বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_মহরম পর্ব : ২৪তম প্রবাহ

আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ্ প্রে­রিত কা­সে­দ্ পু­­স্কার-লো­ভে দি­বা­রা­ত্রি পরি­শ্রম করিয়া দা­মে­স্কে পৌঁছি­লেন। দা­মে­স্কা­ধি­­তি এজি­দ্ কা­সে­দের পরিচয় পাইয়া সমুদয় বৃ­ত্তা­ন্ত নি­র্জ­নে অব­গত হইয়া, মহা­­ন্দে কা­সে­দ্কে যথো­চিত পু­­স্কৃত করিয়া প্র­ধান সৈন্য সৈন্যা­ধ্য­­­কে আহ্বা­নপূর্বক বলি­তে লা­গি­লেন, "এত দি­নের পর আমার পরি­শ্র­মের ফল ফলিয়াছে। আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ্ কৌ­শল করিয়া হো­সে­­কে মদি­না হই­তে বা­হির করিয়াছেন, তো­­রা এখ­নই প্র­স্তুত হইয়া হো­সে­নের অনু­­রণ কর। মরু­স্থল কা­­বা­লার পথে যা­­লে পলা­তক হো­সে­নের দে­খা পা­­বে। যদি পথের মধ্যে আক্র­মণ করি­বার সু­যোগ না হয়, তবে একে­বা­রে নি­র্দি­ষ্ট স্থা­নে যাইয়া অগ্রে ফো­রাত নদীর পূর্বকূল বন্ধ করি­বে। মদি­না হই­তে কু­ফা পর্য­ন্ত গম­নো­­যো­গী আহা­রীয় এবং পা­নীয় বস্তুর সু­বি­ধা করিয়া হো­সেন মদি­না পরি­ত্যাগ করিয়াছেন। সঙ্গেও ষষ্টি-সহ­স্র লোক। ইহা­দের পা­নো­­যো­গী জল সর্ব­দা সং­গ্রহ করা সহজ কথা নহে। তো­মা­দের প্র­থম কা­র্যই কা­­বা­লার ফো­রাত নদীর কূল আব­দ্ধ করিয়া রা­খা। হো­সেন-পক্ষীয় এক­টি প্রা­ণীও যেন ফো­রা­তকূলে আসি­তে না পা­রে, ইহার বি­শেষ উপায় করি­তে হই­বে। দি­বা­রা­ত্রি সদা­­র্ব­দা সত­র্ক­ভা­বে থা­কি­বে যে, কোন সময়ে কোন সু­যো­গে এক পা­ত্র জল হো­সে­নের কি তৎসঙ্গী কোন লো­কের আশু প্রা­প্য না হয়। বা­রি রোধ করি­তে পা­রি­লেই তো­মা­দের কা­র্য সি­দ্ধ হই­বে। হো­সে­নের মস্তক যে ব্য­ক্তি এই দা­মে­স্কে আনিয়া আমার সম্মু­খে উপ­স্থিত করি­বে, তৎক্ষ­ণাৎ তা­হা­কে লক্ষ মু­দ্রা পু­­স্কার দিব এবং বিজয়ী সৈন্য­দি­গের নি­মি­ত্ত দা­মে­স্কের রা­­ভা­ণ্ডার খু­লিয়া রা­খিব। যা­হার যত ইচ্ছা, সে তা­হা গ্র­হণ করি­তে পা­রি­বে; কোন প্র­তি­­ন্ধক থা­কি­বে না।"
প্র­ধান প্র­ধান সৈন্য­গণ, ওমর, সী­মার প্র­ভৃ­তি বলিয়া উঠি­লেন, "মহা­রাজ! এবার হো­সে­নের মস্তক না লইয়া আর দা­মে­স্কে ফি­রিব না।" সী­মার অতি­­র্পে বলি­তে লা­গিল, "আর কে­হই পা­রি­বে না, আমিই হো­সে­নের মা­থা কা­টিব, কা­টিব-নি­শ্চয়ই কা­টিব; পু­­স্কারও আমিই লইব। আর কে­হই পা­রি­বে না। হো­সে­নের মা­থা না লইয়া সী­মার নগ­রে আর আসি­বে না। -- সী­মা­রের দৃঢ় প্র­তি­জ্ঞা।"
