শেষ মারবেলা_সালেহা চৌধুরী : পর্ব-১৪
পম পম পরিচিত সুরে কাজ করছে হ্যারি সিকোম্ব। দশদিনের ফ্লু ভাইরাস যদিও তাকে একটু কাহিল করেছে তবু জীবনী শক্তির সঞ্জীবনী সুধায় সারা অফিস ঘর পরিপূর্ন। পম পম করছে গানের গলা। খোপে খোপে চিঠি ভরবার কাজ ওর ক্রিসেরই মত। বিয়ারের টিন মুখ খুলে টেবিলে পড়ে আছে। মাঝে মাঝে ওই পবিত্র পানীয়তে চুমুক না দিলে সে কাজ করতে পারে না। ও কাজ শেষ করে চলে গেলে ক্রিস আসে। হ্যারির ডিউটি ফুরাণোর আগেই অফিসে পৌঁছে গেল ক্রিস। গায়ে এক পরিচিত হলুদ রং এর পুলোভার। দশ বছর হলো এই একই পুলোভার গায়ে। এখন ঠিক হলুদ নয়, হলদেটে। রং জ্বলা বিবর্ন চেহারা। বছর তিনেক আগে চাঁদা তুলে এক নতুন পুলোভার কিনে দেওয়া হয়েছিল ওকে। কিন্তু একদিন পর আবার ফিরে গেছে পুরনো পুলোভারে। এরপর থেকে আর কেউ চাঁদা তুলবার চেষ্টা করেনি। ওর মাথার চকচকে টাক দেখতে পেল ক্রিস। পম পম সুরও শুনতে পেল।
দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। স্বভাবসুলভ উচ্চকণ্ঠে হ্যারি প্রশ্ন করে না- হ্যালো মেট। চোখ তুলে ক্রিসকে দেখে আবার ফিরে যায় নিজের কাজে। এক সময় মুখ তুলে বলে- বড় সাহেব অর্থাত অফিস সুপারভাইজার কাম সুপারিনটেনডেন্ট ওর সঙ্গে দেখা করতে বলেছে। ক্রিস তাকায় হ্যারির দিকে। বলে- কারণ?
-কি এক জরুরি নালিশের চিঠির উত্তর দিতে। তোমার স্পেনের নাম্বার জানা থাকলে সেখানে ফোন করতাম আমি। একটা শূন্য চেয়ারে বসে পড়ে ক্রিস। বলে- কেমন ছিলে তুমি হ্যারি?
-আমি? বেইজিং ফ্লু কাহিল করেছিল। ক্রিসমাস করা হলো না সেই কারণে। তোমার কেমন কাটলো সময়?
-ভাল। শান্ত গলায় ক্রিস বলে।
লম্বা টেবিলে নানা সব চিঠিপত্র, পার্শ্বেল। কোনটি চৌকো, কোনটি লম্বাটে, কোনটি গোল। সবগুলো পড়ে আছে সর্টিং এর কারণে। এক ক্যান বিয়ার। সবটা শেষ হয়নি। টি ব্যাগ, গুঁড়ো দুধের কৌটো। গোটাকয়েক মগ। ও কাপ। এক প্যাকেট চিনি মুখ খোলা। হঠাৎ নিজের গলা ভেজাতে এক কাপ চায়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সে ওঠে। কেতলির প্লাগ অন করে। সপ্তাহে এক পাউন্ড চাঁদাতে অনেক কাপ টি আর কফি ধ্বংস করে সকলে। কি ভাবছে ক্রিস। কেতলির স্টিম উঠে কেতলি বন্ধ হয়ে গেল ওর ভাবনার ভেতর। হ্যারি তিনবার ডেকেও ওর সেই ভাবনার জগত থেকে ওকে টেনে তুলতে পারলো না। চারবারের বার সে পিছু ফেরে। হ্যারি বলে- ক্রিস তুমি আমার নোট পেয়েছিলে?
-কিসের নোট? গুঁড়ো দুধ চায়ে গলতে সময় নেয়। একটি চামুচে চায়ের বাদামি রং পরীক্ষা করতে করতে বলে- কেমন নোট?
-ফ্লুতে পড়বার আগের দিন একখানি নোট রেখে তোমার নামে আমি চলে গিয়েছিলাম ক্রিস। একটা মুখ খোলা পার্শ্বেলের সঙ্গে। ঝটপট চিঠি সর্টিং করতে করতে জানায় হ্যারি। চুইংগাম চিবিয়েই চলেছে। ক্রিস মুখ ফেরায়। ফেয়ারি লিকুয়েডে ভেজানো প্রয়োজন এমন এক দাগধরা কাপে চা। ধোঁয়া উঠছে তখন থেকে। কিছু গুঁড়ো দুধ ভাসছে। বলে সে- কি লিখেছিলে সেই নোটে?
-সর্ট দ্যাট স্টুপিড ওম্যান। যে ইমবেসিল দু হাজার পাউন্ড বইএর ভেতরে পাঠানোর মত দুর্বদ্ধিতে আক্রান্ত। পাঠানোর মাধ্যম কি? না বই।
ক্রিসের হাতে চায়ের মাগ থেমে আছে। বলে আবার হ্যারি- তুমি নিশ্চয়ই পার্শ্বেলটিকে ঠিক ঠাক মত বেঁধে পাঠিয়েছিলে?
-আসতে পারি। একসময় প্রশ্ন করে ক্রিস।
চোয়াল দৃঢ়। দুটো হাত দু পাশে ঝুলছে। সে তাকায় ক্রিসের দিকে। ওর মুখে হলিডের লাবন্য কোথায়? সার্টের খোলা বোতামের নিচে মেরীর নিজের হাতে বোনা মোহিয়ার উলের লোমশ লোমশ জাম্পার।
-আরে এসো এসো ক্রিস। যে এখনো ক্রিসের প্রতি এক ফোঁটাও বিশ্বাস হারায় নি। যাকে বানানো গল্পে ক্রিস ভোলাতে পারে, বোঝাতেও পারে। ক্যাবল কার পরিচালককে এক পছন্দ সই সমাধানে বুড়ো আঙুল দেখাতে পারে ক্রিস। যে পরিচালক চমৎকার নীল নকশায় ক্রিসকে ক্রমাগত দস্তখত করতে বলছে। আর এখন সেই বিশেষ পরিচালক ক্রিসকে এক অভিমুন্য চক্র থেকে বের করবে, উদ্ধার করবে বলে, তিরিশের তরুণ হয়ে ওর সামনে সিগারেট ফুঁকছে। কিন্তু ক্রিস ও পথে পা বাড়ালো না।
“প্লিডিং গিলটি” আত্মভাষনের কারণে জজ সাহেব তাকে দুই বছরের জন্য জেল দিলেন। সব কিছু হতে চার মাস লাগলো। এক অন্তরালবর্তী জগতে চালান করবার রায় দিলেন। যেখানে চিঠি আর পার্শ্বেল নেই। শেষ মারবেলার রাতে এই তো ভেবেছিল ক্রিস। যখন জলপাই বন তাকে চিনতে পারেনি, বহিরাগত ভেবেছে। থোকা থোকা অন্ধকারে মেরীর বুকের কাছে শুয়ে ঘুরে ফিরে এমনি এক সম্ভাবনায় নিজের ভূমিকা মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল ক্রাইস্ট ক্রিস্টোফার। ঠিক এমনি ভূমিকা- প্লিডিং গিলটি। নিজের দোষ স্বীকার।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments