মোস্লেমের দেহত্যাগের
সংবাদে হোসেন মহাশোকাকুল হইয়া
কাঁদিতে কাঁদিতে
বলিতে লাগিলেন, "হা ভ্রাতঃ
মোস্লেম! যাহা
বলিয়া
গিয়াছিলে তাহাই
ঘটিল।
হোসেনের প্রাণবিনাশ
করিতেই যদি আবদুল্লাহ্
জেয়াদ্
কোন
ষড়যন্ত্র করিয়া
থাকে, তবে সে
যন্ত্রে আমিই
পড়িব,
হোসেনের প্রাণ
তো
রক্ষা
পাইবে? ভাই!
নিজ
প্রাণ
দিয়া
হোসেনকে
জেয়াদের হস্ত
হইতে রক্ষা করিলে। তুমি
তো
মহা
অক্ষয়
স্বর্গসুখে
সুখী হইয়া জগৎ-যন্ত্রণা হইতে পরিত্রাণ
পাইলে। আমি
দুরন্ত কারবালা
প্রান্তরে অসহায় হইয়া বিন্দুমাত্র
জলের
প্রত্যাশায় বোধ
হয়
সপরিবারে
জীবন হারাইলাম। রে
দুরন্ত পাপিষ্ঠ জেয়াদ্!
তোর
চক্রে
মোস্লেমকে
হারাইলাম।
তোর
চক্রেই
আজ
সপরিবারে
জল
বিহনে মারা পড়িলাম!" মোস্লেমের জন্য হোসেন অনেক দুঃখ করিতে
লাগিলেন। ওদিকে জলাভাবে তাঁহার সঙ্গিগণ মধ্যে মহাকোলাহল
উপস্থিত হইল।
ক্রমে সকলেই
পিপাসাক্রান্ত হইয়া হোসেনের নিকট আসিয়া বলিতে লাগিলেন, "জলাভাবে
এত
লোক
মরে!
পিপাসায় সকলেই শুষ্ককণ্ঠ, এক্ষণে আর তা
সহ্য
হয়
না!"
সকাতরে হোসেন বলিলেন,
"কী
করি।
বিন্দুমাত্র
জলও
পাইবার প্রত্যাশা আর
নাই।
ঈশ্বরের নামামৃত পান ভিন্ন পিপাসা-নিবৃত্তির আর এখন
কি
উপায়
আছে?
বিনা জলে যদি
প্রাণ
যায়,
সকলেই সেই করুণাময় বিশ্বনাথের নাম
করিয়া
পিপাসা নিবৃত্তি কর।
সকলেই আপন আপন
স্থানে যাইয়া ঈশ্বরোপাসনায় মনোনিবেশ কর।" সকলেই
পরমেশ্বরে
মনোনিবেশ করিলেন। ক্রমে
৯ই
তারিখ কাটিয়া
গেল।
দশম
দিবসের প্রাতে হোসেনের শিবিরে মহাকোলাহল। প্রাণ
যায়
আর
সহ্য
হয়
না!
এই
প্রকার গগনভেদী শব্দ
উঠিতে লাগিল।
পরিবারস্থ
সকলের আর্তনাদে এবং কাতরস্বরে হোসেন
আর
তিষ্ঠিতে পারিলেন না।
উপাসনায় ক্ষান্ত দিয়া, হাসনেবানু ও জয়নাবের বস্ত্রাবাসে যাইয়া তাঁহাদিগকে
সান্ত্বনা করিতে লাগিলেন। কন্যা, পুত্র এবং অল্পবয়স্ক বালক-বালিকারা আসিয়া
এক
বিন্দু জলের জন্য
তাঁহাকে ঘিরিয়া
দাঁড়াইল। সাহারবানু দুগ্ধপোষ্য শিশুসন্তানটি ক্রোড়ে
করিয়া
আসিয়া
কাঁদিতে কাঁদিতে
বলিতে লাগিলেন, "আজ সাত রাত
নয়
দিনের মধ্যে একবিন্দু জলও
স্পর্শ করিলাম
না।
পিপাসায় আমার
জীবন শেষ হউক,
তাহাতে কিছুমাত্র
দুঃখ করি না;
কিন্তু স্তনের
দুগ্ধ পর্যন্ত
শুষ্ক হইয়া গিয়াছে। এই
দুগ্ধপোষ্য
বালকের প্রাণনাশের
উপক্রম হইল। এই
সময়ে
একবিন্দু জল-কোন উপায়ে ইহার
কণ্ঠে
প্রবেশ করাইতে পারিলেও বোধ হয়
বাঁচিতে পারিত।"
হোসেন বলিলেন,
"জল
কোথায় পাইব?
