শীত শিহরণ_শীত সংখ্যা ২০২১ : পর্ব-২
শীত
আমাদের জীবনে কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ঘুমের রাজ্যে নিয়ে যায়। শীত বাতাস, রুক্ষ মাটি আর ঝিমিয়ে যাওয়া
গাছগাছালি এক নিরবতা সৃষ্টি
করে। অল্প বিস্তর কর্মব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে মানুষ সৃজনশীলতায় মিলিত হয়। বিছানায় স্বপ্নের অনুভূতিগুলো আবার জেগে ওঠে। তন্দ্রাহীন অর্ধঘুম কল্পনার ডানা মেলে। নতুন চিন্তায় আর একবার পাশ
ফিরে শোয়। এ বছর করোনা
আমাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে আসলেও আমাদের জীবনাশক্তি তার অভিশাপকে তোয়াক্কা না করে জীবনকে
আরো পরিশীলিত করে তোলেতে সর্বাত্ত্বক চেষ্টা করে চলছে। আগামী পৃথিবী যেনো আরো শুদ্ধ, আরো মনোরম, বাসযোগ্য হয় তার চিন্তায়
আমাদের জীবনের সৃজনক্রিয়া অব্যাহত চলতে থাকে। সবার জীবন সুন্দর ও জীবনাশক্তি বৃদ্ধি
পাক এই আমাদের কামনা।
এই কামনায় আমরা শীত সংখ্যা প্রকাশ কলাম। আশা করি পাঠক লেখক সবারই এই সংখ্যাগুলো ভালো
লাগবে। আর আপনাদের ভালো
লাগা আর ভালোবাসাই আমাদের
জন্য দোয়া।
আফসার
নিজাম
সম্পাদক
সূচীপত্র
শীতের বিদায় :: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শীতরাত :: জীবনানন্দ দাশ
শীতের সন্ধে রাতে :: সৈয়দ শামসুল হক
পৌষের শীত :: মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
আমার কুঁড়েঘরে :: হুমায়ুন আজাদ
শীতবালা :: মানিক বৈরাগী
শীতের পিঠা :: আসাদ বিন হাফিজ
আমার হতভাগা সন্তান :: তমসুর হোসেন
মায়া :: ঝুমা
মল্লিক
শীত আখ্যান :: লুনা রাহনুমা
শীত এলে :: এম. তামজীদ হোসাইন
পথকলি :: শাহীন খান
কুয়াশা :: মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
চাই না বালক ঠান্ডা হাওয়া :: নার্গিস পারভীন
শীত শীত লেখা :: কিশলয় গুপ্ত
শিশির বিন্দু :: ছাদির হুসাইন ছাদি
আয় রোদ্দুর মিষ্টি নরম তাপে :: বিকাশ চন্দ
শীতকালে রবিশস্য দোলে :: রানা জামান
শীত শিহরণ :: হাদিসুর রহমান হিমেল
শীত :: মজনু মিয়া
..................................................
শীতের
বিদায়
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
তুঙ্গ তোমার ধবলশৃঙ্গশিরে
উদাসীন শীত, যেতে চাও বুঝি ফিরে?
চিন্তা কি নাই সঁপিতে রাজ্যভার
নবীনের হাতে, চপল চিত্ত যার।
হেলায় যে-জন ফেলায় সকল তার
অমিত দানের বেগে?
দণ্ড তোমার তার হাতে বেণু হবে,
প্রতাপের দাপ মিলাবে গানের রবে,
শাসন ভুলিয়া মিলনের উৎসবে
জাগাবে, রহিবে জেগে।
সে যে মুছে দিবে তোমার আঘাতচিহ্ন,
কঠোর বাঁধন করিবে ছিন্ন ছিন্ন।
এতদিন তুমি বনের মজ্জামাঝে
বন্দী রেখেছ যৌবনে কোন্ কাজে,
ছাড়া পেয়ে আজ কত অপরূপ সাজে
বাহিরিবে ফুলে দলে।
তব আসনের সম্মুখে যার বাণী
আবদ্ধ ছিল বহুকাল ভয় মানি’
কণ্ঠ তাহার বাতাসেরে দিবে হানি’
বিচিত্র কোলাহলে।
তোমার নিয়মে বিবর্ণ ছিল সজ্জা,
নগ্ন তরুর শাখা পেত তাই লজ্জা।
তাহার আদেশে আজি নিখিলের বেশে
নীল পীত রাঙা নানা রঙ ফিরে এসে,
আকাশের আঁখি ডুবাইবে রসাবেশে
জাগাইবে মত্ততা।
সম্পদ তুমি যার যত নিলে হরি’
তার বহুগুণ ও যে দিতে চায় ভরি,
পল্লবে যার ক্ষতি ঘটেছিল ঝরি,
ফুল পাবে সেই লতা।
ক্ষয়ের দুঃখে দীক্ষা যাহারে দিলে,
সব দিকে যার বাহুল্য ঘুচাইলে,
প্রাচুর্যে তারি হল আজি অধিকার।
দক্ষিণবায়ু এই বলে বার বার,
বাঁধন-সিদ্ধ যে-জন তাহারি দ্বার
খুলিবে সকলখানে।
কঠিন করিয়া রচিলে পত্রখানি
রসভারে তাই হবে না তাহার হানি,
লুঠি লও ধন, মনে মনে এই জানি,
দৈন্য পুরিবে দানে।
..................................................
শীতরাত
জীবনানন্দ দাশ
এই সব শীতের রাতে
আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে,
কিংবা পাতা,
কিংবা প্যাঁচার গান; সেও
শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো।
শহর ও গ্রামের দূর মোহনায়
সিংহের হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে –
সার্কাসের ব্যথিত সিংহের।
এদিকে কোকিল ডাকছে – পউষের মধ্য রাতে;
কোনো-একদিন বসন্ত আসবে বলে?
কোনো-একদিন বসন্ত ছিলো,
তারই পিপাসিত প্রচার?
তুমি স্থবির কোকিল নও?
কত কোকিলকে স্থবির হয়ে যেতে দেখেছি,
তারা কিশোর নয়,
কিশোরী নয় আর;
কোকিলের গান ব্যবহৃত হয়ে গেছে।
সিংহ হুঙ্কার করে উঠছে,
সার্কাসের ব্যথিত সিংহ,
স্থবির সিংহ এক – আফিমের
সিংহ – অন্ধ – অন্ধকার।
চারদিককার আবছায়া-সমুদ্রের
ভিতর জীবনকে স্মরণ করতে গিয়ে
মৃত মাছের পুচ্ছের শৈবালে,
অন্ধকার জলে, কুয়াশার পঞ্জরে
হারিয়ে যায় সব।
সিংহ অরন্যকে পাবে না আর
পাবে না আর
পাবে না আর
কোকিলের গান
বিবর্ণ এঞ্জিনের মত খশে খশে
চুম্বক পাহাড়ে নিস্তব্ধ।
হে পৃথিবী,
হে বিপাশামদির নাগপাশ, –
তুমি পাশ ফিরে শোও,
কোনোদিন কিছু খুঁজে পাবে না আর।
..................................................
শীতের
সন্ধে
রাতে
সৈয়দ
শামসুল
হক
পৌষের এই শীতের বেলা
বিকেলবেলাতেই
তাকিয়ে দেখি আকাশে আর সূর্যটা যে নেই।
কালো চাদর পরল আকাশ শীত কাতুরে ও—
সূর্য ডোবে যতই সাধা একটু থেকে যেও।
আমিও খেলা সাঙ্গ করে দৌড়ে এলাম বাড়ি,
আলোয়ানটা গায়ে দিয়েই মাফলারটা পাড়ি,
লন্ঠনটার আলো মিটমিট, বই খুলে বই পড়া—
শীতে হি হি, এমন সময় দুয়োরে শুনি কড়া।
কড়া নাড়ছে দুয়োরে কেউ—কে সন্ধে রাতে?
উঁকি দিয়েই দেখি একজন বল্লম তার হাতে।
ওরে বাবা এ কোন বিপদ এ কোন মূর্তিমান?
ঘাম ঝরতে লাগল আমার থাকলেও আলোয়ান।
শীর্ণ শরীর, লাল দুটি চোখ, পাকানো তার গোঁফ।
দেখেই আমার বুদ্ধিশুদ্ধি বেবাক হলো লোপ।
আমতা-আমতা করছি দেখে দস্যুর হলো দয়া।
বলে, বালক ভয় পেয়ো না, চাঁদটা ক্ষয়া ক্ষয়া।
তার মানে কী? অদ্ভুত এই তথ্য কেন দিচ্ছে?
আকাশ পানে তাকিয়ে বলি, চাঁদের সেটা ইচ্ছে!
ক্ষয়া যদি তো পাঁজি দেখলেই উত্তরটা পাবে—
কৃষ্ণপক্ষের চাঁদে কী আর জোছনা উছলাবে?
সাহস করে প্রশ্ন করি, সড়কি হাতে নিয়ে
জাগিয়ে দিতে চাও চাঁদকে একটা খোঁচা দিয়ে,
যেন তার বুকের থেকে জোছনা ফেটে পড়ে?
লোকটা তখন বলে উঠল ভীষণ ক্রুদ্ধ স্বরে—
ঠিক ধরেছ! সূর্য যদি সরিয়ে নেয় তাপ—
গরিব মানুষ বাঁচে কী করে বলো দেখিনি বাপ?
সূর্য না হয় ডুবেই গেছে, তুমি উঠেছ বাপু,
দেখছ নাকি আমরা গরিব শীতে থরথর কাবু!
তুমিই না হয় তাপ ছড়াতে শীতের রাত্রিবেলা!
হেসে বললাম, দেখছি তোমার পড়ায় অবহেলা।
বই পড়লেই জানতে পেতে চাঁদের ব্যাপার কী!
সূর্য থেকেই ধার করা তার আলো এই আর কি!
ধার করাতে আপত্তি নেই, করুক যতই ধার—
সূর্য এমন কড়া মহাজন—জানবে চমৎকার।
ধার দেয় সে আলোটুকুই, তাপটা হাতে রাখে—
চাঁদের তাই ঠান্ডা আলো বলছি তোমাকে।
চাঁদ খুঁচিয়ে লাভ নেই গো, তাপ নেই তার কাছে।
বলল তবে ওম পোহাবার উপায় কী আর আছে?
তখন তাকে খুলে দিলাম গায়ের আলোয়ান।
দেখছি শীতে আপনি কাতর এইটে নিয়ে যান।
লোকটা তখন সড়কি ফেলে বলল করুণ স্বরে—
তোমার মতো পুত্র যদি থাকত ঘরে ঘরে
তবে কি আর গরিব মানুষ মরত প্রতি শীতে?
পারত আমার মাথা এমন খারাপ করে দিতে!
সড়কি হাতে বেরিয়েছিলাম রেগে চাঁদের ওপর,
তোমার কাছে জ্ঞান পেলাম আর পেলাম এ চাদর।
এই বলে সে টুকুস করে মিলিয়ে গেল কোথায়?
কেবল তার সড়কি পড়ে থাকল বারান্দায়।
সেই সড়কি হাতে নিতেই হলো পাখির পালক।
এবং শুনে উঠলাম স্বর—বালক ওরে বালক!
মিলিয়ে গেছে লোকটা তবু শুনলাম তার স্বরে—
এমন পুত্র হয় যেন গো বাংলার ঘরে ঘরে—
যে খুলে দেয় গরিবকে তার গায়ের আলোয়ান—
যেমন খুলে দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান
যখন তিনি বালক ছিলেন সেই টুঙ্গিপাড়ায়।
মনে পড়তেই ভরে উঠল আকাশ লক্ষ তারায়
..................................................
পৌষের
শীত
মুকুন্দরাম
চক্রবর্তী
‘পউষের প্রবল শীত সুখী যেজন।
তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ ॥
ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক।
মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক ॥’
..................................................
আমার
কুঁড়েঘরে
হুমায়ুন
আজাদ
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি
সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই
ঘাসের শিখা নেই জলের রেখা নেই
আমার মরুভূর গোপন কোনো কোণে একটু নীল হয়ে
বাতাসে কেঁপে কেঁপে একটি শীষ আজ উঠুক
আমার গাছে গাছে আজ একটি কুঁড়ি নেই
একটি পাতা নেই শুকনো ডালে ডালে বায়ুর ঘষা লেগে
আগুন জ্ব’লে ওঠে তীব্র লেলিহান
বাকল ছিঁড়েফেড়ে দুপুর ভেঙেচুরে আকাশ লাল ক’রে
আমার গাছে আজ একটা ছোট ফুল ফুটুক
আমার এ-আকাশ ছড়িয়ে আছে ওই
পাতটিনের মতো ধাতুর চোখ জ্বলে প্রখর জ্বালাময়
সে-তাপে গ’লে পড়ে আমার দশদিক
জল ও বায়ুহীন আমার আকাশের অদেখা দূর কোণে
বৃষ্টিসকাতর একটু মেঘ আজ জমুক
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আজ দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
..................................................
শীতবালা
মানিক বৈরাগী
এই মধ্যরাতে প্রতীক্ষায় থাকি
মুটোফোন খোলা রয়, জেগে থাকে হৃদকর্ণ
খোলা চরে বিহঙ্গ রাতে কুয়াশা উৎসবে
আগুন পোহাতে নগ্নহাত টেনে, নিবিড় ঝাউয়ে
নিশিতে গান্ধী শালে লতাবে উষ্ণ চুমায়।
এখানে কুয়াশারা মিহিনদানা, খেজুরের গরম রসে
ভাপা পিঠা, কালোবিনির দুচোয়ানি সাথে কাঁকড়ার ঝোল
সারি সারি কুইশ্বল ক্ষেত, মাঝখানে পাহারা চৌকি
কত নিশি জড়াজড়ি করে বিহঙ্গ রাত কেটেছে আবেশ-আবেগে
মাঘরাতে কুইশ্বল চুষে পেচ্ছাব ফেলেছো তচ্ছল্লায়
কেউ কি জানে, জেগে আছ শীতবালা?
এসো আবারো কৈশোর হই।
..................................................
শীতের
পিঠা
আসাদ
বিন
হাফিজ
নশো টাকার মিষ্টি কিনে গেলাম শ্বশুরবাড়ি
গিয়ে দেখি শাশুড়ি মার শূন্য দইয়ের হাঁড়ি।
টেবিল জুড়ে শীতের পিঠা কাড়ি কাড়ি বসা
কতক আছে শুকনো আর কতক রসারসা।
বউ পরেছে লাল টুকটুক বিয়ের দিনের শাড়ি
বলে,তোমার সামনে এটা পরতেও সুখ ভারি।
মনের সুখে তাই সেজেছে মায়েের মেয়ে খুব
তার সে রূপের গাঙে যেনো দিতে পারি ডুর।
শীতের পিঠা মিঠা মিঠা, শাশুড়ি দেন বেড়ে
শালা বলে, তোমার জন্য রস এনেছি পেড়ে।
শাশুড়িমা বলেন, বাবা, ভাঁপা পিঠা নাও
রসের পরে ভাঁপা পিঠা গরম গরম খাও।
আমি বলি, আম্মা আপনার অনেক কষ্ট হলো
আম্মা বলেন, জামাই বাপু কি যে এসব বলো!
ছেলের জন্য মায়ের কষ্ট, কষ্ট তো নয় সুখ
কষ্ট পালায় দেখলে ছেলের সদা হাসি মুখ।
..................................................
আমার
হতভাগা
সন্তান
তমসুর
হোসেন
পৌষের কঠিন শীতে হতভাগা সন্তানকে শক্ত মাটিতে দাফন করে
বাইশ বছর ধরে অবিরত অশ্রুপাত করছি
আমাকে সান্ত¡না দিয়েছে বিকেলের মন্দা বাতাস
আর শোকবিহ্বল রাতজাগা পাখি।
পৃথিবীর মমতা মিথ্যার প্রহেলিকায় জড়ানো থাকে
সব মাধুরিমা চাপা ক্রন্দনের মিহি রঙে মলিন বিবর্ণ
দুঃখের কাব্যভাষা বজ্ররাতের শব্দের মতো উদ্ধত অপ্রিয়
একবুক দগদগে অঙ্গার নিয়ে বিষুবের আলপথ ধরে
হেঁটে যাচ্ছি অবয়বহীন নিরাশার অসমান্তরাল পথে।
বারোটি পলের অস্থির কম্পমান স্বর্ণগলা উজ্জল বুদ্বুদ হয়ে
আমার সন্তান সৃষ্টির সীমা নিরীক্ষণে মহাশূন্যে কাটছে সাঁতার
নক্ষত্রের জনহীন নীরবতা আন্দোলিত করে ক্ষণায়ু সমগ্রের
মুখপাত্র হয়ে ঢুকছে সে প্রশ্ন থেকে জটিলতর প্রশ্নের গভীরে
অশ্রুশীলা সব বঞ্চিতা মাতৃজঠরের নিশর্ত মুক্তির উল্লাসে।
বাইশটি বসন্ত তাকে প্রত্যাশা করেছি অন্তহীন নয়নের জলে
হৃদের প্রতিটি তরঙ্গে সময়ের অসম পদক্ষেপে পরম আগ্রহে
প্রখর রাতে ঠেলে শক্ত পাখনায় উজান বেয়ে আসে যে মীন
সব সম্ভাবনায় আমার সন্তান মহাদীপ্র হয়ে যেতে চায় যুগান্তর
বুকের পরম উষ্ণতায় তাকে অনুভব করি সৃষ্টির অপার বিস্ময়ে।
..................................................
মায়া
ঝুমা মল্লিক
মেঠো পথ ধরে হেঁটে
চলেছো।
সময়ে অসময়ে ধান কেটেছো।
ফিরে দেখো সূর্যাস্ত হবে পশ্চিমঘাটে।
সেই মেঠো পথ ধরে স্মৃতিরা হাঁটে।
রুক্ষ শুষ্ক বাসি ফুল হাসে।
ভালোবাসা শুধু সবুজ ঘাসে।
মিথ্যে মায়ার খেলা।
চোখের চাদরের ছলাকলা ।
চাঁদ আর চাঁদনি রাতের
বিরহ জ্বালা।
অবহেলা শুধু অবহেলা ।
কামনাহীন প্রেমের আর্তনাদ ।
সবটুকু মায়ার ফাঁদ।
হৃদয়ের খেলা, শুধু নীরবতা।
সময়ে ঘাস ফুলের বার্ধক্যতা।
পূর্নতা পাওয়ার লোভে।
হাঁস জলে ভাসে।
ভাসমান শুধু মায়া।
পাশাপাশি থাকবে তুমি আর ছায়া।
..................................................
শীত
আখ্যান
লুনা
রাহনুমা
ঋতুর ভেতর তোমার প্রিয় বর্ষা
কারণ, চোখের জলের অস্তিত্ব লুকানো যায় সহজে
আকাশের কান্নার দোহাই দেয়ার থাকে একটা ভরসা।
আমার কিন্তু বেশি প্রিয় শীতকাল
হালকা হালকা ওমের মতো কাশ্মীরি চাদরের স্পর্শে
মনে হয় আছি তোমার পাশেই, এইতো সমান্তরাল।
শীতের ঝরা পাতায় মালা বানিয়ে
পাতার ফাঁকে শিউলির রং আর ঝুমকো জবার ঝালর গলায় ঝুলিয়ে
আমি উদ্দাম নেচে চলি তোমার হাতটি ধরে, শুদ্ধ সংরাজ্ঞী হয়ে।
কুয়াশার হিমহিম খেলায় রহস্যের ধাঁধা
চেনা পৃথিবীর অল্পই একবারে যায় দেখা, ঘোমটা পড়া নতুন বৌটির মতো
লাজুক নয়নে লুকিয়ে দেখা, চুড়ির রিনিঝিনি ঝংকারে যার শখটুকু বাঁধা।
ঋতুর ভেতর শীতকাল আমার ভীষণ প্রিয়
মায়ের বোনা উলের জাম্পার আর মাফলার নিয়ে চলে যাই শৈশবে
মায়ের ছোঁয়া পুরোনো গন্ধের মতো সতেজ করে দেয় আমার অস্তিত্ব।
..................................................
শীত
এলে
এম.
