রাসু বড়ুয়া’র ছড়া

 
পৃথিবী
 
তোর সাজানো মাটির ভিটায় আমার ঘরখানি
সেই ঘরেতে সুখের মায়ায় টানছি দুখের ঘানি।
দুঃখ-ব্যথা দিচ্ছি তোমায় মহাসুখের জন্য
চতুর্পাশে গেঁথে রাখি বিষাক্ত সব পণ্য।
 
পাহাড়-মাটি-বনজঙ্গল নদী-সাগর-পানি
সবকিছু আজ দখল করায় দূষণ হচ্ছে জানি।
প্রাণ বাঁচাতে যেই গাছপালা যোগান দেয় অক্সিজেন
কেটেকুটে করছি উজাড় কেমন সিটিজেন।
 
ধুকে ধুকে মরিস রে তুই, নিরব আহাজারী
বুক ফাটে তোর মুখ ফাটে না বুঝতে সবই পারি।
তবুও তুই বিলিয়ে দিস তোর যা আছে সব-
রাতে চাঁদের আলোও দিস দিনে চমক রবি।
 
আলো বাতাস নিচ্ছি যত অসীম দয়ার দান
তোর ইচ্ছাতেই সবকিছু বাঁচিয়ে রাখিস প্রাণ।
সুযোগ পেলেই ভুলি তোমার অশেষ দানের কথা
সৃষ্টির সেরা মানবজাতির বিলীন মানবতা।
 
প্রায়শ্চিত্ত করতে গিয়ে বন্দি নিজের ঘরে
মানুষ ছাড়া সকল প্রাণী আনন্দোল্লাস করে।
গাছপালারা হাসছে দেখো সজীব বাতাস পেয়ে
আমরা হলাম ধরাশায়ী খবর গেছে ছেয়ে।
 
আমায় ঘরে বন্দি রেখে তুই কি আছিস সুখে
পৃথিবী, বল না দেখি- হাতটি রেখে বুকে?
……………………………………………
 
প্রাণঘাতী করোনা
 
এই করো না, ওই করো না
আতঙ্কে দিন কাটছে সবার,
মানছে 'জন নির্দেশনা
আছে কিন্তু ভেবে দেখার।
 
উন্নত সব রাষ্ট্র যেথায়
গৃহকোণে বন্দি হলো,
কোন সাহসে আমরা সেথায়
বুক ফুলিয়ে হাঁটছি বলো?
 
ইতোমধ্যেই জেনে গেছি
বিশ্ব গিয়ে ঠেকছে কোথায়,
দুঃসময়টা পার করি আজ
হেলাফেলায় না ভেবে হায়!
 
নিজকে নিজে রক্ষা করো
অব্যবস্থায় কেউ মরো না,
প্রার্থনা হোক, দূর হয়ে যাক
প্রাণঘাতী এই করোনা।
……………………………………………
 
করোনা' সচেতনতার ছড়া
 
নিয়ম মেনে হাত ধোয়া চাই
কেউ যাব না বাইরে,
করোনার এই মহা ঔষধ
এমনটি আর নাইরে।
 
সর্দি কাশি জ্বর হলে আজ
থাকব কোরেন্টিনে,
ভিটামিন 'সি' খাব বেশি
দুঃসময়ের দিনে।
 
হোম কোরেন্টিন- বন্দী জীবন
যতই বলি কষ্ট,
মানলে নিয়ম এই করোনার
জীবানু হয় নষ্ট।
 
ধরাধরি কোলাকুলি
হবে না হ্যান্ডসেক,
সামাজিক দূরত্ব মেনে
করব ওভারটেক।
 
যাওয়া-আসা থাক না 'দিন
হোক সে আপনজন,
চোখ নাক মুখে হাত দেব না
থাকব সচেতন।
 
ভাল থাকার নির্দেশনা
আসুন মেনে চলি,
বেঁচে থাকলে পরে না হয়
অভাব সকল বলি।
 
গুজবে কেউ কান দেব না
পারলে ঠেকাই এসব,
আতংকিত না হলে পর
বিলীন হবে সে সব।
 
যুগেযুগে মহামারী
আসবে আবার যাবে,
প্রার্থনা হোক, যে যার মতে
সবাই রক্ষা পাবে।
 
হাসিখুশি থাকব সবাই
থাকব না কেউ ভয়ে,
আসবে সুদিন, কাটবে আঁধার
করোনাকে জয়ে।
……………………………………………
 
করোনাকে জয়ে
 
আজকে খোকার মন ভালো নেই
মন বসে না পড়ায়,
বসে আছে মুখ করে ভার
খবরটা দূর গড়ায়।
 
নিজ ঘরে আজ বন্ধী জীবন
এইভাবে কি চলে?
এইভাবে ঠিক চলতে হবে
বাঁচতে হবে বলে।
 
তাইতো খোকা শান্ত মনে
সময় কাটায় ঘরে,
ভালো মন্দ রাখছে খবর
অন্যেরা কী করে।
 
মরছে মানুষ দেশে দেশে
শুনলে কাঁদে মন,
সবাই মিলে রুখবে ঠিকই
গোনে আশায় ক্ষণ।
 
ক্ষণে ক্ষণে দিন কেটে যায়
যাচ্ছে সময় বয়ে,
আসবে সুদিন, কাটবে আঁধার
করোনাকে জয়ে।
 
নিয়ম মেনে চললে বুঝি
সুরক্ষিত তবে,
বিশ্বজগৎ একদিন আবার
মুখরিত হবে।
……………………………………………
 
কুপোকাত
 
ছোট্ট একটা চাকরি আর
যৎসামান্য মাইনে,
খেয়ে পরে এইতো আছি
বেশি কিছু চাইনে।
 
কপাল দোষে ভাগ্য আমার
কষ্ট দিয়ে ঢাকা,
জীবনযুদ্ধে পেটের দায়ে
শহরে আজ থাকা।
 
বাড়তি একটু আয় রোজগার
সাহস যোগায় মনে,
তাইতো সময় ব্যয় করি
'টা টিউশনে।
 
চারজনের এক ছোট্ট সংসার
ছিলাম হাসিখুশি,
সুখেদুখে মিলেমিশে
সব- নিতাম পুষি।
 
চলন বলন যেই আবরণ
বলতো সবাই সুখী,
সত্যিও তাই ছিলাম ভালো
ছিলাম নাতো দুখি।
 
ছকে বাধা ছিলই জীবন
চলি হিসেব কষে,
ভাল থাকা যায় কীভাবে
শুধুই ভাবি বসে।
 
শক্তিশালী অনুজীব এক
কড়া নাড়ে দোরে,
মুহূর্তে নেই বিকল্প
তাড়াবে কোন্ জোরে।
 
ঘরের বাইরে হবে না বের
করলো ধারা জারি,
মধ্যবিত্তের সংসারে
টিকতে কি আর পারি?
 
দিনের পরে যাচ্ছে যে দিন
রাতের পরে রাত,
লকডাউনের গ্যাঁড়াকলে
হলাম কুপোকাত!
……………………………………………
 
দানব একটা আসলো যেন
 
মা'কে বলছি, শোন বাবাও-
আর যারা তা শুনতে চাও শুনতে পারো,
বলার ইচ্ছে অনেক কিছুই বলবো আরো।
 
কাটছে আমার 'দিন ধরে
আলসেমিতে বন্দি ঘরে বিদ্যালয়ও বন্ধ,
মনের ভেতর আবোল তাবোল চলছে নানান ধন্ধ।
 
লাগছে কেমন সবকিছু পর
এমন দিনে নতুন বছর পাইনি নতুন ড্রেস,
খুশির আমেজ কেড়ে নিলে মন কি থাকে ফ্রেশ?
 
এই সময়ে মনের মতো
জন্মদিনটা পালন হতো- কী আনন্দ বাসায়!
সবাই কেমন মজা পেতাম রাজ' দুষ্টু হাসায়।
 
সবকিছু আজ এলোমেলো
পড়াশোনাও নিয়ে গেলো, নিচ্ছে যে প্রাণ কেড়ে,
করোনার এক ভাইরাস নাকি যাচ্ছে অনেক বেড়ে!
 
দানব একটা আসলো যেন-
আচ্ছা, এতো দুষ্টু কেন ভাইরাস কোবিড-নাইনটিন,
সবাই মিলে চেষ্টা করি আসুক যেনো ফাইন দিন।
……………………………………………
 
পোড়াকপাল
 
বাড়তি একটু সুখের আশায়
এই শহরে আসা,
ভালোবাসার ছোট্ট নীড়ে
থাকতো কাঁদা হাসা।
 
দুখে মোড়া সংসারে
সুখের রেখা অল্প,
বাঁচতে গিয়ে শুরু করি
নতুন জীবন গল্প।
 
হোমমেইড যত খাবার আইটেম
গিন্নীর কাঁধে নিলো,
সাপ্লাই করার দায়িত্বটা
আমার উপর ছিলো।
 
মন্দ না তো, চলছিলো বেশ
কাস্টমারও বাড়ে,
স্বপ্ন দেখি- সুখের তরী
ভিড়ছে আমার পাড়ে!
 
দিনে দিনে কাটতি বাড়ায়
বাড়াই লোকবল,
পরিধিও বাড়তে থাকে
মুছাই চোখের জল।
 
অদৃশ্য এক ভাইরাস এসে
যেই না দিলো হানা,
মাথার উপর পড়লো তখন
ভেঙে আকাশ খানা!
 
চতুর্দিকে দেখছি আঁধার
বন্ধ রুটিরুজি,
পূর্ণিমার চাঁদ লাগছে যেন-
ঝলসানো এক রুটি!
 
সইলো না সুখ বেশি আমার
ছিলাম জনম দুখি,
পোড়াকপাল ঘষছি দু'জন
বসে মুখোমুখি।
……………………………………………
 
বায়স্কোপ
 
নিচ্ছে কে আর দিচ্ছে রে ভাই
নেইতো বোঝার উপায়,
ত্রাণের প্যাকে হুমড়ি খেয়ে
যেভাবে হাত চুবায়।
 
ব্যস্ত ভীষণ সেল্ফিতে কেউ
আবার ফটোসেশন,
ক্ষেতের ফলন তুলতে ঘরে
পাক্কা অটোমেশন।
 
চোরে চোরে মাসতুতো ভাই
আঁটে ফন্দিফিকির,
তেলমারাতে ব্যস্ত কেউবা
বাঁচতে করে জিকির।
 
ছলচাতুরী করছে দেদার
যে যেভাবে পারে,
আখের গুছায় নিচ্ছে দেখো
কত চুপিসারে।
 
মজুতদারে আড়ত সাজায়
খাটতি দেখে পণ্যের।
সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে
পকেট হাতায় অন্যের।
 
আঙুল ফুলে হয় কলাগাছ
যায় কি তারে চেনা?
অভিযানে নামছে পুলিশ
প্রশাসন আর সেনা।
 
খাচ্ছে কেউবা পাচ্ছে না কেউ
ঘুরছে এপাশ ওপাশ,
কেউবা খাচ্ছে ঘোলা করে
ডাকছে কী সর্বনাশ।
 
বললে এক আর, চললে আর এক
হয় কি যথাবিহিত?
খাল কেটে ভাই আনলে কুমির
সামনে বিপদ নিহিত।
 
নিয়মনীতির নেই তো বালাই
নেই তো আশার বাণী,
নেগেটিভ সব দেখতে দেখতে
শুকায় বুকের পানি।
 