এজিদের সৈন্যগণ
ফোরাত নদীর কূল
আবদ্ধ করিয়াছে, জল
আনিতে কাহারো সাধ্য
নাই।"
সাহারবানু বলিলেন,
"এই
শিশু সন্তানটির জীবন
রক্ষার্থে যদি আপনি নিজে
গিয়াও
কিঞ্চিৎ জল উহাকে পান করাইতে পারেন, তাহাতেই-বা হানি কী? একটি প্রাণ তো
রক্ষা
হইবে? আমাদের
জন্য
আপনাকে যাইতে বলিতেছি না।"
হোসেন বলিলেন,
"জীবনে কোন
দিন
শত্রুর
নিকট কী বিধর্মীর নিকট কোন বিষয়ে
প্রার্থী হই নাই।
কাফেরের নিকট কোনকালে কিছু যাচ্ঞা
করি
নাই,
জল
চাহিলে কিছুতেই পাইব না। আর
আমি
এই
শিশুর প্রাণ রক্ষার
কারণেই যদি
তাহাদের নিকট জল ভিক্ষা করি, তবে
আমি
চাহিলে তাহারা জল
দিবে কেন?আমার
মনঃকষ্ট, মনোবেদনা
দিতেই তো তাহারা কারবালায়
আসিয়াছে, আমার
জীবন বিনাশ
করিবার জন্যই তো
তাহারা ফোরাতকূল আবদ্ধ করিয়াছে।"
সাহারবানু বলিলেন,
"তাহা যাহাই
বলুন,
বাঁচিয়া থাকিতে কী
বলিয়া
এই
দুগ্ধপোষ্য
সন্তান
দুগ্ধ-পিপাসায়;-শেষ জল-পিপাসায়
প্রাণ
হারাইবে,
ইহা
কিরূপে
স্বচক্ষে দেখিব!" হোসেন আর
দ্বিরুক্তি করিলেন না। সত্বর
উঠিয়া
গিয়া
অশ্ব
সজ্জিত
করিয়া
আনিয়া
বলিলেন, "দাও! আমার ক্রোড়ে
দাও!
দেখি আমার সাধ্যানুসারে যত্ন করিয়া
দেখি!"-এই বলিয়া হোসেন অশ্বে উঠিলেন। সাহারবানু
সন্তানটি হস্তে
লইয়া
অশ্বপৃষ্ঠে স্বামীর ক্রোড়ে বসাইয়া
দিলেন। হোসেন
পুত্রকে ক্রোড়ে
লইয়া
অশ্বে
কশাঘাত করিলেন।
মুহূর্তমধ্যে ফোরাত
নদীতীরে উপস্থিত হইয়া নদীতীরস্থ
সৈন্যগণকে
বলিলেন, "ভাই সকল! তোমাদের মধ্যে
যদি
কেহ
মুসলমান
থাক,
তবে
এই
দুগ্ধপোষ্য
শিশুর মুখের
দিকে চাহিয়া
কিঞ্চিৎ জল দান
কর।
পিপাসায় ইহার
কণ্ঠতালু শুকাইয়া একেবারে নীরস
কাষ্ঠের ন্যায় হইয়াছে!
এ
সময়ে
কিঞ্চিৎ জলপান
করাইতে পারিলেও বোধ
হয়
বাঁচিতে পারে!তোমাদের
ঈশ্বরের দোহাই,
এই
শিশুসন্তানটির জীবন রক্ষার্থ
ইহার
মুখের প্রতি
চাহিয়া কিঞ্চিৎ
জল
দান
কর।এই
দুগ্ধপোষ্য
শিশুর প্রাণরক্ষা করিলে পরমেশ্বর, তোমাদের প্রতি
প্রসন্ন হইবেন।"
কেহই উত্তর করিল
না।
সকলে একদৃষ্টে হোসেনের দিকে
চাহিয়া রহিল। পুনরায় হোসেন বলিতে
লাগিলেন, "ভাই সকল!
এ
দিন
চিরদিন তোমাদের সুদিন থাকিবে না: কোন
দিন
ইহার
সন্ধ্যা হইবেই হইবে।ঈশ্বরের
অনন্ত ক্ষমতার প্রতি
একবার দৃষ্টিপাত কর; তাঁহাকে একটু
ভয়
কর।
ভ্রাতৃগণ! পিপাসায় জল
দান
মহাপুণ্য তাহাতে আবার
অল্পবয়স্ক শিশু। ভ্রাতৃগণ! ইহার জীবন আপনাদের অনুগ্রহের উপর নির্ভর করিতেছে। আমি সামান্য সৈনিকপুরুষ
নহি;
আমার
পিতা মহামান্য হজরত
আলী,
মাতামহ নূরনবী হজরত
মোহাম্মদ, মাতা ফাতেমা-জোহরা খাতুন
জান্নাত; এই সকল
পুণ্যাত্মাদিগের নাম স্মরণ করিয়াই এই
শিশু সন্তানটির প্রতি
অনুগ্রহ কর। মনে
কর,
যদি
আমি
তোমাদের নিকটে কোন
অপরাধে অপরাধ হইয়া থাকি, কিন্তু
এই
দুগ্ধপোষ্য
বালক তোমাদের কোন অনিষ্ট করে নাই;
তোমাদের নিকট কোন অপরাধে অপরাধী হয়
নাই।
ইহার
প্রতি দয়া করিয়াই
ইহার
জীবন রক্ষা কর।"
সৈন্যগণ মধ্য হইতে একজন
বলিল,
"তোমার পরিচয়ে জানিলাম, তুমি হোসেন।
তুমি সহস্র
অনুনয়
বিনয়
করিয়া
বলিলেও জল দিব
না।
তোমার পুত্র
জল
পিপাসায় জীবন হারাইলে তাহাতে তোমার দুঃখ
কী?
তোমার জীবন
তো
এখনই যাইবে; সন্তানের
দুঃখে না
কাঁদিয়া তোমার নিজের
প্রাণের জন্য একবার কাঁদ;-অসময়ে
পিপাসায় কাতর হইয়া কারবালায়
প্রাণ
হারাইবে,
সেই
দুঃখে একবার ক্রন্দন
কর,
শিশুসন্তানের জন্য জন্য
আর
কষ্ট
পাইতে হইবে না। এই
তোমার সকল জ্বালাযন্ত্রণা একেবারে নিবারণ করিয়া দিতেছি।" এই বলিয়া
সেই
ব্যক্তি হোসেনের বক্ষ লক্ষ্য
করিয়া
এক
বাণ
নিপে করিল। ক্ষিপ্তহস্ত-নিপ্তি সেই
সুতীক্ষ্ণ বাণ
হোসেনের বক্ষে
না
লাগিয়া ক্রোড়স্থ শিশুসন্তানের বক্ষ বিদারণ করিয়া
পৃষ্ঠদেশ পার
হইয়া
গেল।
হোসেনের ক্রোড়
রক্তে
ভাসিতে লাগিল।
হোসেন বলিতে
লাগিলেন, "ওরে পাষাণহৃদয়!
ওরে
শর
নিক্ষেপকারী! কী কার্য করিলি!
এই
শিশুসন্তান
বধে
তোর
কী
লাভ
হইল?
হায়
হায়!
আমি
কোন্ মুখে
ইহাকে লইয়া যাইব! সাহারবানুর
নিকট গিয়াই-বা
কী
উত্তর
করিব।"
হোসেন মহাখেদে এই কথা
কয়েকটি বলিয়াই সরোষে অশ্বচালনা করিলেন। শিবির
সম্মুখে আসিয়া মৃত-সন্তান ক্রোড়ে করিয়াই
লম্ফ
দিয়া
অশ্ব
হইতে অবতরণ করিলেন।
সাহারবানুর নিকট
গিয়া
বলিলেন, "ধর! তোমার
পুত্র ক্রোড়ে লও!
আজ
বাছাকে স্বর্গের সুশীতল জল পান
করাইয়া
আনিলাম!"সাহারবানু সন্তানের বুকের
প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়াই অজ্ঞান
হইয়া
ভূতলে
পতিতা হইলেন!
পরে
বলিলেন, "ওরে!কোন্
নির্দয় নিষ্ঠুর
এমন
কার্য করিল! কোন্ পাষাণহৃদয় এমন
কোমল শরীরে
লৌহশর নিক্ষেপ করিল! ঈশ্বর!সকলই তোমার খেলা!
যে
দিন
মদিনা পরিত্যাগ
করিয়াছি, সেই
দিনই দুঃখের ভার মাথায় ধরিয়াছি।"
শিবিরস্থ
পরিজনেরা
সকলেই সাহারবানুর
শিশুসন্তানের জন্য কাঁদিতে লাগিল।
কেহ
কাহাকেও সান্ত্বনা করিতে সক্ষম হইল
না।
মদিনাবাসীদিগের মধ্যে
আবদুল ওহাব নামক একজন
বীরপুরুষ
হোসেনের সঙ্গী
লোক
মধ্যে
ছিলেন, আবদুল
ওহাবের মাতা
স্ত্রীও সঙ্গে
আসিয়াছিলেন।
হোসেনের এবং
তাঁহার
পরিজনগণের দুঃখ
দেখিয়া আবদুল
ওহাবের মাতা
সরোষে তাহাকে বলিতে
লাগিলেন, "আবদুল
ওহাব!
