সায়মন_মুহাম্মদ মিজানুর রহমান : পর্ব-৪

সায়মনের স্ত্রী জারিফা। যার বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর। বলতে গেলে এখনো তরুণী। কাটেনি যৌবনের ভাজ। বিয়ের পর দুবছর কাটিয়েছে স্বামীর সাথে। এরই মধ্যে এক সন্তানের জননী। এরপর আর সায়মনের সাথে থাকা হয়নি। চলে আসে বাবার বাড়ি। তার রূপ এখনো অনেকের নজর কাড়ে। বিয়ের আগে সে ছিল মহল্লার টপ গার্ল। নিজের সৌন্দর্য নিয়ে তারও যথেষ্ট বাহাদুরি ছিল। ক্ষুধার্ত নেকড়ের দল যেমন শিকারির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, একদল যুবককেও সে বুনো পশুর মতো ভাবত, কারণ তাদের রুচি আর বুনো পশুগুলোর মধ্যে খুব একটা তফাত সে দেখত না। তাদেরকে নিয়ে মজা করা জারিফার একরকম শখ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের দলে কবে সে সায়মনকে তুলে এনেছে সে কথা জারিফার এখন স্মরণ নেই। একপর্যায় এই হাবা-বোবা ছেলেটার প্রেমে ফেঁসে যায় জারিফা, আর তাকেই বিয়ে করে।
এখনোসায়মনকে নিজের যোগ্য বলে মনে করে না, কীভাবে কী করল নিজেও বুঝতে পারল না। বোঝা, না-বোঝার মধ্য দিয়েই সে সায়মনের সন্তানের মা হয়েছে। তাতে যে সে খুব একটা খুশি, তা কিন্তু নয়। সায়মনকে সে বিয়ে করেছে পরিস্থিতির শিকার হয়ে। তখন যদি সায়মন তাকে বিয়ে না করত, তবে যে কলঙ্কের দাগ তার কপালে সেঁটে যেত আজীবন চাইলেও তা মোছা যেত না। জারিফা সে কথা মনে রাখেনি। অন্যের সন্তানের দায় স্বীকার করে জারিফাকে সে বিয়ে করেছিল। সে কথা পাড়ার লোকে না জানলেও, জারিফার অজানা নয়।
আজ সায়মনকে তার ভালো লাগছে না। এটা একান্ত তার বিষয়। মনের ব্যাপার। কিন্তু মানবিকতার কাছে বড় দুঃখজনক। মাঝে মাঝে সায়মন ভাবে, সাদা চামড়ার একটা গুণ থাকে, সহজে মানুষকে প্রলুব্ধ করতে পারে। আমি তার শিকার হয়ে নিজের আদর্শ, নিজের মানবিকতা সবই হারিয়েছি।পুরুষজাতির প্রবল আকর্ষণ থাকে নারীর উচ্ছল নিতম্ব, প্রবল শক্তি নিয়ে জেগে উঠা বিদীর্ণ বক্ষে। জারিফার সারা শরীরজুড়ে কামনার আগুন ঝর ঝর করে পড়ছে। তার চলনে-বলনে পরিলক্ষিত হয় তেমন একটি মনোভাব।
এসব মেয়েদের গাল ফেরেন্ড বানানো যতটা সহজ তাদের নিয়ে ঘরসংসার করা ততটা সহজ ব্যাপার নয়। কোনো কোনো পুরুষের জন্য তা হিমালয় জয়ের মতো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ডানে বললে বামে চলে, সামনে বললে পিছে। সায়মনের জীবনে এরকমই ঘটছে। তাই স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বিয়ের দুবছরের মাথায় সেই যে বাবার বাড়ি গেল, আর ফেরার প্রয়োজনও মনে করেনি।
স্বামীর কোনো খোঁজখবর সে রাখে না। সায়মনের স্ত্রীকে নিয়ে আগ্রহের জায়গাটা অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে। তবে সে আজও তাকে প্রচ- ভালোবাসে। যাকে একদিন সে নিজের স্ত্রী বলে মেনেছে তাকে কীভাবে ভোলা যায়। একটি পবিত্র বাণীর সাথে জড়িয়ে আছে দুটো জীবন। সায়মন প্রকাশ্যে এমন একটা ভাব করে যেন জারিফার প্রতি তার কোনো আগ্রহই নেই। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন।
ভিতরে ভিতরে তাদের সম্পর্কের এই অবনতির কথা কারও জানা ছিল না। না-জানত সায়মনের পরিবারের কেউ, না জারিফার পরিবার। তাই মেয়ে বাবারবাড়ি চলে আসায় বাবা-মা প্রথম প্রথম কিছুই বুঝতে পারল না। যখন বুঝতে পারল, মেয়েকে কথা শোনাতে পারল না। আয়নুদ্দিনের অভিযোগ সায়মনের দিকে। এজন্য স্বামীই দায়ী। যে স্বামী তার স্ত্রীর খবর রাখে না, সে কারণে-অকারণে বিগড়ে যেতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। তার জন্য স্ত্রীকে দায়ী করা চলে না। তারও একটা মন আছে, আছে নিজস্ব অনুভূতি। আজ যদি জারিফা নষ্ট হয়েও যায় এজন্য দায়ী সায়মন। জারিফা নয়।
সায়মনের বাবাও কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছে না নিজের ছেলেকে। যে ছেলে নিজের বউয়ের খবর রাখে না, সন্তানের কথা ভাবে না, সে তার ছেলে হতে পারে না। এমন ছেলে তার একথা ভাবতেও তার কষ্ট হয়।
দীর্ঘদিন সায়মনকে হারিয়ে সায়মনের মা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। শরীরে নানা অসুখ-বিসুখ বাসা বেঁধেছে। তার ধারণা, আমার ছেলে নিশ্চয়ই কোনো অপরাধজগতে নাম লিখিয়েছে, নতুবা সে এমন কাজ করছে যা সমাজের চোখে, রাষ্ট্রের চোখে অন্যায়। আর না হলে দুনিয়াতে নেই। যদি বেঁচে থাকত, এতদিনে অবশ্যই ফিরে আসত। কোনো-না-কোনোভাবে তার খবর জানতে পারতাম। শোকের ছায়া বুকে নিয়ে কেঁদে ভাসছে মা।
জারিফা এতদিনে নিজেকে অনেক বদলে নিয়েছে। সায়মন নামে কারো সাথে কখনো তার সম্পর্ক ছিল একথা সে মনে রাখতে চায় না। তার স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচার ইচ্ছে বা মানসিকতা কোনোটাই তার নেই। মরার আগে সে নিজেকে মারতে চায় না। তাই অনেক ভেবেচিন্তে নিজের পথ নিজেই আলাদা করেছে। সে স্পষ্টভাবে বাবাকে জানিয়ে দিয়েছে, এভাবে মানুষের বেঁচে থাকা যায় না। জীবনটাকে উপভোগ করার জন্য কিছু একটা অবলম্বন থাকা দরকার। সেই অবলম্বনটা যদি নিজের মতো না-হয় তাহলেতাকে ছুড়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আবেগ আর দুবর্লদের ভাষা দিয়ে দুনিয়াটাকে রঙিন করে দেখা যায় না। তাই নিজের ব্যাপারে নিজের মতো করেই সে ভেবে নিয়েছে। ^শুরকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে আপনার ছেলের কর্মের বোঝা আমি আর বহন করতে চাই না। আপনার বংশের শেষ রক্ষা আপনি বুঝে নিলেই আমি খুশি হবো। আমাকে অভিশাপের জীবন থেকে মুক্তি দিন। আর নিজেরাও বাঁচুন।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.