বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_মহরম পর্ব : ২৫তম প্রবাহ


 আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ নগ­­তো­­ণো­­রি­স্থ অতি উচ্চ মঞ্চে উঠিয়া উভয় দলের যু­দ্ধ দে­খি­তে­ছি­লেন। দে­খি­লেন, মো­স্লে­মের তর­বা­রির সম্মু­খে কে­হই অগ্র­সর হই­তে পা­রি­তে­ছে না। বহু­তর সৈন্য মৃ­ত্তি­কা­শায়ী হইয়াছে। যা­হা­রা জী­বিত আছে, তা­হা­রাও প্রা­ণভয়ে দি­শে­হা­রা হইয়া পলা­­তে­ছে। জেয়াদ মঞ্চ হই­তে না­মিয়াই দ্বা­­­­কে বলি­লেন, "দ্বার খু­লিয়া দাও।" সৈন্য­­­কে আদেশ করি­লেন যে, "আমার পশ্চা­দ্ব­র্তী হইয়া মো­স্লে­­কে আক্র­মণ কর, আম­রা সা­হা­য্য না করি­লে ওত্বে অলী­দের প্রাণ কখ­নোই রক্ষা হই­বে না।"
রা­জা­জ্ঞা প্রা­প্তি­মা­ত্রই লক্ষা­ধিক সৈন্য জয়না­দে তু­মুল শব্দ করিয়া পশ্চা­দ্দিক হই­তে মো­স্লে­­কে আক্র­মণ করিল। আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ স্বয়ং যু­দ্ধে আসি­তে­ছেন, মো­স্লে­মের সে­দি­কে দৃ­ষ্টি­পাত নাই, কে­বল অশ্ব­­ল্গা দন্তে ধা­রণ করিয়া দুই হস্তে বি­­র্মী নি­পাত করি­তে­ছেন। যা­হা­কে যে অব­স্থায় পা­­তে­ছেন, সেই অব­স্থা­তেই দেহ হই­তে মস্তক ছি­ন্ন, কা­হা­কেও অশ্ব সহিত এক চো­টে দ্বি­­ণ্ডিত করিয়া, জন্ম­শোধ যু­দ্ধের সাধ মি­টা­­তে­ছেন। আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ পশ্চা­দ্দিক হই­তে মো­স্লে­­কে আক্র­মণ করি­বার উপ­ক্রম করি­লেই, ওত্বে অলীদ উচ্চৈঃস্ব­রে বলি­লেন, "মো­স্লেম ঈশ্ব­রের নাম মনে কর; তো­মার সা­হা­য্যের জন্য আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ লক্ষা­ধিক সৈন্য লইয়া আসিয়াছেন।"
মো­স্লেম জেয়াদের নাম শু­নিয়া চম­কি­­ভা­বে পশ্চা­তে ফি­রিয়া যা­হা দে­খি­লেন, তা­হা­তে আর কি­ছুই বলি­লেন না। কে­­­মা­ত্র বলি­লেন, "বি­­র্মীর কথায় কে বি­শ্বাস করি­বে, কা­ফে­রের ভক্তি­তে যে মু­­­মান ভু­লি­বে, তা­হার দশাই এইরূপ হই­বে।" মো­স্লেম ভীত হই­লেন না, যু­দ্ধে ক্ষা­ন্ত দিয়াও পরাজয় স্বী­কার