সুমন আহমেদ’র কবিতা

বৈশাখ বরণ
 
অম্বরের বুকে পশরা সাজিয়ে বসে আছে তপ্ত রোদ
আর জমিনের বুকে রোদেলা খরা,
হাহাকার প্রকৃতির প্রাণ,হয়না মনের আদান প্রদান
বিষাদময় ক্লান্ত এই ধরা।
 
দুহাত বারিয়ে আগমনী বার্তা জানিয়ে নববধূর নব সাজে
ঘুমটার আড়াল হতে বুকে জড়াতে ইশারাতে কাছে ডাকছে
পহেলা বৈশাখ।
 
প্রকৃতি আর চায়না,এই বিষাদময় প্রাণহীন
ক্লান্ত চৈত্র পোড়া রোদ্দুর,
বসন্তকে বিদায় জানিয়ে,চাই গ্রীস্মের হাত ধরতে।
 
চৈত্রের শীতল পবনহীন, সবুজ শ্যামল প্রকৃতি সাজ বিহীন,
চাইনা এমন বিষাদমর অশান্তির জীবন কে,
তাইতো আবার চাই বৈশাখকে, দু'হাত বারিয়ে
বরণ করে নিতে।
--------------------------------------------------
 
আমার অপেক্ষা সীমাহীন
 
তোমরা কি কেউ দেখেছ আমার সুমিতাকে ?
বল না কেউ দেখেছ কি না?
কি হল, কিছু বলছ না কেন?
 
জানো আজ কতদিন হয়ে গেল দেখিনা আমার
সুমিতার চাঁদ বদনী মুখ,
যেন শতবছর কেটে গেল,সবকিছু এলোমেলো
পাইনা আজ এক বিন্দু সুখ।
রোজ প্রভাতে ক্লান্ত চাওয়ার অবয়ব ভেদ করে
রাত শেষে উদয় হতো প্রতিক্ষাকাতর রবি,
সেই রবির মিষ্টি কিরণ গায়ে মেখে সাতসকালে ছিল
সুমিতার পথচলা।
একটি রাত ছিল শতাব্দী যোগ, প্রহর যেন কাটেনা
তবুও অপেক্ষা।
কখন রাত শেষে উদয় হবে রবি,
কখন ছোটে গিয়ে দেখবো আমার সুমিতার জীবন্ত ছবি।
 
আজ কত প্রভাত কেটে গেল দেখিনা সুমিতার
দুধে আলতা চরণের ছোঁয়া লেগে থাকা সেই পথ,আর পথচলা,
আজ আর শুনতে পাইনা সুমিতার
আলতা রাঙা দু'চরণে জরিয়ে থাকা
সুরে মাতাল করা পায়েলের ধনি।
 
একটা রাত অপেক্ষায় থাকে
কখন দিনশেষে এই অবনীর বুকে নেমে আসবে কালো আঁধার,
আর আঁধার অপেক্ষায় থাকে
কখন জোৎস্না ছড়িয়ে রাতের বুকে উদয় হবে পূর্নিমার শশী।
একটি দিন অপেক্ষায় থাকে
কখন রাত শেষে অবসান ঘটবে অপেক্ষার
এই পৃথ্বীর বুকে আগমন হবে রক্তিম এক তপন।
 
তোমরা কি জানো আমার অপেক্ষা কতখানি?
তোমরা কেউ জানো না?
আমার অপেক্ষা সীমাহীন,
যার শুরু আছে শেষ নেই।
--------------------------------------------------
 
এক আকাশ ভালোবাসা
 
প্রিয়তমা- স্বর্গ লাভের জন্য নয়,
শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য।
এই পৃথিবীর আকাশ বাতাস, ফুল পাখি
চন্দ্র সূর্য, পাহাড়ি ঝরনা ধারা, রাতের জোনাক তারা,
শেষ বিকেলের ছায়া, প্রকৃতির অপরূপ মায়া
সবকিছু ছিন্ন করে
আজ আমি চলেছি মরণ যাত্রায়।
 