তামজীদ
হোসাইন
দালানকোঠায় থাকে যারা
তোশক গায়ে ঘুমায় তারা
শীতের রাতে
পাশের বাড়ির টিনের ঘরে
তোশক ব্যতীত ঘুমায় পড়ে
এমন শীতে
শীত এলে
জ্যাকেট-হুড়ি গায়ে দিয়ে
হাঁট-বাজারে ঘুরে গিয়ে
ধনী যারা
গরীব মানুষ বসে কাঁপে
আল্লাহ আল্লাহ মুখে জপে
যাচ্ছে মারা
শীত এলে
সবজির কদর যায় বেড়ে
বাজারে গিয়ে নেয় কেড়ে
চালাক মানুষ
দ্রব্যমূল্য যাচ্ছে বেড়ে দিনেদিনে
ঘরে ফিরে বাজার বিনে
গরীব মানুষ
শীত এলে
নানান পিঠার ধুম পড়ে যায়
খেজুর গাছে হাঁড়ি সাজায়
গ্রামে গ্রামে
চাল ভাঙাতে কল ঘরে ভীড়
পরিযায়ী পাখি খুঁজে নীড়
ঝোপেঝাড়ে।
..................................................
পথকলি
শাহীন খান
এই শীতে পথকলি
ঠান্ডাতে কাতরায়
ঠাঁই নেই এ সমাজে
আঁধারেতে সাঁতরায়!
নাওয়া নেই খাওয়া নেই
কোনো চাওয়া পাওয়া নেই
কষ্টে কাটে ওরা
সীমাহীন মাত্রায়।
অসুখবিসুখে ওরা পড়ে যে থাকে
সারা বুকে বেদনার ছবি যে আঁকে
চিকিৎসা জোটে নাকো -
তোমরা তো সুখে থাকো
ধনবান লোক,
ভালো আছো সারাবেলা
আনন্দে আছো মেলা
চশমাতে চোখ!
চশমাটা খুলে দেখো
ওহে ধনবান
কষ্টে আছে কতো
গরীবের প্রাণ!
একটু যদি সবে দয়া করো
ভালোবেসে যদি তুমি দু'হাত ধরো
ওরা ঠিকই বেঁচে যাবে
এই যাত্রায়।।
..................................................
কুয়াশা
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
শীত কুয়াশা একই সাথে
বাইরে যাওয়া যায় না রে…
সূর্য কোথায় মুখ লুকালো
আলো জ্বেলে চায় না রে।
শিশির পড়ে টপটপাটপ
বৃষ্টি যেন ঝরছে রে…
হিম কুয়াশা ওড়ে ওড়ে
স্মৃতির মিনার গড়ছে রে।
চায় না মনে এমন
দিনে
লেপ কাঁথা সুখ ছাড়তে রে…
আরাম করে হিম শীতে যে
হাত পাগুলো নাড়তে রে।
..................................................
চাই
না
বালক
ঠান্ডা
হাওয়া
নার্গিস
পারভীন
মনে আমার দখিন হাওয়া
বাইরে পৌষের কাঁপন!
উত্তুরে বাতাস জাপটে বলে
কথা আছে গোপন!
সর না বালক ঠান্ডা
হাওয়া
সাপ সাপ লাগে!
ময়ূর ময়ূর স্বভাব আমার
আমিষ খিদে জাগে।
কি যে ছাই ওড়না
এনেছো!
বেরঙ কুয়াশা নাম!
মুখ ফুলিয়ে বলছে বাড়ি
দূর হিমালয় ধাম!
রাঙা চোলি বসন আমার
লাল সূর্যের আভা!
মর কুয়াশা যা ধোঁয়াশা!
কুচুটে তোর শোভা!
চাই বসন্ত অফুরন্ত
সাজবো ফুলে ফুলে!
ঐ দিগন্ত নেই সীমান্ত
উড়বো মন খুলে।
..................................................
শীত
শীত
লেখা
কিশলয়
গুপ্ত
এবার লিখি ঐতিহাসিক শীতে
গান বেঁধেছি ন্যায়ের উপবীতে
মানুষ মারা পা বাড়িয়ে আছে
মানবতা এই বুকে বেঁধে নিতে।
শীতের হাওয়া ফিরে আসুক ফের
পথের মাঝে হাজারটা কাফের
আঙুল তুলে আঁধার কথা বলে
গান লিখছি তবু সেই মানুষের
এবার লিখি কনকনে এই শীত
হাড়ের ভিতর অজানা সঙ্গীত
বুকের উপর অনেক স্বপ্ন ঘোরে
গান পেয়েছে ন্যায়ের উপবীত
..................................................
শিশির
বিন্দু
ছাদির
হুসাইন
ছাদি
শিশির পড়ে বিন্দু ঝরে
সবুজ বনের ফাঁকে,
দুই নয়নের রংতুলিতে
সেই ছবিটি আঁকে।
শিশির ভেজা সুপ্রভাতে
মুক্তা ছড়ায় ঘাসে,
রাঙা বৌয়ের আগমনে
ফুল পাখিরা হাসে।
শিশির কণা হীরের দানা
ঝলঝলিয়ে জ্বলে,
সূর্য-আভাস পড়লে গায়ে
নিমেষে যায় গলে।
শিশির হাওয়া বয়ে চলে
মাঠের বাঁকে বাঁকে,
পাখপাখালি বসে আছে
গাছের শাখে-শাখে।
..................................................
আয়
রোদ্দুর
মিষ্টি
নরম
তাপে
বিকাশ
চন্দ
উন্মাদ স্পন্দন বোঝে কখন চাই উত্তাপ আলো মুখ
চেনা রাত গ্রাম বট অশ্বত্থ ছায়ায় চাপ চাপ হিম পরব,
কাঁপা কাঁপা বুক জানে চাষি আর চাষি বৌয়ের কুঁড়েঘর
উঠোনে এসেছে মাঠের স্বর্ণ স্বর্গ মাচানে উষ্ণতা,
কার পায়ের শব্দ উঠোনে ঘরে বাজে ঝুমুর ঝুম
আনন্দ শোক ছোঁয়াছুঁয়ি জীবন বীতশোকে উষ্ণ স্নান।
মৌমাছি প্রজাপতি জানে না জমিন জরিপ
বর্গা দার
পরাগ রঙ বোঝেনা সেলিম সুমন নিতাই সুরিন্দার,
এখনও রাতের গ্রাম বাজবরণ বাবলা হলুদ সোনাঝুরি
কোঁচড়ে কুঁড়ি কাঁপে শরীরে ফলেছে রক্তফুল সে ও
ডাঁয়ে বাঁয়ে পতাকা ও কাঁপে হিম পরবের ফন্দি ফিকিরে,
কোথাও সন্তান হীনা মা ঠাণ্ডা চোখে কালো রাস্তায় উদাসী অসুখে।
মহাবোধি সূর্য জানে অন্তরঙ্গ জীবনের সে কেমন স্পর্শ
চিরন্তনী
আয়ন কালের গভীরতায় সাগর নদী খালের মায়া জল,
দোয়েল পাপিয়া সংসারী শালিক জানে রোদ্দুরের ধান
তবুও হৃদবলয়ে অবলীলায় কাঁপে সমূহ বীজের অঙ্কুর,
বিশাল সমুদ্রের দুঃখ ভেজায় মাটি গাঙচিলের ডাক
দূর্বা তখন মুক্তা ঠোঁটের গরম খোঁজে উত্তরা সে অভিমানী,
আঙুল বোঝে সদ্য গরম স্পর্শ শিরায় শিরায় ধমনী স্রোতে
সকল উঠোনে শিশুর চলনে আয় রোদ্দুর মিষ্টি নরম তাপে।
..................................................
