বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_মহরম পর্ব : ২১তম প্রবাহ

 
কয়েকদিন দিনরাত্রি অবিশ্রান্ত পর্যটন করিয়া-মারওয়ান প্রেরিত মদিনার কাসেদ্ দামেস্ক নগরে পৌঁছিল। এজিদ যথাসময়ে কাসেদের আগমন সংবাদ পাইলেন।-সভাভঙ্গ করিয়া কাসেদ্কে নির্জনে লইয়া গিয়া সমুদয় অবস্থা শুনিলেন। মারওয়ান-পত্রপাঠে অনেক চিন্তা করিয়া মহারাজ এজিদ্ তৎক্ষণাৎ আবদুল্লাহ্ জেয়াদকে একখানি পত্র লিখিলেন। পত্র শেষ করিয়া কোষাধ্যক্ষের প্রতি আদেশ করিলেন, "তিন লক্ষ টাকা, তদুপযোগী বাহন এবং অর্থ রাক্ষার্থে কয়েকজন সৈনিকপুরুষ,-এই কাসেদের সমভিব্যাহারে দিয়া এখনই কুফা নগরে পাঠাইতে প্রধান কার্যকারককে আমার আদেশ জানাও।" কোষাধ্যকে এই কথা বলিয়া কাসেদ্কে বলিলেন, "তুমি এই উপস্থিত কার্যের উপযুক্ত পাত্র। কুফা নগরে যাইয়া আবদুল্লাহ্ জেয়াদকে বলিয়ো, আশার অতিরিক্ত ফল পাইবে, কুফা রাজ্য একচ্ছত্ররূপে আপনারই অধিকৃত হইবে। দামেস্করাজ আর কখনোই আপনাকে অধীন রাজা বলিয়া মনে করিবেন না, মিত্ররাজ্য বলিয়াই আখ্যা হইবে। সেই মিত্র ব্যবহার জগতে চন্দ্র-সূর্য থাকা পর্যন্ত সমভাবে থাকিবে।" দামেস্কাধাপতি এই বলিয়া কাসেদ্কে বিদায় করিলেন। কাসেদ্ অভিবাদন করিয়া বিদায় হইল।
সৈন্যচতুষ্টয়ের সহিত দামেস্কের দূত বিংশতি দিবসে কুফা নগরে উপস্থিত হইল। দামেস্ক হইতে বিস্তর অর্থ সহিত সৈন্যসহচর রাজদূত রাজসমীপে উপস্থিত হইবে, এই কথা আবদুল্লাহ্ জেয়াদের কর্ণগোচর হইলে, তিনি একেবারে আশ্চর্যান্বিত হইলেন। "মহারাজ এজিদ্ আমার নিকট অর্থ, সৈন্য এবং কাসেদ্ পাঠাইবেন- কী কথা!" আবদুল্লাহ্ জেয়াদ এই ভাবনা ভাবিতেছেন, এমন সময়ে প্রতিহারী আসিয়া করজোড়ে নিবেদন করিল, "দামেস্ক হইতে কয়েকটি লোক কি উদ্দেশ্যে আসিয়াছে, কাহারো নিকট কিছু বলে না; তাহাদের ইচ্ছা যে, একেবারে মহারাজের সহিত সাক্ষাৎ করে। দামেস্করাজের প্রেরিত, কী কাহার প্রেরিত, তাহা তাহারা কিছুই বলিল না। আমরা যাহাকে কাসেদ্ বলিয়া অনুমান করিতেছি, সে লোকটি বিশেষ চতুর এবং বিশেষ বিচক্ষণ। তাহার সঙ্গে তাহার রক্ষকস্বরূপ কয়েকজন প্রহরী এবং প্রচুর অর্থ আছে।"
আবদুল্লাহ্ জেয়াদ বলিলেন, "তাহাদিগকে সমুচিত আদর করিয়া উপযুক্ত স্থানে স্থান দাও। সময় মত আহ্বান করিয়া তাহাদের কথা শুনিব।"
যথাযোগ্য প্রণিপাত করিয়া প্রতিহারী বিদায় লইল। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ্ অনেক চিন্তা করিলেন। কী কারণ, কে পাঠাইল, কী উদ্দেশ্যে আসিয়াছে, নানা প্রকার দুশ্চিন্তায় মনোনিবেশ করিলেন। নিতান্ত উৎসুক হইয়া অনতিবিলম্বেই সেই কাসেদ্কে আহ্বান করিলেন। কাসেদ্ আসিয়া সম্মুখে দাঁড়াইয়া এজিদের আদেশমত সমুদয় বৃত্তান্ত একে একে বর্ণনা করিল। এজিদের স্বহস্তলিখিত পত্রখানিও জেয়াদের সম্মুখে রাখিয়া দিল। আবদুল্লাহ্ জেয়াদ সহস্রবার পত্র চুম্বন করিয়া ভক্তির সহিত পাঠ করিলেন। কাসেদ্কে বলিলেন, "তোমরা নির্দিষ্ট স্থানে গিয়া বিশ্রাম কর, অদ্যই বিদায় করিব।"
.
.-স্ব স্থা­নে প্র­স্থান করি­লেন।
জেয়াদের পত্র লইয়া হো­সেন মা­­নীয়া বি­বি সা­লে­মার হো­জ্রা (নি­র্জন স্থান) সমী­পে গমন করি­লেন। সং­বাদ পাইয়া বি­বি সা­লে­মা হো­জ্রা হই­তে বহি­র্গত হই­লেন। ইমাম হো­সেন মা­তা­­হীর (হজ­রত হো­সে­নের আপন মা­তা­­হী বি­বি খা­দি­জা। বি­বি সা­লে­মা হয­রত মো­হা­ম্ম­দের অন্য স্ত্রী।) পদধূলি গ্র­হণ করিয়া জেয়াদের পত্র­বি­­রণ প্র­কাশ কু­ফা নগ­রে গমন প্র­­ঙ্গ উত্থা­পন করি­লেন।
রওজা হই­তে হো­সে­নের আগ­­­বৃ­ত্তা­ন্ত শু­নিয়া পরি­জন, আত্মীয়, বন্ধু অনে­কেই বি­বি সা­লে­মার হো­জ্রায় আসিয়া উপ­স্থিত হই­লেন।
হো­সেন সক­লের নি­­টেই কু­ফা-গম­­­ঙ্ক­ল্পে পরা­­র্শ জি­জ্ঞা­সা করায়, কে­হই কোন উত্তর না করিয়া নি­স্ত­ব্ধ­ভা­বে রহি­লেন। বি­বি সা­লে­মা গম্ভীর স্ব­রে বলি­তে লা­গি­লেন, "আব­দু­ল্লাহ জেয়াদ্ যা­হাই লি­খুক, আমি তো­মা­কে পু­নঃ পু­নঃ নি­ষেধ করি­তে­ছি, তু­মি কখ­নোই কু­ফায় গমন করিয়ো না-হজ­­তের রওজা ছাড়িয়া কোন স্থা­নেই যাইয়ো না; হজ­রত আমা­কে বলিয়া গিয়াছেন যে, হো­সেন আমার রওজা পরি­ত্যাগ করিয়া স্থা­না­ন্ত­রে গমন করি­লে অনেক প্র­কার বি­­দের আশ­ঙ্কা। আমি পু­নঃ পু­নঃ নি­ষেধ করি­তে­ছি, তু­মি কখ­নোই রওজা 

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.