যেখানে থাকবে আমার প্রিয়তমার শিমাহীন
পরিশুদ্ধ এক আকাশ ভালোবাসা।
 
আমি চলেছি সেই পথে
যেখানে থাকবেনা হারানোর ভয়,
অনন্তকাল বেঁচে থাকবে আমার ভালোবাসা।
 
আহত পাখিটা ক্ষত বৃক্ষত আর হবেনা
হবেনা রক্তে রঞ্জিত,
ইতিহাসের পাতায় থাকবেনা লিখা
পরাজিত ভালোবাসা।
 
প্রিয়তমা- আমি চায়না রাজার রাজ সিংহাসন,
হীরা মুক্তা, ধনদৌলুত, দূর আকাশের চাঁদ
শুধু চায় শিমাহীন বিশুদ্ধ এক আকাশ ভালোবাসা।
যেই ভালোবাসায় থাকবেনা ছলনার ছল,
থাকবে শুধু অতল সাগরের মতো ভালোবাসা অতল।
--------------------------------------------------
 
পৃথ্বী
 
পৃথ্বী
আমি থাকবো না রে...
তোর মায়া জালে আর বন্দী হয়ে
আমি থাকবো না,
আমি পায়না খুজে তোর বিশালতা আকাশের বুকে
আজ একটু সুখের ছায়া,
আমাকে বারবার পুড়ে পুড়ে ছায় করে
তোর চৈত্রের পুড়া রোদ্দুর।
 
পৃথ্বী
তোর মাঝে হাজার বছর বাঁচাতে চেয়েছিলাম
তোর আকাশে সুখের বৃষ্টি হয়ে,
আজ আমি বৃষ্টি হয়েছি ঠিকই
তবে সুখের বৃষ্টি নয়
অবিরাম দুই নয়নের অঝরে ঝরে যাওয়া বৃষ্টি।
 
পৃথ্বী
ভেবেছিলাম তোর রাতের আকাশে চন্দ্রমা হব
জোৎস্নার আলোতে ভরিয়ে দেব তোর সাড়া অবয়ব,
আমি পারলাম না, রে... চন্দ্রমা হতে
আজ আমি তোর জীবনে হয়েছি অমাবশ্যার ঘনান্ধকার।
 
আমি থাকবো না, রে... আমি থাকবো না,
তোর মায়া জালে আর বন্দী হয়ে।
--------------------------------------------------
 
সুমিতা আর নেই
 
কোথায় আছো সুমিতা?
ফাগুন যে আসিয়াছে ধরায়,
বিরহী মন যে তোমারই প্রতিক্ষায়।
আজ এই বসন্তের আগমনে
শুধু তোমাকেই পরে মনে,
কোথায় আছো লুকিয়ে তুমি কিসের অভিমানে।
 
মনে পরে সুমিতা?
তুমি আমি রোজ বিকেলে বসে থাকতাম
তিতাস পাড়ে হাতে রেখে হাত,
তখন মৃদু হাওয়ায় দোলিত কাশফুল
সুখের উচ্ছ্বাসে ভাসতো তিতাসের বুকে ঢেউ।
নীলে ঘেরা আকাশের বুকে ছিল রঙধনুর সাতরঙ
পাখা মেলে উড়তো প্রজাপতি।
 
জানো সুমিতা?
আজকাল আর কাশফুল গুলো দোলে না
সুখের উচ্ছ্বাসে ঢেউ ভাসে না,
আকাশের বুকে নেই সাতরঙ
প্রজাপতি ক্লান্ত সে উড়তে পারে না।
সবকিছু কেন আজ এলোমেলো জানো সুমিতা?
তুমি নেই বলে!
 
আজও শেষ বিকেলে তিতাস পাড়ে বসে থাকি রোজ,
অবুঝ মন মানেনা বারণ, বারবার নেয় তোমার খুঁজ।
জানি তুমি আর আসবেনা ফিরিয়া, আমারও টানে,
তবুও তোমার অপেক্ষায় এই তিতাসের পানে।
 
অশ্রু ভেজা আঁখি নিয়ে কাশফুল জিজ্ঞেস করে
সুমিতা কেন আর আসে না,
অসহায় ঢেউ গুলো বারবার প্রশ্ন করে
সুমিতা কি আমায় আর ভালোবাসে না।
রঙধনু জান্তে চায় সুমিতা আছে কোথায়,
প্রজাপতি বুঝ মানে না, সুমিতাকে কয় রেখেছ লুকায়।
সুমিতা তুমিই বল, আমি কি,বলব?
আমি কি করে বলব সুমিতা আর নেই!
এই ধরণীর মায়া ছেড়ে চলে গেছে, না ফিরার দেশে,
নতুন কোনো ঠিকানায়, নাম না জানা এক পথের বাঁকে।
--------------------------------------------------
 
প্রতিক্ষা
 
প্রতিক্ষাকাতর চাতকের মতো দাঁড়িয়ে
শুধু তোমার প্রতিক্ষায়
হাতে নিয়ে বকুলের মালা,
তুমি আসবে বলে, কেটে যায় কত নিশি
মর্ম বেদনা বুকে নিয়ে
অবুঝ ফুল গুলো নিরবে ঝরে যায়
জড়াতে না পেরে তোমার গলা।
 
জীবনে ২৬টি বসন্ত পার করে, তোমারি প্রতিক্ষায়
আজ বৃক্ষের পাশে বৃক্ষের মতো
দাঁড়িয়ে আছি আমি,
প্রভাতে সূর্য উঠে, রাতের বুকে চাঁদ হাসে
শত প্রহর কেটে যায়, কত মুখ আসে যায়
ফিরে আসো না, তো, তুমি।
--------------------------------------------------
 
হে স্বাধীনতা
 
গভীর রজনীতে কাঁথা জরিয়ে
মায়ের কোলে শুয়ে থাকা খোকা
হাতে অশ্র নিয়ে বেরিয়ে গেল
আর ফিরলোনা মায়ের কোলে,
সেদিন পায়নি খোকার খন্ড খন্ড ছিন্ন ভিন্ন দেহ
শুধু পেয়েছিল জননী, খোকার শরীরের গন্ধ ভাসা
এক সাগর লাল রক্ত।
শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা?
 
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি, রাজ পথে পথে মিছিল
অবরোধ, কলকারখানায় ছিল ধর্মঘট,
ছালাম বরকতের মতো বীরের তাজা রক্তে
রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ।
সাদা কাপড় অঙ্গে জড়িয়েছিল হাজারও অবলা,
হয়েছে স্বামীহারা বিধবা।
শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা?
 
কত বোন হয়েছে হিংস্র দানবের শিকার
সন্তানের সমূহকে উল্ঙ্গ জননী
প্রকাশ্য দীবালোকে হয়েছে ধর্ষন,
থরথর করে আকাশ কেপেঁছে
অসহায় জননীর হাহাকার, বোনের আর্তনাদে।
জালিম নির্দয় পাষণ্ড হায়েনার নির্মম আঘাতে,
অজস্র রক্ত আর অশ্রুতে ভিজেছে বাংলার মাটি।
শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা?
--------------------------------------------------
 
তুমি ছাড়া
 
তুমি এলে চাঁদ আসে, হাসে জোনাক তারা,
তুমি এলে বসন্ত আসে কোকিল সুখে আত্মহারা।
তুমি এলে নদীর বুকে বয়ে যায়
চলমান স্রোতের ধারা,
তুমি থাকলে আঁধার রাতে
জোছনার আলোতে চাঁদ দেয় পাহারা।
 
তুমি ফিরে এলে যেন বসন্ত ফিরে এলো,
তোমার সাজে প্রকৃতি সাজে
আকাশের রঙধনুর সাত রঙে রমণীয় সাজ।
তুমি ছিলেনা তাই প্রকৃতি সাজেনি,
বসন্তের কোকিল পাইনি সুর
গাইতে ভালোবাসার গান।
তুমি হাসলে এই ধরণী হাসে
পূব আকাশে উদয় হয় ভোরের রবি,
তোমার কথা ভাবতে গেলে
আবেগে হয় আমি উদাস কবি।
 
তুমি কাঁদলে আকাশ কাঁদে বাতাস কাঁদে
ব্যদনার্ত বুকে নিয়ে নিবে যায় রাতের জোনাক তারা,
প্রভাতে ফুটে না ফুল,  পাখি গায় না গান,
প্রকৃতি সাজেনা সাজ, তুমি ছাড়া।
--------------------------------------------------
 
