নির্ভুল_অলভ্য ঘোষ : পর্ব-৬

কিছুক্ষণ পরে জেনেছিলাম ছেলেটার নাম প্যট্রিক।প্যট্রিক আইরিশ ছেলে;আমার থেকে কয়েক বছরের ছোট ও চুপচাপ।খুব কম কথা বলে।কিছু বললে সরল হাসি হাসে।ঠাকুরমা কে সহযোগিতা করতে ও নিযুক্ত আছে বেশ কিছুদিন।আসলে ও একটা ভবঘুরে রাখাল।খামখেয়ালী।কোথা থেকে এ গ্রামে এসে জুটেছিল।ঠাকুরমা তার মনিব কে বলে এই খামারেরই একটা ঘরে প্যট্রিকের থাকা খাওয়ার বন্দবস্ত করে দিয়েছে।প্যট্রিক থাকায় ঠাকুরমার যে সুবিধা হয়েছিল তা হলও ভেড়াদের পেছনে তাকে আর ছুটতে হতো না। সেই তাদের মাঠে নিয়ে যেত;আবার ফিরিয়ে আনতো।অর্থাৎ প্যট্রিক এর কাজটা ছিল একটা রাখালের।সে খুব লাজুক ও মুখচোরা স্বভাবের।খাবার টেবিলে খেতে বসে মাথা নিচু করে খেতও।আমার সাথে যখন গার্ডেনে বিকেলে হাঁটতে যেতো তখন একটা বড়ো হোগলা ঘাস ছিঁড়ে সেটার ওপর তার সমস্ত মনোযোগ নিবিষ্ট করে আমার পেছনে পেছনে হাঁটত।আমার দিকে ঘুরেও তাকাত না।আর ওর এই আমার প্রতি অবহেলা যে কি ভয়ংকর আমাকে ক্লেশ দিতো তা কেবল চোদ্দ বছরের যুবতী হৃদয় বুঝতে পারবে। একদিন জানতে পেরেছিলাম প্যট্রিক এর অদ্ভুত সব নেশা আছে!
 
কি ভাবে জানলাম?
 
সেও এক মজার ঘটনা।মাঝে মাঝেই কাজের ফাঁকে প্যট্রিক নিরুদ্দেশ হয়ে যেত।ঠাকুরমা বলেছিল ছেলেটা সৎ, সহজ সরল, বিশ্বস্ত;চোখ বন্ধ করে ওর ওপর ভরসা রাখাযায়।ঠাকুরমার কাছে এই নিরপরাধ বালকটির নির্ভরযোগ্যতায় সন্দিহান কিছু না থাকাই যে আমাকে ঈর্ষান্বিত করেছিল এমনটা বোধয় নয়। আসলে আমার ভেতরে ভেতরে রাগছিল প্যট্রিক এর ওপরে।রাগের কারণ অবশ্যই আমার প্রতি তার অনাগ্রহ নিরাসক্তি।আর সেই রাগ থেকেই আমি প্যট্রিক এর পেছনে গোয়েন্দাগিরি শুরু করলাম।সন্দেহজনক একটা কিছু আমাকে খুঁজে বার করতেই হবে যা প্যট্রিক এর ভিজে বেড়াল ভালো মানুষের ভাব মূর্তিটা মোটেই আসল নয়;বলে ঠাকুরমার কাছে প্রমাণ করে দিতে পারে।
 
কাজের অবসরে কোথায় নিরুদ্দেশ হয় সে?
 
একদিন দুপুরে প্যট্রিক নিরুদ্দেশ;আমি সেই প্রথম প্যট্রিকের ঘরে গিয়েছিলাম।খানাতল্লাশির উদ্দেশ্য ছিলনা প্রাথমিক ভাবে দেখতে গিয়েছিলাম প্যট্রিক কি করছে।ঘরের দরজাটা হাঁকরে খোলা;এখানে চোরের ভয় নেই যদিও;পরে জেনেছিলাম দরজার শিকল ছিল না।শিকল ছিল না প্যট্রিকের জীবনেও।তার জীবনটা হাটকরে খোলা বইয়ের মতো ইচ্ছে করলে সহজে পড়া যায়।যখন দেখলাম ঘর ফাঁকা প্যট্রিক নেই তখন সুযোগের সদ্ব্যবহার করলাম।তার ঘর না বলে গোডাউনের অংশ বিশেষ বললেই ভালো।বিশাল বাগানের এক প্রান্তে ঠাকুরমার কুঠিটা থেকে বেশ কিছুটা দূরে ভাঙাচোরা আসবাবপত্রের গোডাউনের ফাঁকা একটা ঘরে প্যট্রিক এর বাস।এই সব ভাঙা মালের ভেতর থেকেই প্যট্রিক যে হাতুড়ি পেরেক ঢুকে তার খাট ;বিছানা পত্র ও ঘরের একটা টেবিল চেয়ার ঠিক ঠাক ব্যবহার যোগ্য করে নিয়েছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।প্যট্রিক এর খাটের তলায় দুটো খাঁচা রাখা।একটা খাঁচায় গিজ গিজ করছে সাদা ইঁদুর আর একটা খাঁচায় রাখা আছে কত গুলো খরগোস।বেশ মজার প্যট্রিক।টেবিলের উপর রাখা কত গুলো ডায়েরি;বই।সায়েন্স ফিকশন, ফেয়ারিটেল।  ডায়রির পাতায় পাতায় বিভিন্ন গাছের পাতা সাঁটা তলায় তাদের নাম লেখা।কত বিভিন্ন প্রজাতির পাতা যে সে সংগ্রহ করেছে তার ঠিক নেই।ছেলেটা পাগল কিছু একটা গবেষণা করছে বুঝলাম ।তার টেবিলের শক্ত হয়ে আটকে থাকা ড্রয়ার টা এক হেঁচকায় টেনে খুলতে গিয়েই।একটা আতস কাঁচ,সুঁই সহ ইনজেকশনের সিরিঞ্জ,কতগুলো হোমিওপ্যাথিক ঔষুধের ফাঁকা শিশি, অনেক গুলো দেশলাই বাক্স পড়ে গেল মাটিতে।হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কয়েকটি শিশি  ভেঙ্গে চুরমার।ঠিক সেই সময় প্যট্রিক এসে দাঁড়ালো দরজায়।আমার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।কি ভাবল প্যট্রিক!
 
হাতের আড়বাঁশি বিছানার ওপর ছুঁড়ে রেখে।কোট আর হ্যাট টা দেয়ালের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে। ভাঙা হোমিওপ্যাথির বোতলের কাঁচের টুকরোগুলো আমার পাশে বসে আমার সাথে কুড়তে লাগলো সে।
 
আমি বলেছিলাম;- সরি।
 
প্যট্রিক বলেছিল;-ইট'স ওকে!
 
আমি বুঝতে পারছিলাম;না মোটেই কাজটা ঠিক হয়নি।প্যট্রিক বোধ হয় বুঝে গিয়েছিল আমি কৌতূহলী হয়েই ওর ঘরে এসেছি।সে নিজেই একটা দেশলাই এর বাক্স খুলে দেখালো আমার কৌতূহল নিরসনের উদ্দেশ্যে।দেশলাইয়ের বাক্সের ভিতর রং বেরঙের পোকা।বিধাতার সৃষ্ট সেই অপরূপ কীট গুলকে দেশলাইয়ের বাক্স নয় যেন হৃদয়ে বন্দী করে রেখেছে প্যট্রিক।
 
আমি অস্ফুট স্বরে বলেছিলাম;-অপূর্ব!
 
প্যট্রিক বলেছিল;- দাঁড়াও তোমার জন্য গিফট আছে।
 
বিছানার বালিশের তলা দিয়ে একটা পিচবোর্ড বাক্স বার করে চেয়ার টা টেনে বসলো টেবিলের কাছে।বইয়ের ফাঁকা থেকে চকচকে রাংতার কাগজ বের করে ভালো করে মুড়ে ফেলল বাক্সটা।আমি ড্রয়ার টা গুছিয়ে জায়গায় প্রতিস্থাপন করে;কাঁচের টুকরোগুলো কোথায় ফেলব যখন ভাবছি;হাতের সেলু টেপ মারা শেষ করে গিফট টা আমার হাতে দিয়েছিল প্যট্রিক!আর কাঁচের টুকরোগুলো আমার হাত থেকে নিয়ে ফেলেছিল জানালার পাশের একটা বাস্কেটে।আমি গিফটের বাক্সর মোড়ক উন্মোচন করতে যেতেই প্যট্রিক বলেছিল;এখানে নয় ঘরে গিয়ে খুলো।তার মতো এতো সুন্দর গিফট আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে দেয়নি।নিজের ঘরে এসে দরজা জানালা বন্ধ করে যখন প্রচণ্ড কৌতূহলে সেই বাক্স খুললাম বাক্সের ভেতর থেকে বের হতে লাগলো রংবেরংয়ের প্রজাপতি।কতগুলো তার আমার মাথায় বুকে বসতেও ভুল করলো না। ঠিক সেই ভাবে প্যট্রিক কখন যে খেলায় খেলায় আমার হৃদয় জুড়ে বসে পড়েছিল বুঝতেই পারিনি।ওর পিচবোর্ডের বাক্সে কচি সবুজ পাতা আর শুঁয়োপোকা রেখে প্রজাপতি চাষের মত মনের সমস্ত কুৎসিত কাঁটা বিশিষ্ট শুঁয়োপোকার মত কদর্যতাকে সে প্রজাপতির ঝলমলে ডানায় যেন ম্যাজিক করে বদলে দিতে পারতো।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.