পূজা সংখ্যা ২০২০ : পর্ব-২

শরৎ মানেই মায়ের আগমনের ঋতু। সেই সময় আকাশে বাতাসে মায়ের আগমনের গন্ধ বিকশিত হয়। কাশবনের ছটা মানুষের মনে এক নতুন স্নিগ্ধতা শুরু করে। শারদীয়া উৎসব হিন্দুদের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। শারদীয়া উৎসবকে ঘিরে মানুষের মনে কল্পনা জল্পনার শেষ থাকে না। সমস্ত দেব কূলকে ওষুরদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য মা দুর্গা ওষুর বধ করেছিলেন। তারপর থেকেই দুর্গাপুজার প্রচলন। এই দুর্গাপুজাকে ঘিরে যেমন যত উল্লাস,তেমনি নারীদের মধ্যেও আমরা দুর্গার রুপ দেখতে চাই। মা দুর্গাকে নিয়ে বিভিন্ন কবি বিভিন্ন কবিতা তুলে ধরেছেন। আর শারদীয়া বিষয়ে কবিদের সেই কবিতা নিয়েই বাংলাদেশেরমোলাকতডটকম পুজো সংখ্যা ২০২০ আয়োজন করেছেন। আশা করি এই সকল কবিতা পাঠকদের পাঠে মুগ্ধতা রাখবে।
 
সকলকে ধন্যবাদ আমাদের সাথে পাশে থাকার জন্য।
 
প্রিয়াংকা নিয়োগী,
পুন্ডিবাড়ী, ভারত,
পুজো সংখ্যা ২০২০
সম্পাদিকা, মোলাকত ডটকম।
 
সূ চী ত্র
কৃত্রিম সভ্যতা :: উত্তমদেবনা
দুগ্গা মা :: প্রিয়াংকা নিয়োগী
দূর্গা বিজয়া  :: তানজারীন ইফফাত স্বাতী
পূজা এলে ::
মজনু মিয়া
শরৎ যখন আসে :: গোবিন্দ মোদক
ওদের কাছে :: বিকাশ চন্দ
জয় দূর্গতিনাশিনী :: পলাশ চন্দ্র দাস
আগমনী :: চিত্ত মাহাতো
উৎসব :: শর্মিষ্ঠা ঘোষ
এস মা গো :: রত্না চক্রবর্তী
শারদীয়া :: বনশ্রী বড়ুয়া
চরিত্রহীন :: দুলাল কাটারী
শরৎ বন্দনা :: নমিতা সরকার
শারদ শুভক্ষণ :: পারভীন আকতার
মহাসপ্তমী :: এস ডি সুব্রত
উপজাতি-ফুল :: প্রতিমা রায়বিশ্বাস
পুজো  আর  লোহার  গেট :: ইন্দ্রজিৎ রায়
শারদ স্মৃতি-ছেলেবেলার পূজা :: প্রবীর রায়
..................................................
 
কৃত্রিম সভ্যতা
উত্তমদেবনা
 
কৃত্রিম কাষ্ঠহাসিতে হাঁফ ধরা সমাজে
সভ্যতার ঘোলা জলে- হাবুডুবু খেতে খেতে
অকৃত্রিম অভিব্যাক্তিকে মনে হয় পাগলামো।
মিথ্যার বেড়াজালে আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা সমাজে
সহজ সারল্য, নিপাট সত্যকে বিশ্বাস করতে
ভীষম খেতে হয়।
মনে হয় অন্তরালে আছে কোন মতলব ভাজা।
 
যখন বুঝা যায়-
' নিপাট সত্য, অকপট সারল্য, 
তখন -- সেকেলে বা অচতুর ভেবে,
করুণায় আর্দ্র হয়ে উঠি।
সময়ের অযোগ্য ভেবে-
হৃদয়ে মায়ার উদ্রেক হয়।
আফসোসও করি।
শঙ্কিত হই তাঁর চলার সামর্থ নিয়ে।
 
অথচ তথাকথিত সভ্যতায় গা ভাসানো
এই কপট আমাদেরকেই-
অবচেতনে, বিবেকের বিদ্রূপাত্মক ভ্রূকুটির বেদনা সন্তাপে
নিত্য জ্বলে- মানবিক অবক্ষয়ের ভারে
ন্যুব্জ হয়ে, চলতে হয়- নত শিরে।
আর তখন-
আসামী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি-
বিবেকের কাঠগড়ায়।
..................................................
 
দুগ্গা মা
প্রিয়াংকা নিয়োগী
 
মাতৃপক্ষের সূচনা হয় দুগ্গা মাকে দিয়ে।
দুগ্গা মা এলে তুমি এবছরে,
তবুওতো করোনোকে উপেক্ষা করে আমরা তোমায় নিয়ে মেতে,
লক্ষী, গনেশ, স্বরস্বতী, কার্তিক
সবাই থাকে সাথে,
তাদের সাথে তাদের বাহনগুলিও যে রয়ে,
মা দুগ্গার দশ হাত,
দশ হাতে দশরকমের অস্র,
অষুর বধ করেছিল ত্রিশুল দিয়েই শেষ পর্যন্ত।
তোমার মত যেন নারীরা করতে পারে তাদের ওষুরকে বধ,
এই কামনা করি তুমি আশীর্বাদ শক্তি দাও তুলে দশ হাত।
মা দুগ্গাকে দেখে তোমরা তৈরী হও,
তোমাদেরও যখন সময় আসবে,
তখন ত্রিশুল তুলে নাও।
সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী,
চারদিন পুজোয় ধনুচি নাচ,
নতুন জামা পড়ে মা কে দেখতে যাওয়া ঘোরাঘুরি জমপেষ খাওয়ার মধ্য দিয়েই কাটে।
আনন্দের কম হতে থাকে,
যখন দশমীতে মা কে বিদায়ের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটে।
ঘাট থেকে ফেরার সময় থেকেই
আসছে বছরের মা দুগ্গার আসার কল্পনা আবার শুরু হতে থাকে।
দশমী ছেড়ে গেলেও বিজয়া দশমী নিয়েও আনন্দ হয়ে থাকে।
..................................................
 
দূর্গা বিজয়া
তানজারীন ইফফাত স্বাতী
 
দেবী তুমি স্বর্গলোকেই থাকো
এসেছো ধরায় আজি,
করিতে বরণ তোমায় সেজেছে
ফুল সাজি।
ডালে ডালে শাখে শাখে
ডাকে কত পাখি,
প্রকৃতি সুন্দরী তুমি
মেলো তোমার আঁখি।
রূপ রসে গুনে
ধরো দেবীমূর্তি!
 
অসুরের বিনাশ করো
ত্রিশূল নিয়ে হাতে,
মহামায়া ছড়িয়ে দাও আজি
বিজয় প্রাতে।
দেখো কত অন্যায় আর নির্যাতনের ক্ষত
সরাও তোমার শুদ্ধ হাতে অবিচার যত,
সুন্দর জগতে তুমি এসেছো সুন্দরী
বর মাগে তোমারি কাছে ভক্তের তর্জনী।
 
ঢাকে ঢোলে নাচে মন
নাচে সবার দেহ,
সকলের তরে সকলে এসো
বাদ যেও না কেহ।
ভাসান যাবে দূর্গা মূর্তি
প্রাণ কেন আনচান?
মনে রেখো সত্যব্রতেই
গাইবে সুখের গান।
..................................................
 
পূজা এলে
মজনু মিয়া
 
সনাতন ধর্মাবলম্বী পূণ্য লাভের আশায়
দেবদেবী মূর্তি বানিয়ে নানান রূপে সাজায়
অনেক করে ভক্তি শ্রদ্ধা অনেক ভালোবাসা
আদর আপ্যায়ন শেষে যে এবার জলে ভাসা
চাওয়া পাওয়া থাকে কতই বিশ্বাস তাদের অটুট
দেবদবীরাই সব দিবে তার মানে তা পরিস্ফুট
আনন্দ আর খুশির মাঝে সবাই থাকে ডুবে
হাসি তামশা নাচ গান আরো ফূর্তি না যেন্ উবে
শিশু কিশোর বৃদ্ধ যুবক সবাই এক নিঃশ্বেসে
তাদের ধর্ম তারা করে আমার বাংলাদেশে।
..................................................
 
শরৎ যখন আসে !
গোবিন্দ মোদক
 
শরৎ যখন আসে,
কাশফুলেরা হাসে;
          শিউলি পড়ে 'রে,
          আগমনির ভোরে !
 
শরৎ যখন আসে,
          সোনা-রঙ রোদ্দুর;
পুজোর সানাই বাজে,
          আগমনীর সুর !
 
শরৎ যখন আসে,
মেঘের খেয়া ভাসে;
          আকাশ নরম নীল,
          তারা সব ঝিলমিল !
 
শরৎ যখন আসে,
          পদ্ম-শালুক ফোটে;
ফুলের মধু খেতে,
          মৌমাছিরা ছোটে !
 
শরৎ যখন আসে,
মা দুর্গা হাসে,
          বাজে পুজোর ঢাক,
          তাকুড় নাকুড় তাক্ !!
..................................................
 
ওদের কাছে
বিকাশ চন্দ
 
মেঘের ভেতর সূর্য উঁকি
যেনো পাহাড় চুড়ো-
হঠাৎ কেমন আঁকিবুঁকি
আঁকলো দুখু খুড়ো।
 
দুখু খুড়ো মানুষ ভালো
মনেই হয় না বুড়ো-
কালো ভেঙ্গে আঁকছে আলো
কাশ ফুলের চুড়ো।
 
যাদের কোথাও ঘর নেই
তাদের জন্য ভিক্ষে-
একটুও ভয় ডর নেই
কোথায় পেলে শিক্ষে !
 
হাসি খুশি মুখের উপর
সূর্য রঙ লাগলো-
মন চাইলে সকল খবর
কেমন করে রাখলো !
 
যারা ছিল পথের শিশু
তারা কি সব জানতো,
রাম রহিম বুদ্ধ যীশু-
ওদের কাছে যান তো !
 
ডাক দিলেই শক্ত পাথর
ভর ছে ফলে ফুলে-
কাঁদছে কতক দুঃখ কাতর
শিউলি মা' কোলে।
..................................................
 
জয় দূর্গতিনাশিনী
পলাশ চন্দ্র দাস
 
সহসা শরতের শেষা গুণি
তোমার আগমনী বার্তা শুনি
শিশির সিক্ত শেফালি ফুল
অপেক্ষায় গাছে খাচ্ছে দুল।
 
কৈলাস থেকে ধরাদামে
আসছেন যে মা সপরিবারে
পূজোর আনন্দে খেলবো সিঁদুর
পড়বো আবার নতুন শাড়ি।
 
ঢাক বাজাও কাসা বাজাও
শঙ্খ উল্লুধ্বনি বাজাও
দশভুজা মাগো তুমি দূর্গতিনাশিনী
তোমার সন্তানেরা ভালো নেই।
 
অাক্রান্ত করছে ভাইরাস মহামারি
ছোট বড় সকলের হচ্ছে অকাল প্রাণহানি
মাগো তুমি করুণা করো
সকল মহামারি অশুভ নাশ করো।
..................................................
 
আগমনী
চিত্ত মাহাতো
 
জগন্ময়ী মা আসছেন
একটি বছর পর
কি দিয়ে যে করব বরণ
 শূন্য আমার ঘর
 কোথায় তারে বসতে দেবো
সংসারে টান ঘোর
এসো এসো মোর প্রাণের দেবী
 খোলা আছে হৃদি দোর
..................................................
 
উৎসব
শর্মিষ্ঠা ঘোষ
 
পুজোর গন্ধ পাচ্ছি তবু বুক ভরে নিতে পারছি না সেই গান শিউলি আর শরৎ মাখামাখি হয়ে পড়ে আছে অবহেলে কোথায় যেন কেঁদে উঠছে কে
আমি সেই স্বজনহারা কান্না থেকে পালাতে পারছিনা মন্ডপ ছুঁয়ে থাকছে ভারী বাতাস
সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান ভুলে গেছে হারানো সঙ্গীর কথা
বাঁচার তাগিদে খুঁজে নিয়েছে আনন্দ উপক্রমণিকা
জীবন মানে চরৈবেতি জীবন মানে নদী
জীবন মানে পারে ধারে গাছ
জলের ভেতর শেকর গলে যায়
জলের মধ্যে কান্না মিশে যায়
নদীমাতৃক আমি স্মৃতি সম্বল বাঁচি
চলো জলে পা চুবিয়ে দুঃখ ধুয়ে আসি
চলো জলে অঞ্জলি ভরে তর্পণ করে আসি
ভূলোক দ্যুলোক জুড়ে সবার স্বজন সবাইকে ঘিরে থাক
স্মৃতি পথে উৎসব হোক
অশ্রু জলে উৎসব হোক
..................................................
 