শুধু আমি নেই
 
পৃথ্বী আজ আছি আমি তোর নীল অবনীর  নিচে,
শুধু আমার ঠিকানা বদল হয়েছে।
আজও পরে আছে আমার স্মৃতির পাহাড়
সেই পুরোনো ঠিকানায়।
যেখানে আছে আমার স্বর্গ।
দশ মাস দশ দিন গর্ভে রেখে
আকাশ কাপানো প্রশব বেদনার চিৎকার সয়ে,
মিথ্যুর যন্ত্রণা ভোগ করে, শত কষ্ট উপেক্ষা করে
দশ মাস দশদিন গর্ভে রেখে জম্ম দেওয়া,
যার পায়ের নিচে আমার বেহেস্ত,সেই জননী।
 
সেই ছোট্ট বেলা থেকে যে শিখিয়েছে।
সঠিক পথে চলবে, সবাই তোমায় ভালো বলবে,
কারোও ক্ষতি করোনা, অন্যের জিনিস ধরো না।
দুষ্টুমি করলে শুনতে হতো উচ্চ সুরে চোখ রাঙানো ভাষন,
মানুষের মতো মানুষ হবে ছিলো বাবার কড়া শাষন।
 
বন্ধুর মতো বড় ভাই ছিল দূর প্রবাসে,
অতি আদরের ছোট ভাইটি ছিল পাশে।
বড় আদুরীনি সোহাগীনি একমাত্র
ছিল ছোট্ট একটি বোন,
ভাইয়া ভাইয়া বলে সারাক্ষণ করিত আদরের জ্বালাতন।
 
ছিলো আমার বন্ধুবান্ধব বড় আপনজন,
আকাশের বিশালতার মতো ছিল তাদের মন।
এত ভালো বাসতো আমায় নিজের চেয়ো বেশি,
তাদের সুখের বিনিময়ে চাইতো আমার মুখের হাসি।
 
একটা ছিল মনের মানুষ,ছিল মনে আশা,
সারাক্ষণ ইচ্ছে করত,শুধু দেখবো এক নজর
এটাই ছিল ভালোবাসা।
 
আজও পরে আছে সবকিছু সেই পুরোনো ঠিকানায়,
হারিয়ে গেছে আমার সুখের স্বপ্ন প্রবাস নামের  দূর অজানায়।
--------------------------------------------------
 
প্রিয়সী
 
প্রিয়সী জানো আজ আমি তোমার থেকে কত শত মাইল দূরে,
আজ আমি দূর প্রবাসে, তুমি অচিনপুরে।
আজ ইচ্ছে করলেও দেখতে পারিনা
তোমার চাঁদ বদনী মুখে হাসি,
ইচ্ছে করলেও ছুটে গিয়ে বলতে পারিনা
তোমায় ভিশন ভালোবাসি।
 
জানো আজ আর শুনতে পায়না তোমার পায়েলের ধ্বনি,
পায়না দেখতে বাতাসে ভেসে যাওয়া রেশমি কালো কুন্তল।
জোড়া ঠোঁটের পরে থাকা ভাঁজ,
নববধূর লজ্জায় রাঙা লাজ।
তোমার কাজল কালো যুগল চোখ,
বড় সাধ জাগে আজ দেখি এক পলক।
বড় ইচ্ছে করে তোমার হাতে রাখতে আমার হাত
ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে তুমি নামের জোৎস্না ভরা চাঁদ,
 
কোথায় আছো প্রিয়সী?
কোন সে দূর কোন অজানায় কোন সে পথের বাঁকে,
আর কত অশ্রু ঝরালে,কতটা পথ পার হলে
আর কত রাত জাগলে পাবো তোমার দেখা।
কত প্রহর কেটে গেল, কতদিন চলে গেল
কত মাস হয়ে গেল, কত বছর জীবন থেকে হারিয়ে গেল,
জানো প্রিয়সী তুমি ছাড়া, যেন ছন্নছাড়া
আজ আমি কতটা এলোমেলো।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.