আলিফ লায়লা : আরব্য রজনী_পর্ব-৬৬
ইংরেজি অনুবাদ : ডঃ জে. সি. মারদ্রুস
বাংলা অনুবাদ : ক্ষিতিশ সরকার
আল্লাহর দোয়ায় হাওয়া অনুকূলে ছিলো। জাহাজে পাল তুলে কাপ্তেন আবার সেই ম্লেচ্ছাক্রান্ত শহরটার দিকে যাত্রা করলো। কয়েকদিন পরেই জাহাজ গিয়ে ভিড়লো। কাপ্তেনের আর তাঁর সয় না। প্রায় দৌড়তে দৌড়তে চলে গেলো। সেই বাগিচায়। বৃদ্ধমালীর বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তে থাকে। চিস্তায় ভাবনায় কামার আল-জামানের চোখের কোণে কালী পড়েছে। নাওয়া খাওয়া প্রায় করে না বললেই চলে। দেহ কৃশ হয়েছে। সারা মুখে বিষাদের ছায়া। ঘরের একপাশে চুপচাপ বসে নিজের নসীবের কথা ভাবছিলো সে। কড়া নাড়ার শব্দে, বসে থেকেই সে হাঁক দেয়, কে?
গলার স্বর কেমন যেন চেনা চেনা ঠেকে! কথার টানে মনে হয়, এ যেন তার নিজের দেশের কেউ? জামান উঠে এসে দরজা খোলে। অবাক হয়ে তাকায়।
কাপ্তেন বলে, আমার জাহাজে আপনার যাওয়ার কথা ছিলো সেদিন। আমরা অপেক্ষাও করেছিলাম অনেক বোলা অবধি। কিন্তু আপনি আর এলেন না দেখে আমরা জাহাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম, জনাব। আমার কোন অপরাধ নেবেন না।
জামান খুব খুশি হয়, না না, তোমাদের কি দোষ। আমিই সময় মতো পৌঁছতে পারলাম না।
কাপ্তেন বলে, আপনি যেতে পারলেন না, তাই আবার নিতে এসেছি আজ।
জামান বলে, খুব আনন্দ পেলাম। ঠিক আছে চলো। হ্যাঁ, আরও কুড়িটা বাক্স জলপাই আছে আমার ঘরে; ও গুলোও নিয়ে যাবো।
কাপ্তেনের ইশারায় খালাসীরা বাক্সগুলো মাথায় তুলে নিলো।
জাহাজে বসে কাপ্তেন বললো, এবনি দ্বীপের সম্রাটের রসুইখানার বাবুর্চি ভোগে গেছে। আপনার জলপাইগুলো বানাবার লোক মিলছে না। সেখানে। অথচ সম্রাটের ভারি পছন্দ হয়েছে। ফলগুলো। ভালো দাম দিয়ে কিনেছে সে সবগুলো। এই নিন, প্রতিটা বাক্সের জন্য এক হাজার দিরহাম দাম দিয়েছে সে। আপনাকে সঙ্গে নিয়ে যাবার হুকুম হয়েছে। ওখানকার রসুইখানার প্রধান বাবুর্চির কাজ পেয়ে যাবেন আপনি।
এমন একটা সুখবর দিয়ে কপ্তেন গর্বের সঙ্গে জামানের মুখের দিকে তাকায়। ভাবে, নিশ্চয়ই সে খুসিতে গদগদ হয়ে উঠবে। কিন্তু জামানের কোনও ভাব-বৈলক্ষণ্য না দেখে সে যেন চুপসে যায়। জামান কোনও জবাব দিলো না।
একটু পরে জাহাজ ছাড়া হলো। কাপ্তেন আবার তার কাছে এসে বলে, প্রাসাদের রসুইখানার মালিক হবেন আপনি, আপনার তো পোয়া বারো। এতক্ষণ জামান কোনও কথা বলেনি, এবার সে আর থাকতে পারলো না।–আমি নেবো না ও চাকরী। আর এ সব কথা বলতে তোমার একটুও বাধ্যছে না কপ্তেন? এখন দরিয়ায় তোমার জাহাজ, আল্লাহর নাম কর।
কাপ্তেন বলে, অনেক আগেই আমি তার দেয়া মেঙেছি, সাহেব। তিনি যেন আমাদের যাত্রা পথ শুভ করেন। আপনার যেন প্রাসাদের রসুইখানার চাকরীটাি হয়ে যায়।
জামান কোনও জবাব দেয় না। নির্বিকার ভাবে দূরে সমুদ্রের নীল জলরাশির দিকে চেয়ে থাকে। কাপ্তেন আরও কাছে এসে বলে, মনে হচ্ছে, আপনি এই চাকরীটা নিতে খুব ইচ্ছক না। তবে কি সম্রাটের ধারণা ভুল! আপনি কি রসুইখানার কাজ কাম জানেন না?
কাপ্তেন বলে, সে আপনার যা অভিরুচি। আমার কর্তব্য সম্রাটের সামনে হাজির করা-তা করতে পারলেই রেহাই পেয়ে যাবো আমি।
এবনি বন্দরের এলাকার মধ্যে জাহাজ ঢুকছে। কাপ্তেন বৃলিলো, নিন সাহেব, নিজেকে ঠিক ঠাক করে নিন, এবার আপনাকে সম্রাটের কাছে নিয়ে যাবো। এখুনি জাহাজ বন্দরে ভিড়বে।
জাহাজ ভিড়ার সঙ্গে সঙ্গে জামানকে সঙ্গে নিয়ে সে প্রাসাদে এসে সম্রাট সমীপে হাজির হলো। বদরের মাথায় একটা বদ বুদ্ধি চেগে উঠেছিলো। কাপ্তেনের সঙ্গে কামার আল-জামানকে দেখামাত্র বদর-এর চিনতে কোনও অসুবিধা হয় না—এই তার প্রাণেশ্বর। জামানের পরণে ছিলো বৃদ্ধমালীর দেওয়া সাধারণ সাজ-পোশাক। তার এই দীন ভিখারীর দশা দেখে বন্দরের বুক ব্যথায় টন টন করে ওঠে। জামান কিন্তু বদরকে একদম চিনতে পারে না। এই তার প্রাণ প্রতিমা-এরই জন্যে সে দিন রজনী চোখের জল ফেলছে।
নিমেষে নিজেকে সহজ করে নিতে পারে বন্দর। কাপ্তেনকে বলে, ওকে ফলের দাম বুঝিয়ে দিয়েছ?
বদর বলে, ঠিক আছে, ওগুলো প্রাসাদে নিয়ে এসো। একহাজার সোনার দিনার দাম পাবে।
কাপ্তেন কুর্নিশ করে চলে যায়।
এই সময়ে রাত্রি শেষ হয়ে আসে। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।
দুশো তিরিশতম রজনী :
জামান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিলো। বদর তার একজন কর্মচারীকে বললো, একে হামামে নিয়ে যাও। ভালো করে গোসল করাও। কাল সকলে আমার সামনে হাজির করবে।
বদর হায়াতের কাছে গিয়ে বলে, এই—সে এসেছে। আমি কিন্তু তার কাছে পরিচয় দিচ্ছি না। কিছুতেই।
হায়াৎ খুশিতে উপছে পড়ে। বদরকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়। সে রাত্রে তারা দুজন আর জড়ােজডি করে শোয় না। সহজভাবে পাশাপাশি শুয়ে সুখস্বপ্ন দেখে দেখে রাত কাটায়।
পরদিন সকালে দামী সাজপোশাক পরে কামার অল-জামান দরবারে এসে হাজির হয়। চোখে মুখে ফোটা ফুলের প্রসন্নতা। বদর উজিরকে বলে, এই যুবকের জন্য একখানা বড় ইমারৎ, একশোটা নফার চাকর এবং উজিরের যোগ্য মাসোহরার বন্দোবস্ত করে দিন। আজ থেকে সে হবে। আমার দরবারের আর একজন উজির। তার জন্যে দামী দামী ঘোড়া, খচ্চর, উট প্রভৃতি যা যা দরকার সব ব্যবস্থা করে দিন।
