শুভ্রা পান্ডে’র কবিতা
প্রার্থনা
প্রকৃতি শুরু করেছে মারণযজ্ঞ
হোমানলের আগুনে ধ্বংস করছে
পৃথিবীর যত জমে থাকা ক্লেদ
বহুদিন ধরে জমিয়ে রাখা
সমিধ আজ ঘৃতাহুতির অপেক্ষায়
পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ
ক্রমশ একাকার এক হোমশিখায়
কে পাপী, কে পূণ্যবান নেই বাছবিচার
শিশু থেকে বৃদ্ধ আজ মহাকালের
মারণযজ্ঞের মিছিলে পা মিলিয়েছে
প্রকৃতি, নিয়েছি অনেক কিছু তোমার
তোমার সুনিবীড় অরণ্য, নদীর নাব্যতা
পশুপাখি, তোমার আকরিক সম্পদ
আধুনিকতার অহঙ্কারে অন্ধ হয়ে
অনেক অত্যাচার করেছি তোমাকে
ভাবিনি তোমার সহনীয়তার পরিমাপ
তবু একবার কি ক্ষমা করা যায় না?
পূর্ণাহুতি দিয়ে, একবার বলা যায় না
"অগ্নি ত্বং সমুদ্রং গচ্ছ
পৃথ্বি ত্বং শীতলা ভব"
আজ সারা পৃথিবীবাসি তোমার ক্ষমাপ্রার্থী
বন্ধ কর তোমার এই মারণযজ্ঞ
শান্তিবারি সিঞ্চনে আবার শান্তি ফিরিয়ে দাও
তোমার সেই অমর কবির ভাষায় প্রার্থনা করি…
দুঃখ দৈন্য লয়ে আছে দাঁড়ায়ে
ঊর্দ্ধ মুখে নরনারী…"
তত্বকথা
জটিল জীবনতত্ব বজ্র হানে
জন চেতনার সাজানো ইমারতে
ঈশ্বর খোদিত ইঁটে ধর্মপ্রাচীর
কালের আবর্তে ক্ষয়াটে সৌন্দর্য
বিপ্লব ইতিহাস লেখে নগ্ন মানবিক
অনুভূতির, শ্বাপদের মন্থর গতি
বাসা বাঁধে রক্তের কণায় কণায়
প্রজন্ম সুখের উল্লাসে ঢাকা পড়ে
প্রসব যন্ত্রণা, চোখ ঢাকে গান্ধারী
একশ র উন্মাদনা নিয়ে আসে
কুরুক্ষেত্র ভাবনা, অপলাপ হয় সত্যের
কৌশিকী অমানিশা ঘিরে রাখে
বিবেক, বুদ্ধি, শুভ মানবিক বোধ
কতগুলো শংসাপত্র ছেঁড়া কাগজের
টুকরো, লিখে রাখে জীবনপঞ্জী
জন চেতনার খাঁজে খাঁজে জমা হয়
বিষবাস্প, কাঁটাতারের ওপারে
জমা দেওয়া বন্দকি ভালোবাসা
সাইলকের লোহার সিন্দুকে বন্ধ
দুয়ারে কড়া নাড়ে মহাজন
মেয়াদ শেষের দিন সমাগত
জমা রাখা সম্পদ ফেরত পাওয়ার
আশায় লাইনে ভীড় বাড়ে
কি নিয়ে আসবে যুধিষ্টির
পঞ্চগ্রামের আশ্বাস, নাকি কারাবাস?
পাক খায় মানবিক পরীক্ষার খাতায়
মসিলিপ্ত ফলাফল অপেক্ষায় থাকে
..................................................
চল হেঁটে আসি
চল না আজ সবকিছুকে ভুলে
তোমার সাথে দু পা হেঁটে আসি
একটা গোটা আকাশ ভালোবাসা
তোমার মুখের একটু খানি হাসি
চাঁদটা না হয় চলুক পাশে পাশে
আলো ছায়ার কাটুক আঁকিবুকি
ঘাস বিছানা, জাফরি আলোর মাঝে
তোমার বুকে একটু মাথা রাখি
পুকুর পাড়ে ঐ যে ঝুপসি আঁধার
তোমার আমার গল্পদাদুর আসর
নেই তো সেথা কোনো কাজের তাড়া
তোমার আমার যাপন অবসর
মেঘেরা সব দল বেঁধে আজ এসে
বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে যদি যায়
ভিজবো আমি তোমার বুকে মিশে
মনের গোপন গভীর ভালোবাসায়
চল না আজ একটু কাছাকাছি
তোমায় আমি একটু ছুঁয়ে থাকি
চাওয়া পাওয়ার স্বপ্ন গুলো যত
তোমার কাছে আজকে জমা রাখি
হোক না এটা মিছিমিছি ভাবা
সত্যি ভাবতে দোষ তো কিছু নেই
তোমার সাথে দু পা হাঁটতে চাওয়া
বাস্তবে নয়, থাকুক কল্পনাতেই।
..................................................
নোবেল পুরস্কার
অন্ধকারে তলিয়ে যায় স্বপ্ন
কত নাম ঢাকা পড়ে যায়
বৈদ্যুতিক আলোর ঝলকানিতে
বস্তির হাহাকার বাস্তব ব্যস্ততার আড়ালে
এক অব্যক্ত যন্ত্রনায় থাকে মুক
মেধাবী রত্ন রা হারিয়ে যায়
দারিদ্রের কুঠারাঘাতে
কে তার খোঁজ রাখে?
দেখা হয়না শ্যাওলা পড়া
সেই সব প্রবাল যার রক্তিম দ্যুতি
অবহেলায় পড়ে থাকে
অতল রত্নাকরের গভীরে
হ্যারিকেনের আলোয়
আঁধার রাতে যে মুখগুলো
বিষন্নতা মেখে ভোরের
সূর্যের অপেক্ষা করে
হাড় জিরজিরে অসুস্থ বাপ
মায়ের কাজ করা হাতে
পরের বাড়ির বাসন মাজার ছাপ
বলে যায় তার অস্তিত্বহীনতার রূপকথা
কত অভিজিৎ, অমর্ত্য রা প্রতিনিয়ত
নোবেল জয়ের স্বপ্ন নিয়ে
পূর্ণিমার চাঁদে ঝলসানো রুটির দেখা পায়
ওরা রাণার, ঘরে ঘরে বার্তা
পৌঁছানোর দায়িত্ব নিয়ে
ছুটে চলে অধরা স্বপ্নের পিছনে
ধ্রুব নক্ষত্র ওদের পথ দেখায় না
ছুটে চলে এক অন্ধকার থেকে
আর এক অন্ধকারের প্রান্তসীমায়
ক্ষুধার রাজ্যে ওদের পৃথিবীতে
একটায় নোবেল পুরস্কার
দুমুঠো ভাত আর এক টুকরো রুটি।
..................................................
সঞ্জীবনী
শ্মশান কবর খোঁজা দুশছটা হাড়
শোয়ানো গির্জার বারান্দায়
কোরাণ পুরাণ বাইবেলের মন্ত্রে
জেগে উঠুক প্রাণের স্পন্দনে
পৃথিবীর কালো বোর্ডে
অঙ্কের আঁকিবুকি রেখায়
ভাগচিহ্ন হয়ে যাক বিয়োগ
দুদিকের ফুটকি দুটো উঠে গিয়ে
দম দেওয়া রোবটের কারখানা
বন্ধ হয়ে, মানব কারখানায় তৈরী
ভাইরাস মুক্ত যন্ত্রপাতি
শল্যচিকিৎসায় নতুন যোজন
কর্কটাক্রান্ত শরীরের ব্যবচ্ছেদে
ভেদাভেদ হীন হৃৎ-প্রতিস্থাপন
জীবনের নতুন চোখের ছায়ায়
একটা শ্যামলিমার স্বপ্ন
দূষণ হীন আকাশ
বাতাসের সুঘ্রাণ অস্তিত্বের নাকে
ঠোঁট ছুঁয়ে ধর্ষিতার মাতৃত্বের বুক
দুহাতে সাঁড়াশি পিড়নে কীচকের লালসা
জঠরের হোমাগ্নীতে আহুতি হিংসা
দ্বেষ স্বার্থপরতা
দুপায়ে তথাগতর কদম
রাম রহিম যিশুর সঞ্জীবনী
মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলার অঙ্গীকার
ধ্বনিত হোক দুশ ছয়ের কাঠামোয়।
..................................................
ভারসাম্য
দেয়াল বেয়ে ওঠা টিকটিকি
মুখের সামনে পতঙ্গ খাদ্য
উপোষের পারণ অপেক্ষায়
শান্ত উপবেশন, নির্ভয় নির্লিপ্ততা
পিছনের এগিয়ে আসা শমনের
খবর বিহীন যাপন নির্ভরতায়
পরিবেশের ভারসাম্যের নীতি
নির্দ্ধারণের ঘেরাটোপে বন্দি
জবাবি জবান পশ্চাদোপসরণের
সরণী তে নামের নথি বদ্ধতায়
টিকটিকি চোখ লক্ষ্যে স্থির
কালো সাদা বাছবিচার নেই
নেই বিবেকের দংশন
উদরপুর্তির আনন্দে উদ্বেলিত মন
চিরদিনই পতঙ্গকুল পোড়ে
আগুনে, নয় খাদ্য হয় খাদকের
জেহাদ ঘোষনা অর্থহীন
বিচারের প্রহসন চলে দৈনন্দিন
ধারাবাহিকতা বজায় রেখে
দেয়ালের কান থাকলেও
মুখবন্ধ চিরদিন,তাই প্রতিনিয়ত
টিকটিকির সগর্ব আস্ফালন
টিক টিক টিক টিক...
শূণ্যতার অনুভবে
নির্জনে বয়ে যাওয়া স্রোতস্বিনী
পাড়ে আগুনের লকলকে শিখা
পুড়ছে সুখ দুঃখ, আশা নিরাশা, প্রেম
কত ছবি ঐ বয়ে যাওয়া বুকে আঁকা।
সবুজ ডালপালায় কচি পাতা
আগামীর ঘোর লাগা না ফোটা চোখে
ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর রূপকথা লেখা শরীরে
বাসা বাঁধে সভ্যতার নির্লজ্জ ভালোবাসা।
কালের তর্জনী রুখে দাঁড়িয়ে থাকে পাহাড়
বুকে নিয়ে কত শত মহাকাল ক্ষত
নীল শরীরে উদ্বেল নির্ঝরধারা
কীট দ্রংস্ট্রা টুকরো পূজো পায়
মন্দিরে আর্ত করুণায়।
মরা স্রোত, শুকনো কাঠ, ধূসর পাহাড়
আগুনের লেলিহান শিখায়
লীণ হয় প্রত্যেক মানবিক
অস্তিত্বের শূণ্যতার রূপরেখায়।
..................................................
কবিতা ও কবিতা
শব্দ কোনো কবিতা নয়
লিখন বৈশিষ্ট্যে, শব্দ বিন্যাসে
পরতে পরতে উঠে আসে
মালাই নির্যাস, মিষ্ট স্বাদে
তৃপ্ত হয় মনের রসনা
কিরণ ছাড়া চাঁদ মায়া
ছড়ায় না মনের আঙিনায়
কথারা শব্দের মালা গাঁথে
ছোটো বড় সব ফুল দিয়ে
কল্পনার গলায় দোলে মালা
ভাব প্রকাশের অনুভবে
মনের একাগ্রতা মগ্ন হয়ে
জন্ম নেয় কবিতার পৃথিবী
সাগরের ঢেউ ভাঙে
নীল সমুদ্র আর আকাশ
কানাকানি করে রাতের নৈঃশব্দে
একটা একটা কথা ফেনা হয়ে
আছড়ে পড়ে মনের বালুচরে
কবিতা কি শুধুই কবির কল্পনা?
অনুচ্চারিত শব্দের ক্ষতমুখ
তার ব্যথার উৎসারিত অনুভব
এ ক্ষত কবির জীয়ন কাঠি
কবিতা শুধু শব্দ সমষ্টি নয়
কবির তপস্যার সার্থক প্রকাশ।
..................................................
প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাপ্তি
কবে যেন পড়েছিলাম…
for the people.
পুঁথি গত বিদ্যা, আহা কি গালভরা কথা!
মসনদ দখলের লালসায়
টুকরো টুকরো হয়ে গেল
এতগুলো বছরের রক্তক্ষয়
শত শত আত্ম বলিদান
আজ সারা দেশের উৎসবের
প্রহসন মাত্র। ছাব্বিশে জানুয়ারি
প্রজাতন্ত্র দিবস, সত্যিই কি তাই?
আওতায় আসিনি আমরা
আজও তো ভেদাভেদ ঘোচেনি
সংরক্ষণের ঘেরাটোপে বন্দি
আজও কৃষক, মজুর আস্থাহীনতায়
করে আত্মহনন, আজও অশিক্ষা
কুসংস্কার কত ডাইনি সংহার করে
আমরা মোছাতে পারিনা ধর্ষিতা
মেয়ের চোখের জলধারা
তবে কি করে বলি জনগণতন্ত্র?
সাহেবের শ্বেতপত্র, গেরুয়া রাজনীতি?
গনতন্ত্র ফিরে আসুক রবি নজরুলের
একত্রিকরণে, বদ্রুমিঞা আর কেশবের
দাঁড় টানায়, ফকির বাউলের গানের সুরে
কোনো সংহিতা বা হাদিশে নয়
গনতন্ত্র ফিরুক চাঁদের আলো মাখা
তুলসিমঞ্চ আর ঈদগার উজ্জ্বল অস্তিত্বে
গনেশ পাইন আর মকবুল ফিদার ক্যানভাসে
রবিশংকর আর আলি আকবরের যুগলবন্দিতে
মহম্মদ রফি আর লতাজীর কোরাসে
মিণাক্ষীপুরম্ আর তাজমহলের সৌন্দর্য্যে
জামা মসজিদ আর মণিকর্ণিকার পবিত্রতায়
ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারে
বন্দি করে আজ এতগুলো বছর
আমরা সংবিধানের যে পুঁথিগত
রূপ দেখেছি, বাস্তবে চোখ মেলে
এবার তার পরিকাঠামো বদল হোক
প্রজাতন্ত্র সত্যিকারের হয়ে উঠুক
জনগনতান্ত্রিক সংবিধান।
..................................................
উন্মেষ অপেক্ষায়
পৃথিবী তোমার প্রকৃতি এখনও
রোদ্দুর মাখে গায়ে
এখনও বৃষ্টিস্নাত হয় মাটি
ভালোবাসা মেখে গায়ে
এখনও পাখি গান গায়
ভোলেনি তার স্বরগম
এখনও মানব অনুভূতিতে
ধরা পড়ে প্রেম
কিন্তু আর কতদিন?
বৃষ্টিরা ছুটি চাইছে
তোমার প্রকৃতি আজ দূষণের কবলে
পাখিরা সুর ভুলেছে, তরুহীন প্রান্তর
নদীর ধারা নাব্যতাহীন, দূষণ ক্লান্ত
মানবিকতার অবক্ষয়ের ধারা
ভুলিয়েছে প্রেম
পৃথিবী তুমি এগিয়ে চলেছ
এক বিপন্ন, অসহায়তায়
মহিষাসুরের সন্তানেরা আজ
মাথা তুলে সোচ্চার
তাদের সগর্ব আস্ফালনে
প্রতিনিয়ত দলিত হয়ে চলেছে
তোমার আত্মসম্মান
মুখ আর মুখোশের পার্থক্য
আজ হারানো ইতিহাস
আসুরিক শক্তি আজ পরাস্ত
করেছে তোমার শুভ শক্তিকে
কে বাঁচাবে তোমার সৃষ্টিকে?
আজ ছেঁড়া পান্ডুলিপির টুকরো
অস্তিত্বলোপ পাওয়ার ভয় নেই তোমার?
আরও একটা সত্যযুগে
পুনর্জন্মের অভিলাষে
যেখানে এই অস্থির বাতাবরণ
ধ্বংস হয়ে জাগবে নিষ্কলুষ শান্তি,
পিপাসিত চিত্ত আরও আরও
জানার ইচ্ছা প্রকাশ করে জানতে চাইবে…
কথম্ মুক্তি ভবিষ্যতি
বৈরাগ্যং চ কথম্ প্রাপ্তম্
এতদ্ ব্রুহি মম প্রভো।"
শুভ্রা পান্ডে। ঠিকানা - দুবরাজপুর, আনন্দকানন, বীরভূম।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments