বিকাশ চন্দ’র ছড়া



রঙ
 
জোনাক জ্বলা ভাবনাগুলো মন্দ কি
ফুলের সাথে পাখির গানের ছন্দ কি !
 
কাগজ ভরে রঙ তুলিতে আকাশ চাই-
আঁকছে বসে খোকা খুকু ভাবছে তাই।
 
আকাশ হলো পাখি হলো হলো নদী ঘর
শালুক ফোটা পুকুর হলো এবার সাগর।
 
যেমন খুশি আঁকতে হবে তেমন নেই মানা,
হঠাৎ দেখি সামনে আসে 'টা হাঁসের ছানা!
 
বললে তারা শব্দ করে আমাদেরও আঁকো
পুকুর ঘাটের কাছে একটা ছোট্টো মতো সাঁকো।
 
তির তিরিয়ে জল গড়াবে মস্ত মজা হবে
বৃষ্টি হলেই রামধনু- রঙ ছড়াবে তবে।
……………………………………………
 
আলো
 
ইচ্ছে হলেই বাতাস নাচে কাশ ফুলে
ইচ্ছে হলেই বাতাস হাসে দিল খুলে।
ইচ্ছে হলেই পূর্ণিমা চাঁদ ফুট ফুটে
ইচ্ছে হলেই শিউলি ফুল নাও তুলে।
 
যাচ্ছে ভেসেই আকাশ জুড়ে মেঘ ভেলা
সূর্য উঠেই পূব আকাশে রঙে খেলা   
 বাজছে বাঁশি কোন সুরেতে মন ভোলা
 গাইছে পাখি কেমন সুরে মন দোলা।
 
 ছুটি এলেই আপন মনে স্বপ্ন দেখা
 মাঠে সবুজ ধানের শিষে সোনার রেখা,
 দিক বিদিকে ঢাকের বাদ্যি যাচ্ছে ভেসে
 শিশির ভেজা শরৎ সকাল ডাকছে হেসে।
 
 কারুর চোখে দুঃখ যেনো শিশিরকণা
 মনের ভেতর সহজ কথার গল্প বোনা,
 এক নিমেষে হঠাৎ উধাও গানের পাখি
 ফুটছে এখন ভোরের আলো বলবো ডাকি।
……………………………………………
 
বেশ করেছেন
 
বয়স ভারে দিব্যি আসে হাড় মড়মড়ি রোগ
তাইতো বোধহয় রগের সাথে
হাড়ের যোগ বিয়োগ।
 
ধুম ধাড়াক্কা শব্দ বাজীর যতই থাক নিষেধাজ্ঞা
দাদা দিদি ভাইয়েরা সব
যুৎসই সব প্রজ্ঞা।
 
নির্বিরোধি ফানুস উড়ছে অনুকূলের হাওয়ায়
তফাৎ তেমন দেখেন না কেউ
অমৃতে বিষ খাওয়ায়।
 
যেমন বলেন করবেন না তা ঠিকাদারই জানে
দুধে জলের নিদেন যেমন
অলঙ্কারে খাদ জানে।
 
এসব আমার কথা নয় নিদান বিদ্বজনের
হাত ঘোরালেই স্বর্গ পাবেন
যেমন আলো অন্ধ জনের।
 
পণ করেছেন বেশ করেছেন হাতে তুলেছেন তর্জনী
কোটি টাকার ঋণের গল্প,
বাজিয়ে গান খঞ্জনী।
……………………………………………
 
বর্ণময়
 
ইকড়ি মিকড়ি কথা বন্ধ জানতো গল্পের গরু
বৃষ্টি ফোঁটা কান্নাছিল বেজেছিল ডম্বরু!
আচ্ছা রকম ভালোবাসা গরুর লেজে ফুল
এক বার খুকু বলেনি এইটে আমার ভুল।
 
শ্রীমুখে কথা বর্ণময় হাজার খানেক পদ্য
গদ্য আছে  হরদম পড়ে বোকার বেহদ্দ।
ছন্দের ছোলা খুঁটে খায় পরিযায়ী সব পক্ষী
কতটা মাটি কতটা খাঁটি এসব মেলানো ঝক্কি।
 
জ্বর জাড়ি এসব নেই কি করে ডাক্তার বদ্যি
ঈশ্বর জানে বাঁচার মানে উন্নয়নেই জোর দিই।
বুদ্ধুরা সব বোঝে না ছাই ঋণ করে ঘি জোগাচ্ছে,
উল্টোপাল্টা খবরওলা আজকাল তো ভোগাচ্ছে।
 
যা কিছু সব রাম জানে কষ্ট তবুও অনুমানে
খাদ্যাখাদ্যে রকম ফের হাত ধরেছে হনুমানে।
……………………………………………
 
দাদু
 
দাদু ভাবে লাঠির সঙ্গে
ওষুধ কোথায় থাকে
গুল মেরে সব ওষুধ বেচে
চুল গজাবে টাকে।
 
পুজো আসুক নাই বা আসুক
কাঠি পড়লে ঢাকে
ক্ষান্ত পিসি চেঁচিয়ে বলে
ডাক না দুগগা মাকে।
 
দাদুর আবার রাগের বাহার
রেগে ওঠেন তেড়ে
অসময়ে ঢাক কে বাজায়
নবু' ব্যাটা ধেড়ে।
 
আন, ধরে আন ব্যাটাকে
সঙ্গে আনবি ঢাক,
এই বরষায়ও বেজায় গরম
আমার ঘিলু টাক।
 
তুই ভেবেছিস শ্রাবন মাসে
রঙের খেলা দোল
সামলে চলিস ঢুলির ব্যাটা
ঢালবো মাথায় ঘোল।
……………………………………………
 
হনুমান
 
একাল সেকাল যেকাল বলো
মাকাল ছিল সব কালে,
কালো মুখো ওই হনুমান
দাঁত দেখাচ্ছে মগ ডালে।
 
পেয়ারাগুলো সবই সাবাড়
একটাও নেই আম গাছে,
দলবলে তো মিটিং মিছিল   
কি দাম আছে তার কাছে।
 
ইচ্ছে মতো দুলতে গিয়ে
পড়লো ঝপাৎ আট চালে,
তাতেই ভুলো চমকে ডাকে
সপাটে চড় তার গালে।
 
ত্রেতা যুগের কেরামতি
হচ্ছে অনুমান,
সবার আমি পূর্ব পুরুষ
আমিই হনুমান।
……………………………………………
 
ঘোড়ার ডিম
 
রাস্তা জুড়ে পড়েই ছিল
একটা ঘোড়ার ডিম,
তাই না দেখে বেজায় খুশি
ঝুপড়ি পাড়ের ভীম।
 
হঠাৎ দেখে ডিমটা গড়ায়
যাচ্ছে কোথায় ঠিক,
থেকে থেকে নাচন কোঁদন
শূন্যে দিক বিদিক।
 
হঠাৎ আওয়াজ দুম ফটাস
শুধুই প্রতিবিম্ব,
কেমন তরো ব্যাপার স্যাপার
কোথায় অশ্বডিম্ব !
 
তার পরেতে চালু হলো
কথায় কথায় ভীম,
এবং আরও অনেক কিছু
সঙ্গে ঘোড়ার ডিম।
……………………………………………
 
মাউস
 
আঃ ছাড়ো না, লক্ষ্মী সোনা
লাগছে বড় ল্যাজে
হলোই বা নাম মাউস আমার
তফাত আমার সাজে।
 
যেমন করে ওড়াও ঘুড়ি
ইচ্ছে মতো আকাশে
যেমন করে উড়ছে পাখি
ভাসিয়ে ডানা বাতাসে।
 
যেমন করে সাজাও বাগান
রঙ ঢেলে দাও ফুলেতে
কম্পিউটারে মজার খেলায়
ভুল কোরো না ভুলেতে।
 
এবার একটু আস্তে টানো
লেজটা আমার সরু,
এবার সবুজে ভরিয়ে দাও
যেথায় যত মরু।
……………………………………………
 
কাকস্য পরিবেদনা
 
কাক তাড়ুয়ার পিঠে বসে
পণ্ডিত প্রবর কাক
ইন্টারনেটে খবর রাখেন
কোথায় কখন ডাক।
 
এত্তো বড়ো বংশ তাদের
বিশ্ব জোড়া সংসার,
গলার স্বরে কিন্তু আছে- তবে
এমন পাকা রঙ বা কার!
 
নাছোড়বান্দা কোকিল ব্যাটা
পাল্লা দিচ্ছে সত্যি হে
ওদের রঙটা দাও না পাল্টে
ডঃ কাকাস্য বৈদ্য যে !
 
ইদানীং সব ছোকরা কাক
পাড়ি দিচ্ছে শহরে
ওখানে ওরা বক্তিমে দ্যায়
নাম চওড়া বহরে।
 
গ্রাম গঞ্জের সংসার সব
আগলে আছে বুড়ো বুডি,
খাদ্যাভাব ? হোক কলরব
কা-কা রবে শব্দ জুড়ি।
 
এখন আর কেউ বলে না
আমরা তো আছি "কেঁদো না"
কাঁদার জন্য কাক তো চাই
"কাকস্য পরিবেদনা।"
……………………………………………
 
ঘনাদা
 
কবি ছিলেন ঘনাদা
লিখে ছিলেন কবিতা "গরু"
লেখেনি গলার দড়িটা
মোটা নাকি সরু।
 
কবিতায় সুর দিল মনাদা
চেয়ারে তাল দিয়ে "সাম্বা"
তাই শুনে এক কবি বিদুষী
লিখে ফেলে ছড়া এক "হাম্বা।"
 
বরিশালী দাদু বলে
"মাথাডা  খাইবা বলে
অনেক হইসে বাপ
এবার একটু থামবা"!
 
পচাদা রঙবাজ কম না
ছাড়ার পাত্র ওই যম না,
জেবরা ক্রশিং আঁকে দেয়ালে
লাল সাদা নীল হলুদ    
যা আসে নিজের খেয়ালে,
সাধে কি নীল রঙ
মেখেছিল শেয়ালে!
 
দাদু বলে ওরে ব্যাটা পচারে
গাঁটের পয়সাটা খসারে
তেল মেখে মোটা গোঁফে
হাত রাখ কাঁঠালে
 
আঠা দিয়ে পিঠে সাঁটে পোস্টার
বুদ্ধিতে নেই ব্যাটা মোষটার

বেঁধে রাখ ভালো করে,   

ঘনাদার খাটালে।


No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.