শীতকালে
রবিশস্য
দোলে
রানা
জামান
শীতকালের পৌষ মাসে
রবিশস্য দোলে
শর্ষে গাছে দৃষ্টিকাড়া
পুস্প পাপড়ি খোলে
পথের ধারে মাস কলাই
ক্ষেতে মসুরের ডাল
তিলের ক্ষেতে তিশির ক্ষেতে
তিশি আর তিল দেয় তাল
হরেক রকম রবিশস্য
চাষির মুখে হাসি
শীত কালের এই সবুজ প্রান্তর
অনেক ভালোবাসি।
..................................................
শীত
শিহরণ
হাদিসুর
রহমান
হিমেল
চারপাশ কুয়াশার জালে ঘেরা,
এরি মাঝে কিছু গরীবের চলাফেরা।
সঞ্চয় নেই হাজিরা কামাই সূদুরের কথা,
বোঝেনা মানুষ বোঝেনা এ নীরবতা।
মৌসুমি সবজির বাজারেতে সমাগম
দাম যেন ওঠে আর নামে,
এ পত্র লিখিব কোন খামে।
নিয়তির খেলা মানবেকি বোঝে!
পোলাও গোস্ত কুকুরেই ছিঁড়ে খায়
ঐ ডাস্টবিনে এসে,
অভুক্ত শুধু গরীব তুমিই
এই মানবের দেশে।
পরনেতে ছেঁড়া জামা
দুটো কিংবা তিনতে হবে
বেচারা কাঁপিয়া বলে
আহা! শীতটা ফুরাবে কবে।
নেইকো তাহার সাল কম্বল
বড় দুষ্কর দেহটা আবরণে ঢাকা,
নিশিথেই বাড়ে হাওয়ায় প্রকোপ
চারিদিক বড় ফাঁকা!
নিদারুণ দায় মাথায় চাপিয়া চলে
গরীবের ঘরে বিলাসিতা নাই
গরীবেরা অনাদরে।
হয়তো কেহবা রিক্সা চালায়
কনকনে এই শীতের হাওয়ার তালে,
ওহে বিত্তবান ভাবিও আবার
থাক তুমি কোন হালে।
..................................................
শীত
মজনু মিয়া
আমার যেমন শীত লাগে তাই
গরম কাপড় চাই,
পথের পাশে যারা থাকে
তারাও আমার ভাই।
আমি শুধু একা সুখী
এটা কেমনে হয়,
ওরাও মানুষ বুঝতে হবে
ভেবে খুব নিশ্চয়।
এই শীতে কি করবে তারা
খাবার পায় না ভাত?
গরম কাপড় কে দিবে আর
কোথায় কাটবে রাত?
আছি যারা অর্থশালী
একটু বাড়াই হাত,
হাতের ছোঁয়ায় ওদের দুঃখ
যাক কিছু নিপাত।
শীতরাত :: জীবনানন্দ দাশ
শীতের সন্ধে রাতে :: সৈয়দ শামসুল হক
পৌষের শীত :: মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
আমার কুঁড়েঘরে :: হুমায়ুন আজাদ
শীতবালা :: মানিক বৈরাগী
শীতের পিঠা :: আসাদ বিন হাফিজ
আমার হতভাগা সন্তান :: তমসুর হোসেন
শীত আখ্যান :: লুনা রাহনুমা
শীত এলে :: এম. তামজীদ হোসাইন
পথকলি :: শাহীন খান
কুয়াশা :: মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
চাই না বালক ঠান্ডা হাওয়া :: নার্গিস পারভীন
শীত শীত লেখা :: কিশলয় গুপ্ত
শিশির বিন্দু :: ছাদির হুসাইন ছাদি
আয় রোদ্দুর মিষ্টি নরম তাপে :: বিকাশ চন্দ
শীতকালে রবিশস্য দোলে :: রানা জামান
শীত শিহরণ :: হাদিসুর রহমান হিমেল
শীত :: মজনু মিয়া
..................................................
উদাসীন শীত, যেতে চাও বুঝি ফিরে?
চিন্তা কি নাই সঁপিতে রাজ্যভার
নবীনের হাতে, চপল চিত্ত যার।
হেলায় যে-জন ফেলায় সকল তার
অমিত দানের বেগে?
দণ্ড তোমার তার হাতে বেণু হবে,
প্রতাপের দাপ মিলাবে গানের রবে,
শাসন ভুলিয়া মিলনের উৎসবে
জাগাবে, রহিবে জেগে।
সে যে মুছে দিবে তোমার আঘাতচিহ্ন,
কঠোর বাঁধন করিবে ছিন্ন ছিন্ন।
এতদিন তুমি বনের মজ্জামাঝে
বন্দী রেখেছ যৌবনে কোন্ কাজে,
ছাড়া পেয়ে আজ কত অপরূপ সাজে
বাহিরিবে ফুলে দলে।
তব আসনের সম্মুখে যার বাণী
আবদ্ধ ছিল বহুকাল ভয় মানি’
কণ্ঠ তাহার বাতাসেরে দিবে হানি’
বিচিত্র কোলাহলে।
তোমার নিয়মে বিবর্ণ ছিল সজ্জা,
নগ্ন তরুর শাখা পেত তাই লজ্জা।
তাহার আদেশে আজি নিখিলের বেশে
নীল পীত রাঙা নানা রঙ ফিরে এসে,
আকাশের আঁখি ডুবাইবে রসাবেশে
জাগাইবে মত্ততা।
সম্পদ তুমি যার যত নিলে হরি’
তার বহুগুণ ও যে দিতে চায় ভরি,
পল্লবে যার ক্ষতি ঘটেছিল ঝরি,
ফুল পাবে সেই লতা।
ক্ষয়ের দুঃখে দীক্ষা যাহারে দিলে,
সব দিকে যার বাহুল্য ঘুচাইলে,
প্রাচুর্যে তারি হল আজি অধিকার।
দক্ষিণবায়ু এই বলে বার বার,
বাঁধন-সিদ্ধ যে-জন তাহারি দ্বার
খুলিবে সকলখানে।
কঠিন করিয়া রচিলে পত্রখানি
রসভারে তাই হবে না তাহার হানি,
লুঠি লও ধন, মনে মনে এই জানি,
দৈন্য পুরিবে দানে।
..................................................
