীর মোহনায়।
 
গাছেদের নতুন পাতায় সবুজ চিকণ রোদের মায়া হাসি
লুকোনো মরণ অদৃশ্য বিস্তারে থমকে দাঁড়িয়ে
এ বছর আনন্দ সকাল প্রথম পল্লবিত সূর্য আলোয়
বেদনা বোঝে মায়েরা আমার আঁচলে ভরেছে স্নেহ
সমস্ত পরজীবী নশ্বরতা থমকে দাঁড়িয়ে অবাক বিষ্ময়ে
চিরকালই প্রথম বর্ষ ভোর ভেসে আসে আনন্দ আলোকে।
..................................................
 
নববর্ষের শুভেচ্ছা
সাকিব জামাল
 
গেলো কেটে দুঃখের চৈতালি রাত,
এলো নববর্ষ, সুখের সোনালী প্রভাত।
চলুক বয়ে আগামী সময় আনন্দ প্রাণে,
মঙ্গল ধ্বনি বাজুক সব অন্তর ধ্যানে।
আসুক সফলতা জীবনে সবার কাঙ্খিতমত,
আজই বিদায় হোক আছে যার অশুভ যত।
সতত শুভেচ্ছা আজ- অজস্র শুভ কামনায়,
সুসময়ে ভরে উঠুক জীবন- প্রতিদিন পথচলায়।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.