এস মা গো
রত্না চক্রবর্তী
 
মাগো মা তোমারএ কেমন আসা
চারিদিক যে মা দুঃখেই ভাসা,
হৃদয় জুড়ে ভয়ের বাসা
ধরা জুড়ে আছে শুধু নিরাশা।
 
মাগো মা তুমি দনুজদলনী
সব জীবের জীবনদায়িনী
রক্ষ মাগো জগৎ জননী
সুস্থ কর মা তোমার ধরণী।
 
এস এস মাগো এস মা গো ত্বরা
রোগমুক্ত হোক তোমার এই ধরা
দূর হোক ব্যাধি জীবন হরা
আনন্দে হাসিতে দশদিক ভরা।
 
দুর্গা দুর্গা দুর্গতিনাশিনী
দশভূজা তুমি অসুরনাশিনী
প্রণাম জানাই জুড়ে দুইপাণি
রক্ষা কর মা কল্যাণকারিণী।।
..................................................
 
শারদীয়া
বনশ্রী বড়ুয়া
 
পুজো পুজো গন্ধ আসে
দখিনা বাতাসে,
শিউলি ফুলের হাসি দেখ
সবুজরং ঘাসে।
 
পেঁজা তুলো মেঘ হাসে
নীলাভ আকাশে,
কাশফুলের নরম ছোঁয়া
নদীতটে ভাসে।
 
মা এলো বাবার বাড়ি
হাসি হাসি মুখ,
শিউলি-ধূপে মায়ের পূজা
শারদীয়ার সুখ।
 
নতুন জামায় সাজে খুকি
আলতা রাঙা-পা,
ঢাকের তালে হৃদয় দোলে
সা রে গা মা পা।
..................................................
 
চরিত্রহীন
দুলাল কাটারী
 
ডিপ্রেশনটা কিছুটা কমতে শুরু করতেই বিকট শব্দে চরিত্রহীন কালপেঁচাটা চিৎকার করে উঠলো দক্ষিণ দিকে।
 বেশ কয়েক বছর হলো আমারও চরিত্রহীনতার কথা শুনছি রাস্তা-ঘাটে।
বোতল থেকে ঢেলে দুটো ফায়ার-প্যাক মেরে এগিয়ে এলো আমার প্রিয়তমা।
বুক জমাট করা এই শীতেও আবেগির বদন পূর্নিমায় বিন্দু বিন্দু ঘাম, সৌন্দর্য সীমা ছাড়িয়েই চলছে অসীমের দিকে।
নাভীর কাছে গুঁজে রাখা চাবির গোছা আর রংবেরঙের চুড়ির শব্দে বিপদাশঙ্কাই বেশি।--- ওর বর দেখে ফেলবে না তো...?
তবে সিঁথির সিঁদুরটা কিন্তু অভিযোগ করে নি কোনো দিনও...
একটুখানিও না।
 
গনগনে লাল চোখ দুটো তার মায়াবী জিভ দিয়ে মুছে দিতে লাগলো বিরহের সব ঋন।
এতো দিন চিৎ হয়ে শুয়ে ছিল বেহিসেবি কত-শত কামনা,
একমুঠো সাদা কুয়াশা গিলে না খাওয়া পর্যন্ত সে ঠান্ডা হবে না একটু খানিও।
তোমার অসতী, চরিত্রহীন চরিত্রটিকেই আগের থেকে অনেক বেশি আবেদনময়ী বলে মনে হচ্ছে।
দুশ্চরিত্রা নারী হৃদয় হরণে এতো পারদর্শিনী হয় সেটা আজ জানলাম।
কিন্তু, এই পরাজিত কলমে লেখা ইতিহাসকে সভ্য সমাজের অ্যাবোরশনের হাত থেকে বাঁচতে পারবে তো?
..................................................
 