তোমাকে কি
জন্য
গর্ভে
ধারণ করিয়াছিলাম?
হোসেনের এই
দুঃখ দেখিয়া
তুমি এখনো
বসিয়া
আছ?
এখনো তোমাকে অস্ত্রে সুসজ্জিত দেখিতেছি
না?-এখনো তুমি অশ্ব সজ্জিত
করিয়া
ইহার
প্রতিশোধ লইতে অগ্রসর
হইতেছ না? জল
বিহনে সকলেই মরিবে,
আর
কতক্ষণ বাঁচিবে?
ধিক্ তোমার
জীবনে! কেবল কি বন্য
পশু
বধের
জন্যই
শরীর
পুষিয়াছিলে? এখনো স্থির হইয়া
আছ?
ধিক্ তোমার
জীবনে! ধিক্ তোমার
বীরত্বে! হায়!
হায়!হোসেনের
দুগ্ধপোষ্য
সন্তানের প্রতি
যে
হাতে তীর মারিয়াছে, আমি কি
সেই
পাপীর সেই হাতখানা
দেখিয়াই পরিতৃপ্ত হইব, তাহা মনে করিয়ো
না।
তোমার শরসন্ধানে সেই
বিধর্মী নারকীর তীরবিদ্ধ
মস্তক
আজ
আমি
দেখিতে ইচ্ছা
করি।
হায়
হায়!
এমন
কোমল শরীর যে
নরাধম তীর বিদ্ধ করিয়াছে, তাহার শরীরে
মানুষী রক্ত,
মানুষী ভাব,-কিছুই নাই।
আবদুল ওহাব! তুমি স্বচে
সাহারবানুর ক্রোড়স্থ সন্তানের সাংঘাতিক মৃত্যু দেখিয়াও
নিশ্চিন্তভাবে আছ! শিশুশোকে
শুদ্ধ নয়নজলই
ফেলিতেছ! নিতান্ত আক্ষেপের বিষয়! বিপদে দুঃখে তোমরাই যদি
কাঁদিয়া অনর্থ করিলে
তবে
আমরা আর কি
করিব?
অবলা নিঃসহায়া স্ত্রীজাতির জন্যই
বিধাতা কান্নার সৃষ্টি
করিয়াছেন। বীরপুরুষের জন্য নহে।"
মাতার উৎসাহসূচক
ভর্ৎসনায় আবদুল ওহাব তখনই সজ্জিত হইয়া
আসিলেন। মাতার
চরণ
চুম্বন করিয়া বলিলেন, "আবদুল ওহাব
আর
কাঁদিবে না। তাঁহার
চক্ষের
জল
আর
দেখিবেন না;
ফোরাত নদীর কূল
হইতে শত্রুদিগকে তাড়াইয়া মোহাম্মদের
আত্মীয়স্বজন
পরিবারদিগের জলপিপাসা নিবারণ করিবে, আর না
হয়
কারবালাভূমি
আবদুল ওহাবের
শোণিতে আজ
অগ্রেই
রঞ্জিত
হইবে? কিন্তু
মা!
এমন
কঠিন
প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণাশয়ে যুদ্ধেক্ষেত্র
গমন
সময়ে
আমার
সহধর্মিণীর
মুখখানি
একবার দেখিয়া
যাইতে ইচ্ছা
করি।"
মাতা বলিলেন,
"ছি
ছি!
বড়
ঘৃণার কথা! যুদ্ধযাত্রীর
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের
শোভা রমণীর
নয়নতৃপ্তির জন্য নহে।
বীর-বেশ বীরপুরুষেরই চক্ষুরঞ্জক। বিশেষ,
এই
সময়ে
যাহাতে মনে
মায়ার
উদ্রেক
হয়,
জীবনাশা
বৃদ্ধি হয়, এমন
কোন
স্নেহপাত্রের
মুখ
দেখিতেও নাই,
দেখাইতেও
নাই।
ঈশ্বর-প্রসাদে
ফোরাতকূল উদ্ধার
করিয়া
অগ্রে
হোসেন-পরিবারের জীবন
রক্ষা
কর,
মদিনাবাসীদিগের প্রাণ
বাঁচাও
তাহার পর বিশ্রাম। বিশ্রাম
সময়ে
বিশ্রামের উপকরণ যাহা, তাহা
সকলই পাইবে। বীরপুরুষের
মায়া
মমতা কি? বীরধর্মে
অনুগ্রহ কি?একদিন জন্মিয়াছ একদিন মরিবে,-শত্রুসম্মুখীন হইবার
অগ্রে
স্ত্রীমুখ দেখিবার অভিলাষ
কি
জন্য?
তুমি যদি মনে
মনে
স্থির
করিয়া
থাক
যে
এই
শেষ
যাত্রা, আর ফিরিব না, জন্মশোধ স্ত্রীর মুখখানি
দেখিয়াই যাই, তবে
তুমি কাপুরুষ, বীরকুলের কণ্টক,
বীরবংশের
গ্লানি, বীরকুলের কুলাঙ্গার।"
আবদুল ওহাব আর
একটি কথাও না
বলিয়া
জননীর চরণচুম্বনপূর্বক ঈশ্বরের নাম করিয়া
অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ করিলেন।
অতি
অল্প
সময়ের
মধ্যে
ফোরাতকূলে যাইয়া
বিপক্ষগণকে বলিতে লাগিলেন, "ওরে পাষাণহৃদয় বিধর্মিগণ!
যদি
প্রাণের মমতা
থাকে, যদি আর
কিছুদিন জগতে বাস করিবার ইচ্ছা থাকে, তবে শীঘ্র নদীকূল ছাড়িয়া
পলায়ন
কর।
দেখ,
আবদুল ওহাব নদীকূল
উদ্ধার
করিয়া
দুগ্ধপোষ্য
শিশুহন্তার
মস্তক
নিপাত জন্য আসিয়াছে। তোদের বুদ্ধিজ্ঞান একেবারেই দূর হইয়াছে,
তোরা কি এই
অকিঞ্চিৎকর জীবনকে চিরজীবন মনে
করিয়া
রহিয়াছিস্?
এই
জীবনের কি
আর
অন্ত
নাই?
ইহার
কি
শেষ
হইবে না? শেষ
দিনের কথা কি
একেবারেই ভুলিয়া গিয়াছিস্?
যেদিন স্বর্গাসনে বিচারপতি স্বয়ং বিচারাসনে বসিয়া জীব
মাত্রের পাপ পুণ্যের বিচার
করিবেন, বল তো
কাফের সে দিন
আর
তোদিগকে
কে
রক্ষা
করিবে? সেই সহস্র সহস্র
সূর্য
কিরণের অগ্নিময় উত্তাপ
হইতে কে বাঁচাইবে? সেই
বিষম দুর্দিনে অনুগ্রহবারি
সিঞ্চনে কে
আর
তোদের পিপাসা নিবারণ করিয়া শান্তি দান করিবে? বল্ত, কাফের কাহার
নাম
করিয়া
সেই
দুঃসহ নরকাগ্নি হইতে রক্ষা পাইবি? অর্থের
দাস
হইলে কি আর
ধর্মাধর্মের জ্ঞান
থাকে না? যদি
যুদ্ধের সাধ থাকে সে সাধ
আজ
অবশ্য মিটাইব। এখনো
বলিতেছি, ফোরাতকূল ছাড়িয়া
দিয়া
সেই
বিপদকাণ্ডারী প্রভু হজরত
মোহাম্মদের
পরিজনগণের প্রাণরক্ষা কর।
অবলা অসহায়দিগকে শুষ্ককণ্ঠ
করিয়া
মারিতে পারিলেই কি
বীরত্ব প্রকাশ হয়? এই
কি
বীর
ধর্মের
নীতি? দুগ্ধপোষ্য শিশু-সন্তানকে দূর হইতে চোরের
ন্যায়
বধ
করাই
কি
তোদের বীরত্ব? যদি যথার্থ যুদ্ধের
সাধ
থাকে, যদি যথার্থই বীরত্ব দেখাইয়া
মরিতে ইচ্ছা থাকে, আবদুল
ওহাবের সম্মুখে
আয়।
যদি
মরিতে ভয় হয়
তবে
ফোরাতকূল ছাড়িয়া
পলায়ন
কর।
ন্যূনতা স্বীকার কিংবা যাচ্ঞা
করিলে আবদুল
ওহাব
পরম
শত্রুকেও তাহার
প্রাণ
ভিক্ষা দিয়া থাকে। মদিনাবাসীরা
তোদের ন্যায় যুদ্ধে শিক্ষিত
নহে।
এই
অহঙ্কারেই তোরা মাতিয়া
আছিস্। কিন্তু
ঈশ্বর
প্রসাদে তাহারা যথার্থ বীর ও
যুদ্ধ বিদ্যায়
পারদর্শী।"
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments