শাহনাজ আক্তার’র কবিতা

 
মানুষ রুপি অমানুষ 
 
শহরের অলিতে গলিতে আছে কত অজাত,
মানুষের মতোই দেখতে মানুষের স্বজাত।
বন্ধু বনে এসে বিষ তীর বিধায় স্বপ্নে,
আবৃত মুখোশ খানিও খুলে যায় যত্নে।
 
প্রিয়জনের কাছে  করছে বিশ্বাস কত চুরি,
অন্তর আত্মা দেখে শত নাটক ভুরি ভুরি।
বিচিত্র মানুষ  অমানুষেরে খুজে নাহি পায়,
মানুষের মাঝেই লুকিয়ে তারা চেনা বড় দায়।
 
উপকারের নামে গাঁথে স্বীয় স্বার্থ মালা,
অধিষ্ঠ হয়না কভু খোলে ধ্রুব তালা।
মানুষ রুপি তারা অমানুষই সদা রয়
নিদারুন সত্য তবে উন্মোচন হয়।
..................................................
 
কোথাও কেউ নেই 
 
নিস্তব্ধ নগরী,চারিদিকে লাশের গন্ধ, 
প্রিয়জনহীন জীবন, সবকিছু বন্ধ।
ভালোবাসায় দূরত্ব, নেই স্নিগ্ধতা নেই মায়া,
অভিশপ্ত জেনেও রক্ষাকারীর ছায়া।
 
কোথাও কেউ নেই,শূন্য প্রসস্থ পথ,
যেনো মিছিল বিহীন মৃত্যুপুরীর রথ।
 
গৃহ বন্দী মানব সমাজ মহামারির ভয়ে,
আঁধার কেটে আসবে আলো বৈরি হাওয়া জয়ে।
কুলুপ আঁটা মুখ আর দস্তানায় ঢাকা হাত,
ভিন্ন প্রদেশ লাগে আর যায়না চেনা গোত্র জাত।
 
কোথাও কেউ নেই,কত ঝড় কত প্রলয়,
জনহীন বায়ুতে জন্মে শত সবুজ মলয়।
 
অভিশঙ্কায় হতবিহ্বল অন্তরাত্মার দল
প্রিয় বিয়োগে যায়না ছোয়া দেয়না জল।
আত্মার অস্তিত্ব নেই, নেই লোলুপ ব্যস্ততা,
তোরজোর প্রার্থনায় শুধুই চাওয়া সুস্থতা।
..................................................
 
তুমি আসবে বলে
 
হে প্রিয়, তুমি আসবে বলে,
কতশত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি।
তুমি আসবে বলে,
পড়শীর রটনায় কত রটেছি,
কত মন্ত্রনা কর্ণকুহরে নিয়েছি।
 
তুমি আসবে বলে, 
কাজল দিয়ে সাজিয়েছি দুনয়ন
বিনুনিতে জবা,হাতে পড়েছি কঙ্কন।
বসন্ত রঙা জামদানীর দেহ সাজে,
প্রতীক্ষার প্রহর গুনে মরি লাজে।
 
তুমি আসবে বলে,
সাজিয়েছি দ্বার কৃষ্ণচূড়া ফুলে, 
চন্দ্র তারার আকাশ থেকে
এনেছি আলো অন্দরমহলে।
 
তুমি আসবে বলে, 
বকুল মালা গাঁথি রাত ভোরে
মন আমার থাকতে চায় 
প্রিয় তোমারই বাহুডোরে।
 
এসো মোর প্রিয়তমেষু 
যুথি বনে ভাব হবে,
হবে প্রেম আলাপন।
কত প্রতীক্ষার প্রহর গুনি,
ছবি আঁকি তারই সারাক্ষণ।
..................................................
 
কবিতাঃক্ষুদ্র কিন্তু তুচ্ছ নয়
 
মেহনতে সুখ হয় কোনো এক কালে,
অলস জাতিরে স্রষ্টা নয়কো পালে।
রিযিকের ভার আছে তার হাতে ভাই,
কর্মঠ বিনে সুখী কেহ হয় নাই।
 
ক্ষুদ্র কিন্তু তুচ্ছ নহে পিপীলিকা দল,
সারি বেধে চলে আর একতাই বল।
কর্মনিষ্ঠ কি?দেখো খানিক গিয়ে,
খাটুনিতে দানা ফলে সুখ জলে দিয়ে।
 
শৃঙ্খলা শিখি তব পিপীলিকা থেকে,
একতাই বল সদা মানে তারা ডেকে।
সঞ্চয় করে দুর্দিনেরও তরে
হাত নাহি পাতা লাগে দুর্ভোগে পরে।
 
মনুষ্য জাতি শিখায় অলস চলা,
দুর্নীতি ঘুষ সাথে মিথ্যেও বলা।
ক্ষুদ্র পিপড়া থেকে তাই শিখো ভাই,
আলস্য ফলে কভু দারিদ্র্য মোছে নাই।
..................................................
 
স্বরণে মধুকবি   
 
আহা মধুসূদন তুমি করিয়াছিলে ভুল,
বঙ্গ নাহি বিলেত তরে রচিয়া ছিলে ফুল।
বঙ্গতে জন্মে মজিলে বাবুদের তরে,
জাহ্নবী যে কত দয়ার বুঝিলে শত পরে।
 
জন্মিলে বঙ্গে আর গেলে ছাড়িয়া নীড়,
কত প্রহর গুনিয়া কাঁদে কপোতাক্ষ তীর।
বঞ্চনার পর ছাড়িয়া বিলেতের  টান,
মহাকাব্য আর সনেট তুমি করিলে দান।
 
ভুল খানি শুধরে স্বদেশে  বাধিলে ঘর, 
মেঘনাদ বধ রচিলে তুমি শুধিতে ঋণ ভর।
ভান্ডারে মোদের যে বিবিধ রতন আছে,
শর্মিষ্ঠা পদ্মাবতী তুমি হে দিলে পাছে।
 
তুমি মধুসূদন রচিলে কত ইতিহাস, 
সৃষ্টি তোমা বঙ্গে করে পাঠক মনে বাস।
..................................................
 
অবেলা
 
চক্ষু তুলিয়া, হা করিয়া, হাত পাতিয়া
কত অনুনয় বিনয়, 
জরাজীর্ণ দেহখানি তবুও না কেহ 
বক্ষে তুলিয়া লয়।
 
যৌবন গেলো কুকর্মের স্রোতে
করিয়াছি পাপেরে সন্ধি, 
ভাবিনাই তপ্ত রক্তের দেহ খানি 
হইবে ক্ষুদ্র বিছানায় বন্দি।
 
পত্নি আছে রাজরানীর ন্যায়
পুত্র যুগল সদা রাজপুত্র,
অভাব বুঝিতে দেইনাই কভু
এখন তাহারা রাখেনা যোগসূত্র। 
 
কত অসহায়ের বক্ষ ছেদিয়া 
মারিয়া ছিলাম গরিবের হক,
স্বজনরা ভয়ে তোষামোদ করিত
এখন কাটে অবহেলার ছক।
 
কই গেলো আমার হুঙ্কার,অর্থবিত্ত
কই আমার নীড়,
তদবির করিবেনা মরণে কেহ
শেষ যাত্রায় হইবেনা ভীড়।
 
যাহাদের লাগি করিয়াছি পাপ 
তাহাদের দেখা আজ নাই,
নিজের পাপের জবাব নিজেরে দিতে হইবে 
বেলা থাকিতে শুধরাও ভাই।
..................................................
 
আষাঢ়ের কথন
 
এক গুচ্ছ কদম্বের ফুলে,
ক্ষিপ্র আষাঢ়ের আগমনী বার্তা দুলে।
জল ধারায় তব গন্ধ পাই,
বর্ষার অতলে আমি আজ লুটায়ে যাই।
 
ভেজা মাটির গন্ধে আজ সব,
নিথর প্রাণীকুল নাচের সাথে করে রব।
সবার লাগি সুখের নাহি হয়,
আসমানীরা করে উদর চিত্তের ভয়।
 
চাষার তবে খুশির দোলা লাগে,
বর্ষন হলেই যেনো জোয়াল নিয়ে ভাগে।
আষাঢ়ে চলে নয়া কুঁড়ির মেলা,
আম্রের ঘ্রাণে আবাল বৃদ্ধের খেলা।
 
নব যুগল করে প্রনয় ঢঙ,
বিধ্বস্ত কত প্রাণী আজ সাজে সঙ।
লক্ষী আর অনিষ্টের ধামে,
নিয়মেই আষাঢ় আসে আষাঢ় নাহি থামে।
..................................................
 
স্বর্গের পথ
 
ওরে বর্ণচোরা! 
আর কত মাখবি রঙ?
লোক দেখনো মানবতায়
আর কত সাজবি সঙ?
 
ঘরে তোর ক্লিষ্ট মা
অনাহারে মরে,
বাইরে তোর মানবতা
নয়ন বেয়ে পরে।
 
ওরে চাটুকার! 
স্বর্গ যে তোর হাতের কাছে,
মিথ্যা মায়ার আদলে 
হারাবি যেনো তাও পাছে।
 
কর্মে তুই স্বর্গ পাবি
মর্ত নয়তো দূরে,
শর্ত ছাড়া রত্ন মিলে
পূণ্য কর আপন সুরে।
 
মুরিদ তোর পিছেই রবে
ভন্ড ভীরের দলে,
ঘরের মাঝেই স্বর্গ তোর
মায়ের পদতলে
 ..................................................
 
চিরবিদায় 
 
কত কাল পরে যে হাটছি গ্রামের সড়কটায়
কত যে পাল্টে গিয়েছে সব, দাঁড়িয়ে দেখছি ঠায়।
দেখছিনা চেনা মুখগুলি, নতুন লাগে যেমন
কেউ বলেনা একবারও "কি হে আছেন কেমন"?
 
এসেছি আমার বাগিচায় তাকাই তরুর তরে
বড়ই গাছও ঠিকঠাক কাটে নাই কেউ পরে।
সাধে যাই বাড়ির ভিতর ব্যগ্র হয়ে ডাকি হায় 
কেউ চেয়ে দেখে না আমায় হাসিখুশি তারা ঠায়।
 
মনে পড়ে বছর দশেক আগে যাই তব চলে
আমাকে করিয়েছে গোসল বড়ই পাতার জলে।
কিভাবে তারা বলবে কথা, ভুলবেই তো সবই
কারন এখন আমি ছবি শুধুই রঙের ছবি।
..................................................
 
নারীর চিৎকার 
 
শুনতে কি পাও?
কখনো কোনো বিমর্ষ আর্তনাদ
শত আভিসার পরে 
দিয়েছো কি তারে কভু সাধুবাদ? 
 
কত কষ্ট, কত নিঃশব্দ আহাজারি 
তবুও নেই কোনো অভিযোগ, 
আবহমান কালের নারী
রিক্ততায় করেনা আত্মভোগ।
 
নারী লক্ষী, নারী দেবী, নারী দাসী
অসংগতিতেও জায়া পতি হয়ে থাকতে হয়।
আছে নারীর বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি 
নারীর নিজস্ব নেই কোনো আলয়।
 
নারীর স্ব-নীড়ের বড্ড অভাব
কত তাচ্ছিল্য, কত ধিক্কার।
দিন শেষে আমি নারী 
নিরবতাই আমার বড় চিৎকার।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.