বিষাদ সিন্ধু : মীর মশাররফ হোসেন_মহরম পর্ব : ৩১তম প্রবাহ

 
মো­স্লে­মের দে­­ত্যা­গের সং­বা­দে হো­সেন মহা­শো­কা­কুল হইয়া কাঁদি­তে কাঁদি­তে বলি­তে লা­গি­লেন, "হা ভ্রা­তঃ মো­স্লেম! যা­হা বলিয়া গিয়াছি­লে তা­হাই ঘটিল। হো­সে­নের প্রা­­বি­নাশ করি­তেই যদি আব­দু­ল্লা­হ্ জেয়াদ্ কোন ষড়যন্ত্র করিয়া থা­কে, তবে সে যন্ত্রে আমিই পড়িব, হো­সে­নের প্রাণ তো রক্ষা পা­­বে? ভাই! নিজ প্রাণ দিয়া হো­সে­­কে জেয়াদের হস্ত হই­তে রক্ষা করি­লে। তু­মি তো মহা অক্ষয় স্ব­র্গ­সু­খে সু­খী হইয়া জগৎ-যন্ত্র­ণা হই­তে পরি­ত্রাণ পা­­লে। আমি দু­­ন্ত কা­­বা­লা প্রা­ন্ত­রে অস­হায় হইয়া বি­ন্দু­মা­ত্র জলের প্র­ত্যা­শায় বোধ হয় সপ­রি­বা­রে জী­বন হা­রা­­লাম। রে দু­­ন্ত পা­পি­ষ্ঠ জেয়াদ্! তোর চক্রে মো­স্লে­­কে হা­রা­­লাম। তোর চক্রেই আজ সপ­রি­বা­রে জল বি­­নে মা­রা পড়িলাম!" মো­স্লে­মের জন্য হো­সেন অনেক দু­ঃখ করি­তে লা­গি­লেন। ওদি­কে জলা­ভা­বে তাঁহার সঙ্গি­গণ মধ্যে মহা­কো­লা­হল উপ­স্থিত হইল
ক্র­মে সক­লেই পি­পা­সা­ক্রা­ন্ত হইয়া হো­সে­নের নি­কট আসিয়া বলি­তে লা­গি­লেন, "জলা­ভা­বে এত লোক মরে! পি­পা­সায় সক­লেই শু­ষ্ক­­ণ্ঠ, এক্ষ­ণে আর তা সহ্য হয় না!"
সকা­­রে হো­সেন বলি­লেন, "কী করি। বি­ন্দু­মা­ত্র জলও পা­­বার প্র­ত্যা­শা আর নাই। ঈশ্ব­রের না­মা­মৃত পান ভি­ন্ন পি­পা­সা-নি­বৃ­ত্তির আর এখন কি উপায় আছে? বি­না জলে যদি প্রাণ যায়, সক­লেই সেই করু­ণাময় বি­শ্ব­না­থের নাম করিয়া পি­পা­সা নি­বৃ­ত্তি কর। সক­লেই আপন আপন স্থা­নে যাইয়া ঈশ্ব­রো­পা­­নায় মনো­নি­বেশ কর।" সক­লেই পর­মে­শ্ব­রে মনো­নি­বেশ করি­লেন। ক্র­মে ৯ই তা­রিখ কা­টিয়া গেল। দশম দি­­সের প্রা­তে হো­সে­নের শি­বি­রে মহা­কো­লা­হল। প্রাণ যায় আর সহ্য হয় না! এই প্র­কার গগ­­ভে­দী শব্দ উঠি­তে লা­গিল। পরি­বা­­স্থ সক­লের আর্ত­না­দে এবং কা­­­স্ব­রে হো­সেন আর তি­ষ্ঠি­তে পা­রি­লেন না। উপা­­নায় ক্ষা­ন্ত দিয়া, হা­­নে­বা­নু জয়না­বের বস্ত্রা­বা­সে যাইয়া তাঁহা­দি­­কে সা­ন্ত্ব­না করি­তে লা­গি­লেন। কন্যা, পু­ত্র এবং অল্পবয়স্ক বা­লক-বা­লি­কা­রা আসিয়া এক বি­ন্দু জলের জন্য তাঁহা­কে ঘি­রিয়া দাঁড়াইল। সা­হা­­বা­নু দু­গ্ধ­পো­ষ্য শি­শু­­ন্তা­­টি ক্রোড়ে করিয়া আসিয়া কাঁদি­তে কাঁদি­তে বলি­তে লা­গি­লেন, "আজ সাত রাত নয় দি­নের মধ্যে এক­বি­ন্দু জলও স্প­র্শ করি­লাম না। পি­পা­সায় আমার জী­বন শেষ হউক, তা­হা­তে কি­ছু­মা­ত্র দু­ঃখ করি না; কি­ন্তু স্ত­নের দু­গ্ধ পর্য­ন্ত শু­ষ্ক হইয়া গিয়াছে। এই দু­গ্ধ­পো­ষ্য বা­­কের প্রা­­না­শের উপ­ক্রম হইল। এই সময়ে এক­বি­ন্দু জল-কোন উপায়ে ইহার কণ্ঠে প্র­বেশ করা­­তে পা­রি­লেও বোধ হয় বাঁচি­তে পা­রিত।" হো­সেন বলি­লেন, "জল কো­থায় পা­ইব? এজি­দের সৈন্য­গণ ফো­রাত নদীর কূল আব­দ্ধ করিয়াছে, জল আনি­তে কা­হা­রো সা­ধ্য নাই"
সা­হা­­বা­নু বলি­লেন, "এই শি­শু সন্তা­­টির জী­বন রক্ষা­র্থে যদি আপ­নি নি­জে গিয়াও কি­ঞ্চিৎ জল উহা­কে পান করা­­তে পা­রেন, তা­হা­তেই-বা হা­নি কী? এক­টি প্রাণ তো রক্ষা হই­বে? আমা­দের জন্য আপ­না­কে যা­­তে বলি­তে­ছি না।"
হো­সেন বলি­লেন, "জী­­নে কোন দিন শত্রুর নি­কট কী বি­­র্মীর নি­কট কোন বিষয়ে প্রা­র্থী হই নাই। কা­ফে­রের নি­কট কো­­কা­লে কি­ছু যা­চ্ঞা করি নাই, জল চা­হি­লে কি­ছু­তেই পা­ইব না। আর আমি এই শি­শুর প্রাণ রক্ষার কা­­ণেই যদি তা­হা­দের নি­কট জল ভি­ক্ষা করি, তবে আমি চা­হি­লে তা­হা­রা জল দি­বে কেন?আমার মনঃ­­ষ্ট, মনো­বে­­না দি­তেই তো তা­হা­রা কা­­বা­লায় আসিয়াছে, আমার জী­বন বি­নাশ করি­বার জন্যই তো তা­হা­রা ফো­রা­তকূল আব­দ্ধ করিয়াছে।"
সা­হা­­বা­নু বলি­লেন, "তা­হা যা­হাই বলুন, বাঁচিয়া থা­কি­তে কী বলিয়া এই দু­গ্ধ­পো­ষ্য সন্তান দু­গ্ধ-পি­পা­সায়;-শেষ জল-পি­পা­সায় প্রাণ হা­রা­­বে, ইহা কিরূপে স্ব­­ক্ষে দে­খিব!" হো­সেন আর দ্বি­রু­ক্তি করি­লেন না। সত্বর উঠিয়া গিয়া অশ্ব সজ্জিত করিয়া আনিয়া বলি­লেন, "দাও! আমার ক্রোড়ে দাও! দে­খি আমার সা­ধ্যা­নু­সা­রে যত্ন করিয়া দে­খি!"-এই বলিয়া হো­সেন অশ্বে উঠি­লেন। সা­হা­­বা­নু সন্তা­­টি হস্তে লইয়া অশ্ব­পৃ­ষ্ঠে স্বা­মীর ক্রোড়ে বসাইয়া দি­লেন। হো­সেন পু­ত্র­কে ক্রোড়ে লইয়া অশ্বে কশা­ঘাত করি­লেন। মুহূর্ত­­ধ্যে ফো­রাত নদী­তী­রে উপ­স্থিত হইয়া নদী­তী­­স্থ সৈন্য­­­কে বলি­লেন, "ভাই সকল! তো­মা­দের মধ্যে যদি কেহ মু­­­মান থাক, তবে এই দু­গ্ধ­পো­ষ্য শি­শুর মু­খের দি­কে চা­হিয়া কি­ঞ্চিৎ জল দান কর। পি­পা­সায় ইহার কণ্ঠ­তা­লু শু­কাইয়া একে­বা­রে নী­রস কা­ষ্ঠের ন্যায় হইয়াছে! সময়ে কি­ঞ্চিৎ জল­পান করা­­তে পা­রি­লেও বোধ হয় বাঁচি­তে পা­রে!তো­মা­দের ঈশ্ব­রের দো­হাই, এই শি­শু­­ন্তা­­টির জী­বন রক্ষা­র্থ ইহার মু­খের প্র­তি চা­হিয়া কি­ঞ্চিৎ জল দান কর।এই দু­গ্ধ­পো­ষ্য শি­শুর প্রা­­­ক্ষা করি­লে পর­মে­শ্বর, তো­মা­দের প্র­তি প্র­­ন্ন হই­বেন।"
কে­হই উত্তর করিল না। সক­লে এক­দৃ­ষ্টে হো­সে­নের দি­কে চা­হিয়া রহিল। পু­­রায় হো­সেন বলি­তে লা­গি­লেন, "ভাই সকল! দিন চি­­দিন তো­মা­দের সু­দিন থা­কি­বে না: কোন দিন ইহার সন্ধ্যা হই­বেই হই­বে।ঈশ্ব­রের অন­ন্ত ক্ষ­­তার প্র­তি এক­বার দৃ­ষ্টি­পাত কর; তাঁহা­কে এক­টু ভয় কর। ভ্রা­তৃ­গণ! পি­পা­সায় জল দান মহা­পু­ণ্য তা­হা­তে আবার অল্পবয়স্ক শি­শু। ভ্রা­তৃ­গণ! ইহার জী­বন আপ­না­দের অনু­গ্র­হের উপর নি­র্ভর করি­তে­ছে। আমি সা­মা­ন্য সৈনি­­পু­রুষ নহি; আমার পি­তা মহা­মা­ন্য হজ­রত আলী, মা­তা­মহ নূরন­বী হজ­রত মো­হা­ম্মদ, মা­তা ফা­তে­মা-জো­­রা খা­তুন জা­ন্নাত; এই সকল পু­ণ্যা­ত্মা­দি­গের নাম স্ম­রণ করিয়াই এই শি­শু সন্তা­­টির প্র­তি অনু­গ্রহ কর। মনে কর, যদি আমি তো­মা­দের নি­­টে কোন অপ­রা­ধে অপ­রাধ হইয়া থা­কি, কি­ন্তু এই দু­গ্ধ­পো­ষ্য বা­লক তো­মা­দের কোন অনি­ষ্ট করে নাই; তো­মা­দের নি­কট কোন অপ­রা­ধে অপ­রা­ধী হয় নাই। ইহার প্র­তি দয়া করিয়াই ইহার জী­বন রক্ষা কর।"
সৈন্য­গণ মধ্য হই­তে এক­জন বলিল, "তো­মার পরিচয়ে জা­নি­লাম, তু­মি হো­সেন। তু­মি সহ­স্র অনুনয় বিনয় করিয়া বলি­লেও জল দিব না। তো­মার পু­ত্র জল পি­পা­সায় জী­বন হা­রা­­লে তা­হা­তে তো­মার দু­ঃখ কী? তো­মার জী­বন তো এখ­নই যা­­বে; সন্তা­নের দু­­খে না কাঁদিয়া তো­মার নি­জের প্রা­ণের জন্য এক­বার কাঁদ;-অসময়ে পি­পা­সায় কা­তর হইয়া কা­­বা­লায় প্রাণ হা­রা­­বে, সেই দু­­খে এক­বার ক্র­ন্দন কর, শি­শু­­ন্তা­নের জন্য জন্য আর কষ্ট পা­­তে হই­বে না। এই তো­মার সকল জ্বা­লা­­ন্ত্র­ণা একে­বা­রে নি­বা­রণ করিয়া দি­তে­ছি।" এই বলিয়া সেই ব্য­ক্তি হো­সে­নের বক্ষ লক্ষ্য করিয়া এক বাণ নি­পে করিল। ক্ষি­প্ত­­স্ত-নি­প্তি সেই সু­তী­ক্ষ্ণ বাণ হো­সে­নের বক্ষে না লা­গিয়া ক্রোড়স্থ শি­শু­­ন্তা­নের বক্ষ বি­দা­রণ করিয়া পৃ­ষ্ঠ­দেশ পার হইয়া গেল। হো­সে­নের ক্রোড় রক্তে ভা­সি­তে লা­গিল
হো­সেন বলি­তে লা­গি­লেন, "ওরে পা­ষা­­হৃদয়! ওরে শর নি­ক্ষে­­কা­রী! কী কা­র্য করি­লি! এই শি­শু­­ন্তান বধে তোর কী লাভ হইল? হায় হায়! আমি কো­ন্ মু­খে ইহা­কে লইয়া যা­ইব! সা­হা­­বা­নুর নি­কট গিয়াই-বা কী উত্তর করিব।" হো­সেন মহা­খে­দে এই কথা কয়েক­টি বলিয়াই সরো­ষে অশ্ব­চা­­না করি­লেন। শি­বির সম্মু­খে আসিয়া মৃত-সন্তান ক্রোড়ে করিয়াই লম্ফ দিয়া অশ্ব হই­তে অব­­রণ করি­লেন। সা­হা­­বা­নুর নি­কট গিয়া বলি­লেন, "ধর! তো­মার পু­ত্র ক্রোড়ে লও! আজ বা­ছা­কে স্ব­র্গের সু­শী­তল জল পান করাইয়া আনি­লাম!"সা­হা­­বা­নু সন্তা­নের বু­কের প্র­তি দৃ­ষ্টি­পাত করিয়াই অজ্ঞান হইয়া ভূতলে পতি­তা হই­লেন! পরে বলি­লেন, "ওরে!কো­ন্ নি­র্দয় নি­ষ্ঠুর এমন কা­র্য করিল! কো­ন্ পা­ষা­­হৃদয় এমন কো­মল শরী­রে লৌ­­শর নি­ক্ষেপ করিল! ঈশ্বর!সক­লই তো­মার খে­লা! যে দিন মদি­না পরি­ত্যাগ করিয়াছি, সেই দি­নই দু­­খের ভার মা­থায় ধরিয়াছি।"
শি­বি­­স্থ পরি­­নে­রা সক­লেই সা­হা­­বা­নুর শি­শু­­ন্তা­নের জন্য কাঁদি­তে লা­গিল। কেহ কা­হা­কেও সা­ন্ত্ব­না করি­তে সক্ষম হইল না। মদি­না­বা­সী­দি­গের মধ্যে আব­দুল ওহাব না­মক এক­জন বী­­পু­রুষ হো­সে­নের সঙ্গী লোক মধ্যে ছি­লেন, আব­দুল ওহা­বের মা­তা স্ত্রীও সঙ্গে আসিয়াছি­লেন। হো­সে­নের এবং তাঁহার পরি­­­­ণের দু­ঃখ দে­খিয়া আব­দুল ওহা­বের মা­তা সরো­ষে তা­হা­কে বলি­তে লা­গি­লেন, "আব­দুল ওহাব! তো­মা­কে কি জন্য গর্ভে ধা­রণ করিয়াছি­লাম? হো­সে­নের এই দু­ঃখ দে­খিয়া তু­মি এখ­নো বসিয়া আছ? এখ­নো তো­মা­কে অস্ত্রে সু­­জ্জিত দে­খি­তে­ছি না?-এখ­নো তু­মি অশ্ব সজ্জিত করিয়া ইহার প্র­তি­শোধ লই­তে অগ্র­সর হই­তেছ না? জল বি­­নে সক­লেই মরি­বে, আর কত­ক্ষণ বাঁচি­বে? ধি­ক্ তো­মার জী­­নে! কে­বল কি বন্য পশু বধের জন্যই শরীর পু­ষিয়াছি­লে? এখ­নো স্থির হইয়া আছ? ধি­ক্ তো­মার জী­­নে! ধি­ক্ তো­মার বী­­ত্বে! হায়! হায়!হো­সে­নের দু­গ্ধ­পো­ষ্য সন্তা­নের প্র­তি যে হা­তে তীর মা­রিয়াছে, আমি কি সেই পা­পীর সেই হা­­খা­না দে­খিয়াই পরি­তৃ­প্ত হইব, তা­হা মনে করিয়ো না। তো­মার শর­­ন্ধা­নে সেই বি­­র্মী না­­কীর তী­­বি­দ্ধ মস্তক আজ আমি দে­খি­তে ইচ্ছা করি। হায় হায়! এমন কো­মল শরীর যে নরা­ধম তীর বি­দ্ধ করিয়াছে, তা­হার শরী­রে মা­নু­ষী রক্ত, মা­নু­ষী ভাব,-কি­ছুই নাই। আব­দুল ওহাব! তু­মি স্ব­চে সা­হা­­বা­নুর ক্রোড়স্থ সন্তা­নের সা­­ঘা­তিক মৃ­ত্যু দে­খিয়াও নি­শ্চি­ন্ত­ভা­বে আছ! শি­শু­শো­কে শু­দ্ধ নয়নজ­লই ফে­লি­তেছ! নি­তা­ন্ত আক্ষে­পের বিষয়! বি­­দে দু­­খে তো­­রাই যদি কাঁদিয়া অন­র্থ করি­লে তবে আম­রা আর কি করিব? অব­লা নি­­­হায়া স্ত্রী­জা­তির জন্যই বি­ধা­তা কা­ন্নার সৃ­ষ্টি করিয়াছেন। বী­­পু­রু­ষের জন্য নহে।"
মা­তার উৎসা­হসূচক ভর্ৎসনায় আব­দুল ওহাব তখ­নই সজ্জিত হইয়া আসি­লেন। মা­তার চরণ চু­ম্বন করিয়া বলি­লেন, "আব­দুল ওহাব আর কাঁদি­বে না। তাঁহার চক্ষের জল আর দে­খি­বেন না; ফো­রাত নদীর কূল হই­তে শত্রু­দি­­কে তাড়াইয়া মো­হা­ম্ম­দের আত্মীয়স্ব­জন পরি­বা­­দি­গের জল­পি­পা­সা নি­বা­রণ করি­বে, আর না হয় কা­­বা­লাভূমি আব­দুল ওহা­বের শো­ণি­তে আজ অগ্রেই রঞ্জিত হই­বে? কি­ন্তু মা! এমন কঠিন প্র­তি­জ্ঞা পরিপূর্ণাশয়ে যু­দ্ধে­ক্ষে­ত্র গমন সময়ে আমার সহ­­র্মি­ণীর মু­­খা­নি এক­বার দে­খিয়া যা­­তে ইচ্ছা করি।"
মা­তা বলি­লেন, "ছি ছি! বড় ঘৃ­ণার কথা! যু­দ্ধ­যা­ত্রীর অঙ্গ-প্র­ত্য­ঙ্গের শো­ভা রম­ণীর নয়নতৃ­প্তির জন্য নহে। বীর-বেশ বী­­পু­রু­ষে­রই চক্ষু­­ঞ্জক। বি­শেষ, এই সময়ে যা­হা­তে মনে মায়ার উদ্রেক হয়, জী­­না­শা বৃ­দ্ধি হয়, এমন কোন স্নে­­পা­ত্রের মুখ দে­খি­তেও নাই, দে­খা­­তেও নাই। ঈশ্বর-প্র­সা­দে ফো­রা­তকূল উদ্ধার করিয়া অগ্রে হো­সেন-পরি­বা­রের জী­বন রক্ষা কর, মদি­না­বা­সী­দি­গের প্রাণ বাঁচাও তা­হার পর বি­শ্রাম। বি­শ্রাম সময়ে বি­শ্রা­মের উপ­­রণ যা­হা, তা­হা সক­লই পা­­বে। বী­­পু­রু­ষের মায়া মম­তা কি? বী­­­র্মে অনু­গ্রহ কি?এক­দিন জন্মিয়াছ এক­দিন মরি­বে,-শত্রু­­ম্মু­খীন হই­বার অগ্রে স্ত্রী­মুখ দে­খি­বার অভি­লাষ কি জন্য? তু­মি যদি মনে মনে স্থির করিয়া থাক যে এই শেষ যা­ত্রা, আর ফি­রিব না, জন্ম­শোধ স্ত্রীর মু­­খা­নি দে­খিয়াই যাই, তবে তু­মি কা­পু­রুষ, বী­­কু­লের কণ্টক, বী­­বং­শের গ্লা­নি, বী­­কু­লের কু­লা­ঙ্গার।"
আব­দুল ওহাব আর এক­টি কথাও না বলিয়া জন­নীর চর­­চু­ম্ব­নপূর্বক ঈশ্ব­রের নাম করিয়া অশ্ব­পৃ­ষ্ঠে আরো­হণ করি­লেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে ফো­রা­তকূলে যাইয়া বি­­ক্ষ­­­কে বলি­তে লা­গি­লেন, "ওরে পা­ষা­­হৃদয় বি­­র্মি­গণ! যদি প্রা­ণের মম­তা থা­কে, যদি আর কি­ছু­দিন জগ­তে বাস করি­বার ইচ্ছা থা­কে, তবে শী­ঘ্র নদীকূল ছাড়িয়া পলায়ন কর। দেখ, আব­দুল ওহাব নদীকূল উদ্ধার করিয়া দু­গ্ধ­পো­ষ্য শি­শু­­ন্তার মস্তক নি­পাত জন্য আসিয়াছে। তো­দের বু­দ্ধি­জ্ঞান একে­বা­রেই দূর হইয়াছে, তো­রা কি এই অকি­ঞ্চিৎকর জী­­­কে চি­­জী­বন মনে করিয়া রহিয়াছি­স্? এই জী­­নের কি আর অন্ত নাই? ইহার কি শেষ হই­বে না? শেষ দি­নের কথা কি একে­বা­রেই ভু­লিয়া গিয়াছি­স্? যে­দিন স্ব­র্গা­­নে বি­চা­­­তি স্বয়ং বি­চা­রা­­নে বসিয়া জীব মা­ত্রের পাপ পু­ণ্যের বি­চার করি­বেন, বল তো কা­ফের সে দিন আর তো­দি­­কে কে রক্ষা করি­বে? সেই সহ­স্র সহ­স্র সূর্য কি­­ণের অগ্নিময় উত্তাপ হই­তে কে বাঁচা­­বে? সেই বি­ষম দু­র্দি­নে অনু­গ্র­­বা­রি সি­ঞ্চ­নে কে আর তো­দের পি­পা­সা নি­বা­রণ করিয়া শা­ন্তি দান করি­বে? বল্ত, কা­ফের কা­হার নাম করিয়া সেই দু­­সহ নর­কা­গ্নি হই­তে রক্ষা পা­­বি? অর্থের দাস হই­লে কি আর ধর্মা­­র্মের জ্ঞান থা­কে না? যদি যু­দ্ধের সাধ থা­কে সে সাধ আজ অব­শ্য মি­টা­ইব। এখ­নো বলি­তে­ছি, ফো­রা­তকূল ছাড়িয়া দিয়া সেই বি­­­কা­ণ্ডা­রী প্র­ভু হজ­রত মো­হা­ম্ম­দের পরি­­­­ণের প্রা­­­ক্ষা কর। অব­লা অস­হায়দি­­কে শু­ষ্ক­­ণ্ঠ করিয়া মা­রি­তে পা­রি­লেই কি বী­­ত্ব প্র­কাশ হয়? এই কি বীর ধর্মের নী­তি? দু­গ্ধ­পো­ষ্য শি­শু-সন্তা­­কে দূর হই­তে চো­রের ন্যায় বধ করাই কি তো­দের বী­­ত্ব? যদি যথা­র্থ যু­দ্ধের সাধ থা­কে, যদি যথা­র্থই বী­­ত্ব দে­খাইয়া মরি­তে ইচ্ছা থা­কে, আব­দুল ওহা­বের সম্মু­খে আয়। যদি মরি­তে ভয় হয় তবে ফো­রা­তকূল ছাড়িয়া পলায়ন কর। ন্যূনতা স্বী­কার কি­­বা যা­চ্ঞা করি­লে আব­দুল ওহাব পরম শত্রু­কেও তা­হার প্রাণ ভি­ক্ষা দিয়া থা­কে। মদি­না­বা­সী­রা তো­দের ন্যায় যু­দ্ধে শি­ক্ষিত নহে। এই অহ­ঙ্কা­রেই তো­রা মা­তিয়া আছি­স্। কি­ন্তু ঈশ্বর প্র­সা­দে তা­হা­রা যথা­র্থ বীর যু­দ্ধ বি­দ্যায় পা­­­র্শী।"

⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN

🔗 MY OTHERS CHANNELS

🔗 FOLLOW ME

🔗 MY WEBSITE

🔗 CALL ME
+8801819515141

🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com


No comments

নির্বাচিত লেখা

আফসার নিজাম’র কবিতা

ছায়া ও অশ্বথ বিষয়ক খ-কবিতা এক/ক. সূর্য ডুবে গেলে কবরের ঘুমে যায় অশ্বথ ছায়া একচিলতে রোদের আশায় পরবাসী স্বামীর মতো অপেক্ষার প্রহর কাটায় প্রাচী...

Powered by Blogger.