এজি­দ্ বলি­লেন, "পু­­স্কারও ধরা রহিল।" এই বলিয়া এজি­দ্ সী­মা­­কে প্র­ধান সৈন্য­ধ্য­ক্ষ পদে নিয়োজিত করিয়া বি­দায় করি­লেন
পা­­­গণ! এত­দিন আপ­না­দের সঙ্গে আসি­তে­ছি, কোন দিন মনের কথা বলি নাই। বি­ষাদ-সি­ন্ধু­তে হা­সি রহ­স্যের কোন কথা নাই, তন্নি­মি­ত্ত পর্য­ন্ত হা­সি নাই। কাঁদি­বার অনেক কথা আছে, অথচ নি­জে কাঁদিয়া আপ­না­দি­­কে কাঁদাই নাই। আজ মন কাঁপিয়া উঠিল। সী­মার হো­সে­নের মস্তক না লইয়া আর দা­মে­স্কে ফি­রি­বে না-প্র­তি­জ্ঞা করিল। সী­মার কে? পরিচয় এখ­নো প্র­কাশ পায় নাই; কি­ন্তু ভবি­ষ্য­তে ইহার পরিচয় অপ্র­কাশ থা­কি­বে না। সী­মা­রের না­মে কেন যে হৃদয়ে আঘাত লা­গি­তে­ছে, জা­নি না। সী­মা­রের রূপ কোন লে­­কই বর্ণ­না করেন নাই, আমিও করিব না। কল্প­না­তু­লি হস্তে তু­লিয়া আজ আমি এখন সেই সী­মা­রের রূপ বর্ণ­নে অক্ষম হই­লাম। কা­রণ বি­ষাদ-সি­ন্ধুর সমুদয় অঙ্গই ধর্ম­কা­হি­নীর সহিত সং­শ্লি­ষ্ট। বর্ণ­নার কোন প্র­কার ন্যূনা­ধি­ক্য হই­লে প্র­­­তঃ পা­পের ভয়, দ্বি­তীয়তঃ মহা­­বি­দি­গের মূল গ্র­ন্থের অব­মা­­নাভয়ে তাঁহা­দের বর্ণ­নায় যোগ দি­লাম। সী­মা­রের ধবল বি­শাল বক্ষে লো­মের চি­হ্ন­মা­ত্র নাই, মু­খা­কৃ­তি দে­খি­লেই নি­র্দয় পা­ষা­­হৃদয় বলিয়া বোধ হইত-দন্ত­রা­জি দী­র্ঘ বক্র­ভা­বে জড়িত-প্রা­চীন কবির এই­মা­ত্র আভাস এবং আমারও এই­মা­ত্র বলি­বার অধি­কার, নাম সী­মার
এজি­দ্ সৈন্য­দি­­কে নগ­রের বা­হির করিয়া দিয়া ফি­রিয়া আসি­লেন। আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদের লি­­না­নু­সা­রে মারওয়ান­কে সৈন্য­সহ মদি­না পরি­ত্যাগ করিয়া কু­ফা নগ­রে মো­স্লে­­কে আক্র­মণ করি­বার জন্য আদেশ প্র­দান করি­লেন। সং­বা­­বা­হক সং­বাদ লইয়া যা­­বার পূর্বেই ওত্বে অলীদ মারওয়ান সৈন্য­সহ হো­সে­নের অনু­­রণ করি­তে কু­ফার পথে যা­ত্রা করিয়াছি­লেন। পথি­­ধ্যে দা­মে­স্কের কা­সে­দ্মু­খে সমুদয় বৃ­ত্তা­ন্ত অব­গত হইয়া অলীদ এবং মারওয়ান অবি­শ্রা­মে কু­ফা­ভি­মু­খে সৈন্য­­­ভি­ব্যা­হা­রে যা­­তে লা­গি­লেন। দি­বা­রা­ত্র পরি­শ্রম করিয়া বু­দ্ধির অগ­ম্য; চি­ন্তার বহি­র্ভূত-অল্প সময় মধ্যে কু­ফার নি­­­­র্তী হই­লে জেয়াদের অনু­­রে­রা জেয়াদের নি­কট সং­বাদ দিল যে, "মহা­রাজ এজি­দের সৈন্যা­ধ্য­ক্ষ মারওয়ান এবং ওত্বে অলীদ সৈন্য­সহ নগ­­প্রা­ন্তে উপ­স্থিত হইয়াছেন, কী কর্ত­ব্য?"
জেয়াদ এতৎ সং­বা­দে মহা সন্তু­ষ্ট হইয়া মো­স্লেম-সমী­পে যাইয়া কর­জোড়ে বলি­তে লা­গি­লেন, "বা­­শাহ না­­দার! এজি­দের প্র­ধান সৈন্যা­ধ্য মহা­বীর মারওয়ান এবং ওত্বে অলীদ কু­ফার অতি নি­­­­র্তী হইয়াছে। বোধ হয় অদ্যই নগর আক্র­মণ করি­বে। প্র­ভু হো­সে­নের আশায় এত দিন রহি­লাম, তি­নিও আসি­লেন না; শত্রু­­ক্ষ নগ­রের সী­মার নি­­­­র্তী, এক্ষ­ণে কী আদেশ হয়?"
মো­স্লেম বলি­লেন, "আম­রা এমন কা­পু­রুষ নহি যে, শত্রু-অস্ত্রের আঘাত সহ্য করিয়া নগর রক্ষা করিব? আমি এখ­নই আমার সঙ্গী সৈন্য লইয়া মারওয়ানের গতি­রোধ করিব এবং নগর আক্র­­ণে বা­ধা দিয়া তা­হা­দি­­কেই আক্র­মণ করিব। আপ­নি যত শী­ঘ্র পা­রেন, কু­ফার সৈন্য লইয়া আমার পশ্চা­দ্ব­র্তী হউন।সৈন্য­সহ আপ­নি আমার পশ্চাৎ-রক্ষক থা­কি­লে ঈশ্বর-কৃ­পায় আমি সহ­স্র মারওয়ান­কে অতি তু­চ্ছ জ্ঞান করি!"এই কথা বলিয়াই মো­স্লেম মদি­নার সৈন্য­­­কে প্র­স্তুত হই­তে অনু­­তি­­ঙ্কেত করি­লেন। মদি­না­বা­সী­রা এজি­দ্ এবং এজি­দের সৈন্য-শো­ণি­তে তর­বা­রি রঞ্জিত করি­তে সদা­­র্ব­দা প্র­স্তুত। মো­স্লে­মের সা­ঙ্কে­তিক অনু­­তি, মারওয়ানের সহিত যু­দ্ধের অণু­মা­ত্র প্র­­ঙ্গ পাইয়াই সৈন্য­গণ মা­র্ মা­র্ শব্দে শ্রে­ণী­­দ্ধপূর্বক মো­স্লে­মের সম্মু­খে দণ্ডায়মান হইল। সৈন্য­দি­গের উৎসাহ দে­খিয়া মো­স্লেম দ্বি­গু­­তর উৎসা­হে অশ্বে আরো­হণ করি­লেন এবং মুহূর্ত মধ্যে সৈন্য­গণ শ্রে­ণী­­দ্ধপূর্বক নগ­রের বা­হির হই­লেন। কু­ফার সৈন্য­গণও অত্য­ল্প সময় মধ্যে সু­­জ্জিত হইয়া পূর্ব­তন প্র­ভু জেয়াদের সহিত সম­রে চলি­লেন
মো­স্লেম নগ­রের বা­হির হইয়াই দে­খি­লেন যে, এজি­দের চি­হ্নিত পতা­কা­শ্রে­ণী বায়ু সহিত ক্রীড়া করি­তে­ছে, যু­দ্ধ­বা­দ্য মহা­ঘোর রবে বা­দিত হই­তে­ছে। সৈন্য­­­কে বলি­লেন, "ভাই সকল! যে এজি­দ্, যে মারওয়ান, যে ওত্বে অলী­দের ভয়ে হো­সেন মদি­না­বা­সী­দি­গের জন্য, মদি­না­বা­সী­দি­গের বি­পদ উপ­দ্রব হই­তে রক্ষার জন্য, কু­ফায় আসি­তে মন­স্থ করিয়া অগ্রে আমা­দি­­কে পা­ঠাইয়াছেন, সেই বি­­র্মী কা­ফের তাঁহা­রই উদ্দে­শে, কি আমা­দের প্রাণ লই­তে, কি আমা­দি­­কে যে এত সা­হা­য্য করি­তে­ছে, সেই জেয়াদের প্রাণ বি­নাশ করি­তে আসিয়াছে। কু­ফার সৈন্য আসি­তে এখনও অনেক বি­­ম্ব। শত্রু­কে সময় দি­লেই চতু­র্গুণ বল বৃ­দ্ধি হয়।আর অপে­ক্ষা নাই, 'কু­ফার সৈন্য আসি­বে, এক­ত্র যা­ইব'-ইহা বলিয়া আর সময় নষ্ট করিব না। আম­রাই অগ্রে গিয়া শত্রু­­কে বা­ধা দিয়া আক্র­মণ করি।" মো­স্লেম সহ­স্র সৈন্য লইয়া একে­বা­রে শত্রু­­ক্ষের সম্মু­খীন হই­লেন এবং তু­মুল যু­দ্ধ আর­ম্ভ হইল
জেয়াদ্ কু­ফার সৈন্য সং­গ্রহ করিয়া মো­স্লে­মের পশ্চা­দ্ব­র্তী হই­লেন। নগ­রের অন্ত­সী­মা শেষ তো­রণ পর্য­ন্ত আসিয়া দে­খি­লেন, নগ­রের অন্ত­সী­মায় যু­দ্ধ আর­ম্ভ হইয়াছে। সৈন্য­গণ অবা­ক্ হইল। সক­লেই পূর্ব প্র­ভুর আজ্ঞা হঠাৎ লঙ্ঘন করা বি­বে­­না­সি­দ্ধ নহে, এই বলিয়া বি­­ক্তি­ভা­বে দণ্ডায়মান রহিল
আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ্ বলি­তে লা­গি­লেন, "আমি এত­দিন মনের কথা তো­মা­দি­­কে কি­ছুই বলি নাই, আজ বলি­বার সময় হইয়াছে বলিয়াই এণে বলি­তে­ছি। হো­সে­­কে রা­জ্য­দান আমার চা­তু­রী­মা­ত্র। আমি মহা­রাজ এজি­দের আজ্ঞা­বহ, অনু­গৃ­হীত, আশ্রিত এবং দা­মে­স্কা­ধি­­তি আমার এক­মা­ত্র পূজ্য। কা­রণ আমি তাঁহার অধী­­স্থ প্র­জা। সেই রা­জা­দে­শে হো­সে­­কে কৌ­শল করিয়া বন্দি করাই আমার মু­খ্য উদ্দে­শ্য, ঘট­না­ক্র­মে তা­হা হইল না। মো­স্লে­­কে যে উদ্দে­শ্যে সি­­হা­­নে বসাইয়াছি­লাম, তা­হা এক প্র­কার সম্পূর্ণ হইল; কি­ন্তু মূল উদ্দে­শ্য সফল হইল না। মহা­রাজ এজি­দের সৈন্য আসিয়াছে, কৌ­­লে মো­স্লে­­কেও নগ­রের বা­হির করিয়া মহা­রাজ এজি­দের সৈন্য­­ম্মু­খীন করিয়া দি­লাম, রা­জা­জ্ঞা প্র­তি­পা­লিত হইল! আমা­দের নগ­রের বা­হি­রে কোন প্রয়োজন নাই, আম­রা যু­দ্ধে যা­ইব না, মো­স্লে­মের সহায়তাও করিব না। নগর-তো­রণ আব­দ্ধ কর, বল­বান সা­­সী সৈনিক পু­রুষ দ্বা­রা দ্বার রক্ষা হউক। মো­স্লে­মের বাঁচি­বার সা­ধ্য নাই। ওত্বে অলী­দের অস্ত্র­­ম্মু­খীন হই­লেই মো­স্লে­মের ইহ­জগৎ পরি­ত্যাগ করি­তে হই­বে। তথাচ যদি মো­স্লেম যু­দ্ধে পরা­স্ত হইয়া প্রা­­­ক্ষার জন্য নগ­রে আশ্রয় লই­তে নগ­­দ্বা­রে উপ­স্থিত হয়, কি­ছু­তেই নগ­­­ধ্যে প্র­বেশ করি­তে দি­বে না।"
সৈন্যা­ধ্য­ক্ষ আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদের বা­ক্যে একে­বা­রে অবা­ক্ হইয়া রহিল। জেয়াদের মনে এত চা­তু­রী, এত ছল­না, এত প্র­তা­­ণা, ইহা­তে আরো আশ্চ­র্যা­ন্বিত হইল। কি করি­বে নগ­­দ্বার রু­দ্ধ করিয়া দ্বা­রের নি­­­­র্তী স্থা­নেই সৈন্য সহিত সক­লেই এক­ত্র হইয়া রহিল। ওত্বে অলীদ মো­স্লে­­কে দে­খাইয়া সৈন্য­­­কে বে­গে অগ্র­সর হই­তে অনু­­তি করি­লেন। মো­স্লেম ওত্ল­বে অলী­দের আক্র­­ণে বা­ধা দিয়া বি­শেষ পা­­­র্শি­তার সহিত ব্যূহ রচ­না করিয়া শত্রু­­ম্মু­খে সৈন্য­দি­­কে দণ্ডায়মান করা­­লেন। কি­ন্তু আক্র­মণ করি­তে আর সা­­সী হই­লেন না, আত্ম­­ক্ষাই আব­শ্যক মনে করি­লেন। কু­ফার সৈন্য কত নি­­­­র্তী হইয়াছে, তা­হা দে­খি­তে পশ্চা­তে ফি­রিয়া যা­হা দে­খি­লেন, তা­হা­তে মো­স্লে­মের মস্তক ঘু­রিয়া গেল। জন­প্রা­ণী­মা­ত্র নাই, অথচ নগ­­তো­রণ বদ্ধ-মো­স্লেম একে­বা­রে হত­বু­দ্ধির ন্যায় হইয়া নগ­রের দি­কে বা­রং­বার চা­হিয়া দে­খি­লেন, পূর্ব প্র­কা­রেই নগ­­দ্বার বদ্ধ রহিয়াছে। নি­শ্চয়ই মনে মনে জা­নি­লেন যে, সকল জেয়াদের চা­তু­রী। চতু­­তা করিয়া আমা­কে নগ­রের বা­হির করিয়াছে। এখন নি­শ্চয়ই জা­নি­লাম যে, জেয়াদের মনে না­না­প্র­কার দু­­ভি­­ন্ধি ছিল। হো­সেন-বধের জন্যই এই মায়াজাল বি­স্তার,-তা­হার তো আর সন্দেহ নাই। ভা­লই হইয়াছে, কু­ফায় আসি­লে যে প্র­কার বি­­­গ্র­স্ত হই­তেন, তা­হা আমার ভা­গ্যেই ঘটিল। মো­স্লে­মের প্রাণ যাইয়াও যদি হো­সে­নের প্রা­­­ক্ষা হয়, তা­হাও মো­স্লে­মের পক্ষে সা­র্থক
মো­স্লেম হতাশ হই­লেন না; কি­ন্তু তাঁহা­কে নূতন প্র­কার চি­ন্তার আলো­­নায় প্র­বৃ­ত্ত হই­তে হইল।নিজ সৈন্য এবং কু­ফার সৈন্যের সা­হা­য্যে যে যে প্র­কার যু­দ্ধের কল্প­না করিয়াছি­লেন, এক্ষ­ণে তা­হা পরি­­র্তন করিয়া নূতনরূপ চি­ন্তায় নি­­গ্ন হই­লেন। ওদি­কে ওত্বে অলীদ কি মনে করিয়া আর অগ্র­সর হই­লেন না। আপন আয়ত্তা­ধী­নে সম্ভ­­তঃ দূরে থা­কিয়াই দ্বৈরথ যু­দ্ধ আর­ম্ভ করি­বার অভি­প্রায়ে মহা­বীর ওত্বে অলীদ গম্ভীর স্ব­রে বলি­তে লা­গি­লেন, "মো­স্লেম, যদি নি­তা­ন্তই যু­দ্ধ­সাধ হইয়া থা­কে, তবে আইস, আম­রাই উভয়ে যু­দ্ধ করি, জয়-পরাজয় আমা­দের উভয়ের উপ­রেই নি­র্ভর। অন­র্থক অন্য অন্য প্রাণ বি­­ষ্ট করি­বার আব­শ্যক কী?"
মো­­লেম সে কথায় উত্তর না দিয়া কতক সৈন্য সহিত ওত্বে অলী­­কে ঘি­রিয়া ফে­লি­লেন
ওত্বে অলীদ আবার বলি­লেন, "মো­স্লেম! এই কী যু­দ্ধের রী­তি, না বী­­পু­রু­ষের কর্ত­ব্য কা­র্য?কে তো­মা­কে বীর আখ্যা দিয়াছিল? 'কহ মহা­­থি! এই কী মহা­­থি-প্র­থা'?"
মো­স্লেম সে কথায় কর্ণ­পাত না করিয়া সৈন্য­দি­­কে বলি­লেন, "ভ্রা­তৃ­গণ! বি­­র্মীর হস্তে মৃ­ত্যুই বড় পু­ণ্য। প্র­ভু মো­হা­ম্ম­দের দৌ­হি­ত্র­­­কে যা­হা­রা, যে পা­পা­ত্মা­রা-যে নর­পি­শা­চে­রা শত্রু মনে করে, তাঁহা­দের প্রা­­বি­না­শের চে­ষ্টা করে, তা­হা­দের হস্তে প্রা­­বি­­র্জন করি­তে পা­রি­লে, তা­হা অপে­ক্ষা ইহ­­­তে আর কী অধি­­তর সুখ আছে? এক দিন মরিব বলিয়াই জন্মিয়াছি। যে মর­ণে সুখ, সহ­স্র সহ­স্র পাপ থা­কি­লেও সর্ব­সুখ ভো­গের অধি­কার, এমন মর­ণে কে না সু­খী হয়? আম­রা যু­দ্ধে জয়ী হইব না, আশাও করি না। তবে বি­­র্মীয় হস্ত­স্থিত তর­বা­রি ইস­লাম-শো­ণি­তে রঞ্জিত হইয়া পরি­ণা­মে আমা­দি­­কে স্ব­র্গ-সু­খের অধি­কা­রী করি­বে, এই আমা­দের আশা। জয়ের আশা আর মনে করিয়ো না, আজই যু­দ্ধের শেষ-আজই আমা­দের জী­­নের শেষ।" মো­স্লেম এই বলিয়া ওত্বে অলী­দের প্র­তি অস্ত্র­­র্ষণ করি­তে লা­গি­লেন; মারওয়ান দে­খি­লেন যে, অলী­দের পর­মায়ু শেষ হইল, সমুদয় সৈন্য এক­ত্রিত করিয়া মো­স্লেম আক্র­মণ করিয়াছে! ইহা­তে একা এক প্রাণ, কতণ অলীদ রক্ষা করি­বে? ক্ষ­­কাল বি­­ম্ব না করিয়া মারওয়ান সমুদয় সৈন্য­সহ মো­স্লে­­কে আক্র­মণ করি­লেন। ভয়ানক যু­দ্ধ আর­ম্ভ হইল। মো­স্লে­মের জী­­নের আশা নাই; তাঁহার সৈন্য­গণ বি­­র্মীর হস্তে মরি­বে, সেই আশায় কে­বল মা­রি­তেই লা­গি­লেন; ভবি­ষ্যৎ জ্ঞান, পশ্চাৎ লক্ষ্য, পা­র্শ্বে দৃ­ষ্টি ইত্যা­দির প্র­তি কি­ছুই লক্ষ্য রা­খি­লেন না। মহা­বীর মো­স্লেম দুই হস্তে তর­বা­রি ধরি­লেন। অশ্ব­­ল্গা দন্তে আব­দ্ধ করি­লেন। শত্রুসৈন্য অকা­­রে কা­টিয়া চলি­লেন।মধ্যে মধ্যে "আল্লা­হু আক্বার" নি­না­দে দ্বি­গুণ উৎসা­হে সৈন্য­দি­­কে উৎসা­হিত করি­লেন। ওত্বে অলীদ মারওয়ান বহু পরি­শ্রম বহু চে­ষ্টা করিয়াও মো­স্লে­মের লঘু­­স্ত­চা­লিত চপ­লাবৎ তর­বা­রি সম্মু­খে আর তি­ষ্টি­তে পা­রি­লেন না। ক্ষ­­কা­­­ধ্যে সৈন্য­গণ ছত্র­­ঙ্গ হইয়া দি­গ্বি­দি­কে পলা­­তে লা­গিল। মো­স্লে­মের সৈন্য­গণও পলায়িত শত্রুর পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধা­­মান হইয়া দেহ হই­তে বি­­র্মী মস্তক মৃ­ত্তি­কা­শায়ী করি­তে লা­গিল

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.