শরৎ বন্দনা
নমিতা সরকার
 
শিউলি বৃন্তের কমলা আভা শরতের গোধূলি বেলায়
নীলের বুকে আশ্রয় নিলো,
সম্ভবত শরতের বাঙময় নীল আকাশের
ভালোবাসার কাছে সে নতি স্বীকার করলো,
তার ভালোবাসার আবেদন ফিরিয়ে দিতে না পেরে,
গোধূলির নীলিমায় মিলেমিশে একাকার হয়ে নিজেকে আকাশের উদার বক্ষে বিলীন করে দিল।
অম্বরের বুকে ভাসমান পেঁজা তুলোর মতো মেঘের আহবানে ধরনীতলের শুভ্র কাশফুলও মনে হয় নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।
দুজনের মানানসই চেহারার কারণেই হয়তোবা দুটি হাত এক হয়ে গেলো।
ভোরের টলটলে শিশির বিন্দুও নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে আশ্রয় নিলো সারারাত ধরে অপেক্ষমাণ সোনালী ধানের শীষের বুকে,
শস্য ক্ষেতের হলুদ বর্ণচ্ছটা পরক্ষনেই ঠাঁই করে নেয় উদীয়মান রবিকরের সোনালী রশ্মিরেখায়।
দুই এর মিলনে ঘটে এক অবিস্মরণীয় আবাহন,
তেজস্বিনী ধরনীর রূপেমুগ্ধ বিশ্বজননী দুর্গতিনাশিনী মহামায়ার মর্ত্যধামে পদার্পণ,
ঘটে পূন্যতিথিতে সপরিবারে পিতৃগৃহে আগমন,
শরতের এই রঙ রুপ রস অগ্রাহ্য করার কিইবা কারণ।
সাজ সাজ রব চারিদিকে, উৎসবে মাতে ধরনী,
মা'কে সাজাও, নিজে সাজো প্রকৃতিতে যেন শুধু এই বানী।
..................................................
 
শারদ শুভক্ষণ
পারভীন আকতার
 
শারদ এসেছে দোলায় চড়ে
পড়ছে যে ঝুম বৃষ্টি,
আকাশ জুড়ে মায়া ঝরায়
কী যে অপরূপ সৃষ্টি।
 
তৃষ্ণায় কাতর পাখপাখালি
পানির মরিচীকায় ছুটি,
খোদার রহমত অপার অতি
মেঘপুঞ্জে সূর্য গেছে টুটি।
 
জগত জুড়ে সৃষ্টিকর্তা কেবল
শুধু যে মোদের একজনই,
নানা বর্ণ ধর্মে বিশ্বাসে ভিন্নরূপে
তাঁকেই খুঁজে দশজনই।
 
জাতিভেদে নানা উপসনায়
মত্ত থাকি প্রাণী কূল,
সন্ধ্যা সময় সিজদারত দেখি
পত্র পল্লব বৃক্ষ সমতুল।
 
শারদ এই ঝড়ের ঝাপটায়
শান্তিতে ভরেছে বুক,
চিন্তা করো সব মানুষেরে
দিচ্ছে খোদা সম সুখ।
 
মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান
তাঁর কাছে নেই ভেদাভেদ,
সবকিছু তাঁর সৃষ্টি অনুপমে
ঐক্য রেখেছেন অভেদ।
 
হিংসা বিবাদ ছেড়ে মানুষকেই
সবার উপরে আসন দাও,
মরণের পর বিদেহী আত্মা যাবে
 তাঁরই কাছে চক্ষু মেলে চাও।
..................................................
 
মহাসপ্তমী
এস ডি সুব্রত
 
আজ মহা সপ্তমীতে ভোরে দর্পণে কলাবউ স্নান
জগজ্জননী মা দুর্গার নব পত্রিকা প্রবেশ
দেবীর আরাধনায় প্রাণের স্পন্দন
মায়ের চরনকমলে মম পুষ্পাঞ্জলী
ঢাকের বোল মোদের হৃদয়তন্ত্রী মাঝে
উলুধ্বনি শঙ্খ কাসর হাওয়ায় ভাসে,
ষোড়শ উপাচারে ধূপ দীপে
মহাসপ্তমী আজ মন্ডপে মন্ডপে
মহামারী করোনা মুক্ত সুস্থ সুন্দর আগামী
অন্যায় অনাচার অনৈতিকতা বিরুদ্ধে
প্রার্থনা আজ মানবকল্যাণে মায়ের কাছে।
..................................................
 