জীবনানন্দ দাশ
আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে,
কিংবা পাতা,
কিংবা প্যাঁচার গান; সেও
শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো।
শহর ও গ্রামের দূর মোহনায়
সিংহের হুঙ্কার শোনা যাচ্ছে –
সার্কাসের ব্যথিত সিংহের।
এদিকে কোকিল ডাকছে – পউষের মধ্য রাতে;
কোনো-একদিন বসন্ত আসবে বলে?
কোনো-একদিন বসন্ত ছিলো,
তারই পিপাসিত প্রচার?
তুমি স্থবির কোকিল নও?
কত কোকিলকে স্থবির হয়ে যেতে দেখেছি,
তারা কিশোর নয়,
কিশোরী নয় আর;
কোকিলের গান ব্যবহৃত হয়ে গেছে।
সিংহ হুঙ্কার করে উঠছে,
সার্কাসের ব্যথিত সিংহ,
স্থবির সিংহ এক – আফিমের
সিংহ – অন্ধ – অন্ধকার।
চারদিককার আবছায়া-সমুদ্রের
ভিতর জীবনকে স্মরণ করতে গিয়ে
মৃত মাছের পুচ্ছের শৈবালে,
অন্ধকার জলে, কুয়াশার পঞ্জরে
হারিয়ে যায় সব।
সিংহ অরন্যকে পাবে না আর
পাবে না আর
পাবে না আর
কোকিলের গান
বিবর্ণ এঞ্জিনের মত খশে খশে
চুম্বক পাহাড়ে নিস্তব্ধ।
হে পৃথিবী,
হে বিপাশামদির নাগপাশ, –
তুমি পাশ ফিরে শোও,
কোনোদিন কিছু খুঁজে পাবে না আর।
..................................................
তাকিয়ে দেখি আকাশে আর সূর্যটা যে নেই।
কালো চাদর পরল আকাশ শীত কাতুরে ও—
সূর্য ডোবে যতই সাধা একটু থেকে যেও।
আমিও খেলা সাঙ্গ করে দৌড়ে এলাম বাড়ি,
আলোয়ানটা গায়ে দিয়েই মাফলারটা পাড়ি,
লন্ঠনটার আলো মিটমিট, বই খুলে বই পড়া—
শীতে হি হি, এমন সময় দুয়োরে শুনি কড়া।
কড়া নাড়ছে দুয়োরে কেউ—কে সন্ধে রাতে?
উঁকি দিয়েই দেখি একজন বল্লম তার হাতে।
ওরে বাবা এ কোন বিপদ এ কোন মূর্তিমান?
ঘাম ঝরতে লাগল আমার থাকলেও আলোয়ান।
শীর্ণ শরীর, লাল দুটি চোখ, পাকানো তার গোঁফ।
দেখেই আমার বুদ্ধিশুদ্ধি বেবাক হলো লোপ।
আমতা-আমতা করছি দেখে দস্যুর হলো দয়া।
বলে, বালক ভয় পেয়ো না, চাঁদটা ক্ষয়া ক্ষয়া।
তার মানে কী? অদ্ভুত এই তথ্য কেন দিচ্ছে?
আকাশ পানে তাকিয়ে বলি, চাঁদের সেটা ইচ্ছে!
ক্ষয়া যদি তো পাঁজি দেখলেই উত্তরটা পাবে—
কৃষ্ণপক্ষের চাঁদে কী আর জোছনা উছলাবে?
সাহস করে প্রশ্ন করি, সড়কি হাতে নিয়ে
জাগিয়ে দিতে চাও চাঁদকে একটা খোঁচা দিয়ে,
যেন তার বুকের থেকে জোছনা ফেটে পড়ে?
লোকটা তখন বলে উঠল ভীষণ ক্রুদ্ধ স্বরে—
ঠিক ধরেছ! সূর্য যদি সরিয়ে নেয় তাপ—
গরিব মানুষ বাঁচে কী করে বলো দেখিনি বাপ?
সূর্য না হয় ডুবেই গেছে, তুমি উঠেছ বাপু,
দেখছ নাকি আমরা গরিব শীতে থরথর কাবু!
তুমিই না হয় তাপ ছড়াতে শীতের রাত্রিবেলা!
হেসে বললাম, দেখছি তোমার পড়ায় অবহেলা।
বই পড়লেই জানতে পেতে চাঁদের ব্যাপার কী!
সূর্য থেকেই ধার করা তার আলো এই আর কি!
ধার করাতে আপত্তি নেই, করুক যতই ধার—
সূর্য এমন কড়া মহাজন—জানবে চমৎকার।
ধার দেয় সে আলোটুকুই, তাপটা হাতে রাখে—
চাঁদের তাই ঠান্ডা আলো বলছি তোমাকে।
চাঁদ খুঁচিয়ে লাভ নেই গো, তাপ নেই তার কাছে।
বলল তবে ওম পোহাবার উপায় কী আর আছে?
তখন তাকে খুলে দিলাম গায়ের আলোয়ান।
দেখছি শীতে আপনি কাতর এইটে নিয়ে যান।
লোকটা তখন সড়কি ফেলে বলল করুণ স্বরে—
তোমার মতো পুত্র যদি থাকত ঘরে ঘরে
তবে কি আর গরিব মানুষ মরত প্রতি শীতে?
পারত আমার মাথা এমন খারাপ করে দিতে!
সড়কি হাতে বেরিয়েছিলাম রেগে চাঁদের ওপর,
তোমার কাছে জ্ঞান পেলাম আর পেলাম এ চাদর।
এই বলে সে টুকুস করে মিলিয়ে গেল কোথায়?
কেবল তার সড়কি পড়ে থাকল বারান্দায়।
সেই সড়কি হাতে নিতেই হলো পাখির পালক।
এবং শুনে উঠলাম স্বর—বালক ওরে বালক!
মিলিয়ে গেছে লোকটা তবু শুনলাম তার স্বরে—
এমন পুত্র হয় যেন গো বাংলার ঘরে ঘরে—
যে খুলে দেয় গরিবকে তার গায়ের আলোয়ান—
যেমন খুলে দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান
যখন তিনি বালক ছিলেন সেই টুঙ্গিপাড়ায়।
মনে পড়তেই ভরে উঠল আকাশ লক্ষ তারায়
..................................................
তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ ॥
ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক।
মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক ॥’
..................................................
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি
সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই
ঘাসের শিখা নেই জলের রেখা নেই
আমার মরুভূর গোপন কোনো কোণে একটু নীল হয়ে
বাতাসে কেঁপে কেঁপে একটি শীষ আজ উঠুক
আমার গাছে গাছে আজ একটি কুঁড়ি নেই
একটি পাতা নেই শুকনো ডালে ডালে বায়ুর ঘষা লেগে
আগুন জ্ব’লে ওঠে তীব্র লেলিহান
বাকল ছিঁড়েফেড়ে দুপুর ভেঙেচুরে আকাশ লাল ক’রে
আমার গাছে আজ একটা ছোট ফুল ফুটুক
আমার এ-আকাশ ছড়িয়ে আছে ওই
পাতটিনের মতো ধাতুর চোখ জ্বলে প্রখর জ্বালাময়
সে-তাপে গ’লে পড়ে আমার দশদিক
জল ও বায়ুহীন আমার আকাশের অদেখা দূর কোণে
বৃষ্টিসকাতর একটু মেঘ আজ জমুক
আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আজ দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক
..................................................
