হাইডি_জোহান্না স্পাইরি : সৃজনানুবাদ_রেজা কারিম : পর্ব-১২


দিনের প্রথম প্রহরে জনাব সিম্যান মিস রোমার ও অন্যান্যদের খাবার ঘরে ডাকলেন। সবাই ভাবলো তিনি ভূত নিয়ে কিছু বলবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি কিছুই বললেনি। তিনি তাদের বললেন যে হাইডি তার বাড়িতে যাচ্ছে।
 
“মিস রোমার, তুমি শিশুটির সবকিছু একটি বড় বাক্সে সাজিয়ে দাও। সেবাস্টিয়ান তুমি হাইডির খালা ডেটেকে নিয়ে এসো। সে যেখানে কাজ করে সেখানে যাও। জন, তুমি একটি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এসো। আর টিনেট্টি, তুমি হাইডিকে ঘুম থেকে জাগাও ও জামাকাপড় পরিয়ে দাও।”
 
তারপর তিনি দ্রুত ক্লারার কাছে গেলেন। তিনি ক্লারাকে সব বললেন। তার ছোট বন্ধুর চলে যাওয়ার খবর শুনে ক্লারার খুব মন খারাপ হলো। তবে তার বাবা তাকে বললেন যে আগামি গ্রীষ্মে সে তার বন্ধু হাইডিকে দেখতে সুইজারল্যান্ড যেতে পারবে। তারপর হাইডির বাক্সটা ক্লারার রুমে আনা হলো। যাতে ক্লারাও তার কিছু সুন্দর পোষাক হাইডিকে দিতে পারে।
 
সেবাস্টিয়ান ডেটেকে নিয়ে ফিরে এলেন। জনাব সিম্যান তাকে হাইডির সমস্যার কথা বললেন।
 
“আমি চাই আপনি তাকে আজই তার দাদার কাছে নিয়ে যাবেন। বললেন তিনি।
 
“আমি দুঃখিত। আমি যেতে পারবো না। আজ আমি খুব ব্যস্ত। আগামিকালও না। এমনকি এর পরের দিনও পারবো না।” একদমে বললেন ডেটে।
 
“ও আচ্ছা। তিনি ডেটেকে পাঠিয়ে দিলেন। তিনি সেবাস্টিয়ানকে বললেন হাইডিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি হাইডির দাদার কাছে একটি চিঠি লিখলেন।
 
তিনি হাইডিকে খাবার রুমে ডাকলেন।
“হাইডি এ বিষয়ে তুমি কি বলো?” প্রশ্ন করলেন তাকে।
সে অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো। টিনেট্টি তাকে জাগিয়েছিলো ও ভালো কাপড় পরিয়েছিল কিন্তু তাকে এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি।
 
“তুমি জানো না? তুমি আজ বাড়ি যাচ্ছে।”
 
“বাড়ি?” তার চেহারায় আলো খেলে গেলো।
“তুমি কি যেতে চাও না?”
“হ্যাঁ আমি যেতে চাই।” এটা কি সত্যিই? সে দ্রুত ক্লারার রুমে দৌড়ে গেলো। ক্লারা তাকে সবকিছু দেখালো যা সে তার বাক্সে রেখেছিল। সে তাকে একটা ঝুড়ি দিলো। এর মধ্যে দাদিমার জন্য বারোটি সাদা রোল ছিল। হাইডি তার বড় বইটিও এর ভেতর রাখলো।
 
গাড়ী প্রস্তুত। এখন হাইডির বিদায় বলার পালা। মন খারাপ করার সময় নেই। হাইডি ও সেবাস্টিয়ান গাড়িতে উঠে বসলো।
 
ঘোড়ার গাড়ী তাদের রেলস্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। ট্রেনে চড়ে তারা ব্যাসল পৌঁছায়। রাতে তারা একটি হোটেলে রাত কাটায়। তারপর তারা একটি ধীরগতির ট্রেনে চড়ে ছোট শহর মায়েনফেল্ড পৌঁছায়। সেখান থেকে তারা ডরফ্লি উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে।
 
সেবাস্টিয়ান তার এই জার্নিটা একদমই উপভোগ করেননি। তিনি পর্বতে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন ও দীর্ঘ হাঁটা তার অপছন্দ হলো।
 
এসময় বড় বড় বস্তা বহন করা একটি মালগাড়ি যাচ্ছিল। গাড়ির চালককে তিনি ডরফ্লি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন।
 
“ডরফ্লি? আমি নিজেই সেখানে যাচ্ছি। আমি এ শিশুটিকে ও তার বাক্স আমার সাথে নিয়ে যেতে পারবো। ” বললেন গাড়ি চালক সেই লোকটি।
 
সেবাস্টিয়ান খুশি হলেন। তিনি হাইডির দাদাকে লেখা চিঠিটি হাইডির কাছে দিলেন। সাথে একটি ছোট ব্যাগও।
 
“এটি জনাব সিম্যানের পক্ষ থেকে একটি উপহার। যত্নসহকারে এর দেখাশোনা করো। এটি ঝুড়ির ভেতরে রোল গুলোর নিচে রেথে দাও।”
 
মালবাহী গাড়িটি ডরফ্লির যতই নিকটে এলো হাইডি ততই আনন্দিত হলো। সে আল্ম পর্বতকে তার সামনেই দেখতে পেলো। অন্যান্য পর্বতগুলোও তার চোখে ভেসে উঠলো।
গ্রামে পৌঁছে সে গাড়ির চালককে ধন্যবাদ জানালো। সে ঝুড়িটি নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো।
 
সে পাহাড়ি পথে দৌড়াতে থাকলো। মনে মনে ভাবছিল, “দাদিমা কি এখনো বেঁচে আছেন?” সে গোট পিটারের বাড়িতে পৌঁছায় ও দরজার সামনে থেমে যায়। ভেতরে যেতে সে অপ্রস্তুত হলো। কিছুটা ভয়ও লাগছিল। অবশেষে সে ভেতরে গেলো। ঘরের কিনার থেকে একটি কন্ঠ ভেসে এলো।
“ও প্রভু! একেবারে হাইডির পায়ের আওয়াজ এর মতো। কে এখানে?
 
“আমি হাইডি; দাদিমা।” সে দাদিমাকে জড়িয়ে ধরে। দাদিমা হাইডির মাথায় তার হাত রাখেন।
“ধন্যবাদ প্রভু। এইতো তার চুল, তার গলার স্বর। ওহ আমার হাইডি। দাদুভাই।”
 
“আমি তোমার জন্য কিছু চমৎকার সাদা রুটি এনেছি।” বলেই সে দাদিমার কোলে রোলগুলো রাখলো।
 
“চমৎকার। এতগুলো।” তিনি ছুঁয়ে অনুভব করলেন। “তুমি রুটির চেয়ে ভালো মানের কিছু এনেছো।”
 
“আমি এখন দাদার কাছে যাবো। আগামিকাল আবার আসবো।” কিছুক্ষণ পর বললো হাইডি।
সে আল্ মের উপরে উঠতে লাগলো। দূর থেকে সে পুরনো ফির গাছগুলোর মাথা দেখতে পেলো। দেখতে পেল বাড়ির ছাদটি। একসময় পুরো ঘরটি দেখো গেলো। দেখা গেলো দাদাকেও। তিনি তার চেয়ারে বসে ছিলেন।
 
“দাদা দাদা।” সে খুশিতে ডাকতে ডাকতে তার কাছে দৌঁড়ে গেলো। কিছুক্ষণ তারা কেউই কথা বলতে পারেনি।
 
“তারা তোমাকে পাঠিয়ে দিলো?” দাদা অবশেষে বললেন।
 
“না দাদা। তারা খুব ভালো কিন্তু আমি খুব করে তোমার কাছে আসতে চেয়েছিলাম। এই নাও, এই চিঠিটি তারা তোমাকে দিয়েছেন।”
 
সে চিঠিটি ও ছোট ব্যাগটি দাদার হাতে দিলো। তিনি ব্যাগের ভেতর দেখলেন।
“এই ব্যাগে তোমার জন্য টাকা আছে। অনেক টাকা। কাপবোর্ডের ভেতর রেখে দাও।”
 
তারা ভেতরে গেলো। সে পুরো ঘর দৌড়ে বেড়ালো। সে মই বেয়ে উপরে উঠলো। “খড়ের উপর আমার বিছানাটি কোথায়? এটি এখানে আর নেই!”
 
“তোমার বিছানাটি আবারও পাতা হবে। এখন এসো। দুধ খেয়ে নাও।”
 
হাইডি পাত্রের সবটুকু দুধ খেলো। সে বললো, “পৃথিবীতে আমাদের দুধের মতো ভালো আর কিছু নেই।”
 
বাইরে অনেকগুলো পাওয়ের আওয়াজ হলো। হাইডি খুশিতে লাফ দিলো। সে দৌড়ে বেরিয় ছাগলগুলোর কাছে গেলো। তাদের পেছনে ছিলো পিটার।
 
“শুভ সন্ধ্যা, পিটার।” বললো হাইডি।
পিটার কিছু বললো না। মুখ ‘হা’ করে দাঁড়িয়ে রইলো। ও দিকে হাইডি ছাগল নিয়ে মেতে উঠলো।
 
“তাহলে তুমি ফিলে এলে? খুব ভালো হয়েছে।” বলেই কাছে এসে হাইডির হাত ধরলো। তারপর খুশি মনে সে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করলো।
 
খড়ের ওপর হাইডির বিছানা প্রস্তুত করা হলো। সে স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিলো তাকে বাড়ি নিয়ে আসার জন্য। তারপর ঘুমিয়ে গেলো। ঐ রাতে তাকে ঘুমের মাঝে হাঁটতে হয়নি।

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com

No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.