সতর্কতায় নিজ গন্ডিতে
বন্ধী জীবন খাতা,
করোনাকাল বায়স্কোপে
যাচ্ছে ঘুরে মাথা।
……………………………………………
 
হে করোনা, শোন- গুডবাই
 
বিশ্বজুড়ে মহামারী
কাঁপছে গোটা দুনিয়াদারী,
যার ভয়েতে এই তল্লাটে
বাঘ-মোষে জল খায় একঘাটে।
 
ছুটছে বেগে এই করোনা
বাইরে গিয়ে ভুল করো না,
কে শোনে ভাই কার কথা
ঘুরছে মানুষ যথাতথা।
 
সর্দি জ্বর কাশি হলে
করোনার- লক্ষণ বলে,
কাছ থেকে সব দূরে পালায়
যন্ত্রণা ভীষণ জ্বালায়।
 
বাড়ছে সংক্রমণ দিনকে দিন
সময় থাকতে ব্যবস্থা নিন,
ডাক্তার নার্স ব্রতী পেশায়
দূরত্ব হোক মেলামেশায়।
 
লকডাউনের মেয়াদ বাড়ায়
বন্দীদশা শহর পাড়ায়,
যাচ্ছে ভুলে দিন তারিখ বার
লিখে পড়ে কেউ করে পার।
 
চাল-ডাল-লবণ তেলও ফুরায়
দুশ্চিন্তা সব মাথায় ঘুরায়,
নেতা-কর্মী যে ত্রাণ বিলায়
কাঠখড় পোড়ে এসব মিলায়।
 
ব্যবসাপাতি লাটে উঠে
মানসম্মান সব ধুলায় লুটে,
নিম্মবিত্ত ত্রাণ কিছু পায়
মধ্যবিত্ত ডুবে লজ্জায়।
 
দিনে রাতে গুজব ছড়ায়
মোটা মাথায় বুদ্ধি গড়ায়,
কীভাবে বেশ লাভ করা যায়
মজুত করে সঙ্কট বাড়ায়।
 
সাধুজনে আখের গোছায়
ব্যস্ত থাকে বাধতে মোছায়,
গুদাম ভরায় ত্রাণের চালে
খাটের নীচে তেলও তালে!
 
গুটি কয়েকজনার মল-
সব অর্জন কি রসাতলে!
ঢেঁকি স্বর্গেও বাধবে বাড়া
সবাই মিলে করবো তাড়া।
 
বাঙালি এক বীরের জাতি
যুদ্ধ লড়াই নিত্য সাথী,
যুদ্ধ করেই জিতব সবাই
হে করোনা, শোন- গুডবাই।
……………………………………………
 
এক ইতিহাস লিখি
 
বিশ্বজুড়ে বিরাজমান করোনা আতংক
দিনে দিনে বাড়ছে শুধুই মৃত্যুহারের অংক।
জানিনা এর শেষটা কোথায়, কোথায় গিয়ে টেকে
কোন কারণে দিল স্রষ্টা এমন ভাগ্য এঁকে।
 
নেই থেমে নেই মৃত্যু মিছিল বেবাক বিশ্ব বন্দী
নিজের সাথে নিজেই করে বাঁচা-মরার সন্ধি।
ধনী-গরীব যাচ্ছেনা বাদ, ছোট কিংবা বড়
করোনার এই আক্রমণে হচ্ছে জড়সড়।
 
মারামারি হানাহানি যুদ্ধ বলে জানতাম
রোগের ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে কখনও কি থামতাম!
করোনা রোগ বলে দিলো সকল কিছুই মিথ্যে
নৈতিকতা- দিতে পারে শক্তি সাহস, জিততে।
 
এই যদি হয় মানবতা মিথ্যে সব অহংকার
আপন আলোয় পথ দেখাবে বিশ্ব মানবতার।
সব ভেদাভেদ ভুলে আসুন মানুষ হতে শিখি
নতুন আলোয় নতুন দিনের এক ইতিহাস লিখি।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.