মানিক বৈরাগী
মুটোফোন খোলা রয়, জেগে থাকে হৃদকর্ণ
খোলা চরে বিহঙ্গ রাতে কুয়াশা উৎসবে
আগুন পোহাতে নগ্নহাত টেনে, নিবিড় ঝাউয়ে
নিশিতে গান্ধী শালে লতাবে উষ্ণ চুমায়।
ভাপা পিঠা, কালোবিনির দুচোয়ানি সাথে কাঁকড়ার ঝোল
সারি সারি কুইশ্বল ক্ষেত, মাঝখানে পাহারা চৌকি
কত নিশি জড়াজড়ি করে বিহঙ্গ রাত কেটেছে আবেশ-আবেগে
কেউ কি জানে, জেগে আছ শীতবালা?
এসো আবারো কৈশোর হই।
..................................................
গিয়ে দেখি শাশুড়ি মার শূন্য দইয়ের হাঁড়ি।
টেবিল জুড়ে শীতের পিঠা কাড়ি কাড়ি বসা
কতক আছে শুকনো আর কতক রসারসা।
বলে,তোমার সামনে এটা পরতেও সুখ ভারি।
মনের সুখে তাই সেজেছে মায়েের মেয়ে খুব
তার সে রূপের গাঙে যেনো দিতে পারি ডুর।
শালা বলে, তোমার জন্য রস এনেছি পেড়ে।
শাশুড়িমা বলেন, বাবা, ভাঁপা পিঠা নাও
রসের পরে ভাঁপা পিঠা গরম গরম খাও।
আম্মা বলেন, জামাই বাপু কি যে এসব বলো!
ছেলের জন্য মায়ের কষ্ট, কষ্ট তো নয় সুখ
কষ্ট পালায় দেখলে ছেলের সদা হাসি মুখ।
..................................................
বাইশ বছর ধরে অবিরত অশ্রুপাত করছি
আমাকে সান্ত¡না দিয়েছে বিকেলের মন্দা বাতাস
আর শোকবিহ্বল রাতজাগা পাখি।
সব মাধুরিমা চাপা ক্রন্দনের মিহি রঙে মলিন বিবর্ণ
দুঃখের কাব্যভাষা বজ্ররাতের শব্দের মতো উদ্ধত অপ্রিয়
একবুক দগদগে অঙ্গার নিয়ে বিষুবের আলপথ ধরে
হেঁটে যাচ্ছি অবয়বহীন নিরাশার অসমান্তরাল পথে।
আমার সন্তান সৃষ্টির সীমা নিরীক্ষণে মহাশূন্যে কাটছে সাঁতার
নক্ষত্রের জনহীন নীরবতা আন্দোলিত করে ক্ষণায়ু সমগ্রের
মুখপাত্র হয়ে ঢুকছে সে প্রশ্ন থেকে জটিলতর প্রশ্নের গভীরে
অশ্রুশীলা সব বঞ্চিতা মাতৃজঠরের নিশর্ত মুক্তির উল্লাসে।
হৃদের প্রতিটি তরঙ্গে সময়ের অসম পদক্ষেপে পরম আগ্রহে
প্রখর রাতে ঠেলে শক্ত পাখনায় উজান বেয়ে আসে যে মীন
সব সম্ভাবনায় আমার সন্তান মহাদীপ্র হয়ে যেতে চায় যুগান্তর
বুকের পরম উষ্ণতায় তাকে অনুভব করি সৃষ্টির অপার বিস্ময়ে।
..................................................
ঝুমা মল্লিক
সময়ে অসময়ে ধান কেটেছো।
সেই মেঠো পথ ধরে স্মৃতিরা হাঁটে।
ভালোবাসা শুধু সবুজ ঘাসে।
চোখের চাদরের ছলাকলা ।
অবহেলা শুধু অবহেলা ।
সবটুকু মায়ার ফাঁদ।
সময়ে ঘাস ফুলের বার্ধক্যতা।
হাঁস জলে ভাসে।
পাশাপাশি থাকবে তুমি আর ছায়া।
..................................................
কারণ, চোখের জলের অস্তিত্ব লুকানো যায় সহজে
আকাশের কান্নার দোহাই দেয়ার থাকে একটা ভরসা।
হালকা হালকা ওমের মতো কাশ্মীরি চাদরের স্পর্শে
মনে হয় আছি তোমার পাশেই, এইতো সমান্তরাল।
পাতার ফাঁকে শিউলির রং আর ঝুমকো জবার ঝালর গলায় ঝুলিয়ে
আমি উদ্দাম নেচে চলি তোমার হাতটি ধরে, শুদ্ধ সংরাজ্ঞী হয়ে।
চেনা পৃথিবীর অল্পই একবারে যায় দেখা, ঘোমটা পড়া নতুন বৌটির মতো
লাজুক নয়নে লুকিয়ে দেখা, চুড়ির রিনিঝিনি ঝংকারে যার শখটুকু বাঁধা।
মায়ের বোনা উলের জাম্পার আর মাফলার নিয়ে চলে যাই শৈশবে
মায়ের ছোঁয়া পুরোনো গন্ধের মতো সতেজ করে দেয় আমার অস্তিত্ব।
তোশক গায়ে ঘুমায় তারা
শীতের রাতে
তোশক ব্যতীত ঘুমায় পড়ে
এমন শীতে
জ্যাকেট-হুড়ি গায়ে দিয়ে
হাঁট-বাজারে ঘুরে গিয়ে
ধনী যারা
আল্লাহ আল্লাহ মুখে জপে
যাচ্ছে মারা
সবজির কদর যায় বেড়ে
বাজারে গিয়ে নেয় কেড়ে
চালাক মানুষ
ঘরে ফিরে বাজার বিনে
গরীব মানুষ
নানান পিঠার ধুম পড়ে যায়
খেজুর গাছে হাঁড়ি সাজায়
গ্রামে গ্রামে
পরিযায়ী পাখি খুঁজে নীড়
ঝোপেঝাড়ে।
..................................................
শাহীন খান
ঠান্ডাতে কাতরায়
ঠাঁই নেই এ সমাজে
আঁধারেতে সাঁতরায়!
নাওয়া নেই খাওয়া নেই
কোনো চাওয়া পাওয়া নেই
কষ্টে কাটে ওরা
সীমাহীন মাত্রায়।
অসুখবিসুখে ওরা পড়ে যে থাকে
সারা বুকে বেদনার ছবি যে আঁকে
চিকিৎসা জোটে নাকো -
তোমরা তো সুখে থাকো
ধনবান লোক,
ভালো আছো সারাবেলা
আনন্দে আছো মেলা
চশমাতে চোখ!
ওহে ধনবান
কষ্টে আছে কতো
গরীবের প্রাণ!
একটু যদি সবে দয়া করো
ভালোবেসে যদি তুমি দু'হাত ধরো
ওরা ঠিকই বেঁচে যাবে
এই যাত্রায়।।
..................................................
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
বাইরে যাওয়া যায় না রে…
সূর্য কোথায় মুখ লুকালো
আলো জ্বেলে চায় না রে।
বৃষ্টি যেন ঝরছে রে…
হিম কুয়াশা ওড়ে ওড়ে
স্মৃতির মিনার গড়ছে রে।
লেপ কাঁথা সুখ ছাড়তে রে…
আরাম করে হিম শীতে যে
হাত পাগুলো নাড়তে রে।
..................................................
বাইরে পৌষের কাঁপন!
উত্তুরে বাতাস জাপটে বলে
কথা আছে গোপন!
সাপ সাপ লাগে!
ময়ূর ময়ূর স্বভাব আমার
আমিষ খিদে জাগে।
বেরঙ কুয়াশা নাম!
মুখ ফুলিয়ে বলছে বাড়ি
দূর হিমালয় ধাম!
লাল সূর্যের আভা!
মর কুয়াশা যা ধোঁয়াশা!
কুচুটে তোর শোভা!
সাজবো ফুলে ফুলে!
ঐ দিগন্ত নেই সীমান্ত
উড়বো মন খুলে।
..................................................
গান বেঁধেছি ন্যায়ের উপবীতে
মানুষ মারা পা বাড়িয়ে আছে
মানবতা এই বুকে বেঁধে নিতে।
পথের মাঝে হাজারটা কাফের
আঙুল তুলে আঁধার কথা বলে
গান লিখছি তবু সেই মানুষের
হাড়ের ভিতর অজানা সঙ্গীত
বুকের উপর অনেক স্বপ্ন ঘোরে
গান পেয়েছে ন্যায়ের উপবীত
..................................................
সবুজ বনের ফাঁকে,
দুই নয়নের রংতুলিতে
সেই ছবিটি আঁকে।
মুক্তা ছড়ায় ঘাসে,
রাঙা বৌয়ের আগমনে
ফুল পাখিরা হাসে।
ঝলঝলিয়ে জ্বলে,
সূর্য-আভাস পড়লে গায়ে
নিমেষে যায় গলে।
মাঠের বাঁকে বাঁকে,
পাখপাখালি বসে আছে
গাছের শাখে-শাখে।
..................................................
চেনা রাত গ্রাম বট অশ্বত্থ ছায়ায় চাপ চাপ হিম পরব,
কাঁপা কাঁপা বুক জানে চাষি আর চাষি বৌয়ের কুঁড়েঘর
উঠোনে এসেছে মাঠের স্বর্ণ স্বর্গ মাচানে উষ্ণতা,
কার পায়ের শব্দ উঠোনে ঘরে বাজে ঝুমুর ঝুম
আনন্দ শোক ছোঁয়াছুঁয়ি জীবন বীতশোকে উষ্ণ স্নান।
পরাগ রঙ বোঝেনা সেলিম সুমন নিতাই সুরিন্দার,
এখনও রাতের গ্রাম বাজবরণ বাবলা হলুদ সোনাঝুরি
কোঁচড়ে কুঁড়ি কাঁপে শরীরে ফলেছে রক্তফুল সে ও
ডাঁয়ে বাঁয়ে পতাকা ও কাঁপে হিম পরবের ফন্দি ফিকিরে,
কোথাও সন্তান হীনা মা ঠাণ্ডা চোখে কালো রাস্তায় উদাসী অসুখে।
আয়ন কালের গভীরতায় সাগর নদী খালের মায়া জল,
দোয়েল পাপিয়া সংসারী শালিক জানে রোদ্দুরের ধান
তবুও হৃদবলয়ে অবলীলায় কাঁপে সমূহ বীজের অঙ্কুর,
বিশাল সমুদ্রের দুঃখ ভেজায় মাটি গাঙচিলের ডাক
দূর্বা তখন মুক্তা ঠোঁটের গরম খোঁজে উত্তরা সে অভিমানী,
আঙুল বোঝে সদ্য গরম স্পর্শ শিরায় শিরায় ধমনী স্রোতে
সকল উঠোনে শিশুর চলনে আয় রোদ্দুর মিষ্টি নরম তাপে।
..................................................
শীতকালের পৌষ মাসে
রবিশস্য দোলে
শর্ষে গাছে দৃষ্টিকাড়া
পুস্প পাপড়ি খোলে
পথের ধারে মাস কলাই
ক্ষেতে মসুরের ডাল
তিলের ক্ষেতে তিশির ক্ষেতে
তিশি আর তিল দেয় তাল
হরেক রকম রবিশস্য
চাষির মুখে হাসি
শীত কালের এই সবুজ প্রান্তর
অনেক ভালোবাসি।
..................................................
এরি মাঝে কিছু গরীবের চলাফেরা।
সঞ্চয় নেই হাজিরা কামাই সূদুরের কথা,
বোঝেনা মানুষ বোঝেনা এ নীরবতা।
মৌসুমি সবজির বাজারেতে সমাগম
দাম যেন ওঠে আর নামে,
এ পত্র লিখিব কোন খামে।
নিয়তির খেলা মানবেকি বোঝে!
পোলাও গোস্ত কুকুরেই ছিঁড়ে খায়
ঐ ডাস্টবিনে এসে,
অভুক্ত শুধু গরীব তুমিই
এই মানবের দেশে।
পরনেতে ছেঁড়া জামা
দুটো কিংবা তিনতে হবে
বেচারা কাঁপিয়া বলে
আহা! শীতটা ফুরাবে কবে।
নেইকো তাহার সাল কম্বল
বড় দুষ্কর দেহটা আবরণে ঢাকা,
নিশিথেই বাড়ে হাওয়ায় প্রকোপ
চারিদিক বড় ফাঁকা!
নিদারুণ দায় মাথায় চাপিয়া চলে
গরীবের ঘরে বিলাসিতা নাই
গরীবেরা অনাদরে।
হয়তো কেহবা রিক্সা চালায়
কনকনে এই শীতের হাওয়ার তালে,
ওহে বিত্তবান ভাবিও আবার
থাক তুমি কোন হালে।
..................................................
মজনু মিয়া
গরম কাপড় চাই,
পথের পাশে যারা থাকে
তারাও আমার ভাই।
এটা কেমনে হয়,
ওরাও মানুষ বুঝতে হবে
ভেবে খুব নিশ্চয়।
খাবার পায় না ভাত?
গরম কাপড় কে দিবে আর
কোথায় কাটবে রাত?
একটু বাড়াই হাত,
হাতের ছোঁয়ায় ওদের দুঃখ
যাক কিছু নিপাত।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Facebook: facebook.com/samoiki
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments