শীত শিহরণ_শীত সংখ্যা ২০২১ : পর্ব-৩

 
শীত আমাদের জীবনে কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ঘুমের রাজ্যে নিয়ে যায়। শীত বাতাস, রুক্ষ মাটি আর ঝিমিয়ে যাওয়া গাছগাছালি এক নিরবতা সৃষ্টি করে। অল্প বিস্তর কর্মব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে মানুষ সৃজনশীলতায় মিলিত হয়। বিছানায় স্বপ্নের অনুভূতিগুলো আবার জেগে ওঠে। তন্দ্রাহীন অর্ধঘুম কল্পনার ডানা মেলে। নতুন চিন্তায় আর একবার পাশ ফিরে শোয়। বছর করোনা আমাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে আসলেও আমাদের জীবনাশক্তি তার অভিশাপকে তোয়াক্কা না করে জীবনকে আরো পরিশীলিত করে তোলেতে সর্বাত্ত্বক চেষ্টা করে চলছে। আগামী পৃথিবী যেনো আরো শুদ্ধ, আরো মনোরম, বাসযোগ্য হয় তার চিন্তায় আমাদের জীবনের সৃজনক্রিয়া অব্যাহত চলতে থাকে। সবার জীবন সুন্দর জীবনাশক্তি বৃদ্ধি পাক এই আমাদের কামনা। এই কামনায় আমরা শীত সংখ্যা প্রকাশ কলাম। আশা করি পাঠক লেখক সবারই এই সংখ্যাগুলো ভালো লাগবে। আর আপনাদের ভালো লাগা আর ভালোবাসাই আমাদের জন্য দোয়া।
 
আফসার নিজাম
সম্পাদক
 
সূ চী প ত্র
শীতের আশ্রম :: মহাদেব সাহা
শীতগল্প :: ময়ুখ চৌধুরী
শীতের কবিতা :: কৃষ্ণ রায়
কুয়াশার রুপকার্থ :: ফারুক মাহমুদ
শীতের ছড়া :: আবু নেসার শাহীন
শীতের দুটি মাস :: সৌমেন দেবনাথ
শীত নেমেছে :: আনিসুর রহমান খান
উঠরে খোকা :: মোহাম্মদ আব্দুল গফুর
শীত মানে :: রিয়াদ হায়দার
নৈসর্গিক কুয়াশার মুখোমুখি :: স্বপঞ্জয় চৌধুরী
শীতে দুখ সুখ :: মুন্সি আব্দুল কাদির
শীত মানে :: মাহমুদ সালিম
শিশির কণা :: আবুল খায়ের নূর
হিমশীতল শীত :: মাহ্ফুজা নাহার তুলি
শীতের কবিতা :: আকছার মুহাম্মদ
শীতের সকাল :: আবু জাফর
কানাডার শীত :: রানা টাইগেরিনা
শীত পার্বণ :: সুপ্রতীম সিংহ রায়
শীত :: সৃজা ঘোষ
শীতবিলাস বান্ধবীস্কার্ফ :: টুটুল দাস
..................................................
 
শীতের আশ্রম
মহাদেব সাহা
 
শীতের আশ্রমে আমি মৌনব্রত পালন করেছি
বর্ষব্যাপী কেবল সঙ্গী ছিলো বিচ্ছেদ বেদনা;
কিন্তু কী পাঠ নিয়েছি আমি
পবিত্রতা সংবেদনশীলতা স্বপ্নের সহস্র মুখ
নিদ্রায় নিভৃতে সোনালি শীত আমি আয়ত্ত করেছি
কাঁদতে কাঁদতে যমুনার নীল জলে ভাসিয়েছি ভেলা
আমার অবুঝ শৈশব, আমার বার্ধক্যবিকেল
হায়, তবু তোমারি মুখের দিকে চেয়ে আছি
হেসে ওঠো নিঝুম মৃত্তিকা, কানে কানে বলো
আমি বারবাগি্ন পার হবো একা,
আমি অপেক্ষায় নেই, চলে যাচ্ছি
আজ এই শীত উৎসবে আমার আশ্রমজুড়ে নৃত্য নূপুর।
..................................................
 
শীতগল্প
ময়ুখ চৌধুরী
 
খুব বেশি কিছু নয়, একটি উড়ন্ত পাতা সামান্য আশ্রয় চেয়েছিল
এই শীতে বাঘের নিশীথে;
স্বঘোষিত পুরনো সেবক, দ্যাখো
তোমার আশ্বাসে ভর করে
বিক্ষত পাখির ডানা উড়ে আসছে বিছানাবালিশ
 
সারাদিন দানাপানিহীন
একটি শীতার্ত দেহ
যথার্থ ঘুমের স্বপ্নে নুয়ে পড়া, ভারি দুটি চোখ
কতো দূর থেকে এলো কপট বাক্যের মমতায়
নাওয়া নেই খাওয়া নেই মধ্যরাতে শীতের করাত
এমন বিপন্ন সত্তা, তার মুখে খাদ্য নয় গান পুঁতে দিলে
রাজার বাড়ির গান ছটফটে রাতের ক্ষুধায়
কোথাও অনেক দূরে গরম ভাতের ধোঁয়া কুয়াশায় মেশে
কোথাও গরম ভাত, কোথাও লেপতোশক রাজার বাড়িতে যায় উড়ে
 
পড়ে থাকে ফুটপাতে রাতের ক্ষুধায়
নিহত বিশ্বাসটুকু কুয়াশার কাফনে জড়ানো
এই তো শীতের গল্প, ঋতুচক্র, দেনা আর দায়
আহত পাখির মতো ইতিহাস অন্ধকারে যায়
..................................................
 
শীতের কবিতা
কৃষ্ণ রায়
 
আমার শীত কেটে যাবে
ঠান্ডা কিংবা গরম বাতাসে
তাদের কাটবে কেমন করে
যারা বাঁচে পথের পাশে
 
ঠান্ডা কিংবা শীত কি তারা চেনে
সেতো জানে তারা
যারা শীতাতপে বাঁচে
তারা কি সোয়েটার কেনে
বৃষ্টি মাখে যারা
ভরসা উনুনের আঁচে
 
আমিও দেখি তাদের চোখে
স্বপ দেখার রাত্রি
ঘুমিয়েও তাঁরা জেগে থাকে
তাঁরাও দূরের যাত্রী।
 
আমার শীত কাটবে যেমন
তেমনি যেন তাদেরও কাটে
ঠান্ডা ছুঁয়ে ভালো বাসুক
উম্ ছেয়ে যাক ভেজা মাঠে
..................................................
 
কুয়াশার রুপকার্থ
ফারুক মাহমুদ
 
খুব দ্রুতগতি নয়, আমাদের পক্ষপাতচাকা
ঘুরে ঘুরে স্থির হয় একবিন্দু সরল ছায়ায়
পাওয়া এবং না-পাওয়ার মধ্যস্থানে সাঁকোচিহ্ন থাকে
দুজনে শিখিছি মন্ত্র, জয়-কান্না বুকে ধরে রাখা
এতটা সামান্য হয়ে থাকি, যেন- পায়ে-পেষা মাটি
যুগল চলন হলে ফিরে আসে প্রাণের প্লাবন
মন থেকে দূরে রাখি বিষভা-, স্থূল অভিযোগ
আলোর নদীর মতো অবিচ্যুত ঢেউপায়ে হাঁটি
শীত আর তুমি মিলে রহস্যের রুপকার্থ আঁকো
সামান্য উষ্ণতা এল- এই নিয়ে মুগ্ধমুখী থাকো
..................................................
 
শীতের ছড়া
আবু নেসার শাহীন
 
কুয়াশায় ঢাকা আকাশ
হিম পাহাড়ের শীতল বাতাস
বয় যে অতি ধীরে,
বরফ জমার খবর নিয়ে
সাগর নদী বন পেরিয়ে
শীত এসেছে ফিরে।
 
কুটুম পাখি হাওয়ায় ভেসে
আসছে উড়ে আমার দেশে
শিশির ঝরা ভোরে,
গুড় নারকেলের ভাপা পিঠা
খেজুর রসের পায়েস মিঠা
মনটা আকুল করে।
 
ঝরছে পাতা গাছগাছালির
শীতের দিনে বিত্তশালীর
সুখ কেবল বাড়ে,
গরীব কাপড় পায় না খুঁজে
ছেঁড়া কাঁথায় দুচোখ বুঁজে
কাঁপন ধরে হাঁড়ে।
..................................................
 
শীতের দুটি মাস
সৌমেন দেবনাথ
 
শীত থেকে দায় আত্মরক্ষা
চাঞ্চল্য করে ম্লান,
ভ্রমণ-বিলাসী মন করে
ভ্রমণের জন্য প্লান।
 
মৃদুমন্দ ঠাণ্ডা বাতাস
উত্তর দিক থেকে ধায়,
দিন ছোট হয় রাত্রি বড়
রাত্রি কাটানো দায়।
 
বায়ু জলীয় বাষ্পহীন
শুষ্ক হয়ে যায় ত্বক,
চর্মরোগে ছেকে ধরে
বুড়ো কাশে খকখক।
 
নাক বুঝে যায় লাগে হাঁচি
ঠাণ্ডা রোগে ধরে,
সর্দি-কাশি লেগেই থাকে
ধরে ভাইরাস জ্বরে।
 
চাঁদা তুলে খোলা বিলে
হয় যে চড়ুইভাতি,
সারা রাতে স্ফূর্তি করে
করে মাতামাতি।
 
পরিযায়ী পাখি আসে
হাওর, বাওড়, বিলে,
জলে ভেসে করে খেলা
উড়ে মিলে মিলে।
 
সড়কে হয় দূর্ঘটনা
পড়লে ঘন শিশির,
দূর দিগন্ত যায় না দেখা
তাই চলে গাড়ি ধীর।
 
সবজি বুকে মাঠ-ঘাট সাজে
কষ্ট করে চাষ,
ভালো-মন্দে কাটতে থাকে
শীতের দুটি মাস।
 
..................................................
 
শীত নেমেছে
আনিসুর রহমান খান
 
শীত নেমেছে সবার ঘরে
শীত নেমেছে হাওয়ায়
শীত নেমেছে টুকাইশিশুর
ময়লা ছেড়া জামায়।
শীত নেমেছে বস্তিঘরে
শীত নেমেছে মাঠে
শীত নেমেছে বন বাওরে
গাঁও গেরামে হাটে।
শীত নেমেছে যোয়ান বুড়ুর
শীত নেমেছে কুলির
শীত নেমেছে সকল ঠোঁটে
সব পাখি বুলবুলির।
শীত নেমেছে নবান্নতে
শীত নেমেছে পিঠায়
শীত নেমেছে অভিশাপে
গরীব লোকের ভিটায়।
..................................................
 
উঠরে খোকা
মোহাম্মদ আব্দুল গফুর
 
শীতে কাঁপি থরথরিয়ে
লেপ তোষকের তলে,
ডাকছে মায়ে উঠরে খোকা
ভোর হয়েছে বলে।
 
পাখ - পাখালি ঘর ছেড়েছে
হয়নি শীতে কাবু,
ঐতো জেগে করছে খেলা
পাশের বাড়ির বাবু।
 
কুয়াশারা সাদা রঙে
সব দিয়েছে ঢেকে,
শিশিরকনা ঘাসের ডগায়
বসেছে জেঁকে।
 
নরম গরম রোদেরা
খেলছে উঠুন জুড়ে,
রোদের ছোঁয়ায় শীতেরা সব
ছুটছে ভয়ে দূরে।
 
উঠরে খোকা পিঠে দিব
ভাঁপা-পুলি পিঠে,
খেতে দিব খেজুরের রস
আহ! কিযে মিঠে।
..................................................
 
শীত মানে
রিয়াদ হায়দার
 
শীত মানে তো চিড়িয়াখানা
চড়ুইভাতি খাওয়া,
শীত মানে তো পাহাড় কিংবা
সমুদ্দুরে যাওয়া !
 
শীত মানে তো ঘাসের আগায়
শিশির ঝরা দিন,
শীত মানে তো ভালো থাকা
মনটা রঙিন !
 
শীত মানে তো লেপ-কম্বল
আদর মেখে থাকা,
শীত মানে তো আকাশ জুড়ে
মেঘ কুয়াশা ঢাকা !
 
শীত মানে তো ফুটপাথে তে
মানুষ কাটায় রাত,
তাদের জন্য বাড়িয়ে দেবো
একটু স্নেহের হাত !
..................................................
 
নৈসর্গিক কুয়াশার মুখোমুখি
স্বপঞ্জয় চৌধুরী
 
আমাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে গ্রহপুঞ্জ
আমার হাওয়াবনত শরীরের কুল ঘেষে
তর তর করে বেড়ে উঠছে কুয়াশা বৃক্ষ
তার বর্ধনশীল দেহটাকে কেটে কেটে
ছোট করবার ব্যর্থ চেষ্টা শেষে
মুখোমুখি হই শ্রদ্ধাবনত সন্ধ্যার।
তার বুক পকেটে লুকিয়ে রেখেছে
কিছু নরম জোছনা, তার মুখ খুললেই
স্নেহাশীষ স্নিগ্ধ গতিতে সহসা
বাতাসে উড়ে বেড়ায়
কিছু ডানাকাটা হেরেমের রমনী
আমাকে তারা বুকে টেনে নেয়
নরম স্তনবালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি
আমাকে অতিক্রম করছে আলোকবর্ষ
মহাগর্জনের উত্তপ্ত লাভাপিন্ড,
আমি নিজের অস্তিত্ব ভুলে গিয়ে
বায়ুর চেয়েও ক্ষুদ্র হতে থাকি।
অবশেষে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি
জাগতিক রমণীকুল আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে
এক নৈসর্গিক কুয়াশার মুখোমুখি।
..................................................
 
শীতে দুখ সুখ
মুন্সি আব্দুল কাদির
 
আহা
শীতে খাবার
বড্ড আরাম
মজা শীতের পিঠা
খেজুর রসও
দারুন মজা
খেজুর গুড়ে মিঠা।
 
কষ্ট কেবল
অনাথ দুখীর
কষ্টে পথের শিশু
কষ্ট কত
মনের কোনে
কষ্টে এতিম মিশু।
 
ধনিক বনিক
ওজির রাজা
সুখে রাত্রি দিন
গরীবের ধন
যারাই কাড়ে
তাদের জন্য ঘিন।
..................................................
 
শীত মানে
মাহমুদ সালিম
 
শীত মানে তো ঠান্ডা হিমেল
বাতাস বয়ে যাওয়া
শীত মানে তো গরম গরম
ভাপা পিঠা খাওয়া।
 
শীত মানে তো মায়েন আঁচল
মাথায় টেনে দেয়া
শীত মানে তো খড়কুটাতে
আগুনের তাপ নেয়া।
 
শীত মানে তো মায়ের হাতে
খেজুর গুড়ের পিঠা
শীত মানে তো পুলির রসে
মুখ হয়ে যায় মিঠা।
 
শীত মানে তো শিশিরকণা
দূর্বাঘাসে পরে
শীত মানে তো হিমেল হাওয়া
গাছের পাতা ঝরে।
 
শীত মানে তো খুশির আমেজ
পিঠা খাওয়ার দিন
শীত মানে তো মনের ভিতর
বাজে সুখের বীণ।
..................................................
 
শিশির কণা
আবুল খায়ের নূর
 
শুভ্র সফেদ শিশির কণা
ঘাসের ডগায় তুলছে ফণা।
শরতের এই প্রভাত বেলায়,
যাই যে পিসে পায়ের তলায়।
হিম শীতল শিশির পড়া,
এলো বৃক্ষরাজির পত্র ঝড়া।
অগ্রজ পত্র ঝড়বে আগে,
তার পরেই তো অনুজ যাবে।
আমরা সবায় যাব চলে,
আগে পিছে সময় হলে।
থাকবো না কেউ ধরাদামে,
ধরবে যেদিন মৃত্যু যমে।
..................................................
 
হিমশীতল শীত
মাহ্ফুজা নাহার তুলি
 
শীত এসেছে লাগলো কাঁপন, লাগলো দোলা প্রাণে
শীত এসেছে হিমেল হাওয়া, আনন্দ আর গানে
বিশাল মাঠে সরসে ফুলের অবাধ ছরাছরি,
ভ্রমরগুলো মধুর খোজে করছে ঘোরা-ঘুরি
শিউলি তলায় ভোর বেলায় ছেলে-মেয়ের মেলা
এই ফুলেতে কত শত গাথবে তারা মালা
শীত এল তার হিম-কুয়াশা, সাদা চাদর নিয়ে,
শীত এলো গুটি-গুটি, হামাগুড়ি দিয়ে
শীত এলো তাই রসের হাড়ি খেজুর গাছে ঝোলে,
এই রসেতে পিঠা হবে, ভাবতেই মন দোলে
খেজুর গুড়ের কথা ভেবে জিবে আসে পানি,
এই গুড়েতে ভাপা পিঠা, তুলনা নেই জানি
শীতের তরে সাজলো আকাশ, ভিজলো যে তার জলে
তারই সাথে ভিজলো যে ঘাস, শিশির কনার ঢলে
শীতের সময় গ্রামগুলোতে যায় পরে যে সারা
যাত্রা-পালা শুরু হবে, আনন্দ তাই পাড়া
শীত সকালে আলসেমিতে চায়না কাটতে ঘুম
সকাল বেলার মিষ্টি রোদ, দেয় কপলে চুম
মিষ্টি রোদের মিষ্টি পরশ শীতকে তাড়ালো,
হিমকুয়াশার শীত বেলা তাই লাগে বড় ভালো
হিমশীতল সন্ধে বেলায় গায়ে দিয়ে চাদর
জটলা করে বসে সবাই নেই আগুনের আদর
হিমশীতল শীত আসে হায় রসের হাড়ি নিয়ে,
যাওয়ার সময় কোকিলের সুর যায় যে শুনিয়ে
..................................................
 
শীতের কবিতা
আকছার মুহাম্মদ
 
শীত এলেই জড়াজড়ি চায় অঙ্গ
বিছানার দু-বালিশ সাথে দেয় সঙ্গ
এবার শীতে কিচ্ছায় কাটবে রাত
ইচ্ছার রণে হবে আমাদের মোলাকাত।
 
কুয়াশার ভাষায় হবে পত্র, যত দেনা পাওয়া
পত্রের গায়ে গড়াগড়ি রবে প্রেমের বর্ণমালা
দমকা বাতাসে উড়ে যাবে সব বিষাদী কুমন্ত্রণ
খেজুর রসে মাখামাখি রবে স্বপ্নের আস্তরণ।
 
হেসেখেলে কুয়াশার দেশে স্নিগ্ধ পরশ মেখে
মশগুল পাঠে রঙ্গিন সুতোয় উড়বো দুজন বেঁধে
আঁকড়ে চরণ রবির কিরণ অঙ্গে মেখে মেখে
শীতের রাত গড়বো দুজন শিউলি পাতার খামে।
 
খামখেয়ালিরর শহর ছেড়ে যাইনা যতোই দূরে
শীত এলেই ইচ্ছের রণে জড়াজড়ি রবে।
..................................................
 
শীতের সকাল
আবু জাফর
 
সোনা নয়, রূপা নয়; জ্বলে ঝিকি-মিকি,
বিন্দু বিন্দু শিশির কণা চেয়ে চেয়ে দেখি।
শীতকালে প্রাতঃ সকালে হিমেল অনুভূতি,
জানালার ধারে থরথরে কাঁপে প্রজাপতি।
 
ভোরে পাখি ডাকাডাকি কলকাকলি রবে,
রাঙা রবি উঠবে কখন বের হবে সব তবে।
সূর্যের আলো ঝলমলো যায় সেও ফিরে,
ধোঁয়া ময় কুয়াশায়; রেখেছে তারে ঘিরে।
 
গাছি ভাই মাঠে যায় শীতে কাঁপা ভোরে,
খেজুর রস নিয়ে আসে কুয়াশার ঘোরে।
কেউ বানাই গুড় আর কেউ রসের পিঠা,
নতুন গুড়ে পাটালি গড়ে খেতে বড় মিঠা।
 
সনে সনে পৌষ মাস আবার আসে ফিরে,
কন কনে শীত আর কুয়াশায় থাকে ঘিরে।
ভন ভন করে মৌমাছি দল সরিষার ফুলে,
ডালা হাতে কিশরিরা সরিষা ফুল তোলে।
 
বনে বনে পাখির ঝাঁক গেয়ে যায় গীত,
ক্ষণে ক্ষণে বয়ে বায়ু হাড় কাঁপানো শীত।
ঝিরঝিরে কুয়াশা ঝরে সবুজ দূর্বা ঘাসে,
সূর্য মামার রাঙা জামা দেরী করে ভাসে।
..................................................
 
কানাডার শীত
রানা টাইগেরিনা
 
উত্তর গোলার্ধ থেকে আর্কটিক হাওয়া এসে,
কানাডার বনাঞ্চলের গাছগাছালিতে মেশে।
শীতের ছোঁয়ায় একে একে বনের পাতা ঝরে,
গাছগুলি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে স্নো পড়ার তরে।
শীতের সূর্য হেলে পড়ে পুব আকাশের গায়,
সেই সুযোগে তাপমাত্রা হিমাঙ্কে নেমে যায়।
কনকনে এক ঠান্ডা হাওয়ার নিম্ন চাপ ধরে,
আকাশ জুড়ে জমানো মেঘ তুষার হয়ে পড়ে।
রাস্তাঘাট আর বাড়ির চাল শুভ্র সাদা হয়,
পায়ে হেঁটে চলতে গেলে পিছলে পড়ার ভয়।
তাপমাত্রা নিচে নেমে হয় যে মাইনাস থার্টি,
জমাট বাঁধা বরফগুলো দেখতে লাগে ডার্টি।
স্নো ক্লিনিং সল্ট ছিটানো যতটুকু যায় পারা,
সাবওয়ে বাসে ছোটে মানুষ নিয়ে কাজের তাড়া।
স্কুল অফিস ডে কেয়ার সব চলে নিয়ম মতো,
শীত এড়াতে জড়ায় গায়ে শীতের পোশাক যত।
বাড়িঘর সব রাখতে গরম চলে গ্যাসের হিটার,
উইক এন্ডে পার্টিও হয় বাজিয়ে সুরে গিটার।
..................................................
 
শীত পার্বণ
সুপ্রতীম সিংহ রায়
 
ঝিলমিল শেষে সব একাকার
হিমেল হাওয়ায় বরফ জোগায়,
শীতঘুম আর কুয়াশা পরশ
উৎসব দিন নিভৃতে ঘুমায়।
 
পৌষের ভোর হিম হিম ভাব
লেপ মোড়া রাত দমকা আদর,
মাফলারে মুখ ঢাকা পড়ে যায়
বাড়তি গায়ে পশম চাদর।
 
কফিমগ ধোঁয়া তোমার সকাল
আমার বুকে মাদল বাজে,
পিকনিক ভোরে প্রথম দেখা
সরস্বতী মুখ, চোখের খাঁজে।
 
সূর্য তাপের দম্ভ ছোট
রাত্রি পাওনা বাড়তি ক্ষণ,
হলুদ শাড়ি, অঞ্জলী দেওয়া
বুক ধুকপুক কিশোরী মন।
 
এবার তবে হাত-গা সেঁকি
পাপপোড়া সব নিভু আগুনে,
উষ্ণতা ওম বুক ভরে নিই
রং মাখব ফের ফাগুনে।
 
আর কটা দিন এমনই কাটুক
হিমেল হাওয়ার বরফ চেখে,
বেশ চলে যাও, যদি ডাকে দোল
শেষ চুমু দেব আদর মেখে।
..................................................
 