করি­লেন না, পূর্ব­মত বি­­র্মী­শো­ণি­তে মৃ­ত্তি­কা রঞ্জিত করি­তে লা­গি­লেন। কি­ন্তু তা­হা­তে কো­নই ফল হইল না। চতু­র্দিক হই­তে অবি­শ্রা­ন্তরূপে মো­স্লে­মের শরী­রে শর বি­দ্ধ হই­তে লা­গিল; সর্বা­ঙ্গে শো­ণি­­ধা­রা ছু­টিল। অশ্ব­­­­লে বি­­র্মীর রক্ত­স্রোত বহি­তে­ছে, যু­দ্ধ­ক্ষে­ত্র মনু­ষ্য­দে­হে পরিপূর্ণ হইয়াছে, শো­ণি­­সি­ক্ত মৃ­ত্তি­কায় প্রি­গা­মী অশ্ব­পদ স্খ­লিত হই­তে­ছে; তথাচ মহা­বীর মো­স্লেম শত্রু­ক্ষয় করি­তে নি­বৃ­ত্ত হই­তে­ছেন না। এত মা­রি­তে­ছেন, কি­ন্তু কি­ছু­তেই তা­হার শেষ হই­তে­ছে না। দি­­­ণিও সম­স্ত দিন এই ঘো­­তর যু­দ্ধ দে­খিয়া লো­হি­­­র্ণে অস্ত­মিত হই­লেন।তৎসঙ্গেই ইস্লা­­গৌ­রব-রবি মহা­বীর মো­স্লেম লো­হিত বস­নে আবৃত হইয়া-জগৎ অন্ধ­কার করিয়া শত্রু­­স্তে প্রা­­বি­­র্জ­নপূর্বক স্ব­র্গ­গা­মী হই­লেন। মদি­নার এক­টি প্রা­ণীও আর বি­­র্মীর অস্ত্র হই­তে রক্ষা পা­ইল না
যু­দ্ধা­­সা­নে নর­­তি জেয়াদ দর্পের সহিত বলি­তে লা­গি­লেন-
"মদি­নার শত্রু­কুল,-মহা­রাজ এজি­দ্ না­­দা­রের না­মের বলেই এইরূপ নি­র্মূল হই­বে। সে­ইরূপ চি­ন্তা করিয়া কৌ­­­জাল বি­স্তার করিয়াছি­লাম, তা­হা­তে বা­­শা না­­দা­রের মহা­­ত্রু আজ সবং­শে বি­­ষ্ট হইত, দৈববি­পা­কে তা­হা হইল না। মো­স্লে­মের যে দশা ঘটিল, প্র­ধান শত্রু হো­সে­­কেও সেই দশায় পতিত হই­তে হইত।দা­মে­স্ক এবং কু­ফার সৈন্যের তর­বা­রি-ধা­রে হো­সেন-মস্তক নি­শ্চয়ই দেহ-বি­চ্ছি­ন্ন হইত। পরি­বার-পরি­জন-সঙ্গী­রাও আজ কু­ফার সি­­­দ্বা­রের সম্মু­­স্থ প্রা­ন্ত­রে রক্ত­মা­খা হইয়া গড়াগড়ি যা­ইত। ভা­গ্য­ক্র­মে হো­সেন ষষ্টি-সহ­স্র লো­­­­সহ কু­ফার পথ ভু­লিয়া কা­­বা­লার পথে গিয়াছে; জেয়াদের হস্ত হই­তে রক্ষা পাইয়াছে। সম্পূর্ণরূপে সর্বা­­শে যশ লাভ করি­তে পা­রি­লাম না, ইহাই আমার নি­দা­রুণ আক্ষেপ! মদি­নার এক­টি প্রা­ণীও আজ কু­ফার সৈন্য­­ণের হস্ত হই­তে রক্ষা পায় নাই। সমুদয় শেষ হইয়া যমালয়ে গমন করিয়াছে। এক­টি প্রা­ণীও পলা­­তে পা­রে নাই। ধন্য কু­ফার সৈন্য!"
গু­প্ত­চর, গু­প্ত­­ন্ধা­নি­গণ মধ্য হই­তে এক­জন বলিল- "ধর্মা­­তার! মো­স্লে­মের দুই পু­ত্র মা­রা যায় নাই, ধরা পড়িয়া বন্দিও হয় নাই! তা­হা­রা যু­দ্ধা­­সা­নে, যু­দ্ধ­ক্ষে­ত্র হই­তে অতি­ত্র­স্ত­­দে নগ­রের মধ্যে প্র­বেশ করিয়াছে। কি কৌ­­লে যে তা­হা­রা কু­ফার সৈন্য­­­­ক্ষে ধূলি দিয়া প্রাণ বাঁচা­ইল,-আর পর্য­ন্ত যে জী­বিত আছে,-ইহাই আশ্চ­র্য! মহা­রাজ! তা­হা­রা দুই ভ্রা­তা এই নগ­রেই আত্ম­গো­পন করিয়া রহিয়াছে। আম­রা বি­শেষ সন্ধা­নে জা­নি­তে পা­রিয়াছি, তা­হা­রা নগ­রের বা­হি­রে যায় নাই,-যা­­তে পা­রে নাই।"
আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ অতি ব্য­স্ত­ভা­বে বলি­তে লা­গি­লেন, "সে কী কথা? মো­স্লে­মের পু­ত্র­দ্বয় জী­বিত আছে?" অমা­ত্য­­­কে সম্বো­ধন করিয়া কহি­লেন, "ওহে! কী ভয়ানক কথা? ভু­­ঙ্গ হই­তে ভু­­ঙ্গ­শি­শুর বিষ যে অত্য­ধিক মা­রা­ত্মক, তা­হা কি তো­­রা জান না? এখ­নই ডঙ্কা বা­জাইয়া ঘো­­ণা প্র­চার কর। নগ­রের প্র­তি রা­­­থে, ক্ষু­দ্র পথে, প্র­কা­শ্য স্থা­নে নগ­­বা­সীর প্র­তি দ্বা­রে ডঙ্কা, দু­ন্দু­ভি, ভে­রী বা­জাইয়া ঘো­­ণা করিয়া দাও,-যে ব্য­ক্তি মো­­লে­মের পু­ত্র­দ্বয়কে ধরিয়া আমার নি­­টে আনি­তে পা­রি­বে-সহ­স্র সু­­র্ণ­মু­দ্রা তৎক্ষ­ণাৎ পা­রি­তো­ষিক পা­­বে। আর যে ব্য­ক্তি মো­­লেম পু­ত্র­দ্বয়কে আশ্রয় দিয়া গো­­নে রা­খি­বে, প্র­কা­­মা­ত্র বি­চার নাই,-কোন কথা জি­জ্ঞা­স্য নাই,-দ্বি­তীয় আদে­শের অপে­ক্ষা নাই, শূলদ­ণ্ডই তা­হার জী­­নের সহ­চর। শূলদ­ণ্ড­কেই চির আলি­ঙ্গন করিয়া-প্রা­ণের সহিত আলি­ঙ্গন করিয়া মজ্জা­ভে­দে মরি­তে হই­বে।"
আদে­­মত তখ­নই ঘো­­ণা প্র­চার হইল-নগ­রময় ঘো­­ণা প্র­চার হইল। কত­­লোক অর্থ­লো­ভে পি­তৃ­হীন বা­­­দ্বয়ের অন্বে­­ণে ছু­টিল। না­না­স্থা­নে খুঁজি­তে আর­ম্ভ করিল। পা­হাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, মাঠ-ঘাট চা­রি­দি­কে সন্ধান করিয়া ব্য­স্ত­তা­­­কা­রে ছু­টা­ছু­টি করিয়া বেড়াই­তে লা­গিল
মো­স্লে­মের পু­ত্র­দ্বয় ঘো­­ণা প্র­চা­রের পূর্বেই এক ভদ্র­লো­কের বা­টী­তে আশ্রয় গ্র­হণ করিয়াছেন।সে ভদ্র­লো­­টি কু­ফা নগ­রের বি­চা­­­তি (কা­জী) তি­নি বা­­­দ্বয়ের দু­­খে দু­­খিত হইয়া আশ্রয় দিয়াছেন, পরি­তো­ষরূপে আহার করাইয়া শয়নের ব্য­­স্থা করিয়া দিয়াছেন। মহা­বীর মো­স্লে­মের জন্য আক্ষেপ করি­তে­ছেন। ইতি­­ধ্যে ঘো­­ণার বি­­রণ শু­নিয়া কা­জী সা­হেব নি­তা­ন্তই দু­­খিত হই­লেন। কী করেন? কী উপায়ে পি­তৃ­হীন বা­লক দু­টির প্রাণ রক্ষা হই­তে পা­রে, তা­হা­রই সু­যোগ-সু­বি­ধা খুঁজি­তে­ছেন, চি­ন্তা করি­তে­ছেন। বহু চি­ন্তার পর সঙ্ক­ল্প স্থির করিয়া তাঁহার জ্যে­ষ্ঠ­পু­ত্র 'আসা­দ্কে' ডা­কিয়া বলি­লেন, "প্রা­ণা­ধিক পু­ত্র! দেখ, এই পি­তৃ­হীন বা­লক দু­টির প্রাণ রক্ষার উপায় করি­তে হই­বে। ঘো­­ণার বিষয় তো শু­নিয়াছ! সা­­ধান, সত­র্কে নি­শীথ সময়ে বা­­­দ্বয়কে সঙ্গে করিয়া নগ­রের প্র­­শে­দ্বার পার হই­বে। কি­ছু­ক্ষণ মদি­নার পথে দাঁড়াই­লেই মদি­নার যা­ত্রী­দল অব­শ্যই দে­খি­তে পা­­বে। বহু যা­ত্রী­­লই প্র­তি রা­ত্রি­তে গমন করে, অদ্যও করি­বে; তা­হা­দের কোন-এক দলের সহিত বা­­­দ্বয়কে সঙ্গী করিয়া দি­লেই 'কা­ফে­লায়' মি­শিয়া নি­রা­­দে মদি­নায় যা­­তে পা­রি­বে। বা­লক দু­টিরও প্রাণ রক্ষা হই­বে, আম­রাও নর­­তি জেয়াদের ঘো­­ণা হই­তে রক্ষা পা­ইব।"
কা­জী সা­হেব এই কথা বলিয়াই দুই ভ্রা­তার কো­­রে পঞ্চাশ পঞ্চাশ মো­হর বাঁধিয়া দি­লেন এবং খা­দ্য­সা­­গ্রীও পরি­মাণ মত উভয় ভ্রা­তার সঙ্গে যা­হা তা­হা­রা অনায়াসে লইয়া যা­­তে পা­রে তা­হা দিয়া দি­লেন
কা­জী সা­হে­বের পু­ত্র আসা­দ্ পি­তৃ­হীন বা­­­দ্বয়কে সঙ্গে করিয়া নি­শীথ সময়ে গৃহ হই­তে বহি­র্গত হই­লেন। সা­­ধান সত­র্কে নগ­রের সি­­­দ্বার পার হইয়া দে­খি­লেন, এক­দল যা­ত্রী মদি­না­ভি­মু­খে যা­­তে­ছে, কি­ন্তু তা­হা­রা কি­ঞ্চিৎ দূরে গিয়া পড়িয়াছে
আসা­দ্ বলি­লেন, "ভ্রা­তৃ­গণ! দে­খি­তেছ! মদি­নার যা­ত্রী­দল যা­­তে­ছে, এমন সু­যোগ-সু­বি­ধা আর নাও পাওয়া যা­­তে পা­রে। যে যা­ত্রী­দল যা­­তে­ছে, তো­­রা খো­দার নাম করিয়া দলে মি­শিয়া চলিয়া যাও। যা­ত্রী­­লে মি­শি­তে পা­রি­লে আর ভয়ের কোন কা­রণ থা­কি­বে না। তো­মা­দি­­কে এলা­হির হস্তে সঁপি­লাম। যাও ভাই! আর বি­­ম্ব করিয়ো না। শী­ঘ্র যাও। ভাই সে­লাম!" আসা­দ্ বি­দায় হই­লেন। ভ্রা­তৃ­দ্বয় ত্র­স্ত­­দে মদি­নার যা­ত্রী­­লের পশ্চাৎ অনু­­রণ করিয়া যা­­তে লা­গি­লেন। রজ­নীর ঘোর অন্ধ­কার। বা­লু­কাময় পথ। তদু­­রি প্রা­ণের ভয়, দুই ভাই এক­ত্রে দৌড়িতে লা­গি­লেন,-অগ্র­গা­মী কা­ফে­লার দি­ক্ লক্ষ্য করিয়া দৌড়িতে লা­গি­লেন
জগৎকা­রণ জগ­দী­শ্ব­রের মহি­মার অন্ত নাই। ভ্রা­তৃ­দ্বয় দৌড়িতে দৌড়িতে মদি­নার পথ ভু­লিয়া পু­­রায় নগ­রের দি­কে-কু­ফা নগ­রের দি­কে আসি­তে লা­গি­লেন। মনে মনে আশা করিয়াছি­লেন, যা­ত্রী­দল বে­শি দূর যায় নাই, এখ­নই তাঁহা­দের সঙ্গে যাইয়া দলে মি­শি­তে পা­রিব। নি­র্ভয়ে মদি­নায় যাইয়া দু­­খি­নী মায়ের চরণ দু'খা­নি দে­খি­তে পা­ইব। আশা করি­লে কী হয়? মা­নু­ষের আশা পূর্ণ হয় কই? অদৃ­ষ্ট ফে­রে পথ ভু­লিয়া-মদি­নার পথ ভু­লিয়া, অন্য পথে, কু­ফা নগ­রের দি­কেই যে আসি­তে­ছেন, দুই ভাই দৈবঘ­­নার কি­ছুই বু­ঝি­তে পা­রি­তে­ছেন না। ত্র­স্ত­­দে যা­­তে যা­­তে সম্মু­খে দে­খি­লেন, মশা­লের আলো। আলো লক্ষ্য করিয়া দৌড়িলেন। যাইয়া দে­খি­লেন যা­ত্রী­দল নহে। রা­­কীয় প্র­­রীর দল অস্ত্র­­স্ত্রে সজ্জিত, প্র­ত্যে­কের হস্তে জ্ব­­ন্ত মশাল। প্র­­রী­দি­গের সম্মু­খে পড়িতেই তা­হা­রা বা­­­দ্বয়কে দে­খিয়া, আকার-প্র­কার, তা­হা­দের রূপের ছটা দে­খিয়াই যা­হা বু­ঝি­বার বু­ঝিয়া লইল। আর কি যা­­বার সা­ধ্য আছে? ধরিয়া ফে­লিল। পু­­স্কার লো­ভে অগ্রে শহর-কো­টা­লের নি­কট লইয়া উপ­স্থিত করিল, নগ­­পাল কো­টাল উভয় ভ্রা­তার আকার-প্র­কার দে­খিয়াই বু­ঝিয়া লই­লেন, এই বা­­­দ্বয়ই বী­­বর মো­স্লে­মের হৃদয়ের সার, প্রিয় আত্মজ। নগ­­পাল ভ্রা­তৃ­দ্বয়ের রূপলা­­ণ্য দে­খিয়া যত্নপূর্বক আপন গৃ­হে রা­খিয়া অতি প্র­ত্যূষে মহা­রাজ জেয়াদের দর­বা­রে উপ­স্থিত করি­লেন
কু­ফা­ধি­­তি মো­স্লেম তনয়দ্বয়ের রূপলা­­ণ্য, মু­­শ্রী, কি­ঞ্চিৎ কৃ­ষ্ণ কে­শের নয়নর দৃ­শ্য দে­খিয়া "শি­­চ্ছেদ কর" কথা­টা আর মু­খে উচ্চা­রণ করি­তে পা­রি­লেন না। মায়াব­শে বশীভূত হইয়া বলি­লেন, "এই বা­­­দ্বয়কে দ্বি­তীয় আদেশ না হওয়া পর্য­ন্ত বন্দি­খা­নায় রা­খি­তে বল। কা­রা­ধ্য­কে আদেশ জা­নাও যে, ইহা­রা রা­­কীয় বন্দি। কোন প্র­কা­রে কষ্ট না পায়। বন্দি­গৃহ হই­তে বহি­র্গত হই­তেও না পা­রে, কোন প্র­কা­রে অস­ম্মান-অব­মা­­না যেন না হয়।"
দুই ভ্রা­তা কর­জোড়ে-সবিনয়ে, তাঁহা­দের মনের কথা মু­খে প্র­কাশ করি­তে উদ্যো­গী হই­তেই এদি­কে প্র­­রী­দল উভয়কে লইয়া কা­রা­গৃ­হে প্র­ধান কা­র্য­কা­­কের নি­­টে চলিয়া গেল। তাঁহা­রা আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদের নি­কট এক­টি কথা বলি­তেও সু­যোগ পা­­লেন না। কা­রা­গৃ­হে নীত হই­লে কা­রা­ধ্য­ক্ষ, নাম মস্কুর, উভয় ভ্রা­তার রূপমা­ধু­রী দে­খিয়া এবং ইহা­রাই বী­­শ্রে­ষ্ঠ বীর মো­স্লে­মের হৃদয়ের ধন ভা­বিয়া আদর যত্নের সহিত ভা­­বা­সি­লেন। বন্দি­গৃ­হে না রা­খিয়া স্বীয় ভব­নে উভয় ভ্রা­তা­কে লইয়া আহা­রা­দি করা­­লেন। বি­শ্রাম জন্য শয্যা রচ­না করিয়া দিয়া ভা­বি­তে লা­গি­লেন, কি করি! রা­ত্রি প্র­ভা­তেই হউক কি দু­দিন পরেই হউক, নর­­তি নি­শ্চয়ই ইহা­দের শি­­চ্ছেদ আজ্ঞা প্র­দান করি­বেন। দু­­টি ভা­­কে রক্ষা করি কি প্র­কা­রে?' অনেক চি­ন্তার পর, অর্ধ নি­শা অতীত হই­লে, দুই ভ্রা­তা­কে জা­গাইয়া বলি­লেন,-"তো­­রা আমার সঙ্গে সঙ্গে আইস, কোন চি­ন্তা নাই। আমি তো­মা­দি­­কে রক্ষা করিব। ইহা­তে আমার অদৃ­ষ্টে যা­হা থা­কে হই­বে। আইস, আমার সঙ্গে আইস।" মো­­লেম পু­ত্র­দ্বয় কা­রা­ধ্য­রে সঙ্গে সঙ্গে চলি­লেন। নগ­রের বা­হির হইয়া কা­রা­ধ্য­ক্ষ কি­ঞ্চিৎ দূরে চলিয়া গিয়া দুই ভ্রা­তা­কে বলি­লেন, "শুন, তো­­রা মনো­যোগ করিয়া শুন। এই যে পথের উপর দাঁড়াইয়াছি-এই পথ ধরিয়া 'কু­দ্সীয়া' নগ­রে যা­­বে। এই পথ ধরিয়া এক­টু দ্রু­­­দে চলিয়া গে­লে রা­ত্রি প্র­ভা­তের পূর্বেই কু­দ্সীয়া নগ­রে যা­­তে পা­রি­বে। নগ­রে আমার ভাই আছেন, তাঁহার নাম- এই না­­টি মনে করিয়া রা­খিয়ো। নাম করি­লে তাঁহার বা­­স্থান লো­কে দে­খাইয়া দি­বে। আমি যে তো­মা­দি­­কে পা­ঠা­­তে­ছি, তা­হার নি­­র্শন আমার এই অঙ্গু­রী দি­তে­ছি, সা­­ধা­নে রা­খিয়ো! কি­ছু বলি­তে হই­বে না। এই অঙ্গু­রী আমার ভ্রা­তা­কে দি­লেই তি­নি তো­মা­দি­­কে তো­মা­দের গম্য­স্থা­নের কথা জি­জ্ঞা­সা করি­বেন। তো­­রা মদি­নার নাম করিয়ো, যে উপায়ে হয়-যে কোন কৌ­­লে হয়-তো­মা­দি­­কে তি­নি মদি­নায় পা­ঠাইয়া দি­বেন। এই অঙ্গু­রী লও। খো­দার হা­তে তো­মা­দি­­কে সঁপি­লাম। শী­ঘ্র এই পথ ধরিয়া চলিয়া যাও। কোন ভয়ের কা­রণ নাই। সর্ব­বি­­­হর জয় জগ­দীশ তো­মা­দি­­কে রা করি­বেন।" ভ্রা­তৃ­দ্বয় বি­শে­­ভা­বে কৃ­­জ্ঞ­তা জা­নাইয়া অঙ্গু­রী­সহ বি­দায় গ্র­হণ করিয়া কু­দ্সীয়ার পথে যা­­তে লা­গি­লেন

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.