সৈয়দ নাজমুল আহসান’র কবিতা

তৃতীয় শ্রেণীর যাত্রী
 
কোনদিন হায়
কখনো দেখে নায়।
জীবন সুখের
একসাথে ভোগের।
তবু কথাটি নাকি ভাসে
আকাশে বাতাসে।
দিন যায় দিন আসে
কোথা দিয়ে জানে না সে।
বুক চেরা শ্বাস
দেয় দুখের আভাস।
জীবন ভরিয়া
দুখের দরিয়া
তাহার নিকট
সত্য প্রকট।
দুঃখ থাকে তার চার পাশে
জীবন ট্রেনের তৃতীয় শ্রেনীর যাত্রী সে।
..................................................
 
বৃষ্টিতে ভিজি, এসো
 
এসো আমরা বৃষ্টিতে ভিজি।
খরায় খরায় কেটেছে অনেক দিন
ফসলের ক্ষেতে ফসল পুড়েছে
খোলা মাঠের বুক চিরে গেছে
ছোট্ট নদীগুলো শুকিয়ে গেছে প্রায়
এতটুকু পানি পাওয়া  যায়নি কোথাও।
বৃষ্টির  প্রয়োজন ছিলো আমাদের
আজ বছরের প্রথম বৃষ্টি হচেছ
এসো আমরা সবাই বৃষ্টিতে ভিজি।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে
অট্টালিকা ছাদে না ভিজে
রাজপথে মিছিলে মিছিলে
বৃষ্টিতে ভিজি। সর্দি, জ্বর উপেক্ষা করে।
..................................................
 
বর্গাচাষ
 
রক্ত চুয়ে খায় রক্তচোষা হায়েনারা
পরিকল্পিত সু-কৌশলে।
উপায় নেই হাত পাততেই হয়
আমরাও তাদের কাছেই ফিরে যাই।
বন্যা- বান- খরা আসে অভিশাপরূপে
আর ওদের জন্য আর্শিবাদ।
সাহায্যের নামে ল্যাং মারে
অবনতি হয় না উন্নতিও না।
দেশে ৫ম শিশুটি জন্ম নেয়
৪০০০ ডলার ঝণের বোঝা মাথায় নিয়ে
হাত পাততেই হয় উপায় নেই
অবশেষে বর্গা চাষ করি, নিজের জমিতেই।।
..................................................
 
মা
 
মা তুমি নেই
তবু মনে পড়ে তোমাকেই
স্মৃতি হয়ে আছো সবখানেই।
 
রাখিনি তোমার কথা কোনো
অবাধ্য ছেলে যেন।
কখনো করোনি রাগ
নীরবে সয়ে বলেছো- থাক্
 
বুকে লুকিয়ে রেখে দুখ
বাঁধিয়েছো কঠিন অসুখ
ভেতরটা জ্বালিয়ে অঙ্গার-কালো
হাসি মুখে বলেছো-আছি ভালো।
জলাঞ্জলি দিয়ে সব আশা
উজাড় করে দিয়েছো ভালবাসা।
 
বড় কষ্ট দিয়েছি মা তোমাকে
ক্ষমা করে দিয়ো আমাকে।
 
পাবো না জানি মাকে
দোয়া করি-আয় আল¬াহ
বেহেশত নসীব করো তাকে।
..................................................
 
তুমিই পারো, একমাত্র
 
একমাত্র
তুমি যদি
বিশ্বাস ভঙ্গ না করো
আমাদের গাঢ় ভালবাসার
প্রাচীরে ফাটল ধরবে না, কখনোই।
আমাদের গাঢ় প্রেমকে
কবুতরের  পালকের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে
বাতাসে উড়িয়ে দিতে
পারো তুমিই
একমাত্র।।
..................................................
 
মিঃ সময় এবং আমি
 
সময় দ্রুত চলে
পাঁচ তলা থেকে
নেমে আসে নিঃশ্বাস
ফেলার আগেই এবং
প্রতিটি মাইক্রো মূহূর্তেই
বিশাল পৃথিবীর কোথাও না কোথাও
ঘটিয়ে দেয় বড় রকমের
একটা না একটা কিছু।
বাড্ডার ঘন আড্ডা ভাঙ্গে
প্রশস্ত মগবাজার রাস্তা
আরো প্রশস্ত বাড়ে চাকচিক্য
তিলোত্তমা নগরী ঢাকা।
দিন যায় টিভির পাক্ষিক ধারাবাহিক
নাটক আসে। এভাবেই গড়িয়ে
মাস যায় বছরৃ..
সূর্য উঠে ভোরের নতুন সূর্য।
অথচ আমি সেই আমিই
পরিবর্তন নেই আমার কেবল।
..................................................
 
তুমি
 
তুলে দিয়েছি আমার সব
স্বপ্ন, দিন এবং রাত
তোমার দুহাতে।
এখন আমার আহত ব্যাথারা
ঝরে ঝর ঝর। বিউগুলের সূর
শুনি কেবল্
অলস মধ্যাহ্নের খর রোদে পুড়ে যাওয়া
শ্যামল মুখটা দেখি, কামিজের মতো লাল।
পলকহীন চোখে দেখি। তোমাকে।
কিন্তু বাস্তবের সাথে হোঁচট খাই।
শ্যামল মুখ। লাল কামিজ। গোলাপী
অধর। ভুল সবি ভুল হয়।
চাঁদ। সূর্য। নদী। বিশাল সাগর। তাপ। সবাই
হ্ইাজ্যাকার। হৃদয়তো ¬্যাক মেইলি
হয়েছে। শান্তি নেই।
..................................................
 
পাত্রী চাই
 
পাত্রী চাই। বিজ্ঞাপন
কর্মঠ, সুদর্শণসৎ পাত্রের
জন্য শিক্ষিতা, গৃহিনী
রমনীসূলভ আচরণ, উচচবংশীয়া
ধার্মিক, উপযুক্ত পাত্রী চাই।
যোগাযোগ অতিসত্বর অর্থাৎ
বিবাহের ব্যাপারে আমরা
সবাই ধার্মিক এবং
কুমারী নারী চাই। সংসারতো
সুখের হয় রমনীর গুনেই।।
..................................................
 
প্রিয় শরীয়তপুর
 
হে প্রিয় শরীয়তপুর
নও তুমি বহুদূর
হৃদয়ের তন্ত্রীতে বাজে
নিত্য তোমারি সূর।
হে প্রিয় শরীয়তপুর।
 
তোমার আলো-জলে
তরু-ছায়া তলে
কেটেছে শৈশব।
অলস দুপুরে
স্মৃতিতে ওঠে ভেসে
আজো ওইসব।
 
অগ্রাণে-ধানের পাকা সুঘ্রাণে
কিংবা কাঁথা মোড়ানো শীতে
খেজুর রসের স্বাদ পেতে
শিশির ভেঁজা ঘাঘরার সুবাস নিতে
উদাসী মন- যায় হারিয়ে
মেঠো পথে-সবুজ ক্ষেতে
হে প্রিয় শরীয়তপুর।।
..................................................
 
রোজগারী বৃদ্ধ
 
সূর্য উঠার আগে
অন্ধকার ওই বস্তি থেকে
এক বৃদ্ধ বেরোয়
বয়স তার আশি পেরোয় পেরোয়।
শীর্ণ দেহে হাড্ডি গোনা যায়
প্রান বায়ু তার আসে যায় আসে যায়।
ঘুম তাড়াতে দেহখানি ঝাঁকায়
আকাশের দিকে চোখ তুলে সে তাকায়।
বিড়বিড়িয়ে কি যেন সে বলে
তারপর রাজপথে আপন মনে চলে।।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.