শীত
সৃজা ঘোষ
 

শীতের ভেতর লেপ-কাঁথা নেই। জড়িয়ে ধরো, জড়িয়ে ধরো
গোপনে পাশ ফেরার আগে, বাঁ দিক বেয়ে আদর করো।
আদর করো কপাল জুড়ে, শরীর আমার ভাল্লাগে না।
হাত-পা খেলা অনেক হলো, এখন ওতেরাতজাগে না।
 

শীতের শরীর ছাপোষা খুব, প্রেম সাজিয়ো নিম্নগামী-
শরীর দুটো মিশ খেতে চায়, আমার সংগে একলা আমি।
আদর করো, আদর করো, স্বল্প শীত- উষ্ণতাখোর।
লেপের নীচে বালিশ খেলায়, নীল হয়ে যায় একটা প্রহর
 

শীত কাটেনা, গরম শহর, চায়ের আগে চুম্বন চাই ;
যাবজ্জীবন চাতক-গায়ে মিথ্যে, গোপন বাক্স সাজাই।
এখন চাদর ব্যাতিক্রমী, উলট-পুরাণ হতেও পারে-
মন, মানসিক অনেক হল, আদর মাখাও অন্য পারে
 

আগুন আনো, আগুন আনো, শরীর জ্বালাও সবার আগে
শীতের ভেতর ঋণ থেকে যাক বিচ্ছিরি সব পোড়ার দাগে।
এখন লেপ- আকাশ আমার- সাজাও তারা, জোছনা বোনো-
ঘর বাড়ি নেই। যাবজ্জীবন বসত দিবি অন্য কোনো?
 

ঘর দোর নেই, বুকটা ছাড়া। শার্টের গন্ধ হারিয়ে গেলে,
আমিও উধাও অন্য গ্রহে, ইতস্ততঃ ঝিনুক পেলে।
শীতের ধোঁয়ায় ভুল করেছি, ভুল করছি মৃত্যু চিনে।
তুমিও আমায় ঠিক বোঝোনি, ঠিক বাঁধোনি শক্ত ঋণে
 

ফাঁক রেখোনা, ফাঁক রেখোনা, চুম্বনে বিষ ঢালো।
নীল ছুঁই আর শরীর চেনাই- মিশলে ওটাও কালো()
নষ্ট হয়ে যাচ্ছি প্রভু, শীত সরিয়ে নাও
বুকের ভেতর, মুখের ভেতর ব্যথার স্মৃতি দাও।
 

লেপের ভেতর বইছে নদী, পাশ ফিরেছি যেই-
নগ্নতাতে উথাল-পাথালদ্বিতীয় সুখআর নেই।
পায়ের পাতায় আলাপচারী ওষ্ঠ এখন চাই
দারুণ শীতে ভেতর ভেতরনষ্টবনে যাই।।
..................................................
 
শীতবিলাস বান্ধবীস্কার্ফ
টুটুল দাস
 
বান্ধবীদের কফির কাপে পৌষ বিকেলের ছায়া
দাস্তানাতে নাক ঢেকেছে, কুয়াশা দিয়ে মায়া।
সন্ধ্যেগুলো বিষমখাওয়া ভীষণ এলোমেলো
কবিকে ছোঁয়ার ভান করে সব আঁধার ছুঁয়ে গেল।
আঁধার মানে মফঃস্বলের রেডিও বাজা রাত
মেসেজ বেয়ে চুইয়ে নামে শীতঘুম অকস্মাৎ।
শীত পেরিয়ে বান্ধবীদের অবাধ যাওয়া-আসা
গান্ধর্ব মতে পুড়তে থাকে পলাশবনের বাসা।
আগুন দিলাম বান্ধবীদের ব্যালকোনি- কার্নিশে
আগুন ছড়াক শহর জুড়ে পলাশ-বকুল মিশে।
 
ছাই ঢেলে দাও হিসেবছাড়া অঙ্কখাতার নামে
শীতাকাশে জ্বলুক-নিভুক হাজার নীহারিকা
রাস্তাগুলো বিষণ্ণ হোক, শহর কিংবা গ্রামে
স্কার্ফ ঝুলিয়ে কবিতাখাতায় হাঁটবে আধুনিকা।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.