উপজাতি-ফুল
প্রতিমা রায়বিশ্বাস
 
যে কথার ভিতর আসা যাওয়া করে কিছু কথা, কিছু গান, উড়ো কিছু রোদ্দুর,
পিচঢেলে পুড়ে যায় যে কথায় অনার্যমাখা গ্রামীণ ধূলো,
 যে কথায় পুজো পুজো গন্ধ, যে কথা ঠিকানা কারো সদ্য,
যে কথা আঁধারে আঁধারে অবাধ্য।
সে কথার পাশে আমি কথা রাখি না কিছুই।
বৃহন্নলা ফুল তুলি শুধু।
 
এখনও আল ঠেলে মহিষাসুরের ঢাল ঢালু করে আসে আর্য।
আর কিছুটা সময় দাও হে কুরুক্ষেত্র...
শেষ দ্রাবিড় কাগজী যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে ওই,
নিঃস্ব ঠিকানা নিয়ে ওই ওরা পথের উপর ওই উঠে আসছে দেখো।
 
 
এদিকে বেদের উপর রোয়া আছে ধানক্ষেত।
ওদিকে আর পিচের তাপে পুড়ে যাচ্ছে কুচকুচে দ্রাড়ির ঈশ্বর।
 
 
আমার রক্তে যে দেবতার বসবাস তোমরা জানো না ইন্দ্র,
তুমিও জানো না দুর্গা।
সূর্যকে আমরা ডাকি উনুন। বাতাসকে বলি নিভা ।এ নদী পিপাসা আমার। ফাগুন পাহাড় হাড়িয়া।
 
যে কথার ভিতর সংখ্যালঘু শব্দ কতক আমি  
আমার মায়ের হাতে বাক্সমনষার ভয়ে
নিশ্চয়ই কুচকে গেছে সভ্যতার ভ্রু।
সেখানে তোমরা অবহেলা মেখে বল না কিছুই।
বৃহন্নলা ফুল তোলো শুধু।
 
শরতে "উপজাতি-ফুল" অক্ষর আকার নিয়ে নিয়ে মহালয়ার মাতৃপক্ষের মন্ত্রপাঠ।
কাশ পাপড়িতে গাছ ভরিয়ে রাখে সমস্ত পাতার উপেক্ষী সুর।
 
ক্ষত বুক এত ভালো লাগে ঊমা?
দ্রাবিড় ফুলের উপর হে আর্যময় ঈশ্বর... ঈশ্বরী
তোমারই কেবল শুধু  জয়ের অলংকার বোধ !
..................................................
 
পুজো আর  লোহার  গেট
ইন্দ্রজিৎ রায়
 
এক।।
হর মাস্টারের  বাড়ি  বলে  যে  জায়গা বা  মানুষটা ,  আমার  এপাড়ার  সকলের  চেনা , আসলে  তিনি  আমার  স্কুলের  গণিত  স্যার ছিলেন গণিতের  এত  ভাঁজ , ঠমক  যা  রোজ  করছি , তা  ওখান থেকেই  পাওয়া  বলতে  গেলে যারা  স্বাস্থ্যসচেতন , যারা  প্রসেসড্  খাবার  এড়িয়ে  যান , তারা  এই  প্রসেসড্  নগরজীবন  কিন্ত  বেশ  খান  দেখি রোজ চারপাশটাও  বেশ  প্রসেস্  হয়েছে , বসতবাড়ি  নেই  বললেই  হয় , সব  প্রোমোটিং  টিং  , তবু  স্যারের  বাড়িটা , ঠিক  ওভাবেই  থেকে  গেছে , কাঁচা  স্বাস্থ্যসম্মত , এমনকি  পাঁচিলটা  যেখানে  ভেঙ্গেছিলো  সেও  দশবছর  হোলো , সেখানে  আগাছাগুলো  বেশ  হয়েছে , মাঝেমাঝে  পৌরসভার  গাড়ি  আওয়াজ  দেয় , জঞ্জাল  জমাচ্ছেন  কেন , উত্তরে  বাড়ির  ভেতর  থেকে  উড়ে  আসে  কন্ঠ ... এর  থেকে  অনেক  বেশী  জঞ্জাল  আশেপাশের  বাড়িগুলোতে  আছে , ওগুলো  সাফ  করুন  আগে , পৌরসভার  গাড়িও  গজগজ  করতে  করতে  চলে  যায়
 
