হাইডি_জোহান্না স্পাইরি : সৃজনানুবাদ_রেজা কারিম : পর্ব-৭


হাইডি ঘুম থেকে জেগে তার চারপাশে তাকিয়ে অবাক হলো। সে বড় একটি রুমে একটি উঁচু সাদা বিছানায় শুয়ে ছিল। রুমটি চেয়ার, টেবিল ও কাপবোর্ডে পরির্পর্ণ। সে মনে করতে পারে। এটা ফ্রাংফার্ট আর এটা তার শয়নকক্ষ। এক কিনারে বড় একটা পানি রাখার বোল। পানিতে পূর্ণ। সে হাতমুখ ধুয়ে নিজেকে পরিপাটী করলো। তারপর সে একটি উঁচু জানালার পাশে গেলো ও বাহিরটা দেখতে চেষ্টা করলো। সে শুধু দেয়াল ও আরও জানালাই দেখতে পারলো। এমনকি সে মাটি বা আকাশ কোনটাই দেখতে পারেনি।
 
তারা একটি বড় খাবার ঘরে তাদের সকালের নাশতা সারলো। তারপর বসার ঘরে গিয়ে জনাব ক্যান্ডিডেটের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। যখন তিনি এলেন, মিস রোমার তাকে হাইডি সম্পর্কে বললেন, “আমার মনে হয় আপনি তাকে ক্লারার সাথে পড়াতে পারবেন না।”
 
“আমি জানি না। তবে আমাদের কষ্ট করা উচিত। আমরা ‘এবিসি’ দিয়ে শুরু করবো।” বললেন জনাব ক্যান্ডিডেট।
 
হাইডি মনে করতো ‘এবিসি’ শেখা খুবই কঠিন। ঐদিন সে কিছুই শিখতে পারেনি।
 
বিকালে ক্লারা ঘুমাতে গেলো। মিস রোমারও তার রুমে ছিলেন। হাইডি একা ছিল।
“আমি বাইরে যাবো। আমি অবশ্যই সবুজ ঘাস ও গাছপালা দেখতে পাবো। এমনকি আমি পর্বতের দেখাও পেতে পারি।” হাইডি মনে মনে ভাবলো।
 
সে বড় দরজা পার হয়ে রাস্তায় নেমে এলো। চারিদিকে সবুজের কোন চিহ্নও নেই। সে এক রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তায় যেতে থাকলো। কিন্তু সবকিছুই একরকম মনে হয় তার কাছে। এক রাস্তার শেষে একটি চার্চের দিকে তার চোখ পড়ে।
 
“আমি চার্চের একেবারে উপরে উঠবো। এটা অনেক উঁচু। আমি সেখান থেকে শহরের সবকিছিু দেখতে পারবো।” সে ভাবলো।
 
যেই ভাবা সেই কাজ। একশটি পাথরের সিড়ি টপকে সে চার্চের একেবারে উপরে পৌঁছালো। সে নিচে তাকায়। সে অসংখ্য ছাদ দেখতে পায়। কোনো ঘাস, গাছ বা পর্বত সে দেখতে পায় না। মন খারাপ করে সে নিচে নেমে আসে।
 
তারপর চার্চের এককোনে একটি ছোট রুমের পাশে সে একটি বড় কালো বিড়াল দেখলো। একজন বয়স্ক লোক ঘর থেকে বের হলেন। “ঝুড়িতে ছয়টি ছানা আছে।” বৃদ্ধ লোকটি হাইডিকে বললেন।
হাইডি দেখলো। “ওহ্, এরা কতই না চমৎকার!”
 
“তুমি কি একটি ছানা নিতে চাও? আর তুমি চাইলে সবগুলোই নিতে পারো।” বৃদ্ধ লোকটি বললেন।
 
“ওহ। আমি কি এগুলো ক্লারার জন্য নিতে পারি? কিন্তু আমি এগুলো নিয়ে যাবো কিভাবে?”
“তুমি কোথায় থাকো?’ বৃদ্ধ লোকটি জিজ্ঞেস করলেন।
 
“জনাব সিম্যানের বাড়িতে। আপনি কি বাড়িটি চিনেন? এ বাড়ির দরজায় একটি কুকুরের মাথা আছে।”
 
“আমি এখানের সব বাড়িই চিনি। আমি এগুলো আগামিকাল নিয়ে যাবো।” বৃদ্ধ লোকটি বললেন।
হাইডি ফেরার পথ খুঁজে পাচ্ছিলো না। সবগুলো রাস্তা দেখতে একই রকম। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সে কুকুরের মাথাওয়ালা দরজাটি খুঁজে পেলো ও ভেতরে গেলো।
 
মিস রোমার ভয়ানক ক্ষিপ্ত ছিলেন।
“এডেলহাইডি, তুমি কোথায় ছিলে?” তিনি চেঁচালেন। “এখন প্রায় রাতের খাবারের সময়।  তুমি আর কখনই বাড়ি থেকে একা বের হবে না। তুমিতো কাইকে বলেও যাওনি। তুমি একটা দুষ্ট মেয়ে।”
 
পরদিন সকালে তারা যখন পড়ছিলো তখন সেবাসটিয়ান তাদের পড়ার কক্ষে প্রবেশ করলেন। তার হাতে ডাকা একটি বড় ঝুড়ি। তিনি বললেন,
“এটি মিস ক্লারার জন্য। একজন ব্যক্তি এটি তার জন্য এনেছেন।”
তিনি ঝুড়িটি নামালেন ও দূরে দাঁড়ালেন।
 
কয়েক মিনিট পর। বসার ঘরে কলিং বেল বেজে ওঠে। সেবাসটিয়ান দৌড়ে সেখানে চলে গেলেন। আর এদিকে পড়ার রুমটি বিড়াল ছানায় ভরে গেলো। তারা এখানে সেখানে দৌড়াতে লাফাতে লাগলো। আর হাইডি এদের পেছনে পেছনে দৌড়াচ্ছিল। ক্লারা খুশিতে হাসছিলো। জনাব ক্যান্ডিডেট অপ্রস্তুত  আর মিস রোমার চেয়ারে উঠে দাঁড়ালেন।
 
“এসব ভয়ংকর প্রাণীগুলো দূরে নিয়ে যাও।” তিনি চেঁচিয়ে ‍উঠলেন। তিনি বিড়ালগুলোকে প্রচন্ড ভয় পেলেন। এমনকি সবচে ছানাটিকেও।
 
সেবাসটিয়ান সবগুলো ছানা ঝুড়িতে রাখলেন। বিড়ালগুলোকে ধরে যাওয়ার আগে তিনি হাইডিকে বললেন,
“মিস, আমি এগুলোকে ‍সুন্দর একটা জায়গায় রেখে দিচ্ছি।
 
পড়ার রুমটি আবার নিরব হয়ে গেলো। কিন্তু পড়ার কথা কারো চিন্তায় নেই।
 
সন্ধ্যায় হাইড ক্লারার সাথে কথা বলতে এলো। সে তাকে চার্চের কথা বললো। বললো কালো বিড়াল ও বৃদ্ধ লোকটির কথা।
 
“তুমি অদ্ভুত একটা মেয়ে।” বললো ক্লারা।
“কেন তুমি চার্চের উপরে গিয়েছিলে? কেন তুমি একা একাই বাইরে গিয়েছিলে?”
 
“আমি ঘাস ও পর্বত দেখতে চেয়েছিলাম।” নরমস্বরে বললো হাইডি।
“এখানে কোনো পর্বত নেই কিন্তু কিছু কিছু ঘাস আছে। সম্ভবত বাবা তোমাকে এটা দেখাতে পারবেন যখন তিনি বাড়িতে আসবেন।” বললো ক্লারা।

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.