এই কথা বলে সেদিনের মতো দরবার ছেড়ে চলে গেলো বন্দর। পরদিন যথা সময়ে আবার সে কামার আল-জামানের ছদ্মবেশে দরবারে আসে। জামানকে কাছে ডাকে। সিংহাসনের পাশে যেখানে রাজকুমারদের বসার আসন সেখানে তাকে বসায়। জামান অবাক হয়ে ভাবে, হঠাৎ তাকে সম্রাট এত সম্মান দেখাচ্ছে কেন? নিশ্চয়ই এর পিছনে কোনও মতলব আছে। কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না-কী সে মৎলব? কাপ্তেনের কথাবার্তা শুনে তো এরকম কিছু মনে হয়নি! মনে হচ্ছে, এর পিছনে গূঢ় কোনও রহস্য আছে। খোদা ভরসা, কারণটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। ভাবতে ভাবতে কারণও একটা খুঁজে পায়। সম্রাট বয়সে নেহাৎই কচি; একেবারে তরুণ বলা যায়। এই বয়সে সুঠাম সুন্দর যুবকদের সাহচর্য খুব ভালো লাগে। তাই কি সে আমাকে তার পাশে পাশে রাখতে চায়? ওর কি ধারণা হয়েছে কচি বয়সের লালটুস ছেলে দেখলেই আমার জিভে জল ঝরবে? আর এই জন্যেই কি সে আমাকে হুট করে এমন উঁচু আসনে বসালো? তা যদি ভেবে থাকে সে, খুব ভুল। ওসব বিকৃতির মধ্যে আমি নাই। আমাকে কলের পুতুল বানিয়ে যা খুশি করাবে সে-টি হচ্ছে না। ওর মতলবটা কি, আগে আমাকে জানতে হবে। তারপর যদি বুঝি ব্যাপারটা গোলমেলে, আমি কিন্তু ঐসব ধন-দৌলত ইনাম সম্মানের পরোয়া করি না। লাথি মেরে সব ফেলে রেখে আবার আমার সেই বাগানে ফিরে যাবো।
জামান বদরকে উদ্দেশ করে বলে, জাঁহাপনা অনেক দামী দামী জিনিসপত্রে আমার বাড়ি ভরে দিয়েছেন। ধন-দৌলত এবং প্রয়োজনের সামগ্রী এত দিয়েছেন, অত আমার কোনও কাজে আসবে না। আর তাছাড়া আপনার দরবারে আমাকে যে আসনে বসিয়েছেন তাতে আমি অত্যন্ত কুষ্ঠা বোধ করছি। কারণ এ আসনে কেবলমাত্র আপনার একান্ত বিশ্বাসভাজন প্রাজ্ঞ, প্রবীণ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিরাই বসতে পারেন। বয়সে আমি নিতান্তই যুবক। সাদা দাড়ি গোঁফওয়ালা জ্ঞানী-গুণী উজিরের যোগ্যতা আমি পাবো কোথায়? এসব জেনে শুনেই আপনি আমাকে এই আসনে বসিয়েছেন। এর পিছনে যদি অন্য কোনও উদ্দেশ্য আপনার না থাকে তাহলে তো ব্যাপারটা আরও তলিয়ে ভেবে দেখতে হয়।
বদর মৃদু মুচকী হাসে। বলোল কটাক্ষ হেনে জামানের দিকে তাকায়। বলে, শোনো, প্রিয়দর্শন উজির, তুমি যা বললে তা খুব সত্যি, এর পিছনে কারণ একটা অবশ্যই আছে। তোমার রূপের আগুনের ঝলকানীতে আমার হৃদয় দগ্ধ হয়েছে? তোমার লাল টুকটুকে গাল দুটো দেখে, বলতে লজ্জা নাই, আমি মুগ্ধ হয়ে পড়েছি।
জামান বলে, আল্লা আপনাকে শতায় করুন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আপনি এই সিংহাসনে আসীন থাকুন। কিন্তু আমাকে ছেড়ে দিন সম্রাট, আমার একটি বিবি আছে। তঁকে আমি প্ৰাণাধিক ভালোবাসি। আজ আমি ভাগ্য বিড়ম্বিত। তার সঙ্গে আমার আপাত-বিচ্ছেদ ঘটেছে। কিন্তু প্রতিটি দিন রজনীর প্রতিটি মুহূর্ত তার বিরহেই আমি আকুল। অধীর প্রতীক্ষায় দিন গুণছি। আবার কবে তার সঙ্গে দেখা হবে—তাকে আমার বুকে পাবো। আপনার এই হতভাগ্য দাসানুদাসকে অব্যাহতি দিন। আমি আবার সাগর পেরিয়ে সেই শহরেই চলে যেতে চাই। আপনি আমার ভোগ বিলাসের জন্য যে-সব বিধিব্যবস্থা করেছিলেন, তার জন্যে আমি ধন্য। যাবার আগে আপনার যাবতীয় দান সামগ্ৰী আপনাকে আমি ফিরিয়ে দিয়ে যাবো, সম্রাট।
বদর জামানের একখানা হাত নিজের হাতের মধ্যে টেনে নেয়। অধীর হয়ে না, উজির, শান্ত হয়ে বসে। যাবার কথা মুখে আনতে নাই। বরং এখানেই থোক। তুমি তো বুঝতে পারছে, তোমার ঐ সুন্দর চোখের তারায় যে নিরুত্তাপ আগুন তার দহনে দগ্ধ হচ্ছে একটি অশান্ত হৃদয়। তাই বলছি, তার পাশে বসেই না হয় কিছু সময় তোমার কাটলো। তোমার এই বাহুলতা যদি তাকে দু-দণ্ডের শান্তি দিতে পারে, দেবে না তুমি?
জামানের কথা শুনে বদর হাসে, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, এতে ঘাবড়াবার কি আছে। তোমার মতো এমন খুব সুরৎ নওজোয়ান ভয় পাচ্ছে কেন? আচ্ছা শোনো, তুমি কি এখনও নাবালক? যদি নাবালকই হও, তোমার নিজের কোনও দায়-দায়িত্ব থাকছে না। আর যদি শক্ত সমর্থ সাবালক হও (আমার ধারণা তুমি তাই) তাহলে পিছপা হচ্ছে কেন? তোমার ইচ্ছে মতো তুমি যা খুশি করতে পোর। একটা কথা তো মান, কপালে যা লেখা থাকে না তার কিছুই ঘটতে পারে না জীবনে। পিছতে হলে বরং আমারই পিছনো উচিৎ। কারণ আমি তোমার থেকে অনেক ছোট।
কামার আল-জামানের মুখ কালো হয়ে ওঠে। মিনতি করে বলে, আপনি মহামান্য সম্রাট। আপনার হারেমে অনেক সুন্দরী মেয়েছেলে আছে। কুমারী দাসী বাঁদীর অভাব নাই। তাদের সকলকে ছেড়ে আমার দিকেই আপনার নজর পড়লো কেন? আপনি তো জানেন, প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য যেকোন মেয়েকে যেমন ইচ্ছা তেমনি ভাবে গ্রহণ করা আইন সম্মত। তাকে নিয়ে আপনি নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারেন। অজানা কৌতূহল মেটাতে পারেন। তাতে কোনও দোষ হয় না।
বদর মুচকী হেসে চোখ মারলো। —তুমি যা ভাবছো, তার কোনওটাই ঠিক নয় গো প্রিয়দর্শন, কোনওটা ঠিক নয়। ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন রুচির। রুচির সঙ্গে সঙ্গে প্রবৃত্তি-ও পালটায়। যখন মানুষের অনুভূতি সূক্ষ্মতর হয় তখন রসবোধেরও অনেক তারতম্য ঘটে। সে ক্ষেত্রে কি উপায়?
দুশো চৌত্রিশতম রজনীর মধ্যভাগে আবার সে শুরু করে :
বদর স্মিত হেসে বলে, কথা দিলাম।
জামান বলে, আমি তার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের আলোর পথ দেখান। হারেমের নিরালা নিভৃত কক্ষ। জামানকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে বন্দর। এক ঝটিকায় মখমলের শয্যায় ফেলে দেয় জামানকে। বদরের এই অতর্কিত আক্রমণে হ’কচাকিয়ে যায় জামান। নিজেকে রক্ষা করার জন্য বাধা দিতে গিয়ে কি মনে হতেই হাত সরিয়ে নেয়, নাঃ, ঠিক আছে, কথা যখন দিয়েছি, বাধা দেব না। খোদা ভরসা, যা হয় হবে। তার ইচ্ছাতেই এ-সব হচ্ছে। তিনিই করাচ্ছেন।
গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে বদর জামানকে চুমায় চুমায় ভরে দিতে থাকে। এতক্ষণে জামানের সন্দেহ হয়, সম্রাট-এর শরীরে খুঁৎ আছে। যতই সে তাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে ততই তার সন্দেহ আরও ঘনীভূত হতে থাকে। নাঃ, এতো কোনও পুরুষের দেহ নয়। বিস্ময়ে অবাক হয়ে চেয়ে থাকে জামান। তখন বদর উত্তেজনায় উন্মত্ত।–সোনা, আমাকে তুমি এখনও চিনতে পারছে না? আমি যে তোমার বন্দর। আমাদের সেই শাদীর রাত তারও আগে আর একটি রাতের স্মৃতি কি তোমার মন থেকে মুছে গেছে?
কামার অল-জামান দেখলো, ছদ্মবেশের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলো সম্রাট ঘায়ুরের কন্যা বদর। তার নয়নের মণি, বুকের কলিজা।
বহুদিন বাদে আবার তাদের এই মিলনে আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে থাকলো। বদর তার কাহিনী বললো জামানকে। জামান শোনালো, তার দুঃখের কিসসা।
জামান বললো, কিন্তু আজ যা করলে তার কিন্তু জবাব নাই বন্দর।
দেহ, মন একাকার করে আনন্দে বিভোর হয়ে সারাটা রাত সুখ শয্যায় কাটিয়ে দিলো ওরা।
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্দর এলো আরমানুসের কাছে। অকপটে সমস্ত কাহিনী সবিস্তারে বললো তাকে। আর এও বললো, আপনার কন্যা হায়াৎ এখনও কুমারী। কামার অল-জামানকে আপনি জামাই করতে চেয়েছিলেন। সেই জামান আপনার প্রাসাদেই অপেক্ষা করছে। আপনি ইচ্ছা করলে তার সঙ্গে হায়াতের শাদীর ব্যবস্থা করতে পারেন।
—কিন্তু মা, তুমি, আরামানুস, আকুলভাবে প্রশ্ন করে, তোমার কোনও অমত নাই?
এই সময় কামার আল-জামানকে নিয়ে হায়াৎ এলো সেখানে। আরমানুস বললেন, বাবা, জামান, তুমি আমার মেয়েটিকে গ্রহণ করে আমার এই সাম্রাজ্যের অধিকারী হও। সে তোমার দ্বিতীয় বেগম হয়েই সুখে থোক।
জামান বললো, আপনার ইচ্ছা আমি অপূর্ণ রাখবো না, সম্রাট। তাছাড়া আমার বদরও যখন চায়, আমার কোনও অমত থাকতে পারে না।
এই বলে সে বদরের দিকে তাকায়। বদর বলে, আমি এতকাল এখানে পড়ে আছি শুধু এই জনাই। তুমি আসবে, তোমার সঙ্গে হায়াতের শাদী হবে। সে হবে তোমার খাস বেগম। আমি দ্বিতীয়া–তার সেবা দাসী।
আরমানুসের দিকে ফিরে কামার আল-জামান বলে, আপনি তো নিজের কানেই শুনলেন, বদর বলছে, আপনার মেয়েই হবে প্রধান বেগম, সে হবে তার বাঁদী।
বৃদ্ধ সম্রাট আনন্দে উৎফুল্প হয়ে উঠলেন। অনেকদিন পরে আবার একবার তিনি সিংহাসনে গিয়ে বসলেন। উজির আমীর। ওমরাহদের উদ্দেশ করে বলতে লাগলেন, কামার আল-জামান আর বদরের বিচিত্র কাহিনী।
দরবারে উপস্থিত সকলে সেই পরমাশ্চর্য কাহিনী শুনে তাজ্জব হয়ে গেলো। সম্রাট ঘোষণা করলেন, আমার একমাত্র কন্যা হায়াৎ আল-নাফুস-এর পাণি গ্রহণ করবে। শাহজাদা কামার অল-জামান। এবং আজ থেকে জামান এই এবানী দ্বীপের অধিপতি হচ্ছে।
সম্রাট আরমানুসের ঘোষণা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলে আভুমি আনত হয়ে কুর্নিশ জানালো। এবং সমস্বরে শপথ উচ্চারণ করলো, আজ থেকে কামার আল-জামান আমাদের সম্রাট—আমরা তার একান্ত অনুগত ভৃত্য। তাঁর আজ্ঞাবহ দাস।
সম্রাট আরমানুস সন্তুষ্ট হয়ে সবাইকে আসন গ্রহণ করতে বললেন। তার নির্দেশে শহরের প্রধান কাজী এসে শাদীনামা তৈরি করলেন। গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সাক্ষী হিসাবে স্বাক্ষর করলেন সেই শাদীিনামায়। এ সবই কামার আল-জামান এবং হায়াৎ আল-নাফুসের সম্মতিক্রমে তাদের সমক্ষেই সমাধা করা হলো। ‘
সম্রাট আরমানুসের আদেশে দরবার দপ্তর সব বন্ধ রাখা হলো। আজ কোনও কাজ নয়। শুধু আমোদ-আহ্লাদের দিন। খানা-পিনা নাচ-গান বাজনায় মুখর হয়ে উঠলো সারা এবনী দ্বীপ। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের আজ অবাধ নিমন্ত্রণ। হাজার হাজার জন্তু-জানোয়ার জবাই করা হলো। দেশের যত মানুষ আছে, সকলকে আজ পেটপুরে খাওয়াতে হবে। এই-ই সম্রাটের হুকুম। গরীবজনে অর্থ পোশাক বিতরণ করা হতে লাগলো। সেনাবাহিনীর মধ্যেও নানা উপহার উপটৌকন এবং নগদ অর্থ বন্টন করা হলো।
আপামর জনসাধারণ ধন্য ধন্য করতে লাগলো। নতুন সম্রাটের শতায় কামনা করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাতে থাকলো।
কামার আল-জামান দুই বেগম নিয়ে সুখে-সচ্ছন্দে ঘর করতে লাগলো। তার ন্যায় বিচার এবং অনুশাসনে প্রজারা মহা খুশি হলো।
কামার অল-জামান তার বাবা শাহরিমানের কাছে দূত পাঠিয়ে জানালো, এবনি দ্বীপের সুলতান হয়ে সে বেশ বহাল তবিয়তেই আছে। খুব শিগ্গিরই সে তাকে দেখতে যাবে। তার আগে সে একবার যুদ্ধ যাত্রা করবে। এখানকার সমুদ্রতীরের এক শহর পশ্চিমী বর্বর ম্লেচ্ছারা আক্রমণ করে তছনছ করে দিয়েছে। তাদের সে শায়েস্তা করতে যাবে।
বছর খানেক বাদে বদর এবং হায়াৎ একটি করে পুত্র লাভ করলো। দুটি শিশুই দেখতে হলো চাঁদের মতো ফুটফুটে সুন্দর। একই সঙ্গে হেসে খেলে তারা মানুষ হত্বে থাকলো। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তাদের আর কেউ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেনি।
এই হলো কামার আল-জামান আর বদরের কাহিনী।
শাহরাজাদ স্মিত হেসে চুপ করলো।
কাহিনী শুনতে শুনতে দুনিয়াজাদের ধবধবে সাদা চাঁদের মতো মুখে আবীরের ছোঁয়া লেগেছে। চোখে মুখে খুশির বন্যা।
⭐ FOR ANY HELP PLEASE JOIN
🔗 MY OTHERS CHANNELS
🔗 FOLLOW ME
Facebook: facebook.com/molakat
Facebook: facebook.com/afsarnizam
Instagram: instagram.com/molakat
Instagram: instagram.com/afsarnizam
Twitter: twitter.com/afsarnizam
🔗 MY WEBSITE
🔗 CALL ME
+8801819515141
🔗 E-MAILL
molakatmagazine@gmail.com
No comments