দুই ।।
রচনা  যে  কেন  লেখায়   স্কুলজীবনে  তাই   ভাবি পরে , কখনও  আর  সেভাবে  রচনা  লেখার  তো  সময়  দেয়  না  কোথাও তবে  হ্যাঁ , বানানো  সব  কবিতা , গল্পের  একটা  বাজার আছে , নাটক  নবেল  বিকোয়  তো  বটে , কিন্তু  সেও  তো  ক্ষণকাল  মাত্র তারপরই  সব  লাটঘরে  চলে  যাবে রচনা  লেখা  তবু  কি  ছাড়ি ! একে  অপরকে  বলি  তোর  রচনাটি  , বেশ  হয়েছে আমরা  বলে  খুশি , ওরা  শুনে  খুশি সর্বমোট , একটা  খুশির  বাতাস  বয়ে  চলে খুশির  এই আবহেই  কোথাও  কড়াইতে  তেল  গরম  হয় , মিথ্যে কোনো  নির্বাক  ঈশ্বরের  নামে , বলিপ্রদত্ত  জীবের  নামে  রচনা  লিখে , অবলা  পশুগুলোকে  কেটে  খায়    মানুষজমিন কুরবানি  বলে , বলি  বলে  কেউ কিন্তু  সত্যিই  কি  ওটা  কুরবানি ? সত্যিই  কি  মা কালি অনিচ্ছুক  ছাগশিশুর  রক্তপ্রত্যাশী ? জানা  যায়  না , কেবলই  রচনা লেখা  হতে  থাকে অসারে  মজিনু পারস্পরিক  কন্ডূয়ন   তার  নিবারণ , এও  কি  কম  সাহিত্য  নাকি সবই  কুরবানি  বলে , বলি  বলে  চালু ভিক্ষান্ন  জোটে  না  শুধু , কারণ  ভিক্ষে  চাইবার  মত  মানুষ   কই  ! যাকে  দেখে  গৃহস্থেরা  ঝাঁপি  খুলে , সাবধানি  হাতে  দুটো  মাধুকরি  দিয়েই   বলবে , আমার  বাচ্চাদুটোকে  আশিব্বাদ  কোরো ... সেই  মানুষ  তো  বাড়ন্ত    বলি  আর  কুরবানিতে  মন  শুধু , কারণ  ওতে  মাংস  পাওয়া  যাবে , চুল  ছাড়া  মাংস আচ্ছা  ঈশ্বর  আল্লা  যদি  এমন  জীব  সৃষ্টি  করতেন  যে  চুল  বেশী  মাংস  কম - তাহলে ? রচনার  সারের  মত  আর  কি , বুঝলে  কিনা , বেশীর  ভাগ  রচনাই  তো  চুল  বেশী , মাংস  কম , তাই  খাচ্ছিও  বটে শীতের  দুপুর , পাড়াটা  নিশ্চুপ , শুধু  খুন্তির  শব্দ  কড়াইয়ে  পীঠে
 
তিন ।।
কবি  w.b.yeats  এর  নাম  খুব  শুনি  না  এখনকার  চাষীদের  মুখে বছর দশ  পনের  আগেও  শুনতাম আসলে  , বিষাদ  শব্দটির  অর্থও  হয়ত  পালটেছে পালটায়  হয়ত " horseman , pass by... " এই  কথাটি  যেন  ছুরিকাঘাতের  মত  মনে  হোতো  একসময়ে আরও  অসংখ্য  পংক্তি তবে  রচনার  বাজারে  এর  কদর  চিরকালই  কম  ছিলো রচনা  একটু  মাংস  চায় , চুলহীন  মাংস - যাতে  হাত  বোলাতে  পারে  পাঠরত  সুন্দর  যত রচনার  বাজারে  পাতার  কদর , কত  পাতা  লিখলে পুনরাবৃত্তি হলেও  ক্ষতি  নাই রচনার  ভাষিত    ঘোষিত  বাজার এখন  আমি  অন্য  পাড়ায়  থাকি , কিন্তু  ঘটনাচক্রে  হর  মাস্টারের  লোহার  গেট  দিনে  তিন  থেকে  চারবার  পেরোই আসা  যাওয়ার  মাঝে দৃশ্য  কি  নেশা  নাকি  একধরণের , কিছুটা  যেন   পানদোক্তার  মত ! এখানে  পেরোলে , হাজারবার  হলেও  মনে  পড়ে , পুজোর  দিনগুলোতে , স্যার  গেটের  কাছে  দাঁড়িয়ে  থাকতেন স্মৃতি  দূর্বল  হয়ে  গেছিলো , দৃষ্টিও , তবু  কিছু  স্মৃতিগ্রস্থ  ছাত্র , আমার  মত , প্রণাম  করে , দুটো  কথা  বলে  যেতো কখনও  চিনতেন , কখনও  না তবু " no  country  for  old  men... " কেন  জানি  না , খুব  মনে  পড়ছে  w.b.yeats  কে , আমি  তো  ভাষা    সাহিত্যের ছাত্র  না তবু কে  জানে পুজো  এলে কি  এমনো  বিষাদ  হয় ? জানা  নেই এত  বেলায়  মাছ  মাছ  হেঁকে  যাচ্ছে  কে ? এতবেলাতেও  হয়তো , স্যারের  মত  স্মৃতি  হারানো  মানুষ  মাছ  কেনে , সকাল  দুপুরের  পার্থক্য  তো  আর  মনেই  নেই , কী  বা  করবে  ।।
..................................................
 
শারদ স্মৃতি-ছেলেবেলার পূজা
প্রবীর রায়
 
ভাবতে দারুণ লাগে ছেলেবেলায় শারদীয় দুর্গাপূজার সেই দিনগুলির কথা মনে পড়লেই।ছোট নদী উজলার কোলঘেঁষা গ্রাম আমার দীর্ঘা।জন্ম থেকে এখানেই বেড়ে ওঠা। গ্রামের বেশ কয়েকটি মন্দিরে দুর্গাপূজা হতো। পূজা শুরুর অনেক আগে থেকেই পালেরা(প্রতিমাশিল্পী)খড়-মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করতেন। তখনতো আর তর সইতোনা স্কুল কখন ছুটি হয় প্রতিমা দেখার আকুল আগ্রহে। দলবেঁধে বন্ধুদের নিয়ে কতবার যে প্রতিমা দেখতে যেতাম তার হিসেব কে রেখেছে। কখনোবা বাড়িতে এসে খড়-মাটি নিয়ে চেষ্টা করতাম প্রতিমা গড়ার।পালদের সুনিপুণ তুলির আঁচড়ে একসময় মনে হতো মাটির মূর্তি জীবন্ত হয়ে উঠছে। প্রতিমা গড়ার সময় থেকেই শুরু হয়ে যেত পূজার আনন্দ।
মহালয়ার দিন ভোরে সুমিষ্ট কন্ঠে চন্ডিপাঠের আওয়াজ কানে আসতেই ঘুম ভেঙ্গে যেত। পূজার সময় প্রতিটি বাড়িতে আত্নীয়-স্বজনের আগমনে গ্রাম হতো মুখরিত। ষষ্ঠী থেকে নবমী-প্রতিটি মন্দিরে মাইকে পুরোহিতের চন্ডিপাঠ, সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতি,ঢাকের তালে ধূপারতি প্রতিযোগিতা,ধর্মীয় গান, নৃত্যানুষ্ঠান-আরো কত কি?এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য প্রতিটি মন্দিরে বহু মানুষের ভিড় জমতো। নতুন জামা-কাপড় পড়ে পরিবার আত্মীয়-স্বজনের সাথে আমরাও প্রতিটি মন্দিরে কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটেই যেতাম প্রতিমা দেখতে।কয়খানা প্রতিমা দেখেছি,কোন প্রতিমাখানা কেমন হয়েছে তাই নিয়ে হতো আলোচনা। অষ্টমী-নবমীর দিন মন্দিরে প্রসাদ বিতরণ করা হতো। ঘরে ঘরে নারিকেলের নারু,চিড়া-মুড়ি, নকুল-বাতাসা দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো অতিথি। দশমীতে কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে হতো দেবী বিসর্জন।সবাই মেতে উঠতো বিজয়ার উৎসবে।সম্মিলন ঘটতো ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সকল মানুষের।
বিজয়া দশমীর বিকেলেবেলা দীর্ঘা বাজার সর্বজনীন দুর্গামন্দিরের সামনে বসতো দশহরার মেলা। অসংখ্য মানুষের ভিড় জমতো এই মেলায়। ভিড়ের মধ্যে কখনোবা হাড়িয়েও যেতাম। মেলা উপলক্ষে নৌকা বাইচের আয়োজন হতো। মেলা থেকে মিষ্টি আর সাদা মাছ নিয়ে যাওয়া হতো বাড়িতে। সন্ধ্যায় বড়দের প্রনাম করে আশির্বাদ নিতাম। ছেলেবেলার পূজার সেই দিনগুলি আজও ভোলার নয়। পূজা আসলেই সেই স্মৃতি মনে পড়ে যায়।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com 

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.